#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_১১
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
শত চেষ্টা করেও স্পর্শ কে আমি বিছানায় থেকে উঠাতে পারলাম না। তিনি আমাকে থ্রেট দিয়ে দিল এখন আমাকেও বিছানায়ই ঘুমাতে হবে। রাগে দুঃখে আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। শেষে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এলো কোলে বালিশ বের করে মাঝখানে রেখে দিলাম। জীবনে প্রথম কোন পুরুষ মানুষের সাথে বিছানা শেয়ার করতে হচ্ছে আমি সারা রাত এসব ভেবেই ঘুমাতে পারলাম না। খালি মনে হয়েছে স্পর্শ যদি কোন সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে তখন কি করবো আমি তো তাকে বাধা দিতে পারবো না কারণ আমি তো এমনিতেই স্পর্শ এর উপর দূর্বল। কিন্তু আমি চাইনা তিনি এইভাবে আমার কাছে আসুক আমার অভিমান বুঝে আমার অভিমান ভাঙিয়ে আসুক আমি তো এটাই চাই।
ভয়ে কেটেছে রাতটা কিন্তু আমার ভয় পাওয়ার মতো কোন কাজ স্পর্শ করেনি। এক কাতে তিনি রাত পার করেছে। ঘুমিয়েছে কিনা জানি না।
আমি ভোরের আলো ফুটতেই উঠে বসে পরলাম। স্পর্শ এখনো ঘুমে কাতর ওইদিকে ফিরেই আমি মাথা উঁচু করে স্পর্শের মুখের দিকে তাকালাম। সাথে সাথে স্পর্শ চোখ মেলে তাকালো। আমি ছিটকে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
স্পর্শ ও উঠে বসে বলল, ‘ কি ব্যাপার মনে হচ্ছে কেউ ঘুমের সুযোগ নিতে চাইছিলো।’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ আপনি জেগে ছিলেন?’
স্পর্শ বলল, ‘ নাহ। আমি তো এই মাত্র জাগানা পেলাম। আর পেয়েই দেখলাম কেউ আমার উপর ঝুঁকে আছে।’
আমি লজ্জায় চুপ করে ছিলাম। এবার বললাম, ‘ আমি মুটেও সুযোগ নিতে চাইনি। আমি তো দেখছিলাম আপনি জেগেছেন কিনা।’
স্পর্শ আমার উওরে শুধু হাসলো কিছু বললো না। আমি সদ্য ঘুমে থেকে উঠা স্পর্শের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে রুমে থেকে বেরিয়ে এলাম।
এদিকে স্পর্শ আমার রুমটা খুব সুন্দর করে স্ক্যান করছে। দেয়ালের এক পাশে হাতে বানানো কাগজ দিয়ে প্রজাপতি লাগিয়ে রাখা। স্পর্শ একটা ডায়রি দেখে এগিয়ে গেল হাতে নিতেই আমি ছুটে এসে সেটা ছো মেরে নিজের হাতে নিয়ে নিলাম।
‘ আপনি আমার অনুমতি ছাড়া আমার জিনিসে হাত দিচ্ছেন কেন?’
ধুক ধুক বুক নিয়েই বললাম। ডায়রি দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো। কতো কিছু লিখে রেখেছি ডায়রিতে স্পর্শ কে নিয়ে সেসব ফাঁস হয়ে গেলে আমি আর লজ্জায় স্পর্শের সামনে আসতে পারবো না।
স্পর্শ বলল, ‘ এটা তোমার?’
আমি বললাম, ‘ হ্যা!’
‘ তাহলে পারমিশন নেওয়ার কি দরকার? তুমি পুরোটাই তো আমার। সো তোমার সব কিছুই তো আমারই।’
‘ একদমই না। আমার জিনিস শুধুই আমার। আমার জিনিস আমি শেয়ার করি না কারো সাথে।’
স্পর্শ আমার কথা শুনে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
‘ তাই। গুড গার্ল। আমাকে যে তুমি কারো সাথে শেয়ার করবে না আমি জানি। আমি তো শুধুই তোমার।’
আমি চোখ কপালে তুলে স্পর্শের দিকে তাকালাম।
‘ আপনি আজেবাজে কথা বলেন কেন?’
স্পর্শ হঠাৎই গলার স্বর গম্ভীর করে বলল, ‘ ওকে যাও স্যার হয়ে কথা বলে। কাল না তোমার ফিজিক্স এক্সাম! পরতে তো দেখলাম না। যাও পরতে বসো।’
বলেই স্পর্শ বাথরুমে ঢুকে গেল।
আমি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বিছানায় বসে পরলাম।
বিকেলে আপুরা চলে গেল তাদের বাসায় থেকে কয়েকজন আত্নীয় এসেছিল। স্পর্শের সাথে আর আমার সারা দিন কথা হয়নি। তিনি আব্বুর সাথে ছিল আর আত্নীয় দের আপ্পায়ন করেছে। সবাই চলে যাওয়ার পর দেখলাম আব্বু স্পর্শ কে থাকার জন্য অনুরোধ করছে কিন্তু স্পর্শ থাকবে না। তিনি চলে যাবে বলছে। আমি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি।
স্পর্শের কাল গার্ড আছে পরিক্ষায় তাই যেতেই হবে কাজ অনেক আব্বু হার মানলো স্পর্শ এর কাছে।
স্পর্শ কথার মাঝে আমার দিকে তাকালো। আমি চমকে ঘুরে দাড়ালাম। স্পর্শ তা দেখে মুচকি হাসে।
আমি রুমে এসে পায়চারি করছি। তারপর উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছি স্পর্শ বের হয়েছে কিনা। কারণ উনার গাড়িটা এখনো বাসার সামনে আছে। আমি জানালার পর্দা টেনেই হালকা ফাঁক করে উঁকি মারছি। মনে মনে চরম বিরক্ত হচ্ছি এখনো বের হচ্ছে না কেন? এতো সময় লাগে নাকি।
দরজা খুলার আওয়াজ হতেই চমকে পেছনে ঘুরে দেখি, স্পর্শ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি স্পর্শকে দেখে এমন ভয় পেলাম যেন চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। আবার মাথা জানালার দিকে দিতে গিয়ে কপালে ঠাস করে বারি খেলাম। ‘ আহ ‘ করে উঠলাম। স্পর্শ ছুটে এসে আমাকে টেনে সরিয়ে এনে উত্তেজিত গলায় বলল,
‘ আর ইউ ম্যাড। পাগলের মতো এদিকে ঘুরলে কেন ? দেখো তো এখন ব্যাথা পেলে।’
স্পর্শের আমার জন্য এতো উত্তেজনা দেখে আমি ব্যাথা ভুলে তার দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। স্পর্শ ব্যস্ত হয়ে আমার কপাল চেক করছে।
‘ আমি ঠিক আছি। এতো ব্যস্ত হতে হবে না।’
স্পর্শ শান্ত হলো। আর আমার থেকে দূরে সরে বলল,
‘ আমি তোমার থেকে বিদায় না নিয়ে যেতাম না। তাই এমন করে লুকিয়ে দেখার প্রয়োজন নাই। ‘
আমি মাথা নিচু আছি। স্পর্শ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। তারপর দ্বিতীয় বারের মতো স্পর্শ আমার কপালে চুমু খেয়ে নিলো টপ করে। তারপর আর কোন দিকে না তাকিয়ে চলে গেল।
.
পরদিন কলেজে পরিক্ষা শেষ করে,
ধারা বলল, ‘ মারু তুই এবার আমাদের আজকেই ট্রিট দিবি কিছু জানি না। বান্ধবীর বিয়েতে ছিলাম না সেই জন্য ডালব ট্রিট।’
নিঝুম বলল, ‘ তুই তো বান্ধবী নামের কলঙ্ক। আমাদের ফাঁকি দিয়ে সব শেষ করে ফেলেছিস।’
মিষ্টি বলল, ‘ তোর উচিত ছিল আমাদের ডাকা। আমি রাত হলেও তোদের বিয়ের পর্ব দেখতে যেতাম।’
আমি বললাম, ‘ বলার পরিস্থিতি থাকলে তোদের কে আমি বলতাম। আমি এতো শক খেয়েছিলাম যে কিছু করার ছিল না। তারপর তো রাগ এখনো সেই রেশ কাটেনি কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমার রাগ উবে গেছে। ‘
‘ সেসব কিচ্ছু জানি না এবার চল আমাদের সাথে। আজ ইচ্ছে মতো খাব।’ বলেই আমাকে টেনে ধরলো মিষ্টি।
আমি চিৎকার করে বললাম, ‘ ইম্পসিবল আমার কাছে আজ টাকা নাই। আর থাকলেও আমি খাওয়াবো না।’
নিঝুম বলল, ‘ খাওয়াতে তো হবে। নো ছাড়।’
‘ ছাড় দিতেই হবে। আমি কেন খাওয়াবো এতো খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে স্পর্শ এর কাছে যা।’
‘ তিনি স্যার না হলে কবেই চাইতাম। কিন্তু তিনি আমাদের জমদূত স্যার তার কাছে চাওয়ার সাহস আমাদের নাই।’
‘ ভীতুর ডিম তাহলে আর ট্রিট এর আশা করিস না তোরা।’
ওরা আমার কথার রিয়েক্ট করলো না জোর করে ধরে নিয়ে এলো রেস্টুরেন্টে। আমি চিল্লাচিল্লি করছি। টাকা আমি কিছুতেই দিব না। তাই গাল ফুলিয়ে আমি বসে আছি কিছু খাচ্ছি ও না রেগে।
এর মাঝে আমাদের চমকে দিয়ে স্পর্শ এলো। স্পর্শ এসে আমার পাশেই বসলো।
‘ কি ব্যাপার । বিয়ের ট্রিট মনে হচ্ছে।’
মিষ্টি ভয় পেয়ে বলল, ‘ স্যার আপনি এখানে?’
সব কটার খাওয়া অফ হয়ে গেছে।
নিঝুম ফট করেই বলল, ‘ আপনাদের বিয়ের খাওয়া তো খেতে পারিনি তাই রেস্টুরেন্টের খাবার খাচ্ছি।’
‘ ওহ আচ্ছা খাও। আমিও খেতে পারি নাই। নিজের বিয়ের খাবার তোমাদের সাথে আমাকে কি নেওয়া যাবে?’
‘ অবশ্যই স্যার। আজকের ট্রিট কিন্তু মারু দিচ্ছে। যত খুশি খান।’
‘হুম। বউয়ের টাকার খাবার খুব টেস্টি হয় শুনেছি। আজ তা টেস্ট করতেই হয়!’ বলেই ওয়েটার কে ডেকে স্পর্শ খাবার অর্ডার দিতে লাগলো। আমি চোখ বড়বড় করে দেখছি আজ আমাকে ফতুর করে ছাড়বে। চুপিচুপি আমি ব্যাগ হাতিয়ে দেখলাম সারে পাঁচ হাজার দুইশ টাকা আছে। এই টাকা গুলো আমার গেট ধরার। ভাই বোনেরা ভাগ করে পাঁচ করে পেয়েছি। আজ সব এই রেস্টুরেন্টে রেখে যেতে হবে আমি নিশ্চিত।
কোন ভাবে এই বিল স্পর্শ কে দেওয়াতে হবে।খাওয়া শেষে যখন আমাকে বিল দেওয়ার কথা বলা হলো আমি বললাম,’ আমি কেন একা দিতে যাব। বিয়ে কি আমার একা হয়েছে নাকি আপনি টাকা দিবেন। এই বিয়ের সব বন্দোবস্ত আপনি করেছেন আমি তার শামিল ছিলাম না তাই ট্রিট আপনি দিবেন।’
‘ সরি বউ এটা সম্ভব না। আজকে আমি বউয়ের টাকাতেই খেতে চাই আমি আজ টাকা দিতে পারবো না তোমাকেই দিতে হবে।’
‘ ধ্যাত।’
#চলবে….