THE_BOOK #পর্ব_২৫(অন্তিম পর্ব)

1
650

#THE_BOOK

#পর্ব_২৫(অন্তিম পর্ব)

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

সমুদ্রের তীর,,,,,,,,,

সময়টা সন্ধ্যার পর,সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। তীর জুড়ে চারকোনা পাথর বিছানো সারি সারি। পাথরগুলো অনেক বড়বড় আর এতো পাথর যে গুনে শেষ করা যাবে না। সমুদ্রের তীরে ঝাউবন। লম্বা লম্বা ঝাউগাছ গুলো যেন আকাশ ছুঁয়েছে। পাশাপাশি দুটো ঝাউ গাছের সাথে দড়ি দিয়ে দোলনা বানানো হয়েছে। এভাবে যত সামনে আগানো যায় ততই দোলনা গুলো দেখা যায়। দুটো দোলনায় পূর্ণাশা আর লাবন্য বসে আছে। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। বাতাসে সবার চুল নড়ছে। ঝাউ গাছের সাথে ঠেস দিয়ে রা’দ আর অভিনব দাঁড়িয়ে আছে। মনোরঞ্জনের জন্য ওরা সমুদ্র বিলাস করতে এসেছে। কিন্তু আফসোস এর বিষয় যে কারো মনই ভালো হচ্ছে না।

অভিনব সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে চোখ রেখে বলতে লাগলো,”সেদিন তুই জঙ্গলে পড়ে যাওয়ার পর ওই ভাম্পায়ারটা আমাদের অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। একমুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম এই বুঝি সে পূর্ণাশাকে মেরে ফেলবে। আমি আর লাবন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি। তারপর মনে হলো জাহ্নুবির কথা।”

এটুকু বলেই অভিনব থামলো তারপর আবার বলতে লাগলো,”হ্যা সেদিন জাহ্নুবি আমাদের বাঁচিয়েছিল। সেদিন ভয়ংকর এক যু্দ্ধ লেগেছিল খোলা এক ময়দানে। এতোটা ভয়ানক ছিল সেই লড়াই যা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। আমরা তিনজন সেদিন অনেক ভয় পেয়েছিলাম। সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাহ্নুবির জয় হয়। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের বাঁচায় সে। আমরা জাহ্নুবির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
কিন্তু সেদিন জাহ্নুবি আমাদের আরেকটা তথ্য দেয় আর সেটা হলো দ্যা বুক এর শেষ গল্প নিয়ে। জাহ্নুবি বলেছিল আমরা যেন সেদিন ই পরের গল্পটা পড়ে ফেলি। না হলে নাকি তোর বিপদ হতে পারে। কারণ তুই জঙ্গলে ছিলি। আমরা যদি তোর গল্পটা না পড়তাম তাহলে ওই জঙ্গলের মায়াজালে তুই চিরদিনের জন্য আটকে থাকতি। আমরা তোকে বাঁচাতে যেতে পারতাম না। আর আমাদের মৃত্যু ও নিশ্চিত।তাই আমরা তাড়াতাড়ি সেখানে বসেই দ্যা বুক পড়ে ফেলি।
সেখানে শেষ গল্পটা তোকে নিয়ে লেখা ছিলো। তুই যাকে ভালোবেসেছিস সে আর কেউ নয় একজন পরীকন্যা। পরীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ছিল নূরজাহান। তার এই সৌন্দর্যই তার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নূরের রূপই তোকে মুগ্ধ করেছে যার কারণে তুই নূরকে ভালোবেসেছিস। কিন্তু বইতে লেখা ছিলো যে তুই যদি আবেগের বশে নূরের সঙ্গে ইন্টিমেট হস তাহলে তার ভেতর থেকে এক ভয়ংকর সত্তা বের হবে যে তোকে খুন করবে।
ব্যস এটুকুই লেখা ছিলো বইতে। কিন্তু জাহ্নুবি নূরজাহানের সব কিছুই জানতো। বব হেনরি নূরজাহানকে ধরে একটা মৃত মেয়ের ভেতরে আটকে দেয়। ফলে মেয়ের লাশটা নূরের রূপ ধারণ করে। যদি তুই নূরের সাথে ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হতি তাহলে ওই মৃত মেয়েটা নূরের শক্তি নিয়ে ভয়ংকর আত্মায় পরিণত হতো। আর তোকে মেরে ফেলতো। তখন নূর একজন মানুষের মতোই ছিলো। আমরা ওই মৃত লাশ থেকে নূরকে বের করার জন্যই আমরা নূরকে হত্যা করেছি। তাই নূরজাহান এখন থেকে মুক্ত। এই মুহূর্তে সে তার পরীরাজ্যে আছে তার নতুন জীবন নিয়ে।”

রা’দ এক দৃষ্টিতে সামনের গভীর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ মন দিয়ে অভিনবের কথাগুলো শুনছিল। সব শোনার পর রা’দ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল,”জাহ্নুবির মতো কি নূরের দেখা পাবো না??জাহ্নুবি যেমন আমাদের দেখা দিয়েছে তেমনি যদি একবার নূরের দেখা পেতাম।”

অভিনব হালকা হাসলো বলল,”যদি তেমনটাই
হতো তাহলে আমি তো রায়াকে ও পেতাম। কই সে তো এলো না??জাহ্নুবির আসার কারণ ছিল সে নতুন করে জন্ম নিয়েছে। তাই সে আমাদের সাহায্য করতে এসেছিল। কিন্তু এখন তো সেও চলে গেছে।”

রা’দ বড় একটা শ্বাস ফেলে নিচে দিকে তাকালো। অভিনব জুতো খুলে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেল। ভাটা পড়েছে তাই বালুর উপর পা ফেলে পানির দিকে এগিয়ে গেল। পানিতে পায়ের তালু ভিজিয়ে দিয়ে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে রইল। একটু পর পর ঢেউ এসে অভিনবের পা ভেজাতে ব্যস্ত। আর অভিনব ঢেউয়ের তাল দেখতে ব্যস্ত। বাতাসে ওর সিল্কি চুলগুলো উড়ছে। একধ্যানে সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ মনে হলো ও যেন রায়াকে দেখলো। পানির মধ্যে সাঁতরে আসছে এই দিকে। অভিনব চমকে তাকালো। দ্রুত সামনের দিকে পা ফেলল সে। হাঁটু অব্দি পানি পর্যন্ত গিয়ে হুস আসলো তার। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই এই সময়ে। শুধু আকাশে অর্ধচন্দ্র দেখা যাচ্ছে। অভিনব বুঝতে পারো যে এটা তার চোখের ভ্রম। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে সে। অভিনব চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। কি এমন হতো যদি রায়া তার সাথে থাকতো?? ওদের সাথে এমনটা হতে হলো কেন??

দূর থেকে পাথরের উপর বসে আছে রা’দ। অভিনবের কাজগুলো দেখতেছে সে। রা’দ বেশ বুঝতে পারছে যে অভিনব কিসের ব্যথায় কাতরাচ্ছে??ওর জীবনটাতেও তো সেই ব্যথা দৌড়াচ্ছে। এই অভিশপ্ত বইটা ওদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাই কেড়ে নিয়েছে। তার থেকে যদি ওদের জীবনটাই কেড়ে নিতো তাহলে মন্দ হতো না। তখন যদি এটা বুঝতো তাহলে ও কখনোই বাঁচার চেষ্টা করতো না। কি জানি নূরজাহান এখন ঠিক কোথায় আছে??সে নিশ্চয়ই রা’দকে ভুলে গেছে। মনে রাখবেই বা কেন??তিনদিনে কি কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মায়?? কিন্তু রা’দ কিভাবে ওকে ভালোবাসলো?? তখনই রা’দের মনে পড়লো যে ও তো শুরু থেকেই নূরকে স্বপ্নে দেখতো। এভাবেই সে নূরকে ভালোবেসেছে। রা’দ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো।

পূর্ণাশা ঝাউ গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর তিন বন্ধুর কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছে। যদিও পুরোটা উপলদ্ধি করতে পারছে না। কিভাবে পারবে ও?? কখনো তো কাউকে ভালোবেসে দেখেনি। পরক্ষণেই পূর্ণাশার মনে হলো যে কাউকে ভালো না বেসে ভালোই করেছে। না হলে ওকেও নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো। যেমনটা রা’দ অভিনব লাবন্য পাচ্ছে। পূর্ণাশা ঘাড় ঘুড়িয়ে লাবন্যর দিকে তাকালো। লাবন্য দোলনায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবন্যর দৃষ্টি অনুসরণ করে পূর্ণাশা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে অর্ধেক চাঁদ আর তার পাশে তারাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লাবন্য সেই তারা গুলো দেখেছে।
পূর্ণাশা ভেবে পায় না যে এভাবে ওরা আর কতোদিন চলবে??? জীবনটাকে তো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ওরা কি আদৌ রাজি হবে তাতে?? ওদের তিনজনের মধ্যে পূর্ণাশা কাবাব মে হাড্ডি হচ্ছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। এই তিনজনকে বোঝালেও বুঝবে না।

…………………

দুই বছর পর,,,,,,,,

অভিনবের ফোনটা অনবরত বেজে যাচ্ছে। ঘুমের ঘোরে বিরক্ত বোধ করলো সে। এই সাতসকালে ফোন দিয়ে ঘুমের বারোটা বাজানোর কি দরকার ছিল?? নিশ্চিন্তে কি ঘুমাতে দেবে না??অভিনব চোখ বন্ধ করেই হাতরে ফোন পাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে ব্যর্থ হলো কারণ ফোনটা যে বালিশের নিচে নেই। নিশ্চয়ই টেবিলের উপর রেখে এসেছে। অগত্যা সাধের ঘুম ছেড়ে উঠতে হলো তাকে। ফোন করা ব্যক্তিটিকে মনে মনে কতগুলো গালি দিলো সে। আস্তে আস্তে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। ততক্ষণে ফোনটা কেটে গেছে।অভিনব ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। পূর্ণাশার নাম্বারের পাশে সাতবার মিসড কল লেখা। অভিনব কপাল কুঁচকে ফেলে। এই মেয়েটা ওকে এতো জ্বালায় কেন?
সময়ে অসময়ে ফোন করার কোন মানে হয়??
কাজের সময় ফোন করে জ্বালিয়ে মারে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!!অভিনবের ভাবনার মাঝেই আবার ফোন বেজে উঠলো।
বিরক্ত হয়ে অভিনব ফোন রিসিভ করে বলল,”কি সমস্যা তোর??এই সাত সকালে ফোন করে জ্বালাচ্ছিস কেন?? তুই ঘুমাবিনা বলে কি আমাকেও ঘুমাতে দিবি না।”

পূর্ণাশা অবাক হয়ে গেল। এতে রাগার কি আছে, “এতো রাগ করছিস কেন??আর তোর এক সকাল মনে হচ্ছে??দশটা বাজে। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেন??অফিস নেই তোর??”

পূর্ণাশার কথা শুনে অভিনব কান থেকে ফোন সরিয়ে টাইম দেখলো। সত্যি তো দশটা বাজে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে সে। তাই ঘুম ভাঙতে দেরি হয়েছে। অভিনব বলল,”কি বলবি জলদি বল আমার কাজ আছে।”

“হুম আমি ফোন করলেই তোর কাজ পড়ে যায় তাই না??”

“বল না কি বলবি??”

“রা’দ তোকে ফোন করেছিলো??”

“না তো কেন??”

“তুই হয়তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই ধরতে পারিসনি। শোন ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়। কারণ আমাদের রা’দ সাহেব বিয়ে করছে।”
সাথে সাথে অভিনবের চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল। বড়বড় চোখে তাকালো সে। বলে উঠলো,”কি???”

“জ্বী হ্যা। অনেক কষ্টে তাকে রাজি করানো হয়েছে। এবার আপনি তাড়াতাড়ি এসে পড়ুন। না করবি না। দুইটা বছর পর সবার সাথে দেখা হচ্ছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আয়।”

অভিনব শান্ত স্বরে বলে,”দেখছি।”

“দেখলে হবে না তোকে সাথেই হবে। রা’দ ফোন করে তো সব বলবেই তখন তো মানা করতেই পারবি না।”

“এই তুই ফোন রাখ।”
এক ঝটকায় অভিনব ফোনটা কেটে দিলো। সোফায় একপা তুলে বসে আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। তার পর কিন্ঞ্চিৎ হাসি ফুটলো ওর মুখে।
সেদিনের পর দুই বছর কেটে গেছে। চার বন্ধু এখন আলাদা থাকে। তবে ফোনে সবার সাথে যোগাযোগ রয়েছে। রা’দ ঢাকাতেই একটা চাকরি করে আর অভিনব চট্টগ্রামে। সমুদ্রের প্রতিদিন অভিনবের একটা টান রয়েছে। সেটা হয়তো রায়ার কারণেই। তাই সমুদ্র না দেখলে অভিনবের ভালো লাগে না। তাই সে চট্টগ্রামে চাকরি নিয়েছে যাতে সমুদ্রে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে পারে। আর লাবন্য এখন বাবা মায়ের সাথে থাকে। ওখানেই একটা চাকরি ধরেছে সে। লাবন্য ভেবে নিয়েছে সে কোনদিন বিয়ে করবে না। প্রিতম ছাড়া সে আর কাউকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারবে না। তাই ও একটা বাচ্চা দওক নিয়েছে। পাঁচ বছর বাচ্চাটার। এতেই সে হ্যাপি। মনের দিক দিয়ে সুখি না হলেও বাইরে সবসময় হাসিখুশি থাকে। কি দরকার মানুষকে নিজের কষ্টের দেখানো। দেখলেই বা তারা কি করতে পারবে?? ওর কষ্ট তো দূর করতে পারবে না। তাই সবসময় হ্যাপি থাকার চেষ্টা করাই বেটার। আর পূর্ণাশা,সেও এখন ফ্যামেলির সাথে থাকে। পূর্ণাশা ভেবেছে পরিবারের কথাতেই বিয়ে করে নেবে।

এভাবেই ওদের জীবন থেকে দুই বছর অতিক্রম করে গেছে। সবাই যার যার জীবন নিয়ে এগিয়ে চলছে। শুধু বন্ধুদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে চারজনে গ্রুপে ভিডিও কলে আড্ডা দেওয়া পুরোনো স্মৃতি নিয়ে কথা বলা এভাবেই কেটে যায়। অভিনব ভেবেছিল রা’দ হয়তো কোনদিন নূরজাহানকে ভুলতে পারবে না। তাই রা’দের বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছে। সাথে এও বলেছে যে রা’দ বিয়ে করলেই ও বিয়ে করবে। অভিনব পড়েছে মহা মুসকিলে। বিয়ে জিনিসটা এখন ওর কাছে এলার্জির মতো হয়ে গেছে। বিয়ে শব্দটা শুনলেই গা চুলকাতে শুরু করে। হতাশ হয়ে অভিনব রেডি হয়ে নিলো। তারপর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। পূর্ণাশার কথাই ঠিক হয়েছে। পথেই রা’দ ফোন করে ওকে ইনভাইট করলো। তবে দাওয়াত দেওয়া ব্যতিত আর কোন কথা বলেনি রা’দ।

……………….

আজ অনেক দিন পর চার বন্ধু এক হয়েছে। ওরা চারজনই খুব খুশি। রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে সে। লাবন্যর কোলে পাঁচ বছরের একটা ছেলে। কোথা থেকে ছোট বাচ্চা জোগাড় করলো এই নিয়ে ওরা কথা বলতেছে। পূর্ণাশা চকলেট নিয়ে এসেছে। সেগুলোই বাচ্চাটাকে দিচ্ছে। কোলে নিয়ে আদর করছে। প্রিতমের নামের সাথে মিল রেখে বাচ্চাটার নাম প্রিয়াস রেখেছে। পূর্ণাশা প্রিয়াসকে কোলে নিয়ে আদর করছে। অভিনব ছো মেরে প্রিয়াসকে কোলে তুলে নিলো। পূর্ণাশা রেগে গিয়ে বলল,”এটা কি করলি তুই??”
“দেখলি তো কি করলাম। তুই কি একাই কোলে নিবি নাকি?? বিয়ে কর বাচ্চা গাচ্চা নে তারপর কোলে নিস।”

পূর্ণাশা নাক সিটিয়ে বলে, ছিঃ মুখের ভাষার তো খুব উন্নত হয়েছে দেখছি।”

“বাংলাদেশ এতো উন্নত হচ্ছে সেখানে আমার মুখের ভাষা উন্নত হলে দোষ কি??”

“তুই বেশি কথা বলছিস কিন্তু??”

লাবন্য ওদের ঝগড়া দেখে হেসে ফেললো। ওরা দুজন এরকমই সবসময় ঝগড়া করে। লাবন্য ওদের থামিয়ে বলে,”তোরা থাম এসেছি বিয়ে খেতে ঝগড়া করতে না। রা’দ কোথায়??”
অভিনব পূর্ণাশা এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু রা’দকে কোথাও দেখতে পেল না। তখনই রাইসা এসে বলল,”আপু ভাইয়াকে দেখেছেন??”

লাবন্য বলল,”না তো!! কেন কি হয়েছে??”

“জানি না। একটু পর তো ভাইয়ার গায়ে হলুদ আর ভাইয়া এখন থেকেই উধাও। মাঝেমধ্যে রাতের বেলা কোথায় যেন চলে যায় ভাইয়া। জানি না কোথায় যায়?? আজকের দিনে না গেলে কি হতো?? অনেক কষ্টে মা বিয়েতে রাজি করিয়েছে। এখন কি বিয়েটা হবে না।”

অভিনব বলল,”চিন্তা করো না আমি রা’দকে ফোন করে দেখছি।”

রা’দ গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তখনই ফোনটা বেজে উঠলো তার। চোখ মেলে তাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অভিনব ফোন করেছে। এতক্ষণ ওর মা আর রাইসা ফোন করেছিলো কিন্তু রা’দ রিসিভ করেনি। কিন্তু এখন রিসিভ না করেও উপায় নেই। রা’দ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অভিনব বলল,”কি রে কোথায় তুই??অনুষ্ঠান হবে না নাকি?? আমরা কখন থেকে বসে আছি তোকে হলুদ মাখাবো বলে আর তুই লাপাত্তা।”
রা’দ গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,”আসছি।”
এটুকু বলে ফোনটা কেটে দিলো সে। তারপর উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসলো। বাইকে বসে আবার জঙ্গলের দিকে তাকালো তারপর বাইক স্টার্ট দিলো।
গত দুই বছর যাবত রা’দ প্রায়ই এখানে আসে। কখনো রাতে তো কখনো দিনে। এই জঙ্গলের যেখানটায় মায়াজালে আবদ্ধ হয়েছিলো সে ঠিক সেইখানে এসে কিছু সময় বসে থাকে। চোখের সামনে এখনো ভাসছে সেই চেহারা। মনে হয় এই তো এখানে নূর বসে আগুন জ্বালিয়েছিলো। সেই পুকুরটায় বুঝি আবারো গোসলে নেমেছে সে। রাঁজহাসগুলো বুঝি তার চারদিকে ঘিরে খেলায় মেতেছে। এই বুঝি টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে হাজির হবে নূর। তার গায়ের সাদা পোশাক মাটিতে নুইয়ে হেঁটে আসবে রা’দের সামনে। মসৃণ গাল দুটো বিকৃত করে হাসবে। লম্বা চুলগুলো খুলে দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরবে।
কিন্তু এমনটা আর কখনো হবে না। কারণ সে চলে গেছে। হয়তো সে রা’দকে ভুলে গেছে। না হলে একবারে জন্য হলেও রা’দের সাথে দেখা করতে আসতো।

রা’দ আপন মনে বাইক চালাচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে ঘন জঙ্গল। পুরো ফাঁকা রাস্তা, কোথাও কোন জনমানব নেই। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে রা’দের। কালকেই জাবিনের সাথে বিয়ে রা’দের। মেয়েটা অনেক কষ্টে ছিলো এতদিন। আজ তার স্বপ্ন সার্থক হবে। রা’দ ভাবছে কি অদ্ভুত জীবন ওর। যাকে স্বপ্নে দেখে চাইলো তাকে সে পেলো না।
আর যে তাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখলো সে পেয়ে গেলো‌। এতে বোঝা যায় যে সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না।
রা’দ হয়তো কখনো জাবিনকে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু স্ত্রীর অধিকার তো সে রা’দের কাছ থেকে ডিজার্ভ করে। তাই রা’দ ভেবেছে যে সে স্ত্রীর অধিকার জাবিনকে দিলেও কখনো তাকে ভালোবাসতে পারবে না। জাবিন ও রা’দের কথা মেনে নিয়েছে। কারণ রা’দের হৃদয় জুড়ে শুধু নূরজাহান আছে। তার নূরকে সে কখনো ভুলতে পারবে না।

“”কিছু কিছু মানুষের জীবনের প্রথম ভালোবাসাটা ভুল মানুষের সাথেই হয়।”””

________________সমাপ্ত________________

অনেকেই বলতে পারেন যে গল্পটা আরেকটু বড় করা যেতো। হ্যা যেতো তবে মূল গল্পটা যেহেতু “THE BOOK” নিয়ে তাই আর এগোলাম না। কারণ দ্যা বুক এর শেষ গল্প পর্যন্তই গল্পটা সিমাবদ্ধ। তবে যদি কখনো এর সিজন টু নিয়ে ভাবতে পারি তাহলে এই চারজনকে নিয়ে আবার হাজির হতে পারি।

আজকে গল্পটার সমাপ্তি হলো। যারা এতদিন নেক্সট নাইস বলেছিলেন তারা অন্তত শেষে এসে দুই লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করে যাবেন।
নতুন গল্প শিঘ্রই আসছে,,,,,,,,
ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং বাড়ির সকলের খেয়াল রাখুন।

ধন্যবাদ সবাইকে ❤️❤️❤️❤️

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here