মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-49

0
924

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান

Part-49

বাহিরে আজ কড়া রোদের মতোই হিয়ার মাথা আজ পুরো গরম হয়ে আছে,,সূর্য যেমন তার রাগ দেখিয়ে পৃথিবীর মাঝে সেই আগুন বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত হিয়াও তেমনি সেই একই পরিমাণ রাগ আর আগুন নিয়ে ঝরে পড়তে যাচ্ছে ছোট্ট শ্রাবণের উপর,,তার এ-ই রাগের কারণ শ্রাবণের পরীক্ষার রেজাল্ট,,১ম সাময়িক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করলেও বার্ষিকের আগে টেস্টের এ-ই বাজে রেজাল্ট হিয়া কখনোই আশা করে নি,,,,,,,,,,,দুপুরের দিকে ভার্সিটি শেষে গুনগুনকে পড়াতে যাবার সময় মাঝরাস্তাতে শ্রাবণের স্কুল থেকে হিয়ার নাম্বারে পরীক্ষার ফলাফল সহ ক্লাসটিচারের ফোন আসাতে সেই দুপুর থেকে হিয়ার মাথা এখন পুরোই বিগড়ে আছে,,হিয়ার ধারণা উজানের শ্রাবণকে সবকিছুতে বেশি লায় দেওয়াটাই শ্রাবণের এ-ই বাজে রেজাল্টের জন্য দায়ী,,এদিকে গুনগুন কে পড়াতে গিয়ে হিয়া শুনে গুনগুনদেরও রেজাল্ট বেড়িয়েছে আর গুনগুন এবার ক্লাসে সেকেন্ড হ’য়েছে আর তার জন্য গুনগুনের মা হিয়াকে পুরো কৃতিত্ব দিয়ে দিচ্ছে,,,,

দুটো টিউশন পড়িয়ে হিয়ার বাড়ি ফিরতে তখন সন্ধ্যার একটু আগে,,এদিকে উজান আজ দুপুর দুপুর বাড়িতে ফিরে শ্রাবণের সাথে মিলে খেয়েদেয়ে সেই যে এক ঘুম দিছে একটুপর যে সন্ধ্যা নামবে তাও ওঠার নাম নেই,,পাহাড় সমান রাগ নিয়ে হিয়া বাড়ি ফিরে,,লকের এক্সট্রা চাবি দিয়ে গেট খুলে রুমে আসে,,শ্রাবণ আর উজানকে ঘুমে থাকতে দেখে হিয়া আর ওদের ডেকে তুলে না,,দরজা লাগিয়ে টুকিটাকি কাজ সেরে গোসল টা করে আসে,,

সন্ধ্যার আযানের একটু পরপর উজানের ফোনে তুষারের ফোন আসায় উজান আর শ্রাবণ দু’জনের ঘুম ভেঙে আসে,,উজান ফোনে কথা বলা শেষ করে একটা বড় হাই তুলে,,উজানের দেখাদেখি গা টা ইচ্ছে মতো চাড়া দিয়ে একটা বড় হাই তুলে শ্রাবণ নিজেও,,উজান কাত হয়ে ঘুমঘুম চোখে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরলে শ্রাবণো এপাশ ফিরে উজানের গায়ের উপর এক পা তুলে উজানকে জড়িয়ে ধরে❤️

শ্রাবণঃ তুমি এখন কোথায় যাবা ভালো ভাইয়া,,

উজানঃ আমি না আমরা দুজনে যাবো,,তুষাররা সবাই ডাকছে তোকে অনেকদিন দেখে না,,

শ্রাবণঃ আমিও যাবো😍

উজানঃ হুম,আর তোকে বলছি না আমাকে ভালো ভাইয়া বলে ডাকবি ন,,বাবা বলে ডাকবি,,মনে থাকে না সেই কথা,,বাবা বল,,

শ্রাবণঃ হে হে,,বাবা,,

উজানঃ এ-ই তো আমার গুড বয়,,আচ্ছা তখন ফয়সাল তোকে কি কেনার কথা বলছিলো ওভাবে,,

শ্রাবণঃ কিছু না তো,,ঔ এমমি এমমি

উজানঃ আবার মিথ্যে কথা,,বলতে বলছি না আমি,,

শ্রাবণঃ আরে ঔ র্্যাকেট কেনার কথা,,এখন সবাই নিচে ক্রিকেট খেলে না তো সবাই এখন ব্যতমিনতোন (ব্যাটমিনটোন)খেলে জানো,,ঔ কি নেট টেট লাগিয়ে দিছে না একটা ফয়সালের বাবা এখন সবাই তাই খেলে,,কিন্তু আমার যে র্্যাকেট নেই ঔ জন্য আমাকে ওরা খেলা নেয় না😥

উজানঃ এ-তো বড় কথা,,আমার ছেলেকে খেলায় নেয় না মানে,কাল তো ওদের আমি___চল তো আজকেই আমরা আসার সময় সবচাইতে দামি র্্যাকেট আর এ-তো গুলা ফেদার নিয়ে আসবো দেখি কে তোকে খেলতে আঁটকায়,,

শ্রাবণঃ সত্যিইইইই,,,,আমার ভালো ভাইয়া না না আমার সবচাইতে ভালো বাবাআআ,,আমার বাবা সবার সেরাআআ,,

এই বলে শ্রাবণ উজানের পুরো মুখে চুমু এঁকে দেয়,,উজান মুচকি হেসে শ্রাবণের সাথে বিছানার মধ্যে একটু কিছুক্ষণ কাতুকুতু খেলে তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যাবার জন্য নরমাল শার্ট আর প্যান্ট পড়ে তৈরি হতে থাকে,,শ্রাবণ ঝটপট হাত মুখ ধুয়ে এসে টপ করে মাথার চুল গুলো আছড়ে তৈরি হয়ে নেয়,,উজান এসে শ্রাবণের গেঞ্জি আর মাথার চুল গুলো আরো ভালো করে ঠিক করে দিয়ে এদিকের রুমে এসে দেখে হিয়া শুইয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,,ঘুমোচ্ছে না জেগে আছে বুঝার উপায় না-ই,,উজান শ্রাবণকে জুতো পড়তে বলে হিয়ার মাথার কাছে এসে বসে হিয়াকে আলতো করে ডেকে তুলতে চেষ্টা করে,,

উজানঃ হিয়া,,হিয়া ঘুমাচ্ছো কি?হিয়া,,

হিয়া চোখ বন্ধ করেই একটু নড়েচড়ে বসে,,

উজানঃ আমি বাহিরে যাচ্ছি একটু শ্রাবণকে নিয়ে,,আসতে সময় লাগবে হয়তো,,হিয়া,,

হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,

হিয়াঃ বাহির দিক দিয়ে গেট লক করে দিয়ে যান,

উজানঃ শরীর কি আজকে খুব ক্লান্ত,,একা একা শুইয়ে আছো,,আমাদের সাথে এসে কথাও বললা না একটুও,,,,হিয়া

হিয়াঃ আমার কিছু হয়নি আমি ঠিক আছি,,তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন,,শ্রাবণের কাল স্কুল আছে,,(শান্ত গলায়)

উজানঃ ঠিক আছে,,

উজান হিয়াকে পেছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে হিয়ার কানের কাছে একটা স্নেহের পরশ বুলে দেয়,,তারপর উঠে শ্রাবণকে নিয়ে বাহির দিক দিয়ে গেট লক করে বেড়িয়ে আসে,,

!
!
!

রাত তখন সাড়ে দশটার কাছাকাছি,,শ্রাবণকে নিয়ে তুষারদের ওখানে সব ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিতে মিলতে কখন যে সময় গুলো ফুরিয়ে আসলো উজানের সেই খেয়াল নেই,,আড্ডা দেওয়া শেষে আবার যেতে হলো মার্কেট,,ওখান থেকে দেখেশুনে শ্রাবণের জন্য র্্যাকেট,ফেদার কিনতে মিলতে বাড়ি ফিরতে এ-ই এতো দেড়ি,,এদিকে হিয়া যে উজান আর শ্রাবণের অপেক্ষাতে এতোক্ষণ বসে বসে সময় গুনছে সে কি আর উজান জানে,,অবশ্য উজান মার্কেটে কেনাকাটা কালীন হিয়াকে একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো হিয়ার কিছু লাগবে কিনা, হিয়া বলে যে না ওর কিছু লাগবে না,,উজান হিয়ার কন্ঠ শুনে একটু আন্দাজ করে হিয়া হয়তো কিছু একটা কারণে আপসেট কিন্তু সেটাকে সে বেশি পাওা না দিয়ে আবার শ্রাবণের জন্য কেনাকাটার মন দেওয়া শুরু করে,,আর শুধু র্্যাকেট বা ফেদার কিনেই উজান শান্ত হয় না তার তো তার শ্রাবণের জন্য আরো খেলনা কেনা চাই,,হিয়া রাগ হবে যেনেও উজানের শ্রাবণের জন্য একটা বন্দুক শুটার পছন্দ হয় যেটাতে আরো অনেক কিছু ফাংশন ছিলো,,দামো আবার সেই রকম কড়া,তবু উজান ওটা কিনে নিয়ে শ্রাবণ সহ বাড়িতে আসে,,

উজানঃ হিয়াআআআ,,হিয়া হিয়া___খুব ক্ষিদা পাইছে হাস পাখি একটু তাড়াতাড়ি ভাত দেও না,,

হিয়াঃ আপনাকে আমি বললাম তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে,কাল শ্রাবণের স্কুল আছে ওকে পড়তে বসতে হবে আর আপনি কি করলেন,,এটা একটা বাড়ি আসার সময়,,এখন আমি কখন ওকে নিয়ে পড়তে বসবো

উজানঃ থাক না,একটা দিন না পড়লে কি হবে__বাহির থেকে আসলাম দু’জনেরই শরীর ক্লান্ত এখন,,

হিয়াঃ এটা কোনো কথা,,,আর এগুলো আবার কি কিনে আনছেন আপনি,,

উজানঃ আরে আমি কিনছি কোথায়,সাব্বির ওর ভাগ্নের সাথে আসলো না তা দু’জনকে নিয়ে কিনে দিছে,এখন আমি কেমন করে ওকে না বলি বলো তো,,

হিয়াঃ একদম মিথ্যা কথা বলবেন না,গুছিয়ে তো মিথ্যে টাও ঠিক করে বলতে পারেন না আপনি,,

উজানঃ আরে সত্যি,,বিশ্বাস করো

হিয়াঃ না আমি করি না আপনাকে বিশ্বাস,,আর সাব্বির ভাইয়া কিনে দিতে চাইলো আর আপনি সেটা কিনেও নিয়ে নিলেন,,

উজানঃ হিয়া আমাদের সত্যি খুব খিদে লাগছে,,তোমার যা বলার ভাত টা খাই তারপর বলো,,

হিয়াঃ ভাত হয় নি আমার,,রাইসকুকারে ভাত হচ্ছে না এজন্য আমি গ্যাসে বসিয়ে দিলাম,,সময় লাগবে একটু

উজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,আমি এখন কালকে ওটা ঠিক করে নিয়ে আসবো,,তুমি এভাবে আর রাগ করো না প্লিজ,,

হিয়াঃ আমি রাগ করছি না উজান,,শ্রাবণের সব কিছু হচ্ছে শুধু ওর পড়াশোনা টা ওর হচ্ছে না এটা খেয়াল করছেন আপনি,,শ্রাবণ__শ্রাবণ

শ্রাবণঃ কিইইইই,,

হিয়াঃ হাত মুখ ধুইলা,,ওগুলো হাতে কি লেগে আছে___মুখ টাও কি তোয়ালে দিয়ে মুছা শিখো নি,,

হিয়া গিয়ে ওর ওড়না টা দিয়ে শ্রাবণের মুখ মুছ দেয়,,

হিয়াঃ আমি বিছানার মধ্যে তোমার বই খাতা রাখছি,,গিয়ে পড়তে বসো আমি কিছু নাস্তা আনছি তোমাদের জন্য

উজানঃ আমাকে কিছু দিতে হবে না,আমি ভাত খাবো একবারে,,আমি ততোক্ষণে একটু পরীক্ষার খাতা গুলো কাটি তুমি একটু ফ্রিজের ঠান্ডা পানি মিক্সড করে এনে দেও আমাকে

হিয়াঃ আপনি যান,আমি আনছি,

উজানের পিছে পিছে শ্রাবণ দৌড়ে রুমে এসে বিছানায় বসে যায়,,উজান এসে এক এক করে ওর পরীক্ষার খাতা দেখতে শুরু করলে শ্রাবণ বই না দেখে পাশে থাকা ট্যাব টা হাতে নিয়ে যেই লেভেল টা বাকি ছিলো ওটা খেলতে শুরু করে,,এ-ই লেভেল টা আর দুই মিনিট খেলতে পারলেই সে ফাইনাল লেভেলে উঠবে,তাই সে ঠিক করে সে খেতে খেতে দুই মিনিট এই লেভেল টা খেলে তারপর পড়তে বসবে,,বাচ্চা টা কি আর জানে এই ফোন হাতে নিয়ে দুই মিনিট গেইম খেলার বায়না টাই তার জন্য ঝড় হয়ে যাবে,,

হিয়া উজানের জন্য পানি নিয়ে এসে রুমে ঢুকতেই শ্রাবণের হাতে ফোন দেখে এবার আর নিজের রাগকে কন্টোল করতে পারে না,শ্রাবণকে ও এসে পড়তে বললো আর শ্রাবণ এসে কি না,,হিয়া পানির গ্লাস টা সাইড টেবিলে থুইয়ে কপাল ভাজ করে শ্রাবণের দিকে তেড়ে আসে,,

হিয়াঃ শ্রাবণ আমি তোমাকে বই নিয়ে পড়তে বলেছিলাম আর তুমি এখন ফোন নিয়ে,,

শ্রাবণঃ এই দুই মিনিট বুবু,,শুধু এ-ই লেভেল টা

হিয়াঃ না,,শ্রাবণ ফোনটা রাখো,,শ্রাবণ আমি ফোনটা রাখতে বললাম কিন্তু,,

শ্রাবণঃ আর একটু আছে বুবু,,আর একটু,,

হিয়াঃ শ্রাবণ আমি তোমাকে ফোন রাখতে বলছি,,,,,আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি শ্রাবণ,,কথা শুনো,,

শ্রাবণঃ আরে বুবু দাড়া না আর একটু তোওওও,,এই লেভেল টা শুধুউউ,,আরে আরে থাম না__একটু একটু,,আরে নিস না,বু___

শ্রাবণ আর কিছু বলতে যাবে তার আগে হিয়া শ্রাবণের হাত থেকে ফোন টা সপাটে কেঁড়ে নিয়ে গায়ের সব শক্তি দিয়ে শ্রাবণের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়,,আচমকা এরকম চড় গালে পড়াতে শ্রাবণ খুবই ঘাবড়ে যায়,চোখ দিয়ে যে পানি বের করবে ভয়ে যেনো সেই পানিটাও চোখের কাছে এসে থেমে থেমে আছে,,হিয়ার এ-ই কাজ পাশে বসে থাকা উজানের কিছুতেই সহ্য হয় না,হাতে থাকা খাতা টা সামনে ছুঁড়ে দিয়ে উজান লাফিয়ে এসে শ্রাবণকে আগলে ধরে হিয়ার উপর গলা ছেড়ে দিয়ে এবার চিৎকার করে উঠে,,

উজানঃ হিয়া,,(ঝারি দিয়ে)_____সমস্যা কি তোমার,তুমি কোন সাহসে আমার বাচ্চা টার গায়ে হাত তুললা,,

হিয়াঃ আপনি আমাদের মাঝে কথা বলবেন না,,আর আমার সাহসের কথা বলছেন,,আমি সাহস দেখাবো না,,আমার চোখের সামনে ও এরকম করে বের হবে আর আপনি আমাকে বলছেন সাহস না দেখাতে,,

উজানঃ হ্যা বলছি,,বাচ্চাটা তো শুধু ফোনটা নিয়ে খেলছিলো,তাই জন্য তুমি ওর গায়ে হাত তুলবা,,এটা কেমন ব্যবহার তোমার হিয়া,,

হিয়াঃ এ-ই ব্যবহার টা করতে ও নিজে আমাকে বাধ্য করেছে,,আপনি কি জানেন ওর টেস্টের রেজাল্ট বেড়িয়েছে আর ও শুধু বি গ্রেড নিয়ে!!

হিয়ার কথা শুনে উজান একটু দমে যায়,হিয়ার এ-ই পাহাড় সমান রাগের কারণ যে শ্রাবণের এ-ই রেজাল্ট সেটা বুঝে আসতেই উজান একটু স্থির হয়,,তবুও এ-ই স্থিরতার মধ্যেও হিয়ার প্রতি তার রাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,,এদিকে শ্রাবণ হিয়ার রাগান্বিত চেহারা দেখে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর অঝোরে চোখের পানি টপটপ করে ফেলছে,

উজানঃ তুমি কোথায় থেকে জানলে যে ও টেস্টে?

হিয়াঃ আমি কোথায় থেকে জানলাম সেটা বড় বিষয় না উজান,,আপনি শুধু ভাবুন যে ও কি করে,,,,,,,,কেনো ওর স্কুল থেকে আমাকে ফোন করবে,কেনো ফোন করে বলবে আমি আমার বাচ্চার পড়াশোনার দিকে ঠিক করে খেয়াল রাখছি না,,

উজানঃ(একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) হ্যা আমি মানছি তোমার রাগ করা টা স্বাভাবিক,,একটু শান্ত হও,,আমরা বসে কথা বলি,,

হিয়াঃ আমি বসে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই উজান,,এমনতো না যে ও ছোট থেকে খারাপ স্টুডেন্ট ছিলো,,কিচ্ছু ওর মাথায় ঢুকতো না ও কোনো পড়া পারতো না__এরকম হলে আমি কখনো ওকে জোর করতাম না,,ওতো পড়াশোনাতে সবসময় ভালো ছিলো ইনফেক্ট ফাস্ট টাইম পরীক্ষাতে ও ক্লাসে টপ ফাইভের মধ্যে ছিলো,,সেই ছেলে কি করে টেস্টে বি গ্রেড নিয়ে,,আমি এটা কিছুতেই মানতে পারছি না উজান,,

উজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে না,,হয়েছে না হয় এবার একটু রেজাল্টটা খারাপ,,পরের বার ভালো হবে(শান্তভাবে)

হিয়াঃ এটা একটু খারাপ রেজাল্ট না উজান,,আর একটু হলে ওর রেজাল্টটা পুরো ফেইল আসতো,,আপনি ভাবতে পারছেন একবারো সেটা,,

উজানঃ হিয়া শ্রাবণ অসুস্থ ছিলো, ওর তো একটা মাথায় অপারেশন হয়েছে না বলো,,ওকে তো আমরা পড়াশুনা নিয়ে বেশি চাপ দিতে পারবো না না,,তুমি বলো,,

হিয়াঃ আমি তো ওকে চাপ দিচ্ছি না উজান,,যেতুটুকু না পড়লে নয় আমি তো ওকে সেটুকুই পড়তে বলি,,আর ও সেটুকু পড়েই প্রথমবার ভালো রেজাল্ট করছে,,আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার যুক্তি টা,,

উজানঃ আমি তোমার পয়েন্ট টা বুঝছি হিয়া,,তাই বলে তো এভাবে ওকে শাসন করলে হবে না,,গায়ে হাত তোলা এটা কেমন ধরনের আচরণ হিয়া,,আমি তোমার থেকে এটা আশা করি নি,,

হিয়াঃ দেখুন আপনি আমার থেকে কি আশা করেছেন কি করেননি আমি জানি না ,,কিন্তু আমি এসব আর চলতে দেবো না___আপনি সেদিন ওর জন্য গাড়ি টা কিনে আনলেন আমি রাগ হলেও পরে কিচ্ছু বলি নি,,বাড়িতে মাঝেমধ্যে একা থাকে বলে আপনি ওকে ট্যাব কিনে দিয়েছেন আমি তাতেও না বলি নি,,আগের মাসের আগে মাসে কতো গুলো খেলনা কিনে আনলেন আমি তখনো কিছু বলি নি আপনাকে,যে না থাক এতে যদি আপনারা খুশি থাকেন তাহলে তাই হোক__কিন্তু তার মানে এ-ই না যে আপনি ওকে এসব দিয়ে দিয়ে ওর মাথা থেকে পড়াশোনার চাপ টা কমিয়ে দেবেন__

উজানঃ আমি তোমার এ-তো কথা শুনতে চাই না হিয়া,,যা হয়েছে বাদ দেও,,এরপর থেকে শ্রাবণ পড়াশোনা করবে আমি কথা দিচ্ছি,,আমি যেনো আর কখনো ভূলেও তোমাকে ওর গায়ে হাত দেওয়া না দেখি

হিয়াঃ আপনি যখন আমার কথা শুনতে চান না,তখন আমিও বাধ্য নই সব বিষয়ে আপনার কথা শুনতে

উজানের কাছে থেকে শ্রাবণের বা হাত টা টান দিয়ে হিয়া শ্রাবণকে ওর দিকে টেনে আনতেই শ্রাবণ এবার গলা ছেড়ে কেঁদে উঠে,,এরকম কান্না যে বাচ্চা টাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে ভেতরে ভেতরে ভয়ে একদম শেষ হ’য়ে যাচ্ছে,,উজানের কাছে শ্রাবণের এ-ই কান্না কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না,,হিয়া কেনো এরপরো এ-তো রেগে আছে ও তো বলছে এরপর থেকে ও নিজে শ্রাবণকে নিয়ে পড়তে বসাবে,,

উজানঃ জাস্ট স্টপ হিয়া,,লাগবে ওর ছাড়ো নাআআ ওকে,,

হিয়াঃ কালকে থেকে ঠিক সময়ে পড়তে বসবি তুই??,,আর আর যাবি নিচে খেলতে__লজ্জা লাগে না তোর এ-ই রেজাল্ট করেছিস,,আর একটু হলে তো ফেইল করতি___দাদিমণি ফোন দিলে কি বলবি যে আমি টেনেটুনে পাস করছি,,বল আমাকে

হিয়ার এ-ইসব শুনে শ্রাবণ এবার গলা ছেড়ে কেঁদে উঠে,,নাকের পানি চোখের পানি সব যেনো মিলেমিশে একাকার হ’য়ে যাচ্ছে বাচ্চাটার,নাক মুখ কান্নায় লাল হ’য়ে একদম দেখার মতো হ’য়ে যাচ্ছে,,

হিয়াঃ ফেইল করবি দেখে কি দাদু ভাই তোকে সাইকেল কিনে দিয়েছিলো,,কি বলবি ওনাকে ফোন করে তুই__তুই যদি শুরু থেকে এরকম খারাপ রেজাল্ট করতি আমি তোকে কিচ্ছু বলতাম না কিন্তু ক্লাসে এক থেকে দশের মধ্যে থাকা ছেলেটা কি করে এরকম একটা রেজাল্ট,আমি তো ভাবতেও পারছি,

উজানঃ হিয়া ছাড়ো না ওকে,,লাগছে তো ওর___হিয়া আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি,,ছাড়ো ওকে

হিয়াঃ কাল থেকে তোমার নিচে যাওয়া,,এই ফোন নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকা সব বন্ধ,,খেলতে মন চাইলে রুমের ভেতর অন্য খেলনা দিয়ে খেলবা,আর যদি ফোন ধরা দেখছি আমি,

উজান রাগে হিয়াকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে শ্রাবণকে কোলে তুলে নেয়,,শ্রাবণের কান্না যেনো কিছুতেই আজ কমছে না,,ভালো ভাইয়ার কোলে উঠে সেই কান্না যেনো দুই তিন গুন বেড়ে গেলো নিমিষে,,

উজানঃ অনেকক্ষণ থেকে আমি সহ্য করছি আর না,,বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলে তাদেরকে কখনো মানুষ করা যায় না হিয়া,,(উঁচু কন্ঠে)

হিয়াঃ আমি ছোট থেকে ওকে আমার শাসনে রেখে এভাবেই মানুষ করছি,আর করেছি বলে ও আমার সব কথা শুনতো কিন্তু এখন,,এখন তো আমি দশবার কেনো একশোবার একটা কথা বললে ও কানে শুনতে চায় না,

উজানঃ (কাঠ কাঠ কন্ঠে)আগে তুমি ওকে কিভাবে মানুষ করছো কি করো নি,,আমি জানতে বা শুনতে চাই না,,এখন শুধু তুমি ওর গার্ডিয়ান না,মনে রাখবা আমিও এখন ওর গার্ডিয়ান__আমি যেনো আর কখনো তোমাকে কোনো কারণে শ্রাবণের সাথে এরকম ব্যবহার করতে না দেখি কথা টা যেনো মাথায় থাকে,,

উজান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শ্রাবণকে নিয়ে ররুমের ব্যালকুনিতে এসে রাগে ব্যালকুনির দরজা টা ধাম করে লাগিয়ে দেয়,এদিকে হিয়াও রাগ দেখিয়ে শ্রাবণের সব বই খাতা ফ্লোরে ছুঁড়ে দিয়ে এদিকের রুমে এসে সব লাইটের সুইচ গুলো ঠাস ঠাস করে বন্ধ করে রুম টা অন্ধকার করে শুইয়ে পড়ে,,

এদিকে শ্রাবণের কান্না তো কিছুতেই কমছে না,,গালের মধ্যে হিয়ার থাপ্পড় এর দাগ স্পষ্ট ভাবে বুঝা যাচ্ছে,,বাচ্চাটা আজ অনেকদিন পর হিয়ার এরকম ব্যবহার দেখে খুব ভয় পাইছে,,

উজানঃ আর কাঁদে না,,সোনা বাচ্চা আমার__এ-ই যে___চুপ না শ্রাবণ__খাবো না আমরা এখন__বুবু কি রান্না করছে আজকে,,ফিস রান্না করছে__মাছের মাথা টা আজকে কে খাবে__আমি খাবো না শ্রাবণ খাবে___চুপ কর না শ্রাবণ__এ-ই ছেলে

উজান চেষ্টা করছে শ্রাবণকে বাগিয়ে বুগিয়ে শ্রাবণের কান্না থামানোর,কিন্তু এ-ই কান্না যেনো আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামার মতোই করে আজ তার দুচোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে,,শ্রাবণের কান্নার শব্দ ব্যালকুনি ভেদ করে এদিকের রুমে ভেসে আসছে,রাতের আঁধারে এ-ই কান্না যেনো আরো কঠোর রুম নিচ্ছে,,
!
!
!
একটা পর্যায় কান্নাটা থামিয়ে শ্রাবণ যে কখন উজানের কোলে ঘুমিয়ে যায় সে খেয়াল তার থাকে না,,উজান ব্যালকুনির দরজা খুলে রুমে আসতে দেখে সব বই খাতা রাবার পেন্সিল ফ্লোরের যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,,যা দেখেই উজান মেজাজ যেনো আরো বিগড়ে যায়,,উজান শ্রাবণকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়ে শ্রাবণের চুলে হালকা করে হাত বুলিয়ে দেয়,,এসি টা বাড়িয়ে দিয়ে কম্বল টা শ্রাবণের গায়ে মেলে দিয়ে উজান উঠে ফ্লোর থেকে সব বই খাতা রাবার পেন্সিল যা আছে তুলে এদিকের রুমে এসে হিয়া যে পাশে শুইয়ে আছে তার অপর পাশে বিছানার উপর ধাপ করে ছুঁড়ে ফেলে,,

উজানঃ শান্তি মিললো তোমার,বাচ্চাটা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো খুব ভালো লাগছে না এখন তোমার,,এভাবে বাচ্চা দের মানুষ করা যায় না হিয়া,ভূলটা আমার তুমি আমাকে শাসন করো তাই জন্য তুমি তার গায়ে এভাবে,,

হিয়া কিছু উওর দেয় না,,উজানো হিয়ার উওরের অপেক্ষায় না থেকে রাগে ঔ রুম থেকে বেড়িয়ে শ্রাবণের কাছে এসে কম্বল তুলে শ্রাবণের পাশে শুইয়ে যায়,,আর অপেক্ষা করে যদি ঘুম টা ভাঙ্গে তাহলে তাকে কিছু খাইয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিবে,,
!
!

রাত তখন তিনটার কাটা ছুঁই ছুঁই,,শ্রাবণের অপেক্ষাতে থাকতে থাকতে উজানের চোখ টা হালকা লেগে আসায় উজান শ্রাবণের পাশে কখন যে হালকা ঘুমে পড়ে সে হুঁশ তার থাকে না,,এদিকে ক্ষিদের ছুঁচোটা পেটের মধ্যে এবার দৌড়াদৌড়ি শুরু করতেই শ্রাবণের ঘুম টা ভেঙে আসে,,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তার ভালো ভাইয়া তাকে জড়িয়ে কি সুন্দর ঘুম দিচ্ছে,,শ্রাবণ উজানকে ডেকে তুলে না,,আস্তে করে ওয়াশরুমে গিয়ে হিসু করে এসে পা টিপে টিপে ডাইনিং এ আসে কিছু খাবারের খোঁজে,,এদিকে শ্রাবণের অস্তিত্ব টের পেয়ে হিয়া উঠে বসে,,শ্রাবণের সাথে ওভাবে রাগারাগি করার পর হিয়া তখন থেকে এক ফোঁটা ঘুমায়নি,,তার বাচ্চা না খেয়ে ঘুমে আছে আর সে কি করে নিশ্চিন্তে ঘুমায়,,এটা কি কোনো মা পারবে,,সারারাত হিয়া চোখ দিয়ে পানি ফেলছে,সব কিছুর জন্য তার নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছিলো,,কেনো সে শ্রাবণের গায়ে হাত তুললো,,ডক্টর তো শ্রাবণকে চাপ দিতে মানা করছে সবসময় হাসিখুশি থাকতে বলছে তাই জন্য তো উজান শ্রাবণকে,,সারারাত হিয়া রুমের মধ্যে ছটফট করতে থাকে,কখনো বিছানা তো কখনো বারান্দা,,

শ্রাবণো যে তার মা তুল্য বুবুর সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে না,,তাই তো সাহস করে গুটিগুটি পায়ে হিয়ার রুমে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে যায়,,

শ্রাবণঃ বুবু(অস্ফুটে)

শ্রাবণের বুবু ডাকে হিয়া এপাশ ফিরে তাকাতেই হিয়ার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে,,হিয়া ওর কান্নারত মুখে অনেক কষ্টে হাসি টেনে নিজের হাত দুটো সামনে প্রসারিত করতেই শ্রাবণ গপ করে এসে তার বুবুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে,,হিয়া শ্রাবণকে জড়িয়ে অঝোরে কেঁদে উঠে,,শ্রাবণকে লেপ্টে ধরে শ্রাবণের মাথার ভাঁজে চুমু একে দিতে থাকে,,

হিয়াঃ বুবু টা খুব খারাপ না,,বুবু টা খুব বাজে__বুবু টা শ্রাবণকে মারছে(কাঁদতে কাঁদতে)

শ্রাবণঃ আমি আর ফোন দরবো(ধরবো)না বুবু,,কালকে থেকে পড়তে বসবো,এরপর আমি খুব ভালো রেজাল্ট করবো দেকিস(দেখিস)

হিয়াঃ ভালো রেজাল্ট টা মূখ্য না সোনা,,তোকে যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে,,আমি যে তোকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছি,,তুই আমাকে কথা দে তুই আমার সেই সব স্বপ্ন গুলো পূরণ করবি

হিয়া ওর বুক থেকে শ্রাবণের মাথাটা তুলে শ্রাবণের দু গালে নিজের হাত দুটো শক্ত করে রাখে,,

হিয়াঃ আমি তো তোকে পড়াশোনার জন্য চাপ দিচ্ছি না সোনা,,আমি তো জানি আমার শ্রাবণের মাথায় ওতো চাপ দিতে ডক্টর মানা করছে,,কিন্তু যেটুকু না করলে নয় তুই সেটুকু__তুই স্কুল যাবি আসবি দুপুরে ঘুম দিয়ে নিচে খেলতে যাবি আমি কিচ্ছু বলবো না,কিন্তু রাতেও যদি তুই না পড়ে ফোন নিয়ে থাকিস আমার কি সেটা ভালো লাগবে বল আমাকে,,

শ্রাবণঃ আমি কালকে থেকে পড়াশোনা করবো বুবু,কিন্তু তুই ভালো ভাইয়ার সাথে ওরকম রাগারাগি করবি না ভাইয়া কান্না করে আমার মতো তখন,,

হিয়াঃ হুম করবো না,,দেখি আমরা এখন ভাত খাবো এখন হ্যা,আমি আজকে কি রান্না করছি,শ্রাবণের প্রিয় ফিসফ্রাই!!

শ্রাবণঃ ফিস😍,,ফিস খাবোওও ইয়েএএ কি মজাআআ,,বুবু মাথাটা আমি খাবো বড় মাথা টা,,

হিয়াঃ হুম তো ছোট মুড়ো টা ভালো ভাইয়ার আর বড় টা শ্রাবণের,,

হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে শ্রাবণের জন্য ভাত আর মাছ নিয়ে এসে শ্রাবণকে খুব সুন্দর করে খাইয়ে দিতে থাকে,ইসস শ্রাবণটার কি খিদে পাইছিলো তাই তো সে এক লোকমা শেষ হতে আরেক লোকমা গপ গপ করে খেয়ে নিতে থাকে,,শ্রাবণকে খাওয়ানো হ’য়ে গেলে হিয়া শ্রাবণের মুখ মুছে টুছে দিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে রুমে এসে রুমের সব লাইট বন্ধ করে দিয়ে বিছানা টা সুন্দর করে গুছিয়ে নেয়,,শ্রাবণকে কোলে নিয়ে হিয়া আসে ঔ রুমের ব্যালকুনিতে,,শ্রাবণ হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হিয়ার এক কাঁধে মাথা রাখে,,

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়াও তো খায়নি বুবু রাতে,ভাইয়ারো দেখবি ক্ষিদে পেলে ঘুম ভেঙে যাবে,

হিয়াঃ হুম আমি দেখে আসলাম তো তোমার ভালো ভাইয়া ভোস-ভোস করে নাক ডেকে ডেকে ঘুমোচ্ছে,উঠলে এখন আমি ওনাকে খাইয়ে দেবো ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ হে হে ভোস-ভোস করে নাক ডাকে ভাইয়া,,

হিয়াঃ চুপ বদমাইশ,,দেখি এখন ঘুমে যা তো,,অনেক রাত হচ্ছে,সকালে কিন্তু স্কুল আছে

শ্রাবণঃ আচ্ছা,তুই গান বল আমি ঘুমাই,,

হিয়াঃ ছোট বাচ্চা তো না তুমি এখনো যে গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে হবে,ফাজিল,দেখি চোখ বন্ধ করো এখন,,আমার গান শেষ হতে হতে যেনো তোমাকে ঘুমোনো দেখি,,নাহলে কিন্তু আবার আমি রাগ করবো,,

শ্রাবণ ভয়ে টুক করে চোখ বন্ধ করে হিয়ার কানের ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে ঘুমের চেষ্টা করে,আর হিয়া শ্রাবণের জন্য শুরু করে ঘুম পাড়ানি গান❤️

ওরে ও ওরে ও
ডাকে মন-সোনা মন

বেলা বয়ে যায়
সে গেছে কাদের নায়??
জোছনা গাছে ফুল ধরেছে খোকা ঘরে আয়

রোদ্দুরে ডানা মেলে-রামধনু গায়ে ফেলে
চাঁদের কপালে চাঁদটি
কদ্দুরে গেলে উড়ে সাত রঙা মিঠে সুরে
আমাকে খুঁজে পেলে কি

হিয়ার গুনগুন করে গাওয়া গানের সুরে উজানের ঘুম টা হালকা হ’য়ে আসে,,হাত বাড়িয়ে শ্রাবণকে ধরতে গিয়েই দেখে শ্রাবণ পাশে নেই,,উজান চটজলদি উঠে এপাশ ওপাশ শ্রাবণকে খুঁজতে শুরু করে,,কিন্তু শ্রাবণ তো নেই,,হঠাৎই কানের মধ্যে হিয়ার গুনগুন ভেসে আসতে উজান উঠে এদিকের রুমে আসে,,আর দেখতে পায় হিয়া বারান্দায় পায়চারি করতে করতে শ্রাবণকে গান শুনিয়ে শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে,,উজান একটা মুচকি হাসি দিয়ে ঘরের দরজায় ঠেস দিয়ে হাত দুটো ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে যায়,,আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেঁসে হিয়ার গান গেয়ে শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া দেখতে থাকে,,

উজানঃ ইডিয়ট,,নিজে বকা দিয়ে এখন নিজে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে__মা-রা বুঝি এমনই হয় তাই না মা,,তুমিও তো ছোট বেলায় আমাকে এরকম করে শাসন করার পর আবার নিজের কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে!!তোমার কথা খুব মনে পড়ছে মা,,দেখি সামনের মাসে ছুটি নিয়ে কয়েকদিন বাড়ি থেকে ঘুরে আসবো,,খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়,,মিস ইউ মা,,ভালো থাকো তুমি,,

হিয়ার মাঝে উজান ওর মায়ের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পায়,,তার মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই সোনালী দিনের কথা যখন সব ভাই বোনের মাঝে তার মা কি সুন্দর সমতা রেখে সব ভাগ করে দিতো,,শাসনের সময় শাসন ভালোবাসার সময় ভালোবাসা সব টাই কতো সুন্দর করে তার মা সাজিয়ে গুজিয়ে নিতো যেমন টা সে হিয়ার মাঝে এখন খুঁজে পাচ্ছে,,উজানের অজান্তেই উজানের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে,উজান বুড়ো আঙুল দিয়ে গালে আসা পানি টা মুছে একটা শান্তির হাসি দেয়❤️

মায়ার পাখি গায়
দেখো সূয্যি ফিরে চায়
আলোর জাহাজ খেলবি না আজ
আয় না ঘরে আয়

সোনার কাঠি কই
শীতল পাটি কই
নিশুতি রাতে তোমায় ছুঁয়ে একলা জেগে রই

ওও ঘুম পাড়ানি গান
তারে মেপে দেব ধান
উথাল পাথাল ঢেউ এর
তোলে কান্না জলে চান
কোন বাগানের বুকের ভেতর
চাঁদের ই সম্পান❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here