মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 #ইভা_রহমান #Part_14

0
723

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

#ইভা_রহমান
#Part_14

সন্ধি আর ঝিনুক হিয়া আর শ্রাবণের জন্য খাবার আনলে হিয়া না খেয়ে আগে শ্রাবণকে আস্তে আস্তে খাওয়াতে শুরু করে,,হিয়ার এখন একটাই চিন্তা মাথায় কাজ করছে যেভাবে হোক সে নির্দোষ এটা তাকে প্রমাণ করতে হবে তো হবেই,,কিন্তু হিয়াকে কিছু করতে হয় নি যা করার উজান এসেই করে ফেলে,,

এদিকে সবাই যে যার মতো রিসোর্টের বাহিরে গিয়ে ঔ রেস্টুরেন্টায় যায় লাঞ্চ করবে বলে,,স্যার রা আর মানা করে না শেষ অবধি টাকা টা তো পাওয়াই গেছে তাহলে আর চিন্তা কিসের,,কিন্তু হেড স্যার আদেশ করে সবাই যেনো খেয়ে বেশি ঘোরাঘুরি না করে সন্ধ্যাে নামার আগেই রিসোর্টে হাজির হয়…..

এদিকে উজান আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব কাজ ফেলে এসে রিসোর্টে আসতেই সন্ধি আর ঝিনুক কে লনে ডেকে পাঠায়,,সন্ধি আর ঝিনুকের কাছে বারবার বারবার খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে সে ঘটনার শুরু থেকে শেষ সব শুনে উজান এখন ঠিক কিভাবে হিয়াকে নির্দোষ প্রুভ করবে তাই ভাবতে থাকে,,,একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে উজান ঝিনুককে হিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে সন্ধিকে নিয়ে রিসোর্টের ম্যানেজ সিস্টেম রুমে আসে,,,উজানের উদ্দেশ্য ছিলো সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ,,,কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত স্যারদের ফ্লোরের সিসিটিভি টা আগে থেকেই কেউ নষ্ট করে রেখে দিছে

সন্ধিঃ এখন কি করবি,,,এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তো অনন্ত কিছু একটা

উজানঃ আমি হিয়াকে এতো সহজে সবার অপমান সহ্য করতে দিতে পারবো না সন্ধি__হিয়াকে আমি নিয়ে এসেছি হিয়া তো এটাও জানে না যে স্কলারশিপ প্রাপ্ত কোনো স্টুডেন্টের জন্য পিকনিকের টাকা মওকুফ করা থাকে না এরকম কোনো রুল আদৌও আছে কি না,,,আমি তো মিথ্যে বলে হিয়াকে___হিয়াকে আর শ্রাবণকে আমি পিকনিকে নিয়ে এসেছি সন্ধি,,এখন তো মনে হচ্ছে কোনো আমি

সন্ধিঃ শান্ত হ,,,ঠিক কিছু প্রমাণ আমাদের সাথে আসবে তুই বিশ্বাস রাখ

উজানঃ হুমমম,,,,,আচ্ছা সন্ধি একটা কথা বল তুই তো তোদের রুমে লক করেই হিয়া ঝিনুক সবাই কে নিয়ে নিচে লনে দাঁড়িয়ে স্যারদের জন্য ওয়েট করছিলি তাই তো??

সন্ধিঃ হ্যা

উজানঃ তাহলে তোদের রুমে ঢুকে টাকা টা হিয়ার ব্যাগে রাখলো কে,,লকের চাবি তো তোর কাছে ছিলো তাহলে!!

সন্ধিঃ তুই কি বলতে চাইছিস,,কেউ এক্সট্রা চাবি দিয়ে লক খুলে

উজানঃ হ্যা এছাড়া তো আমি তোদের রুমে ঢোকার আর কোনো ওয়ে দেখছি না,,তুই বল এতটুকু সময় টাকা টা কেউ

সন্ধিঃ রুমের এক্সট্রা চাবি‌!!

উজানঃ অবশ্যই এখানকার মানে ম্যানজমেন্টের কোনো স্টাফ কে দিয়ে কেউ তোদের রুমে,,,দেখ এটা যে পুরো টাই নীলি দের কাজ এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই

সন্ধিঃ আমারো নেই

উজানঃ আচ্ছা রিসিপশনের সিসিটিভি টা একটু চেক কর তুই,,রিসিপশন থেকে কে চাবি দিয়ে ওদের____

সন্ধি আর উজান মিলে সিসিটিভি ফুটেজ এবার ভালো করে চেক করতে গিয়ে দেখে নিধিকে এই রিসোর্টের একটা স্টাফ কি জানি দিচ্ছে,,সিসিটিভি তে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও উজান নিশ্চিত স্টাফ টা নিধিকে হিয়াদের রুমেরই এক্সট্রা চাবি টা দিচ্ছে,,,,উজান সিসিটিভি ফুটেজ টা কালেক্ট করেই ঔ স্টাফ টাকে ধরে নিয়ে এসে তুষারকে দিয়ে ইচ্ছে মতো পিটিয়ে হুমকি ধামকি দিলে স্টাফ টা এক পর্যায়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে সে টাকার বিনিময়ে নিধিকে হিয়াদের রুমের এক্সট্রা চাবি টা দিয়েছিলো,,তুষার স্টাফের মুখের পুরো জবানবন্দি রেকর্ড করে নেয়,,

এদিকে সন্ধ্যার আগে আগে সবাই ঘুরে এসে রিসোর্টে যে যার রুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলেই উজান তুষারকে নিয়ে আসে রিসোর্টে,,এসে প্রথমে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিধির খোঁজে নিধির রুমের কাছে যেতেই দেখে নিধি একটা মেয়ের সাথে ওর রুম থেকে বেড়িয়ে ওদের দিকেই আসছিলো,,নিধি জানে এতো বড় একটা ঘটনা উজান ওকে জিজ্ঞাসাবাদ তো অবশ্যই করবে তাই সে আগে থেকেই এটার প্রিপারেশন নিয়েছিলো,,নীলিমা ওকে শিখিয়ে দিয়েছিলো যে করেই হোক সে মুখ যেনো না খুলে,,কারণ উজানের কাছে কোনো প্রুভ নেই এটা প্রমাণ করার যে হিয়া নির্দোষ

উজানঃ নিধি একটু দাঁড়া,,আমার কিছু কথা আছে তোর সাথে

নিধিঃ হ্যা বলনা,,কি বলবি

উজানঃ নিপা তুমি যদি একটু

নিপা বলে মেয়ে টা চলে গেলে উজান নিধিকে নিয়ে বড় করিডোর টার সামনে আসে,,তুষার আগে থেকে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলো,,

নিধিঃ কি বলবি তাড়াতাড়ি বল,,আমার এতো সময় নেই

তুষারঃ তাই নাকি নিধি,,,আগে তো এই উজানের সময়ের জন্য তোরা সবসময় পড়ে থাকতি আজ হঠাৎ এতো পরিবর্তন

নিধিঃ পরিবর্তন টা তো তোরাই আনছিস তুষার

তুষার একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিলে উজান পাশ থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিধির মুখের সামনে ধোয়া তুলতে শুরু করে,,উজান মাঝে মাঝে Smoking করে বাট সেটা একান্তই গোপনে বা ফ্রেন্ডসার্কেলরা আড্ডায় থাকলে কিন্তু মেয়েদের সামনে না

নিধিঃ এটা কি ধরনের অসভ্যতামি উজান

উজানঃ অসভ্যতামি তো কেবল শুরু করলাম,,তোরা যা করেছিস এরপর তো এরকম আরো অনেক অসভ্যতামি আমার তোদের সাথে করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি বল তো আমি বা তুষার কেউ এখনো তোদের লেভেলের অসভ্য হতে পারি নি

নিধিঃ মুখ সামলে কথা বল উজান____এসব বলার জন্য তুই ডেকেছিস আমাকে

উজানঃ না____সোজাসুজি সবটা স্বীকার করলে আমি তোর নাম সবার সামনে আনবো না কিন্তু তুই যদি কোনোভাবে চালাকি করতে চেষ্টা করিস তাহলে কিন্তু আমি

নিধিঃ কি স্বীকার করার কথা বলছিস তুই

উজানঃ মামুন স্টাফ কে জানি কতো টাকা দিয়েছিলি হিয়ার রুমের এক্সট্রা চাবি টা নেওয়ার জন্য

নিধিঃ উজান তুই!!!!

উজানঃ কুড়ি হাজার টাকা তাই তো

নিধিঃ তোর মাথা ঠিক আছে কি বলছিস কোনো হুশ আছে তোর

উজান কিছু বলার আগে তুষার সেই স্টাফের জবানবন্দি টার ভিডিও রেকর্ড টা নিধির সামনে তুলে ধরতেই নিধি পুরো ঠান্ডার্ড হয়ে ওখানেই কাঁপা কাঁপি শুরু করে,,শুধু সেই ভিডিও টা না তুষার সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও টাও নিধির সামনে তুলে ধরলে নিধি পুরো হতবাক হয়ে ওখানে তোতলাতে শুরু করে

উজানঃ এখনো তুই চুপ করে থাকবি__তুই আমাকে সব বল আমি শুধু হেড স্যারকে বলে হিয়ার ঔ ১মাসের সাসপেন্ড টা উইথড্র করবো জাস্ট__আর তুই যদি

নিধিঃ যদি

উজানঃ যদি তুই কিছু স্বীকার না করিস,,,তখন আমি সবাইকে জড়ো করে তোরা ঠিক যেভাবে হিয়াকে অপমান করেছিলি ঠিক সেভাবেই তোদের সবার সামনে তোকে আর তোর সাথে থাকা সবাই কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ১মাস কেনো আমি তোদের পুরো লাইফের জন্য সাসপেন্ডের ব্যবস্থা করবো

নিধিঃ না

উজানঃ আর ঘটনাটা তোর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছালে কি হবে একবার ভেবে দেখেছিস কখনো

তুষারঃ দেখ এতোগুলো প্রমাণ যখন আমরা এ্যারেন্জ করতে পারছি তখন বাকি টাও ঠিক হয়ে যাবে___তবে আমার মনে হয় এই প্রমাণ গুলোই যথেষ্ট আমাদের জন্য,, কি উজান ঠিক তো

নিধিঃ আমি যদি সব স্বীকার করি তাহলে তুই এখানেই ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিবি তো,,কোনোভাবে আমার বাড়ি অবধি কথাটা

উজানঃ তুই বল তো আগে

তুষারঃ শুধু শুধু অন্যের চামচাগিরি করে তুই যদি এখন তোর ফিউচার টা নষ্ট করতে চাস তাহলে আর আমরা এখানে

নিধিঃ না__আমি বলছি সবটা

উজান আর তুষার কথার জালে ফাঁসিয়ে নিধিকে দিয়ে সব ঘটনা বলে নেয় কখন ওরা কিভাবে,,আর তুষার গোপনে ফোন সেট করে নিধির বলা সব কথা ভিডিও করে নেয় নিমিষে,,নিধির থেকে সব শুনে নিয়ে উজান নিধিকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে আর নিধিকে বলে সে যেনো এই কথা গুলো এখন কাউকে না বলে,,

তুষারঃ নেক্সট কি করবি ভেবেছিস

উজানঃ (কঠোর কন্ঠে)তুই এখন সবাই কে গিয়ে লনে জোড় কর,,ঠিক তখন যেভাবে সবাই লনে জোড় হয়েছিলো,,Every Teacher Every Student যারা যারা ওসময় ওখানে উপস্থিত ছিলো তুই সবাইকে আসতে বল

তুষারঃ ঠিক আছে,,আমি আগাচ্ছি তুই আয়

তুষার উজানের কথা মতো সবাইকে এক জায়গাতে জড়ো করে তখন যেভাবে সবাই এক হয়ে লনে দাঁড়িয়ে ছিলো,,স্যার রা কেউ উজানের এই ডেকে আনার কারণ বুঝতে পারে না,,সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি শুরু করে,,এদিকে সবাই জড়ো হলে উজান হন্তদন্ত হয়ে হাঁটতে হাঁটতে হিয়ার রুমে ঢুকে শ্রাবণকে খুঁজতে শুরু করে,,,,ঝিনুক সন্ধি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো আর হিয়া শ্রাবণের পাশে শুইয়ে দুপুরে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা টা বারবার ভেবে যাচ্ছিলো,,

উজানঃ শ্রাবণ উঠ____উঠ শ্রাবণ

হিয়াঃ কি করছেন আপনি,,কেনো ওর কাঁচা ঘুম টা এভাবে নষ্ট করছেন

উজানঃ শ্রাবণ উঠ বলছি

ঘুমে থাকা শ্রাবণকে এক টানে উঠে তোলে উজান,,ঘুম ঘুম চোখে শ্রাবণ চোখ খুলে উঠে বসতেই উজান শ্রাবণকে কোলে তুলে নেয়

হিয়াঃ আপনি ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন,,,ভাইয়া ও কেবলি একটু ঘুমোলো,,আপনি কেনো ওকে

উজানঃ সন্ধি গেট ভালো করে লক করে নিচে আয়,,ফাস্ট

উজান এক হাতে শ্রাবণকে কোলে নিয়ে আরেক হাতে হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে টানতে টানতে লনে সবার মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়,,উজানের পেছন পেছন আসে ঝিনুক আর সন্ধি

হেড স্যারঃ কি হয়েছে উজান,,তুমি আমাদের সবাই কে এভাবে

উজানঃ বলছি স্যার

উজান হেড স্যার থেকে শুরু করে সবাইকে এক এক করে সব ঘটনা গুলো খুলে বলে,,উজানের কথা শুনে সবাই তো পুরো শকড,,উজানের আদেশে তুষার মামুন স্টাফ টাকে নিয়ে এসে হেড স্যারের সামনে সব বলে দিতে বললে স্টাফ তার চাকরি হারানোর ভয়ে সব স্বীকার করে দেয়,,স্টাফ সব স্বীকার করলে তুষার হেড স্যারকে এবার নিধির স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও টা দেখাতেই সবার মাথায় যেনো এক একটা বাজ পড়তে শুরু করে,,তার মানে এটা একটা সাজানো পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা ছিলো!!
হেড স্যার মানুষ টা প্রচন্ড ভালো কিন্তু এক বার ক্ষেপে গেলে তাকে থামানো বেশ মুশকিল হয়ে যায়

হেড স্যারঃ এসব কি নিধি,,Can you explain us

নিধিঃ স্যার আমি,,আমি আসলে

হেড স্যারঃ সত্যি টা আমি শুনতে চাই নিধি(ঝারি দিয়ে উঁচু কন্ঠে)

নিধিঃ স্যা__স্যা__স্যার এই ঘটনা টা সব প্রি প্লানড ছিলো,,আমি রাইসা আর নীলিমা মিলে___আমি শ্রাবণকে বলেছিলাম আপনার রুমে কফি দিয়ে আপনাকে ডাকতে___শ্রাবণ কফি দিয়ে আপনার রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে রাইসা গিয়ে আপনার ব্যাগ থেকে___আর নীলিমা সেই টাকা টা স্টাফের থেকে নেওয়া চাবি টা দিয়ে লক খুলে হিয়ার ব্যাগে___আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার আমি ইচ্ছে করে এসব করি নি নীলিমার কথা শুনে আমি

নিধি কাঁদতে কাঁদতে সব ঘটনা খুলে বললে ঘটনাস্থলে একটা হৈচৈ তৈরি হয়ে যায়,,সবাই নিধি রাইসা নীলিমা কে নিয়ে ছি চিক্কার শুরু করে,,হেড স্যার লজ্জায় কি থেকে কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না,,কিন্তু উজান সব কিছু প্রমাণ করার পরো থেমে থাকে না___সে সবার মাঝেই চিৎকার করে উঠে শ্রাবণকে নিয়ে মাঝে দাঁড়িয়ে যায়!!!!

উজানঃ শ্রাবণ জুতা খোল,,শুনতে পাস নি আমি তোকে কি বললাম,,,জুতা খোল শ্রাবণ

হিয়াঃ এসব আপনি কি বলছেন ভাইয়া,,,,শ্রাবণ জুতা খুলে কি করবে!!!!

উজানঃ তোকে আমি কি বললাম শ্রাবণ তুই শুনতে পাসনি

হিয়াঃ না শ্রাবণ একদম ওনার কথা তুই শুনবি না__কি কি কি করতে কি চাইছেন আপনি,,স্যার রা আছে স্যার রা সব বুঝে নিবে আপনি প্লিজ আর ব্যাপারটা

শ্রাবণ বেচারা এখন পরে গেছে দোটানায়,,তার টুকুর টুকুর চোখ দিয়ে সে একবার তার বুবুকে দেখছে তো একবার তার ভালো ভাইয়া কে,,কার কথা শুনবে সে এখন
শ্রাবণ জুতা খুলতে দেরি করছে দেখে উজান নিজে নিচে বসে শ্রাবণের পা থেকে জুতা খুলে নেয়

হিয়াঃ কি করছেন আপনি

উজানঃ শ্রাবণ ধর জুতা,,,আর এই সবকটার মুখে ছুঁড়ে

উজানের কথায় উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উঠে,,উজান কে এর আগে এরকম করে রাগতে কোনো স্যার ম্যাডাম বা তার ফ্রেন্ডরা কেউই দেখে নি!!!!

তুষারঃ এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে উজান,,বাদ দে

উজানঃ কিসের বাড়াবাড়ি তুষার,,যখন ওরা এই বাচ্চা ছেলে টার সাথে এসব করতে এক বারো ভাবে নি সেখানে এটা তো খুবই সামান্য একটা প্রাপ্য তাদের

সন্ধিঃ আমরা তো আর ওদের মতো অসভ্য না বল,,তুই একটু শান্ত হ

রাগে উজান হাতে থাকা জুতো গুলো হিয়ার পায়ের কাছে ছুঁড়ে মারে….

উজানঃ আপনাদের উচিৎ নয় কি স্যার যে আপনারা সবাই হিয়া আর শ্রাবণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন____সালেহা ম্যাম শুনলাম আপনিও নাকি এসবে ইনভলভ ছিলেন তা আপনি কিছু বলবেন না আমি

উজান কিছু বলার আগেই সালেহা ম্যাম হিয়ার হাত ধরে এসে ক্ষমা চেয়ে নেয়,,সালেহা ম্যামের পাশাপাশি আরো অনেক স্যার ম্যাডাম রা হিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে হেড স্যার নীলিমা দের এবং সালেহা ম্যাডামের শাস্তি স্বরুপ পুরো দু মাসের সাসপেন্ডের ব্যবস্থা করেন,,নিধি আর রাইসা কেঁদে ভাসিয়ে দিলেও নীলিমা জাস্ট চুপ হয়ে সব সহ্য করে নেয় কিন্তু একটা কথাও সে আপাতত মুখ দিয়ে বের করে না______
_______________

উজানের মন তো চেয়েছিলো ঘটনার সাথে জড়িত সবার সাথে এর চাইতেও খারাপ আচরণ করুক সে,,কিন্তু হিয়া ওকে বাঁধা দিলে উজান রাগে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসে,,এদিকে হিয়া শ্রাবণের পায়ে জুতো গুলো পড়িয়ে শ্রাবণকে ঝিনুকের সাথে রুমের ভেতর পাঠিয়ে দিয়ে পুরো রিসোর্ট জুড়ে উজানকে খুঁজতে থাকে,,উজান তখন বড় করিডোর টার একদম শেষ প্রান্তে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ওর মা আর বাবার কথা ভাবছিলো,,একটু আগে বাসবি আবার ফোন করেছিলো উজানকে তার বাবার শরীর টা নাকি আবার খারাপ হতে শুরু করেছে উজান যেনো কাল যে করেই হোক পিকনিক শেষ করে রাতের ফ্লাইটে রংপুরে ওদের নিজের বাসায় একেবারের জন্য হলেও আসে

হিয়া উজানকে খুঁজতে খুঁজতে বড় করিডোর টার দিকে দৌড়ে আসলে দেখতে পারে উজান শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে,,হিয়ার এ সময় মনের মধ্যে কি হয়েছিলো হিয়া জানে না,,দৌড়ে গিয়ে দিক বিদিক ভুলে সে অকপটে উজানকে পেছন দিক দিয়ে জাপ্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চা দের মতো কাঁদতে শুরু করে,,,উজান কিছু বলে না,,হিয়া যে ওকে জড়িয়ে ধরে এভাবে কাঁদছে কোথায় জানি গিয়ে তার ব্যাপারটা মনের মধ্যে বেশ শান্তি দিচ্ছে❤️

অনেকক্ষণ পর,,হিয়ার চোখের পানিতে উজানের পিঠের কাছের শার্ট টা পুরো ভিজে গেলে উজান এবার সামন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরা হিয়ার হাত দুটো আলতো করে ধরে

উজানঃ কাঁদতিস কিসের জন্য তুমি??

হিয়াঃ আজকে আপনি আমার আর শ্রাবণের জন্য যা করলেন আমি কখনো

উজানঃ আমি শুধু শ্রাবণ আর তোমার জন্য কাজটা করি নি হিয়া,,তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো আমি তার জন্য ঠিক এটাই করতাম

হিয়াঃ আপনি কার জন্য কি করতেন আমি জানি না কিন্তু আপনি আজ আমার জন্য স্যারদের সাথে যেভাবে

উজান হিয়াকে সামনে ঘুড়িয়ে তার দিকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আলতো করে হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে হিয়ার গাল দুটো দু হাতে উপরে তুলে ধরে

উজানঃ এতো কেনো নিজেকে তুমি দূর্বল ভাবো__আজ যদি আমি তোমাকে নির্দোষ প্রুভ না করতাম তাহলে কি তখনো তুমি এভাবে রুমের মধ্যে বসে থেকে____আমি তো জানতাম আমার হিয়া ভীতু না

হিয়াঃ আ–সলে___আ–মি আমি এর আগে কখনো এরকম কোনো সিচুয়েশন ফেস করি নি,,আজ হঠাৎ এরকম একটা ইন্সিডেন্ট আমার মাথা কাজ করছিলো না__সবাই মিলে আমাকে আর শ্রাবণকে এমনভাবে চেপে ধরেছিলো

উজানঃ চুপ আর না__চোখ মুছো এখন

হিয়াঃ হেড স্যার আমাকে সাসপেন্ড করে দিলো আমি না বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবো,,আমি এতো ভীতু না আপনি বিশ্বাস করুন আমি তো আমি তো অনেক সাহসী কিন্তু সবাই আমাকে আর শ্রাবণকে এমনভাবে দোষী বানিয়ে দিয়ে সব

উজানঃ আমি বুঝতে পারছি হিয়া,,,,এখন চুপ করে___আর না,,,,দেখি

হিয়াঃ আমি এতো দূর্বল নাআআ,,পরিস্থিতি টা এমন হয়েছিলো যে

উজান হিয়ার চোখ আবার ভালো করে মুছে দিয়ে হিয়াকে ওর বুকের বা পাশে জরিয়ে ধরে

উজানঃ পরিস্থিতি যাই আসুক না কেনো তোমাকে Strong থাকতে হবে হিয়া___হতে পারে এর চাইতেও খারাপ পরিস্থিতিতে কখনো তোমাকে পড়তে হলো তখন তখনো কি এভাবে কেঁদে ভাসিয়ে দিবে তুমি

হিয়াঃ আমি তো বললাম আপনাকে আমার সহ্য ক্ষমতা অনেক কিন্তু আজ এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমি না কেমন জানি ঘাবড়ে গিয়ে

উজানঃ এটাই লাস্ট এর পর এরকম কোনো সিচুয়েশন আসলে কিন্তু আমি বা তুষার কেউ তোমাকে হেল্প করবো না__তোমাকে নিজের জায়গা টা নিজে শক্ত করে তৈরি করতে হবে___ওরা যেমন ওদের যোগ্যতায় ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে তুমিও কিন্তু নিজেরই যোগ্যতাতে এখানে এসে ভর্তি হয়েছ__তাই নিজেকে ওদের থেকে কম ভাবার কিচ্ছু নেই ঠিক আছে

হিয়া চোখ মুছে নাক টেনে মাথা নাড়িয়ে বলে হুম

উজানঃ কি করবা এখন

হিয়াঃ জানি না

উজানঃ যাও রুমে গিয়ে একটু রেস্ট করো,,আমি মকবুল স্যারের সাথে একটু এ্যায়ারপোর্টর দিকে যাবো

হিয়াঃ এ্যায়ারপোর্টের দিকে কেনো??

উজানঃ কাল বাড়ি যাবো একবার মা ডাকছে

হিয়াঃ আপনি তাহলে আমাদের সাথে ফিরবেন না কাল

উজানঃ হয়তো না,,,,দেখি ফ্লাইট না পেলে ট্রেন বা বাসে যেতে হবে হয়তো

হিয়াঃ কাল তাহলে কখন যাবেন আপনি

উজানঃ বিকালে তোমাদের সবাইকে বাসে তুলে দিয়ে তারপর আমি বাড়ি ফিরবো

হিয়াঃ তারমানে বাসে ওঠা অবধি আপনি আমাদের সাথে থাকবেন

উজানঃ হুম থাকবো____আসো আমার সাথে তোমাকে রুমে দিয়ে আসি আমি,,,,আসো

হিয়াঃ 🥰
_________________

পরেরদিন সবাই খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যায়,,কারণ আজ বিকালের আগেই আবার সবাইকে সেই ঢাকার জন্য বাস ধরতে হবে__সবাই ভোর ৬টায় উঠে ১১টা অবধি আশেপাশের বাকি পাহাড় গুলো ঘুরে সাড়ে ১১টার মধ্যে রিসোর্টে এসে জড়ো হয়

রিসোর্টে বড় লনে আজ আয়োজন করা হয় পিকনিকের মূল রান্নাবান্নার___আজ সব স্যার ম্যাডামরা পিকনিকে আসা স্টুডেন্টের নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে বলে লনের খোলা মাঠে বড় চুলা বানিয়ে হাঁড়ি পাতিল খুন্তি সব নিয়ে বসে যায়,,যদিও এ কাজের জন্য রিসোর্ট ম্যানেজমেন্টকে এক্সট্রা টাকা দিতে হয়__

আর মকবুল স্যার এবার বায়না ধরে পাহাড়ি দোকান থেকে কিনে আনা সব ছেলেদের জন্য থিম পোশাক হবে পাহাড়ি লুঙি আর সেন্ডো গেঞ্জি আর মেয়েরা পড়বে পাহাড়ি মেয়েদের মনিপুরী ড্রেস___মকবুল স্যারের বায়না রাখতে গিয়ে লুঙ্গি পড়ে অধিকাংশ ছেলের এখন যায় যায় অবস্থা

শ্রাবণঃ ও হোওও__তাড়াতাড়ি কর না একটুউউউউ

হিয়াঃ আহ দেখি ঠিক হয়ে দাঁড়া,,নাহলে কিন্তু খেলতে খেলতে তোর এই লুঙ্গি খুলে যাবে এই বলে রাখলাম আমি

শ্রাবণঃ আচ্ছা সুন্দর করে গিট্টু দিয়ে দে

হিয়াঃ এই আমি টাইট করে গুঁজে দিলাম যদি ওয়াশরুম যেতে হয় তাহলে আগে আমাকে ডাকবি,,নয়তো লুঙ্গি ঢিলে হয়ে খুলে গেলে সবাই তোর পুতুপাখি টা দেখে ফেলবে

ফয়সালঃ শ্রাবণের পুতু টা দেখে ফেলবে সবাই হে হে

শ্রাবণঃ তাহলে তোর লুঙ্গিও আমি খুলে দেবো,,হে হে

ফয়সালঃ খুলে দিলে দিবি আমি ভেতরে আরো একটা প্যান্ট পড়ছি,,কেউ দেখতেই পাবে না আমার পুতুটাকে

শ্রাবণঃ আমার বুবুওও আমাকে ভেতরে প্যান্ট পড়ায় দিছে আমার টাও খুলে গেলে কেউ দেখবে না হু

হিয়াঃ হয়েছে দেখি এখন

ঝিনুকঃ এ মাআআআ সন্ধি আপু দেখো কি লাগছে ছোট দুটো কে লুঙ্গি পড়ে

শ্রাবণঃ লুঙ্গি না এগুলোকে ফুঙ্গি বলে ফুঙ্গি

হিয়াঃ একই জিনিস,,যা এবার ভাগ তোরা দুজন,, এখন আমাদের রেডি হতে দে

ঝিনুকঃ হ্যা যা তো তোরা,,আমরা রেডি হবো এখন আর ডিস্টার্ব দিবি না আমাদের

শ্রাবণ আর ফয়সাল লুঙ্গি ধরে দৌড়ে বাহিরে এসে খেলতে শুরু করলে উজানের চোখ যায় শ্রাবণের উপর,,উজান তখন ওর রুম থেকে বেড়িয়ে তুষারকে খুঁজছিলো লুঙ্গি পড়িয়ে দেবার জন্য,,উজান এর আগে কখনো লুঙ্গি নামক জিনিস টা পড়েনি,,উজান ভেবেছিলো এ আর এমন কি কঠিন জিনিস কিন্তু তুষার যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিলো সেভাবে উজান পড়েছিলো ঠিকই কিন্তু পড়ে একটু হাঁটতে গিয়েই তার মনে হচ্ছে যেনো তার লুঙ্গি খুলে খুলে যাচ্ছে

উজানঃ ডিজগাস্টিং,,এসব জিনিস কেউ পড়ে,,একবার খুলে গেলে মান সম্মান একবারে___মকবুল স্যারের মাথায় কি এর চাইতে বেটার কিছু আসলো না,,তুষার টাও বা কোথায় গেলো____অসহ্য লাগছে আমার খুব অসহ্য_____শ্রাবণ না ওটা!!

শ্রাবণঃ আরে ভালো ভাইয়া তুমি এখনো লুঙ্গি পড়ো নি,,সবার পড়া তো শেষ

উজানঃ এই এদিক আয় তো,,,তোকে এতো সুন্দর করে কে লুঙ্গি পড়ায় দিলো

শ্রাবণঃ কে আবার বুবু,,,আমাকে আর ফয়সালকে তো বুবু লুঙ্গি পড়ার দিলো

উজানঃ তোর বুবু লুঙ্গি পড়াতে পারে!!

শ্রাবণঃ হ্যা এই দেখো কি সুন্দর টাইত (টাইট)করে পড়িয়েছে,,আমি এখন বল খেললেও খুলে পড়বে না,,আর আমার পুতুপাখি টাও কেউ দেখবে না

উজানঃ কিন্তু আমি যে পড়তে পারতিছি না,,লুঙ্গি পড়ে মনে হচ্ছে খুলে খুলে যাবে,,এখন সবার সামনে লুঙ্গি খুলে গেলে তো সবাই আমার পুতুপাখি টা দেখে ফেলবে তখন

শ্রাবণঃ আরে বুবু আছে না,,তুমি বুবুর কাছে গিয়ে পড়ে আসো দেখবে খুলবে না আর লুঙ্গি আর কেউ তোমার পুতুপাখি টাকেও দেখবে না

উজানঃ (শ্রাবণের গাল দুটো টেনে ধরে) আগে বলবি না আমার একটা সুপার এক্সপার্ট বউ আছে এরকম,তুই একটা কাজ করতে পারবি আমার,,তোর বুবুকে গিয়ে বলবি ভালো ভাইয়া ইমিডিয়েট মানে শীঘ্রই তাকে আমার রুমে ডাকছে

শ্রাবণঃ আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি এখুনি বুবু কে ডেকে বলছি তুমি ডাকছো

উজানঃ হুম ফাস্ট ফাস্ট

শ্রাবণঃ হুম হুম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here