শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ১৩ #Arshi_Ayat

0
314

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat

স্বর্ণ ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে।আরব কি তবে সব জেনে গেলো?ভূল বুঝলো ওকে?ঠিক হয় নি এটা।অন্তত এভাবে জেনে যাওয়াটা একদম ঠিক হয় নি।ভালোবাসার মানুষ না হোক বন্ধু হিসেবে ছেলেটাকে পছন্দ করে স্বর্ণ।এখন ওর চোখে ঘৃণা দেখতে ভালো লাগবে না একটুও।তারচেয়েও বড় কথা কি বলবে আরব কে?ও তো এখন প্রতারক ভাববে স্বর্ণকে।এসব ভাবতে ভাবতেই আরবের কন্ঠস্বর শুনলো।সে উত্তপ্ত স্বরে বলল,’ওই বাস্টার্ড’টা তোমার হাত মুচড়ে ধরলো আর তুমি কিছু বললে না কেন?’
‘বলতে দিলে কোথায়?তার আগেই তো তুমি এসে তুফান উঠিয়ে দিলে।’
‘তো কি করবো?আমি এসেই দেখি হা*রা*মি’র বাচ্চাটা তোমার হাত মোচড়াচ্ছে।আমার তো দেখেই মাথায় আগুন ধরে গেলে।’আরব রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।স্বর্ণ এতক্ষণে স্বস্তি পেলো একটু তারমানে আরব কথাগুলো শোনে না।এমনকি থাপ্পড় মারাটাও দেখে নি।যাক ভালো হলো।বুকের ওপর থেকে এক মণের একটা পাথর সরে গেলো।এমন নয় যে স্বর্ণ আরবকে এসব লুকিয়ে যাবে,কিন্তু বলার একটা সময় আছে।হুট করেই সবকিছু বলা যায় না।কিছুক্ষণ আগের ঘটনার রেশ কাটিয়ে আরব হুট করেই বলল,’চা খাবে?’
‘চা?এখন?’
‘হ্যাঁ চলো।আনোয়ার কাকার দোকান থেকে খেয়ে আসি।এরমধ্যে ক্লাস শেষ হয়ে যাবে এরপর নেক্সট ক্লাস ধরবো।’
স্বর্ণ হাতঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,’চলো।’

ভার্সিটি এরিয়া থেকে অল্পদূরেই আনোয়ার কাকার দোকান।পায়ে হাঁটা পথ দশমিনিট।যাওয়ার পথেই দেখলো একঝাঁক পর্তুলিকার সমাহার।আরব নিরবেই স্বর্ণের পাশ থেকে সরে একগুচ্ছ পর্তুলিকা নিয়ে এলো।পাশ আসতেই স্বর্ণ খেয়াল করে বলল,’এতগুলো দিয়ে কি করবে?
‘দেখো কি করি।আগে হাত দাও।’
স্বর্ণ আলতো হেসে হাত বাড়ালো।দেখা যাক ছেলেটা কেমন পাগলামি করে।
আরব স্বর্ণের বাঁ হাতের অনামিকার মাপ নিয়ে একটা রিং বানিয়ে সেখানে পরিয়ে দিলো।আর বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটা খোঁপা আর কয়েকটা দিয়ে ব্রেসলেট বানিয়ে হাত পরিয়ে দিলো।অতঃপর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,’আমার ফুলকুমারি।’
স্বর্ণ হাসলো।সেই হাসিতে ছেলেটা আরেকদফা মুগ্ধতার মোহজালে জড়িয়ে গেলো।এতোটা মায়াময়ী কিভাবে হয় একটা মেয়ে?নাকি ভালোবাসে বলেই এত মায়াবী লাগে!আরব বুঝতে পারে না।দিনে দিনে মেয়েটার প্রতি মুগ্ধতা,স্নিগ্ধতা,ভালোবাসা, সব যেন বেড়েই চলছে।

সকাল বেলা চায়ের দোকানে তেমন একটা খদ্দের থাকে না।সবাই কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে।তেমন আজও নেই।ওরা যেতেই আনোয়ার কাকা খুশি হয়ে বলল,’মামা,চা দিমু আপনাগো?’
‘হ,মামা।আমার’টায় চিনি কম দিয়ে আর আপনার মামীর’টা বেশি।’
আরবের কথা শুনে স্বর্ণ বিস্মিত হলো।ছেলেটা জানলো কি করে যে ও চা’য়ে চিনি বেশি খায়।এত খেয়াল করে?

ওরা চা খেয়ে ক্যাম্পাসে আসলো।ক্লাসে যাওয়ার পথে আরবের বন্ধু সাইফুলের সাথে দেখা হওয়ায় ও দাঁড়িয়ে পড়লো।আর স্বর্ণকে ইশারায় বলল দাঁড়াতে কিন্তু স্বর্ণ দাঁড়ালো না ক্লাসে চলে গেলো।স্বর্ণ যাওয়ার পরই সাইফুল বলল,’তোদের মধ্যে কি চলে রে?’
‘অনেক কিছু।’
‘তোরা রিলেশনে আছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘তুই জানিস না উচ্ছ্বাস ভাইয়ার সাথে স্বর্ণ’র রিলেশন ছিলো।’
‘হ্যাঁ থাকুক।এখন তো নেই।’
‘বুঝতে পারছিস না তুই।ওদের গভীর সম্পর্ক ছিলো।একসাথে ঘুরতে যাওয়া,সিনেমা দেখা,হাতে হাত রেখে হাঁটা আ…’
সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই আরব ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’দেখ ভাই!আর আগে কি ছিলো না ছিলো এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।আমি ওকে ভালোবাসি এটাই সত্য।এখন এটার চেয়ে বড় সত্য আর নেই।’
সইফুলের আর কিছু বলার নেই।ও বন্ধুর পিঠে চাপড় মেরে বলল,’ক্যারি অন ব্রো।’
আরব হেসে মাথা নেড়ে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
ক্লাস শেষে স্বর্ণ আগে বেরিয়ে গেলো।আরবও ওর পিছু নিচ্ছিলো কিন্তু কিছু জুনিয়র এসে ঝামেলা পাকিয়ে দিলো।ওদেরকে একটা টপিক বুঝিয়ে দিতে হবে।কিন্তু কোনমতে কাটিয়ে কালকে বোঝাবে বলে বেরিয়ে এলো।স্বর্ণ এখনো ভার্সিটি থেকে বেরুতে পারে নি।আরব এক দৌড়ে ওর পাশে চলে গেলো।হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,’নিষ্ঠুর মেয়ে!একটু দাঁড়ালে কি হতো?’
‘দাঁড়াবো কেন?’
‘কারণ একসাথে যাবো।’
‘আমি এখন টিউশনে যাবো আরব।তুমি আমার সাথে আসবে কেন?’
‘এমনিই!’আরব মাথা চুলকে বলল।
স্বর্ণ কঠোরভাবে বলল,’একদম না।এক্ষুণি বাসায় যাবে।’
আরব মুখ কালো করে বলল,’আচ্ছা যাবো না কিন্তু এই ছাতা’টা নাও।প্রচুর রোদ।’
নিজের ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে দিয়ে বলল।স্বর্ণ বলল,’আমার লাগবে না তুমি রাখো।’
‘না,তোমাকে নিতে বলেছি তুমি নিবে।’
একপ্রকার জোর করেই হাতে ধরিয়ে দিয়ে সামনের দিকে দৌড় দিলো আরব।অজান্তেই হেসে ফেললো স্বর্ণ।এত ছেলেমানুষী করে ছেলেটা।আসলেই আজকে রোদের তাপ’টা বেশি।স্বর্ণ ছাতা’টা খুললো।আজকে বাসায় ফিরতে একটু দেরি হতে পারে।টিউশনি গুলো করিয়ে সুমনকে দেখতে যেতে হবে।নাহলে ভাই-ভাবী প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলবে।হয়তো সকালে না যাওয়ার কারণেও মা’কে অনেক কথা শুনিয়েছে।

টিউশনি শেষ করে হাসপাতালে গেলো স্বর্ণ।হাত,পা চারটাতেই ব্যান্ডেজ।ভালোই মা’র খাইয়েছে মা।সুমন ওকে দেখে ন্যাকা অভিমানী কন্ঠে বলল,’এই তোমার আসার সময় হলো?আমি সারাদিন অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য।’
‘ক্লাস ছিলো আমার।’কাটকাট স্বরে বলল স্বর্ণ।এই লোকটার জন্য বিরক্তি আর ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসে না ওর এই যে হাত,পা ভেঙে বিছানায় শুয়ে আছে তবুও একবিন্দু সমবেদনা আসছে না।সুমন বায়না ধরেছিলো আজকে রাতে ওর সাথে থাকতে।স্বর্ণ বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে আধঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে এলো।

বাসায় ফিরে প্রতিদিনের মত ফ্রেশ হয়ে বসতেই সিমা এসে বলল,’তোমার কি মায়াদয়া নেই স্বর্ণ?তোমার হবু বর মার খেয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে আর তুমি সকালে তাকে দেখতে গেলে না।সুমন ভাইয়ের বাবা-মা কি ভাবছে বলো তো!আমার তো লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে।’
স্বর্ণ চা’য়ে চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে বলল,’আমি আসার সময় ওনার সাথে দেখা করে এসেছি আর কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমার ব্যাপার আমি খুব ভালো করেই বুঝি তোমাকে নাক গলাতে হবে না অতো।’
‘হ্যাঁ তা তো দেখছিই।’
সিমা তাচ্ছিল্যের সুরে এটা বলেই চলে গেলো।তাতে ভাবান্তর হলো না স্বর্ণের।ও শান্ত ভঙ্গিতে চা’টা শেষ করলো।কিছুক্ষণ ক্লাসের নোটগুলো দেখে।রাতের খাবার তৈরি করতে গেলো।খাওয়া শেষ করে এসে আবার কিছুক্ষণ পড়লো এরমধ্যেই আরব ফোন করলো।আজ বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলো না স্বর্ণ।ঘুম পাচ্ছে ভিষণ!ফোন রাখতেই দেখলো নতুন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে।মেসেজটা দেখে খুশিতে হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে স্বর্ণের।তাতে লেখা’,
Dear shorno mehbub, congratulations!you are selected on our company.please collect your appointment latter.

চলবে…..
(স্বর্ণ’র চাকরি পাওয়াতে আপনাদের কেমন লাগছে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here