#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_07+08
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
শপিং চললো অনেকক্ষন ধরে। আপু সারা মার্কেট ঘুরে ও ড্রেস চুজ করতে পারেনি। তাই তার পছন্দের জন্য অর্ডার করা হলো। আপু সমস্যা হচ্ছে ডিজাইন পছন্দ হলে তো কালার পছন্দ হয়না। আবার কালার পছন্দ হলে ডিজাইন পছন্দ হয় না। আর আমার আপুর তো দুইটাই নিজ পছন্দের লাগবে তাই জন্য এই ব্যবস্থা। ঘুরতে ঘুরতে আমার পায়ের তালু ব্যাথা হয়ে গেছে। মাঝখানে স্পর্শ হাওয়া হয়ে গেছিল কিছুক্ষণ পর তিনি ব্যাগ হাতে আবার ফিরে এসেছে। ব্যাগে নিজের জন্য কি কিনে এনেছে উনিই জানে। আমাদের দেখায় নি। আপু দেখতে চাইলেও দেখায় নি। মাহিন ভাইয়া আমাকে ড্রেস কিনতে বলেছিল আমি কিনি নি। আর কিনেই কি হবে। ওইদিন তো আমার শাশুড়ি মা এক গাধা পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে এতো জামাকাপড় দিয়ে আমি করবোটা কি!
বিকেলে বের হয়েছিলাম এখন রাত হয়ে গেছে। আমরা বাইরে ডিনার করেই বাসায় ফিরবো এমনটা বলতে শুনলাম আপুকে। সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি। আপু ভাইয়া খাওয়ার মাঝে বলল তারা নাকি একটু পরে বাড়ি ফিরবে আমাকে পৌঁছে দিতে বলল স্পর্শ কে। আমি আপুর হাত টেনে বললাম,
‘ দুইদিন পর বিয়ে এখনো প্রেম করতে আলাদা যেতে হবে তোমাদের!’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোকে আর স্পর্শ কে আলাদা করে প্রেম করার সুযোগ করে দিচ্ছি আর তুই আমাকে কথা শুনাচ্ছি? তুই না বললি স্পর্শ তোকে পাত্তা দেয় না। এজন্য তো এসব করছি। দুজন একা টাইম স্পে কর ফ্রী হ। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর!’
আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ সত্যি?’
‘ একদম।’
‘ ওকে বাই।’
আমাদের খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই আপুরা চলে গেল। এখন আমি আর স্পর্শ শুধু আছি। এতোক্ষণ আপুরা ছিল বলে আমি ইজিলি থাকতে পেরেছি।এখন স্পর্শের সাথে একা থাকতে আমার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।
স্পর্শ ফোনে কথা বলছে কার সাথে জানি। আমি আড়চোখে তাকাতাকি করছি খালি।
‘ না খেয়ে বসে আছো কেন?’ ফোনের কথা শেষ করে স্পর্শ প্রশ্ন ছুড়লো আমার দিকে।
আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, ‘ আমার খাওয়া শেষ। আর খাব না। ‘
‘ এইটুকু তেই! এতো কম খাও বলেই তো শরীরে গোস্ত নাই। খালি হাড্ডি। বেশি করে খাবে এখন থেকে। আমার টাকা বাঁচাতে এতো কম খাওয়ার প্রয়োজন নাই । তোমার হাজব্যান্ড এর আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।’
‘আমি আপনার টাকা বাঁচাতে কম খাব কোন দুঃখে? আমার পেটে যতটুকু আটবে ততটাই তো খাব তাই না।’
‘ হুম। তো হাত ধুয়ে বসে আমার খাওয়া দেখো। আমার খাওয়া বাকি আছে।’
বলেই স্পর্শ খেতে লাগলো। আমি সত্যি হাত ধুয়ে বসে আছি। পেটে অবশ্য খালিই আছে খাইনি তো বেশি। আমি উনার খাওয়া দেখছি হা করে। আর উনি এক মনে খেয়ে যাচ্ছে!!
আচমকা উনি আমার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিল। আমি চমকে উঠলাম।
‘ এমন করে তাকিয়ে ছিলে আমার তো নজর লেগে যাবে। তুমিও একটু খাও।’
আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। উনি এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।
‘ আমার হাতে খাবে?’
আমার খুব রাগ লাগছিল এমন ভাবে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপর হঠাৎ স্পর্শের খাইয়ে দেওয়ার কথা শুনে আমার রাগ উবে গেল। আর পেটের খিতে বেড়ে গেল আমি রাজি হয়ে গেলাম। স্পর্শ ঠোঁট কামড়ে হাসলো আমার রাজি হওয়া দেখে। নিজে ও খাচ্ছে আমাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ খাওয়ার মাঝে বলে উঠলো,
‘ আমাদের বিয়ে পর কিন্তু প্রতিদিন সকালে আর রাতে তুমি আমায় খাইয়ে দিবে আমি কিন্তু নিজ হাতে খাই না বেশি কিন্তু কি সুন্দর এখন তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি দেখছো।’
আমি হতবিহ্বল হয়ে স্পর্শের দিকে তাকালাম।
‘ এখন আম্মু আমাকে বেশির ভাগ খাইয়ে দেয়। বিয়ের পর বউয়ের হাতে খাব তুমি না করতে পারবে না কিন্তু।’
আমি থমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। এই উনাকে আমায় দুবেলা খাইয়ে দিতে হবে! কি জ্বালা!
‘ মুখ কালো করে লাভ নেই। খাইয়ে কিন্তু দিতেই হবে যতই বিরক্ত হও না কেন!’
আমরা রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে এলাম। স্পর্শ ফোন করে নিজের গাড়ি আনিয়েছে।ড্রাইভার গাড়ি দিয়ে চলে গেল। আমি আর তিনি রয়েছি।
আমাকে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসিয়ে নিজে ও এসে বসলো।
আমি কি নিয়ে কথা বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। স্পর্শ কথা বলল আমি তার উওর দিলাম। এভাবেই খুব দ্রুত রাস্তা শেষ হয়ে গেল আর উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল আমি ভেতরে যেতে বললাম উনি গেল না। যাওয়ার আগে সেই শপিং ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল।আমি তো শপিং ব্যাগের দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে ভেতরে চলে এলাম। আপুরা এখনো আসেনি। আম্মু আমাকে ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বলল।
আমি রুমে এসে ব্যাগে কি আছে বের করে দেখলাম হিজাব দুইটা। এ্যাশ ও খয়েরি রঙের। সুন্দর কিন্তু আমি অবাক হয়েছি কারণ আমার শশুর বাড়িতে থেকে যত শপিং এসেছে আমার জন্য কখনো হিজাব দেয়নি। এই ফার্স্ট তাও স্পর্শ দিল। আমি খুশি হলাম স্পর্শের হাতে থেকে প্রথম কোন গিফট পেয়ে।
পারলে কালকেই কলেজে একটা বেঁধে যেতাম কিন্তু সম্ভব না কারণ আমাদের কলেজে রঙ হিজাব নিয়ে গেলে ঢুকতেই দিবে না।
আম্মুকে দেখালাম নিয়ে দৌড়ে। আপু এলো আরো এক ঘন্টা পর। আপুকেও দেখালাম আপু খয়েরিটা একদিন পরার জন্য চাইলো আমি সরাসরি দেব না বললাম। এই ফার্স্ট জামাইয়ের পছন্দের কিছু পেয়েছি তা আমি খুব যত্ন করে রাখবো।
আপু ভেংচি কেটে চলে গেল।
আমি আজকের স্বাভাবিক বিহেভ দেখে খুব খুশি হয়েছি। আজ স্পর্শ অনেকটা কথা বলেছে আমিই চুপ ছিলাম। কথায় প্রেম প্রেম ভাব ছিল। আমার মনে লাড্ডু ফুটছে তাই ভেবে। আমি খুশি মনে ফেসবুকে ঢুকে সার্চ অপশন থেকে স্পর্শর আইডিতে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। সাথে সাথেই রিসিভ হলো। আমি খুশিতে বিছানায় লাফিয়ে উঠলাম।
ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। টুন করে মেসেজ এলো আমি স্ক্রিনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখি স্পর্শের আইডি থেকে মেসেজ। তারাতাড়ি সিন করে ফেললাম। যতটা খুশি মনে সিন করলাম। ততটা খুশি মেসেজ দেখে থাকলো না।
স্পর্শ মেসেজ করেছে, ‘ এতো রাতে তুমি ফেসবুকে কি করছো না ঘুমিয়ে? ঘুম না থাকলে পরতে বসো। পড়ালেখা বাদ দিয়ে খালি ফেসবুক চালানো তাইনা। কালকে তোমাদের ফিজিক্স ক্লাস ও আমি করাবো। পড়া না পারলে বেঞ্চের উপর দাড় করাবো।’
আমি রাগের ইমোজি দিয়ে ডাটা অফ করে ফেললাম। কোথায় প্রেম করবো ভাবলাম আর উনি কি করলো আমাকে থ্রেট দিল।ধুর আমার জামাইকে কে স্যার হতে বলেছিল। দুনিয়াতে এতো চাকরি থাকতে এই চাকরিটাই উনাকে নিতে হলো আমার জীবনটা নরক করতে। কিচ্ছু করে আমি শান্তি পায় না উনার জন্য।
উল্টা পাল্টা হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন কলেজে থেকে আসার পর দেখলাম আব্বু আম্মু রা রেডি হচ্ছে কোথাও যাওয়ার জন্য আমি আসতেই আম্মু বলল,
‘ মারু তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।’
‘ কোথায় যাচ্ছ?’ অবাক হয়ে বললাম।
‘ মাহিন দের বাসায় বিয়ের আগে একবার যেতে বলেছে আমাদের দাওয়াত। এবার না গেলে ভাইসাহেব রাগই করবে।’
আপুকে বাসায় রেখে আমরা বেরিয়ে পরলাম। মাহিন ভাইদের বাসায় এসে আমার শশুর শাশুড়ি কেও দেখলাম। তাদের ও ইনভাইট করেছে! দুজনকে দেখে স্পর্শ এসেছে ভেবেছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। ডিনার করে আমার চলে এলাম।
পরদিন কলেজে এসে পরিক্ষার নোটিশ পেলাম। আপুর বিয়ের সময় আমার পরিক্ষা আছে দেখে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলাম। বিয়ের ডেট চেঞ্জ করতে কিন্তু হলো না। হবে কি করে ? মাহিন ভাইয়ার বিলেত ফেরত মামা তো এই ডেটে বিয়ে না হলে থাকতে পারবে না। তার আবার চলে যাওয়ার ডেট এসে গেছে। আপুর সামনে গাল ফুলিয়ে বসে আছি,
‘ নিজের বোনের বিয়েটাও শান্তি মতো ইনজয় করতে পারবো না। তোমরা এই ভাবে শত্রুতা করলে আমার সাথে। তোমার গায়ে হলুদের দিন আমার ম্যাথ পরিক্ষা জানো। কেউ আমার সুবিধা দেখলো না।’
আপু শান্তনা দিয়ে বলল, ‘ পরিক্ষা দিয়ে এসে ইনজয় করবি। আর ম্যাথের পর তো দুইদিন এক্সাম নাই তো বাকি দিন গুলো শান্তিতেই থাকতে পারবি।’
‘ পড়বো না পরের পরিক্ষায়?’
‘পরবি একটু মাস্তি করবি একটু। আর মাস্তি করতে না পারলেও সমস্যা কি আর কয়েকদিন পর নিজের বিয়ে তখন ইনজয় করিস।’
‘ নিজের বিয়েতে কি আর ইনজয় করা যায়। ধুর তোমরা বুঝবে না।’
উঠে রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলাম।
#চলবে….
#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৮
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
স্পর্শ নিজের রুমে বসে ছিল হঠাৎ সীফা দৌড়ে এসে স্পর্শের হাতে একটা হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি দিয়ে বলে উঠে,
‘ ভাইয়া দেখো তো এই শাড়িটা কেমন? আমাকে মানাবে নাকি! এটা আমি তানহা আপুর গায়ে হলুদে পরতে চয়েজ করেছি।’
স্পর্শ সীফার থেকে চোখ সরিয়ে শাড়িতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,
‘ আমি কি মেয়ে নাকি! মেয়েদের জিনিস শাড়ি পছন্দ করতে যাব। তোর যেটা পছন্দ হয় সেটাই পরিস আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন?’
সীফা চেঁচিয়ে উঠল স্পর্শের উওর শুনে, ‘ এটা তুমি বলতে পারলে ভাইয়া? ভাবির জন্য যে কতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস শাড়ি পছন্দ করে কিনে আনো। তখন তো এসব বলো না। এখন বোন যেই পছন্দ করে দিতে বলছে তখন তোমার মেয়ে হতে হবে!’
‘ ওর জন্য তো আমি নিজের পছন্দ আনি। সেসব ওর পছন্দ হবে কিনা ভাবিনা কারণ আমার বউকে আমি নিজের পছন্দের বাজে জিনিস টাই পরাতে চাই। কিন্তু আমার এই মিষ্টি বোনকে তো তা করতে পারিনা আমি তাই আমার বোন সব চেয়ে সুন্দর জিনিস পরুক নিজের পছন্দ মতো। আমার করা অসুন্দর জিনিস পরিয়ে তাকে পেত্নী সাজাতে চাইনা। আর তোকে সব কিছুতেই সুন্দর লাগে।’
সীফা অবাক গলায় নিজের ভাইকে বলল, ‘ তোমার পছন্দ বাজে? কি সব বলছো ভাইয়া তোমার পছন্দ তো খুব সুন্দর। আমি কিছু জানি না এবার শাড়ি আমাকে তুমিই চয়েজ করে দিবে।’
‘ আমার করা অসুন্দর জিনিস পড়ে পেত্নি সাজতে চাস?’
‘ হ্যা চাই। চলো আমার সাথে।’ সীফা স্পর্শকে টেনে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো। স্পর্শ বাধ্য হয়েই এলো। অনেক শাড়ি নিয়ে বসে আছে মিনারা বেগম ও মোহিনী। তারাও শাড়ি পছন্দ করছে। সীফা ও টেনে ভাইকে সেখানেই নিয়ে এলো।
স্পর্শ শাড়ি উল্টা পাল্টা করে একটা পছন্দ করে দিল আদরের বোন কে। সীফা সেটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল আয়নায় দেখবে কেমন লাগে শাড়িতে ওকে।
স্পর্শ চলে আসতে যাবে তখন স্পর্শের মা মিনারা বেগম একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল,
‘ সাদাফ দেখ তো এটা মারিয়ার জন্য নিয়েছি ঠিক আছে কিনা।’
স্পর্শের শাড়িটা একটুও পছন্দ হলো না কিন্তু মা পছন্দ করেছে বলে নিজে থেকে কিছু বলল ও না মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে এলো।
সীফা মারিয়াকে ভিডিও কল করল। প্রতিদিনই মারিয়ার সাথে সীফার ফেসবুক কথা হয়। আজ ও কথা বলতে কল দিয়েছে । আগে শাড়ির ছবি তুলে দিয়ে দিয়েছে।
.
বই খুলে পরছিলাম। তখন ফোনটা বেজে উঠলো। ডাটা অন করেই পরছিলাম। পরিক্ষা না হলে পরতাম ও না কিন্তু আমার ফাটা কপাল কাল দিন পর আপুর বিয়ে আর আমাকে পরিক্ষার জন্য পরতে হচ্ছে। বই থেকে চোখ তুলে ফোন হাতে নিয়ে আমার একমাত্র ননদিনী সীফার কল পেয়ে রিসিভ করলাম।
‘ ভাবি!!’
‘ হুম কেমন আছো?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো ভাবি?’
‘ জানোই তো কেমন আছি। খালি প্যারা।’
‘ হুম। আমার পরিক্ষা সামনের মাস থেকে। তোমাদের তো আগেই শুরু হয়েছে।’
‘ আমি তোমাদের কলেজে থাকলে ভালো হতো। তাহলে এই পরিক্ষার ঝামেলা থাকতো না এই সময়ে।’
‘ ভাবি দেখো শাড়ি।’
‘ ওয়াও খুব সুন্দর তো। ‘
‘ হুম জানো এটা কার পছন্দ?’
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কার?’
‘ তোমার জামাইয়ের। ভাইয়া এটা আমাকে পছন্দ করে দিছে। ভাইয়ার পছন্দ খুব সুন্দর তাই না।’
‘ হুম। ‘
পড়া বাদ দিয়ে সীফা আর আমি খেজুরে আলাপ করেই যাচ্ছি। আমার যে কাল পরিক্ষা আছে সে খেয়াল ও নাই। আমাদের এই রসের আলাপ সমাপ্ত হলো হঠাৎ স্পর্শের নাম্বার থেকে কল আসায়। আমি চোখ বড় করে স্পর্শের কল দেখছি। সীফাকে তারাতাড়ি বাই বলে কল কেটে দিলাম।আর তারাতাড়ি স্পর্শের কল রিসিভ করলাম।
‘ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম!’
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম।’ স্পর্শ উওর নিল।
আমি কেমন আছেন বলতে যাব তার আগেই স্পর্শ
বলে উঠলো,
‘ কাল তোমার পরিক্ষা আর আজ তুমি রাত জেগে না পড়ে ভিডিও কলে কথা বলে সময় নষ্ট করছো কেন?’
‘আপনি আবার আমাকে বকা দিতে কল করেছেন?’
‘ ইয়েস! ইউ আর রাইট। তুমি পড়া বাদ দিয়ে আড্ডা দিলে তো আমাকে তার জন্য শাষণ করতেই হবে। কারণ আমার বউকে শিক্ষিত হতে হবে।’
‘ আপনি একদম আমাকে সব সময় স্যার দের মতো শাষণ করবেন না।’
‘ আমি তো স্যার ই।’
‘ না আপনি শুধু কলেজে আমার স্যার এর বাইরে আপনি কোন স্যার না আপনি শুধু আমার…
বলতে বলতে আমি থমকে চুপ করে গেলাম।
স্পর্শ বলল, ‘ আমি শুধু তোমার বর তাই তো?’
আমি লজ্জায় নিশ্চুপ আছি। স্বীকার করতে পারছি না।
স্পর্শ নিজেই বলে উঠলো, ‘ ওকে তোমার সব কথা পড়ে শুনবো। এখন চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো পড়তে বসো। আর কোন বাড়তি কথা শুনতে চাই না।’
স্পর্শ ফট করেই কল কেটে দিল। আমি নিজের মাথায় নিজেই গাট্টি মেরে পরতে বসে পরলাম। পরতে পরতে বিছানায় চলে এলাম। বিছানায় বসে পরতে পরতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
পরদিন
আমাদের জুথি ম্যাম গার্ডে পরেছে। ম্যাম টা খুব শান্তশিষ্ট টাইপের তাই ভেবেছিলাম ইংরেজী পরিক্ষা
খুব শান্তিতে দিতে পারবো কিন্তু না খুব কড়া ম্যাম পরিক্ষার হলে বসে বুঝতে পারলাম। ঘাড়টাও নড়াতে দেয়নি। ইংরেজী আমি ভালোই পারি মুটামুটি তাই পরিক্ষা ওই একা একাই দিতে পারলাম। ক্লাস থেকে বের হতেই অন্য ক্লাস থেকে মিষ্টি দৌড়ে এলো ওদের ক্লাসে নাকি স্পর্শ পরেছিল আর নাকি সুন্দর করে গার্ড দিয়েছে। অনেক হার্ড করে গার্ড দেয়নি।
জুথি ম্যামের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি আর মিষ্টি নিঝুম দের জন্য ওয়েট করছি। ওরা বের হয়েই ওয়াশ রুমে চলে গেছে। কালকে স্পর্শ আমাকে নাম্বারে মেসেজ করে রেখেছে তার জন্য গেটের ওয়েট করতে। রাতেই করেছিল আমি তা লক্ষ্য করেছি সকালে। সবাই গল্প করে গেটের বাইরে এলাম। ওদের কে বিদায় দিয়ে আমি একাই ওয়েট করছি স্পর্শের জন্য। উনি আসছে না। একটু পর পর কলেজের ভেতরে উঁকি মারছি উনি অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
আমার কাছে এখন ফোন থাকলে ফোন করে কিছু বলতে পারতাম এই ভাবে অপেক্ষা করতে হতো না। গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আরো পাঁচ মিনিট পর উনার ওই সাদা গাড়িটা এলো। আর এসেই আমার সামনে থামলো। ভেতর থেকেই স্পর্শ দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে বসতে বলল। আমি উঠে বসলাম।
‘ সরি অপেক্ষা করানোর জন্য।’
আমি বললাম, ‘ আপনি কি ভুলে গেছিলেন কেউ একজন একা আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।’
‘ সব ভুলে গেলেও তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না।’
‘ আপনি আমাকে কি খুব বেশি ভালোবাসেন! আপনি এমন টা দেখান সবাইকে কিন্তু আমার কিন্তু একটু ও মনে হয়না। আপনি মোটেও অনেক বেশি ভালোবাসেন না আমাকে। কিন্তু সবাই এটা কেন বলে সেটাই আমি বুঝি না।’
স্পর্শ আমার কথা শুনে আমার দিকে খুব শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো।
তারপর খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে বলল, ‘কেন? তোমার কি বিশ্বাস হয়না! আমি তোমাকে ভালোবাসি?’
আমি স্পর্শের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললাম, ‘ একদমি না।আমার এক বিন্দু ও মনে হয়না আপনি এই আমাকে ভালোবাসেন।’
স্পর্শ বিহ্বল চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ এমনটা মনে হওয়ার কারণ?’
আমি আজ সব বলবো বলেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি। আমি গুছিয়ে বলতে পারবো কিনা জানি না কিন্তু আজ সব অভিযোগ করবো। করবোই!
‘ আপনি এই এতো বছরের কতোক্ষণ আমাকে সময় দিয়েছেন। কতোক্ষণ আমার সাথে কথা বলেছেন? না সামনে বলেছেন আর না ফোনে। কোন ভাবেই যোগাযোগ করেন নি। কোনদিন ঘুরতে নিয়ে গেছেন? যাননি! দুটো ভালো কথা বলেছেন? কখনো ভালোবাসি বলেছেন? বলেননি। কিচ্ছু করেননি শুধু বিয়েটাই ঠিক করে রেখেছেন এর বাইরে কিচ্ছু করেননি। আপুর দিক থেকে দেখুন তাদের বিয়ে তো কেবল ছয় মাস ধরে ঠিক হয়েছে এতেই তারা সারাদিন ফোনে কথা বলতে থাকে। প্রতিদিন ভাইয়া আপুকে কতো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়।কতো কিছু করে।’
স্পর্শ খুব ঠান্ডা মাথায় আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর বলল,
‘ সারাদিন কথা বললে আর ঘুরতে নিয়ে গেলেই কি ভালোবাসা টা বুঝে যেতে। আমি তো ভালো না বেসে ও এসব করতে পারতাম তাই না।’
‘ কেন ভালো না বেসে কেন করবেন?’
‘ করতেই পারি। এসব করলেই যদি তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে। আমি মন থেকে নাইবা বাসি কাজ থেকে ভালোবাসি বুঝতে। আমি তো জানতাম ভালোবাসাটা অনুভব করার জিনিস বলে বেরানোর না।’
‘ আমি সব দিক থেকেই বুঝতে চাই।’
‘ কিন্তু আমি এই সব কিছু তখনই বুঝাতে চাই যখন তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে। যখন আমি তোমার ওই কপালে ভালোবাসা পরশ দিতে পারবো নির্দ্বিধায়। সকল সংকোচ কাটিয়ে ভরসা নিয়ে এই বুকে মাথা রাখতে পারবে পরম শান্তিতে।’
#চলবে….