মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-32

0
706

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-32

বাসবিঃ সালেহা একটু বাড়িতে আমাকে সময় দিতে পারবা এখন,,ঔ কি বলো তো জানোই তো আজ নীলির বিয়ে কিন্তু যে রাঁধবে বলে কথা হয়েছিল সে এখন বলছে আসতে পারবে না,,,,আমি মহা বিপদে পড়েছি তুমি শুধু আমার সাথে গিয়ে রোস্ট আর মাছ টা রান্না করে দিয়ে আসো কেমন

সালেহা খালাঃ আচ্ছা আপা আপনাকে তো আমি না করতে পারবো না কিন্তু আরেকজন হলে সুবিধে হতো ঔ ১৫/ ২০জন তো আসবে বলেছিলেন আপনি,, এতো গুলো রান্না আপনার বাড়িতে একা হাতে কি করে

বাসবিঃ আমি আছি তো আমি তোমার হাতে হাতে,,একটু দেখো না সালেহা আমি নিরুপায় হয়ে তোমার কাছে

হিয়াঃ (নিজ মনে-আচ্ছা মিটিং তো চারটে আমি যদি এই আন্টিটাকে এখন গিয়ে হেল্প করি তাহলে যেমন ওনার উপকার হবে তেমনি এ বাড়িতে না থেকে আমার সময় টাও কেটে যাবে,,এমনিতে তো আমাকে দেখলেই চাচি ক্ষেপে যাচ্ছে আমি বরং তার চেয়ে ওনাদের বলে দেখি)______আপনারা কিছু না মনে করলে আমি একটা কথা বলি

বাসবিঃ বলো মা কি বলবে?

হিয়াঃ আমি তো বাড়িতে একা আছি মানে বসে আছি,,আপনি চাইলে আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারি,,এসব রান্না করা আমার কাছে খুব একটা কঠিন না

সালেহা খালাঃ না তুমি কেনো এসব করতে যাবা মুনতাসীর,,আমরা কথা বলছি তো,,

হিয়াঃ খালা বিশ্বাস করো আমার কাজ করতে সমস্যা নেই,,উনি বিপদে পড়ছে তাই জন্য আমি বলছি,,এমনিতেও তো আমি বসেই আছি বাড়িতে

বাসবিঃ তুমি রাঁধতে পারো??না মানে তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে রাঁধলে তোমার বাড়ি থেকে কেউ কিছু বলবে না??

হিয়াঃ না না আমাকে তেমন কিছু বলার মানুষ নেই এখানে,,আপনি চাইলে আমি আপনাদের সাহায্য করতেই পারি,,আপনি ভাববেন না আমার হাতের রান্না কিন্তু খারাপ না

বাসবিঃ তুমি যখন বলছো আমি তাহলে তোমার উপর ভরসা করছি,,কি বলো করবো?

হিয়াঃ একদম নিশ্চিন্তে,,

বাসবিঃ তাহলে আর বেশি দেড়ি না করি সালেহা তুমি কি আসবে আমার সাথে এক্ষুনি

সালেহা খালাঃ আপ আপনি যান,,আমি আসছি মুনতাসীরকে নিয়ে,,এক্ষুনি আসছি

বাসবিঃ হুম এসো,,আমি রিক্সা ডাকছি
!
!
!
উজানঃ কিসব বলছিস রুপম তুই লাস্ট লোকেশন কি করে টাঙ্গাইলের কাছাকাছি হবে,, বল তুই আমাকে

রুপমঃ আমি কি করে বলবো বল অনেক কষ্টে এই খোঁজ টা আমি যোগাড় করতে পেরেছি,,ওদিকে পুলিশো বলছে যে নাম্বার টার লাস্ট লোকেশন ওখানে তাহলে!!

উজানঃ আমার না ভীষণ ভয় করছে রুপম,,এই মেয়ে যে কোথায় আছে কেমন আছে,,আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে

রুপমঃ তুই দেখ ওদিক টা মিটিয়ে যতো তাড়াতাড়ি পারা যায়,,আয় এখানে তাড়াতাড়ি,,আমরা দেখছি আর কি করা যায়,,আমাদেরো এখন টেনশন হচ্ছে একটা পুরো দিন হয়ে যাচ্ছে

উজানঃ আচ্ছা আমি দেখি এদিকে কিছু বলে কি করতে পারি,,তোরা কিন্তু আমাকে ফোন দিতে থাকিস,,

রুপমঃ হুম দেবো

ফুফাঃ কি রে কোনো সমস্যা??

উজানঃ না না ফুফা,,বলো?

ফুফাঃ আজ তোকে এতো অন্যমনস্ক লাগছে,,

উজানঃ না এমনি পরীক্ষা চলছে তো ও জন্যে একটু

ফুফাঃ ওহ,,আচ্ছা ছাড় ওসব চল এখন

উজানঃ কোথায়?

ফুফাঃ ছেলে আর ছেলের বাড়ির জন্য এখনো অনেক কিছু কিনে আনা বাকি ওগুলো আনতে

উজানঃ এখনো কেনাকাটা বাকি,,সত্যি তোমরা যে কি করো না,,আচ্ছা চলো

!
!
!

এদিকে হিয়ার অজান্তেই আজ হিয়া এসে উপস্থিত হয় উজানের বাড়িতে,,এটা কি ভাগ্যের পরিহাস না ভাগ্যের কোনো ভালো দিক সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন,,বাসবি হিয়াকে নিয়ে রান্না ঘরে আসতেই সব বুঝিয়ে দেয়,,এদিকে সালেহা খালা আসার সময় হিয়াকে শিখিয়ে দিয়ে দেয় সে যেনো তার পরিচয় লুকিয়ে রাখে এ বাড়িতে,,হিয়া বুঝতে পারে না খালা কেনো এরকম আবদার করছে হঠাৎ ,,সালেহা খালা বলে বাসবি নাকি রিফা চাচির কি রকম ধরনের আত্মীয় তাই হিয়া যেনো চুপ থাকে রিফা চাচি যদি আবার রাগ করে এমনিতে তো তিনি হিয়াকে সহ্য করতে পারেন না ঠিককরে,,হিয়া সরল মনে বিশ্বাস করে নেয় সব কথা,,এদিকে বাসবি হিয়া আর সালেহাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে অন্য কাজে মন দেয়________অল্প কিছুক্ষণেই হিয়ার রোস্ট আর খালার মাছ ভাজা হয়ে আসে,,এদিকে বাসবিও গরম গরম টিকিয়া গুলো ভেজে নিয়ে সালাতের আয়োজন টা শেষ করে ফেলে

বাসবিঃ মেয়েদের কান্ড দেখছো আমার,,একটুপর ছেলে পক্ষ আসছে আর এদের পার্লার থেকে এখনো বাড়ি ফেরার কোনো নামগন্ধ নেই,,ছেলে দু’টোর ওদিকে কিনতে এতো যে সময় লাগছে কেনো হঠাৎ কে জানে

সালেহা খালাঃ তা আপা বড় মেয়ের বিয়ে কেনো জানি এরকম করে দিচ্ছ,,তোমাদের তো টাকার অভাব নেই বলো,, চাইলে তো কতো ধুমধাম করে

বাসবিঃ ছেলেরাই ধুমধাম করতে মানা করে দিয়েছে সালেহা,,কি বলো তো সে বার বিয়ে টা ভেঙে গিয়ে যা পরিস্থিতি হলো বুঝোই তো সব,,,আচ্ছা বাদ দেও শুভ দিনে ওসব পুরাতন কথা ঘেটে কি লাভ,,,মুনতাসীর

হিয়াঃ জ্বী আন্টি

বাসবিঃ তুমি আজ এসে যা উপকার করলে না মা আমার,,তোমাকে হাজার ধন্যবাদ দিলেও কম পড়বে মা,,তোমার এই ভাই টাও কি মিষ্টি একদম যেনো তোমার মতো,,

হিয়াঃ জ্বী,,,আন্টি সব রান্না তো হয়ে এসেছে আমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে আপনার কি আর কিছু কাজ বাকি আছে

বাসবিঃ না মা আর কিছু কাজ বাকি নেই,,নেও এটা রাখো,,তুমি বারবার বলছো তুমি নাকি খাবে না তাড়া আছে তোমার,,এখানে আমি তোমাদের খাবার দিয়ে দিলাম নিজের মনে করে খেয়ে নিও

হিয়াঃ না না আন্টি এসব আবার কেনো?

বাসবিঃ ছোট মনে করো না,,আমি এটা তুমি কাজ করেছো বলে দিচ্ছি তা কিন্তু ভেবো না মা,,তোমাকে সত্যি আমার ভীষণ ভালো লেগেছে,,আমাকে নিজের মা মনে করে খাবার টা খেয়ে নিও

হিয়াঃ কিন্তু আন্টি আমি!!

বাসবিঃ আর কিন্তু না,,নেও

হিয়াঃ হুমম(একটা হাসি দিয়ে)

!
!
!

বাসবির থেকে বিদায় নিয়ে হিয়া নিচে এসে দাঁড়িয়ে রিক্সা খুঁজতে শুরু করে,,সালেহা খালা আরো নাকি কিছুক্ষণ থাকবে তাই উনি আসেন না,,হিয়া একটা রিক্সা নিয়ে উঠে যেতেই সামনের রিক্সা দিয়ে উজান ওর ফুফা সহ আসতে ধরে,,উজান রিক্সা থেকে নামার সময় খেয়াল করে হিয়ার ওড়না টা রিক্সার চাকার কাছাকাছি ঝুলছে কিন্তু রিক্সার হুট তোলা থাকায় উজান হিয়ার মুখ টা দেখতে পারে না!!

উজানঃ এই যে ওরনা টা ঠিক করেন,,চাকায় লেগে কিন্তু যেকোনো বিপদ হতে পারে যখনতখন(চিৎকার করে)

উজানের সেই চিরচেনা কন্ঠ শুনেই হিয়া কেঁপে ওঠে,,এটা তো এটা তো উজানের কন্ঠ কিন্তু উজান এখানে কি করে,,হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে রিক্সামামাকে তড়িঘড়ি করে রিক্সা টা থামাতে বলেই হুট ফেলে পেছনে তাকিয়ে দেখে পেছনে কেউ নেই

হিয়াঃ কেউ তো নেই,,কিন্তু আমার যে মনে হলো আমি ওনার কন্ঠ টা!!ধ্যাত আমিও না কিসব ভাবছি উনি কেনো এখানে আসতে যাবে,,

হিয়া হতাশ হয়ে আবার হুট তুলে দিয়ে রিক্সা মামাকে বলে আপনি চলুন,,এদিকে উজান ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে দু পা উঠতেই আবার দৌড়ে বাহিরে চলে আসে,,কিন্তু দেখে রাস্তা পুরো ফাঁকা কেউ নেই সামনে,,

উজানঃ কেনো আসলাম আমি আবার,,কেনো মনে হচ্ছিলো হিয়া আমার আশেপাশেই কোথাও ছিলো,,পিচ্চি পিচ্চি একটা গন্ধ পেলাম মনে হচ্ছে,,কিন্তু হিয়া কেনো এখানে!!____আমার আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না হিয়া প্লিজ তুমি ফিরে আসো আমার কাছে,,আমি যে আর পাচ্ছি না!!

!
!
!

হিয়ার আসতে আসতে বিকেল হয়ে আসে,,এ-র মধ্যে সন্ধ্যা নাগাদ মিটিং শুরু হয়,,সব মিটিং সেরে সিদ্ধান্ত হয় এই মাসের মধ্যে জমির টাকা সব হাতে আসলে যে যার ভাগ পাবে,,ছেলে হিসাবে শ্রাবণো সবার মত ৭০হাজার আর হিয়া ৩০হাজার মোট এক লাখ,,চাচ্চুর একটু জোড়াজুড়ি তে কথা উঠে ফসলের টাকার কথা,,ছোট চাচ্চু কথা টা উড়িয়ে দিতে চাইলেও দাদু বলে ঠিক আছে হিয়া যেহেতু গত দু বছর থেকে ফসলের টাকা পায় নি তাই উনি নিজ থেকে হিয়াকে দশ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয় হিয়ার হাতে,,আর তাতেই আরো ক্ষেপে উঠে বাড়ির সবাই,,
!
!
!
রাত তখন নয়টার কাছাকাছি,,বিয়ে সেরে নীলিমাকে আটটার ওদিকে বিদায় দিয়ে বাড়ি জুড়ে এখন আবার সেই নীরবতা,,সারাদিনের ক্লান্তি এসে জুড়ে বসেছে উজানের শরীরে,,সে তার বিছানায় গা মেলে দিতেই বাসবি ভেজা চোখে উজানের সামনে এসে বসে যায়,,

বাসবিঃ রাজা?

উজানঃ হ্যা মা

উজান উঠে বসে বাসবির কোলে মাথা রাখলে বাসবি উজানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে

বাসবিঃ তুই কি এক্ষুনি আবার ফিরে যাবি?

উজানঃ হ্যা মা,,আর কোনো উপায় নেই,,বিশ্বাস করো মা আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আমি থেকে যেতাম কিন্তু আজ কোনোভাবেই হোক আমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হবে

বাসবিঃ খুব বড় বিপদ হলে আমাকে বল আমি না হয় তোর বাবাকে বলে,,ওনার তো অনেক জানাশোনা আছে

উজানঃ না মা আমি দেখছি,,আর তুমি এখনো কাঁদছো এটা কোনো কথা,,নীলিকে তো একদিন যেতেই হতো বাড়ি ছেড়ে তাই না বলো,,বিয়ে টা একবার ভেঙে যাওয়া তে ওকে কতো কথা শুনতে হয়েছিলো বলো তো,,তুমি চাও না নীলির একটা সুন্দর সংসার হোক ওর ইচ্ছে গুলো আবার পূরণ হোক

বাসবিঃ (চোখ মুছে)হুমম চাই,,দেখি এখন উঠ সারাদিনে কিচ্ছু যে পেটে দিস নি সব জানি আমি,,আমি ভাত এনে খাইয়ে দিচ্ছি তারপর গিয়ে তুই ঢাকা ফিরবি না থাকবি দেখা যাবে

উজানঃ আচ্ছা,,

বাসবিঃ তা প্লেনে তো যাবি না মনে হচ্ছে?বাসের টিকিট বুক করা আছে?

উজানঃ না মা টিকিট নেই নাকি প্লেনের,,,বাস কাউন্টারে যোগাযোগ করলাম ওখানেও সীট সব বুকড,,তাই ট্রেনে ফিরবো একই তো সময় লাগবে বাসের মতো,,

বাসবিঃ আচ্ছা দেখ যা ভালো বুঝিস কর,,আমি খাবার নিয়ে আসি,,একটু হাত মুখ টা ধুইয়ে নে ততোক্ষণে

!
!
!

এদিকে হিয়ার চাচ্চুর বাড়িতে ঘটে যায় এক কান্ড,,শ্রাবণ তার বয়সী ছোট চাচ্চুর বাচ্চা টার সাথে খেলতে গিয়ে ভেঙে ফেলে রিফা চাচির এক বিরাট ফুলদানি,,যদিও এই কাজে শ্রাবণ সহ সেই বাচ্চা টারো ছিলো সমান দোষ কিন্তু রিফা চাচি দিক বিদিক কিছু বিবেচনা না করে নিজের রাগ মেটাতে গিয়ে বসিয়ে দেয় শ্রাবণের গালে এক থাপ্পড়,,উপস্থিত সবাই থমকে যায়,,চাচি যা নয় তাই বলে শ্রাবণকে ধরে অপমান করতে শুরু করে,,শ্রাবণ ভয়ে কাঁপতে থাকে,,চোখ দিয়ে অঝোরে কান্না বের হতে থাকে,,এদিকে হিয়া এই ব্যাপারটা কিছুতেই আর হজম করতে পারে না,,নিজের সহ্যের সীমা টা শেষ হয়ে আসলে হিয়া এবার মুখ খুলতে বাধ্য হয়,,বাধ্য হয় এই নোংরা মানুষ গুলোর সাথে নোংরামি করতে!!

হিয়াঃ অনেক সহ্য করেছি আমি আর না,,আপনার সাহস হয় কি করে আমি দাঁড়িয়ে আছি আর আপনি আমরাই সামনে আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলছেন

চাচিঃ এই তুমি আমাকে আমাকে চোখ দেখাচ্ছ,,কি কি করবে যদি আমি তোমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলি কি করবে তুমি

হিয়াঃ আর একবার শুধু তুলে দেখান ওর গায়ে হাত,,আপনার এই হাত আমি এখানেই ভেঙে দেবো,,আপনাদের মুখের উপর কখনো কোনো কথা বলি নি শুধু মাএ মা আর বাবা আমাকে এরকম কোনো শিক্ষা দিয়ে যান নি,,কিন্তু এতো কিছুর পরো মুখ বুঝে সব টা শুনে যাবো এতো সহজ আমাকে ভাববেন না

চাচিঃ তুমি তুমি দেখলে সুমনা এই মেয়ের তেজ দেখলে,,কি রকম করে কথা বলছে দেখো সবাই,,এসে তো এমন ভান করেছে যেনো ভাজা মাছ কি করে উল্টে খেতে হয় সেটাও জানে না,,আর এখন দেখো

হিয়াঃ কি করবো চাচি খারাপ ব্যবহারটা করতে তোমারই বাধ্য করলে,,আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলো তোমার সাহস হয় কি করে,,

চাচিঃ দেখো দেখো পুতুলের বাবা সকালে যেই মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুললা তার ব্যবহার দেখছো ছি,, কি আব্বা এখনো চুপ করে থাকবেন আপনি কিছু বলবেন না আপনার এই বড় নাতি নাতনিকে

হিয়াঃ কি বলবে দাদু,,কিছু বলার মুখ আছে নাকি ওনার______কিছু মনে করো না দাদু আজ আমি এই কথা গুলো বলতে বাধ্য হচ্ছি এই চার টা বছর আমি একায় একটা মেয়ে কিভাবে ঢাকায় ছিলাম তোমরা কেউ দেখতে যাও নি,,বুঝতে চাও নি আমার কষ্ট টা,,আমি কি খেলাম নাকি খেলাম না কেউ দেখতে যাও নি,,আজ তাই এতোদিন পর তোমার এই ভালোবাসা টারো আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই,,তোমার বড় ছেলে আর বড় বউমা না আমার জন্য টাকা পয়সা থুয়ে না যাক একটা সোজা মেরুদণ্ড দিয়ে গেছে____!!!!!!!!!

চাচ্চুঃ হিয়া মা আমার একটু শান্ত হ

হিয়াঃ আমাকে তুমি ক্ষমা করো চাচ্চু,,আমার তোমার কথা শুনে এখানে আসা টা ঠিক হয় নি,,আমার ভেবে আসা উচিৎ ছিলো,,যাই হোক রিফা চাচি তোমার এই ফুলদানি টার দাম কতো বললা ৮ হাজার তাই তো ঠিক আছে এই নেও এখানে পুরো দশ আছে,,,,তোমাদের এই কটা টাকা দিয়ে তার বিনিময়ে এরকম অপমান আমার চাই না গো চাচি,,,দাদু

দাদুঃ____

হিয়াঃ তোমার জমি তোমার জমির টাকা তুমি বরং তোমার বাকি দুই ছেলের মধ্যেই ভাগ করে দিও,,আমার কাছে ঔসব টাকা পয়সার চেয়ে আমার আর আমার ভাইয়ের আত্মসম্মান টা যথেষ্ট বড়,,,,তোমাদের টাকা নেবার থেকে আমি কোনো বাড়িতে কাজ করে নিজের টাকা রোজগার করবো তাও এটা জেনে খুশি থাকবো যে সেটা আমার পরিশ্রমের টাকা,,,,চাচ্চু আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার এই বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব না

চাচ্চুঃ তুই এই রাতে কোথায় যাবি মা,,শোন না মা

হিয়াঃ না চাচ্চু,,তুমি শুধু কষ্ট করে আমাকে আর শ্রাবণকে একটা বাস বা ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেও আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব না,,বুঝো তুমি একটু আমার অবস্থা টা

চাচ্চুঃ ঠিক আছে,,আমি চাইও না তুই আর এ বাড়িতে থাক,,এটা তোর জায়গা না____বাবা একটা কথা বলি নিজের রাগ টাকে পুষে রেখে তো অনেক অন্যায় করেছেন নিজের বড় ছেলের বড় বউমার উপর এবার অনন্ত নিজের দোষ টা স্বীকার করতে শিখুন,,আপনি চাইলেই এই মানুষ দুটোকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে পারতেন কিন্তু আপনি,,আপনার আদর্শকে আদর্শ বলতে আজ ঘৃণা হচ্ছে আমার খুব ঘৃনা

!
!
!

উজানঃ দেখছো হিয়া পিচ্চি আমি খাবার টার মধ্যেও তোমার হাতের গন্ধ পাচ্ছি,,তুমি কি নেশা ধরিয়ে দিছো আমাকে দেখে যাও শুধু একবার___রান্না ঘরে তো সালেহা খালা কে দেখলাম রান্না করতে আর আমি কি না এখন,,এই মন টা ঠিক কতো খানি তোমার মধ্যে ডুবে আছে বুঝো তুমি❤️

বাসবিঃ আজ তো তোর সাথে ভালো করে কথাও বলতে পারলাম না,,হিয়াকে কিন্তু আমি সামনাসামনি দেখতে চাই রাজা,,ওকে বলবি ওর মা ওর জন্য এখানে অপেক্ষা করছে সে যেনো তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে এখানে চলে আসে

উজানঃ ঠিক আছে মা বলবো,,আচ্ছা মা হিয়ার যে কিচ্ছু নেই এতে তোমার কোনো অসুবিধে নেই তো

বাসবিঃ ধুর পাগল,,হিয়ার কিছু নেই দেখেও যে তুই ওকে ভালোবেসেছিস আমি তাতেই বুঝে গেছি মেয়ে টা ঠিক কতোটা ভালো!!

!
!
!

হিয়াঃ তুমি শুধু শুধু আমাকে ট্রেনের এই রুম টা বুক করে দিলে,,কতো টাকা খরচ হলো বলো তো

চাচ্চুঃ একদম বেশি কথা বলবি না,,যা বলছি তাই করবি,,এ-র পর থেকে আমাকে আরো শক্ত হতে হবে,,কিছু না বলে বলে সবাই মাথাতে চড়ে বসছে,,এই নে এই টাকা টা রাখ

হিয়াঃ কিন্তু চাচ্চু আমি কেনো?

চাচ্চুঃ আবার আমার মুখের উপর তুই কথা বলছিস তোকে রাখতে বলেছি তুই রাখবি,,ধর,,এখানে আমি কেক বিস্কুট কিনে দিছি ট্রেনে ক্ষুধা লাগলে খাবি কিন্তু একদম ট্রেন থেকে নামবি না,,আর এই যে ফোন টা দিয়েছে এ-র পর থেকে রোজ আমার সাথে যোগাযোগ করবি

হিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,তুমি তোমার যত্ন নিও আমি জানি তুমি ভালো নেই,,একদিন রিফা চাচি তোমাকে ঠিক বুঝবে তুমি দেখো

চাচ্চুঃ তাই যেনো হয়,,আচ্ছা ট্রেন ছাড়বে আমি আসছি এখন,,ফোন টা ওন রাখিস

হিয়াঃ আচ্ছা,,সাবধানে থেকো তুমি

চাচ্চু নেমে যেতেই হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়,,আর এবারো ভাগ্য ক্রমে উজানের বুক করা রুম টা হিয়ার রুমের দুটো রুম পড়েই আসে,,উজান ওর রুমে এসে বসে যেতেই একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে,,কাল থেকে এখন অবধি হিয়ার খোঁজ নেই সে কিছুতেই এই কথা টা বিশ্বাস করতে পারছে না,,মনে মনে ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে একেবারে,,
!
!
!
বাসবিঃ সালেহা দাঁড়াও,,আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে

সালেহাঃ হ্যা আপা বলো

বাসবিঃ মুনতাসীর কে সালেহা??

সালেহা খালাঃ কে আবার তখন যে তোমাকে বললাম আমি

বাসবিঃ আমাকে তুমি মিথ্যে বলছে সালেহা!!আমার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া কিন্তু এতো সহজ না!!

!
!
!

রাত তখন তিনটের কাটা ছুঁই ছুঁই,,উজানের চোখে তো ঘুম নেই সেই সাথে ঘুম নেই হিয়ার চোখেও,,উজান একটা সিগারেট ধরিয়ে ওর রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ট্রেনের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে সেটা টানতে থাকতে,,রাতের অন্ধকার সাথে ট্রেনের দমকা বাতাসে সে নিজের চিন্তা গুলো ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকে এই যা!!

উজানঃ এই পিচ্চি কোথায় আছো তুমি,,আর কতোদিন আমার সাথে তুমি এভাবে লুকোচুরি খেলবা আর কতো??___আমি সত্যি আর পারছি না বিশ্বাস করো,,হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হলে এই আমাকেও সাথে নিয়ে যা-ও না তোমার,,হিয়া পিচ্চি কোথায় তুমি!!

!
!

হিয়াঃ আজকের রাতটার দৈর্ঘ্য এতোটা দীর্ঘ কেনো লাগছে আমার কাছে,,সকাল কখন হবে আমি যে আর ওনাকে না দেখে থাকতে পারছি না,,কাল নেমেই আমি ওনার বাড়িতে যাবো আগে উনি তো বুঝি আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ওদিকে পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছে!!

শ্রাবণঃ (ঘুমন্ত কন্ঠে) বুবু বুবু

হিয়াঃ হ্যা হ্যা সোনা,,কিছু লাগবে খাবে খাবে কিছু

শ্রাবণঃ হিসু আসছে কোথায় করবো??

হিয়াঃ হিসু করবে,,আচ্ছা আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি,,উঠো উঠো তুমি

শ্রাবণঃ বুবু কোলে,

হিয়াঃ আচ্ছা নিচ্ছি কোলে,,আসো

হিয়া ঘুমন্ত শ্রাবণকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে হিসু করাতে নিয়ে যায়,,হিসু করিয়ে আসতে যেই হিয়া ওর রুমের কাছে যাবে ঠিক তখনি উজান ওর হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে দিয়ে ওর রুমে আসতে গিয়েই সামন থেকে আসা হিয়াকে দেখতে পেয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে যায়!!

হিয়াঃ এই তো আমার সোনা বাবা টা,,আমরা এখন আবার ঘুমাবো,,দেখি দেখি,,কোথায় চুলকাচ্ছে মাথায় মাথায় চুলকাচ্ছে এদিকে এদিকে চুলকাচ্ছে,,দেখি আমি

উজানঃ হিয়া(অস্ফুটে)❤️

হিয়া ওর রুমে ঢুকতে গিয়েও থেমে যায়,,সামনে এটা ও কাকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখলো ,,উজানকে!!,,হিয়া কোনো স্বপ্ন দেখছে না তো,,উজান এখানে কি করে,,,,,,,উজান এক পা এক পা করে হিয়ার দিকে আগাতে ধরে এদিকে হিয়া আলতো আলতো করে সামনে তাকাতে গিয়েই ডুকরে কেঁদে উঠে,,হিয়ার সাথে কেঁদে উঠে উজানো,,কেউ জোরে শব্দ করে কাঁদছে না কিন্তু দুজনের চোখের জল আজ বাঁধ ভেঙে দিয়ে ঝরছে,,,,,,,,উজান এসে হিয়ার সামনে দাড়াঁতেই হিয়া একটা করুন চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে উজানের দিকে,,হিয়ার ঠোঁট কাঁপছে হিয়া কিছু বলতে পারছে না,,উজান কাঁপা কাঁপা হাতে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলে দিতে শ্রাবণ ঘুমের চোখে হিয়ার কাঁধ থেকে মাথা তুলে এদিকে ঘুরে ভালো ভাইয়া কে দেখেই ফিঁক করে একটা মলিন হেসে উঠে

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া❤️(ঘুম ঘুম চোখে)

শ্রাবণের মুখে ভালো ভাইয়া ডাক টা শুনে উজান এবার আর নিজের মধ্যে থাকতে পারে না,,ডুকরে কেঁদে উঠে,,শ্রাবণ হিয়াকে রেখে হাত বাড়ায় তার ভালো ভাইয়ার কাছে যাবে বলে,,উজান কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণকে কোলে নিয়ে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলে দিতে শ্রাবণ আবার ঘুমিয়ে যায়,,উজান হিয়া কেউ কিচ্ছু বলছে না শুধু কাঁদছে খুব কাঁদছে,,উজান নিজেকে হালকা শান্ত করে ঘুমন্ত শ্রাবণকে নিজের রুমে এনে শুইয়ে দেয়,,হিয়া উজানের পিছন পিছন এসে দাঁড়িয়ে যেতেই উজান হিয়াকে এক টানে নিজের বুকের উপর নিয়ে এসে ফেলে,,না উজান এখন আর কাঁদছে না,,হিয়া কাঁদছে শুধু,,দুজনের তো এ-তো টাই কষ্ট হচ্ছে যে তারা যেনো গত দুদিন না গত দু বছর ধরে একে অপরকে চোখে হারিয়ে ফেলেছে এরকম অবস্থা!!❤️❤️

উজানঃ কি শান্তি পাও তুমি আমার সাথে এরকম লুকোচুরি করে,,কি শান্তি টা পাও,,,,,,,এরকম করে একটু একটু করে কষ্ট দেবার থেকে একবারে কষ্ট দিয়ে আমাকে তুমি,,

উজানের কথায় হিয়া আরো কেঁদে উঠে

উজানঃ চুপ,,শ্রাবণ উঠে যাবে

হিয়াঃ আমাকে ক্ষমা করে দিন শেষবারের মতো,,আমি আর কখনো আপনাকে না বলে কোথাও যাবো না কোথাও না

উজান হিয়ার চোখের জল গুলো মুছে হিয়ার পুরো মুখে এক এক করে ওর ঠোঁটের নরম ছুঁইয়ে দেয়,,প্রশস্ত বুক টায় হিয়াকে আগলে একদম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,,হিয়াও আজ উজানকে এতো টাই গভীরভাবে জড়িয়ে নেয় যে হিয়ার হাতের খামচি বসে যায় উজানের পিঠে,,উজান হিয়াকে যেটুকু আদর করা যায় বিয়ের আগে তার সব দিয়ে হিয়াকে ভরিয়ে দিতে থাকে,,চুমু আঁকে হিয়ার মুখ থেকে শুরু করে গলার ভাঁজ বুকের খাঁজের মাঝে,,আগলে ধরে নিজের পাঁজর ভেদ করে কলিজার ভেতরে❤️❤️আবার যদি হিয়া হারিয়ে যায় এই ভেবে ভয়ে সে সারারাস্তা হিয়াকে নিজের থেকে আর আলাদা করে না,,ঢাকা ফেরা অবধি এক হাতে শ্রাবণকে এক হাতে হিয়াকে শক্ত করে আগলে উজান হিয়াকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here