চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #পর্ব_২৬

0
384

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_২৬
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

শুভ্রতার বলা সব কথা আমি রুমে এসে স্পর্শকে জানালাম। তারপর বললাম,

‘ বাসার কাউকে না জানিয়ে উনাকে আপনি থাকতে দিয়ে দিয়েছেন কেন? সবাইকে জানালে কি সমস্যা হত?’

‘তখন সবাই আমার উপর অনেক রেগে ছিলো। হঠাৎ করে একটা মেয়ের সাথে আমাকে দেখলে সবাই রঙ কিছু ভাবতো। যেমনটা তুমি আমায় এতোক্ষণ ভাবছিলে। আর তখন তাদের মানাতে আর বুঝাতে গিয়ে আমার আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হতো না বর সেজে। তাই ঝামেলা বিহীন আগে আমার চড়ুইপাখিকে আমার কাছে আনবো তারপর বাকি সব কাজ।’ বলেই স্পর্শ আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

আমি পিছিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ কে থামতে বলে বললাম,

‘ একদম আমার কাছে আসবেন না।’

স্পর্শের মুখটা নিমিষেই আঁধার ছেয়ে গেল যেন আমার কথা শুনে। থমকানো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ক্যান্ট ইউ বিলিভ মি এ্যাট?’

আমি স্পর্শের কথা না শোনার ভান করে বিছানার উপর পা তুলে বসলাম। আর অসহ্য কর ভঙ্গিতে বললাম,

‘আপনি এখন যান তো আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন। আমি সেই দুপুর থেকে না খেয়ে আছি। আপনার চিন্তায় চিন্তায় আমার নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। এখানে আসার পরও কেউ আমাকে খেতে দিল না। আপনিও খাওয়ার খোঁজ নিচ্ছেন না। এ কোথায় এসে পড়লাম আমি। তাড়াতাড়ি যান আমি খাবার খেয়ে ঘুমাবো।’

স্পর্শ আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে।
কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে। আমি এমন করে করে কথা বলেছি তা হয়তো স্পর্শ হজম করতে পারছে না।আমি আড়চোখে স্পর্শের বোকা চোখের চাহনী দেখছি।

স্পর্শ আমার দিকে এগিয়ে এসে ভালো করে জিজ্ঞেস করল,

‘তোমাকে কেউ খেতে দেয়নি?’

আমি বললাম, ‘ না। শুধু বলেছিল। আমি আপনার জন্য খাই নি।’

‘ আমার জন্য না খেয়ে থাকতে বলেছে কে? তোমার খিদে পেয়েছে খেয়ে নিতে।’

‘ আপনার জন্য বসে থাকার কারণ আছে।’

স্পর্শ ভ্রু কুটি করে বলল, ‘ কি কারণ আছে?’

‘ আছে আগে খাবার নিয়ে আসুন তারপর বলবো।’

স্পর্শ কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করলো। তারপর বলল,

‘ যাচ্ছি। তোমার উপর মারাত্মক রাগ হচ্ছে কিন্তু আমি ব‌উকে বকা পছন্দ করিনা তাই সহ্য করছি। ‘

‘ ওরে আমার সাধু পুরুষ রে। যান এবার।’ আমি আদেশ সুরে বললাম। যেন আমি সেই রুমের কর্তী। এমন একটা ভাব নিচ্ছি। স্পর্শ রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে করতে কয়েক পা পায়চারী করল।
তারপর গটগট করে পায়ে শব্দ তুলে রুমের বাইরে চলে গেল। স্পর্শ রুমের বাইরে পা ফেলতেই আমি বিছানায় থেকে নেমে লাফ মেরে। তারপর ছোটে দরজার কাছে এসে উঁকি মারলাম। স্পর্শ রাগে গজগজ করতে করতে নিচে যাচ্ছে। আমি মুখ সেপে ধরে হাসছি।

স্পর্শের বোকা বোকা চেহারা দেখে আমার খুব মজা। তুই কি আবার শুরু। কম জ্বালাও নাই তুমি আমাকে। এবার আমার পালা। মিস্টার হাজবেন্ড খুব জালিয়েছো না এবার আমি সব সুদে-আসলে উসুল করব।

স্পর্শের পায়ের আওয়াজ পেতেই আবার গম্ভীর মুখ করে বিছানায় বসে পড়লাম। স্পর্শ খাবারের প্লেট এনে আমার কোলের উপর দিল। আর বলল,

‘নাও তোমার খাবার। এবার খেয়ে নাও!’

খাবার রাখার আগেই আমি তাড়াতাড়ি দুই হাতে দিয়ে প্লেট তুলে আবার স্পর্শের হাতে দিয়ে দিলাম। স্পর্শ কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কি হচ্ছে কি? তোমার না খিদে পেয়েছে। তাহলে আমাকে আবার দিচ্ছ কেন? ফাইজলামি হচ্ছে কি আমার সাথে।’

‘ খিদের মাথায় আবার ফাইজলামি করে কিভাবে! আমি তো খাব বলেই আপনার হাতে দিচ্ছি।’

‘হোয়াট তুমি খাবে তো আমার হাতে দিচ্ছ কেন? আজ আমাদের বাসর রাত। সেটা কি ভুলে গেছো। দেখো রাত একটা বেজে গেছে আর একটু পর সকাল হয়ে যাবে। আজকে রাতটা নিয়ে আমি কত কিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। কত স্বপ্ন দেখেছি! তুমি জানো? সব কিছুই তো ভন্ডর করে দিচ্ছ।’

‘ সেসব আমি কিছু জানিনা। এখন আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন। তারপর যা হওয়ার হবে।’

‘হোয়াট আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো? কথা তো ছিল বিয়ের পরদিন থেকে প্রত্যেক দিন তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।’

‘ সেটা পরে হবে খন। এখন আপনি আমাকে খাইয়ে দেন।’

‘ আই ক্যান্ট। ইট ইয়োরসেল্ফ।’ বলেই স্পর্শ খাবারের প্লেট রেখে চলে যেতে চায়। আমি স্পর্শের হাত টেনে ধরি।

আর অভিমানী মাখা গলায় বলি,

‘ আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না। বাসলে এমন রুড বিহেভ করতেই পারতেন না। এইভাবেই মুখের উপর মানা করে দিলেন। আমার কষ্ট দেখে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন।’

‘ উফফফ। আবার তোমাকে,, আমি আর বুঝাতে পারবো না। কিছু হলেই এক কথা।’

‘ ঠিকই তো বলেছি।’

‘হুম ঠিকি বলেছো।’

বলে স্পর্শ হাত ধুয়ে এসে আমার সামনে বসলো।

‘ ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করায় পারদর্শী মেয়ে তুমি।’

‘ মোটেও না। আমি খুব ভালো মেয়ে।স্বামীর আদর খেতে এমন করলাম।’

‘ আমার দুষ্টু ব‌উ।’

স্পর্শ খুব তারাতাড়ি খাওয়া কমপ্লিট করল। আমি অর্ধেক রেখেই খাওয়া অফ করে দিলাম বাকিটা স্পর্শকে পুলিশের মত বন্দুক ধরার মতো করে খাওলাম। সে তো খাবেই না। আমি জানি আজকে আমার মত সেও খায় নি।

খাওয়া কমপ্লিট করতেই স্পর্শ আমাকে আচমকা কোলে তুলে বেরিয়ে এলো।

‘আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। এই মাঝরাতে কি শুরু করলেন। আমি ঘুমাবো! আপনি আমাকে কোথায় নিচ্ছেন?’

স্পর্শ আমার উঁচু গলার আওয়াজ শুনে একদম নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বলল,

‘ চুপপপ, নো সাউন্ড। এভরিওয়ান উইল উইক আপ।’

আমি আবছা আলোয় স্পর্শের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি‌। স্পর্শ সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে হেঁটে চলেছে।আমি এবার স্পর্শ থেকে দৃষ্টি সরালাম কোথায় নিয়ে এসেছে আমাকে দেখার জন্য। চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম বাগানের দক্ষিণ সাইডে গোলাপের বাগানে সেইখানে। আকাশে বিশাল বড় চাঁদ সেই চাঁদের আলোয় ফুলগুলো আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এত ফুল ফুটেছে। টকটকে লাল। আমাকে স্পর্শ সেখানে এনে নামিয়ে দিলো। তারপর আমাকে রেখে সামনের দিকে গেল। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য বিলাস করছি। এটা ফুল বিলাস।

হঠাৎ স্থানটা ঝলমল করে উঠল আলোয় আলোয় ঝিকিমিকি করে উঠলো। ঝলঝল করে কিছু অসংখ্য ছোট ছোট প্রাণী উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এটা তো জোনাকি। আমি জোনাকি বলে লাফিয়ে উঠলাম আর সেখানেই দুহাত মেলে লাফাতে লাগলাম। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে খুশিতে লাফালাফি করছি। হঠাৎ থেমে গেলাম মুখে দু হাত চেপে ধরে অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি।

আমার সামনে স্পর্শ হাঁটু মুড়ে বসে আছে। তার হাতে একটা লাল টকটকে গোলাপের কলি।

স্পর্শ ফুলটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,

‘ ভালোবাসি? তোমাকে আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি তা কখনো প্রকাশ করিনি। কারণ আমি নিজের অনুভূতি গুলোকে অপ্রকাশিত রাখতেই বেশি ভালোবাসি। মুখে বলার থেকে কাজে করতে বেশি ভালোবাসি। আমি চাই না মুখে বারবারই ভালোবাসি বলতে। আমি চাই দেখাতে, এতো এতো ভালোবাসা দেবো এত এত ভালোবাসব যে তুমি নিজেই বুঝে যাবে আমি এই সাদাফ মাহফুজ স্পর্শ তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। যা তুমি অনুভব করবে প্রতি সেকেন্ডে, প্রতিক্ষণে। আমার প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাস জানে, সে তার অভিমানী চড়ুইপাখিকে পাগরের মতো ভালোবাসে আর সারাজীবন ভালোবাসবে। তুমি কি এই ভালোবাসা গ্ৰহণ করবে। থাকবে তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই স্পর্শের বুকে মধ্যে?’

আমি খুশিতে কেঁদেই ফেললাম।
আর তারাতাড়ি ফুলটা ধরে নিলাম।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here