শুভ্রময়_পুরঁজন পর্ব_২৩

0
263

#শুভ্রময়_পুরঁজন
পর্ব_২৩
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

২৩.
বাড়িতে পৌঁছে দানীন সর্বপ্রথম তার বোনের রুমে গেলো। গিয়েই পারিশাকে জড়িয়ে ধরলো,
“কেমন আছিস পারিশা?”
পারিশা কপট রাগ নিয়ে বললো,
“তোমার সঙ্গে কথা বলবো না আপু। তুমি এসেছো কেন? আমি চলে যাওয়ার পর আসতে।”
দানীন তার গালের সংস্পর্শে নিজের গাল নিয়ে বললো,
“এতো অভিমান বোনের ওপর?”
পারিশা কেঁদে দিলো,
“বললাম তো কোনো কথা বলবো না। এই এতোদিন দেখা নেই, কথা নেই। ফোন করলেও রিসিভ করো না। ব্যস্ত মানুষ তুমি। এতো ব্যস্ততা নিয়ে তোমাকে আসতে কে বলেছে।”
দানীন পারিশার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“যোগাযোগ নেই তো কি হয়েছে। আমি তো সবসময় মায়ের থেকে তোর খবরাখবর নিই। যাহ, বলিস না কথা। এখন আমি আমার বোনপোর সঙ্গে কথা বলবো।”
বাবুর দিকে দু’হাত প্রসারিত করে বললো,
“দেখি দেখি আসো তো বাবু।”
পারিশার পাশ থেকে বাবুকে তার কোলে নিতেই দুনিয়া কাঁপিয়ে ভ্যা ভ্যা শুরু করলো।
দানীন বিস্ময়বিহ্বল হয়ে বললো,
“আরে! এই পিচ্চি না একটু আগে কি শান্ত ছিলো? পারিশারে তোর এই ছেলে তো দেখি তোর বড়ো ছেলের থেকেও সাংঘাতিক হবে। তৎক্ষণাৎ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়।”
পারিশা হেসে দেয়।
বাবুর সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দানীন রান্নাঘরের প্রবেশ করলো। মায়ের পিছনে এসে শব্দহীন দাঁড়িয়ে রইলো। দিলরুবা খাতুন দানীনের উপস্থিতি টের পেয়েও একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানেন তাকেই আগে কথা বলতে হবে। আগে মেয়েটা হুটহাট গলা জড়িয়ে ধরতো। রাগ করলে কেঁদে মায়ের কোলে মাথা রাখতো। আর এখন যেনো অনুভূতিশূণ্য, অদৃশ্য এক ব্যক্তি সত্তা। আঁধারের রঙ দ্বারা নির্মিত প্রাচীরে সে আবদ্ধ। এই প্রকান্ড বিদঘুটে প্রাচীর তার নিজের দ্বারা পরিচালিত। কেউ কী আদৌ এই প্রাচীর অতিক্রম করে আঁধারের হৃদয় কাঁপানো রঙ ধূলিসাৎ করে এই মিষ্টি মেয়েটিকে রঙধনুর সাত রঙের খেলা দেখাবে? দেখাবে কী আকাশের ভাসমান মেঘের লুকোচুরি খেলা? চন্দ্রপ্রভার স্নিগ্ধতার অরূণে অবগাহন করার প্রাণোচ্ছল আনন্দ? কে জানে!

দানীন নিশ্চুপ থেকেই রান্নাঘর থেকে প্রস্থানের জন্য অগ্রসর হলে তার মা পিছু ডাকলো,
“আচুক্কা আইলি, আইসবা যে কল করে বললা না কে.. এহন তো দেহি মোরার কল ধরনের আর আমরারে কল হরার সময়ও তোর নাই দানীন।”
“আসার পরিকল্পনা ছিলো না মা। হুট করেই মনে হলো তোমাদের সাক্ষাৎ দিয়ে আসি। কালকেই চলে যাবো।”
“কাইলকা যাবি মানে? বোনটার সঙ্গে তো কিছুদিন খাড়া। জানোস, মাইয়াটার যখন ব্যাথা উঠলো কারও কথা না, শুধু আপু আপু বলে কাঁনতাছিলো। তোরে বারবার পাশে চাইছিলো। কিন্তু তোর কী ওতো সময় আছে? ব্যস্ত মানুষ!”
“তিন মাসের মধ্যে দুইবার ব্যস্ততা উপেক্ষা করে তোমাদের দেখতে এলাম। আমি তো ভাবছি আগামী তিন বছরেও আর আসবো না।”
বলেই দানীন খিলখিল করে হেসে ওঠলো।
দিলরুবা খাতুন অভিমানী কণ্ঠে বললো,
“তো যা না, এহনই যাওগে।”
দানীন তপ্ত নিশ্বাস ফেললে বারান্দার অভিমুখে পা চালালো। ছাদে বাবা, খালা-খালু, ফুফা-ফুফির প্রাণ খোলা উচ্চহাস্যের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বারান্দায় দানীনের পাশের চেয়ারে ফারিহ থম মেরে অনেক্ষণ ধরে বসে আছে।
দানীন পাশে বসতেই বিষণ্ণ গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“ইউসরা কী আসবে না কিউটু?”
“নারে, আন্টি মানা করেছে। আবার পরীক্ষা, পড়াশোনা.. তাই এবার আসতে নিষেধ করেছে। ইউসরাও বেশি জোর করেনি। পরে দেখা যাবে প্রয়োজনের সময় আসতে পারবে না।”
“ইশশ! কি এমন উনার পড়াশোনা! কল রিসিভ করছে না, টেক্সটের রিপ্লাইও দিচ্ছে না।”
দানীন কপালে হাতের উল্টোপিঠ ঠেকিয়ে কপট হা-হুতাশ দেখিয়ে বললো,
“আরে রাগ করিস না। ফোন নিয়ে তো অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করে আন্টি। রূপবতী মেয়েদের এই এক সমস্যা। অন্তরের দিক দিয়ে পরিশুদ্ধ থাকলেও কেউ বিশ্বাস করে না। মা-বাবাও বিশ্বাস করে না যে এই সৌন্দর্য-সৌষ্ঠবের অধিকারী কন্যা প্রেম নামক লুতুপুতু, ঘষাঘষি সম্পর্কে বড্ড অনভিলাষী। আন্টির ভাঙা রেডিওর ঘ্যাড়ঘ্যাড়ানিতে ইউসরা রাগ দেখিয়ে ফোন হাতে নেয় না। এই আর কি।”
ফারিহ ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে বললো,
“সুন্দরী হতে বলেছে কে? সুন্দরী যেহেতু জানেই রাগ করে ফোন চালানো বিসর্জন দেবে কেন। আশেপাশের মানুষকে চিন্তায় ফেলে ফোনের প্রতি উনার দয়ালু মনের বিশালত্ব বিবৃতি প্রকাশ করছে। বেয়াদপ মাইয়া!”
দানীন ফারিহ’র অভিমান সম্বলিত বাক্যসমূহ শ্রবণ করে হেসে ওঠলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here