চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #পর্ব_৩৩

0
329

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩৩
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

আমি ভ্যাবলার মত স্পর্শ দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি পেছন কিভাবে এলাম এই সামান্য বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকলো না। এই ঘুমের কারণে আমি জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছি। ফালতু প্রশ্ন করে করে স্পর্শের মাথা খেয়ে নিচ্ছিলাম। স্পর্শ আমার এরকম বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার দেখে প্রচন্ড রেগে আর আমার সাথে কোন কথাই বলল না। আমাকে কোলে তুলে রিসোর্ট এর দিকে রওনা হলো। আশেপাশের এতো মানুষের সামনে এভাবে স্পর্শ কোলে নিয়ে হাঁটাতে আমি লজ্জা ছটফট করতে লাগলাম নামাজ অন্য। কিন্তু স্পর্শ আমাকে নামাল না। ওইভাবেই নিয়ে গেল। আর দিগন্ত ভাইয়া রুম বুকিং করা নিয়ে কথা বলেছিলেন। স্পর্শ আমাকে পাঁজকোলে রাখার জন্য কিছু করতে পারল না। এমনকি দিগন্ত ভাইয়া শেষে আমাদের রুমের দরজাটা খুলে দিলো। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু যখন যখন চাচ্ছিলাম। আমার দিকে শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মিষ্টি। তাকিয়ে চোখ টিপছিল হাসছিল। আর আমি শুধু ওকে ভেংচি কেটেছি।

রুমে এসে স্পর্শ আমাকে বিছানায় ছুড়ে মারল এক প্রকার। মনে হল আমি না জানি কি? আমি যে তার প্রিয়তমা স্ত্রী। সেসব তিনি আদৌ মনে রেখেছে কিনা কে জানে? মনে রাখলেই জীবনেও ছুড়ে মারতে পারতো না। এমন ভাবে ছুড়ে মেরেছে মনে হলো বিছানায় পড়ে আমার হাড্ডিগুড্ডি ভেঙ্গে গেছে সব।

‘ ও মা গো। এমন জল্লাদ এর মত কেউ আছাড় মারে? আমাকে কি আপনার মানুষ মনে হয় না! যেনো আমি কোন পুতুল সেই ভাবে ছুড়ে মারলেন।’কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম।

স্পর্শ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, ‘ তুমি কি সত্যি মানুষ? আমার তো তোমাকে মানুষ মনে হয় না।’

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘কি বললেন আপনি? আমাকে আপনার মানুষ মনে হয় না? তো আমাকে কি মনে হয়?’

‘ তোমাকে তোমার মেয়ে বলে মনে হয়।’

আমি বিকৃত গলায় বললাম, ‘এ্যা আপনি কি পাগল? মেয়েরা কি মানুষ না? এরা কি মানুষ এর বাইরে কোন প্রাণী? আজব পাগল তো আপনি।’

‘আমি কি বলেছি আমি পাগল না? আমি তো পাগল‌ই। আমার বউ মানে তুমি পাগলি। পাগলের পাগলী। নাইস না নাম দুটো।’

‘মোটেই না। আমি পাগলী হতে যাবো কেনো? আমি হলাম জ্ঞানী মারিয়া। আর আপনি হলেন পাগল। আপনার বউ পাগলী না আপনার বউ হচ্ছে মারিয়া।’

‘যথা আজ্ঞা মহারানী। কিন্তু একটু আগে আপনি নিজে নিজেকে পাগলি প্রমাণ করেছেন। সেটা কি আপনার মনে আছে মহারানী?’

‘মোটেই না। আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম।ঘুমের ঘোরে কি বলেছি? কি করেছি? আমি মনে নাই!’

‘তাই নাকি তো আপনার এটা মনে আছে আপনি তখন কিছু বলেছে। আর কিছু আজাইরা প্রশ্ন করেছেন!’

‘আমার প্রশ্নকে একদম আজাইরা বলবেন না। আমি সব সময় সিরিয়াস কথা বলি।’

‘তুমি যদি সিরিয়াস কথা বলো তাহলে সিরিয়াস কে অপমান করা হবে। কারণ তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত আমি কোন সিরিয়াস কথা শুনি নাই।’

‘আমার কথাগুলো আপনার সিরিয়াস মনে হয় না। আমি কোন সময় আজাইরা কথা বলি হ্যা। আপনি আসলে আমার কথাগুলো সব সময় আজাইরা মনে করেন। আমার কোন কথায় আপনি সিরিয়াসলি নেন না এটা আপনার সমস্যা। নিজের সমস্যা আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন আপনি আসলেই খুব পঁচা!’

স্পর্শকে পঁচা বলতেই আমার উপর দিয়ে একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। আমি স্পর্শকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিজে থেকে সরিয়ে। ঠোঁট মুছে বকতে বকতে বাথরুমে ঢুকে গেলাম‌।

আমরা যেহেতু সকালে রওনা দিয়েছিলাম পৌঁছাতে রাত হয়েগেছে রাতভর আর কি করবো? বসে থাকলাম! আমি একাই ঘুম পারলাম না‌। উঠে ডিনার করলাম। রিসোর্টটাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তারপর আবার ঘুম সকালে উঠে আমরা সাগরপাড়ে আসলাম।
সকাল-সকাল পরিবেশটা খুবই ঠাণ্ডা। ঠান্ডা বাতাস সাথে খুবই ভালো লাগছে। স্পর্শ জরাজুরিতে আমি শাড়ি পড়ে এসেছি। তাও আবার স্পর্শের ফেভারিট নীল শাড়ি। যাইহোক এই শাড়ি পরে এখন আমি চলাফেরা হালকা করতে পারি । স্পর্শের যেহেতু শাড়ি পছন্দ তাই আমাকে এটা পড়া শিখতেই হয়েছে।

আমি আর মিষ্টি হাত ধরে পানিতে নেমে পরলাম। সকাল সকালই পানিতে নামায় স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিল‌ কিন্তু আমাদের আর পায় কে? আমরা তো অলরেডি ভিজে গেছি! কিন্তূ এই ভিজে যে কি আকামটা করেছি একটু পরেই বুঝতে পারলাম।

স্পর্শ জোর করে আমার হাত ধরে টানতে টানতে উঠিয়ে এনে বলল, ‘তুমি যে একটা পাগল সেইটা আবার প্রমাণ করলে! এতবার বারণ করার সত্ত্বেও কেন তুমি পানিতে নামলে? এখন এই ভেজা শাড়ি পড়ে তুমি কতক্ষণ থাকবে? কোন পোশাক নিয়ে এসেছো? আর সকালবেলা গোসল করে এসেছে আবার গোসল করলে এখন তোমার জ্বর আসলে তুমি কিভাবে আনন্দ ফুর্তি করবে। যেসব প্ল্যান করে এসেছো জ্বর আসলে বিছানায় শুয়ে সেসব কিছু করতে পারবে? মাথামোটা গাধা একটা! সবকিছুতেই তার পাগলামী করতে হবে।’

আমি গাল ফুলিয়ে মাথা নিচু করে বসে বললাম, ‘ তাই বলে ঘুরতে নিয়ে এসে আপনি আমাকে ধমকালেন?’

‘তো কি করব ধরে চুমু খাবো নাকি? সব সময় তোমার পাগলামো ভালো লাগেনা। এখন আমরা এখানে সকালের নাস্তা করে। আমরা আরেক জায়গায় বেড়াতে যাব। আর তোমরা কি করলে শাড়ি ভিজিয়ে আকাম করে দিলে। চলো এবার রুমে গিয়ে বসে থাকো। আজকে আর কোথাও নিয়ে যাব না। ‘

আমি চমকে উঠে স্পর্শের বাহু খামচে ধরে বললাম,’সরি সরি সরি এবারের মত ক্ষমা করে দিন আমার ভুল হয়েছে‌। দেখুন কান ধরছি। এবারের মতো কিছু একটা করুন আমার খুব ঠান্ডা লাগছে! আমি রুমে বসে থাকবো না আমি বেড়াতে যাব প্লিজ।’

‘আরে ছাড়ো আমার হাত। নিজের সাথে এখন আমাকেও ভেজানোর প্ল্যান করছে নাকি ছাড়ো আমাকে।’

‘ধুর ভাল লাগে না সরি বললাম তো ক্ষমা করো না।’

স্পর্শ অবাক গলায় বলল, ‘তুমি করে বললে?’

‘ হুম বললাম। এবার তো রাগ কমেছে এবার আমাকে ড্রেসের ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।’

‘এই বিষয়ে তুমি খুবই বুদ্ধিমতি।’

‘আর কোন বিষয়ে আমি বুদ্ধিমতী হতে চাই না। আপনারা কন্ট্রোল করতে পারলেই আমি ধন্য।’

‘ আচ্ছা চলো দেখি আশেপাশের কোন ছোটখাটো শপিং মল পাওয়া যায় কিনা। সিম্পল কিছু কেনার জন্য। এখন রিসোর্টে ফিরে গেল অনেক সময় লেগে যাবে।’

স্পর্শ আমার শরীরে ভালোভাবে শাড়িটা পেছিয়ে ঢেকে দিল তারপর আমাকে ওই ভাবেই নিজের সাথে চেপে ধরে হাটতে লাগল। আমি বললাম,

‘এমন জাপ্টে ধরেছেন কেন আপনিতো ভিজে যাচ্ছেন।’

‘তোমাকে গরম দেওয়ার চেষ্টা করছি! যাতে ঠান্ডা কম লাগে।’

‘আপনার পোশাক ভিজে গেল তো আপনি ও বিপদে পড়ে যাবেন। আমাকে গরম দিতে হবে না। আমাকে সরে পরে হাঁটুন।’

স্পর্শ আমার কথা শুনলাম আমাকে ওইভাবে ধরে দিগন্ত ভাইয়াদের কাছে নিয়ে আসলো। দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি কে বকছে। আমি চোরের মত মুখ করে মিষ্টি দিকে তাকাচ্ছি। কারণ এই সম্পন্ন বুদ্ধিটা আমার ছিল। মিষ্টি রাগী চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অসহায়ের মত করে ওর দিকে তাকাচ্ছি।

অনেক ঘোরাঘুরি করে শপিংমল পেলাম না একজনকে জিজ্ঞেস করে একটা ছোট্ট দোকান পেলাম সেখানে একটা লোক কিছু জামা কাপড় বিক্রি করে। সেখান থেকে আমি আর মিষ্টির দুই সেট থ্রি পিস নিলাম। আমারটা লাল, মিষ্টির টা সবুজ। এই ড্রেস এখন কোথাই পরব। সেই লোকটা তার বোনের বাড়ি দেখিয়ে দিল। আমরা সে বাসায় গেলাম তারপর আমি আর মিষ্টি পোশাক পরিবর্তন করে আসি। সেখানে শুকাতে দিয়ে আসলাম শাড়ি দুটো।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here