#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে-নন্দিনী নীলা
এই বাসায় আসার পর দেখলাম সত্যি ছোট খাটো আয়োজন করা হয়েছে। ভাবির কাছে গিয়ে কথা বলতে লাগলাম। স্পর্শ আমাকে রেখে চলে গেছে নিজের রুমে। আমি ডয়িং রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছি। শাশুড়ি মা পায়েশ এনে দিল। আমি বরাবরই মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করি না। খাই না ধরতে গেলে কিন্তু শাশুড়ি মাকে তো তা বলতে পারবো না। তাই চেকে দেখার মতো একটুখানি মুখে দিলাম। কিন্তু এই এক পিরিজ পায়েস শেষ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার এমন খাওয়ার ভঙ্গি দেখে ভাবি বলল,
‘ মিষ্টি জিনিস পছন্দ না তাই না।’
আমি বললাম, ‘ না মানে আসলে কম খাই!’
‘ যতবার এসেছ কখনো তোমাকে মিষ্টি জিনিস খেতে দেখি নি। আমি তখনই বুঝে গেছি এসব পছন্দ না তোমার কিন্তু মা বুঝল না।’
‘ ভাবি তুমি যেহেতু জানো আমি খেতে পারবো না
তাহলে আমাকে হেল্প করো। সত্যি আমি খেতে পারছি না।’ অসহায় মুখ করে বললাম।
ভাবি হেসে উঠলো, ‘ দাঁড়াও দেখছি।’
ভাবি কিচেনের দিকে চলে গেল। আমি একাই বসে রইলাম সোফায়। আসার পর থেকে সীফা কে দেখিনি। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে সীফাকে খুঁজছি।ভাবি গেল যে আর এলো না আমি পায়েসের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছি। খেতে খারাপ হয়নি। কিন্তু আমি তো খেতে পারছি না।
এদিকে স্পর্শ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আমি পায়েসের বাটির দিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ এসে আমার ডান পাশে বসে পরলো শব্দহীন। আমি তার উপস্থিতি টের পেলাম না। স্পর্শ আমার হাত থেকে টেনে বাটি কেড়ে নিল। কারো হাতের টান পরায় আমি সেদিক পানে চেয়ে দেখি স্পর্শ। আমার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
‘ কি হয়েছে না খেয়ে তাকিয়ে থেকে কি গুনছো?’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ কই খাচ্ছি তো। কিন্তু আপনি বাটি কেড়ে নিলেন কেন?’
স্পর্শকে আমি সত্যি বললাম না। যদি কিছু মনে করে তাই। স্পর্শ আমার কথা শুনে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
‘ আমি খাব তাই। জানো পায়েস আমার খুব ফেভারিট তাই তো দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।’
‘ কিন্তু তাই বলে এটা কেন খাবেন? এটা তো আমি খেয়েছি এঁটো হয়ে গেছে!’
স্পর্শ আমার কথার গুরুত্ব দিল না। পায়েস মুখে দিয়ে খেতে লাগলো। আর চোখ বন্ধ করে বলল,
‘ আম্মুর হাতের পায়েস ওসাম তাই না বউ!’
আমি হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছি স্পর্শের দিকে। স্পর্শের মুখে হুট করে বউ ডাক শুনে আমার মেরুদন্ড বেয়ে শিতল হাওয়া বইতে লাগলো।
স্পর্শ আমার দিকে চেয়ে আছে উওর এর আশায় আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। স্পর্শ আমার স্বীকারোক্তি থেকে খুশি মনে বাটি হাতেই চলে গেল। আমি উনার যাওয়ার পানে চেয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। উনি আমার খাওয়া খাবার খাচ্ছেন। হায় কি ভালোবাসা। উনার পায়েস এতো পছন্দ।
স্পর্শ যাওয়ার পর মুহূর্তেই ভাবির আগমন ঘটলো।তিনি এসেই আমাকে বলল,
‘ মারিয়া দাও তো বাটিটা রেখে আসি। মা কে ম্যানেজ করে আসলাম। তোমার মাথা ব্যাথা তাই এখন কিছু খেতে পারছো না বলে। মা মেনেছে।’
আমি আতকে উঠলাম ভাবির কথা শুনে। ভাবিও অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,
‘ পায়েসের বাটি কই?’
আমি ঢোক গিললাম। এখন ভাবিকে কি বলবো। পায়েস সহ বাটি তো স্পর্শ নিয়ে গেছে। এটা ভাবিকে কি করে বলবো। ভাবি তো দেখেছে আমি খেয়েছি ওই বাটিতে থেকে পায়েস ওইটা স্পর্শ খেয়েছে জানলে তো খুব লজ্জা পাবো। এখন কি করবো আমি।
চিন্তিত মুখে ভাবির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবি একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।
স্পর্শ বাটি হাতে এগিয়ে এসে ভাবিকে দিয়ে বলল,
‘ এই নাও বাটি। এটা তো আমার কাছে ছিল।’
ভাবি একবার আমার দিকে তো একবার স্পর্শের দিকে তাকাতে লাগলো। তারপর স্পর্শের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ পায়েস শেষ করলো কে তুমি?’
‘ হুম। খুব টেস্টি ছিল পায়েস টা ভাবি।’
ভাবি বললো, ‘ বলো কি তুমি পায়েস খেয়েছ? তোমার তো পায়েস পছন্দ না। মা তো জোর করেও কখনো তোমাকে পায়েস খাওয়াতে পারে না। আর আজ চেটে পুটে খেলে।’
ভাবির কথা গুলো আমি চোখ কপালে তুলে শুনছি।এসব কি বলছে ভাবি। স্পর্শ এর পায়েস পছন্দ না। আর কিন্তু এই মাত্র না স্পর্শ পায়েসের বাটি নেওয়ার সময় কতো কি বললো। তার পায়েস ফেভারিট। তারমানে আমাকে মিথ্যা বলেছে কিন্তু কেন?
স্পর্শ আবার কাছে এসে ফিসফিস করে কি যেন বলছে, ‘ ভাবি আগে কি বউয়ের স্পর্শ করা পায়েস পেয়েছি নাকি যে খাব। ‘
‘ ওরে দুষ্ট আমার ভাই দেখি খুব বউ পাগল।’
আমি শুনতে পাচ্ছি না কিন্তু কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুজনে ফিসফিস করেই যাচ্ছে।
ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ দুজনের মিল আছে দেখছি।’
আমি বোকা চোখে তাকিয়েই ছিলাম। ভাবি বাটি হাতে চলে গেল।
স্পর্শ আমাকে বলল,
‘ বাসায় যাবে কখন?’
‘ মা বললেই চলে যাব। সীফা কোথায় ও কি এখনো বাসায় আসেনি!’
‘ না ও নাকি ফ্রেন্ড এর বাসায় গেছে।’
‘ আচ্ছা।’ বলেই চুপ করে রইলাম। স্পর্শ কে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে মিথ্যা বলল কেন? কিন্তু করতে মন চাইছে না।
স্পর্শ আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ আমাকে কিছু বলতে চাও?’
আমি বললাম, ‘ আপনি জানেন আমি কি জিজ্ঞেস করতে চাই। তাই নিজের ইচ্ছা হলে বলেন না হলে দরকার নাই।’
‘ ওকে আমার এখন ইচ্ছে করছে না।’
‘ ওকে।
আমি চুপ থেকে বললাম,
‘ আমি কি আপনার রুমে একবার যেতে পারি ?’
‘ হ্যা চলো।’
স্পর্শ রাজি হয়ে গেল।
আমি বিস্মিত হলাম স্পর্শের রাজি হওয়া দেখে। আমার আগের কথা মনে পরে গেল। স্পর্শের ছবি দেখার পর আমার ওনাকে পছন্দ হয়। তারপর প্রথম যেদিন এই বাসায় আসি আমি সম্পূর্ণ বাসা ঘুরে দেখি। সব রুমে গিয়েছিলাম শুধু স্পর্শের রুমটা লক করা ছিল। আর স্পর্শ রুমের ভেতরে ছিল। সবাই কতো ডাকলো তাকে আমি রুম দেখতে চাই তাই খুলার জন্য কিন্তু স্পর্শ দরজা খুললো না। তারপর যতবার এসেছি স্পর্শ হয় দরজা আটকে রুমে বসে থেকেছে। না হলে রুম লক করে বাসার বাইরে চলে যেতো। এইভাবে আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারি উনি আমাকে উনার রুমে দেখতে দিতে চায় না। আমিও আর দেখতে চাইতাম না। আজ অনেক দিন পর সেসব কথা মনে পরলো তাই ভেবেছি আজ সরাসরি আমি স্পর্শ কেই বলবো তার রুমে যেতে চাই আমি। আগে কখনো এই কথাটা তাকে বলা হয় নি। আজ দেখবো তিনি আমাকে যেতে দেয় কিনা।
স্পর্শ আমাকে আকাশ কুসুম ভাবতে দেখে বলল,
‘ কি ভাবছো চলো।’
আমি হতভম্ব চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ আপনি রাজি হচ্ছেন আমার তো বিলিভ হচ্ছে না। এতো সহজে রাজি কেন হলেন? আগে তো কখনো যেতে দেননি।’
‘ আগের কথা বাদ। আমি সব সময়ই যেতে দিতে চেয়েছি কিন্তু তুমি যেতে চাও নি।’
‘ আমি যেতে চাইনি?’ অবাক হয়ে বললাম। আমি যাওয়ার জন্য পাগল ছিলাম আর উনি কি বলছে আমি যেতে চাইনি!!
স্পর্শ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ আমার কাছে তো কখনো যাওয়ার কথা বলো নি। বলেছো কি?’
আমি মুখের আগায় আনা কথাটাও গিলে ফেললাম বলতে গিয়ে ও থেমে গেলাম। সত্যি তো বলছে আমি তো কখনো স্পর্শ কে বলি নি। আর বলতামই কি করে তিনি কি কখনো আমার সামনে আসতো? আসতো না।
#চলবে…..