শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ০৯

0
464

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

দুপুরের পর থেকে আকাশ কালো হতে শুরু করেছে।দূর-দূরান্ত হতে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘের মেলা বসেছে বিশাল অম্বর জুড়ে।স্নিগ্ধশীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে তনু মন।ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে আরব আর স্বর্ণ।স্বর্ণের একহাত আলতো করে ধরে রেখেছে আরব।আজকে ওরা কেউই ক্লাস করে নি।বিভিন্ন জায়গায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করেছে।স্বর্ণর খারাপ লাগে নি বরং অনেকদিন পর নতুন কিছু হওয়ায় ভালোই লেগেছে।আরব বন্ধু হিসেবে খুব ভালো তবে প্রেমিক হিসেবে কেমন সেটা জানে না স্বর্ণ।কারণ ওকে সে ভূমিকায় কল্পনা করতে পারছে না।শুধু বন্ধুত্ব দিয়ে কি একজীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব?

ঘোরাঘুরি শেষে আরব ওকে বাড়ি পৌঁছে দিলো।স্বর্ণ অবশ্য বলেছিলো বাসায় আসতে আরব হেসে বলল,’এভাবে বিনা অধিকারী যেতে চাই না।একদিন অধিকার নিয়েই যাবো।’
স্বর্ণ হেসে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বসতেই নিহারিকা খানম শরবত নিয়ে এলেন।মেয়েকে শরবত দিয়ে সামনাসামনি বসে বললেন,’ওরা আসবে না আজকে।কাল সকালে রওনা হবে।আবহাওয়া ভালো না তাই রিস্ক নিয়ে আসবে না।’
স্বর্ণ গা ঝাড়া দিয়ে বলল,’বাহ!ভালোই হলো।শান্তিতে থাকা যাবে।’
‘ভেবেছিস কিছু?’
‘কি?’
‘সুমনকে কি বলবি?আমি আশরাফের সাথে কথা বলে বুঝলাম ফিরে এসেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাইবে ওরা।’
‘তুমি এত চিন্তা করো না আমি ভেবে ফেলেছি কি করবো।’
‘কি ভেবেছিস?’
‘সারপ্রাইজ।তুমি চিন্তা করো না একদম।কিছুই হবে না।আমি সামলে নিবো।’
‘আচ্ছা,সাবধানে।আর কি খাবি রাতে?’
‘তোমার যা ইচ্ছা।আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাবো।কাল একটা ইন্টারভিউ আছে।’
‘চাকরির?’
‘হ্যাঁ।চাকরি পেলে এ বাসা ছেড়ে তোমাকে নিয়ে চলে যাবো।এই যে এরা তোমাকে এত কথা শোনায় আমার ভালো লাগে না।’
নিহারিকা খানর মলিন হেসে বললেন,’আমার এখন আর খারাপ লাগে না।’
‘কিন্তু আমার লাগে।আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেবো না।’
‘আচ্ছা।’
নিহারিকা খানমের গলা ধরে এলো।তিনি আর কথা না বাড়িয়েই চলে গেলেন।স্বর্ণ সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

স্বর্ণ তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়লো তাই আরবের কল রিসিভ করতে পারলো না।শুতেই যেন রাজ্যের ঘুম তাকে টেনে নিয়ে গেলো এক অন্য দুনিয়ায়।

পাহাড়ি হাওয়ার তালে স্বর্ণের চুলগুলো মায়ের অবাধ্য দুষ্টু বালিকাদের মত উড়ছে।শূন্য একটা জায়গা।কেউ নেই এখানে!একদম পাহাড়ের চুড়োয় দাঁড়িয়ে আছে সে।পেছনে গিরিখাত আর সামনে গভীর সমুদ্র।দিশেহারা স্বর্ণ কি করবে?সে এখানে এলোই বা কি করে?সমুদ্রের গভীরতায় চোখ রাখতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো স্বর্ণের।তার অ্যাক্রোফোবিয়া বা উচ্চতা ভীতি আছে যার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পা ফসকে পড়ে যেতে লাগলো পাহাড়ের চুড়ো হতে গভীর সমুদ্রে।কিন্তু হঠাৎ মনে হলো হাতটা কিছুতে আঁটকে আছে।ভয়ে ভয়ে ওপরের দিকে চাইতেই দেখলো বলিষ্ঠ একটা হাত সর্বশক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে তাঁকে।মুখটা দেখা যাচ্ছে না।শুধু চোখগুলো বোঝা যাচ্ছে।কি গভীর একজোড়া চোখ!ওর দিকেই চেয়ে আছে।স্বর্ণ ভরসা পাচ্ছে ওই চোখজোড়ায় চোখ রেখে।কিন্তু হঠাৎ কি যেন হলো!হাতের বাঁধন আলগা হয়ে এলো।স্বর্ণ হারিয়ে যেতে লাগলো সমুদ্রের অতল গভীরতায়।

তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বসলো স্বর্ণ।কি ছিলো এটা?স্বপ্ন?এত বাস্তব?ফ্যান চলছে তবুও ঘেমে একাকার হয়ে গেছে সে।শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।স্বপ্নটা ভাবাচ্ছে ওকে।হঠাৎ এমন একটা স্বপ্নই বা দেখলো কেন?কার ছিলো ওই চোখজোড়া?কেনোই বা শেষে হাতটা ছেড়ে দিলো?এসব ভেবে ভেবেই অস্থির হয়ে উঠলো স্বর্ণ।কিছুতেই মাথা থেকে বের হচ্ছে না।বিছানা থেকে উঠে ড্রইং রুমে গিয়ে পানি খেয়ে আসলো।মন অন্যদিকে নেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিলো।আরবের দশটা মিসডকল।এখন তো সাড়ি তিনটা বাজে।কল দিলে ধরবে?না থাক পরে কথা বলা যাবে।স্বর্ণ ফোন রেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুমের রেশও নেই চোখে।অগত্যা শুয়ে না থেকে উঠে অর্ধেক শেষ হওয়া উপন্যাসটা নিয়ে বসলো।সমরেশ মজুমদারের ‘আমি রেণু’ বইটাই পড়ছে সে।পড়তে পড়তেই একটা উক্তি খেয়ালে এলো।উক্তিটা এমন

‘এতদিনের একটা সম্পর্ক বাঁ হাত নেড়ে অবহেলায় সরিয়ে দিল,প্রয়োজন কত সহজে মিটে যায় কারও কারও!’

স্বর্ণ চোখ বুঝলো।আসলেই সে উচ্ছ্বাসের প্রয়োজনই ছিলো।প্রয়োজন শেষে ছুঁড়েও ফেলে দিলো।অথচ এসবই কি পাওয়ার ছিলো?এক চিমটি পরিমাণ ভালোবাসাও কি ছিলো না?সব কি শারীরিক চাওয়া ছিলো?এতই তুচ্ছ ভালোবাসা?স্বর্ণ ভেবে পায় না।উপন্যাস শেষ না করেই উঠে গেলো সে।পড়তে মন চাইছে না।বাকিরাত’টা এমনিই স্মৃতিচারণেই চলে গেলো।ভোরে একটু চোখ লেগে এলো স্বর্ণের।সাতটার সময় নিহারিকা খানম এসে ডেকে দিলেন ওকে।ইন্টারভিউ সাড়ে আট’টা থেকে।উঠে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে পরিপাটি হয়ে নিলো স্বর্ণ তারপর নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো।

ইন্টারভিউ শেষে অফিস থেকে বের হতেই দেখলো আরব ফোন করেছে।রিসিভ করতেই বলল,’কেমন হলো ইন্টারভিউ?’
‘ভালোই।’
‘যাক ভালো।চিন্তা করো না হয়ে যাবে।’
‘হলেই ভালো।’
‘কোথায় আছো?’
‘বের হলাম মাত্র।’
‘ও আচ্ছা।দশমিনিট দাঁড়াও আসছি আমি।’
‘কেনো?আসার দরকার নেই।’
‘আছে।তুমি চুপচাপ দাঁড়ও।’
বলেই কল কেটে দিলো আরব।স্বর্ণের মনে হলো ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি।অতদূর থেকে কেনো আসতে হবে?স্বর্ণ মোটেও দাঁড়ালো না বাসায় চলে গেলো।এদিকে আরব এসে ওকে না পেয়ে ভিষণ অভিমান হলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here