মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা_রহমান Part(24+25)

0
754

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা_রহমান

Part(24+25)

✅12_13 & 24_25 পার্ট Fb lite দিয়ে পড়া যাচ্ছে না,,অনুগ্রহ করে নরমাল এফবি দিয়ে পড়ুন!!

পরের দিন

ডান হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে সেই হাতেই ফোনের দিকে পুরো মনোযোগ দিয়ে গেমস খেলায় ব্যস্ত উজান,,এটাই ফাইনাল লেভেল যে করে হোক তাকে এই লেভেল টা জিততে হবে,,উজানের পাশে সাব্বির রুপম তুষার সহ সবাই দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে ব্যস্ত,,সাব্বির একটা সিগারেট ধরালে উজান সাব্বিরের থেকে সিগারেটটা নিয়ে একটা টান দেয়,,তারপর আবার খেলায় মনোযোগ দিতে থাকে

আচমকা ঝড়ের গতিতে হিয়া দৌড়ে আসে,,হিয়ার পিছে পিছে আসে ঝিনুকো,,হিয়া হাঁপাচ্ছে হিয়ার চোখে মুখে চিন্তার ছাঁপ স্পষ্ট,,হিয়া আর ঝিনুককে দেখে সবাই একটু নড়েচড়ে ঠিক হয়ে নেয়,,ঝিনুক আর সাব্বিরের আবার এ-রই মধ্যে চোখে চোখে কথা চলতে শুরু করে

হিয়াঃ আপনি কি মানুষ!!একটা মানুষ কে কেউ এরকম করে পশুর মতো মারে_____মানুষ টা তো মরেও যেতে পারতো,,,আমি কিছু বলছি আপনাকে,,আমার দিকে দেখুন একবার____আপনি জানেন আপনি যেই কাজ টা করেছেন তার জন্য আপনাকে স্যাররা সারাজীবনের জন্য সাসপেন্ড করে দিতে পারে__কি কি দরকার ছিলো এসব করার___বলুন আমাকে এই হিরোগিরি টা না দেখালে কি চলতো না আপনার___আমি কিছু বলছি আপনাকে,,আমার কথা কানে যাচ্ছে আপনার

উজান হিয়াকে পাওা না দিয়ে ফোনে গেম খেলায় ব্যস্ত দেখে হিয়ার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে আসে,,হিয়া সপাটে উজানের থেকে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে

সাব্বিরঃ ভাইয়ের I phone!!

উজান ক্ষেপে উঠে ফোন গেছে ঔ জন্য না নেক্সট লেভেল টা আর শেষ করতে পারলো না ঔ জন্য,,রাগে কিছু বলতেও পারে না,,তুষারের কাছ থেকে লাইটার নিয়ে আরো একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করে

উজানঃ কি সমস্যা তোমার??

হিয়াঃ কি সমস্যা সেটা আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন,,কি দরকার ছিলো মিলন স্যারকে ওভাবে মারার

উজানঃ অনেক দরকার ছিলো,,

হিয়াঃ ঝিনুক প্লিজ তুই ওনাকে একটু বুঝা,,এই ঘটনা কোনোভাবে ভিপি স্যারদের কানে পৌছালে ওরা ওনার পড়াশোনা ওনার ক্যারিয়ার সব নষ্ট করে দেবে

তুষারঃ সব এতো সহজ না হিয়া,,আমরা এতো বোকা না যে,কিছু না জেনে স্যারের গায়ে হাত তুলবো

হিয়াঃ সব জেনেই বা কি করে আপনারা এরকম একটা কাজ করেছেন বলতে পারেন

সন্ধি এসে হিয়ার কাঁধে হাত রেখে একটা হাসি দিয়ে দেয়।

সন্ধিঃ আরে চাচাতে ভাবি যে খুব রেগে আছে দেখছি__রিলাক্স,,কেউ তোমার চাচাতো বরের মাথার একটা চুলও বাঁকা করতে পারবে না সাসপেন্ড তো দূরে থাক,,শালা রা স্যারের মুখ ঢেকে স্যারকে উদুম পিটিয়েছে আর এমন এমন জায়গায় জায়গায় পিটিয়েছে না এরপর কোনো মেয়ের দিকে বাদ নজরে তাকাতেই স্যারের শরীরের পুরো লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাবে

হিয়াঃ মানে!!

ঝিনুকঃ তুই এতো বোকা কেন ধুর,,স্যারের মিডিল স্টামে ইচ্ছে মতো বাড়ি দিছি,ঔ কথা বলছে আপু(হিয়ার কানে ফিসফিস করে)

হিয়াঃ ,,আস্তে বল এসব কি ধরনের অশ্লীল কথা

ঝিনুকঃ ন্যাকা___নিজে যেনো কিচ্ছু বুঝে না

হিয়াঃ না আপু এটা ঠিক হয় নি,,আমার জন্য যদি ওনারা ভাইয়ার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি করে আমি সেটা কিছুতে সহ্য করতে পারবো না,,কিছুতেই না

ঝিনুকঃ ধুর আমার কাছে সব প্রমাণ আছে যে স্যার তোর সাথে অসভ্যতামি করেছে

হিয়াঃ মানে!!

ঝিনুকঃ শুন তুই যে সহজে স্যারদের মুখেমুখে তর্ক করিস না আমি জানি,,কাল হুট করে যখন তুই স্যারের মুখের উপর ওভাবে কথা বলছিলি তখনই আমি বুঝে গেছি মামা নিশ্চিত এখানে তো কিছু ঘাপলা আছে কিছু একটা,,আর স্যারের নজরো ঠিক সুবিধের লাগছিলো না তাই আমি আমার হাতের ক্যালমা দিয়ে ফোনের ক্যামেরা ওন করে সব ভিডিও করে নেই,,তারপর সেই ভিডিও রাতে ভাইয়াকে পাঠিয়ে দেই,,ভাইয়া স্যারকে উদুম কেলানি দেবার পর আজ সকালে এসে আমাকে আর মকবুল স্যারকে সাক্ষী করে পুরো প্রমাণ ভিপির হাতে তুলে দেয়,,এখন শুধু মিলন স্যারের হাতে বরখাস্তের নোটিশ যাওয়া বাকি আর তোকে জিজ্ঞাসাবাদ,,এ-ইতো ব্যাছ

ঝিনুকের কথা শুনে হিয়া পুরো টাস্কিত,,এই একদিনে এতো কিছু করে ফেলেছে উজান ওর জন্য,হায় রে!!

সন্ধিঃ যাগ মাথা মোটা সাব্বিরের ভাগ্য তাহলে ঝিনুকের মতো একটা বুদ্ধিমতি সাহসী মেয়ে জুটেছে,,,চিন্তা নেই সাব্বির ভেবেছিলাম তোর বাচ্চা কাচ্চাও তোর মতো ভীতুর ডিম হবে এখন তো দেখছি কেস পুরো উল্টো যাচ্ছে

সন্ধির কথায় ঝিনুক লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালায়,,তারপর সন্ধি তুষারকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে রুপম উজানের ফোন টা তুলে উজানের হাতে দিয়ে উজান হিয়াকে একটু একা রেখে ক্যান্টিনের দিকে যায়,,এদিকে এতোক্ষণে উজানের একটা সিগারেট খাওয়া শেষ,,দুই নাম্বার সিগারেট ধরাতে যাবে ওমনি হিয়া উজানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,,,উজান হিয়াকে দেখেও না দেখার ভান করে যেনো এখন এই সিগারেট খাওয়াটাই ওর সবচেয়ে জরুরি কাজ,,

হিয়াঃ আপনি আপনার পরীক্ষার এই এক মাস আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবেন না___দরকার পড়লে আমি এই এক মাস আপনার সামনে আসবো না তবু যেনো আমি না দেখি আপনি আমার ব্যাপারে এক্সট্রা কিছু করতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার টা শেষ করে দিতে যাচ্ছেন____আপনি শুনেছেন আমার কথা

উজান সিগারেট টা ফেলে দিয়ে একটা ধোয়া ছাড়ে,,তারপর বাঁকা চোখে হিয়াকে একটু দেখে নিয়ে আবার ফোনে গেম খেলায় মনোযোগ দেয়

হিয়াঃ আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না,,আপনি যা চাইছেন তা কোনো ভাবেই সম্ভব না____আপনি জানেন আমি অনাথ আমার কেউ নেই

উজানঃ জানি,তো?

হিয়াঃ আপনাকে দেবার মতো আমার কাছে কিচ্ছু নেই,,না আছে কোনো বাড়ি না কোনো ঠিকানা না কোনো___আপনি আমার থেকে অনেক বেটার একজনকে ডিজার্ভ করেন,,আমি নীলি আপুদের কথা বলছি না কিন্তু আমি জানি নীলি আপুর চেয়ে হাজার গুন ভালো মেয়ে আপনি পাবেন

উজানঃ আর কিছু??

হিয়াঃ আমি তো নিজেই চলতে পারি না ঠিক মতো,,কিচ্ছু নেই আমার,,একটা খাট সেটাও বাড়িওয়ালার,,খাবার জন্য দুটো প্লেট রান্নার জন্য একটা হাড়ি আর একটা কড়াই,,একটা ঘুন ওঠা আলমারি,,সাথে ছিড়ে যাওয়া তিন চারটে সেলাই দেওয়া জামা,,আপনি বুঝতে পারছেন আমার অবস্থা টা!!আমি কতো টা নিঃস্ব

উজানঃ আর কিছু নেই তোমার??

হিয়াঃ মানে,,

উজানঃ না আলমারিতে তো সেদিন জামার সাথে আরো দুটো জিনিস দেখলাম তাই বলছি আর কি

হিয়াঃ কিইই!!___মাথা ঠিক আছে আপনার,,আপনি আমাকে কি বলছেন কিছু হুঁশ আছে আপনার

উজানঃ yea,,of course নিজের পিচ্চি টার এই ছোট খাটো জিনিস গুলো লক্ষ্য করা তো আমার দায়িত্ব,,so what

হিয়া রাগে উজানের সব চুল খামছে ধরে টান দিয়ে আবার ছেড়ে দেয়

হিয়াঃ আআআ,,আপনি খুব খুব খুব খারাপ,,আমার এখন ঔ দুটো ইয়েও নেই একটা দড়িতে বাঁধা ছিলো টানতে গিয়ে ছিঁড়ে গেছে

উজানঃ কোনটা ছিঁড়ছে লাল টা না কালো টা,,কালো টা ছিঁড়লে সমস্যা নেই I think তোমাকে রেড টা বেশি ছুট করে

উজানের কথায় হিয়ার মাথা পুরো ঘুরতে শুরু করে,,এই ছেলে পাগল নাকি,,কেউ একটা মেয়েকে এতো সহজে এসব বলে দেয়,,ছিঃ কি অসভ্য,,না এই ছেলের মাথা পুরো গেছে একে এক্ষুনি পাবনার টিকিট কেটে পাবনায় পাঠিয়ে দিয়ে আসতে হবে,,হিয়া রাগে দাঁত মুখ খিঁচে সামনে হাঁটতে শুরু করে না এই পাগলের সাথে আর কিছুতেই কথা বলা যাবে না

হিয়াঃ নিজে তো অসভ্য সাথে এই আমাকেও অসভ্য বানিয়ে ছাড়বে এরা,,আজ তো ঝিনুক-কেও দেখলাম কি সব অশ্লীল কথা বলছিলো ছিঃ,,না এদের কে আর কাউকে বুঝিয়ে লাভ নেই,,এদের সবার মাথার তার গুলো সব ছিঁড়ে জট পাকছে,,এদের এখন একটাই ঠিকানা হওয়া উচিৎ পাবনা,,হয় এরা ওখানে ভর্তি হবে নয়তো এদের সাথে থাকতে থাকতে আমাকে না কোনোদিন নিজে পাবনার জন্য টিকিট বুক করতে হয়,,,,কাল থেকে আর আসবোই না ভার্সিটি বাড়িতে যে টুকু বুঝে পড়া যাবে ওতেই পড়ে পরীক্ষা দেবো__বলে কি না আমাকে লাল টাতে বেশি ছুট করবে হায় রে কি লজ্জা কি লজ্জা,,উনি তাহলে আমাকে তলে তলে ঔসব নজরেও দেখে ছিঃ কত্তো খারাপ,,

হঠাৎ সামনে হিয়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উজান ফোন থেকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে হিয়া নেই,,উজান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখে হিয়া মাঠ দিয়ে গড় গড় করে সামনে হাঁটছে,,উজান টপ করে ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে নেয়,,বাইকের আয়নার মুখ দেখে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে নেয়,,শার্টের কলার টা উঁচু করে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে একটা গুন্ডা গুন্ডা লুক দিয়ে হিয়ার দিকে দূত পা চালিয়ে গিয়ে হিয়াকে ধরে ফেলে

হিয়াঃ আবার কি চাই,,ছাড়ুন আমার রাস্তা___আপনি আমাকে ঔ ঔ ঔসব নজরে দেখেন,,আমার তো ভাবতেই অসহ্য লাগছে

উজানঃ এরকম কেনো তুমি হ্যা,,আমাকে নিজের ইয়ে ভাবতে কি সমস্যা তোমার

হিয়াঃ কি ইয়ে ভাবতে

উজানঃ ইয়ে মানেও বুঝে না,,ছাগল একটা___বর ভাবতে পারো না বর

হিয়াঃ মাথা ঠিক আছে তো আপনার,,বর ভাবা মানে আপনি বুঝেন

উজানঃ বুঝি তুমি আমার বউ আমি তোমার বর,দুটো মিক্সড হয়ে একদিন আসবে একটা ছোট্ট বাবু ঠিক তোমার মতো

হিয়াঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) একটা সোজাসুজি উত্তর দিবেন আমাকে??

উজানঃ বলো!!

হিয়াঃ আপনি ভালোবাসেন আমাকে??

উজানঃ তোমার মতো পেত্নী কে ভালোবাসবো আমি,,আমি যাকে ভালোবাসবো সে হবে

হিয়াঃ থামুন,,ভালো না বাসলে বারবার কেনো আমার জন্য এতো টা করেন আপনি,,আর কেনোই বা একটু আগে আপনি বললেন আমি বউ আপনি বর,,বাবু হবে এসব কথা

উজানঃ বাবু চাই নাকি তোমার হিয়াপাখি,,চাইলে বলো আমি কিন্তু চাইলে এক্ষুনি তোমাকে একটা বাবু গিফট করতে পারি

হিয়াঃ মানে!!

উজানঃ বাবু তো আমি বিয়ে না করেও তোমাকে এনে দিতে পারি হিয়া পাখি(একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে)

হিয়াঃ যা অসভ্য একটা,,একটা সোজাসাপটা উত্তর দিতে বললাম তা না করে বাঁকা ত্যাড়া করে তার উওর দিচ্ছে অসহ্য লোক একবারে,,

হিয়া আবার রাগে গটগট করে হাঁটতে শুরু করে,,উজান কোনো কিছুই সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছে না,,কি লাভ আর এর সাথে কথা বলে

উজানঃ হিয়া হিয়া হিয়া,,,তোমার প্রশ্নের উত্তর চাই তো___ঠিক আছে আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো কিন্তু আজ তোমাকে সন্ধি আর ঝিনুক সহ আজ একটা জায়গায় আসতে হবে,,আসবে তুমি

হিয়াঃ আমি কেনো,,কিসের জন্য??আপনার যা উওর দেবার আপনি তো এখানেই বলতে পারেন

উজানঃ পারি,,কিন্তু এখানে বলতে চাইছি না,,তুমি তো না চাইতেও আমার সব কথা শুনো আজকেও না হয় শুনলে কি আর ক্ষতি হবে,,প্লিজ

হিয়াঃ আচ্ছা বেশ আমি আসবো কিন্তু এটাই হবে আপনার সাথে আমার শেষ কথা

উজানঃ দেখা যাবে,,,,আর হ্যা শ্রাবণকেও সাথে আনবা

হিয়াঃ শ্রাবণ কেনো??

উজানঃ হিয়া প্লিজ আর কথা না

হিয়াঃ ঠিক আছে,,এটাই শেষ!!
_____________________

আজ উজানের জন্মদিন!!

ঢাকা থেকে একটু দূরে বারিধারার কাছে তুষার দের যেই ছোট্ট ফার্মহাউজ টা আছে সেটা আজ পুরো জমকালো আয়োজনে সাজানো হয় উজানের জন্য,,বাড়িটা একদম নতুন তৈরি এখনো তুষাররা এসে পারমানেন্ট ভাবে শিফট করে নি,,সেই সুবাদে উজানের জন্য পুরো বাড়ি আজ সাজানো হয় রঙ বেরঙের ফুল,বেলুন বাহারি সব লাইটিং দিয়ে,,মনে হয় যেনো কোনো এক বিয়ে বাড়ি বাড়ি এরকম অবস্থা,,উজান যেই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট সেই ডিপার্টমেন্ট সহ ক্যাম্পাসের অধিকাংশ স্টুডেন্ট সবাই আজ উজানের নিমন্ত্রণে তুষারদের ফার্মহাউজে উপস্থিত,,আজকে সবার থিম ড্রেস নীল,,সবাই একদম নীল পরীর সাজে আজ এসেছে,,কেউ গাউন কেউ টপস কেউ বা স্কার্ট কেউ কামিজ,,ছেলে গুলো সাদা শার্টের সাথে নীল কোর্ট,,সবাই আজ উজানের জন্য নিয়ে এসেছে কার্ড,ফুল সহ অনেক সুন্দর সুন্দর উপহার,,আর খাবারের আয়োজন তো আজ রমরমা,,এক সাইডে খাবারের এক আয়োজন করা হয়েছে অনেক সুন্দর করে

রাইসাঃ ওয়াও নীলি,,,কি সাজিয়েছে না বাড়িটা দেখ

নীলিমাঃ উজান তো প্রতিবার ওর জন্মদিন ক্যাম্পাসেই সেলিব্রেট করে তা হঠাৎ এবার এখানে!!

রাইসাঃ হুম তোকেও আবার নিজে থেকে ইনভাইট করেছে,,না মানে ঔ ঘটনার পর তো আমরা ভেবেছিলাম উজান হয়তো আর কখনো আমাদের___যাগ বাদ দে তা উজানের স্পেশাল স্টুডেন্টকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো জানি,আসে নি

নীলিমাঃ ঔ মেয়ের যোগ্যতা আছে নাকি এরকম একটা পার্টিতে এসে নিজেকে প্রেজেন্ট করার,,,, শোন একটা কথা বলি উজান যখন নিজে থেকে আমাকে ইনভাইট করেছে তো আমি সিউর উজান বুঝে গেছে যে ওর জন্য ঠিক কে পারফেক্ট আমি না ঔ কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা মেয়ে টা

নীলিমা আর রাইসার গল্পের মাঝে হঠাৎই উজান স্টেজের উপর উঠে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে যায়,,সবাই নিজেদের গল্প থামিয়ে দিলে উজান একটু খুক খুক কেশে বলতে শুরু করে

উজানঃ Hey everyone Attention Please____So guys প্রথমেই সবাইকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ যারা আমার ইনভিটেশনে আমার আনন্দে সামিল হতে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছো____ভার্সিটিতে জয়েন করবার পর থেকে রোজ সবার কমন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে,উজান ভাইয়া আপনি কবে রিলেশন করবেন,,ভাইয়া আপনি কি লুকিয়ে-চুরিয়ে প্রেম করছেন,,দোস্ত সত্যি করে বল তো আমাদের ভাবিকে ঠিক কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস ব্লা ব্লা ব্লা___ So friends আজ আমি তোমাদের সাথে আমার সেই পিচ্চি পরীটার পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছি,,,,যাকে একটা সময় আমি খুব কষ্ট দিয়েছি সবার সামনে যা নয় তাই বলে অপমান করেছি,,কিন্তু সেই মানুষ টাকেই নিজের অজান্তে কখন যে এতোটা গভীরভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি জানি না,,আর সেই হিসেবো আমি খুঁজতে চাই না এখন,, So friends আজ আমি তোমাদের সাথে আমার সেই ভালোবাসার মানুষটার পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছি,,আর অল্প কিছুক্ষণের অপেক্ষা,,till then enjoy the party!!

উজান স্টেজ থেকে নেমে আসতেই নীলিমা দৌড়ে গিয়ে উজানকে আলতো করে জরিয়ে ধরতেই উজান নীলিকে আলতো করে ছেঁড়ে দেয়,,নীলি তবুও উজানের বুকে হাত রেখে একটা হাসি দেয়

নীলিমাঃ আমাকে অপমান করেছো ব’লে খুব গিলটি ফিল হচ্ছিলো মনে তাই না__জানতাম তো উজান ঠিক একদিন আমার কাছে ফিরে আসবে,,উজানের পাশে যে এই নীলিই পারফেক্ট সেটা বুঝতে এতো দেড়ি করলে তুমি হ্যা

উজানঃ এ-তো টা ভেবে নেওয়ার কিছু নেই নীলি,,Surprise বলে দিলে সেটা Surprise থাকবে কি!!

ব’লেই উজান একটা হাসি দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে
_____________________

হিয়াঃ তোরা আমাকে নিয়ে আসার আগে এক বারো বলবি না আজ ভাইয়ার জন্মদিন!!___এভাবে হুট করে চলে আসা যায়

ঝিনুকঃ তুই চুপ কর তো,খুব কথা বলিশ তুই,,,আপু এ-ই খানে হিয়ার শাড়িটা আর এই যে এখানে সব ওরনামেন্টস চুড়ি আর এই আমার বাড়ি থেকে আনা কিছু মেক আপ

সন্ধিঃ আমাদের পিচ্চি ভাবি কে মেক আপ করতে হয় নাকি আমাদের পিচ্চি ভাবি তো এমনিতেই কতো মিষ্টি

হিয়াঃ আচ্ছা এসব কি,,আপনারা দুজন এই শাড়ি গহনা এসব কেনো নিয়ে এসেছেন আমার জন্য

ঝিনুকঃ আমরা না ভাইয়া আনছে,,দেখি উঠ এখন ওয়াশরুম থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট টা পড়ে আয় কুইক

হিয়াঃ আমি একাই শাড়ি পড়তে পারি ঝিনুক,,কিন্তু আমি কেনো এসব___আর দেখ আমি ভাইয়ার জন্য কোনো গিফট উপহার কিচ্ছু নিয়ে আসি নি,,আর আমি এখন উল্টে ওনার দেওয়া,,এটা আমার পক্ষে সম্ভব না

সন্ধিঃ তুমি যে শাড়ি পড়তে পারো আমরা সেটা জানি কিন্তু আজ আমরা চাইছি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে নিজের হাতে সাজাতে,,বড় বোনের এটুকু রিকুয়েষ্ট রাখো তুমি

হিয়াঃ আপু তা হয় না,,আমি এমনিতেই খালি হাতে কিছু না জেনে,,প্লিজ আপনারা দুজন আমাকে আর জোর করবেন না

সন্ধিঃ মনে করো না তুমি এই শাড়ি টা পড়লেই সেটাই উজানের জন্মদিনের উপহার হয়ে যাবে

হিয়াঃ আপু কিন্তু

ঝিনুকঃ প্লিজ হিয়া,,এটাই লাস্ট বার রিকুয়েষ্ট করছি তোকে,,প্লিজ

সন্ধিঃ হিয়া প্লিজ বড় আপুর এই কথা টা রাখো,,প্লিজজজ

হিয়া আর ঝিনুকের অনুরোধে এবারো হিয়াকে হার মানতে হয়,,কিন্তু ব্যাপারটা কিছুতেই হিয়ার ভালো লাগছে না,,হিয়া মনে মনে উশখুশ করছে,,জানলে একটা ফুল কিনে এনেও তো সে উজানকে উপহার দিতে পারতো,,কিন্তু এভাবে!!

হিয়া ওয়াশরুমে চলে যেতেই উজান উপরে আসে,এসে হিয়াকে খুঁজতে শুরু করে

সন্ধিঃ হিয়াতো ওয়াশরুম, জরুরি কিছু বলবি তুই

উজানঃ না তুষার তোকে নিচে খুঁজছিলো আর এমনিতেও আমার হিয়ার সাথে একটু কাজ ছিলো তুই আর ঝিনুক একটু নিচে যা আমি রিং দিলে উপরে আসিস

সন্ধিঃ আচ্ছা,,ঝিনুক আসো,,___আর তুই কি কাজ আছে তাড়াতাড়ি শেষ করে নিস হিয়াকে তো সুন্দর মতো তৈরি করে নিচে নামতে হবে তো নাকি

উজানঃ হুম জানি

সন্ধি ঝিনুক নিচে চলে আসতেই উজান রুমের দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় এসে বসে,,এ-মনি সময় হিয়া ওর লাল ব্লাউজ আর লাল পেটিকোট টা পড়ে বের হতেই উজানকে দেখে পুরো থমকে যায়,,হিয়া তো থমকে যায় যায় সাথে হিয়ার দিকে চোখ পড়তেই উজান পুরো কেঁপে ওঠে!!

হিয়াঃ ঝিনুক আমার ব্লাউজের ফিতে টা দেখতো ঠিক করে লাগানো হলো কি না__কেনো জা__________আপনি এই রুমে!!

হিয়াকে আপাদমস্তক মন ভরে চোখ দিয়ে গ্রাস করতে ব্যস্ত উজান,,লাল ব্লাউজ লাল পেটিকোট চুল গুলো পেছনে ছেঁড়ে দেওয়া,,গলার কাছের তিল সাথে আজ উজানের সামনে আবারো উন্মুক্ত হিয়ার নাভি,আচমকা হিয়ার এই নারীত্বের সৌন্দর্য চোখে পড়তেই উজানের যেনো শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ শিউরে ওঠছে,,,,হিয়া হাতে থাকা ওর জামা টা বুকের কাছে আগলে পিছাতে ধরেই দেওয়ালে বারি খায়,,গলা শুকিয়ে আসে,কি কথা বলবে কিছু বুঝে আসছে না তার❤️
!
!
নিজের হুঁশ ফিরতেই উজান হিয়ার উপর থেকে চোখ নামিয়ে নেয়,,পেছন ফিরে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে ওখানে হিয়ার ওরনা টা পড়ে আছে,,উজান ওরনা টা হাতে নিয়ে পেছন দিক দিয়ে হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়

উজানঃ এটা গায়ে জড়িয়ে নেও ধরো!!___কি হলো নেও

হিয়া কিছুক্ষন ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে হালকা শান্ত করে কাঁপা কাঁপা পায়ে উজানের দিকে এগিয়ে উজানের হাত থেকে ওরনা টা নিয়ে গায়ে লেপ্টে ধরে

উজানঃ হলো তোমার??

হিয়াঃ হুম

উজান পিছন ফিরে হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে হিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,,উজান হিয়াকে বিছানায় গিয়ে বসতে বলে,,হিয়া বিছানায় গিয়ে বসে,,উজান ড্রেসিং আয়নার নিচু টুল টা টেনে নিয়ে এসে হিয়ার সামনে বসে হিয়ার পা দুটো উজানের হাঁটুতে দিতে বলে!!

উজানঃ কি হলো দেও?

হিয়াঃ না আমি কেনো আপনার শরীরের উপর এভাবে পা তুলবো,,আপনি আমার গুরুজন,,আমি অনেক সম্মান করি আপনাকে

উজানঃ জানি আমি___কিন্তু এখন এই পা দুটো আমার এখানে একটা একটা করে দেও এটা খুব জরুরি আমার

হিয়াঃ না আমি এভাবে আপনার শরীরে পা তুলতে পারবো না,,আপনি না আমার উড বি টিচার,,এই কাজ করলে আপনাকে অশ্রদ্ধা করা হবে আমি এটা কিছুতেই করবো না।

হিয়া পা দিচ্ছে না দেখে উজান নিজে হিয়ার একটা পা তুলে সেই পায়ে আলতো হাতে আলতা পড়িয়ে দিতে শুরু করে,,উজানের এই কাজে হিয়া তো পুরো অবাক,,এমন না যে হিয়া বুঝেনি উজান ওর পা কেনো চাইছি নাটক মুভিতে তো এরকম করে কতো সে দেখেছে নায়ক গুলো নায়িকার পা নিয়ে পায়েল পড়িয়ে দেয় আর উজানকে দেখো কি করছে,,
!
!
হিয়া আনমনে তাকিয়ে আছে উজানের মুখের দিকে,,জানালার পর্দা গুলো খুলে দেওয়া আর সূর্য টা ঠিক জানালা বরাবর হওয়াতে রোদ টা যেনো এসে দু’জনের গায়ে মাখছে,,এতোদিন বন্ধ থাকা ঘরের একটা কি রকম গন্ধ আসছে,,এতো উওাপের মাঝে ব্যালকুনি থেকে আসা দক্ষিণের বাতাসো গায়ে দোলা দিচ্ছে,,হিয়ার চুল উড়ছে সাথে উড়ছে উজানের মন❤️আলতা মাখানোর মাঝে উজান আবার ইচ্ছে করে হিয়ার পায়ের তোলে সুরসুরি আঁকছে,,হিয়া কাতুকুতুর জ্বালায় খিলখিল করে হাসঁছে,,হিয়ার মুখের মিষ্টি আসি উজানের উড়ন্ত মনে আরো দোলা দিচ্ছে

হিয়াঃ আরে কি করছেন কি,,আলতা সব পড়ে যাবে কিন্তু

উজানঃ অনা পিচ্চি একটা কথা বলবা?

হিয়াঃ বলুন?

উজানঃ তুমি ঠিক কি মাদক দিয়ে তৈরি বলবা,,আমাকে এতো নেশা ধরিয়ে দিয়ে কি শান্তি পাও তুমি??

হিয়াঃ সব নারীরাই নিজস্ব সৌন্দর্যের মাদকতা মাখা নেশা আছে এটা শুধু সেই পুরুষই বুঝতে পারে যে তার প্রেয়সীকে মন থেকে ভালোবাসতে পেরেছে!!!!

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-25

হিয়াকে আলতা পড়িয়ে দিয়ে উজান তৈরি হয়ে নিচে আসে,,আজকে সে নীল জিংকস এর সাথে সাদা কোর্টে নিজেকে সাজিয়েছে,,চুল গুলো নিয়ম করেই আছড়ানো,,হাতে সেই চিরায়ত চেইন স্টিমের ঘড়ি,,এই তো ব্যাছ!!আর এই সামান্য লুকেই সে পার্টির মেয়ে গুলোর মনে চিনচিন ব্যাথা তুলে দিতে যথেষ্ট,,কিন্তু ব্যাথা পুষে রেখে তো আর লাভ নেই না কারণ একটু পর সেই আঘাতে যে লবন মিশতে যাচ্ছে সবাই সেটা বুঝতে পারছে

উজানঃ সব রেডি তো?

তুষারঃ তুই কোনো চিন্তা করিস না ফুল বেলুন লাইটিং সব রেডি

উজানঃ প্রজেক্টরটা ওন করে দেখেছিলি আরো একবার?

রুপমঃ সব ঠিক আছে ভাই,,এতো কেন প্যারা নিচ্ছিস তুই শুধু শুধু

উজানঃ হুম,,অনেকক্ষণ তো হয়ে যাচ্ছে কি করছে কি ওরা উপরে?

তুষারঃ আমি গিয়ে কি একবার দেখে আসবো?

উজানঃ না তুই এদিক টা দেখ আমি দেখে আসছি

উজান তুষারকে কথা টা বলে যেই উপরে যাবার জন্য এক পা বাড়াবে ওমনি সন্ধি আর ঝিনুক হিয়াকে নিয়ে নিচে নামতে শুরু করে খিলখিল করে হাসতে থাকে,,হিয়ার দিকে তাকাতেই উজানের চোখ আঁটকে যায়,,লাল শাড়ি দুই হাত ভর্তি লাল চুড়ি,,কপালে একটা ছোট্ট স্টোনের টিপ পায়ে আলতা,,চুল গুলো খুলে দেওয়া,,হিয়াকে আবার ঝিনুক লাল টুক টুকে লিপস্টিক দিয়ে দিলেও হিয়া ওটা মুছে দেয় তার কাছে এই লিপস্টিক টা দিয়ে বড্ড সাজগোছ মনে হচ্ছে,,তাই ঝিনুক শুধু হালকা করে গোলাপি রঙ ছুঁইয়ে দেয় হিয়ার ঠোঁটে,,এই তো খুব সিম্পল সাজ!!আর এই সাজেই উজানের মনে সুনামির মতো তোলপাড় শুরু করে দিতে সক্ষম

উজানঃ (নিজ মনে)কেনো যে শাড়ি টা পড়িয়ে আনতে বললাম,,মনে তো হচ্ছে এখুনি বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাই,,লাল পরী একটা

সন্ধি হিয়াকে নিয়ে নেমে উজানের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে খুক খুক কেশে বলে চোখ টা নামা ভাই,,বিয়ের পর দেখার জন্য কিছু তো বাকি রাখ!!সন্ধির কথায় হিয়া লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে,,উজান নিজের হুঁশে ফিরে সন্ধিকে একটা গাট্টা মেরে একটু আসি বলে সামনের দিকে হেঁটে যায়

ঝিনুকঃ যা জিজুতো লজ্জা পেয়ে গেলো

সন্ধিঃ লজ্জা না ছাই,,লজ্জা তো পাচ্ছে আমাদের চাচাতো ভাবি,,কোথায় দেখি দেখি মুখ টা,,আরে,,আরে দেখি

সন্ধি আর ঝিনুকের হাসি ঠাট্টার মাঝে নীলিদের গ্যাং এসে হিয়াকে খোঁচাতে শুরু করে

নীলিমাঃ পার্টির থিম ড্রেস ব্লু আর একে দেখ কেমন লাল পড়ে এসেছে তাও আবার শাড়ি

নিধিঃ ও কি বুঝে না-কি থিম ড্রেস কি জিনিস?কখনো এসব পার্টি এ্যাটেন্ড করেছে কি-না তাই সন্দেহ

ঝিনুকঃ নিধি আপুউউ তোমার মোটামাথা টা তো একটু খাটাতেও পারো মাঝে মাঝে,,সবার থিম ড্রেস ব্লু আর ভাইয়া আর হিয়ার টা আলাদা কেনো এটুকু নিশ্চয় একটা ছোট্ট বাচ্চাও বুঝতে পারবে

নীলিমাঃ কি মিন করতে কি চাইছো তুমি ঝিনুক?

সন্ধিঃ কিছু না নীলি,,একটুপর তুই সব বুঝতে পারবি একটু পেসেন্স রাখ

রাইসাঃ তা হিয়া আজ কি গিফট দিলে তোমার ভাইয়াআআকেএএ,,না কি এমনি এমনি শুধু মুফতে খেতে এসেছো কোনটা

নিধিঃ জানো হিয়া নীলি উজানকে কি গিফট করেছে,,Titan এর রীচ ওয়াচ,,জানো সেই রীচ ওয়াচ টার দাম কতো

রাইসাঃ ছাড় তো ঔ ব্রান্ডের নামই কখনো শুনেছে কি না ও কে জানে

হিয়াকে খুঁচানো হয়ে গেলে নীলিরা হেঁসে দিয়ে ড্রিংক হাতে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়

সন্ধিঃ তুমি নীলিদের কথা কিছু মনে করো না হিয়া,,জানোই তো ওরা

হিয়াঃ না আপু কি মনে করবো সত্যিই তো আমি কিছু উপহার না এনে শুধু শুধু এখানে খেতে এসেছি,,তোরা আমাকে আর শ্রাবণকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসার সময় কথাটা বললেও পাড়তি ঝিনুক

হিয়া মন খারাপ করে চলে যেতে ধরে ওমনি রুমের পুরো লাইট ওফ হয়ে যায়,,হিয়া ভয়ে থমকে গিয়ে আবার এক পা ব্যাক করে ঝিনুকের হাত ধরে দাঁড়িয়ে যায়,,
!
!
এক মিনিট পর স্টেজের উপরের লাইট টা ওন হবার পাশাপাশি প্রজেক্টের সুইচ টা ওন হয়ে সাদা স্ক্রিন ভেসে উঠে,,উজান একটা গিটার হাতে প্রজেক্টরটার এক পাশে একটা চেয়ারে বসে,,সামনে একটা স্ট্যান্ডে মাইক লাগানো,,

উজানঃ ভালোবাসা কি জিনিস আমি জানি না,,কিভাবে ভালোবাসতে হয় আমি তাও জানি না,,জানি শুধু আমাকে বাঁচতে হবে,,বেঁচে তো আমি তখনো ছিলাম,সব কিছুই ছিলো তখন কিন্তু কোথাও কি যেনো একটা মিসিং লাগতো,,সব থাকতো কিন্তু তবুও কিছু একটার অভাব বোধ করতাম,,ফিল করলাম আমার একটা অক্সিজেনের দরকার___একদিন অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পেয়েও গেলাম সেই অক্সিজেন টাকে,,তবে শুরুটা যতোটা ভয়ার্ত ভাবে শুরু হয়েছিলো সেটার শেষ টা এতো টা মলিন হবে বুঝতে পারি নি সেসময়______তার লজ্জারত মুখ,,আমাকে রাগিয়ে দিয়ে তার খিলখিল হাসি কখনো বা তার বিন্দু বিন্দু চোখের জল সব কিছুতে কখন যে এতো টা আসক্ত হয়ে পড়লাম আমি,জানি না___তবে তাকে কখনো বলা হয়নি আমি তাকে ভালোবাসি,,তাকে প্রচন্ড দরকার আমার,,_______আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন??তার এই প্রশ্নের উওরে শুধু হেঁসে গিয়েছি আর বলেছি তোমার মতো পেত্নী কে ভালোবাসবে এই উজান শাহরিয়ার নেভার,,,,কিন্তু সেই না বলা তেও তার জন্য আমার ভালোবাসা লুকিয়ে ছিলো,,,,আজ আমি সেই পিচ্চি টাকে বলতে চাই আমি তাকে ভালোবাসি❤️

এতটুকু ব’লেই উজান একটা হাসি দিয়ে গিটারে সুর তুলতে শুরু করে,,গান বলার সাথে সাথে প্রজেক্টরে এবার ভেসে আসে হিয়ার ছবি,,এই সব ছবি গুলো কয়েকটা উজানের নিজের ওঠানো কয়েকটা রুপম সাব্বির তুষার ঝিনুক শ্রাবণ এদের সবার তুলে দেওয়া

প্রথমে যে ছবিটা আসে সেটা হলো ভার্সিটিতে হিয়া যখন উজানকে প্রথম থাপ্পড় মারে তার ছবি ছবিটা রুপমের তুলে দেওয়া তার জন্য অবশ্য উজান রুপমকে এক্সটা খানাপিনা দেয়💙ওটা কিছুক্ষণ থেকে এবার স্লাইড করে আসে হিয়াকে যখন ফুলকলি গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছিলো আর উজান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো তার ছবি🧡ওটা স্লাইড করে এবার আসে হিয়াকে যখন ডক্টরের কাছে উজান নিয়ে গিয়েছিলো আর ইনজেকশন দেখে হিয়া উজানের পেটের কাছে মুখ টা হালকা লুকিয়ে দিয়েছিলো তার ছবি💚ওটা স্লাইড করে আসে সেদিন সরিষা ক্ষেতে শ্রাবণের হাতে তোলা উজান হিয়ার একটা আঙ্গুল নেড়ে নেড়ে ঝগড়া করার ছবি💛তারপর স্লাইড করে আসে যখন উজান হিয়া কাদার মধ্যে পড়ে পুরো মাখোমাখো হয়ে গিয়েছিলো সে সময়কার উঠানো একটা সেলফি💜শেষে গিয়ে ওটা স্লাইড করে এবার আসে বাসের মধ্যে হিয়া যখন চোখ বন্ধ করে ছিলো আর উজান হিয়ার কাঁধে মাথা দিয়েছিলো সে সময়ের একটা চুপ করে উঠানো সেলফি যেখানে হিয়া বাসের সীটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,,উজান হিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আর শ্রাবণ তার ভালো ভাইয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে❤️

আমি তোর চোখের দিকে
তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে
স্বপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে

আমি তোর চোখের দিকে
তাকিয়ে কিছু বলতে চাই তোকে
আমি তোর মনটা ছুঁয়ে
স্বপ্ন দিয়ে আঁকবো যে তোকে

তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
ও একটু নয়
অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে♪♪

প্রজ্যেক্টর ওফ হবার সাথে সাথে সব লাইট আবার ওফ হয়ে যা,, রুম আবার অন্ধকার,,এবার মেইন ফ্লাস লাইট গিয়ে ওন হয় হিয়ার গায়ের উপর,,লাইট ওন হতে হিয়া একটু কেঁপে গিয়ে চোখে হাত দেয় লাইটের আলো টা খুব চোখে লাগছে তার,,চোখ টা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতে চোখ থেকে আলতো করে হাত সরিয়ে আস্তে আস্তে হাত টা নিচে নামিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে উজান চেয়ার থেকে উঠে ওর দিকে এগিয়ে আসছে,,হিয়ার চারপাশে এতোক্ষণ যারা ছিলো সবাই কে সন্ধি আর ঝিনুক মিলে তার আগেই সারিয়ে দেয়,,উজান হিয়ার সামনে এসে এবার গিটার তুলে হিয়ার চারপাশে ঘুরে গান গাইতে শুরু করে

তুই তাকালে মেঘের পালে
ডানা মেলে ওড়ে গাঙচিল
তোর ইশারা দিচ্ছে সাড়া
হৃদয় সুখের অন্ত্যমিল

তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
ও একটু নয়
অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে♪♪

এরপর সব লাইট ওন হয়ে যা, উজান হিয়ার হাত ধরে টেনে হিয়াকে নিয়ে স্টেজের সামনে আসতেই উপর থেকে লাল সাদা লাভ বেলুন পড়তে শুরু করে,,সাথে পড়তে শুরু করে গোলাপের আর গাঁদা ফুলের পাপড়ি,,উপরের দিকে তাকাতে পারে না হিয়া,টুকটুক করে মুখের পড়া ফুলের পাপড়ি গুলোর চোটে তার চোখ বারবার বন্ধ হয়ে আসে,,উজান হিয়ার সামনে একটা চেয়ারে বসে শ্রাবণকে ওর কোলে বসিয়ে গিটার হাতে গান গাইতে শুরু করে

খুব অদূরে রাত্রিভোরে
ইচ্ছেগুলো হচ্ছে নিখোঁজ
জানাশোনা তোর বায়না
আনমনা হই আমি অবুঝ

তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
তুই থাকলে রাজি-ধরবো বাজি
কোন কিছু না ভেবে
ও একটু নয়
অনেক বেশি ভালোবাসি তোকে

গান শেষ হতেই উজান গিটার টা তুষারের হাতে দিয়ে দেয়,,সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে,,উজান শ্রাবণকে কোলে করে নিয়ে দাঁড়িয়ে হিয়ার সামনে দাঁড় হয়,,তারপর শ্রাবণের গালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে শ্রাবণকে হিয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়,,তারপর পকেট থেকে একটা রিং বের করে

উজানঃ ভালোবাসি তাই ভালোবাসি কথাটা কখনো তোমাকে বলিনি,,এই সব কথায় কথায় তোমাকে ভালোবাসি তোমার জন্য আমি সব করতে পারবো,দিন রাত ২৪ঘন্টা ফোন দিয়ে তোমার সাথে প্রেমাআলাপ করবো,,ডেটে যাবো লং ড্রাইভ যেবো এসব আমার দ্বারা সম্ভব না হিয়া,,আমি শুধু জানি আমার শুধু তোমাকে চাই,,এর চাইতে সাজিয়ে কোনো কাব্যিক কথা আমি আর বলতে পারবো না

বলা শেষ করে উজান হিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে যায়,,হিয়ার বা হাত টা বাড়িয়ে নিয়ে আংটি টা সামনে ধরে

উজানঃ Will you marry me হিয়াপিচ্চি??
!
!
উজান হাসিমুখে হিয়াকে প্রপোজাল দেবার পর উজান হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে হিয়ার উওরের অপেক্ষায়!!হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে উজানের হাত থেকে ওর হাত টা সারিয়ে নিজের কাছে টেনে আনে,,চারপাশে একটা নিরবতা বিরাজ করতে শুরু করে মুহুর্তে

হিয়াঃ আমাকে ক্ষমা করবেন ভাইয়া,আপ আপনার এই প্রপোজাল একসেপ্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব না

হিয়ার কথায় উজান উঠে দাঁড়ায়

উজানঃ হিয়া আমি!!

হিয়াঃ ভাইয়া আমি আপনাকে সম্মান করি,আপনাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু আপনাকে বিয়ে করবো এরকম কোনো ভাবনা কখনো আমার মনে আসে নি___আমি অনাথ ভাইয়া,এই শ্রাবণ ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে কিচ্ছু নেই কেউ নেই__আপনাকে দেবার মতো কিচ্ছু নেই আমার আমি নিঃস্ব,,আমি আপনার ফিলিংস টাকে মন থেকে সম্মান করি,অনুভব করি কিন্তু আপনি যা চাচ্ছেন সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব না___আপনি এক জগৎের মানুষ আমি অন্য এক,আপনার পাশে আমার মতো মেয়ে কখনোই খাপ খায় না ভাইয়া___আজ যদি আমি আপনার প্রপোজাল টা একসেপ্ট করি তাহলে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আসতে পারো,অনেকে হয়তো ভাবতে পারে আমি আমার সুবিধের জন্য,আমার ভবিষ্যতের জন্য_____আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন,,আপনার সাথে কাটানো এই সময় গুলো আমি একটা সুন্দর স্মৃতি হয়ে আজীবন মনে রাখবো___সব চেয়ে ভালো হবে আপনিও সেগুলোকে একটা সুন্দর স্মৃতি ভেবে ভুলে যাবেন___সামনে আপনার পরীক্ষা-আপনার সামনে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আপনি দয়া করে এখন সে সবে ফোকাস করুন,,এমনিতেও আমি শুনেছি আপনার লাস্ট পরীক্ষার রেজাল্টটা ঠিক আশানুরূপ হয় নি আর আমি মনে করি সেটা না হবার পেছনে কোনো না কোনো ভাবে আমি জড়িত আছি___আমি চাই আপনি আমার পেছনে এভাবে সময় নষ্ট না করে নিজেকে সময় দিন,এতে আপনি ভালো থাকবেন আমিও ভালো থাকবো

সন্ধিঃ উজান কিন্তু তোমার থেকে কিচ্ছু চায়নি হিয়া,,উজানের জন্য শুধু তুমি হলেই যথেষ্ট

হিয়াঃ কিন্তু আমি যে শুধু আমি না আপু আমার সাথে আমার এই ভাইয়া টাও যে জরিয়ে,,ভাইয়া যদি আমাকে বিয়ে করে তাহলে তো তাকে শুধু এই আমার না আমার সাথে আমার এই ভাইটারো সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে হবে,,আমি যেখানে যাবো-যা করবো সব কিছু তে আমার সাথে শ্রাবণ জরিয়ে থাকবে,, একটা মানুষ কেনো শুধু শুধু আমার সাথে আমার এই ভাইয়াটারো___যাগ গে আপু ওসব বাদ দিন আমি আসছি আজ

হিয়া শ্রাবণের হাত ধরে যেতে ধরলে শ্রাবণ হিয়াকে থামিয়ে দেয়

শ্রাবণঃ বুবু ভাইয়া তো এখনো কেক কাতে(কাটে) নি,,আমরা কেক কাটা,ফু দিয়ে মোমবাতি নেবানো(নেভানো) দেখবো না

হিয়াঃ না ভাই,,আমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে

ঝিনুকঃ হিয়া দাঁড়া,,ভাইয়া কিন্তু শ্রাবণকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসে,,আজ যদি তুই ফিরে যাস তাহলে কিন্তু ভাইয়াকে অপমান করা হবে

হিয়াঃ (নিজ মনে) আজ এই অপমান টা হলে-ও আমি মেনে নিতে পারবো কিন্তু আমাকে বিয়ে করলে যদি ওনাকে সারাজীবন,,না না

হিয়া আর কিছু না ভেবে শ্রাবণকে নিয়ে এক দৌড়ে
বাহিরে বেড়িয়ে আসে
________________

হিয়াঃ অটো রিকশা কিচ্ছুই তো দেখতে পাচ্ছি না,,আমি এখন কি করে এই বাচ্চা টাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবো

শ্রাবণঃ বুবু একটা কথা বলি

হিয়াঃ হ্যা বল

শ্রাবণঃ তুই ভাইয়ার ওখান থেকে এভাবে কেনো চলে আসলি বাইয়া(ভাইয়া) কতো কষ্ট পাচচে(পাচ্ছে)

হিয়াঃ হুম,,তোর ক্ষুধা পেয়েছে না খুব,জানি তো আমি, দুপুরে ওভাবে কিছু না খেয়ে দৌড়ে এলি,,দাঁড়া কিছু কিনে দেই আগে তোকে

হিয়া একটু সামনে হেঁটে একটা টং এর দোকান দেখতে পেলে শ্রাবণকে নিয়ে বসে যায়

হিয়াঃ চাচি একটা চা আর বিস্কুট দেও না

চাচিঃ কি বিস্কুট খাবা খুইল্লা লও

হিয়াঃ কি বিস্কুট খাবা শ্রাবণ

শ্রাবণঃ ঔ নীল প্যাকেটের টা ওটা ওতা

হিয়াঃ কোনটা এটা____চাচি নিলাম এটা কতো?

চাচিঃ পনেরো টাকা ওটার দাম সোনা

হিয়াঃ আচ্ছা দেও

হিয়া চা আর বিস্কুট নিয়ে শ্রাবণকে পাশে বসিয়ে খেতে দেয়,,শ্রাবণের সত্যি খুব খিদে পেয়ে ছিলো তাই শ্রাবণো চায়ে বিস্কুট ডুবে খেতে শুরু করে

হিয়াঃ তাড়াতাড়ি খা শ্রাবণ একটুপর সন্ধ্যা নামলে বাড়ি ফিরতে সমস্যা হবে

শ্রাবণঃ খাচ্ছি তো,,তুই খাবি না তোর খিদে পায় নি

হিয়াঃ না

শ্রাবণঃ বুবু তুই কাঁদছিস!!__এই বুবু তুই কাঁদছিস কেনো,,বুবু

হিয়াঃ কোথায় কাঁদছি আমি কাঁদছি না দেখ

শ্রাবণঃ ঔ তো কাঁদছিস

হিয়াঃ তুই খা আমি কাঁদছি না

হিয়া সত্যি সত্যি কাঁদছে,,উজানকে কষ্ট দিয়ে যে সে নিজেও ছিঁড়ে যাচ্ছে মন থাকে,,উজান কি সত্যি এই অপমান টা ডিজার্ভ করতো!!

হিয়াঃ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন,,আমি জানি আমার প্রতি আপনার অনুভূতি গুলো কতোটা সত্যে কতোটা পবিএ,,আমিও হয়তো কোথাও গিয়ে আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি,,কিন্তু আমি যে কোনোভাবে আপনার সাথে___আপনি শ্রাবণকে আপন করে নিতে চাইলেও আপনার ফ্যামিলি যদি আপনার সাথে এ ব্যাপারে কিছু,,না না,,এর চেয়ে আপনি আমার দেওয়া এই আঘাত টুকু সহ্য করে ভবিষ্যৎ এ ভালো থাকবেন এটুকু চাওয়া আমার,,আমার সব দোয়াতে আপনি মিশে থাকবেন,,আপনাকে ভুলে যাওয়া যে আমার পক্ষে সম্ভব না

হিয়া ভাবতে ভাবতে অঝোরে চোখের জল ফেলতে থাকে,,এমনি সময় তুষার আর সাব্বির দৌড়ে এসে হিয়ার সামনে হাঁপাতে শুরু করে,,সাব্বিরের হাতে রক্ত সাথে তুষারের ভেতরে পড়া সাদা শার্টেও লেগে আছে হালকা রক্ত!!

তুষারঃ হিয়া হিয়া তুমি

হিয়াঃ ভাইয়া কি হয়েছে আপনারা এরকম করছেন কেনো,,আপ আপ আপনার হাতে এগুলো কিসের রক্ত সাব্বির ভাইয়া____উ উ উজান ভাইয়া কোথায় উনি ঠিক আছে তো,,ওনার কোনো বিপদ হয় নি তো,,কি হলো কি আপনারা চুপ করে কেনো আছেন,,উওর দিন

তুষারঃ তুমি কি হ্যা এভাবে একটা ছেলেকে কেউ রিজেক্ট করে,,খুব আনন্দ করে এখন চা খাওয়া হচ্ছে তাই না

হিয়াঃ ভাইয়া আমি!!

সাব্বিরঃ আজ যদি উজানের কিছু হয় আমরা কিন্তু তোমাকে কখনো ক্ষমা করবো না হিয়া কখনো না

হিয়াঃ আপনারা আমাকে যা কথা বলার পরে বলতে পারবেন,,এখন দয়া করে আমাকে এতটুকু বলুন যে উনি ঠিক আছে কি নেই

তুষারঃ নেই উজান ঠিক তুমি উজানকে রিজেক্ট করে চলে আসার পর পরই উজান কেকের সাথে থাকা চাকু টা দিয়ে সুইসাইড এ্যাটেম্পট করতে যাচ্ছিলো!!

হিয়াঃ এসব কি বলছেন আপনারা,,না না আপনার যা বলছেন তা তা ঠিক নয়,,আমি যাবো আমি যাবো ওনার কাছে,,আমি এক্ষুনি যাবো

সাব্বিরঃ গিয়ে আর কি করবা তুমি,,যা আঘাত দেবার সেটা তো এ-রই মাঝে

হিয়া আর কারো কথা না শুনে শ্রাবণকে নিয়ে এক দৌড়ে আবার তুষারদের বাড়িতে ব্যাক করে,,হিয়ার পিছে পিছে আসে তুষার আর সাব্বির,,এসেই হিয়া ভাইয়া ভাইয়া বলে চিৎকার শুরু করে স্টেজের সামনে যেতেই দেখে উজান পড়ে আছে,,সাদা কোর্ট সাদা শার্ট সাদা ফ্লোর সব একদম রক্ত মেখে লাল হয়ে আছে,,সন্ধি ঝিনুক দাপাদাপি করে উজানকে শান্ত করতে চেষ্টা করছে

সন্ধিঃ হিয়া তুমি!!

ঝিনুকঃ হিয়া তুই__কেনো এসেছিস তুই,,এটা দেখতে যে মানুষ টা__ছিঃ আমার তো ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে ভাইয়া কি না তোর মতো একটা মেয়ে কে এতোটা

হিয়া আর কারো কথা না শুনে দিক বিদিক ভুলে উজানের সাথে ফ্লোরে বসে উজানকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে

উজানঃ চলে গিয়েছিলে তো তাহলে ফিরে আসলে কেনো,কে আমি তোমার?

উজানের প্রশ্নে হিয়া হাউমাউ করে গলা ছেড়ে কেঁদে উঠে

হিয়াঃ আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন,,আমি শুধু চেয়েছিলাম আপনাকে যেনো আমার জন্য কখনো কথা শুনতে না হয়,,কখনো কখনো ছোট হতে না হয়,,তাই জন্য আমি

উজানঃ তাই জন্য তুমি আমাকে এভাবে একা করে দিয়ে চলে যাবে?সবার কথা শুনলে কে কি বকলে সেগুলোকে গুরুত্ব দিলে কিন্তু আমার কষ্ট টা একবারো বুঝতে চেষ্টা করলে না তুমি

হিয়াঃ আমি সত্যি বুঝতে পারি নি আপনি আমাকে এতো টা,,,বিশ্বাস করুন আমি কখনো আপনার মতো কাউকে হারাতে চাই নি কিন্তু কিন্তু আমি যে আমি যে আপনার সাথে কোনো ভাবে____আচ্ছা ওসব ওসব বাদ এখন দেখি কোথায় কেটেছেন আপনি,,কোথায় বলুন আমাকে,,,,এতো এতো রক্ত বের হচ্ছে আপনাকে তো হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে,,,,ঝিনুক ঝিনুক তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস,,তুষার ভাইয়া ও তুষার ভাইয়া আপনি আপনি একটা এ্যাম্বুলেন্স ডাকুন না জলদি,,ওনার তো অনেক ব্লাড বের হয়ে যাচ্ছে____ও সন্ধি আপু আপনি একটু ওনাকে ধরুন না আমাদের কে তো আগে ওনাকে সুস্থ করতে হবে

হিয়া এরদিক ওরদিক তাকিয়ে সবার কাছে সাহায্য চাইতে শুরু করে,,তখনি উজান হিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে হিয়াকে একদম ওর বুকে ফেলে হিয়ার মাথা টা এক হাতে বুকে লেপ্টে ধরে

উজানঃ আমি কোথ্থাও যাবো না,,আমার কিছু হলে তোমার কি

হিয়াঃ আমার অনেক কিছু(খুব কাঁদতে কাঁদতে)

উজানঃ কি অনেক কিছু হ্যা,,তুমি তো আমাকে ভালোই বাসো না তাহলে কিসের এতো চিন্তা তোমার আমার জন্য

হিয়াঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না আমি জানি না কিন্তু আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি বেঁচেও মরে থাকবো,,আপনি যে আমার সব,,ভার্সিটিতে এসে শুধু আপনি আমাকে খুঁজতেন তা কিন্তু না ভার্সিটিতে গিয়ে আমিও আপনাকে একটা বার দেখার জন্য আপনাকে খুঁজতাম,,আপনার হাসি আমার মনকে আনন্দ দিতো,,আমার যতোই রাগ হতো কিন্তু আপনার শান্তির জন্য আমি চুপ হয়ে থাকতাম,,আর এই সব কিছু কে যদি ভালোবাসা বলে,,তাহলে হ্যা আমি আপনাকে ভালোবাসি খুব খুব খুব ভালোবাসি,,খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে

হিয়া উজানকে নিজের দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কথা টা ব’লে কেঁদে উঠে,,উজানো নিজের সব কিছু দিয়ে হিয়াকে জাপ্টে ধরে

হিয়াঃ এখন ওসব বাদ,,আপনি এখন আমার সাথে হসপিটালে যাবেন আর বেশি দেড়ি করলে চলবে না

হিয়া উজানকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে যাবে ওমনি উজান দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে হিয়াকে থামিয়ে দেয়

হিয়াঃ কি হলো চলুন

উজানঃ হাঁসপাখি তুমি সত্যি ভেবেছিলে আমি এতো সহজে তোমার পিছন ছাড়বো

হিয়াঃ মানে!!

উজানঃ তুমি সত্যি ভেবেছো আমি সুইসাইড এ্যাটেম্ট করতে যাবো,,সত্যি শ্রাবণ তোর বুবু টা সত্যি একটা ছাগল

হিয়াঃ মানে!!মানে আপনি হাত কাটেননি,,এই এই রক্ত এগুলো

হিয়ার প্রশ্নে এবার উপস্থিত সবাই হেঁসে দেয়,,ঝিনুক এসে হিয়ার কাঁধে হাত রাখে

ঝিনুকঃ তুই কি ভাবলি বল তো আমরা এতো বুদ্ধু নাকি তোর মতো

হিয়াঃ এগুলো কি তাহলে,সাব্বির আর তুষার ভাইয়া যে আমাকে গিয়ে বললো যে উনি

উজানঃ ওদেরকে আমি সব শিখিয়ে দিয়েছিলাম,,আর এগুলো রক্ত না এগুলো তোমার আলতার রঙ

হিয়াঃ মানে!!আপ আপ আপনি আমাকে বোকা বানিয়ে নিয়ে এসে

উজানঃ yes of course আর তুমি একটু ইডিয়ট বলে ব্যাপারটা এতো ইজি হলো কি-না

উজান আর কিছু বলার আগে হিয়া উজানের বুকে তিন চারটে কিল বসিয়ে দিয়ে উজানকে জড়িয়ে ধরে,,

হিয়াঃ আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলবো না আর কখনো না,,আপনি জানেন আমি ঠিক কতো টা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,,আমার ভেতর টা কি রকম শুকিয়ে যাচ্ছিলো,,মনে হচ্ছিলো আমার ভেতর থেকে সব কিছু,,আপনি আমাকে কথা দিন আপনি আর কখনো আমার সাথে এরকম মজা করবেন না,,এরকম মজা করলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি

উজানঃ এরকম টা না করলে কি আর জানতে পারতাম কেউ একজন আমাকে এ-তো টা ভালোবাসে

উজান হিয়াকে বুকে আগলে নিতে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে,,এদিকে শ্রাবণ এতোক্ষণ তার টুকুর টুকুর চোখ দিয়ে একবার তার বুবুকে তো একবার তার ভালো ভাইয়া কে দেখে যাচ্ছিলো,,চোখ গুলো ব্যাথা হয়ে আসতে সে দৌড়ে এসে হিয়ার শাড়ির আঁচল ধরে টুক টুক করে টানতে শুরু করে,,হিয়া উজানের বুক থেকে মুখ তুললে উজান শ্রাবনকে কোলে নিয়ে আবার হিয়াকে জড়িয়ে ধরে

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া আমরা কেক কাটবো না আমি তোমার কেক কাটা দেখবো

উজানঃ হুম এক্ষুনি কাটবো,,তোর বুবুর জন্যেই তো লেট হয়ে গেলো শুধু শুধু কান্না কাটি করে লেট করে দিলো

হিয়াঃ তবে রে এখন সব দোষ আমার তাই না!!

✅12_13 & 24_25 পার্ট Fb lite দিয়ে পড়া যাচ্ছে না,,অনুগ্রহ করে নরমাল এফবি দিয়ে পড়ুন!!

____________________________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here