কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:২৯

0
579

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:২৯
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন

ফ্যাকাশে র/ক্ত শূন্য মুখটাকে দেখে অধরা ঢোক গিলল। ভয় করছে কারণ থালার মধ্যে ভাসমান অবয়বটা মোটেও কোনো মানুষের না।মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগ্রত হলো, এটা কি তাহলে অশরীরী যাদের শরীর নেই?কথাটা ভেবে ও আরও ভড়কে গেলো। দূরে জুবায়ের মুখে হাত দিয়ে কিছু ভাবছে। অধরার কন্ঠ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। জুবায়েরকে ডাকতে গেলে এই অগন্তুক পালিয়ে যেতে পারে সেটা ভেবে অধরা নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে আবারও বলে উঠলো,
> বলো কে তুমি?
থালার মধ্যে উৎসুক চোখদুটোর পাপড়ি দুবার নড়ে উঠে কিছু বলতে চাইলো তার আগেই কহিনুর এসে হাজির। মেয়েটা কিচেনে তেমন আসেনা।। আজকেই আসতে হলো ভেবে অধরার রাগ হলো। মেয়ের থেকে নজর সরিয়ে থালার দিকে তাঁকিয়ে চমকে উঠলো সেখানে কোনো মুখ নেই। কে ছিল ভাবতে ভাবতে মাথা খারাপ হচ্ছে। পাশ থেকে কহিনুর ইশারা করলো খেতে দিবে কখন। অধরা ওকে যেতে বলে আবারও কাজে মন দিলো। তবে কিছুতেই চিন্তা ওকে পিছু ছাড়লো না। কহিনুর ততক্ষণে লম্বা পা ফেলে কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নিলো। সাঈদ পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কহিনুর ওর দিকে কুশন ছুড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিছানায় গিয়ে বসলো। মনে মনে ওকে বেশ কিছু বকা দিয়ে তবে শান্ত হয়েছে। সাঈদ মলিন মুখ নিয়ে বলল,
> ক্ষুধা পেয়েছে তাই গিয়েছিল খেতে।ভেবেছিলাম একটা রুটি যদি পাই। তোমার আম্মি ভয় পাবেন বুঝিনি সরি।
সাঈদ কানে হাত দিয়ে ক্ষমা চাইলো। কিন্তু কহিনুর ওর দিকে ফিরেও তাঁকালো না। এমনিতেই বাবা মা ওকে নিয়ে কতটা চিন্তিত থাকে তারমধ্যে সাঈদ গিয়ে চমকে দিয়ে এসেছে। ক্ষুধা পেলে কতভাবে খাওয়া যায়। তাছাড়া কহিনুর তো ওকে বলেনি ওর সঙ্গে সঙ্গেই থাকতে হবে। কামচোর ছেলে। বাইরে থেকে খেয়ে না এসে ওদের কিচেনে খাবার চুরি করতে গিয়েছে ভেবেই কহিনুর জ্বলে উঠলো। সাঈদ কাতর কণ্ঠে তীব্র প্রতিবাদ করে বলল,
> আমি একদম চোর না। ভেবেছিলাম চেয়ে নিব। তাইতো দেখা দিয়েছি কিন্তু উনি ভয় পেয়েছেন সরি বোন, ভীষণ সরি।
কহিনুর মুখ ঘুরিয়ে নিলো মনের মধ্যে অন্যরকম একটা প্লান চলছে আপাতত সেখানে সাঈদের সাহায্যের দরকার হবে। তাই সামনে থাকা খাতাটা তুলে নিয়ে বড়বড় করে লিখলো,
> শর্ত মানলে ক্ষমা করতে পারি। শর্ত কঠিন থেকে কঠিনতম হতে পারে বিনা বাক্যে চুপচাপ মানতে হবে রাজি থাকলে বলো।
কহিনুর লেখাটা চুপচাপ সামনে তুলে ধরলো। সাঈদের মুখটা দেখার মতো হলো। রিস্ক হয়ে যাবে শর্ত মানলে কিন্তু কিছু করার নেই। তাই চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে রাজি হলো। কহিনুরের ওষ্ঠে বাঁকা হাসির রেখা দেখে সাঈদ কিছুটা ভড়কে গেলো। মেয়েটা যে সাধারণ কোনো মানবী না এটা ও খুব ভালো করে জানে। সামনে কি অপেক্ষা করছে কে জানে।
*************

মেকলেনবুর্গ-ফোর্পোমের্ন হচ্ছে জার্মানির উত্তরে অবস্থিত একটি রাজ্য। গতকাল একটা কোম্পানির সঙ্গে ডিল করতে পাথর বেলালকে সঙ্গে দিয়ে দুদিনের জন্য এখানে টিপে এসেছে। কোম্পানির মালিক একজন মেয়ে। নাম শালিন জাভেরি। চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে এই কোম্পানিতে কোনো পুরুষ নেই সব কর্মচারিগণ সুন্দরী মহিলা। ভদ্রমহিলা যথেষ্ট স্মার্ট বয়সও কম। পাথরের বয়সি হবে হয়তো। এত কম বয়সে ভদ্রমহিলা এতোটা উন্নতি করেছে বিষয়টা পাথরের কাছে বেশ জটিল। তবে বেলাল খোঁজ নিয়ে জেনেছে এই কোম্পানির প্রাকৃত মালিক হচ্ছে শালিনের দাদিমা। মেয়েটার বাবা মা নেই বৃদ্ধ মহিলা নাতনিকে একা মানুষ করেছেন। উনি নিজেই চাইনি উনার কোম্পানিতে কোনো পুরুষ মানুষ থাকুক। অবহেলিত মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে উনার পছন্দ ছিল। বছর দশেক হচ্ছে উনি গত হয়েছে তারপর থেকে মেয়েটা সব দেখাশোনা করছে।
মেকলেনবুর্গ-ফোর্পোমের্ন এই রাজ্যের রাজধানী হল শ্ভেরিন। আয়তনের দিক থেকে এটি জার্মানির ষষ্ঠ বৃহত্তম রাজ্য। তবে এটি সবচেয়ে কম জনবহুল রাজ্য। বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী এলাকা, রুগেন ঈ উসিডোম দ্বীপ, মেকলেনবুর্গ লেক ডিসট্রিক্ট ইত্যাদি এলাকাগুলো পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তাই মেকলেনবুর্গ-ফোর্পোমের্ন জার্মানির জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। জার্মানির ১৪টি জাতীয় পার্কের তিনটিই এখানে অবস্থিত। পাথরের বেশ কয়েক রকমের ব্যবসা আছে তবে নতুন করে যোগ করতে চাইছে রিসোর্টের কারবার। শালিনের সঙ্গে পার্টনারশিপে বাল্টিক সাগরে তীরবর্তী এলাকায় রিসোর্ট তৈরী করবে। মোটামুটি সব দেখাশোনা শেষ তবে এখনো ডিল হয়নি। আরো দুদিন ঘোরাঘুরি শেষে সিদ্ধান্ত নিবে। বেলালের মন ভার হয়ে আছে।ওর কেনো জানি শালিনকে খুব একটা ভালো লাগছে না। মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা রহস্য আছে। এতো লোকজন থাকতে মেয়েটা হঠাৎ পাথরের সঙ্গে কেনো শখতা গড়ে তুলবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা দাপটে ভাব আছে। কালো ড্রেসের সঙ্গে লাল রঙের লিপস্টিক রাঙা ঠোঁট দেখে ওর র/ক্ত চোষা বাদুর লাগে। সুন্দরী না সাক্ষাৎ পেতনি হবে। ও বিড়বিড় করছে।পাথর চেয়ারে হেলাল দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল হঠাৎ বেলালের বিড়বিড় শুনে বলে উঠলো,
> বেলাল ভাবছি এই মেয়ের সঙ্গে তোমার শাদী মোবারক দিয়ে দিবো কেমন হবে?
বেলাল চমকে উঠে বলল,
> আমি র/ক্ত শূন্যতাই ম/রতে চাইনা স্যার। মেয়েটাকে আমার সুবিধার লাগছে না। কি দরকার ছিল এতদূরে আসার? মনে হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এসেছি। আসুন না চলে যায়।
> ভয় পাচ্ছো কেনো আমি আছি তো। কিছু হবে না। যাও ফাইল রেডি করো। শালিন এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ওর সঙ্গে কাজ করলে আমাদের সুবিধা বুঝলে?
বেলাল মুখ ভার করে চলে আসলো। স্যারের মাথায় এহেন ভূত কিভাবে চেপেছে আল্লাহ ভালো জানে। ফাইল রেখে ও বেরিয়ে পড়লো শালিনের বিষয়ে গোয়েন্দাগীরি করতে। রাতে কিসের এক পার্টি আছে সমুদ্রের তীরে। সেখানে মেয়েদের বেশ তোড়জোড় আনাগোনা। পাথরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাথর সেটা নিয়েই ভাবছে। এখানে মদের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে কিন্তু কোমল পানিয় ছাড়া পাথরের কোনো কিছু সহ্য হয়না বিষয়টা লজ্জাজনক। কিভাবে এড়িয়ে যাবে ভাবতে হচ্ছে। কয়েকবার খেয়েছিল কিন্তু হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল দুদিন করে। ক্ষমা চেয়েছে জীবন থাকতে এসব আর খাবে না। সন্ধ্যা হতে চলেছে তাই আর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত সুইমিং পুলের দিকে এগিয়ে গেলো।
********
হৈচৈ আর উচ্চ সাউন্ড বক্সের শব্দ সঙ্গে নানারঙের আলোতে সমুদ্রের তীর ঝলমল করে উঠেছে। থ্রিম পার্টি চলছে। এখানকার সব মেয়েদের গায়ে কালো পোশাক আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক মুখে কালো পার্টি মুখোশ। পার্টিতে বেলাল আর পাথর ছাড়া কোনো পুরুষ মানুষের অস্তিত্ব নেই। টেবিল সাজানো হয়েছে লাল মখমলের কাপড় দিয়ে কিন্তু টেবিলের উপরে রাখা শোপিসগুলো লাল। খাবারের প্লেট কালো তবে খাবারে মনে হচ্ছে উচ্চ মাত্রায় লাল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। মাছ আর মাং/সের কাবাব সঙ্গে নানারকমের পানিয়। পাথর সবটা স্বাভাবিকভাবে নিলেও বেলালের কাছে কেমন জঘন্য লাগলো। এরা খাবারে হলুদ মেশাবে না জানা আছে কিন্তু তাইবলে লাল রঙ? মনে হচ্ছে মাছ মাং/স সব জীবন্ত হয়ে দৌড় দিবে থালা থেকে। কিছুই রান্না হয়নি কাচা আছে। ওর কেমন গা গুলিয়ে উঠছে। বমি বমি পাচ্ছে। স্যারকে বললে ধমক শুনতে হবে ভেবে নাকমুখ কুচকে রেখেছে। পাথর ওর পাশের চেয়ারে বসে ওকে পর্যবেক্ষণ করছিল হঠাৎ বলে উঠলো,
> বেলাল মুখটা একটু ভালো করো তোমার মুখের আকৃতি দেখেই আমার ক্ষুধা চলে যাচ্ছে। আরে ভাই এটা থ্রিম পার্টি। শালিনের বুদ্ধি কেমন ইউনিক জানোনা? মেয়েটার বুদ্ধি আছে।
বেলাল ভেজা ভেজা কণ্ঠে বলল
> স্যার আমি এসব ভূতুড়ে খাবার জীবনে খাইনি আর এখনো খাবো না। আপনি যা ইচ্ছা বলুন কিন্তু খেতে বলবেন না। আমার বউয়ের বেবি হবে, খাবারের অরুচি আর হজমে সমস্যার জন্য যা করে আমিও তাই করে দিব। মুখে বলছি না ইঙ্গিতে বলছি বুঝে নিন।
বেলাল মনে যা আসলো বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বুকে হাত দিয়ে বাঁচলো। পাথর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> আজেবাজে কথা বলবে তোমাকে কিন্তু এখানে রেখে যাবো। তখন বুঝবে যন্ত্রণা। চুপচাপ খাবে আর মুখ বন্ধ রাখবে।
পাথর ওকে ধমক দিয়ে কাবাবের টুকরোতে কমড় দিয়ে গিয়ে থমকে গেলো। কেমন একটা গন্ধ নাকে লাগলো সেই সঙ্গে পেটের মধ্যে মোচন দিয়ে উঠলো। না বেলাল ঠিক বলেছে। খাবার গুলো দেখতে ভালো হলেও গন্ধ মোটেই সুবিধার না। ভোজন রসিক বাঙালিরা আর যাইহোক গন্ধ শুকে বুঝে যায় খাবারের স্বাদ কেমন হবে। ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শালিন মেয়েটা উঠে আসলো। মিষ্টি হেসে পাথরের পাশে বসে বলল,
> খাবার পছন্দ হয়নি?
পাথর জোরপূর্বক হেসে উত্তর দিলো,
> না তেমন কিছু না। আসলে অনেক খেয়েছি আর খেতে পারছি না। কিছু মনে করবেন না।
পাথর আর শালিনের মধ্যে কথোপকথন দেখে বেলাল চুপচাপ উঠে আসলো। বিড়বিড় করলো এই মেয়ের নজর ভালো না। কেমন তাঁকিয়ে থাকছে। ছিঃ মার্কা লেগেছে বউ জানলে সাত দিন কথা বলবে না। বউকে ভালোবাসার দরুন প্রতিজ্ঞা করেছে বেলাল ইনোসেন্ট থাকবে আজীবন। ও ঘুরতে ঘুরতে একপাশে এসে থামলো। সামনে মেয়েরা দল বেঁধে বেতালে নেচে চলেছে। বেলালের কাছে যেটা ভুতুড়ে নৃত্যের মতো। বিন্দু পরিমাণ সখ নেই এসব দেখার। যখন ও এসব নিয়ে ভাবছিল ঠিক তখনই পাশ থেকে কয়েকজনের কথাবার্তা শুনে ও থমকে গেলো। একজন মেয়ে আরেকটা মেয়েকে বলছে,
> আজ পূর্ণীমা তিথিতে ম্যাম জীবন সঙ্গীর গলাতে মালা পরিয়ে আজীবনের জন্য নিজের করে নিবে। অমরত্ব পেয়ে যাবো আমরা।
> কিন্তু উনি তো অভিশপ্ত হয়েই সঙ্গীহীন থাকবেন সঙ্গে আমরা তাইনা?বিয়ে আগেও হয়েছিল তারপর কি হলো ওর আয়ুষ্কাল দিয়ে নিজে বেঁচে গেলো।
> তো উনি যতদিন বাঁচবেন সঙ্গে আমরাও বাঁচবো। উনি মা/রা গেলে আমাদের কি হবে বুঝেছো? চুপচাপ আয়োজন করো। মালা রেডি করো। স্যার যেনো বুঝতে না পারে বুঝলে?
> একদম।
মেয়েগুলো চলে যেতেই বেলাল থমকে গেলো। পাথরের কি হবে ভেবে মাথায় কাজ করছে না। ওর আগেই সন্দেহ হয়েছিল। তাছাড়া সন্ধ্যায় ও বাইরে খোঁজ নিতে গিয়েছিল সেখানে ওকে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এখন সবটা বুঝতে পারলো। ডাইনির খপ্পরে পড়েছে জীবন থাকতে রক্ষা নেই। ও দৌড়ে চলে আসলো পাথরের কাছে কিন্তু স্থান ফাকা কেউ নেই। এই বিদেশ বিভূয়ে বিপদে পড়ে বেলালের চোখ ফেঁটে কান্না আসলো। স্যারের মতো ভালো মানুষের সঙ্গে এসব হচ্ছে ভাবতে পারছে না। কিভাবে কি করবে দিশেহারা অবস্থা। ও এদিক থেকে ওদিকে ছুটে গেলো। শেষমেশ সমুদ্রের তীরে হাটুগেড়ে বসে কাঁদতে লাগলো। ওর থেকে দূরে এক রমনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে কৌতূহল দৃষ্টিতে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।
_____________
ভরা পূর্ণিমা চলছে সঙ্গে চন্দ্র গ্রহণ ফলে সমুদ্রের পানি কিছুটা ফেপে উঠেছে। উত্তাল সমুদ্রের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। অর্ধ নগ্ন কালো রঙের পোশাকে শালিনকে বেশ সুন্দর লাগছে। ফর্সা শরীরের সঙ্গে কাপড় লেপ্টে আছে। ওর সামনে পাথর দাঁড়িয়ে আছে। নির্জন পরিবেশ আশেপাশে ওরা ছাড়া কেউ নেই। শালিন পাথরের চোখের দিকে তাঁকাতেই ও চোখ সরিয়ে নিলো। ছেলেটাকে সম্মোহন করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ ওর দিকে তাঁকালে শালিন নিজেই বিপদে পড়ছে। অনেক অপেক্ষার পর আজের এই দিনটা এসেছে ওর জীবনে। কালা যাদুর প্রভাবে ডাইনি শক্তি রপ্ত করেছিল কিন্তু বিনিময়ে নিজের জীবন সঙ্গীকে বলি দিতে হয় ওকে। তবে এটাই ওর জীবনের শেষ বলি হবে। কারণ সামনের ছেলেটা মোটেও সাধারণ নয়। ছেলেটা নিজের পূর্ণ শক্তি সম্পর্কে অবগত হওয়ার আগেই ওকে এই কাজটা করতে হবে। তাই নিজে যেচে পাথরকে এখানে নিয়ে এসেছে নিজের এলাকায়। কথাগুলো ভেবে ও মিষ্টি করে বলল,
> পাথর আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি। আমার জীবনে তোমাকে খুব দরকার। প্লিজ এই মালাটা আমাকে পরিয়ে দাও।
পাথরের শরীর হঠাৎ কেঁপে উঠলো। কিছুতেই সম্ভব না ভেবে বলল,
> আমি বিবাহিত আপনাকে গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া এসব কি বলছেন?
শালিন হাসলো তবে উত্তর দিতে ভূল করলো না। বলল,
> আমি জানি তুমি নামে মাত্র বিয়ে করেছো। স্ত্রীকে দেখনি পর্যন্ত তবে কিসের অসুবিধা? আমি স্ত্রীর অধিকার নিয়ে কখনও তোমার সামনে উপস্থিত হবো না। তুমি জাষ্ট এটা আমাকে পরিয়ে দিবে। নয়তো আমি কিন্তু এই উত্তাল সমুদ্রে ঝা/পিয়ে পড়ে আমার জী/বন দিয়ে দিব।
শেষের কথাটা শালিন কঠিনচিত্তে বলে সামনে এগিয়ে গেলো। পাথর হতভম্ভ হয়ে পড়লো। কি করবে এখন? এখানে আসা একদম ঠিক হয়নি ওর। দূরে বেলালের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে তবে দেখা যাচ্ছে না। ছেলেটা চিৎকার করে ওকে পালাতে বলছে। পাথর পা বাড়িয়ে দিলো বেলালের দিকে কিন্তু পারলো না। শালিন ঘুরে এসে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়েছে। সেই সঙ্গে মালাটা ওর হাতে দিয়ে নিজের গলাতে পরানোর জন্য চেষ্টা করছে। এটা পরাতে পারলে পাথরকে ও বশে আনতে পারবে। অন্যদিকে বেলালের পা আটকে গেছে বালুচরে।মনে হচ্ছে চোরাবালিতে পা আটকেছে। উভয় দিকে বিপদ।এদিকে পাথর হাতাহাতি করতে গিয়ে মালাটা ছিড়ে ফেলল। শালিন গর্জন করে উঠলো। হাত মুঠো করে আবারও নতুন মালার জন্য বিড়বিড় করতেই পাথর ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। দ্রুত গিয়ে ওকে উঠিয়ে পরপর কয়েকটা থাওপ্পড় দিয়ে দিলো। কিন্তু হঠাৎ পাশ থেকে কয়েকজন এসে ওকে ধরে ফেলল। সব কিছু কেমন চোখের পলকে ঘটে গেলো। শালিনের ওষ্ঠে হাসি।মেয়েটা উঠে এসে মিষ্টি করে বলল,
> ভেবেছিলাম সবটা তোমার অনুমতি নিয়েই করবো কিন্তু হলো না। তোমাকে যে এবার আমাকে গ্রহণ করতেই হবে। শুধুমাত্র একটা রাত তোমার কষ্ট হবে তারপর থেকে তুমি মুক্ত। কি দরকার পৃথিবীতে থেকে দুঃখ কষ্ট ভোগ করার?

কথাটা বলে মেয়েটা মালাটা নিয়ে ওর একদম কাছে চলে আসলো। পাথর চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রক করছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। কিভাবে পারলো এভাবে ফেঁসে যেতে। বেচারা বেলালের জন্য কষ্ট হচ্ছে। হাল ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই হঠাৎ মন মাতানো মিষ্টি একটা গন্ধ ওর নাকে এসে লাগলো। পাথর ক্ষণিকের জন্য সবটা ভুলে গিয়ে সময় নিয়ে নিশ্বাস নিলো। মনে হলো শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেলো সেই গন্ধ। পাথর চোখ খুঁলে চোখ বড়বড় করে ফেলল। ওর সামনে পার্টি মুখোশ পরিহিত এক রমনী দাঁড়িয়ে আছে। যার চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। লাল রঙের লিপিবদ্ধের সঙ্গে কালো রঙের গাউন একদম মিলেমিশে একাকার। মেয়েটার চোখদুটো খুব চেনা তবে কে হতে পারে অনুমান হচ্ছে না। শালিনের হুঙ্কারে পাথরের ধ্যান ভাঙলো। গর্জন করে বলে উঠলো,
> কে তুমি? জীবনের প্রতি মায়া নেই ?তোমার কলি/জা দেখে অবাক হচ্ছি। তোমার হৃ\দপিন্ডটা আমি টে/নে বের করে আনবো দেখবে?
শালিনের কথা শুনে মেয়েটা হাসলো। এতোক্ষন ও পাথরের সামনে ছিল মালাটার সামনে হাত রেখে এবার ও নিজের শক্তি দিয়ে মালাটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। শনশন বাতাসের সঙ্গে সেই হাসি দূর থেকে বহুদূরে গিয়ে মিলিয়ে গেলো সেই সঙ্গে গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো,
> ক/লিজা হৃ/দপিণ্ড নিয়েই তো আমার কারবার। আগে দেখি তোমার ক/লিজার আকৃতি আর ধারণ ক্ষমতা কেমন। আমি জাষ্ট ছোট করে সেখানে আমার নামটা খোদাই করে দিব। যদি কিছু না হয় তবে সত্যি তুমি বেশ শক্তিশালী। আর যদি না হয় তবে তোমার সব শক্তি আমার মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে তুমি ম/রবে। রাজি তো আমার সঙ্গে ডিল করতে?

শালিন মেয়েটার কথা শুনে আনন্দ পাচ্ছে। ওর সঙ্গে পারবে এমন কেউ আছে নাকি? ও হেসে উঠে বলল,
> মজা করোনা মেয়ে। তোমার বয়স কম ফিরে যাও। আমার শিকারকে আমার সঙ্গে ছেড়ে দাও।

মেয়েটা পাথরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
> উনি আমার শিকার। আমি নিজের শিকারকে কারো হাতে ছাড়ি না। যথেষ্ট বলেছি আর নয়। ডিল না করলেও আমি যেটা ভেবেছি সেটাই করবো। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।

মেয়েটা শালিনের দিকে তাঁকিয়ে হাত উঁচু করতেই একটা অবয়ব ভেসে উঠলো বাতাসে।সেই সঙ্গে চিৎকার করে বলল
> শালিন পালিয়ে যাও। তোমার শক্তি ওর কাছে নেহায়েত শিশু। কালা যাদুর ধ্বংসকারীকে এভাবে নিমন্ত্রণ করোনা। ও নিজেই জীবন্ত তল্লা। নিজের সঙ্গে তোমাকে জ্বালিয়ে দিবে।

মুখোশ পরা মেয়েটা এবার শব্দ করে হাসলো। একটা শব্দ উচ্চারণ করলো,
> সময় শেষ।
কথাটা বলেই ও শালিনের দিকে হাত উচু করে শূন্যের মধ্যে আঙ্গুল উঠিয়ে নিজের নামটা লিখতে শুরু করলো। সেই সঙ্গে চারদিকে চিৎকার চেচামেচিতে কান ভারি হয়ে উঠলো। পাথর এক জোড়া জলন্ত চোখের দিকে তাঁকিয়ে জ্ঞান হারালো। পাশের মেয়েগুলো মিলিয়ে গেলো সঙ্গে নির্জনতা ছেয়ে গেলো সমুদ্রের পান্তর।
***********
সোনালী সূর্যের আগমনে নতুন দিনের সূচনা হলো।পিটপিট করে চোখ খুঁললো কহিনুর। হামি ছেড়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো সাঈদ বসে আছে। রাতে ছেলেটা এই কক্ষের জানালায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে বিষয়টা কহিনুরের কাছে ভীষণ বিরক্তিকর লেগেছে। পাশের কক্ষে থাকতে বলা হয়েছে তবুও কথা শুনছে না। কোথা থেকে মাং/সের হাড় জোগাড় করে মাঝ রাত পযর্ন্ত চিবিয়েছে। কহিনুর নিরামিষাশী মানুষ। মাছ মাং/স দেখলে ওর বমি আসে সেখানে সাঈদ লম্বা লম্বা হাড় কট/মট করে খেয়েছে। ভেবেছিল ওকে আর কিছু বলবে না কিন্তু এবার ধৈর্যের বাইরে। পারা যাচ্ছে না। তাই পাশ থেকে কাগজ বের করে কিছু লিখে সাঈদের সামনে ধরলো। সেখানে লেখা আছে,
> আজ থেকে মায়ের হাতে তৈরী মিষ্টি আর রুটি খাবে।আমি ব্যবস্থা করবো তবুও আমার কক্ষে এসব খাবে না। ইচ্ছে হলে বাইরে থেকে খেয়ে ভালো করে ব্রাশ করে তবে আসবে। নয়তো তোমাকে আমি শাস্তি দিব।
সাঈদ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে ফেলল কারণ এই বাড়ির কিচেন থেকে ও চুরি করে মিষ্টি খেয়েছিল যেটা খুবই সুস্বাদু ছিল। ভেবেছিল আবারও খাবে কিন্তু মালকীন খুব চালাল। ধরে ফেলেছে একটা মিষ্টি নেই তারপর থেকে আর সাহস হয়নি। বাঁচতে হলে তো খেতে হবে। তাই হা/ড্ডি কুড়িয়ে এনেছে হোটেল থেকে। সেটাই খেয়েছে। কহিনুর ওকে খাবার দেবে ভেবেই খুশীতে আটখান।
বাইরে বাবা মায়ের কথাবার্তা শুনে কহিনুর বাইরে বেরিয়ে আসলো। জুবায়ের ওকে দেখে হাত বাড়িয়ে মেয়েকে নিজের পাশে বসিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> তোমার মা আমাকে আর পছন্দ করছে না বুঝলে? তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই।

জীবনে প্রথমবার কহিনুরের হাসি পেলো তবে হাসতে পারলো না। মায়ের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো টেবিলে খাবার সাজাতে সে ভীষণ ব্যস্ত। দুদিন ধরে দুজনের মধ্যে ঝগড়া চলছে বিষয়টা ওর জানা। এতো ছোট্ট বিষয়ে মায়ের এমন অভিমান হবে ওর ধারণার বাইরে ছিল।পরে ভেবেছে স্ত্রীরা বুঝি এমনিই হয়। স্বামীকে নিয়ে খুব সিরিয়াস থাকে। নিজেও তো একজনের স্ত্রী কথাটা ভেবে ওর ভ্রু কুচকে গেলো। ভাবলো লোকটা কোথায় আর কেমন আছে কে জানে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here