THE_BOOK #পর্ব_২৩

0
230

#THE_BOOK

#পর্ব_২৩

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে শ্বাস নিলো রা’দ। এখনো সে দরজা খোলেনি। বাইরে থেকে বৃষ্টি আর মেঘের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রা’দ হাত বাড়িয়ে ছিটকিনি খুলে দরজা খুলে ফেলে। সামনে থাকা ব্যক্তিদের দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলে। রা’দ তাদের চিনতে পারছে না। কেমন যেন এক ঘোরের মধ্যে আছে সে। রা’দ প্রশ্ন করলো,”আপনারা কারা??”

রা’দের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। অবাক করা কন্ঠে একটি মেয়ে বলে ওঠে,”আমাকে চিনতে পারছিস না রা’দ??আমি পূর্ণাশা তোর বন্ধু!!”

রা’দ ভাঙা গলায় বলল,”আমার বন্ধু??”

অভিনব রা’দের কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকি দিয়ে বলে,”রা’দ তুই আমাদের চিনতে পারছিস না হুমম??”

অভিনব রা’দকে ঝাকাতেই যেন রা’দের সম্বিৎ ফিরে এলো। একহাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। একটু পর চোখ খুলে তাকালো বলল,”তোরা এখানে???”

অভিনব বলে,”যাক চিনতে পেরছিস তাহলে!!”
“কিন্তু এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আর এই গভীর জঙ্গলে তোরা এলি কিভাবে??”
রা’দের কথা শুনে লাবন্য পূর্ণাশা আর অভিনব বাইরে তাকালো তারপর আবার রা’দের দিকে তাকালো।

“বাইরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে বুঝি???”
অভিনবের কথায় রা’দ কপাল কুঁচকে ফেলল।বলল,”পাগল তুই??আমি তো স্পষ্ট দেখতেই পাচ্ছি যে বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে আর মেঘ ও ডাকছে। কিন্তু তোদের দেখে মনে হচ্ছে না যে তোরা বৃষ্টি মাথায় এসেছিস। একটুও ভিজিসনি,কেন বলতো??”
অভিনব কিছু একটা ভাবলো তারপর বলল,”আমরা ছাতা আর রেইনকোট পরে এসেছি তাই ভিজিনি। কিন্তু আমরা কি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো??”

“ওহ হ্যা ভেতরে আয়।”
ওরা তিনজনই ভেতরে ঢুকলো। তিনজনের দৃষ্টি গেল নূরজাহান এর দিকে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওরা নূরজাহানের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরজাহান ও অবাক হয়ে ওদের দেখছে। রা’দ ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, “ওর নাম নূরজাহান। সেদিন আমাকে বাচিয়েছিলো। ও না থাকলে হায়নার দল আমাকে খেয়েই ফেলতো। আর নূর ওরা হলো আমার বন্ধু। অভিনব পূর্ণাশা আর লাবন্য।”

রা’দ সবার সাথে নূরজাহানের পরিচয় করিয়ে দিলো। অভিনব ইশারায় লাবন্য আর পূর্ণাশাকে কিছু বলল তা ওরা দুজন বেশ বুঝতে পারছে। পূর্ণাশা লাবন্যর কানে কানে ফিসফিস করে বলল,”দ্যা বুক এর কথা মিলে গেছে লাবন্য। দেখেছিস রা’দ আমাদের প্রথম দেখাতে চিনলো না। আর এই সেই পরীকন্যা।দেখেছিস কি সুন্দর দেখতে। আমাদের তাড়াতাড়ি রা’দকে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে নয়তো রা’দ এবং আমাদের মৃত্যু অনিবার্য।”
লাবন্য তাতে সায় দিয়ে বলল,”হুম, আমাদের প্ল্যান মাফিক এগোতে হবে যাতে এই নূরজাহান কিছু টের না পায়। যদি মেয়েটা কিছু টের পায় তাহলে সর্বনাশ।”

ওরা দুজনে কিছু কথা বলে হাসিমুখে নূরজাহানের সাথে পরিচিত হলো। রা’দ বলল, “তোরা আমাকে এভাবে ফেলে চলে গিয়ে ঠিক করিসনি। কিন্তু তোরা জানলি কীভাবে যে আমি এখানে আছি??এই গভীর জঙ্গলে এলি কিভাবে তোরা??”

অভিনব চৌকিতে বসতে বসতে বলল,”সেটা সিক্রেট তোকে বলা যাবে না।”

“এটা আবার কেমন সিক্রেট??”
লাবন্য এগিয়ে এসে বলল,”ওর কথা বাদ দে তো!! সবসময় মজা করে। আমরা অনেক কষ্টে তোর খোঁজ পেয়েছি। যাকগে সেসব বাদ দে। তোকে খুঁজে পেয়েছি এটাই অনেক।”

পূর্ণাশা এগিয়ে গেলো নূরজাহানের দিকে। হাসিমুখে বলল,”আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য।”

নূরজাহান এতোক্ষণ টেবিলের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের সব কথা শুনছিলো কিছু বলেনি সে। তবে এবার তো মুখ খুলতেই হবে। কিছু না বলে তো থাকা যাবে না। তাই ভদ্রতার সাথে বলল,”এটা আমার কর্তব্য ছিলো। একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে তো সাহায্য করতেই হবে।”

রা’দ এগিয়ে এসে বলে,”আপনার পায়ে তো ব্যথা আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?? চলুন বসবেন।”
নূরের হাত ধরে চৌকির সামনে গিয়ে অভিনবকে উঠিয়ে নূরকে বসিয়ে দিলো। অভিনব এতে অবাক হলো না। যেন ও আগে
থেকেই জানতো রা’দ এমনটা করবে। অভিনব রা’দের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা করল কারণ নূরের দিকে রা’দ যত তাকাবে ততই মায়ায় জড়িয়ে পড়বে। তাই অভিনব বলল, “এটা কি পড়েছিস??ভালোই তো দেখাচ্ছে তোকে!! একদম জংলি দের সরদার।”

বলেই অভিনব হেসে উঠলো। রা’দ কঠোর দৃষ্টিতে অভিনবের দিকে তাকালো। অভিনব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকায়।রা’দ কিছু না বলে নূরের পাশে বসে পড়লো। তারপর এটা ওটা বলতে লাগলো। নূর ও তার উওর দিচ্ছে।

পূর্ণাশা লাবন্য আর অভিনব নিরব দর্শকের মতো তা দেখে যাচ্ছে। এমন তো ছিলো না রা’দ। তিনদিন পর দেখা অথচ ওদের সাথে ভালোভাবে কথাই বলতেছে না। অভিনব বাইরে যেতে যেতে লাবন্য পূর্ণাশাকে বাইরে আসতে বলে। ওরা অভিনবের পিছন পিছন বেরিয়ে যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে লাবন্য বলল,”আমাদের হাতে বেশি সময় নেই অভিনব। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।”

“কিন্তু রা’দকে আগে এখান থেকে সরাতে হবে তারপর যা করার করতে হবে।”
পূর্ণাশা বতিব্যস্ত হয়ে বলল,”কিন্তু রা’দ কি যাবে??দেখছিস না কিভাবে মেয়েটার সাথে লেগে রয়েছে। ভাগ্যিস সঠিক সময়ে আমরা এসে পড়েছি নাহলে যে কি হতো??”

লাবন্য বলল,”রা’দকে চোখের মায়াজালে এখানে আটকে ফেলেছে ওই মেয়েটা। নাহলে তোরাই দেখ এখানে ঝড় বৃষ্টি কোথায় হচ্ছে?? চারিদিক তো পরিস্কার। আর এটা কোন গভীর জঙ্গল নাকি??এখান থেকে পনেরো মিনিট গেলেই মেইন রোড। অথচ রা’দকে দেখ।”
লাবন্য আর কিছু বলল না। চুপ করে বাইরে তাকালো সে। ওরা তিনজন আবার ভেতরে গেল। রা’দ এখনও কথা বলতেছে নূরের সাথে। অভিনব পূর্ণাশার দিকে ইশারা করলো। পূর্ণাশা টেবিল থেকে একটা চারকোনা কাঠের বাক্স হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,”বাহ খুব সুন্দর তো বাক্সটা। এটা কোথা থেকে এনেছেন??”
বলতে বলতে সে নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।নূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পূর্ণাশার হাত ফসকে বাক্সটা পড়ে গেল। পড়লো তো পড়লো নূরের পায়ের উপর। নূর ব্যথায় ‘আহ্’
করে উঠতেই রা’দ বলল,”কি হয়েছে আপনার??”
কাঠের বাক্সের কোণায় লেগে নূরের পা কেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে সেখান থেকে। রা’দ বিচলিত হয়ে নূরের পা ধরে বলল,”এটা কি করলি তুই???”
পূর্ণাশা অসহায় কন্ঠে বলল,”সরি আমি একদম বুঝতে পারিনি। ইশ কতখানি কেটে গেছে। রক্ত ও তো বের হচ্ছে খুব।”

অভিনব এগিয়ে এসে বলল,”আগে তো রক্ত পড়া বন্ধ করতে হবে। কি দিয়ে যে বন্ধ করি??”

“এখানে তো ওষুধ পাওয়া যাবে না। শুনেছি জঙ্গলে নাকি ঔষধি গাছ থাকে ওখান থেকেই আনতে হবে দেখছি। অভিনব তুই যা।”
লাবন্যর কথা শুনে অভিনব বলে উঠলো, “আমি যাবো!! তাও জঙ্গলে?? আমার তো ভয় লাগছে,এই ঝড় বৃষ্টির সময় যদি কোন বিপদ হয় তো?? তাছাড়া আমি তো ওইসব গাছ চিনি না।”
লাবন্য রাগন্বিত কন্ঠে বলল,”তুই পারিস কি হ্যাঁ??দেখছিস না কত রক্ত বের হচ্ছে??”

রা’দ দাঁড়িয়ে বলল,”কারো যেতে হবে না আমিই যাচ্ছি।”
লাবন্য পূর্ণাশা দ্রুত নূরের পাশে গিয়ে বসে।

“তুই যা ততক্ষণে আমরা নূরজাহানের খেয়াল রাখবো।”
রা’দ পূর্ণাশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,”দেখিস,প্লিজ ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়?? তাহলে তোদের বন্ধু বাঁচবে না।”

রা’দের কথা শুনে ওরা তিনজন থমথমে মুখে তাকালো। রা’দ বাইরে গিয়ে আবার ফিরে আসে। নূরের কাছে গিয়ে বলল,”চিন্তা করবেন না। আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো।”

নূর স্নিগ্ধ হেসে বলল,”অপেক্ষা করবো।”

রা’দ দ্রুতপদে বেরিয়ে গেল। অভিনব বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রা’দের চলে যাওয়া দেখলো। মিনিটের মধ্যে জঙ্গলে মিলিয়ে গেল রা’দ।

অভিনব দ্রুত ঘরের ভেতরে আসলো। পূর্ণাশা আর লাবন্যর দিকে ইশারা করতেই ওরা দাঁড়িয়ে পড়লো। নূরজাহান ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনও সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। অভিনব গিয়ে হেঁচকা টানে নূরকে দাঁড় করায়। এতে নূর ভিষন অবাক হয়ে গেল কিন্তু কিছু বললো না। অভিনব নূরের দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধে দিয়ে পেছন থেকে নূরকে ধরেই রাখলো। নূর কাতর কন্ঠে বলল, “এসব কি করছেন আপনারা?? ছাড়ুন আমাকে!!!”

অভিনব বলল,”সরি পরীকন্যা নূরজাহান আপনাকে দ্যা বুক থেকে মুক্তি দিতে আর আমাদের প্রাণ বাঁচাতে এটা করতেই হবে।”

নূরজাহান অবাক হয়ে বলল,”পরীকন্যা!!কি বলছেন এসব!!আমি কোন পরীকন্যা নই।আমি মানুষ,সাধারণ মানুষ।”
লাবন্য বলল,”না আপনি পরীকন্যা। তা আপনি এখন বুঝতে পারছেন না। তবে আমাদের আসতে দেরি হলেই বুঝে যেতেন।”

পূর্ণাশা ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে অভিনবের দিকে ছুঁড়ে মারলো। অভিনব সাথে সাথে ক্যাচ ধরলো। পূর্ণাশা আহত গলায় বলে,”সরি ফর দিস। মুক্তি পেতে হলে আপনাকে মরতে হবে। আমাদের কিছু করার নেই।”

নূরজাহানের চোখ থেকে পানি পড়তেছে। কি হচ্ছে তা ও নিজেও বুঝতে পারছে না। সে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,”রা’দকে বলেছিলাম যে আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি। ওর আসা অব্দি পর্যন্ত আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমি অপেক্ষা ক,,,,”

নূর আর কিছু বলার আগেই ওর গলায় ধারালো ছুরি চালিয়ে দিলো অভিনব। গলার রগ কেটে যাওয়ায় সেখান থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। অভিনব নূরের হাতের বাঁধন খুলে দিলো সাথে ওকে ছেড়ে দিলো। নূর মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে গেল। রক্তে গোসল করে গেছে সে। একহাতে গলা চেপে ধরেছে আর একহাত মেঝেতে রেখেছে। নূরের পরনের সাদা পোশাক লাল হয়ে গেছে। এই লাল পোশাকেও নূরকে কম সুন্দর লাগছে না। ঠিক আগের মতোই সুন্দর লাগছে। রা’দ নূরকে লাল রঙের পোশাকে দেখলে হয়তো মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। নূরের দৃষ্টি দরজার দিকে। সে এখনো রা’দের আসার অপেক্ষায় রয়েছে। বেঁচে থাকতে চাইছে রা’দকে দেওয়া কথা রাখার জন্য। কিন্তু সেটা যে আর সম্ভব হচ্ছে না। চোখ দুটো যে তার টানছে। শরীর থেকে সব রক্ত বের হয়ে ফর্সা শরীর আরো ফর্সা হয়ে গেছে। ফলে শরীরের প্রতিটা রগ দেখা যাচ্ছে ‌। নীল হয়ে গেছে রগ গুলো। নূর শেষ চেষ্টা করছে রা’দের জন্য। এই বুঝি রা’দ চলে এলো। রা’দের হাত ধরে সে মৃত্যু বরণ করতে চায়। কিন্তু না রা’দ এলো না।

আস্তে আস্তে নূরজাহানের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। যে হাতে গলা চেপে ধরেছিল সে হাত আলগা হয়ে গেল। মেঝেতে ছড়িয়ে দিলো হাত দুটো। শেষ নিঃশ্বাস টা নূর বড় করে নিলো। তারপর নিথর হয়ে গেল তার দেহ। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল তার। সাথে সাথে সাদা আলো নূরের শরীর থেকে এক ঝলকানিতে বেরিয়ে গেল।

চলবে,,,,,,,,,

পাঠকরা দেখি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এভাবে পড়লে তো গল্প ভালো লাগবে না। তাই ধৈর্য সহকারে পড়ুন। শেষ পর্যন্ত না পড়ে কেউ উল্টাপাল্টা মন্তব্য করবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে 💞💞

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here