চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️ #পর্ব_03+04

0
352

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_03+04
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা

আমি তরিৎ গতিতে স্পর্শের বুক থেকে সরে এলাম। মাথা নিচু করে ফেললাম আমি লজ্জায়। কতো কি ভেবেছি। স্পর্শের সামনে গেলে এই করব ওই করব। কথা বলবো। কিন্তু স্পর্শের সামনে এসে সব হাওয়া হয়ে গেছে। আমি নিজেকে যত‌ই সাহসী ভাবিনা কেন আমি এই উনার সামনে ভীতুর ডিম।
স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জা লাল নীল হচ্ছি।
তখন স্পর্শের গম্ভীর কন্ঠে একটা শব্দ কানে এলো,

‘ আর ইউ ওকে?’

আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। সীফা মানে স্পর্শের এক মাত্র বোন আর আমার একমাত্র ননদ। সীফা আমার বাহু ধরে বলল,

‘ ভাবি কেমন আছো?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ। চলো ভেতরে যাই।’

সীফাকে নিয়ে ভেতরে চলে এলাম। আমি শশুর শাশুড়ি কে দেখে তারাতাড়ি মাথায় কাপড় টেনে তাদের সালাম দিলাম। সবাই সোফায় বসে পরেছে সীফা আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আম্মু এসে আমাকে বলল সীফাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে।আমি সীফাকে নিয়ে আমার রুমে এলাম। আপু তখন আমার কাছে একটা পিন চাইতে এলো।

‘ মারু আমার একটা পিন পাচ্ছি না তোর একটা পিন দে তো।’

আমি পিন এনে দিলাম। সীফা আপুর কাছে গিয়ে বলল,

‘ ওয়াও মাশাআল্লাহ আপু তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।’

‘ তাই। ধন্যবাদ সীফা। কেমন আছো?’

‘ এইতো আলহামদুলিল্লাহ। আমার ভাবি কেও তোমার মতো শাড়ি পরাতে।’

‘ তোমার ভাবি তুমি বলো। আমি বললে কি আর তিনি শুনবে?’

আপু চলে গেল। সীফা আমার পেছনে পরলো শাড়ি পরতে বলছে আমি পরতে পারি না বলছি।
সীফা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিরবির বলল, ‘ কয়দিন পর না তোমার খালি শাড়ি পরেই ঘুরতে হবে। তোমার জামাই তো এটাই করবে আছি জানি। তাই আগে থেকে শিখে রাখো।’

আমি না শুনে বললাম, ‘ কিছু বললে।’

সীফা বলল, ‘ নাহ।’

আম্মুর ডাকে সীফা নিয়ে বাইরে এলাম। সবাই সোফায় বসে আছে। মাহিন ভাইয়ারাও চলে এসেছে। আমার করা শরবত দুই ট্রেতে করে একটা আমার ও একটা আপুর হাতে দিল। আমি কাচুমাচু মুখ করে এগিয়ে গেলাম। সবার আগে শশুর তারপর শাশুড়ি তার স্পর্শের সামনে এসে দাঁড়ালাম। স্পর্শ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আমি সামনে দাড়াতেই চোখ তুলে তাকিয়েছিল। তারপর হাত বাড়িয়ে শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিল। আমি সীফাকে দিয়ে পাশে দাঁড়ালাম। মাহিন ভাইয়ার মা শরবত খেয়ে জিজ্ঞেস করলো, শরবত কে বানিয়েছে। আম্মু বললো আমি করেছি। তখন আমার শশুর মশাই বললেন হাসতে হাসতে,

‘ এই না হলে আমার ব‌উমা। আমার যে ডাইভেটিক্স আছে সেই জন্য টক শরবত করেছে আমার ব‌উমা। কতো চিন্তা আমার জন্য। আমার ঘরে যাওয়ার আগেই আমার কতো খেয়াল রাখছে। দেখো মিনারা।’ আমার শাশুড়ি মাকে ইশারা করলেন। তার নাম মিনারা।

আমি বোকা চোখে সবার দিকে তাকিয়ে আছি।সাথে ঢোক গিলছি কেউ শরবত খাচ্ছে না শুধু স্পর্শর গ্লাস ফাঁকা তিনি খেয়েছে। এখন মিটিমিটি হাসছে। আমি কি সমস্যা বুঝতে পারছি না। সীফা আমার কানে এসে বলল,

‘ ভাবি তুমি তো শরবতে চিনি‌ই দাও নাই। এতো টক হয়ছে কি বলবো।’

কথাটা শুনে ভয়ে ভয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম আম্মু অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার কপালে শনি আছে আজ। আমি আম্মুকে বকতে বকতে শরবত করেছি তাই এমন আকাম টা করেছি। রান্নাঘরে এসে একটু খেয়ে দেখলাম খুব টক হয়েছে। স্পর্শ এমন টক শরবত ‌ই খেল। তাই ভাবছি। আমি দূর থেকে যত‌ই সাহসী আর হেমব্র তেমব্র করি না কেন কাছে গেল কিছুই করতে পারিনা দেখছি।

সেইদিন ও আর কথা হলো না শরবতের কাহিনী নিয়ে আমি আর তাদের সামনেই গেলাম না। যাওয়ার আগে শাশুড়ি মা আসে বিদায় নিয়েছে।আপু বিয়ে দুই মাস পর ঠিক হলো ততদিনে আপুর ফাইনাল পরীক্ষা ও শেষ হয়ে যাবে। দশটার দিকে সবাই চলে গেল।

.
কয়েকদিন পর কলেজে বসে আছি।আমি মিষ্টি নিঝুম । আজ সিনথি আর ধারা আসে নি।
ওরা দুজন আফসোস সুরে বলছে,
মিষ্টি বলল,
‘ কতো আশা করেছিলাম। আমাদের বেস্টুর জন্য একটা টিচার দুলাভাই পাইছি এখন আর টেনশন করা লাগবে না। পড়া লাগবে না। কিন্তু এখন তো দেখছি এই দুলাভাই পাইয়া আমাগো কপাল পুড়েছে। এই কয়দিনে যা প্যারা দিছে তাতে আমি নিশ্চিত এখন থিকা ম্যাথ নিয়ে সিরিয়ার পড়া লেখা না করলে ক্লাসে আর ঢুকা যাইবো না। কতো আশা করছিলাম সব এমনে ভেস্তে গেল।’

এবার নিঝুম বলল, ‘ মারু তুই আমার পাঁচশত টাকা ফিরত দে। কতো কিছু ভেবে সেইদিন টাকা গুলা ভাঙলাম। এখন তো সুবিধার জায়গায় অসুবিধা এসে ভর করেছে। আমার কি মন চায় জানস। আমার কলেজেই আস্তে মন চায় না। কিন্তু ওই যে আমার মা একটা কলেজে না আইলেই বিয়া দিব। ক‌ইয়া ভয় দেখায়‌‌! ন‌ইলে সত্যি আমি আর এই খাটাশ দুলাভাই এর অত্যাচার সহ্য করতে আসতাম না!’

মিষ্টি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, ‘ প্রত্যেক দিন আমাগো পড়া ধরবোই আর না পারলেই কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো। লজ্জায় আমি শেষ রে।’

আমি আর কি বলবো। যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। এখন এরা ও বুঝে গেছে এই দুলাভাইয়ের হাতে থেকে কোন উপকার পাওয়া যাবে না। এই কয়দিনে তা অন্তত বুঝিয়েছে স্পর্শ।

‘ ওই টাকা দে আমার তোরে খাইয়ে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করছি।’ বলেই নিঝুম আমার দিকে তেরে এলো।

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘ একদম আমাকে টাকা নিয়ে কথা শুনাবি না। আমি কি বলেছিলাম যে খাওয়া। তোরা নিজেরা ইচ্ছে করে সব করেছিস আমি শুধু গ্রহন করেছি। এখন আমাকে দোষারোপ করতে পারিস না।’

‘ তোর ওই জামাই আমাগো কি নির্যাতন করে এর সব শোধ তোর উপর তুলবো। দাঁড়া তুই।’

আমাকে আর পায় কে। আমি দৌড়াচ্ছি ক্লাস জুড়ে। নিজেরাই খাইয়ে এখন আমার উপর অত্যাচার করছে শয়তানি গুলা।

স্যার এসেছে দেখে থেমে যায় সব ঝগড়া ঝাটি।
নিজেদের সিটে বসে পরি। স্পর্শ ক্লাসে ঢুকে। সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। আজ স্পর্শকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। আজ উনি এ্যাশ কালারের শার্ট পরেছে সব সময়ের মতো হাতা গুটিয়ে রেখেছে। আমি ক্রাশ খেয়েছি কিন্তু ওনার মুখের গম্ভীর ভাব টা মানায় নি।

সবাই বসতেই স্পর্শ ফট করেই আমার দিকে তাকালো। আমি তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। কিন্তু ধরা আমি খেয়েছি মনে হলো। উনি সামনে থেকেই আমার দিকে আঙুল তাক করল। আমি চমকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি আমাকে ইশারা করছে নাকি অন্য কাউকে? আল্লাহ আমার দিকে যেন না হয় আবার কান ধরতে হবে ভাবতেই লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়। যাকে নিয়ে আমি রোমান্টিক কথা ভাবি প্রেম করি তার সামনে প্রতিদিন মান সম্মান ক্ষুয়াতে হয় ভাবতে মুখে কালো আঁধার নেমে আসে।
নিঝুম ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘ ওই তোকে স্যার ইশারা করেছে দেখিস নি। দাড়া না হলে কপালে শনি আছে কিন্তু।’

আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।

স্পর্শ একটু এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলল, ‘ হে ইউ তোমাকে ওইদিন বললাম না। সামনে বসতে আজ ও পেছনে ফ্রেন্ডদের সাথে বসে আড্ডা দিছো কেন?’

আমি চমকে উঠলাম,ওইদিন স্পর্শ আমাদের বলেছি আলাদা বসতে আর সামনে বসতে কিন্তু আজ ও পেছনে বসেছি।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ স্যার আসলে…

‘ আনসার মি! তোমার পেছনে বসেছো কেন? খালি পড়া চুরি করে গল্প করা তাই না। আর একদিন পেছনে এক জুট হয়ে বসতে দেখলে সবকটাকে বেঞ্চের উপর দাড় করিয়ে রাখবো।

আমি আতকে উঠলাম।হায় আল্লাহ বলে কি।

‘ সরি স্যার আমি সামনেই বসতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি সিট পাই নি। বিশ্বাস করুন তাই পেছনে বসেছি।’

‘ আগে আসতে পারো না। ভালো করে লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলে আগেই আসতে ইচ্ছে করে লেট করে আসলে তো সিট পাবেই না। তুমি উঠে আসো।’

আমি বিহ্বল হয়ে তাকালাম স্পর্শের দিকে। উঠতে বলছে কেন আমাকে কি ক্লাস থেকে বের করে দিবে নাকি‌‌।

‘ সরি স্যার আর পেছনে বসবো না প্রমিজ। আজকের মতো মাফ করে দিন। বের করে দিবেন না প্লিজ।’ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম।

‘ নো এক্সকিউজ সামনে আসো।’

আমি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে সামনে এলাম। লজ্জা আজ ক্লাস থেকেই বের করে দিবে এতো বড় অপমান। উনি এইভাবে অপমান করতে পারলো। খুব রাগ হলো আমার। উনার উপর কোন দিন সুযোগ পেলে এর শোধ‌ আমি তুলব‌ই।

সামনে এসে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাব তখন স্পর্শের গম্ভীর কন্ঠ আবার কানে এলো।

‘ কোথায় যাচ্ছ এইখানে বসো। এখন থেকে এই জায়গায় বসবে তুমি।’

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মাঝখানের সামনের সিটে জায়গা করে দিয়েছে। এই সিটে পাঁচজন আছে আমাকে দিয়ে ছয়জন করেই বসিয়েছে। চিকন চিকন তিনটা মেয়ে বসেছে তাই আমার জায়গাও হয়েছে। আমি এতোক্ষণ কি ভেবেছিলাম আর এখন কি হলো। নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি মারতে ইচ্ছা করছে।

#চলবে….

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৪
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা

পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। প্রতিবছর আমাদের কলেজে নববর্ষের অনেক বড় আয়োজন করা হয়। এ বছর ও সেই নিয়ে কলেজের মাঠে স্টেজ সাজানো হচ্ছে আমরা পাঁচ বান্ধবী ঘুরে ঘুরে তাই দেখছি। ক্লাস আজ হচ্ছে না। অর্ধেক স্টুডেন্ট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে তাই নিয়ে কেউ গান তো কেউ নাচ, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে একেক ক্লাসে আলোচনা প্রাকটিস করছে। আমরা পাঁচ বান্ধবী একজন ও কিছুতেই নাই। আমরা শুধু দেখার জন্য। উপভোগ করতে।
আমাদের মধ্যে শুধু এখন একটা আলোচনা হচ্ছে কাল কে কেমন করে সাজবে কি ড্রেস পরবে এই নিয়ে। মিষ্টি তো লাল বৈশাখী শাড়ি পরবে। ও এখন বাকিদের রাজি করাচ্ছে। ধারা, সিনথি রাজি হয়ে গেল। নিঝুম আমতা আমতা করে রাজি হলো। কারণ ওর নাকি লাল শাড়ি নাই ওকে ম্যানেজ করে দিবে মিষ্টি। এখন এই চারজন পরেছে আমার পিছনে আমি তো পরবোই না। এক কান দিয়ে ওদের কথা শুনছি আরেক কান দিয়ে বের করছি।
আমার এমন হেলাফেলা রিয়েক্ট দেখে ওরা চারজন কি যেন নিজেদের ইশারা করে থামলো।
আমরা পাঁচ জন স্টেজের কাছে চলে এলাম আমি লুকিয়ে ফুল চুরি করে নিলাম। আমার দেখাদেখি বাকি গুলো ও করলো স্কাইপের নিচে লুকিয়ে ক্লাসে চলে এলাম। সবাই চলে গেছে ক্লাস হবে না বলে। আমাদের পাঁচজনের ব্যাগ পাঁচ সিটে অবহেলায় পরে আছে। আহারে। আমাকে সেই দিনের পর থেকে প্রথম সিটের বসতে হয় ওরা ওদের ব্যাগ নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমি গোলাপ ফুল কানে দিয়ে বসে আছি।আর বেশুরা গলায় গান গাইছি‌। ফাকা ক্লাসে মাস্তি করছি আর কি। হঠাৎ আমার চোখ গেল বারান্দায়। একজোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি গান গাইতে গাইতে সিটের উপরে বসে পরেছিলাম। তারাতাড়ি নেমে এলাম। স্পর্শ সাথে সাথে কানে ফোন ধরে চলে গেল অন্য দিকে। আমি হতবিহ্বল হয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম।

.
পরদিন আমি লাল রঙা গাউন বের করেছি এটা পরেই যাব কলেজে। ওরা যেহেতু শাড়ি লাল পরবে আমিও ওদের সাথে ম্যাচ করে লাল পরবো।
কিন্তু আমার আশায় জল ঠেলে শয়তানি গুলো হাজির আমার বাসায় হয়েছে শাড়ি পরে রেডি হয়ে।

‘ এই তোরা আমার বাসায় আসবি কাল বললি না তো।’
আমি অবাক গলায় নিঝুম, মিষ্টি ,ধারা ও সিনথি ওদের বললাম।‌ বর্তমানে ওরা আমার বাসায় শাড়ি পড়ে বসে আছে।

নিঝুম বলল, ‘ তারাতাড়ি শাড়ি বের কর। দেখ আমার এক রঙের শাড়ি একরকম করে সেজেছি। কতো ভালো লাগছে।‌আমরা যে বেস্ট ফ্রেন্ড আমাদের সাজ দেখেই সবাই বুঝে যাবে। তারাতাড়ি তুই ও শাড়ি পর। নাহলে এই গাউনে কিন্তু তোকে আমাদের দলের লাগবে না।’

‘ তোরা কিন্তু জানিস আমি শাড়ি পরতে পারি না। তাই এটা নিয়ে জোর করবি না।’ আমি বললাম।

মিষ্টি বলল, ‘ এটা হবে না। আমরা পরিয়ে দেব‌ কিচ্ছু হবে না। আমরা আছি না। আমরা সামলাতে পারলে তুই পারবি না কেন। ঠিক পারবি।’

‘ পারবো না। আমি পরবো না।’

নিঝুম চলে গেছে আম্মুর থেকে শাড়ি নিয়ে এলো।
ওদের বলেও আমি নিস্তার পেলাম না। ওরা আমাকে শাড়ি পরিয়ে ক্ষান্ত হলো। এক প্রকার জোর করে ধরেই শাড়ি পরালো। আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে আমি বিছানায়। ওদের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।

‘ তারাতাড়ি চল দশটার উপরে বাজে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।’ মিষ্টি বলল।

আমি ওকে একটা কিল মেরে বললাম, ‘ আমি যাব না। এই শাড়ি পরে আমি কিছু তেই যাব না।’

নিঝুম বলল, ‘ তোকে যেতেই হবে এতো কষ্ট করে পরিয়েছি এবার নিয়ে তো যাব‌ই।’

‘ তোদের আমি দেখে নেব। ‘

‘ ওকে দেখ এখনি দেখ। তাও এবার চল।’ নিঝুম বলল।

ওদের জন্য আমাকে সাজতে ও হলো। ওদের মতো চুল খোলা ও রাখতে হলো। তারপর কলেজে এসে পৌঁছালাম এগারোটায়।
আম্মু আপু তো আমার খুব প্রশংসা করেছে।
কলেজে আসতেই দেখা হলো আমার চির শত্রু কাব্যের সাথে। কাব্য আমার থেকে এক ইয়ারের সিনিয়র। গত বছর ইন্টার পাশ করেছে। স্যারদের সাথে তার ভালো সম্পর্কের জন্য সব অনুষ্ঠানে এখনো তার আনাগোনা থাকে। আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছেলেটা আমার পেছনে পরেছে। দুই বার প্রপোজ করেছে আমি বলেছি আমি বিয়ে ঠিক আমি এসব প্রেম করবো না কিন্তু ছেলেটা আমার কথা বিশ্বাস ই করে না। কলেজ থেকে চলে যাওয়ায় আমি শান্তি পেয়েছিলাম কিন্তু অনুষ্ঠান হলেই এনার আগমন আবার ঘটে আর আমার পেছনে ঘুরতে থাকে।

আমাদের দেখেই এক প্রকার দৌড়ে এলো আর ঝটপট জিজ্ঞেস করলো, ‘ হাই, তোমরা কেমন আছো সবাই?’

আমি বিরক্তকর চাহনী দিয়ে সরে গেলাম।

নিঝুম ধারা উওর দিল।

কাব্য আমার কাছে এসে আমার পথ আটকে ধরে বলল,

‘ হাই সুন্দরী। এই কোন রুপে আমার সামনে এলে আজ তো আমি পাগল হয়ে যাব তো তোমার রুপে।’

আমি অসহ্য বলে উল্টা ঘুরে হাঁটা দিলাম।

‘ আরে চলে যাচ্ছ কেন যাও পথ আটকাবো না।ভেতরে যাও!”

‘ আপনার মতো ছেচড়া আমি জীবনে দেখি নাই‌। আমি এনগেজড বলার পরো বেহায়ার মতন পেছনে পরে আছেন।’

‘ এটা কে বেহায়াপনা বলে টা সুন্দরী এটাকে ভালোবাসা বলে। তুমি আমার হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যার আশ্রয় নাও আমি জানি‌।’

‘ ফালতু লোক।’

কথাটা বলেই সবাইকে নিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে স্পর্শ কে খুঁজছি। অবশেষে তার দেখা পেলাম। আমাদের সব চেয়ে রাগী ম্যাম আফরোজা ম্যাডামের সাথে কি যেন কথা বলছে। আজকে স্পর্শ পাঞ্জাবি পরেছে লাল টকটকে। ভারী চমৎকার লাগছে।

‘ দোস্ত আমার জামাইটারে কি সুন্দর লাগছে রে!’
আমি আবেগ পুলক হয়ে বললাম।

মিষ্টি বলল, ‘ বজ্জাত স্যার সুন্দর হলে কি হবে? তিনি আমাদের জীবন টা ত্যানা ত্যানা করে দিছে।’

‘ ওই শয়তান্নী একদম আমার জামাইরে বকবি না। নয়তো তোর নাকে ঘুসি দিমু।’

মিষ্টি আমারে ভেংচি কাটলো।

ফার্স্ট ইয়ারে একদল নাচ শুরু করলো আমরা সবাই তা দেখতে মগ্ন হয়ে উঠলাম। তখন আমার কানে এলো পেছনে বসা ফার্স্ট ইয়ারে কয়েকটা মেয়ের কথোপথন। তারা স্পর্শ কে নিয়ে কথা বলছে। ওই গুলা নাকি স্পর্শের উপর ক্রাশ খাইছে। স্যার বলে নাকি কিছু করছে না নাহলে প্রপোজ করে বসতো। আরেকজন বলছে স্যার তাতে কি।

আমি কান খাড়া করে নিজের হবু বরকে নিয়ে মেয়েদের কাড়াকাড়ি শুনছি। রাগে গজগজ করতে করতে পেছনে আগুন দৃষ্টিতে তাকালাম। আমার তাকানো দেখেই মেয়েদের আলোচনা সমাপ্তি ঘটেছে। তারা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার রাগে কারণটা তারা বুঝতে পারছে না। আমি নিজের মতো না বুঝিয়ে না বলেই চোখ দিয়ে রাগ ঝাড়লাম।

অনুষ্ঠান চললো সন্ধ্যা পর্যন্ত। শাড়ি পড়ে ঘুরঘুর কম করেছি। তাই ঠিক ছিলাম। আর ওই কাব্য আমার পেছনে সারদিন ঘুরছে। আসার আগে আমার মনে হলো কাধের পিন শরীরে গেঁথে গেছে কারণ আমার কাঁধ ব্যাথা করছে। আমি আর মিষ্টি ছাড়া তিনজন চলে গেছে। মিষ্টি কে নিয়ে ওয়াশ রুমে এসে কাঁধের পিন ঠিক করে লাগালাম। তারপর কুচি আর একটু ঠিক করে নিতে লাগলাম একা একা‌ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। তখন মিষ্টি বাথরুমে গেছে। কমন রুমে আমরা দুজনেই ছিলাম। হঠাৎ একটা পা আমার দিকে আসছে মনে হলো। বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। তাই আমি আচমকা ভয় পেয়ে যায় তড়িৎ গতিতে পেছনে তাকিয়ে দেখি কাব্য আমি চমকে উঠে বললাম,

‘ একি আপনি এখানে কি করছেন? মেয়েদের কমন রুমে এসেছেন কেন? এটা কেমন ভদ্রতা। বের হোন।’ চেঁচিয়ে উঠলাম।

‘ তোমার ওই বান্ধবী ক‌ই মারিয়া?’

‘ কেন আপনি ওকে দিয়ে কি করবেন?’

‘ কিছুই না ওকে দিয়ে আমার কি কাজ আমার তো তোমাকে দরকার। আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মারিয়া এতো সুন্দর লাগছে যে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।’

বলতে বলতে কাব্য আমার একদম কাছে চলে এলো। আমি ভয়ে মিষ্টি বলে চিৎকার করে উঠলাম। মিষ্টি সাথে সাথেই বাথরুমে থেকে বেরিয়ে এলো আর কাব্য কে দেখে রেগে গেল। মিষ্টি কে দেখে আমার ভয় কেটে গেল আর সাহস ফিরে এলো।

কাব্য মিষ্টি কে দেখে বলল, ‘ আরে মিষ্টি আমি তো তোমাদের একটা ইমপর্টেন্ট কথা বলতে এসেছি কিন্তু তোমার বান্ধবী তো সব সময় আমাকে দেখলে চেঁচামেচি করতে থাকে। কথা শুনতেই চায় না।’

আমি রেগে বললাম, ‘ একদম মিথ্যা বলবেন না। আপনি কোন খারাপ মতলবে এসেছেন আমি জানি এখন মিষ্টি কে দেখে অন্য সুর গাঁইছেন।’

‘ আমি তোমাকে পছন্দ করি। ভালোবাসি তাই বলে আমি চরিত্র হীন না যে তোমার সাথে খারাপ কিছু করতে আসবো। আমি তোমাদের এটাই বলতে এসেছিলাম। যে মিষ্টির বাবা এক্সিডেন্ট করেছে এই তো এখ‌নি মিষ্টির বাসা থেকে কল এসেছিল অফিসে। মিষ্টি কে তারাতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে। তোমাকে প্রথমে আমি মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম এজন্য ই।’

আমি কিছু ভাবার সময় ই পেলাম না। মিষ্টি ওর বাবার এমন খবর শুনে কেঁদে ফেলেছে আমার হাত ধরে মাঠে এলো। আমি ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছি‌। অফিসে গিয়ে সঠিক নাকি খোঁজ নেওয়ার কথাও ভুলে গেছি মিষ্টির কান্না দেখে। আমিও কাঁদছি বান্ধবীর কষ্ট দেখে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মিষ্টি আর আমার বাসা দুই দিকে আমি ওর সাথে যেতে চাইছি কিন্তু ও আমাকে বলল,

‘ দোস্ত তুই সাবধানে বাড়ি চলে তা আর আমার বাবার জন্য দোয়া করিস। তোকে আর এই সময়ে যাওয়ার দরকার নাই। কাল যাস আজ বাড়ি চলে যা সবাই চিন্তা করবে।’

মিষ্টি কে গাড়িতে তুলে দিলাম।
আমি একা এবার দাঁড়িয়ে আছি। আরো কয়েকজন স্টুডেন্ট আছে তখন আমি কাব্য কে দেখলাম আমার দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে।আমি অন্য দিকে চোখ দিলাম।
একটা অটো আসতেই উঠে পরলাম কোন দিকে না তাকিয়ে। গাড়িতে যে আমার বিপদ লুকিয়ে আছে একটু খেয়াল ও করলাম না।
অটোতে উঠে সামনে তাকাতেই দেখি কাব্য বসে আছে।
কাব্যকে দেখেই আমার বুক কেঁপে উঠলো। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলছি থামাচ্ছে না। ড্রাইভার কাব্যর সাথে আছে বুঝতে অসুবিধা হলো না।একটু পর গাড়ি থামল আমি নামতে যাব কাব্য নেমে পেছনে এলো আর টেনে আমাকে ভেতরে নিল আমি চিৎকার করে ওকে বকছি। কাব্য আমাকে ভেতরে নিয়ে দুই হাত শক্ত করে ধরে কাছে টেনে বলল,

‘ মারিয়া জান তোমাকে আমি সেই কবে থেকেই পছন্দ করি তুমি তো জানো। কতো প্রপোজ করলাম। সারা দিলা না। আজ তোমাকে এই শাড়ি পড়া দেখে আমি পাগল হয়ে গেছি। এতো হট লাগছিল তোমাকে। তোমার ওই নরম তুলতুলে পেট যখন দেখলাম আমি উন্মাদ হয়ে গেলাম একবার না ছুঁয়ে দেখলে আমি মরেই যাব। একটু আমার তৃষ্ণা মিটাতে দাও না। আমি তোমাকেই বিয়ে করবো তাই ছুঁতে দিতে ভয় পেয়ে না কেমন জান। লাভ ইউ।’

ওর মুখে এমন বিচ্ছিরি করা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল। রাগে ঘৃণায় শরীর আমার রি রি করে উঠলো। কাব্য ওর মুখ আমার দিকে এগিয়ে আনছে আমি হাত দিয়ে ওকে আটকাতে পারছি না পা তো আছে পা দিয়ে ওকে লাথি মারলাম নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ও গাড়ি থেকে বাইরে পরে গেল। আমি গাড়ি থেকে নামতে যাব তখন ওই শয়তান ড্রাইভার আমার পথ আটকালো।

#চলবে…,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here