😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-(12+13)
উজান আর ঝিনুকের এক প্রকার অনুরোধে হিয়া পিকনিকে যেতে রাজি হয়,,সাথে তো এখন শ্রাবণ আছেই সে তার বুবুকে বাগিয়ে বুগিয়ে আরো বেশি করে পিকনিকের জন্য চাপ দিলে হিয়া আর না করে না,,
পিকনিকের উদ্দেশ্যে খুব সকালে বাস এসে থামে রাঙামাটিতে,,পাহাড়ি এলাকা চারপাশ জুড়ে লাল পাহাড়ের ছড়াছড়ি একটুদূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দেখা মিলছে কিছু চা বাগানের,,যাদের কাছে রাঙামাটি জায়গা টা একদম নতুন তারা যেনো বাস থেকে নেমেই বিশাল আকৃতির এসব পাহাড় দেখে পুরো হতবাক,,কেউ কেউ ক্লান্ত শরীরেও নিজেকে পাহাড়ের সাথে ক্যামেরা বন্দি করতে ব্যস্ত,,কেউ বা দু চোখ ভরে পাহাড়ের আশেপাশের বাকি প্রকৃতিটাকে চোখ মেলে দেখতে।
স্টুডেন্ট আর শিক্ষক মিলে প্রায় ৭০জনের সদস্যের জন্য দুটো বড় রিসোর্ট বুক করা হয়,,দুটো তে ৩৫ জন ৩৫জন করে মোট এই ৭০জন,,আর প্রতি রুমে তিনজন করে,,সেই সূএে হিয়ার রুমে হিয়া ঝিনুক আর সন্ধি থাকবে,,শ্রাবণ আর সন্ধির ভাই ফয়সালের জায়গা হয় উজানের সাথে উজানের রুমে,,যদিও ঔ রুমে উজানের সাথে থাকবে তুষার আর সাব্বির,,ছেলে দের আর কি এক রুমে দশজন থাকলেও ওদের তেমন কোনো অসুবিধে হয় না,,আর হলে প্রথমের দিকে গণ রুমে থাকার সুবাদে ব্যাপার টা বেশ ইজি হয়ে যায় সবার জন্য।
সবাই যে যার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিতে ব্যস্ত,,দুপুরে লাঞ্চ করে বিকেলে সবাই পাহাড় টা আজ একটু দেখতে বের হবে এজন্য এখন সবাই একটু জিরিয়ে নিয়ে শরীরে এনার্জি গেইন করতে থাকে,,হিয়াদের রুম টা থেকে শেষ হয় মেয়েদের রুম তার পর শুরু হয় ছেলেদের,,আর ছেলেদের প্রথম রুম টাই উজান ওদের নিজেদের জন্য বরাদ্দ করে রাখে,,তাকে তো তার হাঁস পাখির কাছাকাছি থাকতে হবে নাকি,,
আর মজার ব্যাপার হলো রিসোর্টের রুম গুলো এমনভাবে ডেকোরেট করা যাতে এক রুমের বারান্দার সাথে পাশের রুমের বারান্দা টা একদম গা ঘেঁষে লাগিয়ে দেওয়ার মতো!!
ঝিনুকঃ হয়েছে তোর,,আচ্ছা আমাকে টাওয়াল টা দে আমি গোসল টা সেরে আসি
হিয়াঃ তোকে টাওয়াল দিলে আমি কি দিয়ে মাথা মুছবো
ঝিনুকঃ জামার ওরনা টা দিয়ে মুছ না,,কে দেখতে আসছে তোকে এখন
হিয়াঃ আচ্ছা নে,,সন্ধি আপু কোথায় রে?
ঝিনুকঃ আপু তো গোসল সেরেই নিচে নেমে গেলো,,আপুর নাকি এসব রেস্ট টেস্টের কোনো প্রয়োজন নেই
হিয়াঃ হুমম আপু কে যা চঞ্চল দেখলাম
ঝিনুকঃ যাক ভাইয়ার ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে সন্ধি আপু টা ঠিক একদম ভাইয়ার মতো,,একদম আলাদা
হিয়াঃ হুম,,আচ্ছা যা এখন তুই আমি বারান্দায় রোদে দাঁড়িয়ে গা টা একটু শুকিয়ে নেই ততোক্ষণে
ঝিনুক টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের মধ্যে ঢুকে গেলে,,হিয়া ওর গায়ের ওড়না টা দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে গায়ে রোদ মাখতে শুরু করে,,হিয়া এখনো খেয়াল করে নি তার পাশে একদম গা ঘেঁষে লাগিয়ে আছে উজানদের বারান্দা টা,,হিয়া এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে দূরের পাহাড় দেখায় ব্যস্ত,,হিয়া কখনো ভাবতেও পারে নি সে কোনোদিন এভাবে রাঙামাটিতে এসে,,!!
এমন সময় উজান ফোনে গেম খেলতে খেলতে বারান্দায় চলে এসে এ পাশ ফিরে হিয়ার উপর চোখ পড়তেই ওখানে পুরো থমকে যায়!!____হিয়ার মুখে এসে পড়েছে রোদের আলো,,ভেজা চুল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে টপটপ,,সেই পানি ভিজিয়ে দিয়েছে হিয়ার বুকের নিচ থেকে শুরু করে কোমড়ের ভাঁজে,,কমলা জামা টার ভিজে অংশ টুকু পানিতে আরো ডিপ হয়ে হিয়ার শরীরের ভাঁজ গুলোকে আরো স্পষ্ট করে তুলছে উজানের চোখে,,,হিয়ার এই নারীত্বের মাধুর্য উজানের পুরুষে মনে এই সময় এক অন্য রকম উথাল-পাতাল ঢেউ তুলে দিচ্ছে,,উজানের মন তো চাইছে এখুনি গিয়ে তার প্রেয়সীর ভেজা চুলে সে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে নিজের শান্তি টুকু খুঁজে নিক❤️❤️❤️❤️❤️কিন্তু অনেক কষ্টে উজান নিজেকে সংযত করে নিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে এবার হিয়ার দিকে তাকিয়ে গলা কাঁপিয়ে ঝারি দিয়ে উঠে,,উজানের এরকম বাঘের মতো হুঙ্কার শুনে হিয়ার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে,, এ পাশ ফিরে উজানের চোখের দিকে তাকাতেই হিয়া পুরো কাবু হয়ে যায়
উজানঃ হোয়াট দা হেল ইস দিস,,কি করছো এ-রকম করে ওড়না ছাড়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে,,
উজানের কথায় হিয়া আরো শকড খেয়ে নিজের দিকে তাকাতেই হাতে থাকা ওড়না টা টপাটপ নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়,,
উজানঃ একটা মানুষ এতো কেয়ারলেস হয় কি করে,,আশেপাশে এপাশ ওপাশ তো মানুষ চোখ দিয়ে দেখে,,,আমি না এসে সাব্বির বা তুষার এসে দেখলে খুব ভালো লাগতো
হিয়াঃ আপনি দেখলেই বা আমার ভালো লাগবে কেনো,,(ফিসফিস করে)
উজানঃ কি বললা,,জোরে কথা বলো
হিয়াঃ কিছু বলিনি আমি
উজানঃ যাও রুমে,,আর আমি না বলা অবধি বারান্দায় যেনো তোমাকে না আসা দেখি
হিয়াঃ কেনো বারান্দা টা কি আপনার নামে লেখা,,যে এখানে আসতে আমার আপনার পারমিশন নিতে হবে
উজানঃ আবার আমার মুখের উপর কথা
হিয়াঃ হ্যা কথা,,কে আপনি যে আমি আপনার কথা সবসময় শুনে চলবো,,এটা আমার রুমের বারান্দা আমি যখন খুশি আসবো আপনার কি তাতে
উজানঃ হিয়া আমি কিন্তু তোমাকে
হিয়াঃ যা খুশি করুন গিয়ে আমাকে,,আমি আমার ইচ্ছে মতো এই দুদিন এই বারান্দায় আসবো আর যাবো,,আপনার কঁচু শুনবো আমি হু
বলেই হিয়া উজানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাগে গটগট করে রুমে ঢুকে পড়ে,,এদিকে তো উজান পারলে বুঝি গিয়ে হিয়াকে এখন চিবিয়ে খায় গপগপ করে,,
_____________________
দুপুরে সবাই বারোটার মধ্যেই লাঞ্চ সেরে পাহাড় দেখতে বেড়িয়ে পড়ে,,পাহাড় দেখে রিসোর্টে ফিরতে বিকেল তখন চারটার কাছাকাছি,,সবাই সন্ধ্যা অবধি থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু টিচার রা সবাই ক্লান্ত থাকায় কথা হয় কাল একদম সকাল হতে রাত অবধি তারা সবাই কে পুরো রাঙামাটি ঘুরে নিয়ে আসবে,,তাই সবাই যে যার রিসোর্টে এসে নিজেদের মতো করে নিচে বড় লন টায় গল্প করতে থাকে,,কেউ বা গিয়ে রুমে শুইয়ে পড়ে,,কেউ বা গিয়ে রাতে কি খাওয়া হবে তাই নিয়ে স্যারদের সাথে ডিসকাস শুরু করে,,
রাইসাঃ উজান এখন আগের মতো নেই নীলি,,তুই দেখেছিস আসার পর থেকে ও কি রকম করে কথা বলছে আমাদের সাথে,,মনে হচ্ছে যেনো দায় সারছে
নীলিমাঃ সবটা সবটা এই মেয়ে টার জন্য,,এই মেয়ে টা যবে থেকে আমাদের লাইফে এসেছে তবে থেকে উজান আমাকে ইগনোর করে সারাক্ষণ এই মেয়ের পেছনে পেছনে
রাইসাঃ কিছু একটা কর নীলি,,এই মেয়ে টা আর উজান আরো কাছাকাছি আসার আগেই ওদের দুজনকে আলাদা করে দে,,নাহলে এই জীবনে উজানকে আর তোর পাওয়া হবে না
নীলিমাঃ জাস্ট শেট আপ রাইসা,,উজান শুধু আমার,,আজ কয়েকদিন ধরে উজান আমাকে এই মেয়ের জন্য যা ইনসাল্ট করছে তারপর তো আমি উজান কে নিজের করেই উজানের এই অহংকার টাকে পুরো শেষ করে দেবো,,,,ভার্সিটির ক্রাশবয়কে কি করে নীলি তার জুতোর তলায় রাখবে তোরা জাস্ট দেখবি শুধু
নিধিঃ সে না হয় তুই কি বড় ঢিল মারবি এটা তোর ব্যাপার,,এখন একটা কাজ করলে কি রকম হয় বলতো
নীলিমাঃ কি কাজ নিধি??
নিধি নীলিমা আর রাইসার কানে কানে কিসব বলে এই রিসোর্টে ওঠা সব ফাস্ট আর সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েদের ডেকে পাঠায় বড় লন টায় তারা কানামাছি খেলবে বলে,,সবাই ভাবে রিসোর্টে রুমে বসে থাকার চাইতে এটা বেস্ট হবে,,তাই সবাই রাজি হয়ে যায়,,ঝিনুক আর হিয়া প্রথমে খেলতে না চাইলেও সবার অনুরোধে খেলবে বলে রাজি হয়,,প্রথমদিকে বেশ মজা করেই সবাই খেলতে শুরু করে,,ঝিনুকের চোখেও একটা সময় নিধি পট্টি দিলে হিয়া খুব মজা করেই সবার সাথে ঝিনুককে মাঝে ঘুরিয়ে খেলতে শুরু করে,,ঝিনুকের পর আরো দুজনকে নিধি পট্টি বেঁধে দেয়,,আর এরপর আসে হিয়ার পালা,,হিয়াও সরল মনে রাজি হয়ে সবার সাথে খেলতে শুরু করে
কিন্তু এইবার রাইসা রা র্যাগিং এর নামে শুরু করে তাদের নির্যাতন,,মাঝে মাঝে তারা ইচ্ছে মতো হিয়াকে ছুঁইয়ে দিতে দিতে হিয়ার হাতে কোমড়ে তাদের তীক্ষ্ণ নখের খামচি দিতে শুরু করে,,,,অনেক সদস্য হওয়ার এই কাজ টা কে করছে হিয়া চোখ বন্ধ করে ঠিক বুঝতে পারে না,,এক পর্যায়ে রাইসারা খামচি দিয়ে হিয়ার হাতের এক পাশ পুরো ছিঁড়ে রক্ত বের করে দেয়,,হিয়া এবার আর না পেরে চিৎকার করে উঠে
হিয়াঃ আমার হাতে লাগছে,,কে খামচি দিচ্ছে আমাকে
নীলিমাঃ এক মিনিট তোরা থাম না,,আরে থাম,,হিয়া কিছু বলছে
ঝিনুকঃ হিয়া কিছু বলছিস তুই
হিয়াঃ দেখ না খেলার নাম করে কে জানি আমাকে খামচি দিচ্ছে
ঝিনুকঃ খামচি দিচ্ছে!!___কে??
হিয়াঃ আমি কি করে জানবো আমি তো
রাইসাঃ এই কে তোরা এসব করছিস,,দেখ এসব কিন্তু এলাও না,,খেলছিস খেল কিন্তু তাই বলে এসব কি ধরনের ফাজলামো
নীলিমাঃ আচ্ছা হিয়া,,কেউ আর এরকম করবে না তুমি খেলো,,কেউ এরকম করলে তুমি আমাকে বলো আমি ওখানেই খেলা স্টপ করে দেবো,,ঠিক আছে
হিয়াঃ হুম
খেলা আবার শুরু হয়,,এবার আর নিধি রা কেউ হিয়াকে খামচি দেয় না ঠিকই কিন্তু রাইসা খেলতে খেলতে হিয়াকে সামনে নিয়ে আসতে শুরু করে,,সামনে একটা জায়গা বড় করে খুড়ে রাখা আছে আর সেটায় পানি জমে কাঁদা হয়ে একদম যাচ্ছে তাই অবস্থা,,নিধিদের প্লান ছিলো তারা হিয়াকে এই গর্ত টায় ফেলে দেবে,,সেই অনুযায়ী তারা হিয়াকে কিনারে নিয়ে গর্ত টায় ফেলে দিতে সক্ষমো হয়,,,,
মুখ পাশে এক কানি হয়ে পড়ে গিয়ে হিয়া হাতের এক সাইডে প্রচন্ড রকমের আঘাত পেলেও মাটি গুলো কাঁদায় নরম থাকায় হিয়া ব্যাথা টা বেশি অনুভব করতে পারে না,,হাত দিয়ে চোখের পট্টি টা খুলতেই হিয়া দেখতে পারে ঝিনুক বাদ দিয়ে সবাই ওকে নিয়ে কি রকম হাসাহাসি করছে,,
ঝিনুকঃ একটা মানুষ পড়ে গেছে এভাবে আর আপনারা তাকে না তুলে এভাবে হাসাহাসি করছেন
নীলিমাঃ এই থাম তোরা,,আমাদের সবার স্পেশাল স্টুডেন্ট পড়ে গেছে তাকে তোলার ব্যবস্থা কর
সবাই আবার হে হে করে হেঁসে দেয়
ঝিনুকঃ লাগে নি তো কোথাও তোর,,হাত দে আমাকে
হিয়াঃ হাত দিলে হবে না ঝিনুক,,মাটি টা খুব পিচপিচে হয়ে আছে
ঝিনুকঃ তুই দে আমি পারবো তোকে ধরতে
ঝিনুক হাত বাড়িয়ে তোলার আগেই উজান এসে নিজের হাত টা হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়,,উজানকে দেখে খিলখিল করতে থাকা পরিবেশ টা নিমিষেই গম্ভীর হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়,,কেউ কেউ তো ভয়ে ওখান থেকে ফাঁকফোকর খুঁজে পালিয়েও যায়,,বাকি গুলো ওখানে দাঁড়িয়েই কাঁপতে থাকে!!!!!!
উজানঃ দেখি হাত টা দেও আমাকে
হিয়াঃ ভাইয়া আমি..
উজান হাত বাড়িয়ে হিয়াকে তুলতে যাবে ওমনি সন্ধি এসে উজান কে ধাম করে ধাক্কা দিয়ে হিয়ার উপর ফেলে দেয়,,আর উজান হিয়া সহ সোজা গিয়ে কাঁদায় পড়ে পুরো মাখোমাখো হয়ে যায় নিমিষে,,সন্ধির এই কাজে উজান আর হিয়া শকড খেলেও উপর থেকে ঝিনুক আর সন্ধি ফিঁক করে হেঁসে ফেলে,,তাদের সাথে খিলখিল করে হাসতে থাকে শ্রাবণ আর ফয়সালো
হিয়াঃ এটা কি করলেন আপনি,,আমাকে না উঠিয়ে আপনি উল্টো আমার গায়ে এসে,,,উঠুননন আমার উপর থেকেএএএ
উজান উঠতে ধরেও হিয়া উজানের শার্টের কলার চিপে ধরে থাকায় উজান টান পেয়ে আবার হিয়াকে নিয়ে কাঁদার মধ্যে পড়ে যায়
হিয়াঃ আরেএএএ কি করছেন কি,,,উঠুনননন আমার উপর থেকে,,বারবার এই এসে আমার উপর পড়ছেন কেনোওও
উজানঃ (ঝারি দিয়ে)একটু থামবে তুমি হিয়া,,ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছ তখন থেকে,,আমি কি ইচ্ছে করে তোমার সাথে এভাবে কাঁদায় মাখামাখি করছি,,ডিসগাস্টিং____কে রে কে কে আমাকে পেছন থেকে এভাবে ধাক্কা দিলো কে
ফয়সালঃ এই সন্ধিফন্দি আপু তোমাকে ধাক্কা দিছে ভাইয়া
উজানঃ সন্ধি তুই!!___দাঁড়া এবার তোকে দেখাচ্ছি আমি
বলেই উজান এদিক সেদিক না তাকিয়ে এক ঘাপলা কাঁদা তুলে নিয়ে সন্ধিকে ঢিল ছুঁড়তে যাবে ওমনি সন্ধি মাথা নামিয়ে ফেললে ঢিল টা গিয়ে পড়ে তুষারের উপর
তুষারঃ হোয়াট দা,,উজান তুই আমাকে
উজানঃ সরিইইই,,বিলিভ কর আমি ইচ্ছে করে
সন্ধিঃ দে না দে,,আমাকে দিয়ে তো দেখা
উজান রাগে গিয়ে হাত বাড়িয়ে সন্ধির পা ধরে টান মারলে সন্ধি পুরো উল্টো হয়ে হিয়ার গায়ে পড়ে যায়
হিয়াঃ মা গো মা,,আপনি কি ঠিক করেছেন যে আজ আপনি আমার কোমড় পুরো ভেঙে দিবেন
উজানঃ না না আমি থাকতে তোমার কোমড় ভাঙ্গবে না,,আমি আছি তো
এদিকে সন্ধিরো এই অবস্থা দেখে উপর থেকে তুষার পুরো হেঁসে কুপোকাত,,তুষারের এই হাসি দেখে সন্ধির পুরো গা পিওি জ্বলে উঠে,,সন্ধি আড় চোখে ঝিনুকে ইশারা করলে ঝিনুক ধাম করে তুষারকে উজানের গায়ে ধাক্কা দিয়ে কাঁদায় ফেলে দিলে সন্ধি আর হিয়া হেঁসে হেঁসে পুরো খুন হবে হবে,,,এদিকে আবার শ্রাবণ বুদ্ধি করে ঝিনুককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় হিয়ার পাশে,,,আর শ্রাবণের এই কাজে উজান পুরো খুশি হয়ে এক এক করে শ্রাবণ আর ফয়সালকে কোলে করে কাঁদার মধ্যে নামিয়ে দেয়,,,,সবার এই কান্ড দেখে সাব্বির নিজে থেকে কাঁদায় ঝাপিয়ে পড়ে
শুরু হয় সবার কাঁদা মাখামাখি খেলা,,সাব্বির ব্যস্ত ঝিনুককে কাঁদা মাখাতে আসলে সাব্বির ঔ মনে মনে একটু আধটু ঝিনুককে পছন্দ করে এই যা,,ওদিকে তুষার ব্যস্ত সন্ধির উপর শোধ তুলতে,,শ্রাবণ আর ফয়সাল ব্যস্ত তাদের ছোট ছোট হাত দিয়ে কাদা ছুড়াছুড়ি করতে আর এদিকেএএএএ আমাদের উজান ব্যস্ত হিয়ার সাথে কাঁদা দিয়ে ভালোবাসা নিবেদন করতে,,❤️❤️
হিয়ার চোখে পট্টি থাকায় কাঁদা হিয়ার চোখে মাখতে পারে না কিন্তু উজান পরে গিয়ে চোখের এক পাশে কাঁদা মাখিয়ে নেয়,,আর একটু হলেই সেই কাঁদা উজানের চোখে ঢুকে যাবে যাবে
হিয়াঃ এই এই থামুন,,আরে দাড়ান না স্থির হয়ে
উজানঃ কিইইই
হিয়াঃ দেখি চোখ টা একটু বন্ধ করুন তো,,আরে বন্ধ করতে বলছি মেলে তাকাতে বলি নি,,করুন না বন্ধ
উজান চোখ বন্ধ করলে হিয়া ওর ওড়নার ভালো একটা সাইড খুঁজে উজানের চোখ টা পরিষ্কার করে দিতে থাকে,,পরিষ্কার করা হয়ে গেলে উজান চোখ খুলে হিয়ার দিকে এগিয়ে এসে হিয়ার কোমড় ধরে সবার সামনেই হিয়াকে হ্যাচকা টান মারে,,হিয়ার বুক নিমিষে আবার শূন্য হয়ে আসে,,উপরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই কেমন করে তাকিয়ে দেখতে থাকে এদের কান্ড স্পেশালি উজান আর হিয়ার এই দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি,,এদিকে নীলি আর রাইসারা তো ভেতর ভেতর জ্বলে পুড়ে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছে,,
হিয়াঃ কি করছেন আপনি,,উপরে সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে
উজানঃ দেখার জন্যেই তো ধরেছি,,সাহস কি করে হয় তোমাকে নিয়ে এরকম একটা থার্ড ক্লাস ফাজলামো করার ওদের
হিয়াঃ হ্যা কিন্তু তাই বলে এভাবে,,দেখুন ওদিকে সব টিচাররা আছে এদিকে এসে আমাদের এভাবে দেখলে ব্যাপারটা খুবই বাজে দেখাবে
উজানঃ দেখাক
হিয়াঃ পাগল আপনি
উজানঃ হ্যা পাগল আমি,,
উজান হিয়াকে আরো চিপে ধরে পকেট থেকে ফোন টা ঔ কাঁদা মাখা হাতেই বের করে সবাই কে ক্যামেরার দিকে তাকাতে বলে,,উজানের আদেশে সবাই ইচ্ছে মতো পোজ দিতে শুরু করলে,,উজান হিয়াকে ওভাবেই আগলে সেলফি তুলতে শুরু করে,,আর এভাবেই কাঁদা মাখামাখি হয়ে ক্যামেরা বন্দি হয়ে থাকে উজান হিয়া সহ বাকি সবাই,,,হিয়ারা মেয়ে তিনজন উঠে এলে উজানরা আরো কয়েকজন ফ্রেন্ড,,আর মকবুল স্যার সহ আরো দুজন স্যার মিলে কাঁদায় নেমে আরো বেশ কিছু ক্ষন কাঁদা নিয়ে খেলে তারপর ওখান থেকে উঠে আসে
উজানঃ থ্যাংক ইউ রাইসা,,তুমি আজ এই কাজ টা না করলে আমরা সত্যি সবাই এতো সুন্দর মুমেন্ট টা মিস করতাম,,Thank you sooo much
_________________
সবাই যে যার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়,,এদিকে উজান ফ্রেশ হয়ে বাহিরের বড় করিডোর টায় এসে তার মায়ের ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকলে হিয়া আসে উজানকে ডাকবার জন্য
উজানঃ মা প্লিজ,,ওনার বুকে ব্যাথা উঠেছে তো আমি কি করতে পারি এখানে,,ডক্টর দেখেছে চিকিৎসা হচ্ছে হতে দেও
বাসবিঃ মানুষ টা তোর নিজের বাবা হয় উজান
উজানঃ আমি তাকে নিজের বাবা হিসাবে মানি না মা,,কি করেছে উনি আজ পর্যন্ত আমার জন্য,,আমার তো মনেও নেই আমি ছোট তে কবে তার সাথে একটা রাত ঘুমিয়ে ছিলাম,,না তাকে কখনো আমার জন্য___মা তুমি যদি এসবের জন্য আমাকে বাড়ি ফিরতে ইনসিস্ট করো তো আমি কিন্তু বলে রাখলাম নেক্সট মানথ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলেও কিন্তু আমি আর বাড়ি ফিরবো না
বাসবিঃ আমার কথা টা একটু শোন,,তুই আসবি না ঠিক আছে একবার অনন্ত ওনাকে ফোন করে উনি কেমন আছে এতটুকু খোঁজ নে,,তুই ওনার বড় ছেলে রাজা
উজানঃ রিয়েলি মা,,কোন ঘরের বড় ছেলে ওনার তো দুটো ঘর,,তা ওনার ছোট ঘরের বড় ছেলে কোথায় সে ইউকে থেকে আসে নি তার বাবা কে দেখতে
বাসবিঃ তুই কিন্তু অকৃতজ্ঞের মতো কথা বলছিস রাজা,,তোর বাবা একটা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে টা করেছিলো,,তারপরো কিন্তু উনি তোদের চার ভাইবোনের বড় হওয়ার ব্যাপারে কোনো কমতি রাখে নি
উজানঃ তুমি ওনার ভালোবাসায় অন্ধ মা,,আমি না,,উনি হয়তো তোমাকে আলমারি ভর্তি শাড়ি গহনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে পারছে কিন্তু এসব দিয়ে উনি আমাকে কিনতে পারে নি____তোমার আর কিছু বলার আছে মা,,না থাকলে ফোন টা রাখো
বাসবিঃ তোকে আর কি বলবো আমি,,বড় হয়ে গেছিস সব একা একা বুঝে নিয়েছিস,,এই মার কথা শুনবি তুই এখন
উজানঃ প্লিজ মা,,রাখো ফোন টা
বলেই উজান ফোন টা কেটে দিয়ে পেছন ফিরে ফোন টা রাগে আছাড় দিতে যাবে ওমনি দেখে হিয়া ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে,,উজান ফোন টা আড়াড় দিতে গিয়েও হাত টা নামিয়ে নেয়,,পেছন ফিরে নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে নিয়ে
উজানঃ কি চাই হিয়া এখানে তোমার
হিয়াঃ আপনাকে,,মানে সন্ধি আপু বললো আপনাকে ডেকে নিয়ে আসতে তাই আমি
উজানঃ তুমি যাও আমি আসছি,,,,,কি হলো যাও
হিয়াঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি
উজানঃ করো
হিয়াঃ আপনি কার সাথে এভাবে কথা বলছিলেন?শুনে মনে হলো আপনার মার সাথে আপনি
উজানঃ হ্যা আমার মা ফোন দিয়েছিলো আর কিছু
হিয়াঃ না মা__নে,,আপনি যে বলেন এই পৃথিবীতে আপনার মা’ই নাকি আপনাকে সব চাইতে বেশি ভালোবাসে তাহলে আপনি কেনো ওনার সাথে এতো উঁচু কন্ঠে কথা বললেন??
উজানঃ আমার ইচ্ছে হ’য়েছে তাই বলেছি তোমার সমস্যা
হিয়াঃ আপনি এরকম রেগে যাচ্ছেন কেনো,,আমি তো শুধু
হিয়া আর কিছু বলতে যাবে ওমনি সন্ধি আর ঝিনুক শ্রাবণকে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হিয়ার কাছে আসে,,শ্রাবণের এক হাত কেটে গিয়ে ওটা দিয়ে গল গল করে রক্ত বেড়িয়ে শ্রাবণের জামা কাপড় পুরো লাল হয়ে একাকার অবস্থা হয়ে আছে,,কাটা জায়গা দিয়ে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে টুপ টুপ করে সাদা ফ্লোরে পড়ে সাদা ফ্লোর টাকে নিমিষে লাল করে দিচ্ছে,,
শ্রাবণের এই অবস্থা দেখে হিয়া এগিয়ে এসে শ্রাবণকে কি ধরবে উল্টে হিয়া দু পা পিছিয়ে যেতে ধরে দেওয়ালের সাথে আঁটকে যায়,,উজান,ঝিনুক বা সন্ধি কেউই হিয়ার এই অদ্ভুত আচরণের কারণ বুঝতে পারছে না,,হিয়া রক্তের দিকে কি রকম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাল মুখে হাত দিয়ে কাঁপতে শুরু করে,,যেই মেয়ে শ্রাবণের একটু ব্যাথা সহ্য করতে পারে না সেই মেয়ে কি না শ্রাবণের এতো বড় দূর্ঘটনায় নিজেকে গুটিয়ে রাখছে,,কেনো??
হিয়া এক ছুটে দৌড়ে ওখান থেকে কোথায় যে হারিয়ে যায়,,এদিকে শ্রাবণের হাত ধরে দাঁড়িয়ে সন্ধি আর ঝিনুক কি করবে বুঝতে পারে না,,উজান আপাতত হিয়াকে রেখে দূত শ্রাবণকে নিয়ে রিসোর্টের কাছের হসপিটাল টায় নিয়ে গিয়ে ইমিডিয়েট শ্রাবণের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে
উজানঃ এসব কি করে হলো সন্ধি
সন্ধিঃ আমি জানি না,,ফয়সাল আর ও বল দিয়ে খেলছিলো,,তখন ঔ মাঠে নাকি কোন কাঁচের টুকরো তে শ্রাবণ পড়ে গিয়ে
উজানঃ আচ্ছা বাদ দে এখন ওসব,,শ্রাবণ
শ্রাবণঃ হ্যা ভাইয়া
উজানঃ ব্যাথা কমছে একটু
শ্রাবণঃ কমছে অল্প ইকটু
উজানঃ আচ্ছা একটা কথা বল তো তোর বুবু তখন তোকে দেখে ওভাবে পালিয়ে গেলো কেনো??
শ্রাবণঃ আসলে বুবু না রক্ত ভয় পায় বীষণ(ভীষণ),,রক্ত দেখলে কেমন জানি করে
উজানঃ রক্ত দেখলে কেমন করে মানে!!,,হিয়ার ব্লাডে ফোবিয়া আছে!!!!
শ্রাবণঃ কি বললা বুঝি না
উজানঃ কিছু না,,ঝিনুক তুমি আর সন্ধি মিলে শ্রাবণকে রুমে নিয়ে যাও আমি হিয়াকে খুঁজে আসছি
সন্ধিঃ আচ্ছা আয়,,টেনশন নিস না আমরা আছি শ্রাবণের সাথে
সন্ধি আর ঝিনুক শ্রাবণকে নিয়ে রুমে আসে,,এদিকে উজান পুরো রিসোর্ট তন্নতন্ন করে খুঁজে কিন্তু হিয়াকে পায় না,,শেষে রিসোর্টের একদম উপরের ছাঁদে আসলে উজান দেখতে পায় ছাঁদের একদম কিনারে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া,,উজান দূত পায়ে হেঁটে হিয়ার কাছে যেতেই হিয়া উজানকে দেখে সপাটে উজানকে তার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে,,
আর ধরেই গলার স্বর উঁচু করেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে,,উজান হিয়াকে এর আগেও কাঁদতে দেখেছে কিন্তু এরকম কান্না,,কেনো হিয়া নিজের গলা ছেড়ে দিয়ে এভাবে কাঁদছে কিছুই উজানের বুঝে আসছে না,,উজান হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে চেষ্টা করছে হিয়াকে শান্ত করতে কিন্তু কিছুতেই হিয়া চুপ হচ্ছে না আজ,,
হিয়াঃ কখনো ক্ষমা করবো না আমি তাদের,,কখনো না,,সেই পশু গুলো কেঁড়ে নিয়েছে আমার সব কিছু,,গাড়ির চাপায় তলিয়ে দিয়েছে আমার বাবা মা,,আমাকে অনাথ বানিয়ে পালিয়ে গেছে তারা,,,,কোনো দিন আমি ঔ মানুষ গুলোকে ক্ষমা করবো না কোনোদিন না
উজান হিয়ার মুখ টা নিজের বুক থেকে আলতো করে তুলে হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে এক হাত হিয়ার কোমড়ের পেছন বরাবর পুরো আগলে অন্য হাত হিয়ার গালে রেখে
উজানঃ শান্ত হও একটু,,কি হয়েছে বলো আমাকে
হিয়াঃ ওরা পিশে দিয়েছে আমার বাবা মা কে,,তাদের গাড়ির চাপায় পড়ে বাবা আর মা আমারই চোখের সামনে
হিয়া বলতে গিয়ে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে,,উজান হিয়ার মাথা টা নিজের বুকে একদম চিপে ধরে হিয়াকে থামাতে চেষ্টা করে,,
হিয়াঃ রাস্তা জুড়ে শুধু লাল রক্ত ছিলো,,আপনি জানেন সেই রক্ত শুকাতে কতোদিন সময় নিয়েছিলো,,,,মা আর বাবার নিথর দেহ টা কেমন রক্ত দিয়ে মেখে,,শ্রাবণ তখন কোলের বাচ্চা আমি ওকে নিয়ে কিভাবে,,,,,ঘৃণা করি আমি ঔ মানুষ গুলোকে,,কোনোদিন আমি সেই মানুষ গুলোকে ক্ষমা করবো না,,কোন দিন না,,
হিয়া আর বলতে পারে না,,অতীতের সেই নির্মমতা তার সব কথা গুলোকে দলা পাকিয়ে দেয়,,উজানের বুঝতে বাকি থাকে না কেনো হিয়া তখন রক্ত দেখে ওভাবে পালিয়ে এলো,,হিয়াকে সামলানো উজানের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে,,কিছুতেই হিয়ার চোখের পানি কমছে না আজ,,উজান হিয়াকে তার বুকের সব টা দিয়ে যতোটা পারছে আগলে ধরে আছে পারলে বুঝি হাড় চামড়া ভেদ করে সে হিয়াকে তার কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে নেয় অকপটে❤️
!
!
😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-13
হিয়া শান্ত হলে উজান হিয়াকে নিয়ে রুমে আসে,,এসে হিয়াকে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দেয়,,ঝিনুক আর সন্ধি কে এই মুহুর্তে কোনো কথা না বলে হাতের ইশারায় শ্রাবণকে নিয়ে বাহিরে যেতে বললে সন্ধি,ঝিনুক আর শ্রাবণকে নিয়ে বাহিরে চলে যায়,,উজান আলতো করে হিয়ার মাথার কাছে গিয়ে বসে গা টা একটু হেলে দিয়ে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে,,হিয়া কিছু না বলে চুপ করে চোখ বন্ধ করে নিলে উজান হিয়ার গায়ের কম্বল টা ভালো করে মুড়ে দেয়,,উজান হিয়ার মাথায় বিলি কাটতে থাকলে একটা সময় পর হিয়া গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে।
উজানঃ হিয়া ছোট থেকে বাবা মা কে হারিয়ে এতো টা সাফার করছে,,আর আমি??আমার কাছে তো সব কিছু ছিলো,,আছে___মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি মা আছে আমার পাশে,,আর আমি কি না আজ মার সাথে এভাবে,,না আমি মোটেও কাজ টা ঠিক করি নি আজ,,মা কতো টা কষ্ট পেয়েছে আমার ব্যবহারে কে জানে____আমারই বা কি দোষ আমি তো ঔ লোকটাকে নিজের বাবা হিসাবে মানিই না তাই জন্য তো আমি,,,
উজান ওর ফোন বের করে সাথে সাথে ওর মা কে একটা ফোন দেয়….
বাসবিঃ কি চাই তোর কিসের জন্য ফোন দিয়েছিস তুই আমাকে
উজানঃ আই এম সরি মা,,আমার তখন তোমার সাথে ওভাবে কথা বলাটা উচিৎ হয় নি
বাসবিঃ কি বলতে ফোন করেছিস সেটা বল
উজানঃ আমি ডক্টর সমরেশ শাহরিয়ার কে ফোন করলে তুমি খুশি হবা?
বাসবিঃ তুই ফোন করবি না আমি জানি
উজানঃ যদি এতে তুমি আমাকে ক্ষমা করো তাহলে আমি ঔ লোকটাকে ফোন করবো,,এতে খুশি তুমি??
বাসবিঃ তুই সত্যি সত্যি তোর বাবাকে
উজানঃ হ্যা,,আমি সময় করে ওনার সাথে কথা বলে নেবো,,রাখছি এখন কাজ আছে আমার
বাসবিঃ ঠিক আছে,,মন দিয়ে পিকনিকে মজা কর,,কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলিস আমি সমরেশ কে বলে সব পাঠিয়ে দেবো
উজানঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই রাখছি আমি
উজান ফোন কেটে দিয়ে হিয়াকে একবার চোখ ভরে দেখে নিয়ে,,বাহিরে বেড়িয়ে ঝিনুক আর সন্ধি কে ভেতরে এসে হিয়ার পাশে থাকতে বলে।
____________________
রাত তখন নয়টার কাছাকাছি,,লনের মধ্যে ফায়ার পিট জ্বালিয়ে সবাই গোল হয়ে বসে যে যার মতো গল্প করছে,,কেউ ছবি তুলছে,,কেউ বা লনের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করছে,,,,সন্ধি আর ঝিনুককের এক প্রকার জোরে ঘুম থেকে উঠে হিয়া ওদের সাথে সোজা নিচে চলে আসে,,
হিয়াঃ আমার জন্য শুধু শুধু তোকে আর আপুকে এতোটা সাফার করতে হলো
ঝিনুকঃ সাফার ঔ কিছু না,,কিন্তু যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি রে ভাই তুই,,রক্ত দেখে এরকম কেউ করে
সন্ধিঃ ভাগ্যিস হিয়া ডক্টরি পড়ো নি নাহলে তো হয়েই যেতো অবস্থা পুরো শেষ
ঝিনুকঃ যা বললা আপু
সন্ধিঃ হুমম,,,,,ওটা তুষার না রে গিটার নে
নিয়ে,,গিটার পেলো কোথায় ও?
ঝিনুকঃ সাথে করে নিয়ে এসেছে হয়তো ভাইয়া
সন্ধিঃ বাসে তো বসে ছিলো আমার পাশে কোথায় দেখলাম না তো তখন যে ওর সাথে
ঝিনুকঃ কি জানি,,হয়তো এখানে কারো থেকে জোগাড় করেছে
সন্ধিঃ সেটা হতে পারে,,,তাহলে এখন ভাঙা গলায় এই পাগল টার বিশ্রী গান শুনতে হবে,,হায় রে
সন্ধির ভয় টাই সত্যি হয় তুষার গিটার তুলে উদুমে নাচতে নাচতে মাঝে দাঁড়িয়ে গান গাইতে শুরু করে,,আর তুষারের ওরকম গান শুনে সবাই হেঁসে হেঁসে পুরো কুপোকাত,,,তুষার আর একটা মেয়ে গান গেয়ে উঠলে সবাই জেদ ধরে বসে তারা এখন তাদের সবার Heartthrob উজান শাহরিয়ার এর গান শুনবে,,উজান তখন লনের সাইড দিয়ে মকবুল স্যারের সাথে বাহির থেকে এসে রিসোর্টের ভেতরের দিকে যাচ্ছিলো,,উজানকে দেখতে পেয়েই কয়েকটা মেয়ে গিয়ে দৌড়ে উজানের হাত ধরে টানতে টানতে উজানকে মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে দিলে সবাই উজান উজান বলে চিল্লাতে শুরু করে,,উজান এতো রিকুয়েস্ট করে সে এখন গাইতে পারবে না তার আরো কিছু কাজ আছে কিন্তু উপস্থিত কোনো মেয়েই তার কথা শুনতে নারাজ!!
সন্ধিঃ আরে গেয়ে দে না একটা গান,,আগে তো ফাংশন হলেই সবার আগে তোর গান শুনবো বলে আমরা মুখিয়ে থাকতাম,,এখন এতো না না কেনো করছিস তুই
উজানঃ আরে আমার কাজ আছে সন্ধি
ঝিনুকঃ না না ভাইয়া ওসব কাজ টাজ রাখুন,,আমাদের জন্য না হোক আপনার স্পেশাল স্টুডেন্ট মানে আপনার এনিমি তো কখনো আপনার গান শুনে নি না তার জন্য একটা তো গান গাওয়াই যায় কি বলেন
হিয়াঃ 😒😒
উজানঃ বলছো,,,এখন যদি কেউ একজন আমাকে রিকুয়েষ্ট করে গান গাইতে তাহলে আমি অবশ্যই
ঝিনুকঃ এএএ হিয়াআআআ একটু বলে দে না ভাইয়াকে গান করতে,,বল না,,
হিয়াঃ হেই মেয়ে পাগল হয়ে গেলি নাকি,,কি করছিস এসব__মেয়ে গুলো দেখছে ছাড় আমাকে
সন্ধিঃ প্লিজজজজ হিয়া একবার বলো গাইতে,,তুমি জানো উজান কি ভালো গান করে তুমি শুনলে রোজ রাতে শুনতে চাইবেএএএ প্লিজজজজ
হিয়াঃ আপু আমি কেনো??আপু সবাই কি ভাববে,,,না আমি পারবো না
ঝিনুকঃ প্লিজ হিয়া
সন্ধিঃ হিয়া প্লিজ
ঝিনুক আর সন্ধি হিয়াকে টানাটানি করতে করতে রিকুয়েষ্ট করে সে যেনো উজানকে এখন গান গাইতে বলে,,হিয়া কি করবে বুঝতে পারে না,,শেষে বাধ্য হয়ে হিয়া মাথা নাড়ালে ঝিনুক সন্ধি তুষার সবাই চিৎকার করে উঠে উজান উজান বলে আবার চিয়ারআপ করতে শুরু করে,,,উজান একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে গিটারে সুর তুলে,,হিয়া লজ্জায় পুরো লাল হয়ে পেছন ফিরে যেতে ধরে,,তখনি উজান হিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গানের লিরিক্স বলতে শুরু করলে হিয়ার চোখ যায় উজানের উপর,,উজান হিয়ার চোখের দিকে তাকিয়েই লিরিক্স গুলো গাইতে শুরু করে……..
তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালো বাসবো না
দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি দূরে যাওয়ার বাহানা বানায়
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল…..💙❤️
গল্প টা পুড়নো…..🥰
উজান হিয়ার চোখ থেকে চোখ নামিয়ে হিয়ার পিঠের পেছনে এসে হালকা হেলান দিয়ে আবার গাইতে শুরু করে….
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি…..❤️
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি…..❤️
উজান এবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গিটারে সুর তুলতে তুলতে বাকি লিরিক্স গুলো গাইতে থাকে, কখনো বা তাকে ঘিরে রাখা মেয়ে গুলোর কানের কাছে গিয়ে গাইতে থাকে গান,,হিয়া কিছু বলে না শুধু মুচকি দিয়ে হেঁসে উঠে থেকে থেকে,,,,,,,
এটা কি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে???
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে….
উজান হিয়ার পাশে গিয়ে বসে হিয়ার দিকে মুখ করে হিয়ার চুলে আলতো করে হাত বুলে দিয়ে
আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাব বলে(হিয়াকে ইঙ্গিত করে)
একবার এসে দেখ
এসে বুকে মাথা রেখ
বুলে দেব চুলে রেখে হাত
হিয়া তো এদিকে উজানের এই পাগলামো দেখে নিমিষে ওর মাথা থেকে উজানের হাত টা সরিয়ে উঠে দৌড়ে সন্ধির পেছনে লুকিয়ে পড়ে
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ভোর না হতে হতে তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখি বারে বারে আহা; দেখি
আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাব বলে
একবার এসে দেখ
এসে বুকে মাথা রেখ
বুলে দেব চুলে রেখে হাত
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
উজানের গান শেষ হলে সবাই চিৎকার করে হাততালি দিয়ে উঠে,,এদিকে ঝিনুক আর সন্ধি গিয়ে আবার হিয়াকে ইচ্ছে মতো ক্ষ্যাপাতে শুরু করে,,ঝিনুক গিয়ে হিয়ার থুতনি ধরে
ঝিনুকঃ তাহলে ডুবে ডুবে ভালোবাসা বাসি হচ্ছে তাই তো,,আর এদিকে আমরা
সন্ধিঃ কি হিয়া তলে তলে তাহলে Sinking Sinking Drinking water হচ্ছে হুম
সন্ধি আর ঝিনুকের কথায় হিয়া পুরো লজ্জা পেয়ে কোথায় মুখ লুকাবে তারই জায়গা খুজঁতে থাকে,,শেষে লজ্জার মাএা টা চরম লেভেলে গিয়ে বাধা পড়লে হিয়া দৌড়ে রুমে পালিয়ে যায়,_____
রাইসাঃ তুই এর পরো চুপ করে থাকবি নীলি,,,এরপর কি কারো বুঝতে বাকি আছে যে উজান এই মেয়ে টাকে
নীলিমাঃ উজান কে আমি নিজের করতে পারবো কি না আমি জানি না,,কিন্তু এই মেয়ে কে কাল আমি তার উচিৎ জায়গা বুঝিয়ে দেবো___আর উজান তুমি আমাকে রিজেক্ট করলে তো,,ভার্সিটি ক্যারিয়ারে যেই সম্মান টা তুমি অর্জন করছো এতোদিন,,সেটাকে আর তোমার এই অহংকার টা কে কি করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয় সেটাও এই নীলিমার খুব ভালো করেই জানা আছে,,কাল তুমি দেখবে শুধু আমি কি করি
____________
পরের দিন
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সবাই নাস্তা করে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেড়িয়ে পড়ে,,দুপুরের দিকে ঘুরে এসে সবাই ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে লনের কাছে জড়ো হয় রিসোর্ট থেকে একটু দূরে কোন জানি রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে আজ দুপুরের লাঞ্চ টা করবে সে জন্য,,,,
ঝিনুকঃ কি খিদে পেয়েছে মা গো,,,স্যাররা আসছে কেনো বলতো
হিয়াঃ একটা মানুষের ঘন্টায় ঘন্টায় এতো খিদে পায় কিভাবে,,তোর কি দুটো পাকস্থলী ভেতরে
ঝিনুকঃ চুপ তো,,সবসময় আমার খাবারে নজর তোর না
সন্ধিঃ আমারো খুব খিদে পেয়েছে আজ,,স্যাররা যে কেনো এতো দেড়ি করছে কে জানে
ঝিনুকঃ ভাইয়া কোথায় গো সন্ধি আপু,,আসার পর থেকে কেনো জানি ভাইয়াকে দেখছি না
সন্ধিঃ ঔ কি যেনো একটা কাজে শহরের দিকে গিয়েছে,,আসবে হয়তো ঘন্টা দু একের মধ্যে
ঝিনুকঃ হুমম,,
হঠাৎই সবার অপেক্ষার মাঝে দুজন হেড স্যার সহ আরো কিছু জন টিচার হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে সব স্টুডেন্ট কে এক হয়ে জড়ো করে
হেড স্যারঃ আমাদের হয়তো আজকে রাতেই ঢাকা ফিরে যেতে হবে,,,,,আমি তোমাদের সাথে বের হবার আগে আমার রুমে তোমাদের টাকা সহ ৫০হাজার টাকা নিজ দায়িত্ব রেখে দিয়েছিলাম,,,কিন্তু তখন ফিরে এসে আমি গোসলে ঢুকি কিন্তু গোসল সেরে এসে যেই ব্যাগ থেকে টাকা টা বের করতে যাবো কিন্তু দেখি সেখানে কোনো টাকা নেই,,যদিও আমি গোসলে ঢুকবার আগেও টাকা টা ঠিক একবার দেখে গিয়েছিলাম,, তখন অবশ্য টাকা টা ওখানেই ছিলো আমার বড় কালো ব্যাগ টাতে,,
হেড স্যারের কথা শুনে সবার মাথায় হাত,,এসব কি বলছে স্যার,,তাহলে কি টাকা টা চুরি গেছে,,কে করেছে টাকা টা চুরি??
হেড স্যারঃ টাকা টা যে Intensionally কেউ চুরি করেছে আমি এ ব্যাপারে সিউর,,ভুল টা আমারই আমি অচেতন বশত আমার রুমের দরজাটা খোলা রেখেই ওয়াশরুমে,,,,,,যাই হোক আমি এ ব্যাপারে তোমাদের কাউকে দায়ী করছি না,,আমি জানি না কাজ টা কে করেছে তবে যে এই কাজ টা করেছে সে মোটেও ঠিক করে নি,,যদি কখনো আমি জানতে পারি তোমাদের মধ্যে কেউ এ কাজ টা করেছে তাহলে আমি কিন্তু তাকে সাসপেন্ড করতেও এক সেকেন্ড সময় নেবো না
হেড স্যার কথা শেষ হবার আগেই পাশ থেকে অন্য একটা স্যার বলে উঠে তাহলে সবার রুম চেক করা হোক,,শুনে উপস্থিত সবাই একটু ঘাবড়ে উঠে,,হেড স্যার এ প্রস্তাবে রাজি হয় না,,কারণ সবার রুম চেক করা মানে সব স্টুডেন্টদের অপমান করা,,আর তিনি তা কখনোই করবেন না বলে ঠিক করেন,,কিন্তু এদিকে অনেক স্যার ম্যাডামরা আবার এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে সবার রুম চেক করতে আদেশ ও দিয়ে দেয়,,সাথে রাজি হয় অনেক স্টুডেন্টও কারণ তারা তো জানে তারা নির্দোষ,,একটা সময় হেড স্যারো রাজি হয়ে যায় সবার রুম চেক করতে,,কারণ শুধু ৫০হাজার না সাথে ওনার নিয়ে আসা আরো ২০হাজার টাকা মানে মোটে ৩০কম ১লাখ টাকা চুরি গেছে,,রিসোর্টের সব স্টাফ দের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এক এক করে সবার রুম চেক করা হয়,,,আর শেষে গিয়ে মেয়েদের সব রুম চেক করতে করতে লাস্টে এসে হিয়াদের রুম চেক করবার সময় পাশ থেকে নীরব নামের একটা ছেলে বলে উঠে সে তখন শ্রাবণকে নাকি হেড স্যারের রুমের ভেতর ঢুকতে দেখেছিলো_____!!!!!!
হিয়াঃ কি বলতে কি চাইছেন ভাইয়া আপনি,,
নীরবঃ আমি কিছু বলতে চাইছি না হিয়া,,আমি যা দেখছি তাই বলেছি,,আমাদের তো হেড স্যার বা টিচারদের কারো রুমে যাওয়া বারন ছিলো তাহলে শ্রাবণ কেনো হেড স্যারের রুমে
নীলিমাঃ তাহলে তুই এতোক্ষণ এই কথা টা না বলে চুপ করে কেনো ছিলি নীরব,,আমরা তো তাহলে এতোক্ষণ সব রুম চেক না করে হিয়ার রুম টাই আগে চেক করতে পারতাম
হিয়াঃ নীলিমা আপু!! আপনি এসব কি বলে কি বোঝাতে চাইছেন??
নীলিমাঃ দেখো হিয়া আমাকে ভুল বুঝো না,,এতো বড় একটা এমাউন্ট চুড়ি গেছে স্যাররা সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখছে,,এমন তো না যে আমাদের রুম চেক করা হয় নি আমাদের রুমো তো চেক করা হয়েছে কোথায় তখন তো আমরা এতো কথা উঠায়নি
হিয়াঃ আমি সে কথা বলিনি আপু,,সবার রুম চেক করা হয়েছে আমাদের রুমো হবে স্বাভাবিক কিন্তু তাই বলে আপনারা সোজা আমার ভাইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলবেন কিসের জন্য??
রাইসাঃ এখানে শ্রাবণকে কিছু বলা হচ্ছে না হিয়া,,নীরব দেখেছে তাই
হেড স্যারঃ তোমরা কি একটু থামবে(রাগ হয়ে)___তখন থেকে একে অন্যের সাথে তর্ক করেই যাচ্ছ তো যাচ্ছ,,আমি এজন্য বলেছিলাম এসব চেক করার কোনো প্রয়োজন নেই তারপরো সালেহা ম্যাডাম কিছুতে আমার কোনো কথা শুনলো না________শ্রাবণ এদিকে আসো তো বাবা
শ্রাবণ গুটিগুটি পায়ে ভয়ার্ত মুখে হেড স্যারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে হেড স্যার প্রশ্ন করে শ্রাবণ কি তার রুমে গিয়েছিল তখন,,শ্রাবণের উওর হ্যা শুনতেই হিয়া ওখানে থমকে যায়!!
নীরবঃ কি দেখলি তো,,শ্রাবণ টাকা টা নিক বা না নিক শ্রাবণ গিয়েছিল তো স্যারের রুমে,,এখন বল আমি ভুল দেখেছি
হেড স্যারঃ আহ নীরব আস্তে,,আমি কথা বলছি তো এ বিষয়ে_____শ্রাবণ,,বাবা তুমি তখন আমার রুমে কেনো গিয়েছিলে??
হিয়া এসে শ্রাবণকে ধরে রাগান্বিত দৃষ্টিতে,,
হিয়াঃ কেনো গিয়েছিলি তুই স্যারের রুমে।
শ্রাবণঃ আমি আমি,,আমাকে তো নিদি(নিধি) আপু বললো স্যারের রুমে কপি(কফি) টা দিয়ে এসে স্যারকে বলতে স্যারকে সবাই নিচে ডাকছে___আমি আমি কপি(কফি) টা নিয়ে স্যারের রুমে গেলাম স্যার ছিলো না রুমে তাই তাই আমি ওটা টেবিলে থুইয়ে নিদি আপুকে এসে বলি স্যার রুমে নেই
শ্রাবণের কথায় নিধি দৌড়ে এসে শ্রাবণের দু বাহু শক্ত করে ধরে শ্রাবণকে রাগ করতে শুরু করে,,পারলে বুঝি ওখানেই ও শ্রাবণকে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেয় এরকম
হিয়াঃ কি করছেন কি আপনি নিধি আপু,, ছাড়ুন শ্রাবণকে,,ওর লাগছে হাতে
নিধিঃ বেয়াদব একটা ছেলে,,এতো এতো বড় মিথ্যা,,,সত্যি হিয়া এই শিক্ষা দিছো তুমি তোমার ভাই কে,,নিজে টাকা টা সরিয়ে আমাকে এর মধ্যে,,,,আমি আমি তোমাকে কখন কখন বলেছি স্যারকে কফি দিয়ে আসতে বলো কখন বলেছি,,,মিথ্যুক একটা ছেলে
হেড স্যারঃ নিধি কি করছো,,ও একটা ছোট বাচ্চা,,,ছাড়ো ওকে______তুমি কি শ্রাবণকে আমার রুমে কফি দিতে বলেছিলে নিধি??
নিধিঃ স্যার আমি কেনো বলবো শুধু শুধু এ কাজ করতে,,,আর আমি কখনই বা বলবো আমি তো আজ সারাটাক্ষন সালেহা ম্যামের সাথে ছিলাম,,বিলিভ না হলে একবার ম্যামকে জিজ্ঞেস করে দেখুন
সালেহা ম্যামঃ হ্যা স্যার নিধি আজ আসার পর থেকে আমার সাথে ছিলো,,আমরা ভার্সিটির নেক্সট প্রজেক্ট টা নিয়ে লনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম
শ্রাবণঃ(হিয়ার ওড়না টেনে ধরে) বুবু বিশ্বাস কর নিদি আপুই আমাকে বলেছিলো ঔ কফি টা
হিয়াঃ তুই চুপ কর এখন
হেড স্যার এখন কি করবে ঠিক বুঝতে পারে না,,শ্রাবণ যদি নিধির কথা শুনে কফি টা দিয়ে আসে তাহলে তো ওনার রুমে কফি থাকার কথা কিন্তু সেটাও তো ছিলো না,,আর নিধি যদি কিন্তু সালেহা ম্যাম যে বললো নিধি আসার পর থেকে ওনার সাথে একসাথে ছিলো
হেড স্যারঃ তোমরা নিজেদের মধ্যে এসব রেসারেসি একটু বন্ধ কর প্লিজ,,,,মিলন তুমি হিয়াদের রুম টা তাড়াতাড়ি চেক করো,,আমার আর এসব একদম ভালো লাগছে না
মিলনঃ হ্যা স্যার করছি
মিলন হিয়াদের রুম চেক করতে গিয়েই টাকা টা ঠিক হিয়ার ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে আসে,,হিয়ার ব্যাগ থেকে টাকা টা বের হতে দেখেই উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উঠে,,সব চাইতে বেশি অবাক হয় হিয়া,,হবারই কথা!!
রাইসাঃ চোরের মায়ের বড় গলা,,কি স্যার দেখলেন তো____কি হিয়া এই ছিলো তাহলে তোমার মনে
নিধিঃ আমরা কমবেশি সবাই জানি তোমার একটু Financial Problem আছে তাই বলে তুমি তোমার ভাইকে দিয়ে এতো বড় একটা চুরির কাজ
সালেহাঃ শুধু কি চুরি নিধি,,শ্রাবণ কতো সুন্দর করে তোমার নামে কতো গুলো মিথ্যে কথা বললো সেটা দেখো একবার,,,সিনেমা নাটকের অভিনয়ো ফেল রে বাবা
সবাই যা নয় তাই বলে হিয়াকে আর শ্রাবণকে ছিঃ চিৎকার করতে থাকে,,জীবনে এই প্রথম হিয়া এরকম অপমানজনক সিচুয়েশনে পড়লো,,সবার অপমান সহ্য করে হিয়া ঔ জায়গাটায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পুরো পাথর হয়ে যায়,,চোখ দিয়ে টল টল করে শুধু পানি পড়তে থাকে ওর
নীলিমাঃ শিক্ষা থাকতে হয় ম্যাডাম,,ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো হতে হয়,,অনাথ তো শুনেছি রাস্তায় রাস্তায় মানুষ এর চাইতে ভালো শিক্ষা আর কি হতে পারে আপনিই বলুন
সন্ধিঃ নীলিমা,,এনাফ ইস এনাফ অনেকক্ষণ ধরে তোমরা যা নয় তাই বলে হিয়াকে অপমান করছে
নীলিমাঃ কি ভুল বলেছি সন্ধি আমি,,এতো কিছু হবার পরো তুই এই লোয়ার ক্লাস রাস্তার মেয়েটাকে এভাবে সাপোর্ট করে যাবি,,সত্যি সন্ধি
হেড স্যারঃ থামো তোমরা,,,টাকা টা পেয়েছো না এখন যে যার রুমে যাও,,যাও বলছি,,হিয়া
হিয়াঃ_____আমি টাকা টা চুরি করি নি স্যার
হেড স্যারঃ (হিয়াকে থামিয়ে দিয়ে) তোমার টাকার প্রয়োজন ছিলো সেটা তো আমাদের বলতে পারতে মা,,আমরা সব টিচার স্টুডেন্ট রা মিলে চাঁদা তুলে বা ফান্ড থেকে তোমার জন্য____এটা তুমি ঠিক করো নি,,শ্রাবণ না হয় ছোট ও না বুঝে তোমার কথা শুনে,,তাই বলে তুমি তাকে এই বয়সে এসব শেখাবা______তুমি বরাবরই আমার অনেক প্রিয় স্টুডেন্ট ছিলে হিয়া কিন্তু তাই বলে তোমার এই অপরাধ টাকে আমি মাফ করে দিতে পারি না,,,আমি তখন সবার সামনে বলেছিলাম যদি আমি জানতে পারি টাকা টা কে চুরি করেছে আমি তাহলে তাকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হবো,,,আর সবাই জানে আমার কথা মানে এক কথা___আমি তোমাকে 1month এর জন্য suspend করলাম,,কাল তোমার কাছে কাগজ চলে যাবে________মিলন আসো
হেড স্যার বেড়িয়ে গেলে সবাই এক এক করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,,ঝিনুক দরজা লাগিয়ে হিয়ার কাছে আসতেই হিয়া মাটিতে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে,,হিয়ার সাথে শ্রাবণো হাউমাউ করে কেঁদে উঠে
সন্ধিঃ হিয়া শান্ত হও,,আমরা জানি তুমি বা শ্রাবণ কেউ এই কাজ টা করো নি
ঝিনুকঃ চুপ কর হিয়া,,ভাইয়াকে আসতে দে দেখবি ভাইয়া এসে সব প্রমাণ জোগাড় করে তোকে ঠিক নির্দোষ প্রুভ করবে
সন্ধিঃ চুপ করো হিয়া,,দেখো তোমার জন্য শ্রাবণো ভয়ে কি রকম করে কাঁদছে
হিয়াঃ আমি আমি রাস্তার মেয়ে,,আমি আমার ভাই কে ভালো শিক্ষা দিতে পারি নি ঝিনুক,,আমি শ্রাবণকে চুরি করতে শিখিয়েছি
ঝিনুকঃ না হিয়া,,তুই শ্রাবণকে কোনো ভুল শিক্ষা দিস নি,,একটু শান্ত হ,,হিয়া চুপ কর না বোন আমার,,,
হিয়াঃ (শ্রাবণের বাহু খামচে ধরে) কেনো কেনো তুই আমার কথা শুনিস না,,তোকে বলেছি না তুই সবসময় আমার পাশে পাশে থাকবি তাহলে তাহলে কিসের জন্য হ্যা কিসের জন্য আমার থেকে তুই,,,,এতো এতো খেলার নেশা তোর,,আজকে তোর একটা ভুলের জন্য আমাকে
সন্ধিঃ কি করছো কি হিয়া তুমি,,শ্রাবণের লাগছে ছাড়ো ওকে,,,,,আরে ও ছোট মানুষ ও তো খেলবে তাই বলে তুমি ওকে,,,,হিয়া শ্রাবণ কান্না করছে ছাড়ো তুমি ওকে
হিয়াঃ আজকে হেড স্যার আমাকে বললো আমি কি না,,,,
হিয়ার কথার মাঝে উজান সন্ধিকে ফোন করলে ফোনের উপর পাশ থেকে হিয়ার কান্না শুনে হতবাক হয়ে যায় মুহুর্তে
উজানঃ কি হয়েছে সন্ধি এতো বার করে ফোন দিচ্ছিলি কেনো তুই??____এতো চিল্লাচিল্লি কিসের ওরকম করে কাঁদতেছে কে??
সন্ধিঃ শ্রাবণ আর হিয়া
উজানঃ কে!!শ্রাবণ আর হিয়া মানে(অস্ফুটে)
সন্ধি এক এক করে উজানকে সব ঘটনা খুলে বলে,,আর এদিকে হিয়া তখনো অনবরত চোখের জল ফেলতে ব্যাস্ত,,হিয়ার ওরকম কান্না ফোনের ওপর পাশ থেকে উজানকে যেনো পুরো ক্ষতবিক্ষত করে তুলে নিমিষে
হিয়াঃ আমার কিছু না থাকলেও আমি কখনো এতো টা অপমান কোথাও হইনি,,আজ প্রথম আমাকে এভাবে,,,হেড স্যার কি না বলে চাঁদা তুলে ফান্ড থেকে___আমি কি এতোটাই অসহায় ঝিনুক যে টাকার জন্য আমাকে সবার কাছে হাত পাততে হবে
ঝিনুকঃ না হিয়া,,একটু শান্ত হ
হিয়াঃ স্যার আমাকে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড করলো ঝিনুক,,যেখানে আমি নিজ যোগ্যতায় এতোদূর পড়াশুনা করে সেখানে এই একটা ঘটনা আমার পুরো পড়াশুনা টার উপর দাগ বসিয়ে দিলো,,,মানুষ কি করে এতো খারাপ হয় ঝিনুক,,,এই অপমান দেখার আগে তো আমার
ঝিনুকঃ আহ হিয়া,,চুপ আর না___দেখ শ্রাবণ দুপুরে কিছু খাই নি তার উপর ও এরকম করে কাঁদছে,,তার মধ্যে তুই এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে বল আমাকে
হিয়াঃ আমি ভেঙে পড়ার মেয়ে না ঝিনুক কিন্তু এই অপমান টা আমি
হিয়া আবার হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে
উজানঃ সন্ধি
সন্ধিঃ বল
উজানঃ তোরা দুপুরে লাঞ্চ করছিস?
সন্ধিঃ না
উজানঃ তুই আর ঝিনুক গিয়ে লাঞ্চ করে হিয়া আর শ্রাবণের খাবারের ব্যবস্থা কর,,আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে ইন করছি
সন্ধিঃ আর তোর কাজ
উজানঃ ওটা পড়ে দেখা যাবে,,তুই যা আগে যেটা বললাম সেটা কর
সন্ধিঃ আচ্ছা রাখ,,আয় তুই জলদি
সন্ধি ফোন রেখে ঝিনুককে নিয়ে হিয়া আর শ্রাবণের জন্য খাবার আনতে নিচে রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে এসে খাবার বুক করে,,তারা ঠিক করে সবাই লাঞ্চ করতে বাহিরে গেলেও তারা যতোক্ষণ না হিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে ততোক্ষণ কোথাও যাবে না।
এদিকে হিয়া গেট লাগিয়ে রুমে আসতেই শ্রাবণ হিয়াকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকে,,হিয়া শ্রাবণকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে শ্রাবণকে তার বুকে আষ্টেপৃষ্টে আগলে ধরে
শ্রাবণঃ আমি টাকা টা চুরি করি নি বুবু বিশ্বাস কর
হিয়াঃ আমি জানি,,আমার ভাই টাকা টা চুরি করে নি
শ্রাবণঃ ঔ নিদি(নিধি) আপু মিথ্যে বলছে,,ঔ আপু টাই তখন আমাকে কফি দিয়ে বলেছিলো স্যার টার রুমে দিয়ে আসতে
হিয়াঃ আমি জানি,,,চুপ কর এখন,,চোখ মুছ
শ্রাবণঃ বুবু ভালো ভাইয়া কোথায়?ভালো ভাইয়া থাকলে দেখতি ঠিক ঔ আপু টাকে বকে দিতো
হিয়াঃ হুম,,,দিতো