চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #বোনাস_পর্ব

0
420

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

স্পর্শের রুমে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম কিন্তু আর যাওয়া হলো না। রুমে যাওয়ার আগে মুহূর্তে শাশুড়ি মা এসে টেনে ডায়নিং টেবিলে বসিয়ে দিল‌। একে একে পরিবারের সবাই এসে খেতে বসলো আমার আর স্পর্শের রুমে যাওয়া হলো না। আমি অসহায় মুখ করে বসে খাবারের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। সবার শেষে স্পর্শ ও এলো হাসিমুখে আর আমার পাশেই চেয়ার টেনে বসলো। আমি এক নজর তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। স্পর্শ সেই ক্ষণে আমার দিকে মৃদু ঝুঁকে নিচু স্বরে বলল,

‘ মন খারাপ করো না মায়ারানী। তোমাকে আজ আমার রুম দেখিয়েই বিদায় করবো ডোন্ট ওয়ারি।’

আমি বিহ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম স্পর্শের পানে। স্পর্শের শ্যামবর্ণ মুখে তখন নজর কাড়া হাসি। আমিও সেই সুন্দর হাসি দেখে নিজের ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমার যাওয়ার পালা এলো। সন্ধ্যার আগে যেতে হবে। শাশুড়ি মা স্পর্শ কে ডেকে বলল আমাকে পৌঁছে দিতে। আমি মুখটা কালো করে বসে আছি স্পর্শ যে তখন বলল রুম না দেখিয়ে বিদায় করবে না এখন এসব কি?

স্পর্শ রেডি হয়ে এসেছে তিনি কি ভুলে গেছে। এখন তো আমি উনার ব‌উ। তার রুম দেখার কি একটু অধিকার ও নাই আমার। অভিমান শুরু হতে লাগলো। আমার কিশোরী মনে ক্ষণে ক্ষণে অভিমান হতে লাগে।

স্পর্শ হঠাৎ নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আম্মু আমি একটু মারিয়াকে আমার রুমে নিয়ে যাই!’

আমি ফ্যালফ্যাল করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি। নিজের মাকে এই কথা কি বলছে উনার দেখি লজ্জা ও নাই। মা কি মনে করবে। আমি লজ্জা পেলাম এবার। এই মাত্র স্পর্শের উপর আমার অভিমান হচ্ছিল তিনি আমাকে রুম দেখানোর কথা বলে ভুলে গেছেন বোধহয়। কিন্তু এখন আবার স্পর্শের এমন ব্যবহার দেখে আমি লজ্জা পাচ্ছি নিজের এমন কর্মকাণ্ডে নিজেই লজ্জিত হচ্ছে মনে মনে। নিজের মন তো নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না স্পর্শ কিভাবে এই মন বুঝবে আমি আসলে একটা পাগলি।আমি নিজে চিন্তা ভাবনায় মশগুল ছিলাম তখন মা ছেলের মধ্যে কি কথা হলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুধু সম্মতি ফিরে ফেলাম স্পর্শের হাতের স্পর্শে। তিনি তার বাম হাত দিয়ে আমার ডান হাত আলতো স্পর্শে ধরেছে তারপর নিয়ে যাচ্ছে দুতালায়।

সবার সামনে এভাবে সরাসরি স্পর্শের হাত ধরে হাঁটতে আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি মাথা নিচু করে গুটিসুটি পায়ে স্পর্শের পেছনে পেছনে এলাম।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমার কানে মৃদু স্বরে একটা কথাই ভেসে এলো।

স্পর্শ বলছে, ‘ ওয়েলকাম টু মাই রুম মায়ারানী।’

এই প্রথম স্পর্শ আমার কানের কাছে একদম মুখ ঠেকিয়ে কথাটা বলেছে। স্পর্শের প্রতিটি গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়েছি। কেমন যেন অদ্ভুত ফিলিংস হলো আমার শরীর কাটা দিয়ে উঠল যেন। বুকের ধুকপুকানি জোরে জোরে বিট হচ্ছে।

রুমটা আহামরি খুব সুন্দর না আসলে আমার কেন জানি পছন্দ হলো না। খুব সাধারন একটা রুম। ইয়া বড় রুমে একটা ইয়া বড় খাট। একটা ড্রেসিং টেবিল। ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ড্রেসিং টেবিল ভর্তি মেয়েদের জিনিসে ভরপুর। একপাশে বইয়ের সমাহার। অসংখ্য বই আছে। আমি ঘুরতে ঘুরতে খাটের সোজা উপরের দেয়ালে তাকালাম দেয়ালে পেন্ডিং করা কিছু ফটো আছে সেখানে স্পর্শের একটা স্টাইল করা ফটো মনে হল এটা ভার্সিটিতে তুলা হবে। ঘুরতে ঘুরতে একটা আর্ট করা ছবি পেলাম ছবিটার মধ্যে চোখ আর্ট করা শুধু। চোখটা দেখে আমার চেনা চেনা লাগলো কিন্তু আমি চিনতে পারলাম না। চোখটা এতো সুন্দর করে একেছে যে চোখ দেখে আমি ও ক্রাশ খাইলাম। চোখ টা খুব নজর কাড়া না হলেও আট করাটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।যে কেউই এক দেখায় চোখের ওপর বড়োসড়ো ক্রাশ খাবে‌। শুধু চোখ আর্ট করে বড় করে বাঁধিয়ে রেখেছে। খুব যত্ন সহকারে তার নিচে আবার লেখা ‘মাই লাভ’। মাই লাভ দেখে আমি চোখ বড় বড় করে স্পর্শ দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ এটা কার চোখ আর কে আর্ট করেছে। আপনি নিজের রুমে এটা এতো যত্ন সহকারে রেখেছেন কেন? নিচে আবার লেখা ‘মাই লাভ’। এসবের মানে কি এই চোখের মেয়েটা কে কি আপনি ভালোবাসেন?’

স্পর্শ প্রেইন্টিং করা ছবিটার দিকে তাকিয়ে অনুভূতিমাখা গলায় বলল,

‘ হ্যাঁ। খুব বেশি ভালোবাসি এই মেয়েটাকে। যার চোখের মায়ায় পড়ে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।‌ প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা ক্ষণে শুধু মন চায় তাকে সামনে বসিয়ে চোখের দিকে অনন্তকাল চেয়ে থেকে চোখের তৃষ্ণা মিটাই। কিন্তু সেই খুব অভিমানী।’

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্পর্শের মুখে অন্য একজনের জন্য অসীম ভালোবাসা দেখে ডুকরে উঠলাম। এই জন্য উনি আমাকে এরুমে আসতে দিত না খালি বাহানা দেখাতো। এই মেয়ের জন্য। কে এই মেয়ে! কোথায় তার বাড়ি! আমাকে না বলে কতো ভালোবাসে তাহলে সেসব কি? আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি বিছানায় থপ করে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম মুখ ডেকে।

আগে তো উনি আমার শুধু হবু বর ছিল। এই সব আগে জানতে পারলে আমি নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারতাম। কিন্তু এখন তো উনি আমার স্বামী। এখন আমি কি করবো। কি সুন্দর অবলিলায় আমার সামনে আরেকজনকে নিয়ে ভালোবাসার বাক্য বর্ণনা করলো। কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে দিলাম।

স্পর্শ আমার দুহাত টেনে মুখ থেকে সরিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘ কি হলো তোমার? কাঁদছো কেন?’

আমি কিছু বললাম না। স্পর্শ আবার বলল,

‘ আরে চুপ করে আছো কেন? কথা বলো। হুট করে কাঁদা শুরু করলে কেন?’

আমি কান্না থামিয়ে স্পর্শ কে বললাম, ‘ অসভ্য। আপনি চরম অসভ্য লোক। খুব খারাপ। ব‌উ থাকতে অন্য মেয়েকে ভালোবাসি বললেন। এই যে এতো বছর ধরে আমার বাবার পেছনে পরে ছিলেন আমাকে ভালোবাসি বলে এখন বিয়েও করে নিয়েছেন। এখন বলছেন আপনি আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসেন। এইভাবে আমাকে ধোঁকা দিলেন।’

স্পর্শ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই চোখে জল খুব মানায়। কাঁদতে মানা করবো না। কাঁদো ইচ্ছে মতো। আমি তোমার ভেজা চোখের প্রেমে পরতে চাই মায়ারানী।’

বলেই স্পর্শ আমাকে বলল,’ পাগলী! প্রেইন্টিং এ এই অপরুপ সুন্দর অক্ষি দুটি চিনতে পারলে না। তোমার কি এই চোখ পরিচিত লাগে নি?’

‘ লেগেছে। আপনি আমার কোন পরিচিত কাউকে ভালোবাসেন!’

‘ গাধা। আসো আমার সাথে!’

স্পর্শ আমার হাত ধরে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে দাড় করিয়ে বলল, ‘ দেখতো চোখটা কোথাও খোঁজে পাও নাকি?’

আমি বোকা চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,

‘ পাগলী। নিজেকে যে কেউ চিনতে পারে না এটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না। তুমি জানো আমি এই তোমার চোখের প্রেমে পরেছিলাম প্রথম।’

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, ‘ এটা আমার চোখ।’

আমি আয়নার সামনে থেকে সরে আবার প্রেইন্টিং টার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমার চোখ এতো সুন্দর!’

আমি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি। নিজের চোখ নিজেই চিনতে পারিনি। ছিহ কি লজ্জা!

‘ চলো এবার‌। সবাই নাহলে ভাববে আমরা কি না কি করছি। কিন্তু তারা তো আর জানবে না আমার যে ব‌উ তিনি মিনিট এ মিনিট এ অভিমান করে কিছু করার সময়‌ই নাই।’

আমি লজ্জায় চুপ করে বেরিয়ে এলাম। মনে মনে দারুন হ্যাপি আমি।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here