মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-33

0
991

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-33

সকাল তখন আটটার কাছাকাছি ট্রেন এসে উপস্থিত কমলাপুর রেলস্টেশনে,,কাল রাত থেকেই উজান, হিয়া আর শ্রাবণকে বুকে আগলে চুপচাপ হয়ে আছে,,মনের ভয় টা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সে,,হিয়া কোথায় ছিলো, কেনোই বা না বলে চলে গিয়েছিল এসব উওর জানার তার বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ হয়নি,,হিয়াকে সে খুঁজে পেয়েছে এটাই যেনো অনেক তার কাছে,,

ঢাকা এসে উজান হিয়াকে আর শ্রাবণকে ওদের বাড়িতে যেতে দেয় নি,,সাথে করে নিয়ে এসেছে তার নিজের ফ্ল্যাটে,,হিয়াও আজ কোনো রকম না করে নি,,চুপচাপ উজানের কথামতো রাজি হয়ে যায় শ্রাবণ সহ উজানের এই ফ্ল্যাটে আসতে,,
!
!
!
হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালে হাতে মুখ মুছতে ব্যস্ত হিয়া,,এমন সময় শ্রাবণ তার ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে নিজের প্যান্টের চেইন টাকে এপাশ ওপাশ করে খুলবার চেষ্টা করতে করতে দৌড়ে আসলো হিয়ার কাছে

শ্রাবণঃ বুবু প্যান্টের চেইন খুলে না তো হিসু কববো(করবো)।

হিয়াঃ কতো হিসু করো তুমি সারাদিনে শ্রাবণ,, স্টেশনে তো নামার সময় একবার করলে,,দেখি আসো।

শ্রাবণঃ হে হে হিসু না এখন বড়টা করবো বড় টা।

হিয়াঃ কি বড় টা!!কিসব শেখো তুমি হ্যা এগুলো

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া শিখায় দিছে হিসু আসলে এই আঙ্গুল দেকাতে(দেখাতে)আর বড় টা আসলে এটা

হিয়াঃ আমি ভালো জিনিস শেখাই ওগুলো তো শিখতে চাও না কখনো,ভালো ভাইয়া উল্টাপাল্টা জিনিস শেখায় আর তুমি টপ করে সব শিখে নেও,,দেখি এদিকে সোজা হয়ে দাঁড়াও।

হিয়া বসে শ্রাবণের প্যান্টের চেইন খুলে দিলে শ্রাবণ দৌড়ে ওয়াশরুম ঢুকে যায়,,হিয়া উঠে উজানের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বারান্দার গ্রীলে হাত দিয়ে নিচু হয়ে-সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে-কলোনির আশেপাশের বাড়ি গুলো দেখতে থাকে,,তপ্ত রোদে গা পুড়ে যাবে এরকম আজ রোদের তেজ,,হিয়া কপালে হাত দিয়ে মুখে আসা রোদটাকে ঢাকবার চেষ্টা করে,,তোয়ালে টা কাঁধে ঝুলিয়ে বারান্দায় এক দেওয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে যায়,,এমন সময় উজান এসে হিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে হিয়ার কাঁধে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললে হিয়া লজ্জায় একটা নীরব হাসি দিয়ে উঠে,,

উজানঃ রংপুরে কোথায় গিয়েছিলে তুমি?

উজানের প্রশ্নে হিয়া উজানের সামনে ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে,,উজান হিয়ার মুখে আসা চুল গুলো নিজের দুহাতে হিয়ার দু কানের পাশে গুঁজে দিলো,,হিয়ার কাঁধ থেকে তোয়ালে টা নিয়ে হিয়ার কপালে লেগে থাকা পানি গুলো মুছে দিলো

হিয়াঃ দাদু বাড়িতে গিয়েছিলাম!!

উজানঃ সেই কথা টা কি একবারো আমাকে বলে যাওয়া উচিৎ বলে মনে হয়নি তোমার?

উজানের প্রশ্নের প্রতিউওরে হিয়া সব ঘটনা এক এক করে খুলে বলে কেনো সে তার দাদু বাড়িতে গিয়েছিলো কিভাবে তার ফোন হারিয়ে গিয়েছিলো,,কি করে সে ফিরলো সব কিছু যা যা ঘটে সব,,এমনকি সে যে ঔ বইয়ের ভাঁজে একটা চিঠিও লিখে গিয়েছিল সেই কথাটাও বলে দেয়,,সব শুনে উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,

হিয়াঃ এখন স্যার বই টা নিয়ে গিয়েই তো সমস্যা টা হ’য়েছে না,,নাহলে তো অনন্ত আপনি এটা জানতে পারতেন যে আমি কোথায় ছিলাম।

উজানঃ ঠিক আছে,,যা হয়েছে সেটা যেনো আর কখনো না হয়,,এরপর থেকে কোথাও যাবার আগে আমার পারমিশন ছাড়া এক পা-ও যেনো তোমাকে আমি নড়া না দেখি।

হিয়াঃ ঠিক-আছে।

উজানঃ নাস্তায় কি খাবা,,গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজা নিয়ে আসবো?

হিয়াঃ আপনার ইচ্ছে,,আপনি যা খেতে পছন্দ করবেন নিয়ে আসুন আমি তাই খাবো।

উজানঃ ঠিক আছে,,আর দুপুরে কি বাজার আনবো?

হিয়াঃ আমি বুঝি দুপুরেও এ-খানেই থাকবো?

উজানঃ তুমি আজকের দিনটা এখানেই থাকবা,,দুদিন অনেক জ্বালিয়েছ এটা তোমার শাস্তি এখন!!

হিয়াঃ আমি আপনার এখানে থাকলে মানুষ কি ভাববে কোনো ধারণা আছে আপনার?

উজানঃ আছে,,তুমি বিশ্বাস করো তো আমাকে আগে সেটা বলো?

হিয়াঃ নিজের থেকেও এখন এই আপনাকে আমি বেশি বিশ্বাস করি!!

হিয়ার কথাতে উজান একটা নীরব হাসি দিয়ে হিয়ার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,,হিয়া যেনো লজ্জায় আরো মাথা টা নামিয়ে ফেললো,,

উজানঃ আমি শ্রাবণকে নিয়ে বের হচ্ছি তুমি ততোক্ষণে একটু শুইয়ে রেস্ট করো,,

হিয়াঃ হুম

উজান হিয়াকে ছেড়ে রুমে যেতে ধরেও কি মনে করে আবার ফিরে আসে

উজানঃ এক মিনিট!!

হিয়াঃ কি??

উজানঃ তোমার না হয় ফোন ছিনতাই হয়ে গিয়েছিলো বাট তুমি তো আমাকে তোমার চাচ্চুর ফোন থেকেও একটা ফোন করতে পারতে??করোনি কেনো??তাহলে তো এতো সমস্যা সৃষ্টি হবার কথা থাকতো না।

হিয়াঃ (এই রে এখন এনাকে কি করে বলি ওনার একটা নাম্বারো আমার মুখস্থ নেই,,রাগে তো পুরো বোম হয়ে এক্ষুনি পুরো ব্লাস্ট হয়ে যাবে আমার উপর,,কি উওর দেই আমি এখন এনাকে কি উওর দেই কি উওর দেই)

উজানঃ এটা প্লিজ বলো না যে তোমার আমার কোনো নাম্বার মুখস্থ নেই!!

হিয়াঃ হ্যা মানে ইয়ে আ-স-লে আমি আসলে

উজানঃ তোমার সত্যি সত্যি আমার কোনো নাম্বার মুখস্থ নেই??

হিয়াঃ না মানে আছে তো ঔ একটু একটু

উজানঃ সিরিয়াসলি হিয়া!!__আমার আমার কোনো নাম্বার তোমার মুখস্থ নেই!!__আমি আমি তোমার জন্য গুনগুনের মায়ের নাম্বার, নিঝুমের বাবার নাম্বার,তোমার রুম মেট রিমার নাম্বার অবধি মুখস্থ করে নিয়েছি আর তুমি তুমি বলছো আমার কোনো নাম্বার তোমার মুখস্থ নেই,,তুমি কিন্তু আমাকে খুব অপমান করলে আজ হিয়া,,এটা আমি তোমার থেকে আশা করি নি____এতো বড় ইনসাল্ট,,এই কান ধরো তুমি,,এক্ষুনি কান ধরো

হিয়াঃ কা কান ধরবো মানে,,কেনো কান ধরবো?

উজানঃ কেনো কান ধরবো,,তোমার সাহস হয় কি করে আমার নাম্বার মুখস্থ না করে রাখার,,কান ধরতে বলেছি না,,ধরো বলছি,,,কান না ধরলে কিন্তু এই বারান্দা দিয়ে তোমাকে ঠাস করে নিচে ফেলায় দেবো(রাগে)

হিয়াঃ হে হে বারান্দায় তো গ্রীল দেওয়া আপনি কেমন করে আমাকে ঠাস করে নিচে ফেলায় দিবেন শুনি

উজানঃ আবার হাসছো তুমি,,এবার তো তোমাকে আমি(তেড়ে এসে)

হিয়াঃ ধরছি ধরছি,,কান ধরছি।

উজানঃ এখন কান ধরে উঠবস করতে করতে আমার সব গুলো নাম্বার তুমি মুখস্থ করবা কুইক,,

হিয়াঃ সব নাম্বার মুখস্থ করবো মানে!!

উজানঃ কানে হাত,,একদম কান থেকে হাত নামাবা না,,

হিয়াঃ (আবার কানে হাত দিয়ে)আরে এতে আমি আপনাকে অপমান করলাম আবার কখন আমি তো শুধু,,,,আর আপনার নাম্বার তো আমার কখনো প্রয়োজন হয়নি না মুখস্থ করার তাই জন্য তো আমি।

উজানঃ তাই জন্য কি হ্যা তাই জন্য কি,,তুমি এক্ষুনি আমার তিনটে নাম্বার সহ তুষার সন্ধি ঝিনুক সবার নাম্বার মুখস্থ করবে ফাস্ট

হিয়াঃ মাথা ঠিক আছে আপনার!!

উজানঃ কি বললা তুমি!!

হিয়াঃ না না কিছু বলি নি,,করছি করছি মুখস্থ,,বলুন

উজানঃ কানে হাত,,নেও ফাস্ট জিপি নাম্বার টা মুখস্থ করো ওটা আমার সবসময় ওন থাকে,,

হিয়াঃ বলুন(রাগে)

উজান একটার পর একটা নাম্বার বলতে থাকে আর হিয়া দাঁত মুখ খিঁচে সবগুলো এক এক করে মুখস্থ করে নেয়,,গ্রামীন বাংলালিংক এ্যায়ারটেল যতো নাম্বার আছে সব মুখস্থ করাতে থাকে উজান হিয়াকে,,এদিকে শ্রাবণ পটি করে এসে হিয়াকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হো হো করে হেঁসে দেয়,,সবসময় হিয়া শ্রাবণকে পানিশমেন্ট দিতে এরকম করে শ্রাবণকে কান ধরে দাঁড়িয়ে উঠবস করায় আর আজ নিজের বুবুকে এরকম কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণের যে কি আনন্দ হচ্ছে এটা শুধু ছোট শ্রাবণই ভালো জানে,,শ্রাবণের হাসি দেখে হিয়ার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়,,মনে মনে তো সে উজানকে একশোটা গুলি করে দেয়,,তবুও উজান না থেমে হিয়াকে দিয়ে নিজের চারটে নাম্বার সহ তুষার সন্ধি ঝিনুক রুপম আর যারা যারা আছে সবার নাম্বার মুখস্থ করিয়ে নিয়ে তবেই হিয়াকে ছাঁড়ে,,সব তো মুখস্থ করে নিলো হিয়া কিন্তু মুখস্থ করবার যা শ্রী ছিলো তা দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঘন্টা দেড় একের মধ্যে সে আবার সব গুলিয়ে ফেলবে,,
!
!
!

উজান হিয়াকে শাস্তি দেওয়া শেষ করে শ্রাবণ সহ নিচে নেমে নাস্তা আনতে চলে যায়,,আর হিয়াকে বলে যায় চা করতে,তার নাকি মাথা ভীষণ ধরেছে,,রান্নাঘরে ঢুকে এবার হিয়ার মাথায় হাত,,একি অবস্থা হয়ে আছে এই রান্না ঘরটার,,খালা কি আসে নি নাকি-এরকম অবস্থা কেনো আজব?বাসি এঁটো থালাবাসন সবই পড়ে কেমন একটা গন্ধ বের হচ্ছে,,একপাশে ভাত জমে সেটায় ফেনা উঠে গেছে,,নিচে ডালিতে আলু আর বেগুনের পঁচা একটা বিশ্রী গন্ধ নাকে লাগছে,,কি এক যা তা অবস্থা,,হিয়া ওসব কোনো রকম সাইড করে একটা হাঁড়ি ভালো মতো ধুয়ে নিয়ে সেটাতে চায়ের জন্য পানি বসিয়ে দিয়ে চাপাতা খুঁজতে শুরু করে,,তাকের উপর তাকিয়ে দেখে বোয়াম গুলোও সব এলোমেলো হয়ে আছে,,কোনটা চিনি কোনটা দুধ কোনটা হলুদ না কোনটা জিরা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না এমন এক কঠিন অবস্থা,,হিয়া বোয়ম গুলো সব নিচে নামিয়ে নিলো,,এক এক করে সব খুঁতে চিনি দুধ আর চাপাতার বোয়াম গুলো আলাদা করে নিলো,,তেলের বোতলে তাকিয়ে দেখলো তেল শেষ বোতেলে আর কিছু ছটাক তেল পড়ে আছে,,লবন যা আছে তা দিয়ে আর দুদিন যাবে,,জিরাগুঁড়া নেই সাথে নেই কোনো গরম মশলা,,সব খুতিয়ে দেখার পর হিয়া এবার চা টা বানিয়ে নিয়ে গ্যাস টা ওফ করে দিলো,,উজানরা আসলে না হয় আবার একটু গরম করে নেবে,,তিনটে কাপ আর দুটো গ্লাস ধুয়ে নিয়ে এসে টেবিলে রাখতেই দেখলো টেবিলের হয়ে আছে আরো ১২ ১৩ ১৪ অবস্থা,,মাছের ফিসার বড় কাটা টা পড়ে আছে এক সাইডে তার পাশে ছোট ছোট আরো কাটা সহ তুলে রাখা মরিচের খোসা,,ফলের ঝুড়ি টায় পড়ে আছে দুটো আপেল আর তিনটে কলা,,আপেল দুটো ভালো আছে দেখে হিয়া ওগুলো একটা সাইডে তুলে রাখলো,,আর কলা তিনটের দুটো মজে গেছে খাওয়াও অযোগ্য পুরো,,ঔ দুটো নিয়ে এসে ময়লায় ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে হাতে থাকা আরেকটা কলা খেয়ে নিলো হিয়া,,কারণ ওটা হিয়া না খেলে যে কেউ খাবে না হিয়া জানে তাই হিয়া শুধু শুধু খাবার টা নষ্ট করতে চাইলো না,,হিয়ার সব পর্যবেক্ষণ করা শেষ হতে হতে উজান শ্রাবণ সহ নাস্তা নিয়ে উপস্থিত,,হিয়া গেট খুলে দিতে দেখলো শ্রাবণ উজানের পিঠে ঝুলে আছে আর শ্রাবণের ঝুলে থাকা হাতে ঝুলছে নাস্তার প্যাকেট,,হিয়া কিছু না বলে দুজনকে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে আবার গেট লাগিয়ে দিলো______উজান শ্রাবণ সহ ডিম ভাজা আর বুটের ডাল দিয়ে পরোটা খাচ্ছে,,হিয়া চা নিয়ে এসে দিতে উজান হিয়াকে পাশে বসিয়ে বললো আগে তুমি খাও আমাদের সাথে তারপর অন্য কাজ,,হিয়া বসলো না একটা পরোটা নিয়ে চায়ে ভিজিয়ে উজানের স্টাডি টেবিলে গিয়ে বসলো,,হিয়া চা খাচ্ছে আর এক হাতে উজানের টেবিল থেকে একটা খাতা আর পেন নিয়ে কিসব জানি লিখছে,,খাওয়া শেষ হলে হিয়া ঔ খাতা আর পেন নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবার জানি কিসব লিখতে থাকলো

উজানঃ হিয়া এ-ই হিয়াপাখি আর পরোটা খাবে না??আমরা কিন্তু সব শেষ করে দিলাম,,হিয়াআআ

হিয়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উজান একটা পরোটার মধ্যে ডিম পুরো কলা বানিয়ে নিয়ে এসে হিয়ার কাছে আসতে দেখে হিয়া ওর ওরনা টা কোমড়ে গুঁজে কলম টা থুঁতনির কাছে ঠেকিয়ে একটা করে কি জানি ভাবছে আর কি জানি লিখছে

উজানঃ কি করছো কি এখানে তুমি,,দেখি হা করো,,হাআআআ

হিয়া হা করলে উজান হিয়ার মুখে পরোটা টা ঢুকিয়ে দেয়,,হিয়া অর্ধেক কামড়ে নিলে বাকি টা নিয়ে উজান দাঁড়িয়ে থাকে

হিয়াঃ আপনার বাসা টা তো আগে এরকম নোংরা ছিলো না,,কি সুন্দর টিপটপ সাজানো গোছানো ছিলো কিন্তু এবার এরকম অগোছালো আর ময়লা হয়ে আছে কেনো??টেবিলে মাছের কাটা ফ্লোরে মাংসের ঝোল বেসিনে এঁটো বাসন,,সব জায়গা ডাস্টবিন ডাস্টবিন লাগছে

উজানঃ সব তো তোমার জন্য

হিয়াঃ কি!!আমার জন্য!!আমার জন্য কেনো??

উজানঃ খালার মেয়ের বিয়ে তাই খালা এক সপ্তাহ আসে না সেটা তো জানোই তাই তো নিজে রান্না করে খেতে গিয়ে এই অবস্থা

হিয়াঃ তো এখানে আমার দোষ টা কোথায়?

উজানঃ তোমার দোষ কোথায়?কে বলেছিলো আমাকে ছেড়ে হারিয়ে যেতে তোমাকে খুঁজতে গিয়েই তো এসব আর বাড়িঘর গুছিয়ে রাখা হয়নি

হিয়াঃ নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা,,,এই যে ধরুন এটা

উজানঃ কি!!

হিয়াঃ বাজারের স্লিপ,,তেল লবন জিরাগুঁড়া কিচ্ছু নেই,,সব বোয়াম ফাঁকা ফাঁকা পড়ে আছে,,তার উপর এই এঁটো বাসন গুলো মাজতে হবে ভিমবারো নেই সেই,,এখানে যা যা লিখে দিয়েছি সব নিয়ে আসুন,,কি হলো নিন,,

উজান স্লিপ টা হাতে নিয়ে হিয়ার মুখে বাকি পরোটা টা ঢুকিয়ে দিয়ে পড়তে শুরু করে,,

উজানঃ তেল-আটা-ভিমবার-মাজুনী-একটা রাঁধুনি রেডিমিক্স মাংসের মশলা-তিন কেজি দেশি পিঁয়াজ-এক প্যাকেট ইস্পাহানি চাপাতার প্যাকেট…………..

স্লিপ পড়ে উজানের মাথাতে হাত এ-তো কিছু কিনতে হবে এখন,,

উজানঃ তুমি তো বিয়ের আগে আমার পকেট ফুটো করে দিতে চাইছো হিয়াপাখি,,,,তা সবজি কি কি আনবো ওগুলো লিখোনি কেনো??

হিয়াঃ আমি আপনার যেগুলো একান্তই প্রয়োজন ওগুলো আনতে বলেছি,,আর বাকি এখন সবজি মাংস মুরগী আপনি কি খাবেন খালা কি রান্না করবে ওগুলো আপনি নিয়ে আসুন,,,,দেখি যান এবার তাড়াতাড়ি বারোটা পাড় হচ্ছে,,,ও হ্যা আরো দুটো এ সাইজের বোয়াম কিনে আনবেন তো,লাগবে,ভালো দেখে নিবেন।

উজানঃ আর??

হিয়াঃ আর আপাতত কিছু না,,মনে পড়লে ফোন করে দেবো এখন___আর ঔ যাওয়ার সময় আমাকে একটা বেড কভার দিয়ে যাবেন, আপনার বিছানো বেড কভার টা খুব নোংরা হয়ে আছে ঝারতে গিয়েই ময়লা উড়ছে ধূ ধূ করে।

বলেই হিয়া এঁটো বাসন গুলো মাজতে যাবে ওমনি উজান এসে হিয়াকে কোলে তুলে রান্নাঘরের ভেতরের একটা তা’কে বসিয়ে দেয়

হিয়াঃ কি করেছেন কি এটা আপনি!!

উজানঃ কেমন একটা সংসার সংসার গন্ধ পাচ্ছি হিয়াপাখি,,তুমি আমার বউ আমি তোমার বর শ্রাবণ আমাদের বাচ্চা

হিয়াঃ তাই,,তিনদিন বাদে পরীক্ষা তারপর পরীক্ষাতে যখন কিছু লিখতে পারবেন না তখন এই সংসার সংসার গন্ধ না জানালা দিয়ে পালিয়ে যাবে

উজানঃ দেখা যাবে____তোমাকে একটা কিস করি??

হিয়াঃ কি!!

উজানঃ একটা ছোট্ট করে করবো,,এই এতোটুকু।

হিয়াঃ না!!

উজানঃ এই গলার তিল টার মধ্যে একটা ছোট্ট করে,,

হিয়াঃ না মানে না

উজানঃ সত্যি না(হতাশ কন্ঠে)

হিয়াঃ হুম

উজানঃ আচ্ছা,,

হিয়াঃ নামি এখন আমি,,

উজানঃ হুমমম,,,বেড কভার আলমারিতে রাখা আছে খুঁজে নিও

হিয়াঃ ঠিক আছে

উজানঃ আর তোমার জন্য কিছু আনবো

হিয়াঃ না

হিয়া নেমে গিয়ে উজানের হাতে দুটো বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়,,উজান হতাশ হয়ে শ্রাবণকে ডেকে রান্নাঘর থেকে বের হতে যাবে ওমনি হিয়া উজানকে থামিয়ে দিয়ে পা দুটো উঁচু করে উজানের শার্টের কলারের ভেতর দিয়ে উজানের কানের নিচে-গলার কাছে একটা চুমু এঁকে দেয়,,সাথে সাথেই এক অন্য রকম অনুভূতি খেলে যায় উজানের শরীরে,,হিয়া আজ প্রথম নিজে থেকে ওকে আদর করলো,,এটা কি সত্যি!!,,হিয়া লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিয়ে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সামনে ঘুরে নিজের জামা টা চিপে ধরলো,,উজান ওর মনে আসা শিহরণ টা কাটিয়ে পেছন থেকে হিয়ার গালে একটা টুক করে চুমু এঁকে দিয়ে হিয়ার মাথার সাথে মাথা ঠুকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো,,উজানের এই কাজে হিয়া যেনো আরো লজ্জার রক্তিম বর্ণে নিজেকে রাঙিয়ে ফেললো,,!!
!
!
!
উজান শ্রাবণ সহ ব্যাগ হাতে বাজারে চলে যেতেই হিয়া সর্বপ্রথম নতুন বেড কভার খুঁজে সেটাকে বিছিয়ে উজানের রুম টাকে ঝেড়ে মুছে পরিপাটি করে সাজিয়ে দিলো,,তারপর যেটুকু ভিমবার ছিলো ওটা দিয়ে এঁটো থালা বাসন গুলো সব গরম পানি দিয়ে মেজে র্যাকে সাজিয়ে রাখলো,,পঁচা আলু আর বেগুন গুলো একটা পলিথিনে প্যাকেট করে রান্নাঘরের সব ময়লা এক পাশে পালা করে রান্নাঘরটা সুন্দর মতো ঝাড়ু দিয়ে নিলো,,ডাইনিং টা পরিষ্কার করতে যাবে ওমনি সময় হিয়ার কথা মতো দু ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে হাজির হয় উজান,,হিয়া ঠিক করে আগে রান্নাটা শেষ করে পড়ে সে বাকি জিনিস গুলো গুছাবে,,হিয়াকে বাজার দিয়ে উজান খানিকটা গা মেলে দিলো বিছানায়,,কারণ সে আর হিয়া কাল সারারাত ঘুমোয় নি,,শ্রাবণের তো আবার চোখে ঘুম নেই সে তার ভালো ভাইয়ার ফোন নিয়ে গেম খেলায় নিজেকে ব্যস্ত করে নিলো,,উজান চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু ঘুম আসছে না ক্লান্ত লাগছে এই যা,,হিয়া ব্যস্ত মুরগী কেটে সেগুলোকে পানিতে পরিষ্কার করে নিতে,,আর কখন যে হিয়ার অজান্তে হিয়া ওর আগের ভাবনা গুলোতে ডুবে যায় হিয়া বুঝতে পারে না,,

হিয়াঃ মা দেখছো আজকে আমি একটা গোটা মুরগী রান্না করবো,,মা ও মা এটা কি সত্যি!!না তোমার মেয়ে কোনো স্বপ্ন দেখছে বলতে পারবা,,মাসে একটার বেশি দুটো মুরগী কেনার ক্ষমতা বা সাহস কোনোটাই যে ছিলো না আমার মা,,একটা মুরগী কিনতাম তাও আবার বয়লার,,৪০০টাকা খরচ করে দেশী কেনার টাকা কোথায় ছিলো আমার,,সেই একটা মুরগী কেটে চার ভাগ করতাম প্রতি ভাগে রাখতাম ৪ টা,,সপ্তাহের চারটা শুক্রবার শ্রাবণকে একটু ভালো খাবার দিতে পারবো বলে,,আর আজ দেখো আমি একটা গোটা মুরগী রাঁধছি,,এতো সুখ আমার কপালে সহ্য হবে তো মা,,ও মা মা বাবাকে বলো না তার হিয়ার কষ্টের দিন কি এবার ইতি টানবে,,মা যেই মানুষ টার জন্য আমার এই সুখ, আমি সারাজীবন সেই মানুষ টাকে ভালো রাখতে পারবো তো মা,,এই উজান বলে মানুষ টাকে সারাজীবন সুখ দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখতে পারবো তো মা,,মানুষ টাকে যে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি কেউ কেঁড়ে নিয়ে যাবেনা তো ওনাকে আমার থেকে,,ওনার কিছু হলে তো আমি বেঁচেও মরে থাকবো!!

হিয়া এসব চিন্তার অতল গহ্বরে প্রবেশ করার আগ মুহুর্তে উজান চোখ ভর্তি আলসেমি আর শরীর ভর্তি ক্লান্তি নিয়ে হেলেদুলে হিয়ার কাছে এসে হিয়ার কাঁধে মাথা রেখে হিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,

উজানঃ হিয়াপাখি মাথার চুল গুলো একটু টেনে দেও না পাঁচ মিনিট!!

উজানের জড়িয়ে ধরা আর কন্ঠ শুনে হিয়া খানিকটা কেঁপে ওঠে কারণ ওর চোখ টলটল করছে পানিতে,,যেকোনো সময় এই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা লোনাজল গড়িয়ে পড়বে,,কি করবে কি এখন হিয়া কোনোভাবে এই কান্না যে উজানকে দেখালে তার চলবে না,,হিয়া চেষ্টা করে চোখে আসা পানি টাকে চোখের মধ্যে আঁটকে রাখতে কিন্তু বহমান নদীর বহতার মতো সেটা গড়িয়ে পড়ে আর সেটা বিন্দুমাএ বুঝতে অসুবিধে হয় না উজানের,,উজান ঘুম জোড়ানো চোখ দিয়ে দেখতে পারে হিয়ার চোখ পানিতে টলটল করছে,,সাথে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে সেই অশ্রু,,উজান নিজেকে ঠিক করে হিয়াকে সামনে ঘুরিয়ে দাঁড় করায়

উজানঃ তুমি কাঁদছো কেনো হিয়া??

হিয়াঃ কোথায় কাঁদছি,,যার পাশে আপনার মতো একটা মানুষ থাকতে পারে সে কি কখনো কাঁদতে পারে!!

উজানঃ মিথ্যে বলছো এ-ই যে চোখে পানি তোমার!!

হিয়াঃ ও এটা,,আরে এটা তো পিঁয়াজ কাটতে গিয়ে এরকম হ’য়েছে দেখুন

উজানঃ আবার মিথ্যা বলছো,,পিঁয়াজ কাটতে গিয়ে কেউ এরকম করে কাঁদে কখনো

হিয়াঃ আপনি যে কখনো পেঁয়াজ কাটেননি তাই এভাবে বলছেন,,দাঁড়ান

হিয়া হাত ধুয়ে চোখ টা মুছে মুখে এক বিরাট হাসি টেনে পেঁয়াজের ডালা থেকে গুনে গুনে আটটা পেঁয়াজ বের করে উজানের হাতে দিয়ে বলে পেঁয়াজ গুলো কেটে আনতে,,কুমড়ো ভর্তা আর ভাজিতে দেবে,,উজান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পেঁয়াজ গুলো কাঁটতে বসতেই কেঁদে কুটে একাকার হয়ে যায়,,দেশী পেঁয়াজের ঝাঝে নিজেও ঝাঁঝিয়ে যায় একদম,,আর উজানের এরকম নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে হিয়া আর শ্রাবণ তো হেঁসে হেঁসে শেষ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here