#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_৩
#লেখিকা :#Kaynat_Ash
আইজা কিছুটা অধৈর্য গলায় বলল “আমি আসলে কনফিউজড, মা। এই বিয়েটা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কেউ খুশি না এতে।
সবার মতে আমি তিথির জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছি।
আমি সবার কাছে এখন কেবলমাত্র একটা ভিলেনের নাম।
আর তিথি! সে এখন সবার কাছে বেচারি, সহানুভূতির পাত্রী। আমার এসব অসহ্য লাগছে, মা। আমার জীবনটা এত এলোমেলো হয়ে গেল কীভাবে!”
লায়লা বেশ শান্তভাবে বললেন “একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, তুমি যদি এই বিয়েটা না করতে, তখন তার জীবনে কি সবকিছু ঠিকঠাক চলত? তখন ধ্বংস হত না তার জীবন?!
শুনো আইজা, তিথির সাথে যা কিছু হচ্ছে, এটা তার নিজের কামাই করা। এতে নিজেকে দোষ দিও না।”
আইজা বলল “মা, নিজেকে দোষ দিচ্ছি না আমি। কিন্তু সবাই তো আমাকেই দোষ দিবে, এটাই স্বাভাবিক। আমানের দ্বিতীয় স্ত্রী হতে যাচ্ছি আমি, দ্বিতীয় স্ত্রীদের সমাজ এত সহজে মেনে নেয় না, অনেকে অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করে।
মা…। আমি তো এর কোনটাই চাই নি, তবে আমার সাথেই কেন হচ্ছে এমন?!
সত্যি বলতে, আমি এখনো এই বিয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না।”
এই কথা শুনে লায়লা একটু কড়া গলায় বললেন “দুই দিন পর বিয়ে, তুমি এসময় এসব বলতে পারো না।
এছাড়া আমার কথা শুনো, দ্বিতীয় বিয়ে করার বৈধতা আছে, বিধায় তুমি আমানকে বিয়ে করতেই পারো। এছাড়া বিয়েটা দুই পরিবারের সম্মতিতেই হচ্ছে। সুতরাং অন্যরা কে কি বলছে, এই নিয়ে মাথা ঘামানোর তোমার কোন প্রয়োজন নেই।”
এরপর একটু থেমে বললেন “এর আগেও তোমার একবার এ্যানগেইজমেন্ট ভেঙেছিল। এবার আমানের সাথে যাতে অন্তত বিয়েটা হয়ে যায়। তুমি এর আগেও অনেক কষ্ট পেয়েছ, আমি তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেব না। নিজের খুশি নিজের হাতে তোমাকে ধ্বংস করতে দেব না আমি।
এছাড়া আইজা! পাত্র হিসেবে আমানের কোন তুলনা হয় না। তার মত ছেলেকে স্বামী হিসাবে পাওয়া অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর আমি জানি, তুমি তার সাথে অনেক সুখী হবে।”
এই বলে লায়লা আইজার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
আইজা নিরাশ কন্ঠে বলল “পাত্র হিসেবে আমানের তুলনা হয় না?! ঠিকই বলেছ, আসলেই তুলনা হয় না। তার মত বদমেজাজি, রাগি, জেদি আর অহঙ্কারী ছেলে দ্বিতীয়টা হয় না। এত ধনী বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, অতি আদরে অতিরিক্ত বিগড়ে যাওয়া একটি ছেলে, যে মনে করে টাকা পয়সা আর প্রতিপত্তির জোরে সে যেকোনো কিছু করতে পারে, যেকোনো কিছু।”
লায়লা মেয়েকে বুঝানোর চেষ্টা করে নরম স্বরে বললেন “আইজা, দুই দিন পর তোমার স্বামী হতে যাচ্ছে সে, এভাবে বলতে হয় না, মা।
আর সে যেমনই হোক, তার ভেতরেও একটি হৃদয় আছে, যেখানে তোমার জন্য গভীর অনুভূতিও সৃষ্টি হতে পারে। তুমি সবসময় চেষ্টা করে যেও। আমি ঠিক জানি, তুমি সুখী হবে তার সাথে।
এরপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “এই বিয়েটা কোন রকম ঝামেলা ছাড়া সেরে গেলে আমার মন থেকে একটি বোঝা নেমে যাবে।”
আইজা তার মায়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। লায়লা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
আইজা আবারও জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, যদিও দুই দিন পর বিয়ে, আর এই বিয়েতে রাজি সে নিজেই হয়েছিল।
তবে এখন সে নিশ্চিত না, তার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।
দিন যত যাচ্ছে, তার ভেতর আলাদা ধরনের এক অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে, এই বিয়েটা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে; আর খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে তার এই অনুভূতিটিকে, সাথে নিষ্ঠুরও। সেসব মানুষের জন্য যারা এই বিয়েটার উপর নির্ভর করে রয়েছে। কারো কারো জন্য তো এটা জীবন মরণ প্রশ্ন। এই বিয়েটা না হলে তিথির নিজের সংসারও ভাঙবে।
.
.
.
দুই দিন পরে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ আর কিছু সামগ্রী দিয়ে রেহানা আনিসসহ আরো কয়েকজনকে পাঠালেন আইজার বাড়ি।
তারা সেখানে পৌঁছে দেখতে পায়, আইজা স্টেজে বসে আছে। আইজাকে শাড়ি পড়তে খুব একটা দেখা যায় না, তবে আজ হলুদ শাড়ি পরিহিতা, ফুলের গয়না দিয়ে সেজে বসে থাকা আইজাকে যেন অন্যরকম লাগছে;
আইজা খুব বেশি সুন্দরী না হলেও আজ সুন্দরতম মেয়েটির চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে তাকে। অথবা আনিসেরই কেবল এমনটা মনে হচ্ছে।
নিজের অজান্তেই আনিসের চোখে পানি জমে উঠল। সবার অগোচরে নিজের অশ্রু মুছে সে ভাবতে লাগলো, এই এক তরফা ভালোবাসা মানুষের ধ্বংসের কারণ।
কি হত এমন, যদি একবার নিজের অনুভূতির কথা সে আইজাকে জানাত! এমনটি করলে হয়ত অন্য আরেকটি মেয়ের জীবন ধ্বংস হওয়া থেকে বেঁচে যেত।
তবে সে এটাও ভালোভাবে জানে, আইজা কখনোই মেনে নিত না আনিসের অনুভূতি।
তাকে সে দুই মিনিট সহ্য করে নিলেও আনিসের মনে হয়, এটাই তার অনেক বড় পাওয়া।
চলবে…
{ গল্পের ব্যাপারে কোন মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।। ধন্যবাদ ।। }