জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর #পর্ব_১৯

0
547

#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_১৯
#লেখিকা : #Kaynat_Ash

আমানকে দেখতে পেয়ে রেহানা তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
এরপর তিনি তার খোঁজ খবর নেয়া শুরু করে দেন।

আমান বলল “আমার সাথে আমার বন্ধুরাও এসেছে। তাদের খোঁজ খবর নাও। এমনিতেও আমার সাথে খারাপ কিছু কখনো হওয়ার নয়।”

রেহানা একটু হেসে বললেন “হ্যাঁ, জানি আমি। তিথি আর আইজা তো বাসার মেয়েই। তাদের তো নতুন করে আর খোঁজ খবর নেয়ার কিছু নেই।

আর তোমার এই বন্ধুটি! এর আগেও তোমার আর তোমার অন্যান্য বন্ধুদের সাথে এসেছিল বেশ কয়েকবার।
কি যেন নাম?! ওহ হ্যাঁ, আনিস মনে হয়।”

আনিস নম্রভাবে বলল “জ্বী আন্টি।‌”

রেহানা বললেন “কেমন আছো তুমি?”

আনিস বলল “আছি মোটামুটি। আপনি কেমন আছেন?

রেহানা বললেন “ভালোই।”

এরপর রেহানার চোখ বাকি দুই মেয়ের উপর পড়তেই তারা হেসে কুশল বিনিময় করল। আইজা বলল “আসসালামু আলাইকুম,আন্টি। ভালো আছেন, এইমাত্র শুনলাম। তাই দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করি। এমনিতে সবকিছু ঠিকঠাক?!”

প্রায় সাথে সাথে তিথিও বলল “আসসালামু আলাইকুম। এখন বলুন দেখি আন্টি, আমাদের রুম তৈরি করা হয়েছিল কিনা! বেশ টায়ার্ড আমি, ফ্রেশ হয়ে খাবার দাবার খাবো, খুব ক্ষুধা পেয়েছে।”

রেহানা হাসিমুখে উত্তর দিতে যাচ্ছিল এমন সময় আমান বলল “আইজার বাবা মায়ের এই শহরে আসতে আরো দুই তিন দিন লাগবে, সেই কারণে আইজা নাহয় কিছুদিন আমাদের বাসায়-ই থাকছে। তবে তুমি কোন লজিকে এখানে থাকতে চাইছ?”

তিথি বলল “আশ্চর্য, এটা আমার আংকেলেরও বাড়ি, এখানে থাকতে আমার কোন লজিকের প্রয়োজন নেই! কি বলেন,আন্টি?”

রেহানা মুখে হাসি টেনে বললেন “অবশ্যই। উপরে তোমাদের জন্য রুম গুছিয়ে রাখা হয়েছে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি কাজের মেয়েগুলোকে বলছি, খাবার পরিবেশন করতে।”

তখন আমান বলল “বাসার পরিবেশ দেখে কিছুটা অন্যরকম লাগছে, কিছু ঘটেছে নাকি?

রেহানা এবার আরো খুশি হয়ে বললেন “তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, নিশ্চিন্তে তোমাকে জানাব।”
আমান খুব একটা আগ্রহ না দেখিয়েই বলল “ঠিক আছে।”
এই বলে সে সোজা নিজের রুমে চলে যায় সবাইকে নিচে রেখে।

রেহানা এক ভৃত্যকে ডেকে বললেন যাতে আনিসকে গেস্ট রুমে পৌঁছে দিয়ে আসে।

.
.
.

খাবার টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছিল, তখন রেহানা মুখভর্তি হাসি টেনে বলল “আমান, একটা সুখবর আছে। তোমার বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। তোমরা আসার কিছুক্ষণ আগেই পাত্রপক্ষ কথা পাকাপাকি করে গিয়েছে।”

আমান বেশ নির্লিপ্তভাবে বলল ” ইউ মিন, দত্তক নেয়া বোনের।”

রেহানা একবার পরীর কালো হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে এরপর আমানের দিকে তাকিয়ে বলল “আমান, এভাবে বলতে হয় না, বাবা। পরী, রাণী, ওরা তোমার দত্তক নেয়া বোন হলেও কি! বোন-ই তো হয় তারা তোমার। এছাড়া একবার বিয়ে হয়ে গেলে কোথায় তুমি আর কোথায় তারা!”

তখন রায়হান বললেন “বোনদের সামনে তাদের এভাবে দত্তক নেয়া বললে তাদের খারাপও লাগতে পারে। সুতরাং তোমার উচিত, তাদের সামনে একটু বুঝে কথা বলা‌।”

আমান বলল “হুম, সেটা ঠিকই বলছেন, একবার তাদের বিয়ে হয়ে গেলে তারা যেখানেই থাকুক, আমার তেমন কিছু যায় আসে না এতে।

এছাড়া আমার কাছে দত্তক নেয়া বোন আর আপন বোন এক নয়। তারা রক্ত হত আমার, এরা যা নয়। আর রক্ত রক্ত-ই হয়। ব্লাড ইজ থিকার দেন ওয়াটার।

এছাড়া আমার কীভাবে কথা বলা উচিত, সেটা আমি ভালোভাবেই জানি। আর আমার কথা যদি কারো ভালো না লেগে থাকে আমি উঠে চলে যেতে পারি। এভাবেও সেসব মানুষের মাঝে বসে থাকার ইচ্ছা আমারও নেই, আমার কথা যাদের এত অপছন্দের।”

রেহানা অনুমান করে নিল যে, কোনো কারণে আমানের মেজাজ খুব খারাপ। তাই অযথা এভাবে ছোট ছোট কথায়ও রিয়েক্ট করছে।

তিনি খুব ব্যস্ত এবং কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন “না বাবা। খাবার ছেড়ে এভাবে উঠে যাওয়ার কোন মানে হয় না।
এছাড়া আমরা কখন বললাম যে তোমার কথা শুনতে আমাদের ভালো লাগে না!
এমনিতেও আমাদের যা কিছু আছে সবকিছু কেবল তোমার। আমাদের একমাত্র পুত্রের, একমাত্র সন্তানের।

এমনিতেও তোমার দত্তক নেয়া বোনদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার পর তাদের কোন অধিকার থাকবে না তোমার কোন কিছুতে।
মেয়েগুলোকে কেবল দত্তক নিয়েছিলাম, আশ্রয় দিয়েছিলাম, যদিও আদর যত্ন সোহাগে কোন ঘাটতি রাখি নি, কিন্তু তারা ছিল কেবল দায়িত্ব, বিয়ে দিয়ে দিলে দায়িত্ব শেষ।”

এরপর রেহানা একটু থেমে রায়হানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন। তখন রায়হান বললেন “আমান, তুমি নিজেও জানো, আমাদের সবকিছুই কেবল তোমার। সুতরাং তোমাকে তা বারবার মনে করানোরও কোন প্রয়োজন নেই।

এছাড়া তুমি আমাদের একমাত্র সন্তান, যে কিনা আমাদের রক্ত, আমার বংশের উত্তরসূরী। তুমি দুনিয়ার সবার চাইতে, সবচাইতে বেশি মূল্যবান আমাদের কাছে। তোমাকে আমরা কতটা ভালবাসি সেটা তুমি নিজেও ভালো করে জানো। মেয়েদের কথায় তোমাকে রাগানোর কোন ইচ্ছে ছিল না আমার।

তবে আমার অনুরোধ, দয়া করে, নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো। অল্পতেই এত রেগে যাওয়ার স্বভাবটা কবে যেন তোমার অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলে। শুধুমাত্র এই একটি কারণে তোমাকে বলি, এত অল্পতে এভাবে রেগে যেও না।”

আমান চামচ হাত থেকে নামিয়ে টেবিলে রেখে টেবিল থেকে একটা ন্যাপকিন তুলে হাত মুছতে মুছতে বলল “আজ আপনাদের লেকচার শুনেই পেট ভরে গিয়েছে। খাওয়ার আর মুড নেই।”
এই বলে আমান উঠে চলে গেল।

পেছন থেকে রেহানা কয়েকবার তাকে ডাক দিয়েও যখন কোন লাভ হয়নি। তিনি রায়হানের উদ্দেশ্যে বললেন “কি প্রয়োজন ছিল খাওয়ার টেবিলে এসব কথা বলার!”

রায়হান বললেন “তার ভালোর জন্যই বলেছি। আমার সন্তান সে, তার কোন বিপদ হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমারই হবে।

যাই হোক, যখন তার ক্ষুধা পাবে নিজেই কিছু খেয়ে নিবে। এখন তুমি চুপ করে খাও, বাকিদেরও খেতে দাও।”

এরপর ডাইনিং টেবিলে যেন এক অঘোষিত নীরবতা নেমে এলো। সবাই চুপচাপ যে যার মতো খেয়ে উঠে গেল।

.
.
.

মাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমান ছাদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। আইজা এসে তার পাশে দাঁড়াতেই সে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো “খুব ভালো লাগছিল আনিসের পাশে বসে জার্নি করতে, নয়?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here