THE_BOOK #পর্ব_৮

0
287

#THE_BOOK

#পর্ব_৮

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

শহরের বুকে বিকেল নেমে এসেছে। সূর্যের প্রখরতা কমে গিয়েছে। শান্ত হাওয়া বইছে চারদিকে মানুষ জন যে যার কাজে ব্যস্ত।কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। তাকানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই কারো কাছে।এই পৃথিবীটা এরকমই সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো সাথে চলতেই চায় না। রা’দ মাত্র বের হলো। সকাল থেকে এই পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। সকালেই ইংল্যান্ড থেকে ফিরে বড় একটা ঘুম দিয়েছে। লাবন্য আর পূর্ণাশার সাথে কথাও হয়নি ওর। তাই এখন উদ্দেশ্য লাবন্য আর পূর্ণাশার সাথে দেখা করা। বাইকে বসে পকেট থেকে চাবি বের করতেই কেউ একজন ওর হাত ধরলো। রা’দ চকিতে হাতের মালিকের দিকে তাকালো। চুড়িভর্তি হাতজোড়া অসম্ভব সুন্দর। মেয়েটার কাজলে আঁকা চোখদুটো থেকে মায়া ঝরে পরছে। পরনে তার নেভি ব্লু রঙের থ্রিপিস। ফর্সা মানুষকে এই রঙটা বেশ মানায়। রা’দ এসময় জাবিনকে দেখে অবাক হলো তারপর বলল,”তুমি!!”

জাবিন রা’দের হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,”হ্যা আমি।”

“কেন এসেছো??”

“আসতে পারিনা বুঝি??”

“যদি তুমি আমার মা আর বোনের কাছে আসো তাহলে সমস্যা নেই। তবে এইভাবে পরপুরুষের সামনে এসে তার হাত ধরা ঠিক নয়। সমাজ তা খারাপ চোখে দেখে।”

“জানি, আপনার হাত ধরার অধিকার আমার নেই। কিন্তু সেই অধিকার টা তো চাইছি কেন দিচ্ছেন না??কেন আমার ভালোবাসাকে হেলা করছেন??”

“অন্য কাউকে বিয়ে করে নাও তাহলে তার প্রতিও তোমার ভালোবাসা চলে আসবে তখন সুখি হবে।”

রা’দের এমন কথা শোনার জন্য জাবিন মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রা’দ এতটা নিষ্ঠুর কেন?? কেন ওর ভালোবাসা বুঝতে পারছে না। জাবিন ধরা গলায় বলল,”সেটা বোধহয় কখনো হবে না। ভালোবাসার মানুষ ব্যতিত অন্য কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। আমি আপনাকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবো।”

“যদি এটা জানতে পারো যে মৃত্যু আমার খুবই কাছে। যদি আমি মারা যাই তখন?? তখন ও কি একইরকম ভালোবাসবে??”

রা’দের কথা শুনে জাবিন স্তব্দ হয়ে গেল। হঠাৎ রা’দ এরকম কথা বললো কেনো??জাবিন কৌতুহলী হয়ে বলল,”এরকম কথা বলছেন কেন??কি হয়েছে আপনার?? কোন খারাপ রোগ??”

“না তবে মৃত্যু আমার সন্নিকটে। তাই বলছি তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করে নাও তুমি সুখি হবে। আর এসব ব্যাপারে মা’কে কিছু বলো না।”

জাবিন স্মিত হেসে বলল,”ভালোবাসা সহজ হলেও ভোলা সহজ নয়। মানুষ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। মানুষের মৃত্যু হলেও মনের মৃত্যু কি হয়?? মানুষের আত্মার মৃত্যু হয় না কখনো। মানুষ মরে গেলেও মনে ঠিকই থেকে যায়। সেই মানুষটার অস্তিত্ব মনের মধ্যে অনুভব করা যায়। আমি জানি না আপনার কি হয়েছে তবে আপনার জন্য আমি অপেক্ষা করবো।”

রা’দ জাবিনের সাথে কতা না বাড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। জাবিন ফ্যালফ্যাল চোখে রা’দের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পর চোখে ঝাপসা দেখলো।জাবিন বুঝতে পারলো যে ওর চোখ পানিতে ভরে গিয়েছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই তা মুছে ফেলল জাবিন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসে পৌঁছাল রা’দ।পূর্ণাশা আর লাবন্য এসে পড়েছে। রা’দকে দেখে ওরা দুজনেই চমকালো। পূর্ণাশা রা’দকে বলল,”তুই চলে এসেছিস আমাদের তো বললি না।”

রা’দ চেয়ার টেনে বসে বলল,”টায়ার্ড ছিলাম তাই কল করতে ভুলে গেছি।”

পূর্ণাশা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই রা’দ ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল,”সব কিছু বলব তবে পরে।”

ওরা দুজনেই চুপ করে গেল। তবে রা’দের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো যে রা’দ ভালো কোন খবর দিতে পারবে না।
আজকে কোন লাইভ শো করবে না রা’দ অভিনব নেই তাই রা’দের মনটাও খারাপ। এই চাকরিটাও ছেড়ে দিবে। পূর্ণাশা অলরেডি দুইটা ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলেছে এখন রেজাল্ট বেরোনো বাকি।

রাত নয়টা বাজে। পূর্ণাশার ফ্ল্যাটে সবাই উপস্থিত হয়েছে। লাবন্য খাটের উপর হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে পূর্ণাশা দরজায় হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে আর রা’দ সোফায়।
কারো মুখে কোন কথা নেই। পিনপতন নীরবতা সবার মাঝে। একটু আগে রা’দ সম্পূর্ণ ঘটনা এদের বলেছে। ফাদারের বলা প্রতিটা কথা বলেছে যা শুনে লাবন্য আর পূর্ণাশা স্তব্ধ হয়ে গেছে।
নিরবতা ভেঙ্গে পূর্ণাশা বলল,”তারমানে শুধু অভিনব নয় মৃত্যু আমাদের ও তাড়া করছে!!”

লাবন্য কোমল কন্ঠে বলল,”আমাদের এখন কি করা উচিৎ?? মৃত্যুকে মেনে নেওয়া নাকি বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করা??”

রা’দ বলল,”লড়াই তো আমাদের করতেই হবে। অভিনবকে বাঁচাতে হবে এবং নিজেদেরকেও বাঁচতে হবে। ওই বইয়ের অভিশাপ থেকে আমরা বাঁচার চেষ্টা করব। যদি বেঁচে যাই তাহলে ওই বইটার অভিশাপ ও দূর হয়ে যাবে।”

“কিন্তু আমরা কি করে পারবো??যেখানে বব হেনরি কিছু করতে পারলো না।”

“বব হেনরি ওই আত্মাদের বের করার চেষ্টা করছিলো। ওই বইটা হঠাৎ ওনার মা পড়ে তখন বব দেশের বাইরে ছিলো একটা কাজে। যখন ওনার মা মারা যায় তখন থেকেই উনি এই বইটা থেকে সব আত্মাদের বের করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ততদিনে বইটাতে সব আত্মাদের অভিশাপ লেগে গিয়েছিল। যার কারণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বব হেনরি তার মৃত্যুর আগে বইটা তার কবরে রাখতে বলেছিল যেন কেউ পড়তে না পারে আর কারো যেন মৃত্যু না হয়। কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করেনি।”

লাবন্য হতাশ হয়ে বলল,”তাহলে তো আমাদের ও মৃত্যু হবে।”

“জানি না তবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবেই। আমরা চারজন মিলে সর্বচেষ্টা করব বেঁচে থাকার।”

পূর্ণাশা বলল,”কিন্তু ওই শক্তিশালী জলপরীর সাথে লড়াই করা তো অসম্ভব।”

“অসম্ভব কে সম্ভব করতে হবে। পৃথিবীর সর্বশক্তিশালি মানুষের ও দূর্বলতা আছে। তেমনি ওই জলপরীর ও দূর্বলতা আছে। আমাদের সেই দূর্বল জায়গায় আঘাত হানতে হবে।”

“কিন্তু কি সেই দূর্বলতা???”

রা’দ কোন কথা বলল না চুপ করে বসে রইল।
আজকে লাবন্য আর পূর্ণাশা কাঁদছে না। কেঁদে আর কি হবে যা হওয়ার তা অলরেডি হয়ে গেছে।

পরেরদিন,
দশটা নাগাদ হসপিটালে পৌঁছায় রা’দ পূর্ণাশা আর লাবন্য। মূলত অভিনবের সাথে দেখা করা। ধীর পায়ে ওরা কেবিনে প্রবেশ করলো। অভিনবের মুখের দিকে তাকাতেই রা’দের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। কি চেহারা হয়েছে অভিনবের??যে ছেলেকে দেখলে মেয়েরা ক্রাশ খেতে বাধ্য। যে ছেলের এটিটিউড দেখলে শত শত মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে যায়। সেই ছেলের হাল কি হয়েছে?? চোখদুটো লেগে রয়েছে মুখটা পানসে হয়ে গেছে। শুকিয়ে পুরো কংকালের মতো হয়ে গেছে। রা’দ অনেক কষ্টে কান্না আটকালো।অভিনবের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। পরক্ষণেই অভিনব চোখ মেলে তাকালো। রা’দকে দেখেই অভিনব ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। শরীরটা ওর ভিশন দূর্বল রা’দ অভিনবকে ধরে বসালো। অভিনব ধীর গলায় বলল,”রা’দ তুই এসেছিস!! আমাকে বাঁচা,আমি বাঁচতে চাই। এখানে থাকলে আমি মরে যাবো।”

রা’দের এবার ভিশন কষ্ট হচ্ছে। পূর্ণাশা আর লাবন্য কেঁদেও ফেলেছে। রা’দ বলল,”তুই ওই মেয়েটার কাছে যেতে চাস তাইতো??”

অভিনব মাথা নাড়িয়ে বলল,”হ্যা।”

“ভারোবাসিস ওই মেয়েটাকে??”

“খুব ভালোবাসি আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারব না।”

রা’দ মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,”ওকে ফাইন আমি তোকে নিয়ে যাব ওই মেয়েটার কাছে যাবি??”

রা’দের কথা শুনে অভিনব খুশি হয়ে বলল, “সত্যি তুই আমাকে নিয়ে যাবি??”

“হ্যা যাব।”
লাবন্য বলে উঠলো,”রা’দ কি বলছিস তুই এসব??”
রা’দ চোখের ইশারায় ওদের দুজনকে থামতে বলল। তারপর অভিনবকে বলল,”শুধু আমি কেন পূর্ণাশা আর লাবন্য ও যাবে। তুই আমাদের বন্ধু তোর কথা আমরা না রেখে পারি?? তবে তুই কি ওই মেয়েটাকে একবারও বলেছিস যে তুই ওকে ভালোবাসিস??”

“ন না আমি বলিনি। সময় পেলাম কোথায়??”

“আচ্ছা তাহলে তুই এবার ডিরেক্ট প্রপোজ করবি। পারবি তো??”

অভিনব খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,”পারবো।”

“ওকে, আমি পূর্ণাশা আর লাবন্য লুকিয়ে লুকিয়ে ভিডিও করব। তুই কিন্তু বলবি না কাউকে??”

“আচ্ছা বলব না তুই তাড়াতাড়ি নিয়ে চল আমাকে।”

“তুই বস আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি।”

রা’দ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো। লাবন্য পূর্ণাশা ও বেরিয়ে এলো। পূর্ণাশা বলল,”এসব তুই কি করতে চাইছিস রা’দ??”

“অভিনবকে বাঁচাতে চাইছি।”

পূর্ণাশা অবাক হয়ে বলল,”ওই জলপরীর কাছে নিয়ে গেলে তো অভিনবকে মেরে ফেলবে।”

“আর অভিনবকে ছাড়া আমরা জলপরীকে ধরতে পারব না। তাই জলপরীকে ধরার একমাত্র টোপ হলো অভিনব।”

লাবন্য এগিয়ে এসে বলল,”এক মিনিট তুই জলপরীকে ধরতে চাইছিস মানে??তুই কি জলপরীকে মারার প্ল্যান করছিস??”

“একজ্যাটলি তাই।”

“কিন্তু কিভাবে মারবি??তোর কি মনে হয় তুই পারবি??”

“তোরা আছিস না আমার সাথে।”

পূর্ণাশা আর লাবন্য দু’জনেই অবাক হয়ে রা’দের দিকে তাকিয়ে রইল। রা’দ আবার বলল,”দেখ জলপরী আমাদের কাউকে আঘাত করতে পারবে না। তাই আমাদের শক্তি ওই জলপরীর থেকে কম ও না। জলপরী বেঁচে থাকলে অভিনব মারা যাবে আর অভিনবকে বাঁচাতে হলে জলপরীকে মারতে হবে। নয়তো অভিনবের সাথে সাথে আমাদের ও মরতে হবে। কথা ক্লিয়ার??”

পূর্ণাশা মাথা নাড়িয়ে বলল,”আমি পুরোপুরি বুঝতে পারলাম না।”
লাবন্য ও পূর্ণাশার কথায় সায় দিলো। রা’দ বিরক্ত হয়ে বলল,”তোদের বেশি কিছু বুঝতে হবে না শুধু এটা মাথায় রাখ যে জলপরীকে আমাদের ধরতে হবে। আর তা আজকেই। তোদের আমি যা বলব শুধু তাই করবি।”

লাবন্য আর পূর্ণাশা মাথা নাড়ল কিন্তু রা’দের কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝলো না। রা’দ কথা না বাড়িয়ে ডক্টরের কেবিনে গেল।ডক্টরকে বলে অভিনবকে নিয়ে এলো।পূর্ণাশা আর লাবন্য শুধু রা’দের কান্ড দেখতেছে।কি করতে চাইছে রা’দ???

একটা পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে এনেছে রা’দ। ও নিজেই ড্রাইভ করবে। পূর্ণাশা আর লাবন্যকে পিকআপের ভেতরে রেখেছে আর অভিনবকে ওর সাথে বসিয়েছে। অভিনব তো
বেজায় খুশি আজকে ওর প্রেয়সিকে প্রপোজ করবে। তাই আগের মতো হিংস্র ভাবটা নেই।
রা’দ শহর থেকে দূরে একটা নদীর তীরে গাড়ি থামায়। এখানে মানুষ খুবই কম আসে। আর এই ভরদুপুর বেলায় তো আসেই না। তাই রা’দ এই জায়গাটাই বেছে নিয়েছে।
নদীর তীরে কাশবনে ভরে গিয়েছে। এই বনে কেউ লুকিয়ে থাকলে তাকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। রা’দ গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণাশা আর লাবন্যকে বের করলো। পিকআপের ভেতর থেকে বড় একটা ব্যাগ বের করে লাবন্যর হাতে দিলো। রা’দ অভিনবের হাতে এক তোড়া ফুল গুঁজে দিলো আর বলল লুকিয়ে রাখতে।যখন জলপরী ওর সামনে আসবে তখন যেন বের করে। অভিনব পেছনে প্যান্টের সাথে ফুলের তোড়াটা গুজে রাখলো। তারপর ওরা কাশবন পেরিয়ে নদীর তীরে যেতে লাগলো।
লাবন্য আর পূর্ণাশা এগোতে পারছে না। কাশবনের ধারালো পাতায় হাত পা ছিড়ে যাচ্ছে।
নদীর তীরে অভিনবকে একা পাঠালো তারপর ওরা তিনজন কাশবনের ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে জলপরীর অপেক্ষা করতে লাগলো।রা’দ ভেবেই নিয়েছে আজ হয় ওরা মরবে না হয় ওই জলপরীকে মারবে।

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here