চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #পর্ব_৩০

0
344

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩০
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

‘আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না তো?’ আমি নাক টানতে টানতে বললাম। স্পর্শ কথা বলল না। আমি টিস্যুর বক্স নিয়ে বিছানায় কাঁদতে লাগলাম আর নাক মুছতে লাগলাম।কাঁদতে কাঁদতে আমার ঠান্ডা লেগে গেছে। আধাঘন্টা পর স্পর্শ বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে বসল। আর আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

‘ ফ্যাচ ফ্যাচ করা বন্ধ করে আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও‌। তোমার যন্ত্রণায় তো আমি শুয়ে থাকতে পারছিনা। এখন কি রুম থেকে বেরিয়ে যাব। ‘

আমি কান্না মাখা মুখে স্পর্শের দিকে ঘুরে বসলাম। তারপর কান্নাজড়িত গলায় বললাম,

‘ আপনি এত হৃদয়হীন কবে হয়ে গেলেন। আমার কান্না আমার চোখের জল আপনাকে গলাতে পারছে না। আপনি আমার কান্না দেখে বিরক্তিকর মুখে বসে আছেন‌‌। আগে তো কাঁদতে দেখলে পাগল হয়ে যেতেন। সব ভালোবাসা বুঝি বিয়ের পরেই হারিয়ে গেল। তাহলে তো বিয়ে না করে ওই ভাবেই ভালো ছিল‌‌। বিয়ে করে দেখি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম।’

বলেই আমি আরো শব্দ করে কাঁদতে লাগলাম।

‘ তুমি আমাকে রুম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করলে। ওকে তুমি বসে বসে কান্না করো আমি চলে যাই তোমার ন্যাকা কান্না আমার দেখতে ইচ্ছা করছে না।’

বলেই স্পর্শ বিছানায় থেকে উঠে রুম ছেড়ে চলে যেতে চাইলো। আমি তা দেখে কান্না অফ করে স্পর্শের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম পথ আটকে।

‘কি হলো আমার পথ আটকে দাড়ালে কেন?’

‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’

‘বললামই তো বাইরে যাচ্ছি! আজকে বাইরেই রাত কাটাবো তুমি শান্তি মত কাঁদো।’

‘ এ্যা আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না।’

‘ দরকার কি? যখন গলা ব্যথা হবে তখন একাই কান্না থেমে যাবে!’

‘গলা ব্যথা হলে তো আমার কষ্ট হবে।’

‘জানি।’

‘ তাও যাচ্ছেন কান্না করতে করতে আমার গলাব্যথা হোক। আমার কষ্ট হলে আপনার কষ্ট হবে না?’

‘ আমার তো গলা ব্যাথা হবে না। তাহলে আমার কষ্ট হবে কেন?’

‘ আমার ব্যাথায় আপনার কষ্ট হবে।’

‘ জি না।’

‘ আপনি পাষাণ।’

‘ জানি।’

‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।’

‘ আচ্ছা।’

‘ কিসের আচ্ছা?’

‘ সব কিছুই।’

‘ আমার চোখের জলের দাম নাই আপনার কাছে?’

‘ আছে।’

‘ তাহলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন না কেন?’

স্পর্শ কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘ সরো।’

আমি স্পর্শ কলার চেপে ধরে একদম স্পর্শের কাছে চলে গেলাম। ওর বুকের সাথে লেপ্টে গেলাম।

‘ আমার মুখের দিকে তাকান। দেখি কতক্ষণ কঠিন হয়ে থাকতে পারেন।’

স্পর্শ মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে। আমাকে নিজে থেকে সরানোর চেষ্টা করছে । যতই সরাতে চাইছে আমি আরো তার সাথে চিপকে যাচ্ছি। আমি একদম স্পর্শ এর বুকের উপর মাথা রেখে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। স্পর্শ আমার কাঁধ ধরে সরাতে চাইছে পারছেনা তাই বিরক্ত হয়ে এবার ধমক মারলো।

আমি ধমক খেয়ে ভয়ে স্পর্শকে ছেড়ে দিলাম। স্পর্শ নিজেও ধমক দিয়ে অবাক। এতোটা রিয়েক্ট করতে চায়নি। কিন্তু করে ফেলেছে। আমি দৌড়ে সীফার কাছে চলে এলাম। স্পর্শের ধমক খেয়ে আমার খুব অপমানে লেগেছে।
সীফা দরজা খুলেই ঘুমায়। আমি ওর রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। সীফা লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমাকে কান্না রত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কি হয়েছে ভাবি? তুমি কাঁদছো কেন? আর এই রুমে কেন?’

‘ সীফা আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাতে চাই। প্লিজ না করো না।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়ার সাথে কি তোমার কিছু হয়েছে?’

‘ এখন কিছু জিজ্ঞেস করো না। আমি ঘুমাবো।’

বলেই সীফার পাশে শুয়ে পড়লাম।ঘুমালাম না। কিন্তু সেটা ওকে বুঝালাম না। আমি ঘুমিয়ে পড়েছি এমন ভান ধরে পরে রইলাম।

স্পর্শ আজ ইচ্ছে করেই আজ রাগ দেখিয়েছে আমাকে। সব সময় আমি রাগ করি অভিমান করি তাই আজ স্পর্শ রাগ করে আমাকে বুঝাতে চাইছিল
এমন করলে স্পর্শ কতোটা কষ্ট পায়‌‌। কিন্তু সবকিছু পাঞ্চাল হয়ে গেল। স্পর্শ চিন্তিত মুখে পায়চারি করছে ও বুজতে পারছি রাগ দেখাতে গিয়ে আমাকে বোঝাতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

স্পর্শ অনেক কিছু ভেবে সীফার রুমে আমাকে ডাকতে এলো। ছোট বোনের রুমে এসে ডাকতেও লজ্জা করছে ওর। কিন্তু এখন না ডেকেও তো ও থাকতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে লাজ লজ্জা ভুলে এসেছে।

স্পর্শ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় করাঘাত করল। প্রথমে আমার নাম ধরে ডাকলো। আমি শুনেও না শোনার ভান করে পড়ে আছি। কয়েকবার ঢাকার পর সীমার নাম ধরে ডাকতে লাগল। সীফা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল। ও স্পর্শের ডাক শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজা খুলল!

ঘুম ঘুম চোখে বলল কি হয়েছে ভাইয়া?

স্পর্শ ওকে সরিয়ে ভেতরে চলে এলো। আর জোরে বলল,

‘ সীফা তুই একটু চোখ বন্ধ করে দাঁড়া তো।’

‘ কেন ভাইয়া?’

‘ আমি বলছি তাই। সব কিছুতে তোর কারণ জানতে হবে কেন?’

ভাইয়ের ধমক খেয়ে সীফা চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ভাবছি স্পর্শে কি করতে চাইছে? আমি শক্ত হয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। হঠাৎ মনে হল কেউ টান মেরে আমার উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে দিলো। আমি তাও চোখ খুললাম না। ওই ভাবেই চোখে চেয়ে বন্ধ করে আছি। ফট করে চোখ খুলে ফেললাম স্পর্শ আমাকে দুই হাতে তুলে ধরেছে শূন্যে। আমি বড়বড় চোখ করে বললাম,

‘ এবার আছাড় মেরে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন?’

স্পর্শ কিছু বললো না। বড় বড় পা ফেলে সীফার রুমে থেকে বেরিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

‘ সীফা ঘুমিয়ে পর।’

আমি বললাম, ‘এসব কি আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। সীফার রুম আমাকে দিয়ে আসেন আমি এখানেই থাকব এখন থেকে।’

‘ নিজের রুম থাকতে অন্যের রুমে গিয়ে অন্যকে ডিস্টার্ব করো কেন?’

‘ কি বললেন আমি ডিস্টার্ব করেছি তাকে ডিস্টার্ব করলাম? বুঝেছি আপনাকে করেছি ওকে সরি। কালকে আমি আমাদের বাড়ি চলে যাব। তাহলে আর আমাকে অন্যের রুমে থাকতে হবে। আপনি নিজের রুমে শান্তিতে থাকেন কারো অসহ্যকর কান্না আপনার শুনতে হবে না।’

স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে খুব নরম সুরে বলল সরি! আমি কিছুই বললাম না আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল আমার খুব খারাপ লেগেছে স্পর্শ এর ব্যবহারে। স্পর্শ আমাকে নিয়ে বেলকুনিতে এল আমাকে ওই ভাবেই নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিজেও বসলো।

আমি ছটফট করতে লাগলাম উঠে চলে যাওয়ার জন্য। স্পর্শ জোর করে ধরে রাখলো আমাকে। আর নরম গলায় বলতে লাগল,

‘ ব‌উ সরি। আমি অনেক অনেক সরি। আমি তোমাকে একটু কষ্ট দিয়ে এটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম যে তুমি যে আমার উপর অভিমান করিও, রাগ করিও, কিন্তু কথা বলা অফ করো না ইগনোর করো না যেটা আমি সহ্য করতে পারিনা। খুব কষ্ট বুকের ভেতর। বুকে ব্যথা হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু সেসব বলে তোমাকে বোঝাতে পারিনা। তাই আমি ইচ্ছে করে আজকে সারাদিন তোমার সাথে নাটক করালাম। কিন্তু তোমাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম। তার জন্য স্যরি। আমি তোমাকে শুধু আমার কষ্টটা অনুভব করাতে চেয়েছিলাম। তোমাকে ইগনোর করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার প্রতিটা হৃদস্পন্দন জানে আমি এই মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসি।’

‘মিথ্যা আপনি শুধু আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেন! আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। ভালবাসলে সারাদিন আমার কান্না মাখা মুখ দেখে, আমাকে না খেয়ে থাকতে দেখে। আপনি এভাবে চুপ থাকতে পারতেন না। আপনার হৃদয় এতটা কঠিন হতে পারত না।’

‘ আজ আমি বাড়িতে কতক্ষণ ছিলাম? তোমার সামনে বা কতো সময় ছিলাম? তোমাকে এভাবে দেখে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই এই কষ্ট দিয়েছি কিছু কিছু সময় কষ্ট দিতে হয়। না হলে সারাজীবন কষ্ট ভুল-বোঝাবুঝি থেকে যায়।’

‘ এসব তো আপনি আমাকে ভালো করে বলে বোঝাতে পারতাম। সারাটা দিন এইভাবে ইগনোর করবেন। কত কষ্ট পেয়েছি জানেন কত খিদে পেয়েছে তাও আপনার জন্য কিছু খাইনি।’

‘কাল তুমি আমাকে রান্না করে খাওয়াই ছে এজন্যই তো আজ তোমার জন্য আমি রান্না করব! তো ম্যাডাম বরের রান্না খেলে কি আপনার রাগ কমবে?’

আমি অবাক চোখে স্পর্শ দিকে ঘোরে স্পর্শ চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আপনি আমাকে রান্না করে খাওয়াবে? ”

‘ইয়েস।’

‘সামান্য আলো কাটতে গিয়ে তো হাত কেটে ফেলেন। আপনি কি করে রান্না করবেন?’

‘সেতো বউয়ের নজর পরায়। না হলে আমি স্পর্শ সবই করতে পারি। তুমি বসো আমি আসছি।’

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here