জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর #পর্ব_১৮

0
350

#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_১৮
#লেখিকা : #Kaynat_Ash

একদিন বিকেলে আনিস আর আমান একসাথে বসে ছিল, সাথে অন্য কেউও ছিল না। আনিস মনে মনে ভাবল, হয়তো এটাই উপযুক্ত সময় কথা বলার।

আনিস আমানের উদ্দেশ্যে বলল “ভাই, একটা প্রশ্ন করি, সত্যি করে জবাব দিবি?!”

আমান হাসিমুখে বলল “অন্য সবার হলেও; আমার থেকে প্রশ্ন করার আগে তোর কোন অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল না কখনো, কর কি জিজ্ঞেস করবি?

আনিস বলল “তোর কি সত্যিই কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে নাকি? আসলে আমার মনে হচ্ছে, হয়ত সত্যিই তোর আছে।”

আমান বলল “তা তো আছেই, ভালোবাসি আমি একজনকে।”

আনিস নিজের ভয় আর দুশ্চিন্তা চেপে রেখে বলল “এতদিন নিজের এত কাছের বন্ধু থেকে লুকিয়ে রাখতে পারলি যে মেয়েটা আসলে কে?! যাই হোক, এখন বল দেখি, কে মেয়েটা?”

আমান হেসে বলল “ভেবে তো ছিলাম, একেবারে বিয়ের দিন পরিচয় করিয়ে দিব।

এছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ড! তাকে কথা দিয়েছিলাম যে এই বিষয়ে কেউ জানবে না, কেউ-ই না। আর তাকে দেয়া কথা আমি কখনো ফেলব না।”

আনিস হতাশ কন্ঠে বলল “আমি হয়ত জানি, মেয়েটি কে! হয়ত আইজা-ই।”

আমান হেসে বলল ” দেখা যাচ্ছে, বেশ গভীর বন্ধুত্ব আমাদের মাঝে, আমার না বলা কথাও তুই বুঝে ফেলিস।

হ্যাঁ আইজা-ই সেই সৌভাগ্যবতী যাকে তোর বন্ধু নিজের জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসে।”

আনিস নিজের আবেগ কোনো রকম নিয়ন্ত্রণ করে বলল “আমি ভেবেছিলাম, তোর গার্লফ্রেন্ড তিথি হবে হয়ত। সবসময় তোর আশেপাশেই থাকে সে।”

এবার কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে আমান বলল “তিথির কাজই অযথা আমার পিছু লেগে থাকা। অযথা আমার সামনে পেছনে ঘুরা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই স্বভাবের মেয়েরা সত্যিই বিরক্তিকর হয়ে থাকে!

এছাড়া তার সাথে যে কেবলই ফ্লার্ট করি, টাইম পাস করি, এটা সে নিজেও যতটা ভালো করে জানে। তেমন জানে আইজাও।

তবে আইজার বিষয়টি এখনো কেউ জানে না। তবে এখনই যাতে কেউ আইজা আর আমার বিষয়ে না জানে। তুই বুঝতে পারছিস তো আমি কি বলছি?”

আনিস বলল “তুই চিন্তা করিস না, দোস্ত। এই কথাটা আমার সাথে নিরাপদ থাকবে। এবং আমার সাথেই কবরে যাবে, এরপরও কেউ জানবে না।”

আমান আনিসের পিঠ চাপড়ে সেখান থেকে উঠে গেল, তার ফোনে আসা কল রিসিভ করতে।

আর ভাঙা হৃদয় নিয়ে আনিস সেখানেই বসে রইল।

কাউকে না পাওয়ার বিষয়টি যখন নিশ্চিত থাকে, সেই মানুষটির প্রতিই এমন এক আগ্রহ, এমন একটি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এবং তা এতটা বৃদ্ধি পেতে থাকে যে তা মানুষকে ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

তবে হয়ত সেই একই মানুষটিকে অর্জন করার পর অনেকের আবার আগের সকল আগ্রহ হারিয়ে যায়। ভালোবাসা থাকে, তবে তার জন্য বাঁচা মরার সেই মানসিকতা হারিয়ে যায়। তা যেন কেবল-ই পাওয়া, না-পাওয়ার ব্যাপার ছিল। আনিসের ক্ষেত্রেও হয়তো এমনটাই হচ্ছে।

এভাবেই চারটি বছর পার হয়ে যায়। ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পর যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে।

আইজার থেকে বিদায় নেয়ার জন্য আনিস যখন তার সাথে দেখা করতে যায় আমানও সেখানেই উপস্থিত ছিল।

আনিসকে দেখে আইজা খুশি না হলেও আমান খুশি হয়ে বলল “তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো-ই হলো! এছাড়া আমাকে না জানিয়ে-ই চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল নাকি?”

আনিস বলল “তোর থেকে বিদায় না নিয়ে কি করে যেতে পারতাম!”

আমান বলল “সেটাও ঠিক আছে। তবে তোর যদি বড় কোন ঝামেলা না থাকে, তুই আমার সাথে চল। কিছুদিন আমার শহর থেকে ঘুরে আসলি।”

আনিস বলল “আমি যাবো একদিন তোর বাসায়। তবে এবার না।”

আমান বলল “ভেবে দেখ, খুব খারাপ হবে না কিন্তু তুই গেলে। এভাবেও আমি, তিথি আর আইজাও একসাথেই যাচ্ছি।”

এই কথা শুনে কেন জানে না, তবে আনিস রাজি হয়ে যায় তাদের সাথে যেতে। তবে আমানের আনিসকেও সঙ্গে নেয়ার সিদ্ধান্তে আইজা খুব বিরক্ত হয়।

.
.
.

যাওয়ার সময় আমান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে কেননা সে-ই ড্রাইভ করবে। এদিকে তিথি অন্য সবার আগে এসে আমানের পাশের সিটে বসে পড়ে।

আইজার বেশ মেজাজ খারাপ হলেও আমান কিছু বলার আগেই সে পেছনের সিটে গিয়ে বসে পড়ল।

আমান ঠান্ডা রাগত স্বরে তিথির উদ্দেশ্যে বলল “তুমি পেছনে গিয়ে বসো, তিথি।”

তিথি দ্বিমত পোষণ করে বলল “বসে তো গিয়েছিই আর উঠতে পারব না।”

আমান কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আইজা তখন বলে উঠলো “তার তোমার সাথে বসার এত শখ তো বসুক নাহয় সে তোমার সাথে। তোমারও খুব একটা খারাপ লাগবে না।”

এরপর আনিসের উদ্দেশ্যে বলল “আর তুমি কি বাইরে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি গাড়িতেও চড়ে বসবে। তোমার জন্য আবার দেরি না হয়ে যায় আমাদেরও।”

আনিসও উঠে আইজার পাশের সিটে বসল।
অল্পক্ষণ বসে থেকে আমানও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়।

আইজার মেজাজ যথেষ্ট খারাপ, এরচে দশগুন বেশি খারাপ আমানের। সে মোটেও চায় নি, আইজা অন্য কোন ছেলের সাথে বসুক, হোক সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডই।
সে বারবার সামনের গ্লাস দিয়ে আইজার দিকে দেখছে। আইজা এক দৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।

এদিকে তিথি আর আনিসের জন্য এই সময়টা বেশ মূল্যবান মনে হচ্ছে, দুজনের পাশে তাদের ভালো লাগার মানুষগুলো বসা। এই জার্নি তাদের একটু বেশিই সুন্দর মনে হচ্ছে আজ, যদি এই পথ কখনো শেষ না হত আর তারা হত চিরকালের জন্য একে অপরের সফরসঙ্গী!

তারা এমনটা ভাবলেও অন্য দুজনের মনে হচ্ছে, কখন এই জঘন্য সফর শেষ হবে আর তারা গন্তব্যে এসে পৌঁছাবে। কারণ তারা জানে, তাদের গন্তব্য আর ভাগ্য প্রকৃতপক্ষে কে!

.
.
.

আমানের বাসায় পৌঁছে তারা দেখতে পায়, সেখানে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ। কিছু একটা যে ঘটতে যাচ্ছে, তারা সবাই মোটামুটি ধারণা করতে পারছে।

চলবে…

{ অতীতেই গল্পের সব ঘটনা, গল্প যখন ভবিষ্যতে আসবে তখন গল্পে বেশি কিছু বাকি থাকবে না, ক্লাইমেক্স তখন নিকটবর্তী থাকবে। এছাড়া এখন যেহেতু গল্প প্রতিদিন পাচ্ছেন, আশা করি, অপেক্ষা করতেও খুব একটা কষ্ট হবে না আপনাদের।। ধন্যবাদ।। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here