#শিমুল_ফুল
#০২,০৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
০২
“মনেরও বাগানে ফুটিলো ফুল রে রসিক ভ্রুমর আইলো না ফুলের মধু খাইলো না।”
পুষ্পর মন খারাপ এই মন খারাপ কাটানোর জন্যই শিলা আউলাঝাউলা গানের কলি গাইছে।হিজল গাছের নিচে এসেই শিলা চুপ হয়ে যায়।শিমুল ভ্রুকুচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,শুনে ফেললো না তো?পুষ্প আর শিলা মাথা নিচু করে চলে যায়।কিছুদূর গিয়ে শিলা বললো,
“আচ্ছা এই শিমুল ভাইয়ের কাহিনী কি রে?”
পুষ্প কপাল কুচকে বললো,
“কিসের কাহিনী?”
“এই রাত বারোটায় দেখা করার মানে কি?”
পুষ্প নিজেও এর মানে বের করতে পারছেনা তাই মাথা নেড়ে বললো,
“আমি জানি না।”
শিলা বললো,
“পুষ্প এমন নয় তো,শিমুল ভাই তোকে পছন্দ করে।”
শিলার কথা শুনে পুষ্পর চোখের তারায় খেলে যায় একরাশ ভয়।এমনটা সে কখনো ভেবেই দেখেনি।আর আধো কি সম্ভব?
“কি বলিস উল্টাপাল্টা কথা?উনি কিভাবে আমাকে পছন্দ করবে?”
“তুই একটা গাধী কিছুই বুঝিস না।”
“কি বুঝবো?”
শিলা পুষ্পর হাতে ধরে বললো,
“ছেলেদের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়।তাহলে তুই কেন বুঝিস না।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আমি কখনো উনার চোখের দিকে তাকাই না।ভয় লাগে।”
“তাহলে কখনো বুঝতেও পারবি না।ছেলেদের মুখে থাকে এক কথা চোখে থাকে আরেক কথা।”
পুষ্প চুপ করে ভাবে কিছু বলেনা।
শিলা’ই আবার বলে,
“আজকে কলেজ থেকে আসার পথে দেখবি।”
পুষ্পর মন দুলে উঠে ভয় ভয় বাতাসে।সে সিদ্ধান্ত নিলো আজকে দেখবে।দুপুরে তিয়াশ কলেজে এসে শিলাকে নিয়ে যায় মামার বাড়ি যাবে বলে।পুষ্প সারাদিন এটাই ভাবে আসলেই কি শিমুল তাকে পছন্দ করে?একা একা শিমুলের সম্মুখীন হতে খুব ভয় হচ্ছে।হিজল গাছের কাছে গিয়ে দেখে আজকে শুধুমাত্র শিমুল বসে আছে।পুষ্প যেতে যেতে শিমুলের দিকে তাকায়,দুজনের চোখ একসাথে মিলে যায়।শিমুলের চোখের ভাষায় নেই কোন রুক্ষতা,সেখানে ফুটে আছে মুগ্ধতা যা খুবই স্পষ্ট।পুষ্পর কচি মন কেঁপে ওঠে,অন্তরে দোলা দেয় বন্য বাতাসের মাতাল হাওয়া।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবার পিছন ফিরে তাকায়,শিমুল উঠে দাঁড়িয়ে চট করে পা ফেলে প্রায় তার কাছে চলে এসেছে,পুষ্প জলদি চলে যেতে চাইলে শিমুল সামনে এসে দাঁড়ায়।পুষ্প শ্বাস ঘন হয়ে আসে বুকের কাঁপন বাড়ে যদি তার সন্দেহ’ই ঠিক হয় তাহলে?না আর ভাবা যাচ্ছে না।দম আটকে আস্তে করে বললো,
“বাড়ি যাব।”
শিমুলের কন্ঠে আজ বসন্ত বাতাসের রেশ লাগানো দোলা।কিন্তু বসন্তের কোকিল যে তার দিকে না তাকিয়ে আশেপাশের পরিবেশ দেখতেই ব্যাস্ত।কেন তাকায় না?পাখির মনেও কি বসন্তের দোলা লেগেছে?তাই কি বন্দী হতে এতো আপত্তি?মাতাল মাতাল চাহনিতে মাদকতা মিশিয়ে বললো,
“এতো তাড়া কিসের?আগে আমার দিকে তাকা।”
পুষ্পর চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে।শিমুলের কন্ঠে কোমলতা এই প্রথম শোনা হলো তা শুনেই অবুজ মন ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে।পুষ্পর সন্দেহ ঘোরতর হয়,কিন্তু এতো বড়ো শিমুল কিনা তাকে পছন্দ করে?
শিমুলই আবার ডাকে,”দেখ।”
পুষ্প মিনমিন করে বললো,
“কি দেখবো?”
শিমুল সহজভাবেই বললো,
“আমাকে।”
পুষ্প মাথা তুলে তাকায়।ভয়ে , অসস্থিতে গলা শুকিয়ে আসছে।শিমুলের শান্ত,চুপচাপ মুখটা আজকে অন্যদিনের চেয়ে আলাদা,এমন আলাদা শিমুলকে সে আগে কখনো দেখেনি কিংবা দেখার চেষ্টাই করেনি।শিমুল মাথা দুলিয়ে বললো,
“শরীর ভালো লাগছে।”
পুষ্প মাথা দুলায়।
“তোর ফোন নাই।”
“না।”
“ফোন চালাবি?”
“না।”
শিমুল হাসে।
“আচ্ছা সকালে শিলা একটা গান গেয়েছিলোনা ওইটা আবার গা তো।”
শিলার বলা গানটা পুষ্প পারে কিন্তু শিমুলের কাছে কিভাবে এমন একটা গান গেয়ে শুনাবে।কোন ছেলেকে গান গেয়ে শোনানোর কোন অভিজ্ঞতা পুষ্পর নেই আর যদি হয় এমন গান আর শ্রোতা স্বয়ং শিমুল তাহলে জীবনেও না।মাথা নেড়ে বললো,
“আমি পারি না।”
শিমুল যেন জানে পুষ্প গানটা পারে।জোড় দিয়ে বললো,
“তাড়াতাড়ি গা।”
অনেক অনুনয় বিনয় করেও কোন লাভ হলো না।শিমুল গান শুনবেই,গান না গেয়ে এখান থেকে যেতে দেওয়া হবে না।কেউ দুজনকে একা একা কথা বলতে দেখলেই সমস্যা হবে।পুষ্প চোখ খিচে বন্ধ করে।খুব আস্তে করে গায়,
“মনেরই বাগানে ফুটিলো ফুল রে রসিক ভ্রুমর আইলো না।”
পুষ্প এতোটুকু বলেই থেমে যায়।থামে না শিমুলের বেপরোয়া ইচ্ছা,সে ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
“তারপর?”
পুষ্পর লজ্জা লাগছে।হঠাৎ করেই যেন শিমুলকে বেশ লজ্জা লাগছে।দম আটকে বললো,
“ফুলের মধু খাইলো না।”
শিমুল দুই হাত পকেটে ডুকিয়ে একপা এগিয়ে বলে,
“আচ্ছা!এই গানটার মানে বুঝিস?”
পুষ্প আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না।এক দৌড় দেয় বাড়িতে।শিমুল যে এতো লজ্জা দিবে এটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো।
শিমুলের মুখে আজ বিস্তর হাসি।যে মেয়ে কখনো চোখ তুলে তাকায় না সে কিনা চোখে চোখ রাখলো আবার ফিরেও তাকালো।বুকে শিরিশিরানির দল লুটুপুটু খায়।অপেক্ষার প্রহর তবে শেষ হচ্ছে?আচ্ছা গানটার মানে কি পুষ্প জানে?শিমুল হাসে জিতে যাওয়া হাসি।বাড়িতে পুষ্পর ব্যাপারে কেউ জানে না,জানলে ঝড় বয়ে যাবে এটা শিমুলের জানা কিন্তু তার মন তো কোন ঝড় তুফানের পরোয়া করে না,মনটা যে বড়ই অবাধ্য,স্রোতের বিপরীতে চলতেই পছন্দ করে।এই অবাধ্য অশান্ত মন নিয়ে শিমুল খুব যন্ত্রনায় আছে,যখন তখন পুষ্পকে কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষায় শরীরকে বিষিয়ে তুলে কিন্তু শিমুলের পাখি যে এখনো ছোট্ট বাবুইসোনা।তার যে এখনো লাল নীল বিষব্যাথার সাথে পরিচয় হয়নি।তখন মনটা খেকিয়ে বলে,”পরিচয় হয়নি তো কি হয়েছে? তুই পরিচয় করাবি,বুঝাবি,শিখাবি ,স্বাধ লাগিয়ে নেশা বাড়াবি।”
শিমুল তখন মুচকি হাসে।পাগলামির বয়স তার হয়েছে,পুষ্পর হয়নি।কিন্তু ইদানীং পুষ্প যেন তরতরিয়ে বড় হয়ে গেছে,চোখে লাগার মতো।আর আজকে বাবুই নিজেই চোখে চোখ রেখেছে,শিমুল তার মনে উল্টাপাল্টা ঝড় লাগিয়েই বাড়িতে যায়।
একতলা বাড়ির বারান্দায় যাওয়ার পরেই ছুটে এসে ছন্নছাড়া বালিকা শিমুলের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।শিমুল চোখ বন্ধ করে নেয়।
চলবে…..
❝দেখা যাক ধ্রুবর থেকে শিমুল ভালো শিক্ষক হতে পারে কিনা❞
#শিমুল_ফুল
#০৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
পুষ্পর কেমন ছটফট লাগলো।চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু ঘুম আসেনা।রাতে ঠিকঠাক ভাতও খেতে পারেনি।শিমুলের মাতাল চোখের তিরতিরানো বাতাস যেন তাকে আঁকড়ে ধরে আছে।এই মাতাল বাতাসের তোড়েই কিনা পুষ্পের সারা শরীর অবস হয়ে আসে।চোখ ঝিমঝিম করে যন্ত্রণা বেড়ে যায়।অবুঝ মনটা কেন জানি চাইছে শিমুলের সানিধ্য,একটু চোখের দেখা।আজকেও কি শিমুল বেপরোয়া আবদার নিয়ে দেখা করতে বলবে?নিজের মনের সুপ্ত অভিলাসে পুষ্প নিজেই লজ্জিত হয়,শিমুল তাকে কখনোই বলেনি ভালোবাসে,পুষ্প কিনা এসব ভেবে ফেলেছে।এইতো আজকে সকালেও কতো ঘৃনা করতো এই রাগী ছেলেটাকে।কিন্তু এখন মনের দেয়ালে শিমুল লেপ্টে গেছে,শিমুল শিমুল জপে পুষ্পর ঠোঁটে হাসি ফুটে।এসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতেই পুষ্প ঘুমাতে পারে না।পুষ্পর নাকের পাটাতন ফুলে উঠে,এ কোন জ্বালা হলো?এতো খারাপ লাগছে কেন?শিমুল কি তাকে তাবিজ টাবিজ করলো নাকি?ভেতরটা জ্বলছে যে!পুষ্প অন্ধকারে ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে।তার মন বলছে আজকেও সর্বনাশা মানুষটা আসবে,এই কারনেই পুষ্প ঘুমাতে পারে না।বিছানায়।ছটফট করে।
মজিব হাওলাদারের এক ছেকে এক মেয়ে।যুগ যুগ ধরে রা,জনীতি করে আসছে।গ্রামে দাপট বেশ কড়া।ছেলের নাম শওকত হাওলাদার,মেয়েটার নাম আসমা।গ্রামে যেমন দাপট দেখায়, ঘরের মানুষকেও তেমনি শাসনে রাখে।মজিব হাওলাদারের স্ত্রী পেশকারা বেগম বেশ অহংকারী আর রাগী ধরনের মহিলা।উনি যা বলে তাই সবাইকে শুনতে হয়,বিশেষ করে শওকত হাওলাদারের স্ত্রী রাবেয়া।রাবেয়া নিজেও এখন শাশুড়ি হবার সময় হয়ে গেলো কিন্তু পেশকারার কথার তেজ এখনো কমেনি,কথার তোড়ে কাঁদায় ক্ষনে ক্ষনে।আসমার বিয়ে হয়েছে শহরে।আসমার এক মেয়ে এক ছেলে।মেয়ে সুইটি বয়স একুশ এবার অনার্সে পড়ছে।ছেলে রাতুল এবার টেনে পড়ে।আজকে বিকালে সবাই গ্রামে বেড়াতে এসেছে।সুইটি শিমুলকে পছন্দ করে,শুধু পছন্দ বললে ভুল হবে মারাত্মক ভালোবাসে।শিমুলকে কখনো বলা হয়নি কিন্তু সুযোগ পেলেই যখন তখন শিমুলের গা ঘেষে দাঁড়ায়।প্রেমিকার মতো লেপ্টে যায়।আজকে দুপুরে এসে যখন শিমুলকে পেলো না সুইটির মন বিষন খারাপ হয়েছিলো।বিকেলে বাইকের শব্দ শুনেই দৌড়ে বাহিরে গিয়ে শিমুলকে পায় আর অমনি ঝাপ্টে বুকে পড়ে।
শিমুলের ফুরফুরে মন মূহূর্তেই থমথমে হয়ে যায়।এই লজ্জাহীন মেয়েটাকে তার এই জন্যই পছন্দ না।যেন শিমুল তার প্রেমিক লাগে যখন তখন বুকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।মেয়েরা থাকবে লজ্জা গায়ে মেখে আর এই মেয়ে?অসহ্য।নেহাৎ তার দাদা বুবু,আর আব্বার জন্যই সুইটিকে কিছু বলে না,উনাদের আবার চোখের মনি হলো সুইটি।
শিমুল সুইটিকে টেনে সরায়।মুখটা গম্ভীর করে বললো,
“ক্লান্ত লাগছে সর।”
সুইটি শিমুলের সাথে হাটতে হাটতে বললো,
“সেই কখন এসেছি তুমি কই ছিলে?”
শিমুল উত্তর দেয় না।গলা ছেড়ে তার মা রাবেয়া কে ডাকে,
“আম্মা আম্মা।ঠান্ডা পানি দাও।”
রাবেয়া ফ্রিজ থেকে পানি এনে দেয়।শিমুল বিরক্তিতে গলা তিতো করে বলে,
“আম্মা আমি এখন রেস্ট নিবো,আমাকে কেউ যেন না ডাকে।”
রাবেয়া ছেলের কথার মানে বুঝে,সুইটিকে শিমুল একদমই পছন্দ করে না।সুন্দরী হলে কি হবে লাজ লজ্জাহীন মেয়ে পছন্দ করার মতোই না।রাবেয়ার নিজেরও পছন্দ না।শিমুল হনহন করে রুমে চলে যায়।সুইটি কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
“শিমুল ভাই এমন কেন মামিমা?”
রাবেয়া হেসে বললো,
“আরে সারাদিন এখানে সেখানে যায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।বুঝিস না?কালকে ভালো করে কথা বলবে।”
সুইটির মুখে হাসি ফুটে,এবার শিমুলকে মনের কথা বলতেই হবে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে শিমুলের বুকটা প্রিয়তমার কাছে যাওয়ার জন্য চিনচিন করে।বিছানা আঁকড়ে পড়ে থেকেও রেহাই পায় না,শরীর মন দুটুই বিষিয়ে গেছে,অসহ্য দহনে মনে তোলপাড় হয়।চোখগুলো খুঁজছে প্রিয় মুখটা,প্রিয় চোখগুলো যেই চোখ আজকে তার অন্তর খুচিয়ে খুচিয়ে প্রেমে পড়া মনটাকে আরোও কাতর করে দিয়ে গেছে।নিঃশ্বাস করে দিয়েছে বেশামাল।মোবাইল হাতে নিয়ে পুষ্পর ছবিগুলো দেখে,কিন্তু তৃষ্ণা মিটে না বরং বাড়ে।মেয়েটা চোখ দিয়েই এভাবে খুন করে দিলো,মন দিয়ে খুন করলে শিমুলের অবস্থা কি হবে?শিমুল মোবাইলের স্কিনে চুমু খায়।নিজেকে শান্ত করতে স্কিনে কিছুক্ষণ ঠোঁট লাগিয়েই রাখে। আচ্ছা ছবিতে চুমু খেলে কি মানুষটা বুঝতে পারে?পারেনা হয়তো।পারলে পুষ্প লজ্জায় আর কখনোই শিমুলের সামনে আসতো না শিমুল যে প্রচুর অগোছালো কথা বলে ছবির সাথে,আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে চায় ছোট্ট বাবুইকে।শিমুল মোবাইল একপাশে রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।কোনভাবেই ঘুমাতে পারে না,চোখের পাতায় ঘুম আসে না।এতোদিন নিজেকে সামলালেও আজকে যেন পুষ্পর তাকানোতে তার মনটা অসুস্থ হয়ে গেলো।রাত দুইটার দিকে উঠে বসে।প্রেমে পড়লে মানুষ পাগল পাগল কাজগুলোই করে শিমুলও তাই করলো,কালো গেঞ্জি গায়ে চাপিয়ে সিগারেট লাইটার হাতে বেড়িয়ে পড়লো নিঃশব্দে।শিমুলদের বাড়ি থেকে পুষ্পদের বাড়ি আসতে বিশ মিনিট লাগে।শিমুল এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।পুষ্পের মোবাইল নেই কিভাবে যোগাযোগ করবে?
মিনিট পাচেক পায়চারি করে ভাবে।হাতের সিগারেট ফেলে পুষ্পর রুমের জানালায় টোকা দেয়।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আবারো কয়েকবার টোকা দেয়।ফিসফিস করে ডাকে,”পুষ্প এই পুষ্প”
পুষ্প সজাগ ছিলো,জানালায় টোকা শুনে বিছানায় উঠে বসে।জানালার টোকাগুলো যেন বলছে ‘শিমুল এসেছে’।পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।তখনি শিমুলের ফিসফিস করা ডাক শুনতে পায়,পুষ্প লাইট জ্বালায় না।তাদের বিল্ডিংটা টিনের চালা,লাইট জ্বালালে বুঝা যায়,পুষ্পর মা রোকসানা বেশ চালাক চতুর মহিলা সন্দেহ করে বসবে।পুষ্প অন্ধকার হাতরে জানালার কাছে যায়,খুট করে স্টিলের জানালার একটা পার্ট খুলে দেখে ভরা জ্যোৎস্না গায়ে মেখে শিমুল দাঁড়িয়ে আছে।ফর্সা গায়ে চাঁদের আলোয় দাঁড়ানো পুরুষটাকে পুষ্পর মনে হলো,শিমুল খুব সুদর্শন,নজরকাড়া শরীর, কাটাকাটা চেহারা।শিমুল পুষ্পকে দেখে জানালা ঘেষে দাঁড়ায়।ফিসফিস করে বলে,
“একটু বাহিরে আয়।”
পুষ্পর মাথা নাড়িয়ে বলে,
“এতো রাতে বাহিরে আসবো না।”
শিমুলের ঠোঁট নাড়িয়ে খুব আস্তে বললো,
“প্লিজ।”
পুষ্প শিমুলের চোখে চোখ রাখে,এতো কাতর স্বরে কেন অনুরোধ করছে?তারপর মন্ত্রমুগ্ধের মতো জানালা আটকে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে।মা বাবা জানতে পারলে জ্যান্ত পুতে ফেলবে এই ভয়টা বুকে নড়ে উঠে।অজানা টানে ধীরপায়ে গিয়ে শিমুলের সামনে দাঁড়ায়।পুষ্পকে দেখে শিমুল চোখে হাসে।শিমুল চুপচাপ অনেকক্ষন সামনের এলোচুলের মেয়েটাকে মন ভরে দেখে।পুষ্পকে ছুঁয়ে দেয়ার পাগলা ইচ্ছা হাতের নখে গিয়ে শিরশিরানি দেয়,শিমুল দুই হাত ট্রাউজারে ঢুকিয়ে ফেলে।মেয়েটা কি বুঝে সামনে দাঁড়ানো শক্ত সামর্থ্য ছেলেটার ভেতরটা প্রেমের আগুনে জ্বলছে?বাবুইটা তাকাচ্ছেনা কেন?শিমুল খুব আস্তে করে বললো,
“আমার দিকে তাকা?”
পুষ্প মাথা নেড়ে না করে।ওই চোখজোড়ায় নেশার ছড়াছড়ি,যেখানে তাকালেই পুষ্পর নরম মন দিশেহারা হয়ে পড়ে।নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
শিমুল নিচু স্বরেই ধমকে উঠে,
“এতো রাতে এসেছি তাকাবিনা কেন?তাকা”
পুষ্প তাকায়।আজকে তার সাথে এগুলো কি হচ্ছে?কল্পনার বাহিরের কাজগুলোই আজকে হচ্ছে।এই যে শিমুলের চোখে অন্য কথার মনের ব্যাথার ছড়াছড়ি তা কি পুষ্প বুঝে না?খুব বুঝে,মেয়েদের এগুলো শিখাতে হয় না এমনিতেই শিখে যায়,পুরুষের চোখের কথা বুঝে নেয়।ছোট্ট পুষ্প শিমুলের চোখের বিবস হওয়া কথা আর নিতে পারেনা মাথা নিচু করে বললো,
“কেন ডেকেছেন?”
শিমুল কোন কথা বলেনা,সে কথার তালে তালে নড়াচড়া করা ঠোঁটগুলো দেখতেই ব্যস্ত।তারপর হঠাৎ আবিষ্কার করলো তার পাগলা মনের অন্য কিছু ইচ্ছা হচ্ছে,শিমুল নিজেকে সামলে পিছু হটে বললো,
“ঘরে যা,”
এটা বলে হনহনিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে,পুষ্প পিছন থেকেই অপলক দেখে,”শিমুলের চোখের ভাষা কি সত্যি?”
কিন্তু এর পরের দিনের চিত্রে পুষ্পর মনটা বিষিয়ে গেলো,চোখে জ্বমলো পানি।শিমুল খুবই সুন্দরী একটা মেয়েকে বাইকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে।মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে আর পিছন থেকে শিমুলকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে আছে।আঁকড়ে ধরার ভঙ্গিমাটা খুবই বাজে।কিন্তু শিমুলের মুখেও যে হাসি!পুষ্পর ছোট্ট কচি ফিনিক্স পাখির মতো তুলতুলে মনটা ভেঙ্গে গেলো।ঠোঁট কেঁপে উঠে মনে মনে বারবার বললো,”চোখের ভাষা কি সবটাই মিথ্যা ছিলো?সবটা”
চলবে….