#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat
স্বর্ণ বাসায় গিয়ে মা’কে সাথে করে হাসপাতালে গেলো।রুটিন চেক-আপ এর জন্য।এর আগেও কয়েকবার গিয়েছে তবে কেউ জানে না নিহারিকা খানম ছাড়া।
আরব অভিমানে বুক ভারী করে বাসায় ফিরলো।স্বর্ণ এরকম’টা না করলেও পারতো।কি হতো কিছুক্ষণ দাড়ালে!একসাথে কিছুসময় থাকা যেত,চোখে চোখ রেখে কথা হতো,আরব ওর দিকে চোরাচোখে বারবার তাকাতো,স্মৃতিপটে কিছুটা আদুরে মুহূর্তের জমা হতো।এইতো চায় আরব।কিন্তু স্বর্ণ কেন বোঝে না?সারাদিনে আর ফোন বা মেসেজ কিছুই করবে না সে।ওপাশ থেকে সাড়া এলে তবে মনের বরফ গলবে।
মায়ের সাথে চেক-আপ করে বাড়ি ফিরলো স্বর্ণ।বাচ্চা ভালো আছে তবে ডাক্তার আয়েশা ইয়াসমিন বলেছেন গর্ভাবস্থায় যথাসম্ভব ব্যাথার,ঘুমের ঔষধগুলো পরিহার করতে আর দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে।
বাড়ি ফিরে মা-মেয়ে মিলে রান্না করলো।একসাথে খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে স্বর্ণ ঘুমাতে চলে এলো।কেমন যেন ঘুম ঘুম পাচ্ছে,ক্লান্ত লাগছে।ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়লো।ভেবেছিলো আরবের অনেক মেসেজ,কল এসে জমা হয়ে আছে।যেটা প্রতিদিনই হয় কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আজ কোনো মেসেজ বা কল কিছুই নেই।আনমনেই কিছু একটা চিন্তা করে স্বর্ণ আরবের নম্বর ডায়াল করলো।তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো।যদিও কল আসতেই রিসিভ করতে ইচ্ছে করছিলো আরবের কিন্তু নিজেকে সামলে অপেক্ষা করে রিসিভ করলো।কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না কলটা কাঙ্ক্ষিত!
স্বর্ণ স্বাভাবিক স্বরেই প্রশ্ন করলো,’কি করছো?’
‘কিছু না।’
আরবের গলার স্বরটা কেমন যেন!কিছু কি হয়েছে?হঠাৎ তখনের ঘটনটা মনে পড়ে গেলো।আরব ওকে দাঁড়াতে বলেছিলো কিন্তু ও দাঁড়ায় নি।সেইজন্য কি মন খারাপ করেছে?স্বর্ণ আবারও জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে?’
‘না,কিছুই হয় নি।’
‘সরি,আসলে ইন্টারভিউ থেকে বেরিয়ে খারাপ লাগছিলো খুব।দাঁড়িয়ে থাকতে মন চাচ্ছিলো না।তাই দাঁড়াই নি।তুমি রাগ করেছো?’
স্বর্ণের স্বীকারোক্তি শুনে আর অভিমান ধরে রাখতে পারে নি ছেলেটা।এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে।শুধু নিজের দিকটাই দেখেছে।স্বর্ণ’র অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করে নি।
‘না রাগ করি নি।এখন ঠিক আছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘তোমার ভাইয়ারা এসেছে?’
‘না এসে পড়বে বোধহয়।’
‘আচ্ছা।কি করবে মনে আছে তো?’
‘হ্যাঁ,আছে।’
‘গুড।আমাকে আপডেট দিও।’
‘হ্যাঁ সে তো দেবো ই।আচ্ছা,এখন রাখি।পরে কথা হবে।’
‘আচ্ছা।’
ফোন রেখে স্বর্ণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।কিছুক্ষণ আগে আসা ঘুমঘুম ভাবটা আর নেই তবে শুয়ে থাকতে ভালোই লাগছে।আনমনে কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই শুনতে পেলো কলিং বেল বাজছে।এসে গেছে!স্বর্ণ এখন মরার মত পড়ে থাকবে।আপাতত কিছুক্ষণের জন্য সে কানে শোনে না।
প্রায় দশমিনিট পর ওর ঘরের দিকে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।স্বর্ণ চোখ বন্ধ করেও বেশ বুঝতে পারছে এই পায়ের আওয়াজটা ভাবির ছাড়া আর কারো না।সিমা স্বর্ণকে শুয়ে থাকতে দেখে উঁচু গলায় ডাকলো,’স্বর্ণ,এ্যাই স্বর্ণ ওঠো।সুমন ভাই তোমার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছে।’
স্বর্ণ মনে মনে বলল,’আজকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে বসে থাকলেও আমি উঠবো না।’
স্বর্ণ মুখনিঃসৃত কোনো শব্দ না পেয়ে সিমা আবারও ডাকলো,’স্বর্ণ,সুমন ভাই তোমার জন্য অনেক কিছু এনেছে।তোমায় নিজ হাতে দেবে বলে বসে আছে।ওঠো না!’
তারপরও স্বর্ণের কোনো সাড়াশব্দ নেই।যেন গভীর ঘুমে বিভোর সে।সিমা আরও ডাকবে কিন্তু তার আগেই নিহারিকা খানম এসে বললেন,’গভীর ঘুমে আছে।এখন ডেকো না।পরে কথা বলো ওর সাথে।’
সিমা মুখকালো করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।নিহারিকা খানমও একবার মেয়ের দিকে চেয়ে বেরিয়ে গেলেন।তিনি খুব ভালোমত জানেন স্বর্ণ ঘুমায় নি।ওর ঘুম এতো ভারী না।সত্যিই ঘুমে থাকলে এতবার ডাকা লাগতো না।এক ডাকেই উঠে পড়তো।
সুমন যাওয়ার একঘন্টা পর উঠেছে স্বর্ণ।অবশ্য প্ল্যান এ এটা ছিলো না কিন্তু এত তাড়া ফেস করতে ইচ্ছে হয় নি ওর।শোয়া থেকে উঠে ড্রইং রুমে এসে দেখলো খালি।কেউই নেই।যাক ভালো!রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।কালো আরো দু’টো ইন্টারভিউ আছে।একটা চাকরি যে করেই হোক পাওয়া লাগবে।এ মাসে যতগুলো ইন্টারভিউ আছে সব দিবে।একটা না একটা হয়েই যাবে।একাডেমিক রেজাল্ট তো ভালোই ওর।
কফি খেতে খেতেই ভাবলো প্রজেক্ট ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারটা।নাহ!ও আরবের জন্য ছাড়ে নি।ছেড়েছে মায়ের জন্য।মা’কে একা ফেলে যাওয়ার মত অমানুষ নয় সে।যেদিন সারা পৃথিবী ওর বিপরীতে ছিলো সেদিন ও এই মা’কেই পাশে পেয়েছে।তাকে রেখে এভাবে চলে যাওয়াটা মানায় না।পারবে না ও।মা’কে ছাড়া সম্ভব না থাকা।তাই তো একটা চাকরিটা প্রয়োজন।চাকরি পেলেই মা’কে নিয়ে চলে যাবে।আর আরব?ওর সাথে বন্ধুত্ব’টা নষ্ট করতে মন চাইছে না কিন্তু উপায় নেই।ওকে নিজের এই ভাঙাচোরা কড়িকাঠের জীবনে জড়ানোর মানেই হয় না।আর সত্যিগুলো শোনার পর ও ই আর নিজেকে জড়াতে চাইবে না।স্বর্ণ এটাই চায়।
রাত আট’টায় সিমা আবার এলো স্বর্ণর ঘরে।স্বর্ণ তখন একটা নাটক দেখছিলো।সিমা এসে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,’স্বর্ণ,তোমার ভাইয়া তোমাকে ডাকে।কথা বলবে।’
স্বর্ণ কান থেকে ইয়ারফোন’টা খুলতে খুলতে বলল,’যাও,আসছি।’
সিমা গেলো না।অগত্যা স্বর্ণকে ওর সাথেই যেতে হলো যেনও দাগী আসামী।চলে গেলেই পালাবে।
আশরাফ ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছিলো।স্বর্ণকে দেখে থমথমে গলায় বলল,’বস।’
স্বর্ণ বসলো।আশরাফ গম্ভীর স্বরে বলল,’সুমন চাইছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে।’
‘আচ্ছা।’
‘পরের মাসের শেষ সপ্তাহে ডেট দিয়েছে।ওর বোন কানাডা থেকে এলেই।’
‘ঠিক আছে।’
স্বর্ণ এভাবে মেনে নিচ্ছে বলে আশরাফ ও সিমা দু’জনেই অবাক।ওরা মনে করেছিলো স্বর্ণ বেঁকে বসবে কিন্তু না ওদের অবাক করে দিলো স্বর্ণর এমন রিয়েকশন।
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।সাথে আমাকেও ক্ষমা করবেন এত দেরি করার জন্য কিন্তু আর না এখন থেকে প্রতিদিন রাত ১০/১০.৩০ মধ্যে গল্প পেয়ে যাবেন।
আর আপনাদের কাছে গল্প নিয়ে একটা প্রশ্ন।স্বর্ণ কেন এমন চুপচাপ?ওর মাথায় কি চলছে?কেউ কি অনুমান করতে পারছেন?)