শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ১৬ এবং সমাপ্ত #Arshi_Ayat

0
697

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১৬ এবং সমাপ্ত
#Arshi_Ayat

সেদিনের পর থেকে আরবকে আর স্বর্ণর আশেপাশে কোথাও দেখা যায় নি।এরকমই হওয়ার ছিলো।এখন আর আগের মত অফিস থেকে বের হওয়ার পর কেউ আর পানি হাতে এগিয়ে আসে না,ছোটো-ছোটো দুষ্টুমিও করে না কেউ,ওর কষ্টগুলো বোঝারও কেউ নেই।মনে মনে ভিষণ ভাবে ভেঙে পড়ে মেয়েটা।এত অভিশপ্ত কেন জীবনের অধ্যায়গুলো।কখনো কি এই অভিশাপ কাটবে না?
এত কিছুর পরও স্বর্ণ খেয়াল করে অফিস থেকে বের হওয়ার পর গেটের দারোয়ান ওকে নিয়মিত পানির বোতল এগিয়ে দেয়।স্বর্ণ জানে যতই লুকিয়ে থাকুক ছেলেটা ওর যত্ন নিতে ভোলে না।

আজ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর স্বর্ণর মা বলল,’সুমনের পরিবার থেকে বিয়েটা না করে দিয়েছে।আশরাফ একটু আগে ফোন করে বলল আমাকে।’
স্বর্ণ ক্লান্তির স্বরে বলল,’যাক,ভালোই হলো।’
‘হ্যাঁ।তুই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।’
স্বর্ণ সায় দিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।আজকাল পেট’টা একটু উঁচু লাগছে।অনেকেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে।স্বর্ণর ভালো লাগে না।মনে হয় স্কলারশিপ ক্যান্সেল করা উচিত হয় নি।আরও তো অনেকটা দিন বাকি।মানুষের কটু কথা শোনার শক্তি হবে তো?হজম করতে পারবে তো!সংকিত হয় স্বর্ণ।

খেয়ে অল্প রেস্ট নিয়ে ল্যাপটপ এ মেইল চেক করতে বসলো।দু’টো অফিস থেকে এসেছে।এরপরেটা ভার্সিটি থেকে এসেছে।স্বর্ণ ভার্সিটি থেকে আসা মেইল’টা ওপেন করলো সেখানে লেখা
Dear Shorno,
Hopefully you are well.I’m professor Kibria.Your project was advanced and I liked It.You have been nominated for a scholarship.You got an opportunity to study at London University.congratulation!

মেইল’টা পড়ে খানিকটা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো স্বর্ণ।কিভাবে কি হলো?ও তো প্রজেক্ট’ই সাবমিট করে নি।ভাবতে ভাবতেই ক্লাসমেট’দের কল আসতে লাগলো ওর ফোনে।সবাই শুভকামনা জানাচ্ছে কিন্তু স্বর্ণ বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি?কিছু একটা মনে হতেই আরবকে ফোন করলো স্বর্ণ।এই কয়দিনে কেউ কাউকে ফোন করে নি একবারও।স্বর্ণ’র ফোন পেয়ে আরব ম্লান হাসলো।এতক্ষণ ফোনের দিকেই চেয়েছিলো ও।ধীরেসুস্থে ফোন রিসিভ করলো।আরব জানে এখন স্বর্ণর মনে নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এটা স্বাভাবিক।ওপাশ থেকে স্বর্ণ কিছু বলার আগেই আরব বলল,’কংগ্রাচুলেশনস স্বর্ণ মেহবুব।’
‘এটা কি তুমি করেছো আরব?’
‘বুঝতেই পারছো।’
‘কেন?’
‘এটার উত্তর আমি তোমাকে এখন দেবো না স্বর্ণ।সঠিক সময় আসুক তুমি সব উত্তর পেয়ে যাবো।আমি জানি তুমি তখন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো।’
কথাগুলো বলেই আরব ফোন রেখে দিলো।স্বর্ণ কিছু বলার সুযোগ ই পেলো না।

নিহারিকা খানম ভিষণ খুশি তবে কষ্টও হচ্ছে।একমাত্র মেয়েটা চলে যাবে কিছুদিন পর।স্বর্ণ নিজেও যাওয়া নিয়ে আপত্তি করে নি আর।তবে আজকাল ভিষণ কষ্ট হয়।বুকটা ভারী হয়ে ওঠে নিদারুণ যন্ত্রণায়।

অবশেষে কাঙ্ক্ষিত দিনটি চলে এলো।আজ স্বর্ণ’র ফ্লাইট।ওর সাথে এয়ারপোর্টে ওর মা,খালা আর খালু এসেছেন।ভাই,ভাবী সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এখন কোনো খোঁজও নেই।যাওয়ার সময় স্বর্ণ চাইছিলো যেন একবার আরবের দেখা পায় কিন্তু না আসে নি সে!আসবেই বা কেন!সবার অলক্ষ্যে চোখের জল মুছে স্বর্ণ ভেতরে ঢুকে গেলো।ও যাওয়ার পর আরব এয়ারপোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলো।

লন্ডনে স্বর্ণর তেমন কোনো কষ্ট হচ্ছে না কারণ।মায়ের কোনো এক দুঃসম্পর্কিত বোনের বাসায় উঠেছে ও,সম্পর্কে খালা।যদিও এদের স্বর্ণ আগে দেখে নি।তবে যতদিন যাচ্ছে তত যেন বুঝতে পারছে একজনের অনুপস্থিতি ভীষণ পীড়াদায়ক।সবার সাথে কথা হয় কিন্তু ওই মানুষ’টা ছাড়া।এদিকে ওর ডেলিভারি ডেট ঘনিয়ে এসেছে।ইদানীং ভিষণ চিন্তা হয় ওর ডেলিভারিতে কেউ ওর পাশে থাকবে না।কিন্তু এ বাড়ির মানুষেরা খুব ভালো।বিশেষ করে খালা আর ওনার মেয়েরা।বাচ্চা নিয়ে একটা প্রশ্নও করে নি,কোনো কথাও শোনায় নি।মা হয়তো বলেছে তাই!পড়াশোনাটা বাসায় হচ্ছে।ক্লাসে যেতে পারছে না।এক্ষেত্রে খালার মেয়েরা বেশ সাহায্য করছে ওর।

সকালে নাস্তার পর বাসায় শুধু খালা আট ওনার ছোটো মেয়েটা থাকে।স্বর্ণ নাস্তাটা ওপরের ঘরেই করে।আর নাস্তার পর থেকপ শরীর বেশ খারাপ করছে।হঠাৎ স্বর্ণ পেট ধরে চিৎকার করে উঠেছে।লেবার পেইন উঠেছে!নিচ থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনে সবাই চলে এসেছে।খালার ছোটো মেয়ে বন্যা অ্যাম্বুলেন্স কল করেছে।একটু পরই ওকে হাসপাতালে নেওয়া হলো।বাচ্চা হলো সিজারে।বাচ্চা ভালো আছে কিন্তু স্বর্ণর অবস্থা ভালো না।আই সি ইউ তে আছে।খবর পৌঁছে গেলো বাংলাদেশেও।

ডাক্তাদের অনেক চেষ্টার ফলে দু’দিন পর স্বর্ণর জ্ঞান ফিরলো।জ্ঞান ফিরতেই ও বাচ্চাকে দেখতে চাইলো।বাচ্চাকে দেওয়া হলো ওর কাছে।হঠাৎ করেই স্বর্ণ খেয়াল করলো কেবিনে দু’টো চেনামুখ!ওর পাশেই বসে আছে।একজন ওর মা আরেকজন আরব।দু’জনকে একসাথে এখানে দেখে স্বর্ণ বিশ্বাস করতে পারলো না প্রথমে।দুর্বল হাত ওদের দিকে বাড়িয়ে দিতেই দু’জনে ছুঁয়ে ফেললো।স্বর্ণ কেঁদেই ফেললো সাথে সাথে।নিহারিকা খানম মেয়ের হাত চুমু খেয়ে বললেন,’কাঁদিস না মা।তোর কান্নার দিন শেষ।আমরা এসে পড়েছি তোর কাছে।’
স্বর্ণ জড়ানো কন্ঠে বলল,’মা..’
নিহারিকা খানম কিছুক্ষণ মেয়ের পাশে বসে বেরিয়ে গেলেন।এতক্ষণ আরব কিছুই বলে নি।স্বর্ণ আরবের দিকে চেয়ে বলল,’এতদিনে মনে হলো বুঝি?’
আরব স্বর্ণ’র হাত নিজের হাতের মাঝেে রেখে ভেজা গলায় বলল,’প্রতিদিন,প্রতিক্ষণ,প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে।’

১মাস পর….
স্বর্ণ এখন প্রায় সুস্থই বলা চলে।তবুও সাবধানে থাকতে হয়।সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে মা আর আরব তো আছেই।হাসপাতাল থেকে আসার দু’দিনের মধ্যে আরব আর স্বর্ণ বিয়ে করেছে।বিয়ের তোড়জোড় অবশ্য আরবেরই বেশি ছিলো।ওরা এখন লন্ডনেই আছে।স্বর্ণ’র আরও দু’বছর থাকতে হবে।আরব আর নিহারিকা খানম কিছুদিন পরই চলে যাবে।স্বর্ণ যাবার পর আরব অনেকটা বদলেছে।পারিবারিক বিজনেস দেখছে,নিজেরও একটা কোম্পানি দাঁড় করেছে।তবে এত কিছুর পরও স্বর্ণ’র প্রতি ভালোবাসা’টা বিন্দু মাত্র কমে নি।

আরও প্রায় মাসখানেক পর…
স্বর্ণ এখন পুরোপুরি সুস্থ।আজকেই আরব আর নিহারিকা খানম ফিরে গেছেন।বাবু স্বর্ণর কাছেই থাকবে।ওরা যাবার পর থেকেই কিছু ভালো লাগছে না স্বর্ণর।গত একটা মাস যেন স্বর্গসুখে বাস করছিলো সে।আর এখন কেমন খালি খালি!নিস্তব্ধতা ভর করছে!
স্বর্ণ ঘরে ফিরে বিছানার ওপর একটা চিঠি পেলো।হাতে নিয়ে খুলতেই দেখলো এটা আরবের চিঠি।

প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী,
তুমি যখন এই চিঠিটা পড়বে তখন আমি তোমার থেকে যোজন যোজন দূরে থাকবো।কিন্তু মনে রেখো চোখের আড়ালই মনের আড়াল নয়।তুমি সবসময়ই আমার মনে আছো শক্তপোক্ত ভাবে।তবে আজ এই চিঠিতে কিছু না বলা কথা আর তোমার মনের যত প্রশ্ন আছে সব জানবে।

তোমার আর উচ্ছ্বাসের কথা আমি জানতাম আগে থেকেই।তোমার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারেও তুমি বলার আগে থেকেই জানতাম।তখনই ভাবলাম এইদেশে থাকাটা তোমার নিরাপদ না।কিন্তু তুমি স্কলারশিপ বাতিল করে দিলে।আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল কিন্তু আমি তোমাকে কিছুই বলি নি।তোমার কম্পিউটার হ্যাক করে নিজেই সাবমিট করে দেই তোমার প্রজেক্ট।আর দিন গুণতে থাকি।এ ব্যাপারে অবশ্য আমার শ্বাশুড়ি মা বেশ সাহায্য করেছে আমাকে।তারপর তো তুমি জানোই।আমাদের বাবু হওয়ার পরই আমি বিয়ের প্ল্যান করেছিলাম।আর দেখো প্ল্যান সাকসেসফুল!ভালো থেকো মিসেস!আবার দেখা হবে আমাদের।আল্লাহ হাফেজ।

ইতি তোমার অর্ধাঙ্গ।

চিঠিটা পড়ে স্বর্ণ বুকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলো।এই মানুষ’টা এত ভালো কেন?না চাইতেই ওর সব দুঃখ কষ্ট বুঝে নেয় মানুষটা।এতদিন নিজেকে অভাগী মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়েটা সে ই।

সমাপ্ত।

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আন্তরিক ভাবে দুঃখীত এত দেরি করার জন্য।আমি ভিষণ বাজে ভাবে রাইটিং ব্লকে পড়েছি।লিখতে মন চায় না আজকাল।আপনাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য ক্ষমা করবেন।সকলে ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here