#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ২৭
,
,
,
,
অন্ধকার রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে আদ্রি ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা লাল রক্ত শুকিয়ে গেছে।মাথার বাম সাইড ফুলে নিল বর্ন ধারন করেছে। সারা মুখে ঘামে ভিজে গেছে।বড্ড মায়াবী লাগছে।
ব্যাথায় এক হারে কাতরাছে আদ্রি। কিন্তু আদ্রির আওয়াজ শুনার মতো কেউ নাই হাই পাওয়ারের ড্রাগ দেওয়ার কারনে চোখ দুইটা মেলতেও পারছেনা।
আদ্রিঃনির কোথায় আপনি। আপনার আদর পাখির যে আপনাকে খুব প্রয়োজন (বিরবির করে)
হঠাৎ দরজা খুলতেই এক ফালি আলো এসে আদ্রির চোখে এসে পরে। অনেক সময় পরে চোখে আলো পড়ায় সব ঝাপসা দেখছে।
আয়াজ ধীর পায়ে এসে আদ্রির সামনে বসে।
আদ্রিঃপা পানি পা নি।
আয়াজঃপানি নিয়ে আয়।
আয়াজ এর গার্ড পানি এনে দিলে সে পানি আয়াজ আদ্রিকে পান করায় দেয়।
আয়াজঃখুব কষ্ট হচ্ছে তাই না মায়াবতী। কিন্তু কষ্ট টা তো তুমি নিজেই নিজের জন্য বেছে নিয়েছো যদি তুমি আমার ভালোবাসাটা গ্রহন করতে তাহলে এতোটা সাফার করতে হতোনা। বিনা দোষে তুমি ফেসে গেলে।কিন্তু চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো আমার রানী করে।
(আদ্রি কপালে লেগে থাকা রক্ত আঙুল দিয়ে মুছে ফেলে)
আদ্রিঃনি নির (বিড়বিড় করে)
আয়াজ নির এর নাম শুনে রেগে যায়। পাশে থাকা গ্লাস টা ফ্লোরে আছাড় মেরে দেয়।
আয়াজঃনির নির নির।আমি জানে মেরে ফেলবো এই নির কে।ভুলায় দিবো নির কে তোর মন মস্তিষ্ক থেকে তোর মন জুড়ে খালি একটাই নাম থাকবে সেটা হলো আয়াজ আয়াজ। তুই ভুলে যাবি যে কোন নির কোন সময় তোর জীবনে ছিলো তুই শুধু একজন কেই মনে রাখবি সেটা হলো আয়াজ। তোর অতিত বর্তমান ভবিষ্যত সব কিছুতে থাকবে আয়াজ। (ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)
হঠাৎ করে সেখানে গুলির আওয়াজ ভেসে উঠে।লং হুডি পরা দুইজন যুবক প্রবেশ করে সেখানে।
নিরঃসেটা কোন দিন ও সম্ভব হবে না আয়াজ। আদর পাখি শুধু তার নির এর।যেমন নীড় ছাড়া পাখি দীশা হীন তেমন ই এই নির ছাড়া আদর পাখি ও দীশা হীন।
,
,
,
কিছু বুঝলেন না তো চলেন ফ্ল্যাশবেক এ।
আদ্রি নির এর উপর বিশ্বাস করতো কিন্তু সে জানতে চেয়েছিলো কোন মেয়ে ফোন দিয়েছিলো কি উদ্দেশ্য তার। তাই নির কে না জানিয়ে রওনা দেয় কিন্তু নির তো নির তার আদর পাখি কে এমনিতে ছাড়বে।
সেদিন যখন ফোন দিয়েছিলো নির সব শুনেছিলো কারন আদ্রির ফোন নির অনেক আগেই টেপ করায়েছিলো যার কারনে আদ্রি কার সাথে কথা বলতো সব জানতে পারতো সব শুনে নির মনে করেছিলো আদ্রি তাকে ভুল বুঝবে হয়তো নির এর বিরুদ্ধে স্টেপ নিবে ওকে ঘৃণা করবে কিন্তু নির কে ভুল প্রমান করে আদ্রি নির কে জিজ্ঞেস করে।কিন্তু নির জানতো তার আদর পাখি ব্যাপারটার গভিরে যাবে সে শান্ত হবেনা।
কিন্তু নির জানতো না আয়াজ অন্য কোন প্লানিং করে রেখেছিলো। আয়াজ আদ্রিকে রেস্টুরেন্টের বাহির থেকে কিডনাপ করে। আর নির ছিলো রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে।আয়াজ আদ্রিকে ড্রাগস পুস করে তাকে তাদের বন্ধ ফ্যাকটারির রুমে রেখে বেরিয়ে যায়।
নির এর একটু সময় লেগে যায় জায়গাটা খুজে বের করতে।কারন যে জায়গায় আদ্রিকে রাখা হয়েছিলো সেখানে ট্রাকার কাজ করছিলোনা।
______
বর্তমানে,,
আয়াজ যেয়ে নির এর কলার চেপে ধরে।নির আদ্রিয়ান কে ইশারা করে বলে আদ্রিকে চেক করতে। আদ্রিয়ান ছুটে যায় সেখানে।
নির আয়াজ এর হাত নিজের কলার থেকে সরায়ে আয়াজ এর নাক বরাবর ঘুষি দেয় আয়াজ ও নির এর গালে ঘুষি মেরে দেয়। এক পর্যায়ে নির সুযোগ বুঝে আয়াজ এর মাথায় আঘাত করে।আয়াজ নিচে বসে পরে।
নির আয়াজ কে গুলি করতে যাবে তার আগেয় আদ্রিয়ান নির কে ডাক দেয়
আদ্রিয়ানঃনির আদ্রির পার্লস রেট একদম নাই হয়ে যাচ্ছে ওকে দ্রুত হস্পিটালে নিয়ে যেতে হবে।
নির আদ্রির কাছে যেয়ে আদ্রিকে কোলে তুলে নেয়
নিরঃআদর পাখি চোখ খুলো এই দেখো তোমার নির এসে গেছে এখনি তোমাকে হস্পিটালে নিয়ে যাবো তোমার কিছু হবেনা
আদ্রি আধো আধো চোখ খুলে নির এর মুখ টা দেখে হেসে দেয়।হাসিতে ছিলো এক আকাশ সমান বেদনা। ভালোবাসার মানুষ দের থেকে দূরে যাওয়ার ভয়।আপন মানুষ গুলোকে আর দেখতে না পাওয়ার বেদনা।
নির আদ্রিকে নিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য পা এগুতে নিলেই আয়াজ গুলি করে দেয়। গুলির নিশানা ভুলে লেগে যায় আদ্রির হাতে।
নির আর আদ্রিয়ান নিশ্বাস যেনো সেখানেই আটকে যায়। সময় টা যেনো স্থির হয়ে যায়।আয়াজ ও থমকে যায় সে ভাবেনি গুলিটা তার ভালোবাসার মানুষ টার রক্ত ঝরাবে।
আয়াজ কিছু বলতে যাবে তার আগেয় নির আদ্রিকে নিজের ঘাড়ে নিয়ে পকেট থেকে গান বের করে আয়াজ এর বুক ঝাঝড়া করে দেয়।
আয়াজঃভালোবাসি মায়াবতী খুব ভালোবাসি। আই লাভ ইউ মাফ করে দিয় পারলে এই অধম টাকে পারিনি তোমাকে আগলে রাখতে (অনেক কষ্টে কথা গুলো বলে মাটিতে লুটিয়ে পরে)
____
নির আদ্রিকে কোলে নিয়েই হস্পিটালে প্রবেশ করে রক্তে নির এর হাত মেখে গেছে।ছেলে হয়েও সে আজকে কান্না করছে।চোখ জোড়া বেয়ে পানি পড়ছে অবিরাম।
আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি স্ট্রেচার নিয়ে এসে আদ্রিকে শুয়ায় দেয়।ডাক্তার রা ও চলে আসে।নাম্বার ওয়ান বিজন্যাস ম্যান এর কোলে ছিলো দেখে বিনা ফর্মালিটি করেই ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো।
___
ওপরেশন থেয়াটারের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো নির। আদ্রিয়ান ও পাথরের মতো বসে পড়লো চেয়ারে।
নিরঃএমনটা হওয়ার কথা ছিলোনা আদর পাখি।এই ভাবে যেওনা ছেড়ে। তুমি ছাড়া যে আমি একা। তুমি বিহীন এই নির জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। আ…… (চিৎকার করে উঠে)
উপস্তিত সব ডাক্তার নার্স পেশেন্ট থমকে যায়। এতোটা ভালোবাসা আদৌও কেউ বাসতে পারে জানা ছিলোনা কারো। সবার চোখেই পানি চলে আসে।কেউ জানেনা আদর পাখি কে কি সম্পর্ক এই ছেলেটার সাথে তার কিন্তু সবার মন থেকেই বেরিয়ে আসে
এই মেয়েটাকে সুস্থ করে দেও আল্লাহ।
আদ্রিয়ান এর চোখের সামনে ভেসে উঠে ছোট আদ্রির ছবি।সদ্য ফুটন্ত গোলাপ এর ন্যায় কোমল বাচ্চাটা কে যখন আদ্রিয়ান এর কোলে দেওয়া হয়েছিলো আদ্রিয়ান খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছিলো।সব সময় নিজের কাছে রাখতো বোনকে।কিন্তু তখনি ফুটে উঠে বোনের কান্না মাখা মুখ গুলো। রোজ রোজ অপমান হতে দেখেও চুপ করে শুনে যাওয়ার অপরাধ।
আদ্রিয়ানঃফিরে আয় সোনা বাচ্চা ভাইয়া প্রমিজ করছে আর কোন দিন এমন হবে না। তুই না আমার সব কথা মানিস ফিরে আই বোন আমার। ভাইয়ার যে তোকে ছাড়া আর কেউ নেই। ফিরে আয় কলিজাটা(মনে মনে)
১ ঘন্টা পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।
নির এর যেনো জানে পানি ফিরে আসে।
নিরঃডাক্তার আমার আদর পাখি কেমন আছে। ঠিক আছে তো বলেন না।(বাচ্চাদের মতো)
ডাক্তারঃআমি জানিনা আমি কি বলবো একদম ম্যাজিকেল ছিলো ব্যাপারটা। আমরা ডাক্তার রা আশা ছাড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু পেশেন্ট ছাড়েনি সি ইজ এবসুলেটলি ওল রাইট। কিছু মাস লাগবে হাত ঠিক হতে ফুল বেড রেস্ট এ রাখবেন উনাকে। ওল দা বেস্ট ইয়াং ম্যান।
নির যেনো ভাষা হারায় ফেলেছে।কি ভাবে আল্লাহ কে শুকরিয়া করবে তার জানা নাই। আদ্রি জ্ঞান ফিরতে দেরি আছে ওইদিকে এশার আজান এ দিয়ে দিয়েছে। জীবনে প্রথম বার নির গেলো মসজিদে শুধু ওই একা না আদ্রিয়ান ও গেলো।
দুইজনে নামাজ পরে আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া জানিয়ে আদ্রিয়ানকে হস্পিটালে পাঠিয়ে গেলো নিজের গোডাউনে।
হাত পা দড়ি দিয়ে পরে আছে আয়াজ এর আম্মু। উনাকে আগে ধরে তার কাছ থেকেই ঠিকানা যেনে আদ্রির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলো নির।
আয়াজ এর আম্মুর পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে।ওকে দেখে নির এর চোখ জোড়ায় আগুনে পরিনর হলো যেনো চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে।।।।
চলবে!!!!