জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর #পর্ব_৪

0
600

#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
#পর্ব_৪
#লেখিকা :#Kaynat_Ash

আইজার চেহারার দিকে তাকিয়ে যেন আনিস হারিয়ে গিয়েছিল এক প্রকার।

হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে নিজেকে তিরষ্কার করতে লাগলো এই ভেবে যে, আগে তার মনে যে অনুভূতি ছিল, তা ছিল। কিন্তু এখন এই মেয়ে তার বন্ধুর স্ত্রী হতে যাচ্ছে। তার সম্পর্কে এখন এসব চিন্তা করার অর্থ হবে বন্ধুর সাথে প্রতারণা।

এছাড়া যার ভাগ্যে যে লেখা থাকে না, সে এভাবেই হারিয়ে যায় কোন এক সময়।

অনুষ্ঠানে তিথির পরিবারের সদস্যরাও দাওয়াত রক্ষা করতে এসেছিল। তাদের দেখে আইজার বাবা মা এগিয়ে তাদের বরণ করলেন। এরপর সবাই একসাথে বসলেন।

লায়লা তাদের উদ্দেশ্যে বললেন “আপনারা আমাদের খুশিতে শরীক হয়েছেন, আমাদের সত্যিই খুব ভালো লাগছে।”
এরপর আইজার বাবার উদ্দেশ্যে বললেন “কি বলো, ফারুক?!”

ফারুক বিষন্ন মুখে শুকনো হাসি ছড়িয়ে বললেন “জ্বী, লায়লা ঠিক বলছে।”

তিথির বাবা জয়নুল গম্ভীর গলায় বললেন “আইজা আমাদের বংশেরই মেয়ে, যা কিছু হয়েছে, এর কারণে তার বিয়েতে আমরা আসব না, এমনটা হয় না।

দূরসম্পর্কের হলেও আমানের বাবা রায়হান, ফারুক আর আমি, আমরা একই বংশের। দূরসম্পর্কের হলেও ছোটবেলা থেকে একে অপরকে আপন ভাইয়ের মত দেখেছি। সুতরাং এই দূরসম্পর্ক শব্দটা আমাদের সম্পর্কের দৃঢ়তার কাছে অতি তুচ্ছ একটি বিষয়।
আইজা আমারও মেয়ে, তার বিয়েতে আমরা আসব না, এমনটা কখনো হতে পারে না।”

লায়লা তাচ্ছিল্যের সাথে মাথা দোলাল, এরপর স্বাভাবিক স্বরেই অতি ভদ্রভাবে বললেন “আপনারা বসুন, আমি আপনাদের খাবারের জন্য বলে আসি।”এই বলে লায়লা চলে গেলেন।

লায়লা চলে যাওয়ার পর ফারুক মলিন কন্ঠে বললেন ” জয়নুল ভাইসাহেব, যা কিছু হচ্ছে, এতে আপনি মন ছোট করবেন না। দয়া করে। আইজাকে আপনি যেমন নিজের মেয়ের মত দেখেন, তিথিকেও আমি নিজের মেয়ে মনে করি।

এছাড়া আইজা যদিও তিথির সতীন হয়ে এই বাড়ি ছাড়ছে, তবে বিশ্বাস করুন, তার কারণে তিথির কখনো কোন অসুবিধা হবে না। যদি কখনো আমার কানে আসে যে তার কারণে তিথির বিন্দুমাত্র কোন সমস্যা হচ্ছে, আমি দ্বিতীয়বার ভাবব না আইজাকে ত্যায্য করার আগে।”

জয়নুল ফারুককে থামিয়ে দিয়ে বললেন “এভাবে বলবেন না। এখন বাচ্চারা বড় হয়েছে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখছে।

হ্যাঁ, যদিও বেশিরভাগ ভুলই করে থাকে, কিন্তু আমাদের আইজা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি।
হয়ত আপনাদের দেয়া শিক্ষাই সেটা, যার কারণে, নিজ জীবনের সব কঠিন পরিস্থিতি সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করে টিকে থাকার সামর্থ্য রাখে আপনার মেয়ে।”

ফারুক বললেন “দোয়া করবেন আমার মেয়েটার জন্য।”

জয়নুল বললেন “অবশ্যই, আপনি না বললেও দোয়া করি সবসময়।”

আইজা স্টেজ থেকে বসে দেখছিল যে তার বাবা আর তিথির বাবার মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। সে যদিও কিছুই শুনতে পায়নি তবে সে ভালোভাবেই ধারণা করতে পারছে যে তার বাবা তিথির বাবার কাছে হয়ত ক্ষমা-ই চাইছেন।

তার কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল এভাবে সেজে স্টেজের উপর বসে থাকতে। এছাড়া সে কখনো ভাবতেও পারে নি, তার বাবার কারো কাছে ছোট হতে হবে, তা-ও তার কারণে। উনার দোষ না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা চাইতে হবে।

এতকিছুর মধ্যেও মেহমানদের উদ্দেশ্যে মুখে কৃত্রিম হাসি ছড়িয়ে তাকে অভিনন্দন গ্রহণ করতে হচ্ছে!

.
.
.

গায়ে হলুদের পুরো অনুষ্ঠানে আনিস সেখানেই ছিল। তবে আইজার দিকে চোখ তুলে তাকাতে আর সাহস হচ্ছিল না তার।

আমানের পরিবারের ইজ্জত এখন এই মেয়ে, আমানের ইজ্জত। আমানের হবু স্ত্রী।

তবে সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে, পুরো অনুষ্ঠানে আইজা কেমন উদাস হয়ে বসেছিল, যেন গভীর কোনো চিন্তায় সে বারবার হারিয়ে যাচ্ছে। কোন একটি জিনিস তাকে খুব ডিস্টার্ব করছে।

আনিস ভাবল একবার গিয়ে আইজার সাথে কথা বলে দেখবে কিনা, পরক্ষনেই নিজের চিন্তাকে বাতিল করে দিয়ে আবারও ভাবতে লাগলো, এই এখতিয়ার তাকে কোনদিনই দেয় নি আইজা। এমন কিছু করলে আইজা বরং তার উপরই রেগে যাবে। এরপর আনিসও নিশ্চুপ হয়ে গেল।

.
.
.

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ফ্রেশ হয়ে আইজা তার বিছানার উপর গিয়ে বসল কেবলমাত্র, তখনই তার ফোন বেজে উঠে।

অন্যমনস্ক হয়ে সে ফোন হাতে তুলে নিয়ে দেখল আমানের নাম্বার। সে ফোন রিসিভ না করে সাইলেন্ট করে পাশে ফেলে রাখে।

এরপর সিলিং ফেনের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ভাবতে লাগলো তার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
না চাইতেও অতীতের বিভিন্ন বলা, না-বলা, জানা অজানা কথা তার মনে পড়তে লাগলো। যে অতীত তার ভবিষ্যতের সবকিছু এভাবে এলোমেলো করে দিচ্ছে আজ।

চলবে…

{ সন্ধ্যায় গল্প দেয়ার কথা ছিল, তবে নেটের একটু ঝামেলার কারণে গল্প পোস্ট করতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে, যার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here