মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-39

0
923

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-39

সেদিন রাতে আর কেউ কারো সাথে কথা না বলে ওভাবেই ঘুমিয়ে যায়,,হিয়া কিছুক্ষণ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলেও উজান এক বিন্দুও এপাশে ঘুরে না,হিয়ার সাথে একটা কথা বলা তো দূরে থাক,,

পরেরদিন জানালা দিয়ে রোদের আলো এসে ঘরময় ভরিয়ে দিতে শুরু করে,,কখন যে কাল রাতে ঘুমের মধ্যে হিয়া এপাশে ফিরে উজানকে জড়িয়ে ধরে-উজানের বুকের উপর এসে এক পাশ হয়ে শুইয়ে পড়েছিলো তা হিয়া বুঝতে পারে নি,,আর উজানো যে কখন এপাশে ফিরে তাকে জড়িয়ে রাখা হিয়াকে বুকে আগলে নিয়ে দু হাতে ভরে নিয়েছিলো সে বুঝে নি,,ফোনের কিরিং কিরিং শব্দ কানে বাজতেই ঘুম ভেঙে আসে দু’জনের,,উজান হাতড়ে ফোন টা মুখের কাছে এনে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে সিম কোম্পানির নাম্বার,,আর দেখেই তো মেজাজ হয়ে গেলো খারাপ,,ফোন টা সাইলেন্ট করে একটু নড়তেই খেয়াল করে হিয়া ওর বুকের উপর থেকে উঠে ওর গায়ের ওড়না টা টানছে যেটা ঘুমের মধ্যে উজানের নিচে চাপা পড়ে ছিলো,,

উজানঃ এতো সকালে উঠে কি করবা তুমি,,৭ টাও তো ঠিক মতো বাজেনি এখনো___ঘুমোও পরে উঠিও

হিয়া উজানের কথা না শুনে সামন দিক দিয়ে নিচে নেমে ওয়াশরুম চলে যায়,,ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে দেখে যে তাকে উজানের সাথে কথা বলতে হবে এমন তো না,,তাকে তো উজানকে রাগ দেখাতে হবে না-কি,,উজান হিয়াকে কিছু না বলে শ্রাবণের পাশে গিয়ে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুম দেয়,,ঘুম ভাঙ্গে ঠিক সকাল নয়টা,,এই দু ঘন্টায় হিয়ার সকালের জন্য রুটি আর ডিম বানানো শেষ,,হিয়া কালকের বিরিয়ানি গুলো ভালো আছে দেখে ওগুলো গরম করে নেয়,,দুপুর অবধি ভালো থাকলে খাওয়া যাবে,,শুধু শুধু নষ্ট করার কি দরকার,,


সবকাজ শেষে কাপে চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চা খেতে খেতে খেতে সকালের প্রকৃতি দেখায় আপাতত ব্যস্ত হিয়া,,এদিকে উজান আর শ্রাবণ উঠে হাত মুখ ধুইয়ে নেয়,,হিয়ার চা খাওয়া হলে হিয়া টেবিলে দু’জনের নাস্তা দিয়ে রুমে এসে রুম টা গুছিয়ে নেয় টপাটপ,,রুম টা ঝাড়ু দিতে যাবে ওমনি শ্রাবণ এসে বলে ভাইয়া চা খাবে তোকে চা দিতে বললো,,হিয়া ঝাড়ু থুইয়ে চা টা গরম করে এনে টেবিলে দিতেই উজান চা নিয়ে উঠে হিয়ার বই খাতা সব বের করতে শুরু করে,,

উজানঃ শ্রাবণ বুবু কে গিয়ে বল ভাইয়া পড়তে ডাকছে,আর এক্ষুনি ডাকছে মানে এক্ষুনি যেনো সে আসে(কঠোর কন্ঠে)

শ্রাবণ গিয়ে হিয়াকে ডেকে আনে ঠিকই কিন্তু বলে না কিসের জন্য উজান ডাকছে,,বাচ্চার মাথায় বুদ্ধি আছে পড়ার কথা শুনলে যে তার বুবু আসবে না সে যে খুব ভালো করেই সেটা জানে,,হিয়া এসে উজানের সামনে দাঁড়াতেই উজান এক ধাক্কা দিয়ে হিয়াকে বিছানায় এনে ফেলে বসিয়ে দেয়,,

উজানঃ সব কাজ শেষ না তোমার,,নেও এখন পড়তে বসো,

হিয়াঃ কেনো আপনি জেদ করেছেন,,আমি পরীক্ষায় ফেল করি খুব মজা লাগবে না আপনার তখন

উজানঃ হ্যা লাগবে,,নেও এখন বই ধরো,,এমন না যে তুমি এই একটা বছর কিছু পড়ো নি হিয়া,,অনেকে আছে যারা পরীক্ষার দু তিন মাস আগে থেকে পড়াশোনা শুরু করে ফাস্ট ক্লাস পায়,,আর তুমি তো সারা বছর পড়ে আসছো, শুধু এই দুটো মাস পড়া হয়নি এই যা,,তুমি শুরু করো আমি দেখছি বাকি টা

হিয়াঃ আপনি কি দেখবেন শুনি আমি কেমিস্ট্রির স্টুডেন্ট আর আপনি ম্যাথম্যাটিক্সের,,আপনি কিছু পারবেন আমাকে বুঝিয়ে দিতে

উজানঃ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি,,পড়তে বলছি পড়া শুরু করো

হিয়াঃ না আমি পড়বো না

উজানঃ আচ্ছা মুশকিল তো,,আমি এতো বুঝাচ্ছি তারপরো ছোট বাচ্চার মতো জেদ করছো তুমি

হিয়া এবার এক প্রকার অসহায় হয়ে কান্না করে দেয়,,উজানের ভয়ে জোরে কাঁদতেও পারে না,,কিন্তু গাল বেয়ে টুক টুক করে পানি ঝরতে থাকে,,উজান হিয়ার কান্না সহ্য করতে না পারলেও এই ক্ষেএে সে কোনোরকম ছাড় দিতে প্রস্তুত না হিয়াকে,,

!
!
!

উজানের এক রকম শাষনে হিয়া বাধ্য হয়ে পরীক্ষা গুলো দিতে শুরু করে,,কোনোটা খারাপ হয় কোনটা মোটামুটি,,তবে ফেইল আসবে ব্যাপারটা সেরকম না,,সিজিপিএ কম আসবে এ-ই যা,,

সব পরীক্ষা শেষ হয়ে আসতে প্রায় দেড় মাসের মতো সময় লাগে,,এই দেড় টা মাস উজান পুরো সময় টা হিয়া আর হিয়ার পড়াশুনা তে কাটিয়ে দিলেও এবার সে ঠিক করে সে সিফাতদের একটা কঠিন ব্যবস্থা করবে,,

উজানঃ তুষার শোন যা করতে হবে সেটা পুরোটাই হিয়াকে না জানিয়ে,,হিয়ার কানে সেদিন কথা টা হালকা পাতলা তুলতেই হিয়া কিন্তু অনেকটা রেগে গিয়েছিল,

ঝিনুকঃ এই হিয়া টা যে কিনা সত্যি আমি বুঝি না,,এরকম কেউ করে,,আরে ঔ শয়তানের বাচ্চা গুলোকে শাস্তি না দিলে যে ওরা আরো এরকম অন্যায় কাজ করবে,সেটা যে কেনো এ যুগের মেয়ে হয়ে ওহ বুঝতে চাইছে না ঔ জানে

সন্ধিঃ আসলে ব্যাপারটা সেটা না ঝিনুক,,হিয়া ছোট থেকে নিজের আপন মানুষ দের হারাতে হারাতে এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে ওর মধ্যে সবাইকে হারানোর একটা অন্য রকম ভয় চেপে বসে আছে__!!

উজানঃ তাই বলে আমরা সিফাতদের ছেড়ে দেবো তুই বল

সন্ধিঃ না কখনোই না,,ওদের শাস্তি হবে,,আর যা করতে হবে সেটা হিয়াকে না জানিয়ে

তুষারঃ যদি পড়ে হিয়া এ নিয়ে কোনো রাগারাগি করে তখন

সন্ধিঃ রাগারাগি করবে স্বাভাবিক,,আর তোদের কে একটা কথা আমার বলা হয় নি,,আসলে সিফাতরা মাঝে মধ্যে হিয়াকে ফোনে নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে হিয়ার মনের ভয় টাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে তাই হিয়া আরো বেশি করে এসবে না করতে রাজি হচ্ছে

উজানঃ হুমকি ধামকি দিচ্ছে মানে!!

সন্ধিঃ আসলে হিয়া তো আমাকেও এই কথা গুলো বলতো না,,সেদিন আমার সামনেই ফোন টা আসায় আমি জানতে পারলাম,,সিফাতরা হিয়াকে ভয় দেখিয়েছে যে আমরা কোনো ভাবে এ বিষয়ে পুলিশে হস্তক্ষেপ করলে তারা তোকে জানে মেরে ফেলবে তাই জন্য হিয়া

উজানঃ কিসব বলছিস তুই এগুলো,,এতো বড় একটা কথা হিয়া আমাকে জানানোর প্রয়োজন অবধি মনে করে নি,,আর তুইই বা কি হিয়া তোকে বলতে মানা করলো ওমনি তুই ও

সন্ধিঃ কি করবো আমি নিরুপায় ছিলাম,,আজ মনে হলো কথা গুলো যখন উঠছে তোরা যখন অন্য ভাবে ওদের শায়েস্তা করতে চাইছিস তাই জন্য আমি

উজানঃ এবার তো আমি কিছুতেই ঔ কুত্তা গুলোকে ছাড়বো না তুষার,,তুই তোর আঙ্কেল কে ডাক,,বল আমি শ্রাবণের লিগাল গার্ডিয়ান হয়ে যা করার করবো,,যতো টাকা লাগবে সব আমি দেবো

সন্ধিঃ একবার যদি হিয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতি,

উজানঃ হিয়া রাজি হবে না সন্ধি উল্টে বাঁধা দিবে,,তাই বলে তো আমি বসে থাকবো না,,

ঝিনুকঃ দেখো ভাইয়া তুমি কি করতে পারো,,আমি আপু সবাই তোমার পাশে আছি,,

উজানঃ হুম জানি,

উজান তুষারের ঔ পুলিশ আঙ্কেল দুটো কে নিয়ে সিফাতদের বাড়িতে সিফাতকে খুঁজতে যেতেই শুনতে পারে সে বাড়িতে নেই,,কিভাবে যেনো পুলিশ আসবে শুনতে পেয়েই সে পালিয়ে গেছে,,উজান ওদের তিনজনের এক জনকে গ্রেফতার করাতে সক্ষম হলেও সিফাত আর যে চাকু টা মেরেছে তাকে গ্রেফতার করতে পারলো না আজ,,

!
!
!
আর উজানের এই কাজে সিফাত এবার আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে,,

হিয়াঃ আপনি আবার কেনো আমাকে ফোন করেছেন,,আমি তো আপনাকে বলেছি আপনার উপর আমার বা ওনার কোনো অভিযোগ নেই,,

সিফাতঃ অভিযোগ নেই না তাহলে আজ পুলিশ পাঠিয়ে কি করলি এগুলো,,আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি তোরা রে,,তার আগেই তোর ঔ ভাই আর তোর উজানকে মেরে খুন করে দেবো আমি

হিয়াঃ আপনি আমার কথাটা শুনুন,,আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো,,আমরা সত্যি কোনো পুলিশ পাঠাইনি বিশ্বাস করুন,,

সিফাতঃ বলেছিলাম এ সব বিষয়ে পুলিশ যেনো কোনোভাবে কোনো হস্তক্ষেপ না করতে পারে তবুও তুই আর তোর সো কলড বয়ফ্রেন্ড শুনলি না তো আমার কথা,,,এবার দেখবি তোর ঔ উজানের আমি কি হাল করি,,আজকেই ঔ শয়তানের একটা ব্যবস্থা করবো আমি

হিয়াঃ আপনি ওনার কোনো ক্ষতি করবেন না,,উনি কিছু করে নি,আপনারা কেনো ওনার সাথে লেগে আছেন,,হ্যালো হ্যালো আপনি শুনছেন আমার কথা,,হ্যালো

হিয়া কিছু বলার আগে সিফাত ফোন কেটে দেয়,,এদিকে হিয়া ভয়ে তৎক্ষনাৎ সন্ধিকে ফোন করে কি হয়েছে আজ জানতে চায় কিন্তু সন্ধি উজানকে দেওয়া কথা অনুযায়ী হিয়ার কাছে সবটা গোপন রাখে,,এদিকে হিয়ার মন কিছুতেই কিছু মানতে চাইছে না আজ,,কেনো মনে হচ্ছে আজ তার উজানের কোনো বিপদ হতে পারে,,এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসলো উজান আজ এখনো বাড়িতে নেই কেনো??

!
!

রাত আটটার দিকে কলিং বেলের লাগাতার শব্দ কানে আসতেই হিয়া দরজা খুলে আর দেখতে পারে তুষার আর রুপম উজানকে দুদিক থেকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে,,উজানের পায়ে ব্যান্ডেজ,কপালে ব্যান্ডেজ ঠোঁটের দিকে হালকা রক্ত,,হিয়া বুঝতে পারে না কি হচ্ছে,,হিয়া উজানকে ধরতেই কেঁদে ফেলে মুহুর্তে,,

উজানঃ আরে আমি ঠিক আছি হিয়াপাখি,,ভেতরে তো ঢুকতে দেও

হিয়াঃ এসব এসব কি করে হলো?

তুষারঃ আর বলো না বাইকের সামনে একটা মুরগীর বাচ্চা আসছিলো ওটাকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার এই হবু বর টা দুম করে একটা এ্যাক্সিডেন্ট করে দিলো

হিয়াঃ মুরগীকে বাঁচাতে এক্সিডেন্ট,,আপনি সত্যি বলছেন তো

উজানঃ হ্যা রে হাঁসপাখি,,মিথ্যা কেনো বলতে যাবো

হিয়াঃ ডক্টর দেখিয়েছেন,,ডক্টর ওনাকে দেখে কি বললো উনি ঠিক আছে তো

সন্ধিঃ আরে এতো অস্থির হবার কিছু নেই,,উজান ঠিক আছে,,দেখি ভেতরে নিয়ে গিয়ে ওকে একটু শুইয়ে দেও

হিয়াঃ হু হুম,,আসুন

সবাই উজানকে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিতে শ্রাবণ দৌড়ে এসে উজানকে ঘপ করে জড়িয়ে ধরে

শ্রাবণঃ আমার ভালো ভাইয়া টার কি হইছে বুবু

সন্ধিঃ তোমার ভালো ভাইয়ার কিচ্ছু হয় নি সোনা,,সে একদম ঠিক আছে

শ্রাবণঃ(উজানের মুখে হাত বুলে দিয়ে) এই কাপলে কি হইচে(হয়েছে) এটা,,ব্যান্ডেজ কেনো লাগানো

উজানঃ এমনি একটু লেগে এরকম হয়েছে,,

শ্রাবণঃ ইসস তুমি আজ এতো দেড়ি করে আসলে,,বুবু বারবার তোমার কথা বলছিলো তুমি আসছো না কেনো তুমি আসছো না কেনো,,

সন্ধিঃ হুম,,এখন এই তো আসছে আর কোনো চিন্তা নেই,,হিয়া রান্না করা আছে তোমার কিছু,,উজানকে খাইয়ে দিয়ে এই ঔষধ গুলো দিতে হবে

হিয়াঃ আমি এক্ষুনি তরকারি টা গরম করে ভাত বেড়ে আনছি,,আপনারা একটু বসুন ওনার পাশে,,

সন্ধিঃ আছি আমরা তুমি আনো,,

হিয়া দূত পায়ে রান্নাঘরে চলে যেতেই সন্ধি এবার উজানকে রাগ করতে শুরু করে,,এদিকে যে কখন আবার হিয়া এসে ওদের কথা শুনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে যায় কেউ বুঝতে পারে না,,

সন্ধিঃ দেখলি পাকামো করতে গিয়ে কি হলো,,তুই জানিস না সিফাতদের হাত কতোদূর অবধি,,আজ কিছু একটা করে দিলে তখন

উজানঃ আস্তে বল,,হিয়া শুনলে আমার সাথে খুব রাগ করবে,,আরে ওদের ভয়ে কি এজন্য আমরা চুপ করে থাকবো

সন্ধিঃ চুপ করে না থাক সাবধানে তো চলতে পারতি

উজানঃ আরে গলির মোড়ে এসে ওদের ছেলেপেলে গুলো এভাবে হামলা করে দেবে তা কি আমি জানতাম,,

সন্ধিঃ আজ ঔ পুলিশের জিপ টা ওদিক দিয়ে না মোড় নিলে কি হতো কোনো ধারণা আছে তোর___ আচ্ছা যা হয়েছে এরপর থেকে সাবধানে যা করার করবি সিফাত রা অনেক ডেঞ্জারাস সেটা তো জানিস,,হিয়া জানতে পারলে কিন্তু তোকে

শ্রাবণঃ এই বুবু তুই দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে কেনো আচিস(আছিস),,কিছু বলবি

সন্ধিঃ হিয়া!!

হিয়াঃ তারমানে আপনি তখন আমায় মিথ্যে বলেছিলেন তাই তো আপু,,আসলে ওনার কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি সিফাত ভাইয়ারা ওনাকে এভাবে

উজানঃ হিয়া শোনো আমার কথা,,ওরা তো কিছু করতে পারে নি আমার,,দেখো আমি একদম ঠিক আছি___তুমি জানো ওদের আজ তিনজনের একজনকে আমরা গ্রেফতার করতে পেরেছি আর শুধু সিফাত আর আরেকজনকে আটক করতে পারলেই

হিয়াঃ থাক___ আমি শেষ বারের মতো আপনাকে বলছি হয় আপনি কাল গিয়ে কেস উইথড্র করে আসবেন নাহলে আমাকে আর শ্রাবণকে সারাজীবনের জন্য হারাবেন,,এখন আপনি কোনটা করবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ডিসিশন,,আমি আর এ ব্যাপারে আপনাকে কিছু বলবো না কিচ্ছু না,,

!
!
!

হিয়া একরাশ অভিমান আর ভয় নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করে,,একটা অন্য রকম ভয় এসে চেপে ধরে হিয়াকে,,আজ যদি উজানকে ওরা,,কেনো উজান ওকে না জানিয়ে আবার এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো,,সব কিছুর জন্য ওর নিজেকে দায়ী মনে হতে শুরু করে,,সন্ধি তুষার এসে হিয়াকে বুঝালেও হিয়ার ভয়ার্ত মন আজ কিছুতেই কিছু বুঝতে চাইছে না,,হিয়া ভাত দিয়ে সন্ধিকে বলে ওনাকে খাইয়ে দিতে,,সন্ধি কি করবে বুঝতে পারে না,উজানকে ভাত আর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে সন্ধি তুষারকে নিয়ে নিচে চলে আসে,,এদিকে হিয়া তখন থেকে এখন অবধি আর উজানের কাছে যাই নি,,এ দিকের ফাঁকা রুম টার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে ব্যস্ত সে,,শ্রাবণ এসে অনেকবার হিয়াকে ডেকে যায় কিন্তু হিয়া আসে না,,

শ্রাবণঃ ভাইয়া বুবু না কাঁদছে খুব,,আমি দেখে আসলাম

উজানঃ আচ্ছা তুই ঘুমে যা আমি তোর বুবুকে পড়ে দেখছি,,

শ্রাবণ ঘুমে গেলে উজান অনেক কষ্টে এই রুম থেকে ঔ রুমে হেঁটে এসে হিয়াকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু হিয়া না শুনে দৌড়ে এসে এই রুমে আবার শ্রাবণকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে,,উজান জানে হিয়াকে এখন বুঝিয়ে লাভ নেই আর ওর শরীর টাও ভালো লাগছে না হাতে পায়ে অসম্ভব ব্যাথা দিচ্ছে, তাই সে হিয়াকে কিছু না বলে রুমে এসে হিয়ার পাশে শুইয়ে পেছন থেকে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে,,হিয়া তখনো কাঁদছে একটা ভয় ওকে খুব খারাপ ভাবে ঘিরে ধরছে,,

শরীর খারাপ থাকায় উজান ঘুমে যায়, কিন্তু চিন্তায় আর হিয়ার ঘুম আসে না,,হিয়া উঠে এসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,,ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে তিনটা,,হঠাৎই ফোনের শব্দে হিয়া দৌড়ে রুমে এসে ফোন টা নিতেই দেখে একটা টেক্সট,,টেক্সট টা ওন করে পড়তে গিয়েই হিয়া কেঁপে ওঠে,টেক্সট টা ছিলো”আজকে তো শুধু হাত পা ভেঙে দিছি,,কাল যদি কেস উইথড্র না করা হয় তাহলে লাশ হয়ে তোর ঔ বয়ফ্রেন্ড কে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে,কথাটা যেনো মাথায় থাকে”___মুহুর্তেই মাথার উপরের আকাশ টা যেনো খন্ড বিখন্ড হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে পড়তে শুরু করে হিয়ার উপর,,মনের ভয় টা এমন ভাবে চিপে ধরে যে হিয়া শ্বাস নিতেও কেমন একটা বোধ করে,,,,

!
!
!
পরের দিনঃ

ঘুম থেকে উঠতেই উজানের সাথে এবার হিয়ার একটা তুমুল ঝগড়া বেঁধে যায়,,উজান কিছুতেই এই কেস উইথড্র করবে না আর এদিকে হিয়া কিছুতেই উজানকে আর এসবে জড়াতে দেবে না,,এই দুই এক কথায় দু’জনের এই প্রথম বাড়ি কাঁপানো ঝগড়া বেধে যায়,,শ্রাবণ এদিকে এদের ঝগড়া দেখে ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলে শেষ মেষ,,দৌড়ে গিয়ে সন্ধিকে নিচ থেকে ডেকে নিয়ে আসে,,সন্ধি তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করবে কিন্তু শ্রাবণের কান্না দেখে সন্ধি ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে শ্রাবণকে কোলে নিয়ে দৌড়ে উপরে আসে,,কিন্তু এসেও কোনো লাভ হয় না,,উজান আজ যে পরিমাণে ক্ষেপে আছে তাকে আজ থামানো সন্ধির পক্ষেও অসম্ভব,,

উজানঃ তুমি কি বলতে চাইছো কি,যে এই কেস আমি উইথড্র না করলে তুমি আমার থেকে তোমাকে আর শ্রাবণকে আলাদা করে দেবে তাই তো

হিয়াঃ হ্যা তাই

উজানঃ তাহলে এখন আমিও তোমায় বলছি,যদি তুমি গিয়ে আজ এই কেস উইথড্র করো তাহলে আমি আর কখনো তোমার সাথে এ জীবনে কথা বলবো না হিয়া,,আর আমার রাগ তো তুমি জানোই

হিয়াঃ যদি আপনার ভালোর জন্য আমাকে তাই করতে হয়,আমি তাই করতে রাজি,

উজানঃ মানে তুমি আমাকে হারাতে প্রস্তুত কিন্তু তবুও এই কেস তুমি চাও না

হিয়াঃ না চাই না আর কতোবার বলবো আপনাদের,,আজ যদি ওরা হামলা করতে গিয়ে আপনাকে খুন করে দিতো তখন

উজানঃ ওরা জাস্ট তোমাকে ভয় দেখিয়েছে হিয়া আর কিচ্ছু না,,

হিয়াঃ আমি এতোসতো বুঝি না,,যখন আমি বলেছি আপনি কেস উইথড্র করবেন তো করবেন

উজানঃ যদি এই কেস উইথড্র করা হয়,,তাহলে কিন্তু তুমি আমাকে সারাজীবনের জন্য আর পাশে পাবা না

হিয়াঃ না পেলে নাই,,কিন্তু এতে তো আর আপনার কিছু হবার কোনো ভয় আমার থাকবে না,,

উজানঃ এটাই তোমার লাস্ট ডিসিশন,,

হিয়াঃ হুম

উজানঃ হিয়া ভেবে বলো কিন্তু,,আমার রাগ তো তুমি জানো না আমি যেমন সব দিয়ে ভালো বাসতে পারি ওমনি দূরে গিয়ে সরেও থাকতে পারি,,

হিয়াঃ আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন কিন্তু ভালো থাকুন,,এর বেশি কিচ্ছু চাই না আমার

উজানঃ আমার ভালো থাকার জন্য তোমার এই ডিসিশন তো,,ঠিক আছে যাও গিয়ে তুমি কেস উইথড্র করো,,আমার কারো সাহায্য লাগবে না আমি একাই সিফাতদের ব্যবস্থা করতে পারবো___কিন্তু তোমার কাছে আর ফিরে আসবো না কথা টা মনে রেখো তুমি,,

উজান শ্রাবণকে একবার জড়িয়ে ধরে রাগে গটগট করে হিয়ার কাছ থেকে সরে আসে,,উজানের এই রাগ ছিলো সত্যি অন্য রকম,,সে যে রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো আর একেবারে জন্যও সে পেছন ফিরে ঘুরে দেখলো না,,

!
!
!
গত চার মাস ধরে উজান হিয়ার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করে নি,,যা যোগাযোগ ছিলো,যা খোঁজ নেবার ছিলো সেটা শুধু মাএ শ্রাবণের সাথে ছিলো,,হিয়া যখন করে ক্লাস করতে ভার্সিটি যেতো বা টিউশন পড়াতে গুনগুন দের বাড়িতে তখন করে উজান এসে এসে শ্রাবণকে দেখে যেতো,,শ্রাবণের কি লাগতো না লাগতো সব শুনে নিতো___এদিকে সিফাতদের কেস টাও যে ঝুলে ছিলো এমন টাও না,,উজান কেস টাকে ঝুলে থাকতে দেয় নি,,হিয়াকে একরকম চুপ করিয়ে সে সিফাত আর ঔ আরেকটা ছেলেকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে তবেই শান্ত হয়,,এদিকে এসবের কিছুই হিয়া জানে না,,সে মনে করে তার থেকে দূরে যাবার পরই উজান এখন ভালো আছে,,তার থেকে দূরে সরে যাওয়াতে সিফাত আর হিয়াকে ফোন দিয়ে কোনো হুমকি ধামকি দেয় না,,উজানের উপর কোনো হামলা করে না______এর মধ্যে উজান ভার্সিটিতে জয়েন করে ক্লাস নেওয়া শুরু করে,,উজানের তো অনেক ইচ্ছে ছিলো টিচার হয়ে জয়েন করে এটা করবে,সে ওটা করবে কিন্তু কিছুই তো কিছু করা আর হয়ে উঠলো না তার,,ক্যাম্পাসে এক দু বার হিয়ার সাথে ওর যা মুখোমুখি হয়,,হিয়া যাও বা একটু কথা বলে উজানের খোঁজ নিতে চায় কিন্তু উজান ভুল ক্রমেও হিয়ার সাথে কথা তো দূর-দেখে থেকেও যেনো না দেখার ভান করে,,উজানের জন্য মন তো হিয়ার ছিঁড়ে খায়,,জাপ্টে ধরে উজানের বুকে ঘুম দিতে ইচ্ছে করে তার কিন্তু হিয়াও তো নিরুপায়,,ছোট থেকে সব হারিয়ে এ-ই ভাইটা আর উজান বলে মানুষ টাই যে তার শেষ সম্বল!!

হিয়াঃ শ্রাবণ,,আজকেও ভালো ভাইয়া আসছিলো বাড়িতে?

শ্রাবণঃ হ্যা মানে

হিয়াঃ এগুলো কে কিনে দিয়ে গেছে?

শ্রাবণঃ ভাইয়া,,

হিয়াঃ তোমাকে আমি বলছি না তুমি ভাইয়ার থেকে আর কখনো কিছু কিনে নিবে না

শ্রাবণঃ আমি কিনে চাই নি তো,,ভাইয়া সাথে করে নিয়ে এসেছে,,

সন্ধিঃ হিয়া আসছো তুমি,,নেও এখানে এই কিছু বই আছে উজান বললো তখন তোমাকে দিতে

হিয়াঃ আমার থেকে যখন দূরেই আছে তাহলে এতো আমাকে নিয়ে ভাবার কি প্রয়োজন ওনার,,ওনাকে গিয়ে বলবেন এসব আমার চাই না,,আমি আগে যেভাবে চলতাম ওভাবে চলতে পারবো

সন্ধিঃ তোমাদের মান অভিমান মাথা পুরো শেষ করে দেয় আমাকে

হিয়াঃ আপনি এসব নিয়ে যান আপু,,চাই না আমার এগুলো___আর আপু একটা কথা আমি সামনের সপ্তাহে আমার আগের বাড়িতে শিফট করছি,,এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না

সন্ধিঃ সেকি কিন্তু কেনো,,এখানে কোনো অসুবিধে হচ্ছে তোমার,,

হিয়াঃ না আপু আমি এখানে অনেক ভালো আছি,,কিন্তু এ বাড়ির ভাড়া ঠিক আমার সাথে যায় না আপু,,প্রতি মাসে শুধু ভাড়ার পেছনে আমার ৩০হাজার খরচ করার সামর্থ্য কোথায় আপনি বলুন?

সন্ধিঃ আমরা কেউ কি তোমার কাছে ভাড়া চেয়েছি হিয়া,,বাবা তো ভাড়া নিতোই না উজান জোর করে বাবাকে দু মাসের টাকা পাঠিয়ে ভাড়াটা

হিয়াঃ আমি জানি আপু,,তাই জন্য আমি,,উনি যদি ওনার বেতনের অর্ধেক টাকা শুধু আমার আর শ্রাবণের থাকা-খাওয়ার জন্য খরচ করে আমি তো সেটা মানবো না আপু

সন্ধিঃ উজান তো জেদ করে আছে তো আছে ওদিকে তুমি কেনো আবার জেদ করছো বলো তো হিয়া

হিয়াঃ এসব তো ঠিক না আপু,,উনি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না অথচ আমার খোঁজ নিতে চাইবে আমি তো তা চাই না আপু,,আপাতত ওনাকে কিছু বলার দরকার নেই যখন বাড়ি শিফট করবো সেদিন আমি আপনাকে জানাবো,,

!
!
!

হিয়া ওর কথা অনুযায়ী সন্ধির বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আবার ওর আগের বাড়িতে শিফট করে,,আর এই কথা টা কানে আসতেই উজান এবার প্রচুর পরিমানে রেগে যায়,,এই ৪/৫মাস হিয়ার থেকে দূরে থেকে সে সব সহ্য করে ছিলো কিন্তু হিয়ার এই বাড়াবাড়ি সে কিছুতেই এবার সহ্য করতে পারছিলো না,,

ক্লাস শেষ করে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো হিয়া,,হঠাৎই উজানের হাতের এক টানে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে হিয়া এসে পড়লো,,উজান ক্লাসরুমের দরজা ধাম করে লাগিয়ে ঝড়ের গতিতে হিয়ার কাছে এসে হিয়ার দু বাহু গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চিপে ধরে হিয়াকে দেওয়ালে ঠেসে ধরতেই হিয়া ভয়ে কেঁদে ফেললো,,উজানের চোখের দিকে তাকাবার সাহস আর ওর হলো না,,মাথা নিচু করে সে শুনতে থাকলো উজানের সব কথা,,

উজানঃ বাড়ি কেনো চেঞ্জ করছো??__আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে হিয়া,,

হিয়াঃ ও বাড়িতে থাকার মতো সামর্থ্য নেই আমার তাই জন্য আমি (কাঁপা কন্ঠে)

উজানঃ (রাগে হিয়াকে আরো জোরে চিপে ধরে) তোমার থেকে দূরে সরে গিয়ে আমি এটা ভেবেছিলাম যে না তুমি শুধরে যাবা,,কিন্তু তুমি হিয়া তো হিয়াই,,কি পাও তুমি আমাকে এ-তো টা কষ্ট দিয়ে হিয়া,কি পাও??____লিসেন হিয়া,আমি কয়েকদিন ধরে অনেক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি এখন এইসব লুতুপুতু টাইপ প্রেম ভালোবাসা করার সময় আমার নেই,,তাই তুমি অনন্ত দয়া করে,দয়া করে আমাকে আর কোনো পেশার দিও না

ভয়ে হিয়া মাথা নিচু করে এবার ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে

হিয়াঃ আমি কি বলেছি আমার জন্য কোনো পেশার নিতে,,আপনি তো আমাকে ছাড়া ভালো আছেন তাহলে অহেতুক কি প্রয়োজন আমি কেমন আছি,কিভাবে থাকছি সে খোঁজ নেওয়ায়

উজানঃ আমি একবারো বলেছিলাম হিয়া আমাকে ছাড়ো,,আমি শুধু একটা শর্ত দিয়েছিলাম হয় তুমি কেস উইথড্র করবা না নয়তো আমাকে হারাবা,,তুমি তোমার ডিসিশন নিছো,,আমি তো কিছু বলি নি তোমাকে___তুমি একা থাকতে চাইছো আমি তো দিছি তোমাকে একা থাকতে,,তোমার সাথে থাকলে নাকি আমার খুব বিপদ তাই জন্য তো আমি চলে গিয়েছি তো দূরে,,তাহলে এখন কিসের জন্য কাঁদছো তুমি,,তোমার তো এসব মানায় না

হিয়াঃ তাহলে আপনিও আর আমার ব্যাপারে কোনো নাক গলাবেন না,,আমি কোথায় থাকি, কি খাই ভুলেও দেখতে যাবেন না

হিয়া কান্নায় রাগে অভিমানে কথা গুলো বলতে থাকে,,

উজানঃ তোমার কথা আমি শুনতে বাধ্য না হিয়া,,বরং তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য__শ্রাবণ আমার বাচ্চা তাই আমি ওর কাছে যাবো না ওকে নিয়ে এসে আমার কাছে রাখবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার,,

হিয়াঃ না আপনি তাও করবেন না,,আপনি যেমন আমাকে শর্ত দিয়েছিলেন আমিও আপনাকে ঠিক তেমনি শর্ত দিয়েছিলাম যে আপনি কেস উইথড্র করবেন নয়তো আমাকে ভুলে যাবেন,,আপনি আমাকে ভুলে যেতে রাজি ছিলেন কেস উইথড্র করতে না

উজানঃ আমি এখনো তোমাকে ভুলে যেতে রাজি আছি সমস্যা কোনো তোমার,,

হিয়াঃ তাহলে বারবার কেনো আমার বাড়িতে যান আপনি,,কেনো শ্রাবণকে দিয়ে আমি কেমন আছি সেটা জানতে চান,,

উজানঃ আমি কি করবো কি করবো না সেটা তোমাকে বলে বলে করবো(একদম ঝারি দিয়ে)

হিয়াঃ হ্যা করবেন আপনি,,আমি তো আপনাকে হারাতে চাই নি উজান,,আমি শুধু চেয়েছিলাম আপনি এইসব কেস,পুলিশ এগুলো বন্ধ করুন___এসব না করেও তো আমি শ্রাবণ আপনি আমরা সবাই একসাথে ভালো ছিলাম,,ছিলাম না,বলুন?___কিন্তু আপনার তো ঔসব ভালো থাকা সহ্য হয় নি,,আপনাকে তো সবকিছুতে বাড়াবাড়ি করতে হবে,,

উজানঃ আমি শ্রাবণের দোষীদের শাস্তি দিতে চেয়েছি এটা তোমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছিলো হিয়া!!

হিয়াঃ হ্যা হচ্ছিলো,,,আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না শুধুমাত্র ঔ পুলিশ গুলো সিফাত বলে লোকটার বাড়িতে গিয়েছিলো বলে ওরা সেই রাতে আপনার উপর,,যদি সেদিন সত্যি ওরা আপনার কিছু করে দিতো

উজানঃ দিলে দিতো

হিয়াঃ সব খুব সোজা তাই না,, আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচতাম??

উজানঃ আমাকে ছাড়াই তো সুন্দর ভাবে বেঁচে আছো,,এই ৪টা মাসে তো একবারো বলো নি উজান আপনি ফিরে আসুন,,,,,আমি তোমার সাথে থাকা বা না থাকাতে কিই বা যায় আসে তোমার

হিয়াঃ আপনি বুঝবেন না,,আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হয়,,খুব কষ্ট হয়___কিন্তু আপনি আমার থেকে দূরে গিয়ে সুস্থ আছেন,নিরাপদে আছেন এটাই অনেক কিছু আমার কাছে____আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন কিন্তু ভালো থাকুন,,সুস্থ থাকুন,,আমার সাথে থাকলেই আপনি নিজের রাগকে সংযত করতে পারেন না আর একটার পর একটা নিজের বিপদ ডেকে আনেন

উজানঃ তা বলো না কেনো আমি একবারে এই ক্যাম্পাস এই ভার্সিটি সব থেকে চলে যাই,,শুধু এই ক্যাম্পাস কেনো তার চেয়ে এটা বেটার হয় আমি এই ঢাকা তেই আর না থাকি,,রংপুরে গিয়ে একদম সেটেল হয়ে নেই

হিয়াঃ হ্যা ওটা সব দিক দিয়ে একদম পারফেক্ট হবে,,আপনি রংপুরে গিয়ে থাকলে সিফাত ভাইয়ারা আর আপনাকে খুঁজে পাবে না,,আপনার ক্ষতি করা তো দূরে থাক,,আপনি এখানে না বরং ওখানে সব চাইতে নিরাপদে থাকবেন

উজান এবার রেগে গিয়ে হিয়াকে এমন জোরে চিপে ধরে যে হিয়ার হাড় হাড্ডি মিনিটে মিনিটে হাজারবার ভেঙে আবার জোড়া লাগতে শুরু করে

উজানঃ মন তো চাচ্ছে তোমাকে আমি এখানেই খুন করে দেই,,যদি ক্ষমতা থাকতো না তোমাকে খুন করে নিজেও মরে যেতাম,,তাহলে সব ঝামেলা চুকে যেতো,,শুধুমাএ বাচ্চা টার মুখের দিকে চেয়ে এই কাজ গুলো আমি করতে পারি না

হিয়াঃ আপনাকে,,শ্রাবণ আর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না,,আপনি যে বললেন সেটা করুন গিয়ে, রংপুরে গিয়ে সেটেল হয়ে বিয়ে করে নিন,,ওখানে সব ভালো হবে আপনার

উজানঃ অন্য কাউকে বিয়ে করবো বলে তোমার সাথে এতোদিন এই নাটক গুলো করছি আমি,,কি পাইছো কি তুমি আমাকে খেলনা পাইছো,,যা খুশি ইচ্ছে মতো করবা

হিয়াঃ আমি শুধু আপনাকে সুস্থ দেখতে চাই আর কিচ্ছু আমি জানি না,,

উজানঃ আমাকে সুস্থ দেখতে চাও বুঝলাম আমার টাকা নিতে তাহলে কি সমস্যা তোমার,,সেটা নিলে তো আমি অসুস্থ হয়ে যাবো না,,না তুমি আমার টাকা নিলে সিফাতরা আমাকে কিছু করবে

হিয়াঃ ব্যাপারটা সে রকম না,,আপনি তো দিচ্ছেনই রোজ শ্রাবণকে কিছু না কিছু কিনে,,আমি মানা করলেও শ্রাবণের জন্য ঔষধ,নাস্তা সব এনে দিচ্ছেন আমি কি একবারো আপনাকে না করেছি___কিন্তু আপুর বাড়িতে কারেন্ট বিল এই বিল সেই বিল সব মিলে ভাড়াই আসে সব মিলিয়ে ৪০এর কাছাকাছি,,আপনার কি মনে হয় ঔসব বাড়িতে থাকার মতো ক্ষমতা আছে আমার,,

উজানঃ ভাড়া আমি দেবো তোমার তো সমস্যা হবার কথা না,,

হিয়াঃ আপনিই বা কেনো ওতোগুলো টাকা দিবেন,,বেতনের অর্ধেক টাকাই যদি বাড়ি ভাড়া আর আমার পেছনে চলে যায় তাহলে আপনার থাকবে টা কি,,

হিয়ার এই হিসাব নিকাশ দেখে উজানের মাথা আরো নষ্ট হয়ে মেজাজ এখন আরো হাজার লক্ষ কোটি ডিগ্রি তে পৌঁছাতে শুরু করে!!!!

হিয়াঃ আপনি যখন আপনার রাগ নিয়ে আছেন,,তখন আমার আর চাই না আপনার কোনো কিছু,,আমি আগে যেভাবে চলে এসেছি আমি পারবো সেভাবে চলতে

উজানঃ তুমি যে হিয়া,,তুমি তো সব পারো,,আবার গিয়ে ঔ এক রুমে শ্রাবণ সহ গাদাগাদি করে থাকবা তো,শুধু ভর্তা দিয়ে ভাত খাবা তাও এক বেলা খেলে অন্য বেলা নাই,,এসবই তো ভালো লাগে তোমার,,

হিয়াঃ হ্যা লাগে,,আপনি যখন জেদ করে এভাবে আমার থেকে দূরে সরে আছেন তখন আমার আশেপাশেও যেনো আমি আর আপনাকে না দেখি

উজানঃ দূরে সরে আছি তো তোমার জন্য,,

হিয়াঃ আপনি কেস উইথড্র করে নিন,,আমি ফিরে আসবো

উজানঃ করবো না আমি কেস উইথড্র

হিয়াঃ তাহলে আর আমার সাথেও কোনো যোগাযোগ আপনি করবেন না,,এমনকি শ্রাবণের সাথেও না

বলেই হিয়া উজানকে ধাক্কা দিয়ে রুমে থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসে,,উজান রাগে সামনে থাকা টেবিলটায় ঘুসি দিয়ে আর কোনো ক্লাস না করিয়ে বাড়ি ফিরে আসে,,

হিয়া বাড়ি ফিরে শ্রাবণকে কড়া গলায় জানিয়ে দেয় সে যদি আর তার ভালো ভাইয়ার সাথে আর যোগাযোগ রাখে তাহলে হিয়া আর কখনো তার সাথে কথা বলবে না,,হয় ভালো ভাইয়া নয় বুবু যেকোনো একজনকে তার বেছে নিতে হবে এবার,,

এদিকে উজান বাড়ি ফিরে সব দরজা জানালা সব লাগিয়ে,,হাতে থাকা ফাইল ফোন সব কিছু ছুঁড়ে দিয়ে দুই প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বিছানার নিচে বসে যায়,,রাগে হাত পা কাঁপছে উজানের,,কপালের রগ গুলো স্পষ্ট দেখা গিয়ে তার এই পাহাড় সমান রাগের জানান দিচ্ছে,,পুরো দুই প্যাকেট সিগারেট শেষ করেও উজানের যেনো কোনো শান্তি মিলছে না আজ

উজানঃ আমি যদি উজান শাহরিয়ার হয়ে থাকি আমি এই মুখ আর তোমাকে দেখাবো না,,আমিও দেখবো তুমি আমাকে না দেখে কতোদিন থাকতে পারো___খুব কষ্ট হলে শ্রাবণকে গিয়ে দেখে আসবো কিন্তু তোমার দিকে ঘুরেও তাকাবো না,,,,বড্ড বাড় বেড়েছো তুমি এবার তোমাকে শাস্তি আমাকে দিতেই হবে___সিফাতদের যে আমি শাস্তি দিয়েছি এটা আর আমি তোমাকে বলবো না,,আমিও দেখতে চাই ঔ সিফাতের ভয় টা তোমার কাছে বেশি না আমার ভালোবাসা,,কোনটা?

হিয়াঃ আপনাকে ছাড়া কি থাকতে আমার খুব ভালো লাগে,,কষ্ট কি শুধু আপনার একার আছে আমার কি কোনো কষ্ট নেই,,শ্রাবণ সুস্থ হবার পর আমি তো চেয়েছিলাম কি হয়েছে হয়েছে সব ভুলে নতুন করে আবার সব টা শুরু করতে,,আপনি বলেছিলেন ভার্সিটি জয়েন করার এক মাসের মধ্যে আমরা বিয়ে করে নেবো,,আমি রাজি ছিলাম,,সব ভুলে আপনাকে আর শ্রাবণকে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছিলাম___কিন্তু আপনি নিজে সব এলোমেলো করে দিলেন,কি দরকার ছিলো কেস টাকে নিয়ে এতো কিছু করার___ঔ হুমকি গুলো আপনি পান নি ওগুলো সব আমাকে শুনতে হ’য়েছে,,ওরা হুমকি দিতে দিতে আপনার উপর হামলা অবধি করে দিছে,সেদিন যদি কিছু একটা হয়ে যেতো আপনার,,আমি কি নিয়ে বাঁচতাম,,আপনি আমার থেকে দূরে গিয়ে ভালো আছেন এটাই অনেক পাওয়া আমার__আপনার কি মনে হয় আমার ভাইয়ের সাথে যারা এই অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি আমি চাই না,,আমি তো পারলে নিজ হাতে ওদের খুন করে দেই কিন্তু ওদের শাস্তি দিতে গিয়ে আজ যদি আপনাকে হারাতে হতো,,আপনি বুঝেন আমার সেই ভয় টা!!!__আপনি যখন জেদ করে আমার থেকে দূরে আছেন তখন আমিও আর আপনার উপর আমার ছায়া টাও পড়তে দেবো না,,আমিও দেখতে চাই আমি আর শ্রাবণ আপনার কাছে জরুরি না ঔ সিফাতদের থেকে রিভেঞ্জ নেওয়া কোনটা??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here