#শুভ্রময়_পুরঁজন
পর্ব_১৬
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা
১৬.
আদ্রিয়ান খানিক ঝুঁকে নাকের শোচনীয় দশা চোখদুটি কুঞ্চিত করে পর্যবেক্ষণ করে চলছে। খাড়া নাকের থেতলানো দশা; মনে হচ্ছে নাকের জায়গাটায় কেউ মাটি নিয়ে সজোরে সশব্দে লেপে দিয়েছে। চাইলেই প্লাস দিয়ে চিপা দিয়ে সেই মাটির নাক স্থানচ্যুত করা যাবে। নাকের এই নিরতিশয় মন্দ দৃশ্যতা ভালোই লাগছে। মেয়েলি হাতের চাবকানি বলে কথা।
আদ্রিয়ান তুলোয় স্যাভলন নিয়ে আলতোভাবে নাকের সংস্পর্শে আনতেই আরসালান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠলো।
“আ!”
আদ্রিয়ানকে ঠেলে সরাতে সরাতে বললো,
“একজন নাক গুঁতো মেরে ফাটিয়েছে, আরেকজন নাকের অবশিষ্টাংশ মাংস, হাড়গুড় তুলে নিতে ব্যস্ত। সরতো।”
আরসালান বিছানা থেকে ছোট আয়নাটা হাতে নিয়ে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে নাকটা আলগোছে টিপে টিপে দেখছে। আর আহ উহ ধ্বনি ধ্বনিত করছে। আদ্রিয়ান শাল খুলে ভাইয়ের পাশে এসে বসলো। দুই ভাই বাহ্যিক গাঠনিক দিক দিয়ে অনেকখানি একরকম মনে হলেও আদ্রিয়ানের চেহারায় বাবার কল-কৌশলবর্জিত, সারল্যে পূর্ণ লক্ষণীয়তা মুখায়বে সুস্পষ্ট। আর আরসালান আদ্রিয়ান থেকে খানিক লম্বা এবং মায়ের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্নেহপরায়ণ শুভ্রতম হাসির অধিকারী। ওষ্ঠাধরের নিষ্পাপ হাসি, সঙ্গে জন্মগতভাবে অর্জিত ধারালো চাহনি। কারও অন্তরে গাঢ়ভাবে ক্ষত সৃষ্টি করা ন্যায়।
আদ্রিয়ানের দৃষ্টির ভাষা খানিক উদ্বেগজনক, খানিক উত্তেজনাময়। তবে চিন্তান্বিত হওয়ার হেতু ভাইয়ের সাময়িক চ্যাপ্টা নাক নাকি চ্যাপ্টা আকৃতি দানকারী মহীয়সী ব্যক্তিটির জন্য– তা আপাতত শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
আদ্রিয়ান উৎকণ্ঠিত হয়ে জিগ্যেস করলো,
“আচ্ছা ভাইয়া, এতো কিছু থাকতে ওতো দূর অবধি হাত প্রসারিত করে তোমার নাক চেপে ধরলো কেন?”
আরসালান ছোট আয়নাটি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো,
“এতো কিছু মানে? এতো কিছু বলতে তুই কি বুঝাচ্ছিস বেয়াদপস? আর ম্যাডাম তোর। তোর ম্যাডাম সাহেব যে দয়া করে আমার কনীনিকা দুটো অক্ষত অবস্থায় ফেলে গেছে তাই তো অনেক। আবার দেখা হলে দেখবি দুই হাতে দুই মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি নাকটুকু টুক করে কামড় দিয়ে গিলে ফেলবে। আর মোমবাতির প্রজ্জ্বলিত শিখা চোখ বরাবর নিক্ষেপ করবে।”
আদ্রিয়ান কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“তোমার উনাকে ভয় দেখানো একদম উচিত হয়নি ভাইয়া। এখন তো শুধু নাক ফাটিয়েছে। হিতে বিপরীতও তো হতে পারতো। ভয় পাওয়ার ফলে উনার যদি কিছু হয়ে যেতো!”
আরসালান মর্মপীড়ায় শোষিত চাহনি ফুঁটিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। ছিঃ, এই ভাইকে সে এতো ভালোবাসতো। ছোটবেলা এই ভাইয়ের ছিরিৎ ছিরিৎ শব্দসহিত টয়লেট করে ভরিয়ে ফেলা ন্যাংগোট খুলে পরিষ্কার করতো। গন্ধ যেনো বিশ্ব-ভুবনের সমস্ত ময়লার স্তুপ, তবুও করতো। গ্রামে গেলে কতোবার বুকে পাথর চেপে ভাইয়ের ঘাড়ে ধরে বানরের মতো ঝুলিয়ে পানিতে চুবিয়েছে। এই চুবা খেতে খেতেই তো গর্দভটা সাঁতার শিখতে পেরেছে। সেই ভাই আজ সব অবদান ভুলে একটা মেয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে। আরসালানের বুক চিরে এক মাইল সম দীর্ঘশ্বাস নির্গত হলো।
তখনই তাদের জননীর আগমন ঘটলো।
আদিলা বেগম এসেই দুই ছেলেকে ঘেঙচানো চাহনি উপহার দিলেন। কোমরে হাত রেখে জিগ্যেস করলেন,
“কিরে নাক ফাটালি কিভাবে? কিছুর সঙ্গে ভারি খেয়েছিস নাকি কারও সঙ্গে ঘষা মেরে এসেছিস?”
আদ্রিয়ান, আরসালান দুই ভাই একসঙ্গে হেসে ওঠলো।
আরসালানও ঠিক তার মায়ের অনুরূপ ভঙ্গিমায় কথা বলে। হেসে-খেলে, বোকা-সোকা ভাবভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে সামনের ব্যক্তিটিকে এমন মারপ্যাঁচে ফেলে যে ব্যক্তিটি তৎক্ষণাৎ জায়গা পরিত্যাগ করতে ঝটপট করে। যতোই কঠিন প্রকৃতি বা রাগী ব্যক্তি হোক; কথার কুন্ডলীতে আটকে মূহুর্তেই ফ্যাকাশে চেহারায় চোখ পিটপিট করে মনে মনে উচ্চারণ করে, ‘পাতাল ফাঁক হও, আমি ঢুইক্কা যাই!’
আর আদ্রিয়ান হলো বাবার মতো স্বল্পভাষী। পড়ানো ছাড়া অন্য সময় প্রয়োজনের অধিক দুই-একটা শব্দ উচ্চারিত হতেই তার কথার ছন্দ বিচ্ছিন্ন হয়। সুর হারিয়ে ফেলে, থতমত খায়। সেকেন্ডে এতবার ঢোঁক গিলে যে মনে হয়, এই বুঝি দাঁত-মুখ-জিহ্বা বের করে স্ট্রোক করে বসবে। তবে আদিলা বেগমের বিশ্বাস তার ছোট ছেলেটির জীবনে এমন একজন মানুষ আসবে যাকে সে সারাক্ষণ কথার তোড়ে উন্মাদ করে ফেলবে। কোলে চেপে বসিয়ে হলেও বকবক অব্যাহত রাখবে।
আদ্রিয়ান লাজুক হেসে মায়ের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে বললো,
“তোমার বউমাকে দেখতে গিয়ে।”
আদিলা বেগমের মুখ উজ্জ্বলতায় পরিপূর্ণ হয়ে আঁখি দুই ঝিলিমিলি করে ওঠলো। আনন্দিত গলায় জিগ্যেস করলেন,
“বউমা! কিন্তু বউটা কার?”
আরসালান বিস্তৃত হাসি দিয়ে বললো,
“আমরা দুজন মিলে পরিকল্পনা করেছি যে এক মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে কিঞ্চিৎ বাঁকা হয়ে থাকবো। পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ পর্যবেক্ষণ করা– মেয়েটি রিয়াজকে চুজ করে নাকি সাকিব খানকে।”
“তা তোদের মধ্যে রিয়াজ কে?”
“পূর্ণিমা যার গলায় ঝুলাঝুলি করে মালা পরিয়ে উড়াল দেবে সে-ই রিয়াজ। অন্যজন সাকিব খান থেকে ডিরেক্ট বাপ্পারাজ।”
আদিলা বেগমের মাথায় হাত!
“হায় আল্লাহ! তো মেয়ে দেখতে কেমন? আবার এর মধ্যেও পূর্ণিমা, মৌসুমি, কাবেরী ধাঁধা ঢুকিয়ে দিয়েছিস নাকি?”
আদ্রিয়ান অনুচ্চ কণ্ঠে বললো,
“মা উনি দেখতে শ্যামলা।”
মুহুর্তেই আদিলা বেগমের আঁখিজোড়া সঙ্কুচিত হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড চিন্তানিমগ্ন থেকে মুখায়ব পরিবর্তন করে জিগ্যেস করলেন,
“শ্যামলা মানে শ্যামলবতী। চুল নিশ্চয়ই অনেক লম্বা?”
আদ্রিয়ান ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
“কে জানে.. সবসময় তো বিশাল হিজাব মাথায় জড়িয়ে রাখে। চুল আছে কি নেই তা-ও স্বয়ং উনি ছাড়া কারও জানার সাধ্য নেই।”
আদিলা বেগম সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে ছেলেদের অবলোকন করে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“শ্যামলবতীর সঙ্গে পরিচয় তোদের দুজনের মধ্যে কার মাধ্যমে?”
আরসালান আদ্রিয়ানের মাথায় মৃদু চাপড় মেরে সতর্কীকরণ চাহনি নিক্ষেপ করে তাকালো।
আদিলা বেগম এগিয়ে গিয়ে আলতো করে আরসালানের গালে থাপ্পড় মারলো।
“মায়ের কাছে লুকাতে চাইছিস? মায়ের কাছ থেকে দোয়া নে। না হলে পরে দেখবি দুজনেই বাপ্পারাজ হয়ে বসে আছিস।”
আরসালান বাঁকা হেসে বললো,
“কি যে বলো মা। তোমার দুই সুকুমার রাজপুত্রকে প্রত্যাখান করার সাধ্য কী কারও আছে?”
আদিলা বেগমও ছেলের মতো বাঁকা হাসি হেসে বললেন,
“শ্যামলী সুন্দরীরা হয় সবচেয়ে রহস্যময়ী রমণী। প্রথম ও দ্বিতীয়তে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে তারা ঝপাৎ করে তৃতীয় উপান্তরে উপনীত হয়।”
ঘরে উপস্থিত হাতল যুক্ত চেয়ারটি টেনে এনে দুই ছেলের সামনে রাখলেন। এবার আরাম করে সেখানে বসে বলতে লাগলেন,
“শোন, এই শ্যামলবতী যারা আমাদের সমাজ যাকে কালো-কাইল্লা বলে অভিহিত করে, তারা একেকটা ট্রেজার। কালোমানিক। ফর্সা, ধবধবে রঙের জমকালো রূপ দেখে আমরা চোখের আকৃতি বিশালাকার করে তাকাই। ফলে বড় বড় করে তাকিয়ে থাকার দরূন তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সূক্ষ্ম রেশ যা সৃষ্টিকর্তা তার মুখায়বে এঁকে রেখেছেন তা আমরা ধরতে পারি না। কিন্তু শ্যামলা বা আমাদের সমাজের নির্দিষ্ট করা ‘কাইল্লা’ সম্মুখে দৃশ্যমান হলেই নিজেদের অজান্তে চোখ সঙ্কুচিত হয়ে আসে। সব কালোরাই ভালো এবং সব ফরসারাই খারাপ– এমনটা কিন্তু বলছি না। কিন্তু ঐ কুঞ্চিত হয়ে আসা চোখ দিয়ে সেই কৃষ্ণকায় চেহারায় সতর্ক দৃষ্টি রাখলেই এই কালো মুখের ব্যক্তিটি পরশপাথর সমতুল্য নাকি কালো স্যাঁতসেঁতে গন্ধযুক্ত মাটির মতো তা কিছু হলেও ধরতে পারি। কালো হলো স্বতন্ত্র একটি রঙ যার মধ্যে অন্য কোনো আলো বিকিরণ বা প্রতিফলন করে না। এমন ইউনিক রঙের যে অধিকারী তাকে পর্যবেক্ষণ করে চাইলেই বুঝা যায় তার অন্তর কী এই রঙের মধ্যে নিহিত বৈশিষ্ট্য ন্যায় স্বতন্ত্র? না, এই রঙের দৃশ্যমান দর্শন অভিজ্ঞতা ন্যায় কৃষ্ণকায়, গুহায় তলিয়ে যাওয়ার মতো কালো? কিন্তু ফর্সার ক্ষেত্রে? হোক মন্দ, আমাদের কর্ম ফকফকা পুরুষ-রমণী দেখলেই আলগোছে চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে পলক বন্ধ করে দেওয়া। ফর্সার ফকফকা আলোতে আমরা বেশিরভাগই চোখে ঝাপসা দেখি। ইচ্ছাকৃত ঝাপসা যাকে বলে।”
দুই ভাইয়ের চোখের পলক পড়ছে না। হিমায়িত দৃষ্টিতে জাদুমুগ্ধ হয়ে দুই ভাই মায়ের কথা শুনে চলছে। মা আসলেই চমৎকার। সবসময় এতো সুন্দরভাবে রাজকীয় ভঙ্গিতে কথা বলেন, যে বিষ্ময়াবিষ্ট হয়ে সর্বক্ষণ শুনতে ইচ্ছা জাগে।
আদিলা বেগম ঘুরে রুম থেকে বের হতে হতে বললেন,
“শুভ্র, আমার ঘরে একটু আয় তো।”
দুই ভাই পুলকিত হয়ে অবাক দৃষ্টিতে মায়ের রুম থেকে প্রস্থান নেওয়া দেখে। এরপর আদ্রিয়ান খানিক নড়েচড়ে ভাইয়ের নাকে আলতো করে হাত বুলায়। আরসালান ধমকে উঠলে আদ্রিয়ান মায়ের পিছন পিছন বেরিয়ে সে-ও রুম ত্যাগ করে।
আদ্রিয়ান পকেট হাতরে ফোন বের করে তার ভাইয়ের নাকের কার্টুন আকৃতি দানকারীকে কল করলো। দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়। রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে ঠান্ডা কণ্ঠস্বরের সালাম ভেসে আসে।
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম, ম্যাম।”
আদ্রিয়ান দ্বিধাপূর্ণ কণ্ঠে জিগ্যেস করে,
“আপনি ভালো আছেন ম্যাডাম?”
ওপাশ থেকে আরও শীতল কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে জবাব এলো,
“জি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন?”
“জি, জি ম্যাম। ম্যাম কী ব্যস্ত ছিলেন? অসময়ে কল করে বিরক্ত করিনি তো?”
“জি, খানিক বিরক্ত করেছেন। বাসায় যাচ্ছি। তার জন্য গোছগাছে ব্যস্ত ছিলাম।”
আদ্রিয়ান সন্তর্পণে ঢোঁক গিললো। এভাবে কেউ সরাসরি বলে যে বিরক্ত করেছে? তার উপর বরফের ন্যায় শীতল কণ্ঠ যেনো এই বরফ কণ্ঠের নিচে তাকে চাপা মেরে শ্বাসরোধ করে প্রাণপাখির দেহত্যাগ করাবেন।
“ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন?”
“বরিশাল যাচ্ছি।”
আদ্রিয়ান ‘কিহ!’ বলে চিৎকার করে উঠে সঙ্গে সঙ্গেই মুখ চেপে ধরলো।
আদ্রিয়ান মৃদু স্বরে বললো,
“কিন্তু ম্যাম এক্সাম পেপার দেখা তো এখনও সম্পন্ন হয়নি। আর শাহিদুল স্যার বলেছিলেন থার্ড ইয়ারের মলিকুলার জিনেটিকস এন্ড ক্লিনিকাল বায়োকেমিস্ট্রির পেপারগুলো রি-চেইক দেওয়ার জন্য। ওই যে ঝুট-ঝামেলা বেঁধেছিলো, তা সমাপণের জন্যই…”
ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
“আমি পেপারস সঙ্গে করেই নিয়ে যাচ্ছি স্যার। আর কি বলবো! মলিকুলার ও ক্লিনিকালের দুই গ্রুপের পেপার পোলাপান যথেচ্ছভাবে একসঙ্গে পিন করে ফেলেছে। এক প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে আরেক প্রশ্নের উত্তর। পিন বিচ্ছিন্ন করে পৃষ্ঠা, উত্তর অনুবীক্ষণ দিয়ে খুঁজে খুঁজে জুড়তে হচ্ছে। এসব পোলাপাইন চটকিয়ে গাল-মুখ লাল করে ফেলা উচিত! যাইহোক, সঠিক সময়েই কাজ সম্পূর্ণ হবে। আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না।”
“আচ্ছা ম্যাম।”
বলেই আদ্রিয়ান দ্রুত কল কেটে দিলো। এরূপ ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বরে তার ঠিক ঘাম ছুটে গেছে। সে সামনে থাকলে নিশ্চিত ওসব ত্যাঁদড় পোলাপান ভেবে তাকেই লাল করে দিতো, ঠিক তার ভাইয়ের মতো!
(চলবে)