মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-08

0
837

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-08

সকাল তখন ৮টা,,কিন্তু সারারাত জুড়ে চলা ঝড়ের তান্ডবের রেশ এখনো প্রকৃতি জুড়ে বিরাজমান,,মাঝরাতের মতো বজ্রপাতের গুরমগুরুম গর্জন এখন শোনা না গেলেও আকাশ কালো করে এখনো ভারী বৃষ্টির ছন্দ পতিত হচ্ছে অবিরত,,,

সকাল হতে হতেই এতো ঝড়ের মাঝেও উজান রুপমকে পাঠিয়ে দেয় শ্রাবনকে সুস্থ ভাবে বাড়িতে নিয়ে আসতে আর ওর সাথে ফ্লাট শেয়ার করা সাব্বির তারেক আর সিফাত কে ঘুম ঘুম অবস্থা তেই শীফট করে দেয় নিচে গ্যারেজের কাছে দারোয়ান কাকুর রুমে__🤦‍♀️

হিয়ার ঘুম ভাঙ্গে ঠিক আটটার একটুপর পরই,,আর ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাঙতেই হিয়া নিজেকে আবিষ্কার করে একটা নতুন জায়গায়,,নতুন বিছানায়,,

হিয়া চোখ খুতিয়ে খুতিয়ে এই নতুন জায়গা টাকে পরক্ষ করতে থাকে,,উজানের রুম টা যেনো পুরো তাজমহল টাইপ সাদা দিয়ে ঘেরা,,বেড টাও যেমন তুলতুলে সাদা তেমনি হিয়ার গায়ে জড়ানো কম্বল টাও শফট সাদা,,মাথার উপর এসি টাও সাদা,,জানালার পর্দা গুলোও সাদা,,দেওয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ি টাও সাদা,,ঘরের সব আসবাবপত্র ও সাদা এমনকি সাদা টেবিল টার উপরে রাখা মগ টাও সাদা🤦‍♀️___হিয়ার কাছে উজানের এই গোছানো পরিপাটি রুম টা যেনো সত্যি তাজমহল হয়েই চোখে লাগে

হিয়াঃ আমি___আমি কোথায়___এটা কোন জায়গা___আমি কিভাবে(কালকের সব ঘটনা এক এক করে মনে করে)___আমি আমি তো কাল___কে আমাকে!!

হিয়া কম্বল টা গা থেকে সরিয়ে উঠতে যেতেই বাধা পায় ওর হাতে ক্যানুলার সাথে লাগা স্যালাইনের বোতল টার সাথে,,,হিয়া ভাবতে থাকে ওর হাতে এসব ক্যানুলা স্যালাইন ঠিক কোথা থেকে আসলো,,কিছু বুঝতে না পেরে হিয়া টেনে টেনে ওর হাত থেকে ক্যানুলা টা খুলতে শুরু করে,,আর হিয়ার এই টানাটানি দেখে উজান দৌড়ে রুমে এসে হিয়ার পাশে গিয়ে হিয়াকে বুকের মধ্যে আগলে একশো একটা বকুনি দিতে শুরু করে

উজানঃ পাগল হইছো তুমি,,কি করতে যাচ্ছিলে😡___ক্যানুলা কেউ এভাবে খুলে,,,ব্লাড বের হয়ে আসলে কি হতো কোনো কোনো ধারণা আছে তোমার😠

হিয়াঃ আপনি এখানে!!___আপনি এখানে কি করছেন___আর আমিই বা এখানে কি করে

উজানঃ আমি নিয়ে এসেছি তোমাকে__দেখি হাত টা দেও___আস্তে___তুমি এরকম অস্থির কেনো হিয়া,,,দেখি আস্তে

হিয়াঃ আহহ,,,,লাগছে

উজানঃ লাগবেই তো,,শরীরে কিছু থাকলে না এতটুকু ব্যাথা সহ্য করতে পারবা তুমি

হিয়াঃ কে বলেছে আপনাকে আমার শরীরে কিচ্ছু নেই

উজানঃ সত্যি আছে কি,,নীলি যখন ধাক্কা দিয়ে ঔ রুমের ভেতর তোমাকে আটকিয়ে দিলো তখন তুমি নীলিকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারো নি কেনো তাহলে

হিয়াঃ আপ–নি কি ক–রে!!!!আর ওরা তিনজন ছিলো আমি একাই কি করে ওদের সাথে

উজানঃ সব গুলোর চুল ছিড়ে দিতে সেটাও কি পারতে না

হিয়াঃ🙄🙄

উজানঃ আর তুমি কি ভেবে ছিলে এতো বড় একটা ইন্সিডেন্ট আমার কাছে লুকোনো থাকবে

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

হিয়া আর কিছু বলার আগেই উজান হিয়ার ঠোঁটে নিজের এক আঙ্গুল ধরে হিয়াকে থামিয়ে দেয়,,মুহুর্তে হিয়ার পুরো শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে উঠে,,কই উজান তো ওর এতো কাছে ওকে আগলে ওর হাতের ক্যানুলা ঠিক করে খুলে দিচ্ছে তখন তো ওর কিচ্ছু ফিল হচ্ছিল না তাহলে এখন কেনো

উজানঃ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি

হিয়াঃ____

উজানঃ ____একদিন ভার্সিটি যাই নি বলে,,,,,এসব বাঁধিয়ে ফেললে,,এরপর আমি সামনের বছর ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেলে তখন তখন কি করবে____

উজান হিয়ার ঠোঁট থেকে আঙ্গুল সরিয়ে হিয়ার ক্যানুলা খুলতে আবার মনোযোগ দেয়

হিয়াঃ না মানে আমি

উজানঃ মকবুল স্যারের প্রপোজাল টা একসেপ্ট করতেই হচ্ছে দেখছি,,তোমা–কে একা একা ছাড়ার রি–স্ক নিতে তো আর ইচ্ছেই হ–চ্ছে না আমার

হিয়াঃ আমার সাথে খারাপ কিছু হলে তাতে আপনার কি??

হিয়ার প্রশ্নের উত্তরে উজান শুধু নীরব একটা হাসি দেয়,,তা দেখে হিয়া ভূঁ কুচকে তাকাতেই উজান এক হাতে হিয়ার কপালের ভাঁজ টা সোজা করে দিয়ে ফিক করে হেঁসে উঠে,,ক্যানুলা টা খোলা শেষ হলে উজান হিয়ার হাতের উপর একটা বেন্ডেজ দিয়ে স্যালেইন রাখার হ্যান্ডেল টা পা দিয়ে একটু দূরে সরিয়ে দেয়,,,

তারপর আলতো করে হিয়ার আর একটু কাছাকাছি এসে হিয়ার কানের পাশে চুল গুলো গুজিয়ে দিয়ে

উজানঃ মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে না তোমার

হিয়াঃ হ্যা মানে

উজানঃ এতো কিসের প্রশ্ন তোমার,,আমি তোমার সাথে আছি এটাই কি যথেষ্ট না তোমার কাছে

হিয়াঃ না আসলে

উজানঃ কাল তো দিব্যি নাক ডেকে ডেকে সারারাত আরাম করে ঘুমোলে আর আমি,,আমি যে সারারাত না ঘুমিয়ে তোমার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা তে থাকলাম❤️

হিয়াঃ ইয়ে মানে আপনি কেনো,,আর আমি মোটেও নাক ডেকে ডেকে ঘুমোই না

উজানঃ তাই____যখন ঘুমে থাকো মনে তো হয় একটা শান্ত মেয়ে কিচ্ছু জানে না কিচ্ছু বুঝে না,,কিন্তু যেই আমার কাছে আসো ওমনি আমার পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে মন চায় তোমার তাই না

হিয়াঃ আমি কিন্তু নিজে ইচ্ছে করে আপনার সাথে ঝগড়া করি না,,আপনি শুধু শুধু

হিয়া কিছু বলার আগেই আচমকা একটা আকাশ কাপিয়ে বাজ পড়ার শব্দ কানে আসতেই হিয়া কেঁপে ওঠে উজানের বাহুর কাছের টি শার্ট টা খামচে ধরে উজানের কানের কাছে বুকের এক সাইডে মুখ লুকিয়ে নেয়,,কাল রাত থেকে হওয়া মেঘের এই তান্ডবে উজান অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও হিয়ার কাছে তো এটা এখন নতুন,,হিয়া কি আর জানে কাল থেকে কি ঝড় টাই হচ্ছে পুরো শহর জুড়ে!!!!

হিয়াঃ কিসের শব্দ হচ্ছে এরকম,,বাহিরে কি বৃষ্টি হচ্ছে

উজানঃ হুম

হিয়াঃ তাই বলে এভাবে

উজানঃ কেনো ভয় হচ্ছে তোমার

হিয়াঃ হুম,,আ আ আ–মাদের বাড়ি থেকে তো এরকম শব্দ হয়নি কখনো,,আজ কি মেঘ একটু বেশি ক্ষেপে আছে

উজানঃ হুমম একটু,,তবে তুমি গ্যারাউন্ড ফ্লোরে থাকো তাই বুঝতে পারো না মেঘ সবসময় এরকমই ক্ষেপে থাকে,,আমার ফ্লাট তো পাঁচ তলা তাই এখান থেকে মেঘের রাগ করা টা আমি একটু বেশিই করে দেখতে পারি,,বুঝলা ইডিয়ট

হিয়া উজানের বুক থেকে মুখ তুলে উজানকে এবার কালকের সব ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে,,,উজান এক এক করে হিয়াকে কালকের সব ঘটনা খুলে বলে,,,,

উজানঃ ডক্টর আঙ্কেল বলেছে তোমাকে আরো কিছু টেস্ট করাতে হবে তারপর উনি বাকি মেডিসিন গুলো লিখে দেবে,,,,আজ তো শুক্রবার সব বন্ধ তবুও আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম ইমার্জেন্সিতে কোন গুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা থাকে আমি দেখি আকাশ টা পরিষ্কার হলে তোমাকে নিয়ে বিকালে একবার_____

উজান বলতে থাকে আর হিয়া এক দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দুম করে কেঁদে উঠে

উজানঃ হিয়া তুমি কাঁদছো,,,হিয়া___এই মেয়ে কাঁদতিস কেনো??___হিয়া

উজান না চাইতেও হিয়ার দু গাল আলতো করে ধরে হিয়াকে নিজের বুকের কাছে লেপ্টে ধরে

উজানঃ আরে তুমি কাঁদতিস কেনো,,ক ক কষ্ট হচ্ছে কোথাও,,শরীর খারাপ লাগছে বলো আমাকে,,,,,,,হিয়াআআ

হিয়াঃ (ভীষণ ভাবে কাঁদতে কাঁদতে) আমার না কাল ঔ রুমে বন্দি থাকতে ভীষণ ভয় করছিলো,,রুম রুমটা কি রকম পুরাতন আর ফাঁকা ছিলো___কোনো কোনো আলো ছিলো না_____আমার ভীষণ ভয় হচ্ছিল হাত পা কাঁপছিলো মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে

উজানঃ আমি বুঝছি তো,,,এখন তুমি একটু শান্ত হও___হিয়া___চুপ আর না

হিয়াঃ আমার দম আঁটকে আসছিলো মনে হচ্ছিল আমি দম আঁটকে____ক্ষুধা লাগছিলো পা পানির তেষ্টা পাচ্ছিলো খুব____গলা টা ব্যাথা হয়ে আসছিলো কিন্তু কেউ আমার চিৎকার শুনে নি

উজানঃ আই এম সরি হিয়া,,,এই সব টা আমার জন্য____চুপ আর কাঁদে না___আমি আমি আছি না এখন তোমার সাথে,,কেনো এখনো তুমি এতো ভয় পাচ্ছ,,,আমি কিচ্ছু হতে দিতে পারি কি তোমার

হিয়ার মুখ টা দুহাতে তুলে হিয়ার চোখের জল গুলো মুছে দেয়,,হিয়া ওর দুহাতে দিয়ে নিজের গালের উপর রাখা উজানের হাত দুটো শক্ত করে ধরে আবার কাঁদতে থাকে,,আর কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎই তার খেয়াল আসে শ্রাবনের কথা

হিয়াঃ আমার শুধু তখন শ্রাবণের কথা খুব মনে পড়ছিলো,,যদি আমার কিছু একটা হয়ে যেতো তাহলে ওকে ওকে কে দেখতো___ছেলে টা তো আমার_______শ্রাবণ_____শ্রাবণ কোথায়

উজানঃ আছে,,শ্রাবণ আছে তুমি এবার একটু শান্ত হও

হিয়াঃ আমি আমি শ্রাবণের কাছে যাবো

উজানঃ হ্যা যাবো তো,,কিন্তু তুমি তার আগে একটু স্থির হয়ে বসো

হিয়াঃ না না আমি এখুনি যাবো ওর কাছে,,কাল রাত থেকে ও কিভাবে,,,শ্রাবণ শ্রাবণ ঠিক আছে তো

উজানঃ একদম ঠিক আছে,,,আহ হিয়া এরকম ছেলেমানুষি করে না,,আমি বলছি তো আমি নিয়ে আসবো শ্রাবণকে তোমার কাছে___চুপ আর না___আরে

হিয়াঃ আপনি ছাড়ুন আমাকে,,,আমাকে যেতে দিননন___আমি যাবোওও

উজানঃ হিয়া আমি রাগ হচ্ছি কিন্তু এবার

হিয়াঃ আপনি কেনো বুঝতে চাইতিছেন না আমার শ্রাবণের কাছে যাওয়া টা কতো টা জরুরি

উজানঃ হ্যা আমি

উজান আর কিছু বলার আগেই রুপম শ্রাবণকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেই শ্রাবণ দৌড়ে এসে তার বুবুনি কে জড়িয়ে ধরে,,হিয়াও আষ্টেপৃষ্টে আগলে ধরে শ্রাবনকে মায়ের কোলের সব ভালোবাসা দিতে থাকে

শ্রাবণঃ তুই আমাকে রেখে একা একা ভালো ভাইয়ার বাড়িতে ঘুমোলি আমি তোর সাথে কথাই বলবো না বুবুনি আর

হিয়াঃ আসলে কালকে অনেক কাজ ছিলো তো,,রাত হয়ে গেছিলো খুব তাই তোর এই ভাইয়াটা আমাকে একা একা যেতে দেই নি,,রাস্তায় যদি খারাপ ছেলে গুলো তোর বুবুর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে দিতো তখন

শ্রাবণঃ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে,,কিন্তু এরপর থেকে তোর দেড়ি হলে তুই কিন্তু আমাকেও সাথে নিয়ে আসবি এখানে ঠিক আছে

হিয়াঃ হুম

শ্রাবণ আর হিয়ার কথার মাঝে উজান উঠে হিয়ার জন্য নাস্তা আনতে চলে যায়,,এদিকে হিয়া শ্রাবণকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললে শ্রাবণ আর রাগ করে না তার বুবুনির উপর,,,,,
__________

হিয়াঃ এই যে শুনেছেন,,কোথায় গেলেন আপনি__ভাইয়াআআ

উজানঃ (খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে দুম করে বের হয়ে এসে)___ভাইয়াআআআ নাআআআ😡

হিয়াঃ (ফিক করে হেঁসে দিয়ে) তো কি বলবো আঙ্কেল🥰

উজানঃ কি!!আমার সাথে মজা হচ্ছে

হিয়াঃ বালাইষাট আপনার সাথে মজা করতে যাবো আমি কোন দুঃখে শুনি

উজানঃ খুব কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে আজ____কি চাই ডাকছিলে কেনো?

হিয়াঃ কিছু চাই না,,আমি এখন শ্রাবণ কে নিয়ে বাড়ি ফিরবো তাই আপনাকে বলতে

উজানঃ হোয়াট,,হোয়াট ডিড ইউ সে__কে বাড়ি ফিরবে,,তুমি___কে তোমাকে বাড়ি ফিরতে দেবে শুনি

হিয়াঃ কে ফিরতে দেবে মানে

উজানঃ চুপচাপ ঘরে গিয়ে বসো,,আমি নাস্তা নিয়ে যাচ্ছি তুমি আর শ্রাবণ এখন নাস্তা করবে

হিয়াঃ না আমি বাড়ি যাবো

উজানঃ আমি বলি নি তুমি এখন বাড়ি যেতে পারবে না___আমি এখানে তোমাকে নিয়ে আসছি আমি তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসবো ক্লিয়ার

হিয়াঃ হ্যা মানে না___আপনি আমাকে নিয়ে এসেছেন ঠিক আছে কিন্তু আমি আমি কেনো শুধু শুধু আপনার এখানে

উজানঃ বাহিরে আকাশের অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে তোমার,,কাল রাত থেকে কি পরিমাণ ঝড় হচ্ছিলো শহরে কোনো কোনো আইডিয়া আছে তোমার এ ব্যাপারে

হিয়াঃ না মানে

উজানঃ একবার গিয়ে অনন্ত আকাশ টা দেখে আসো,,কি রকম কালো হয়ে আছে যেকোনো সময় আবার

হিয়াঃ তাহলে,,এখন___আমি কি করে আপনার এখানে____না না আমি ঠিক কিছু একটা ম্যানেজ করে চলে যেতে পারবো,,আপনি কাল থেকে আমার জন্য অনেক করেছেন___এরপর আমি আপনার বাড়িতে এভাবে,,,কথা টা জানাজানি হলে ওরা তখন আমাকে আপনাকে___এর চেয়ে আপনি বরং আমাকে আপনার ফোন দিয়ে একটা উবার ম্যানেজ করে দিন ভাড়া যতো লাগবে আমি দিয়ে দেবো___আয় শ্রাবণ

উজানঃ জাস্ট স্টপ হিয়া(ধমকে)____কি ভাবো তুমি নিজেকে,,সুপার ইউম্যান__সব পাড়ো___বাই এনি চান্স রোডে যদি কোনো কোনো রকম কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যায় তখন পারবে শ্রাবণকে সাথে নিয়ে সেটা সামলাতে

হিয়াঃ_____

উজানঃ আমি তোমার জন্য কিছু বলছি না হিয়া___একবার শ্রাবণের কথা টা ভাবো___এই ঝড়ের শহরে তুমি কি করে___কোনো কোনো এক্সিডেন্ট হলে তখন তুমি কি করে

হিয়াঃ (শ্রাবনকে দেখে নিয়ে)তাহলে এখন

উজানঃ চুপচাপ আমার ঘরে গিয়ে বসো,,আমি নাস্তা নিয়ে আসছি

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

উজানঃ আকাশ টা পরিষ্কার হলে আমি বিকালে তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসবো খুশি

হিয়া নিরুপায় হয়ে বিকেল অবধি উজানের সাথে উজানের ফ্লাটে থাকতে রাজি হয়ে যায়,,

কিছুক্ষণ পর উজান নাস্তা নিয়ে এসে হিয়াকে আর শ্রাবণকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে হিয়াকে সকালের মেডিসিন টা দিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে বলে,,,,,,

উজান আলতো করে ওর কাবাড খুলে হিয়ার সামনে এগিয়ে দেয় একটা শাড়ির বাক্স,,শাড়ির বক্স হাতে নিয়ে হিয়া তো পুরো বিস্মিত,,কি আছে এটাতে

হিয়াঃ এটা কি

উজানঃ ড্রেস টা চেঞ্জ করে আসো,,,এই কামিজে থাকতে তোমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি

হিয়াঃ আপনি কি করে!!

উজানঃ____

হিয়াঃ কাল না ঔ রুমের ভেতর এ খুব ধুলোবালি ছিলো,,আর মাকড়সার জাল ময়লা সব মিলেমিশে জামাটার সাথে এক হয়ে কি রকম গা টা এলার্জিতে

উজানঃ হুম,,বুঝতে পারছি_____এতে আমার বোনের জন্য কিনে রাখা একটা শাড়ি আছে,,চিন্তা নেই,,শাড়ির সাথে যা সব পড়তে হয় সব রাখা আছে__তুমি চাইলে

হিয়াঃ কিন্তু আমি কি করে আপনার বোনের জন্য কিনে রাখা শাড়ি

উজানঃ আমি সামনের পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি আর বাড়ি ফিরছি না___যাওয়ার আগে কিনে নিতে পারবো আর একটা কিন্তু এখন এটা তোমার জরুরি

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু আমি

উজানঃ নেও,,আমি শ্রাবণকে নিয়ে অন্য রুমে আছি তুমি দরজা লাগিয়ে চেঞ্জ টা করে আসো

হিয়াকিছু বলার আগেই উজান হিয়ার হাতে শাড়ি টা তুলে দিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,,এদিকে হিয়ার নিজেরো জামা টা পড়ে খুব উশখুশ লাগছিলো,,গা চুলকোচ্ছিলো ভীষণ ভাবে,,তাই হিয়াও নিজের মনের কাছে হার মেনে শাড়ি টা পড়ে নেয়,,

শাড়ি টা ছিলো সুতির,,ডীপ নেভিব্লু রঙের মাঝে চারপাশে ছিলো লাল রঙের মাঝারি আকারের পাড়,,আঁচল টাও ছিলো লাল,,,

শাড়ির এই কম্বিনেশন টা যেনো হিয়ার মায়াবী মুখ টাকে আরো পবিত্র আর প্রাণবন্ত করে তুললো নিমিষে,,

হিয়া শাড়ি পড়ে উজানের সামনে এসে দাঁড়াতেই উজানের পুরো পৃথিবী যেনো থমকে যায় হিয়ার শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজে,,কাকে দেখছে এটা,,সেদিনো তো হিয়া শাড়ি পড়ছিলো তার চাইতেও তো হিয়াকে আজ এই শাড়িতে অনেক অনেক অনেক সুন্দর লাগছে,,তাহলে কি এটা শাড়ির গুন না হিয়ার নিজের,,উজানের চোখের পলক যেনো পরে না তার প্রেয়সী হিয়ার উপর থেকে,,আর উজানের এই নেশাভরা চাহনি হিয়াকে ভেতরে ভেতরে পুরো লজ্জায় একদম রঙিন করে তুলছে যেনো মুহুর্তে মুহুর্তে,,

শ্রাবণঃ ওয়াআআআআওওওও,,,আমার বুবু টাকেএএএ কি মিষ্টি লাগছে___বুবুনি বুবুনি তোকে কি সুন্দর লাগছে জানিস,,,ইসস,,তুই এরকম সুন্দর সুন্দর শাড়ি পড়িস না কেনো,,এ-র কম সুন্দর সুন্দর শাড়ি পড়বি তখন তোকে এরকম সুন্দর সুন্দর লাগবে বুঝলি___বুবু___ভালো ভাইয়া আমার বুবু টাকে কি রকম সুন্দর লাগছে দেখছো,,আর তুমি বলে আমার বুবুনি পেত্নী এই দেখো আমার বুবুনি পেত্নি না আমার বুবুনি একটা পরী___

উজানঃ হুম সত্যি একটা পরী❤️

শ্রাবণ ফিক করে হেঁসে দিলে উজান একটু কেশে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়ে

হিয়াঃ আমি বলছি কি ভাইয়া,,আকাশ তো এখন অনেকটাই মানে বৃষ্টি তো নেই না আমি কি শ্রাবণকে নিয়ে

উজানঃ না____এখন তোমার কাজ আছে আগে কাজ গুলো সারবে দেন আমি তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসবো

হিয়াঃ কাজ!! কি কাজ

উজানঃ ঔ যে কিচেন দেখছো,,ওখানে গিয়ে দুপুরের জন্য গরম গরম খিচুড়ি আর রোস্ট করবা,,,আজ খালা আসবে না তাই আজ এই ডিউটি তোমার

হিয়াঃ মানে,,খালা আসবে না মানে এই ডিউটি এখন আমার,,আজব

উজানঃ ইয়েস বাড়িতে মেয়ে বলতে এখন তুমি আছো,,তাই তুমি এখন

হিয়াঃ তাই বলে আমি

উজানঃ কেনো রাঁধতে পারো না তুমি

হিয়াঃ কে বলেছে আপনাকে যে আমি আমি রাধতে পারি না,,,এজন্য তো সকালে নাস্তায় যা রুটি খাওয়ালেন রুটি তো নয় যেনো কোনো এক দেশের মানচিত্র

উজানঃ 😏😏এই শুনো আমি যে টুকু যা পেরেছি করেছি,,,এখন তুমি গিয়ে তোমার কাজ করবে,,আমি আর শ্রাবণ ভিডিও গেম খেলবো,,আমাকে আর শ্রাবণকে মোটেও বিরক্ত করবা না তুমি হু

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু,,আরে,,আরে শুনুন,,আরে কোথায় যাচ্ছেন,,আমি কি করে এখন___আচ্ছা লোক তো ইনি

উজান হিয়ার কথা না শুনে শ্রাবণকে নিয়ে গিয়ে ভিডিও গেম খেলতে শুরু করে
______________

রান্নাঘরে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে চুল খোপা করে রোস্টের জন্য মুরগীর কাটা অংশ গুলো টক দই দিয়ে মাখিয়ে নিচ্ছে হিয়া,,খিচুড়ি প্রায় শেষের দিকে হয়ে আসছে,,এমন সময় উজান উঠে হিয়ার কাছে এসে কিচেনের এক তাকে গা এলে দিয়ে বকবক করতে থাকে,,আর হিয়া মনোযোগ সহকারে রোস্ট মেরিনেট করতে করতে উজানের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকে।

উজানঃ এই আপেল টা কাটো তো,,আমি আর শ্রাবণ খাবো

হিয়াঃ পারবো না,,ওখানে চাকু আছে নিজে নিয়ে কেটে খান

উজানঃ কি অকৃতজ্ঞ তুমি হিয়া,,আমি কাল সারারাত অবধি তোমার জন্য,,আর তুমি এখন আমাকে এই সামান্য আপেল টা কেটে দিতে পারছো না

হিয়াঃ হলে হলাম আমি অকৃতজ্ঞ,,একটা কাজ করছি আমি,,আপনি দেখছেন আমার হাত বন্ধ তারপরো কোন আক্কেলে আপনি আমাকে দিয়ে____আর আমি বুঝি না খিচুড়ির সাথে মানুষ ভুনা মাংস টাইপ কিছু খায় আপনি তো দেখছি রোস্ট খাচ্ছেন,,রোস্ট কি খিচুড়ির সাথে যায়

উজানঃ হ্যা যায় না,,কিন্তু আমি খাই আমার ভালো লাগে

হিয়াঃ (উজানের হাতে চাকু টা ধরিয়ে দিয়ে) কাটুন____আপনি তো মানুষ টাই অদ্ভুত,,আপনার খাবারদাবার উদ্ভট হবে এটাই তো স্বাভাবিক

উজানঃ আর তুমি কি পেত্নী একটা

হিয়াঃ আমি পেত্নী হলে আপনি একটা কুমড়ো পটাশ বুঝলেন

উজানঃ আমি আমি কুমড়ো পটাশ

হিয়াঃ তা নয় তো কি,,ঔ উপরের তাকে দেখছি গুনে গুনে ৮টা কুমড়ো রাখা এসব নিশ্চয় আপনি খান

উজানঃ হ্যা মানে ইয়ে,,হ্যা কুমড়ো আমার ফেবারিট তাই আমি কুমড়ো খাই তোমার কি তাতে

হিয়াঃ আমার কিছুই না,,আমার আর কি হবে

উজানঃ তোমার কি আমার সাথে ঝগড়া না করলে পেটের খাবার হজম হয় না না,,,শ্রাবন টা দেখতে যেমন কিউট কথা গুলোও কি মিষ্টি,,কি সুন্দর করে বুবু বুবু বলে ডাকে তোমাকে,,মাঝেমধ্যে তো আমার ডাউট হয় তুমি সত্যি সত্যি শ্রাবণের বুবু তো না আবার

হিয়াঃ 😠😠😠😠

উজানঃ সরি সরি,,কি করবো বলো শ্রাবণ এতো কিউট,,ঠোঁট গুলোও কি গোলাপি গোলাপি,,আহ গায়ের রঙ তো পুরো বাটার,,,কিন্তু তুমি

হিয়াঃ আমি আমি কি হ্যা,,,শুনুন আমি হয়তো শ্রাবণের মতো ওতো ফর্সা নই কিন্তু আমার স্কিন যথেষ্ট ভালো বুঝলেন

উজানঃ সে তো মুখে আটা ময়দা মাখলে যে কোনো মেয়েই মুখ গ্লো করবে,,,,ঔ যে বলে না বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট,,আজকাল কার মেয়েরা তো ঔ শুধু ক্রীম দিয়ে মুখ ফর্সা করে এদিকে পুরো শরীর তো

হিয়াঃ আপনি ক টা মেয়ের শরীর দেখে বের হয়েছেন শুনি,,আর আমার মুখ যে রকম আমার শরীরের টনো সেরকম বুঝলেন

উজানঃ প্রমাণ দেও

হিয়াঃ প্রমাণ দেবো মানে

উজানঃ হ্যা তুমি যেটা বললা সেটার__

উজান কিছু বলার আগেই ওর চোখ যায় হিয়ার কোমড়ের কাছে শাড়ির ফাঁক দিয়ে বেড়িয়ে আসা একটু ফাঁকা অংশে,,আর তা দেখেই বেচারা পুরো🥰🥰

উজানঃ বুঝলাম

হিয়াঃ কি

উজানঃ তোমার কোমড়,,সুন্দর অনেক

হিয়াঃ 🙄🙄

উজানঃ শাড়ি টা ভালো করে গুঁজো,,পাগলি একটা

বলেই উজান একটা নীরব হাসি দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে,,এদিকে হিয়া নিজের কোমড়ের দিকে তাকাতেই লজ্জায় পুরো লাল হয়ে কপালে হাত দেয়,,এতোক্ষণ ধরে ও কি এসব মিনিংলেস কথা বলে যাচ্ছিলো এই বাজে লোকটার সাথে ধুর

হিয়াঃ নিজেও একটা অসভ্য,,এনার সাথে সাথে আমাকেও অসভ্য বানিয়ে দিচ্ছে ধুর,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here