#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
পর্ব_৬
#লেখিকা_Kaynat_Ash
আমান যত বড় হচ্ছিল সুদর্শন তো হচ্ছিল-ই, কিন্তু এছাড়াও সে ততটাই ‘ধনী বাবা মায়ের’ বিগড়ে যাওয়া সন্তানের মত প্রচন্ড অহঙ্কারী, জেদি আর রাগি হয়ে উঠছিল। সবসময় এমন গম্ভীরভাব নিয়ে থাকত যেন তার বলা শব্দও অজায়গায় অপচয় করতে চায় না। তার এ্যাটিটিউডও অন্য রকম। আর ব্যক্তিত্ব তো অসাধারণ।
আর এমন ভাব নিয়ে সবসময় চলত, যে সম্পত্তি আর প্রতিপত্তির জোরে সে যেকোনো কিছু করতে পারে। সবকিছু করতে পারে। তাকে বাঁধা দেয়ার কেউ নেই।
আর এই বিষয়ে সে এতটাই পজেসিভ যে একবার তুচ্ছ একটি ঘটনায় তার ক্লাসমেটকে এমন মার মেরেছিল যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। আর সেই ছেলের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। অবশ্য পরবর্তীতে সে সুস্থও হয়েছিল বটে।
এই প্রেক্ষিতে সেই ছেলের বিধবা মা, যার একমাত্র পুত্র হাসপাতালে ভর্তি, তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন যাতে আমানের শাস্তি হয়। কিন্তু আমানের বাবার ‘মানি এন্ড পাওয়ারের’ সামনে সেই ভদ্রমহিলা টিকতে পারেন নি। আমানকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, পুলিশ হাত পর্যন্ত লাগায় নি।
তবে আমানের বাবা রায়হান মোটা অংকের অর্থ দান করেন সেই মহিলাকে, ছেলের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে খরচ করার জন্য।
এরপরও আমানকে টু শব্দটিও করেন নি তার বাবা মা। একমাত্র ছেলেকে তারা যতটা ভালোবাসেন, তার রাগকে ততটাই ভয় পান।
তাদের একমাত্র পুত্র বলে কথা।
বিশেষ করে, রেহানা।
আইজা এসব বিষয় নিয়ে আমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও সফল হয়নি কখনো। এসব কথা বলতে গেলে আমান সবসময় তাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। তার পার্সোনাল লাইফ সে কীভাবে অতিবাহিত করবে এই বিষয়ে নাকি কারো পরামর্শ চায় না সে।
যেহেতু আমান পছন্দ করে না, আইজাও এই বিষয়ে আর কিছু বলে নি। তবে মানুষের প্রতি আমানের এসব নির্দয় ব্যবহার তার মোটেও ভালো লাগত না।
এদিকে আবার আমানের অযথা আইজাকে এড়িয়ে চলা, অন্যান্য মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠতা, এসবে আইজার খুব বেশি কষ্ট হত।
.
.
.
আইজার জীবনে আর হৃদয়ে আমানের জন্য সবসময়ই আলাদা একটা স্থান ছিল, আলাদা এক অনুভূতি ছিল। যে অনুভূতিকে সে সবসময়ই বন্ধুত্বের নামে চিনত। তবে সে এটাও জানত, এই অনুভূতি সে অন্য কোনো বন্ধুর প্রতি অনুভব করে না। খুব ভিন্ন এই অনুভূতি।
এছাড়া আমানের তার থেকে এভাবে দূরে সরে যাওয়া এবং অন্যান্যদের সাথে তার এতটা নৈকট্যের কারণে আইজার যে কতটা কষ্ট হয়, এই অনুভূতি সে কাউকে বুঝাতে পারত না, এমনকি আমানকেও না। আমানকে সে কিছু বুঝাতেও চাইত না। এক না-বলা অভিমান তার মনে কালো মেঘ হয়ে জমতে থাকে।
তবে সে বুঝতে পারত না তার মনে কেন সৃষ্টি হচ্ছে এসব অনুভূতি। আমান নিজের পথ আলাদা করে ফেলেছে, সে এটা মেনে নিতে পারছিল না কেন, কেন মেনে নিতে পারছিল না আমানের সাথে অন্য কারো ঘনিষ্ঠতা। একজন ভালো বন্ধু হিসেবে তো এসবে এতটা কষ্ট পাওয়ার কথা না, যতটা সে পাচ্ছিল।
অজানা অনেক প্রশ্ন এসে তার মনে ভীড় জমায়, যার কোনো উত্তর তার কাছে ছিল না। নিজের সাথে মানসিক এসবে যুদ্ধে একসময় ক্লান্ত হয়ে সে সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই, সেসব উত্তরের সন্ধান করতে থাকা, তার এখন বন্ধ করা উচিত। সবকিছুর-ই একটা শেষ আছে। আমান আর তার সম্পর্কেরও শেষ নাহয় এটাই। আর কিছু না-বলা প্রশ্নের উত্তর নাহয় অজানাই থাকুক। এরপর নিজের জীবন নিয়ে সে-ও ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুখী, স্বাভাবিকভাবে জীবন অতিবাহিত হতে থাকে তারও। এরপরও হৃদয়ে চাপা দেয়া তীব্র একটা কষ্ট অনুভব করে সে মাঝে মধ্যেই, যার কোনো অর্থ সে খুঁজে পায় না ।
চলবে…
{ আজ দুইটা পর্ব দিয়েছি, সুতরাং দয়া করে, এই complain করবেন না যে পর্ব ছোট হয়েছে। এছাড়া আমার গল্প নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে হলে আমার ব্যক্তিগত গ্রুপে তা করতে পারেন, আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। }