শিমুল_ফুল #০৪,০৫

0
558

#শিমুল_ফুল
#০৪,০৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
০৪

পুষ্পর কলেজ ছুটি হয়।সে ভেবেছিলো শিমুলকে হিজল গাছের নিচে পাবে কিন্তু না আজকে শিমুল গাছের নিচে নেই।পুষ্পর মন খারাপ হয়,তার অজান্তেই তার মনটা শিমুলকে খুঁজে।পুষ্প রাতে নিজেই নিজেকে বুঝায় যে মেয়েটা হয়তো শিমুলের বোন হয় প্রেমিকা নিয়ে তো আর গ্রামে ঘুরবে না!পুষ্পের ভেতর থেকে তার বিবেক বলে,’পুষ্প তুই কি শিমুলের প্রেমে পড়ে গেলি?কোন মেয়ে নিয়ে ঘুরছে এটা এতো ভাবছিস কেন?ওই রাগী ষাড়ের জন্য তোর মন এতো পুড়ে কেন?শিমুল কি তোকে বলেছে ভালোবাসার কথা?বলেনি তো?তাহলে এতো জ্বলাপুড়া কেন?’

পুষ্প কাথা দিয়ে মুখ ঢাকে।কথাগুলো একদম সত্যি।কিন্তু মনকে বোঝাতে অক্ষম।পরেরদিন পুষ্প কলেজে যাওয়ার পথে মনে মনে শিমুলকে খুঁজে।শিলা তার মতো গল্প করলেও পুষ্প ভেতরে ভেতরে ছটফট করে।কই গেলো শিমুল?অশান্ত মন নিয়েই পুষ্প তিনদিন কাটায়।চারদিনের মাথায় শিলাকে বলে,
“শিলা শিমুল ভাইকে আর দেখছিনা।কই গেছে রে?”

পুষ্পর মুখে শিমুলের নাম শুনে শিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
“ভুতের মুখে রাম নাম।কি ব্যাপার বান্ধুপি কি ব্যাপার?রহস্য রহস্য গন্ধ পাই।”

শিলার কথায় পুষ্প মাথা ঝুকিয়ে হেসে বললো,
“দেখছিনা তাই জিজ্ঞেস করলাম।কোন ব্যাপার ট্যাপার নেই।”

শিলা তিয়াশের মুখে শুনেছে শিমুল ঢাকা তার ফুফুর বাসায় গেছে।
“ভাইয়ার কাছে শুনেছি,শিমুল ভাই ঢাকা গেছে,ফুফুর বাসায়।”

পুষ্প কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু ভাবলো তারপর বললো,
“শিলা সেদিন যে দেখলাম শিমুল ভাইয়ের বাইকে মেয়েটা তুই খেয়াল করেছিস?”

শিলা সুইটিকে চিনে।তাদের বাড়িতে শিমুলের সাথে এসেছিলো,
“অহ এটা শিমুল ভাইয়ের ফুফাতো বোন সুইটি।ভাইয়ার সাথেই এসেছিলো আমাদের বাড়িতে।বাব্বাহ মেয়েটা কি মর্ডান,যানিস সারাটাক্ষন শিমুল ভাইয়ের হাত ধরে রেখেছিলো।”

শিমুলকে নিয়ে এমন কথা শুনতে পুষ্পর খুব খারাপ লাগছিলো।আচ্ছা তাহলে ফুফাতো বোনকে পছন্দ করে তাইতো বাইকে নিয়ে এভাবে হেসে হেসে যাচ্ছিলো।শিমুল তাহলে পুষ্পর কাছে কি চায়?কেন পাগল বানাতে আসে?পুষ্পর’ই ভুল হয়েছে কই চেয়ারম্যানের ছেলে আর কই পুষ্পরা।পুষ্পই হয়তো ভুল বুঝে মনের দরজায় কড়া নেড়েছে।রাগে অভিমানে পুষ্পর চোখে পানি এসে জ্বালা করতে শুরু করলো।সে কিনা ভেবেছিলো শিমুল তাকে ভালোবাসে।চুপচাপ কলেজ থেকে গিয়ে শুয়ে থাকে,ভেতরটা জ্বলছে,মনটা পুড়ছে,শিমুল এমন করলো কেন?তাহলে কিসের টানে রাত বিরাতে দেখা করতে চলে আসে?কথায় কথায় কিসের এতো অধিকার?পুষ্প চোখ বন্ধ করলে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে যায় মন পুড়ানো এক ফোটা উতপ্ত পানি।

শিলা তার বড় ভাই তিয়াসের সাথে খুবই ফ্রী।বিকালে পুষ্পর বলা কথাগুলো ভাইকে বলে।তিয়াস তখনি শিমুলকে ফোন দেয়।

“বাড়ি আসবি কবে?”

“আগামীকাল।”

“পুষ্প তোর কথা শিলাকে জিজ্ঞেস করেছে?”

শিমুল নড়েচড়ে বসে পুষ্প জানতে চেয়েছে তার কথা?ভ্রু কুচকে বললো,
“কি জিজ্ঞেস করেছে?”

“কই গেছিস,বাইকে বসা মেয়েটা কে ছিলো।এসব”

শিমুল মুচকি হাসে।তাহলে খবর নেয়,মনে পড়ে।বাইকে কেউ বসলে অন্তর পুড়ে কিনা এটা জানতেই শিমুল তখনি রওনা দিয়ে ফেলে।হরিন নিজেই যদি শিকারির খুজ নেয় শিকারি কি হাত ঘুটিয়ে বসে থাকতে পারে?তার বুবুর জন্যই তাকে ঢাকায় আসতে হলো।উনার শরীর ভালো না ডাক্তার দেখাতে হবে তাই শিমুলকে’ই আসতে হলো,দুইদিন ঘুরাঘুরি করে আজকেই ডাক্তার দেখানো শেষ হলো,ঠিক করা হলো পেশকারা বেগম কয়েকদিন তার মেয়ে আসমার বাসায় থাকবে।এই চারদিন শিমুলের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।একে তো সুইটির ন্যাকামি আবার প্রিয় মানুষটাকে দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রনায় মনের কাতরতা।রাত তিনটার দিকে শিমুল বাড়িতে এসে পৌছায়।একবার ভাবে দেখা করতে যাবে পরে এতো রাতে যাওয়া ঠিক হবেনা ভেবে আবার সিন্ধান্ত বদলায়।

সকাল নয়টায় পুষ্প আর শিলা কলেজে যাচ্ছে।দুজনেই কলেজের কথা বলছে।পুষ্পর চোখ খুব জ্বলছে,অতিরিক্ত কাঁদার ফলে,রাতে না ঘুমানোতে চোখ ফুলে উঠছে মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে।তখনি দেখলো হিজল গাছের শিকড়ে শিমুল তিয়াশ বসে আছে পুষ্পদের দেখেই শিমুল দাঁড়ায়।এগিয়ে আসে কিছু বলার জন্য।শিমুলকে দেখেই পুষ্পর মুখ থমথমে হয়ে যায়,গাঢ় অভিমানের লেপন পড়ে মুখে।শিমুল কাছে আসছে পুষ্প তার মতো করে হেটে চলে যায়,দাঁড়ায় না।

শিমুল পুষ্পর এমন কাজে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।তাকে এড়িয়ে গেলো?এতো ছোট মেয়ের এতো সাহস!কিন্তু প্রেয়সীর মুখে যে অভিমান স্পষ্ট।শিমুলের কেমন সুখ সুখ লাগছে,প্রেম শুরু হলোনা,অভিমান শুরু হয়ে গেলো?শিমুল বাড়িতে চলে যায়।ঠিক করে বিকেলে আবার আসবে।এই মেয়েটার জন্যই শিমুলের টিনেজারদের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।প্রেম ছাড়াই পাগল বানিয়ে ফেলেছে।বিকেলে শিমুল পুষ্পর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পথ আটকায়,শিলার দিকে তাকালে শিলা বুঝতে পারে মুচকি হেসে পুষ্পকে একা রেখেই চলে যায়।পুষ্প মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে,শিমুল কাছে আসলেই বুকটা কাঁপে,শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।শিমুল পুষ্পর দিকে মাথা কাত করে তাকায় গলার স্বর নরম করে বললো,
“কি হয়েছে?”

পুষ্পর চোখে পানি চলে আসে,বেহায়া চোখগুলোর উপর তার খুব রাগ হয়।মাথা নাড়িয়ে বললো
“কিছু না।”

শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।এতোদিন দেখা হয়নি বলে এই অভিমান নাকি সুইটিকে একসাথে দেখেছে বলে।
“আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল।”

পুষ্প তাকায় না।মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আমি বাড়ি যাব।সরে দাঁড়ান।”

শিমুল সরে না আরো কাছে এসে বলে,
“রাগ করছিস?”

“না ”

পুষ্পর অভিমানে শিমুলের খুব মজা লাগে।
“আমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলি কেন?”

পুষ্প চমকে উঠে উনি কিভাবে জানলো?শিলা বলেছে?শিলার উপর ভিষন রাগ হলো।জলদি বললো,
“জিজ্ঞেস করা ভুল হয়েছে আর জিজ্ঞেস করবো না।”

“বাহ মুখে খই ফুটছে।সাহসের ওষুধ খাইছিস?সাহস বেড়ে গেছে।”

পুষ্প নিজেও অবাক,আগে শিমুলকে ভয় পেতো।কিন্তু এখন এতোটাও ভয় করেনা।পুষ্প কথা ঘুরিয়ে বললো,

“এখন বাড়ি যাই।”

শিমুল পুষ্পকে আরেকটু রাগাতে বললো,
“আমার ফুফাতো বোনটা খুব সুন্দরী।আমাকে প্রপোজ করেছে।ভাবছি রাজি হবো কিনা!”

পুষ্প নত করে রাখা মুখটা তুলে শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুলের মুখে মুচকি হাসি।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
“তাহলে গিয়ে প্রেম করুন।আমাকে বলছেন কেন?”

এটা বলে হাটতে শুরু করে।শিমুল পিছন থেকে বললো,
“আমি যাকে ভালোবাসি সে তো প্রেম করতে চায় না কিভাবে প্রেম করবো?এই পুষ্প।দাঁড়া না।”

পুষ্প শিমুলের কথা শুনেও দাড়ায়না।বিরবির করে বলে,কি সুন্দর প্রপোজের কথা বলতে এসেছে।অসভ্য,ইতর কোনখানের।

শিমুল দৌড়ে এসে বললো,
“রাতে আসবো কিন্তু।”

পুষ্পের নাকের পাটাতন ফুলে উঠে,
“আইসেন।আব্বারে বলে দেবো।”

শিমুল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে,কি যন্ত্রণা!শিমুলকে এই মেয়ে তার বাপের ভয় দেখায়!

চলবে……

#শিমুল_ফুল
#০৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শিমুল রাত বারোটা বাজে ঠিক আসলো।কয়েকবার পায়চারী করে পুষ্পর জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।টোকা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,আবার টোকা দেয়,বারবার টোকা দেয় কিন্তু পুষ্প খুলছে না।

পুষ্প বিছানায় শুয়ে অন্ধকারেই জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল আসবে বলেছে তাই তার ঘুম আসছিলোনা।শিমুলের উপস্থিতিতে পুষ্পর বুক ভার হয়ে আসে।এই যে টোকা দিচ্ছে পুষ্প তো খুলবেনা।কেন খুলবে?প্রেম করবে ফুফাতো বোনের সাথে রাতে দেখা করবে তার সাথে!এটা কেমন কথা?খেলনা পেয়েছে নাকি!পুষ্প চুপচাপ শুয়ে থাকে।শিমুলের প্রতি অভিমান ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যেন উপচে পড়ছে।

শিমুল যানে পুষ্প জেগে আছে।সে আসবে বলেছে আর পুষ্প ঘুমিয়ে পড়বে তা তো হয় না!কিন্তু জানালা খুলছেনা কেন?এতো অভিমান এই ছোট্ট মানুষের?শিমুল মুচকি হেসে জানালার সাথে চেপে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে ডাকে
“এই পুষ্প,খুল না।”
“পুষ্প,এই।”
“পুষ্প।”

শিমুল।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ছয়টা সিগারেট শেষ করে ফেলে।কিন্তু কোন উত্তর নেই।এখানে দাঁড়িয়ে আছে একঘন্টা হয়ে যাচ্ছে।মেয়েটার মায়া টায়া নেই নাকি?ছোট একটা শরীরে এতো রাগ?শিমুল এবার জোরে জানালায় থাপ্পড় দেয়।ভয়ে পুষ্প ছটফটিয়ে উঠে বসে।বুকে থু থু ছিটিয়ে জানালা খুলে।শিমুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।এই যে শিমুল তার সাথে দেখা করতে এতো পাগলামি করে এটা পুষ্পর খুব ভালো লাগে।ফিসফিস করে বললো,
“কি হয়েছে?এতো রাতে এমন করেন কেন?”

শিমুল আদেশের সুরে বলে,
“বাহিরে আয়।”

পুষ্প বললো,
“আসবো না।চলে যান।”

“আসতে বলছি।”

“যান নয়তো আব্বারে ডাকতেছি।”

শিমুল ভ্রু কুচকে পুষ্পকে ভেঙ্গিয়ে বললো,
“আব্বারে ডাকতেছি!ভয় পাই তোর বাপেরে?যা ডাক।”

পুষ্প কিছু বলেনা দেখে শিমুলই বললো,
“মাত্র দুই মিনিটের জন্য আয়।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“জীবনেও না।”

দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শিমুলের পা ব্যাথা হয়ে গেছে।এক পা ঝাড়া দিয়ে বললো,
“এতোক্ষণ খুললি না কেন বেয়াদব?”

পুষ্প অভিমানে মুখ নামিয়ে বললো,
“আমি কি আপনার প্রেমিকা হই নাকি যে রাতে দেখা করবো?যার সাথে প্রেম তার সাথেই দেখা করেন।”

শিমুল আবছা আবছা পুষ্পর মুখটা দেখে যেখানে অভিমানের গাঢ় ছাপ।বাচ্চাটা অভিমান করেছে তাও এতোদিন যাকে যমের মতো ভয় পেতো সেই শিমুলের সাথেই,বাহ।শিমুল তার কোকড়া চুলে হাত ভুলিয়ে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়ায়।ফিসফিস করেই বললো,
“অভিমান করেছিস?”

পুষ্প কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।শিমুল আদ্র গলায় বলে,
“কাছে না আসলে অভিমান গলাবো কি করে?বাহিরে আয় না ”

পুষ্প শিমুলের দিকে তাকায়।শিমুলের চোখে মুখে বুনো বাতাসের ছড়াছড়ি।এই নেশা নেশা চোখজোড়ায় কিছু আছে যা পুষ্পর শরীর শিতল করার ক্ষমতা রাখে।বুনো বাতাসটাই পুষ্পকে জানে মেরে দিলো।মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না।”

“জানালায় এমন থাপ্পড় দিবো তোর বাপ মা চলে আসবে।দিবো?”

পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই ঘাড়ত্যাড়া ছেলে যা বলে তাই করে।বের হওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বজ্জাত একটা।পুষ্প মাথা নাড়িয়ে না করে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।

শিমুল সামনের বাশ ঝাড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।পুষ্প জড়সড় হয়ে এগিয়ে যায়,প্রেমহীন একটা ছেলে একটা মেয়ে রাতে দেখা করার মানে কি?পুষ্প এতো মানে টানে যানেনা।কিন্তু শিমুলের পাগলামিতে সায় দিতে ভালো লাগে যদিও ভয় হয় তারপরেও।জ্যোৎস্নার আলোয় সামনে তাকিয়ে দেখে মাথা ভর্তি কোকড়া চুল নিয়ে উঁচু লম্বা ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।দু হাত পকেটে পুড়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে,পুষ্পর নরম মনে প্রেমান্দোলনের দোলা তিরতির করে বয়ে যায়।অদৃশ্য কেউ হাত পা টেনে ধরে।পুষ্প এগিয়ে গিয়ে শিমুলের কাছে দাঁড়ায়।

শিমুল পাগলের মতো মেয়েটাকে দেখছে,এই পিচ্ছিকে দেখতে এতো ভালোলাগে কেন?এই মুখে এতো আদর আদর লাগতে হবে কেন?শিমুল নরম গলায় বললো,
“অভিমান হয়েছে?”

পুষ্প কিছু বলে না।
এতো বড়ো ছেলেটা যেন বাচ্চাটার কাছে কৈফিয়ত দেয়ার মতো বললো,
“সুইটি আমাকে পছন্দ করে,কিন্তু আমি না।”

পুষ্প আর রাগটা চেপে রাখতে পারে না,
“তাইতো বাইকে নিয়ে বিশ্রীভাবে হেসে হেসে ঘুরেন।”

শিমুল নিঃশব্দে হাসে।পুষ্পর রাগ অভিমান সবকিছুই তাকে সুখ দেয়,চরম শান্তি।একটু এগিয়ে বললো,
“জ্বলে?”

পুষ্পর খুব কাছে শিমুল।তার নেশা নেশা চোখে তাকিয়ে বললো,
” না।”

শিমুল বুকে ইশারা করে বললো,
“এই যে এখানটায় পুড়ে যাচ্ছে।আমি স্পষ্ট দেখছি।”

পুষ্পর বেহায়া নিলজ্জ চোখে পানি এসে পড়ে।পিছিয়ে গিয়ে দাতে চেপেচেপে বললো,
“উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।”

এটা বলেই পুষ্প হাটতে শুরু করে শিমুল জলদি এসে হাত টেনে ধরে। দুজনে খুব কাছে দাঁড়ায়।শিমুলের চোখ দিয়ে যেন পুষ্পকে মেরে ফেলার পায়তারা করছে।পুষ্প ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।হাত ছাড়ানোর জন্য মুচরাতে থাকে।জড়ানো গলায় বলে,
“ছাড়েন।”

শিমুল হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলে,
“এইটুকুন একটা শরীরে এতো রাগ কই থাকে?হ্যাঁ ”

পুষ্প ফুপিয়ে কাঁদে।শিমুল হাত ছেড়ে বলে,
“আমিতো সুইটিকে ভালোবাসিনা।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”

“রাগ কমেছে?”

“কমেছে।”

“কেঁদে যেন আর চোখ মুখ না ফুলে।”

চোখ ফুলেছে এটাও শিমুল লক্ষ করেছে!পুষ্প লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে রাখে।

“নড়াচড়া করবি না সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাক।”

“কেন?”

“আমি এখন দেখবো দেখার সময় নড়াচড়া করলে ডিস্টার্ব হয়।”

এমন পাগল করা বেশামাল কথায় পুষ্পর গাল ভারী হয়।ঠোঁট কাঁপে তিরতির করে।এই কথাগুলোর মানে কি?এতো জ্বালাচ্ছে কেন?সোজা কেন কিছু বলে না?”

শিমুল ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে তাকিয়ে থাকে।পুষ্পর তিরতির করে কাঁপা ঠোঁট গুলো উষ্ণ আদরে ভরিয়ে দিতে মন চাইছে,ছোট নরম শরীরটাকে শক্ত বুকের খাচায় চেপে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সব ইচ্ছা তো পুরন করা সম্ভব না। শিমুল নিজেকে সামলে চুপচাপ দেখে গেলো।এতোদিনের অপেক্ষা এভাবে শেষ হতে দিবে না।এতো বছর সইতে পেরেছে আর কয়েকদিনও পারবে।এইতো পুষ্প সহজ ভাবে কথা বলছে,নিজের অভিমান প্রকাশ করছে।এটাইতো চেয়েছে শিমুল।তার শুকিয়ে যাওয়া গাছে ফুল ফুটাক।নিজেই বুঝে নিক শিমুল কি।শিমুল যে আগুনে পুড়ে তার তাপ পুষ্পর গায়েও লাগুক।যন্ত্রনায় ছটফট করে শিমুলের উতপ্ত বুকে পানি হয়ে পড়ুক।

শিমুলের এমন অবশ করা চোখের দৃষ্টি পুষ্পর ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।চোখ দিয়েই যেন বুঝিয়ে দেয় অন্য অধ্যায়ের আলাপন।শিখিয়ে দেয়,কাঁপিয়ে দেয়,পুষ্পর নরম মনটা।এই দৃষ্টিটা পুষ্প আর সহ্য করতে পারে না।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
“আমাকে দেখার কি আছে?আর দেখবেন না।”

শিমুল ধমকে বললো,
“পকপক করিস না তো!আমি দেখছি।”

“অনেকক্ষন হয়েছে বের হয়েছি।বাড়ি যাই?”

শিমুল মাথা ঝাকিয়ে বললো”
“আমি যে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম,চলে যাওয়ার জন্য?”

পুষ্প ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
“কি করবো?”

“আমার চোখে তাকা।”

পুষ্প শিমুলের চোখে তাকায়।
শিমুল এক পা এগিয়ে বলে,
“কি দেখা যায় আমার চোখে?”

পুষ্প মনে মনে বলে,’আমার সর্বনাশ শিমুল ভাই।আমার যে ভিষন ভাবে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।অবুজ মনটা যেন তরতরিয়ে অনেককিছু শিখে যাচ্ছে।’পুষ্প কিছু বলার আগেই,একটা পুরুষালী গলা চেচিয়ে বললো,
❝এই বাশগাছের নিচে কে রে…….❞

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here