গল্পঃ ভাবি যখন বউ #পর্ব_১০ (জুয়েল)

0
1423

গল্পঃ ভাবি যখন বউ
#পর্ব_১০ (জুয়েল)

(৯বম পর্বের পর থেকে)

যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। তাকিয়ে দেখি অবন্তী আমার পাশে বসে আছে, আমি ওর দিকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে অবন্তী আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললো…

অবন্তীঃ এখন কেমন লাগছে?

আমিঃ ভালো।

অবন্তীঃ টেনশন এর দরকার নাই, খুব বেশি কিছু হয়নি, ডাক্তার বলেছে ২-১ দিনের মধ্যেই বাসায় চলে যেতে পারবে।

আমিঃ হুম।

অবন্তীঃ আমি তোমার আব্বু আম্মু কে কল দিয়ে আসতে বলেছি।

বুঝলাম না অবন্তী হঠ্যাৎ করে আমার আব্বু আম্মু বলছে কেন? তারওতো আব্বু আম্মু। কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।

অবন্তীঃ উনারা আসছে, তুই শুয়ে থাকো।

আমিঃ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

অবন্তীঃ আমার একটু কাজ আছে।

আমার এই অবস্থায় অবন্তী আমার পাশে থাকবে সেটা না করে বলতেছে তার নাকি কাজ আছে।

আমিঃ বাবা মা আসা পর্যন্ত থাকুন।

অবন্তীঃ না দেরি হয়ে যাবে, অন্য কোনো দিন দেখে যাবো।

অবন্তী উঠে চলে গেলো, আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম হঠ্যাৎ করে অবন্তীর কি এমন হলো যে এতো কাজ আমাকেও জানাচ্ছে না।

আম্মু আব্বু আসলো, এসে আমাকে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমু শান্তনা দিলাম যে আমি ঠিক আছি। শুধু মাথায় একটু আঘাত লাগছে।

আম্মুঃ অবন্তী কই?

আমিঃ এই তো একটু আগে গেছে। ওর নাকি খুব একটা জরুরী কাজ আছে!

বাবাঃ কি এমন জরুরী কাজ যে তোর পাশে থাকতে পারছেনা।

আমিঃ বাদ দাও, আবার চলে আসবে।

আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম, সেদিন হাসপাতালে থেকে গেলাম। আব্বু আম্মুও থেকে গেলো।

পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু এই ২ দিনে অবন্তী একবারও আসেন এবং একটা কলও দেয়নি।

আমিও আর নিজে থেকে দিই নি।

এক সপ্তাহ পর মোটামুটি সুস্থ, তাই চিন্তা করলাম নতুন অফিসে জয়েন করে ফেলি, বসে থাকা ঠিক হবে না।

তারি রেড়ি হয়ে সকালবেলা বের হচ্ছি আম্মু সামনে আসলো….

আম্মুঃ কোথাও যাচ্ছিস?

আমিঃ হুম, নতুন চাকরী পেয়েছি, বেতনও আগে থেকে ভালো। কষ্টও কম তাই চিন্তা করলাম আজ থেকে শুরু করে দিই।

আম্মুঃ সে কিরে, তুই তো আমাদের একবারও বলিস নি। কখন ফেলি???

আমিঃ যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলাম সেদিন।

আম্মু বাবা কে ডেকে বললো, বাবাও অনেক খুশি, দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হবো এমন সময় আবার দাঁড়িয়ে গেলাম….

বাবাঃ কিছু বলবি?

আমিঃ অবন্তীকে কেউ কিছু বলবে না, বলার দরকার নেই।

আম্মুঃ কেন রে এমন একটা খুশির খবর মেয়েটাকে না দিয়ে পারি।

আমিঃ না দেওয়ার দরকার নেই। সময় হলে জানবে, এখন নিজে থেকে কেউ কিছু বলবে না।

বাবাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।

আমি আর কিছু না বলে রওনা দিলাম। ৩০ মিনিট পর অফিসে গেলাম। ম্যানেজারকে সালাম দিলাম। উনি সব কিছু ঠিকঠাক করে দিলো।

আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দিলো। এবং কাজ বুঝিয়ে দিলো।

নতুন অফিস নতুন কাজ ভালোই লাগছে, কিন্তু বার বার অবন্তীর কথা মনে পড়তে লাগলো। আজকে এতো দিন অবন্তী একবারও একটা কল দেয়নি কারনি কি?

অবন্তী কি নতুন কারো সাথে!! না এটা হতে পারেনা।

বসে বসে ওর কথা ভাবতেছি এমন লিমা এসে একটা টোকা দিলো,,,,

লিমাঃ কি ব্যাপার স্যার, ম্যাম এর কথা খুব মনে পড়ছে বুঝি?

আমিঃ আরে না, তুই কখন আসলি?

লিমাঃ আসছি তো অনেক আগে, এসে দেখলাম তুই বসে বসে কি নিয়ে চিন্তা করতেছি।

আমিঃ না তেমন কিছু না।

লিমাঃ নতুন অফিস কেমন লাগছে?

আমিঃ ভালোই।

লিমাঃ কোনো প্রবলেম হলে ম্যানেজারকে বলিস।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

লিমাঃ তুই থাক আমি বাবার সাথে দেখা করে আসি।

আমিঃ ওকে যা।

তারপর আবার কাজ করতে লাগলাম। কিন্তু বার বার অবন্তীর কথাই মাথায় ঘুরতে লাগলো।

বিকালবেলা অফিস শেষ করে আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম…

আয়মান আসলো, দুজনে একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম, কিছু খাওয়ার অর্ডার দিলাম।

আয়মানঃ কিরে তুই তো পুরাই চেইঞ্জ, চাকরি পাইছিস?

আমিঃ হুম।

আয়মানঃ শালা একবারও বললি না।

আমিঃ তোর জন্য সারপ্রাইজ ছিলো। এখন তো বলে দিলাম।

আয়মানঃ হুম, তা আজকে কয়দিন?

আমিঃ আজকেই জয়েন করলাম। লিমাদের অফিসে,,,

আয়মানঃ কোন লিমা?

আমিঃ আরে আমাদের কলেজ ফ্রেন্ড লিমা।

আয়মানঃ ও আচ্ছা ভালো। আমার জন্যও একটা দেখ।

আমিঃ তুই চাকরি করলে তোর বাবার টাকা কে খাবে???

আয়মানঃ আরে না আগের মতো টাকা দেয়না। আব্বা কি পরিমাণ কিপটে তুই সেটা ভালো করেই জানিস।

আমিঃ আচ্ছা দেখবো।

আয়মানঃ তোর ভাবি বউ কেমন আছে?

আমিঃ ভাবি বউ মানে?

আয়মানঃ আগে ছিলো ভাবি এখন হইছে বউ, দুইটা মিলে ভাবি বউ।

আমিঃ তুই কোনো দিন ঠিক হবি না।

আয়মানঃ তো কি অবস্থা উনার, এবার তো অনেক খুশিতে থাকবে তাই না?

আমিঃ ওরে কিছু জানাই নি।

আয়মানঃ কেন?

আমিঃ…….(সব কিছু বললাম)

আয়মানঃ জুয়েল, দোস্ত! তোরে আমি আগে যেই কথাটা বলছি এখনও সেম কথাই বলতেছি। ওই মেয়েটার মধ্যে কোনো ঘাবলা আছে।

আমিঃ যেমন…

আয়মানঃ প্রথমত তোর ভাই মারা যাওয়ার পর অবন্তী যদি তোদের বাসা থেকে চলে যেতো খুব ভালো বিয়ে করতে পারতো না। ওর ভাগ্য ভালো যে তুই ওরে আবার বিয়ে করেছিস।

দ্বিতীয়ত তোর বাবা মা অবন্তীকে যে পরিমাণ ভালোবাসে, আদর করে আমার মনে হয়না পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন আদর পাবে।

সব কিছু থাকা স্বত্বেও অবন্তী তোর সাথে একই খাটে থাকে না, একসাথে মিশে না। এই থেকেই তো বুঝা যায় ওর মাঝে কোনো ঘাবলা আছে।

আমিঃ কিন্তু আমি তো ওরে কোনো অভাব দেখাইনি। ওর সব গুলো স্বপ্নই পূরণ করেছি।

আয়মানঃ আমার মনে হয় ওর কোনো পুরোনো বয়ফ্রেন্ড আছে।

আমিঃ আরে না, এটা হয়না।

আয়মানঃ এটাই হবে, গরিবের কথা বাসি হলেও মিষ্টি হয়।

আমিঃ কি করবো বল, আম্মু আব্বুর দিকে তাকিয়ে ওরে কিছু বলতেও পারছি না।

আয়মানঃ ও এখন কোথায়?

আমিঃ ওর বাবার বাসায়। আমার এক্সিডেন্ট এর আগে গেছে এখনো আসেনি।

আয়মানঃ একবারও আসেনি?

আমিঃ না, কল করে জিজ্ঞেসও করেনি আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।

আয়মানঃ তাইলে সিউর থাক ওর অন্য কোথাও রিলেশন চলতেছে।

আমিঃ দোস্ত ওরে ফলো করতে পারবি?

আয়মানঃ ওকে করলাম, সমস্যা কোথায়। কিন্তু এটা সিউর যে অবন্তী তোর কাছে থাকবে না। আগে হোক আর পরে হোক ওরে ডিভোর্স দিতে হবেই, তুই না দিলেও সে তোকে দিবে।

আমিঃ আচ্ছা তুই শুধু ফলো কর।

আয়মানঃ ওকে।

আরো কিছু কথা বলে বাসায় চলে আসলাম।

এসে ফ্রেশ হলাম। আম্মু রুমে আসলো….

আমিঃ কিছু বলবে?

আম্মুঃ হুম।

আমিঃ বলো। আব্বু কোথায়???

আম্মুঃ বাইরে গেছে।

আমিঃ ও কি বলবা বলো।

আম্মুঃ মেয়েটা অনেকদিন বাসায় নেই। বাসাটা কেমন খালি খালি লাগছে, যা না বাপ ওরে নিয়ে আয়।

আমিঃ কাকে?

আম্মুঃ অবন্তীকে। ওরে অনেক মিস করছি, তোর আব্বু বলেছিলো বিকালবেলা যাবে কিন্তু আমি দিই নি। আমি বলেছি তুই গিয়ে নিয়ে আসবি।

আমিঃ ও নিজে থেকে আসবে,আমি নিয়ে আসতে পারবো না।

আম্মুঃ এটা কেমন কথা, একা একটা মেয়ে কি করে আসবে।

আমিঃ আরে আজব এতো রাতে ওরে কেমনে নিয়ে আসবো। সকাল হোক আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো, ও চলে আসবে।

আম্মুঃ না তুই এখন যা, ওরে নিয়ে আয়।

আমিঃ মানে কি এখন নিয়ে আসবো মানে? এই রাতের বেলা,,,,

আম্মুঃ তোরে কি বলছি আজকে রাতেই নিয়ে আসতে হবে, আমি বলছি তুই এখন যাবি রাতটা ওখানে থাকবি কালকে সকালে ওরে নিয়ে আসিস।

আমিঃ পারবো না।

আম্মুঃ ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।

আমিঃ পাগল হইছো! এতো রাতে ওদের বাসায় যাবা মানে?

আম্মুঃ হুম যাবোই তো, তুই যেহেতু যাবি না আমি নিজেই গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে আসবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।

কি আর করা ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম।

৪০ মিনিট পর ওই বাসায় গেলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.০০ টা বাজে। কলিং বেল দিলাম কিছুক্ষণ পর অবন্তীর মা এসে দরজা খুলে দেয়।

আমি সালাম দিলাম ভিতরে গেলাম, উনি বললো অবন্তী রুমে আছে। আমি অবন্তীর রুমে গেলাম গিয়ে দেখি অবন্তী কার সাথে হেসে হেসে মোবাইলে কথা বলতেছে, আমাকে দেখে এক রকম চোরের মতো হয়ে গেলো।

অবন্তীঃ তু তু তুমি এখানে?

আমিঃ কোনো প্রবলেম?

অবন্তীঃ প্রবলেম না, কিন্তু আসতে তো পারমিশন লাগে।

নিজের বউয়ের রুমে আসবো সেখানেও পারমিশন!!!

আমিঃ সরি।

অবন্তীঃ কেন আসছো?

অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমিঃ আম্মু আব্বু আপনাকে অনেক মিস করতেছে। এখানে আসলেন যে তো অনেক দিন হইছে, এবার বাসায় চলেন।

অবন্তীঃ দেখো তোমাকে অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো ভাবতেছি কিন্তু বলা হয়নি।

আমিঃ এখন বলেন।

অবন্তীঃ দেখো আমারও তো ইচ্ছা আছে আমি চাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে।

আমিঃ মানে?

অবন্তীঃ মানে আমি মাস্টার্স করবো তারপর একটা ভালো জব করবো।

আমিঃ আপনাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি চাইনা আপনি চাকরি করেন।

অবন্তীঃ তোমার চাওয়া না চাওয়ায় আমার কিছু যায় আসে না।

আমিঃ আপনি এগুলো কি বলতেছেন?

অবন্তীঃ তুমি আমার জন্য অনেক করছো, তোমার ফ্যামিলিতে থাকা মানে তোমার করুণায় থাকা। কিন্তু আমি কারো করুণা নিয়ে থাকতে চাই না।

আমিঃ করুণা করছি মানে? স্বামী হিসেবে এগুলো আমার দায়িত্ব।

অবন্তীঃ কিন্তু আমি তোমাকে কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।

আমিঃ আপনি এতো দিন পর এগুলো কি বলতেছেন?

অবন্তীঃ আমারওতো একটা ভবিষ্যৎ আছে,,,

আমিঃ আপনি কি বলতে চাইছেন ক্লিয়ার করে বলেন।

অবন্তীঃ দেখো জুয়েল, আমি তোমার সাথে এইভাবে থাকতে পারবো না।

আমিঃ আব্বু আম্মুকে কি বলে বুঝাবেন? উনারা কি আপনাকে নিজের মেয়ের চেয়ে কম কিছু করেছে?

আমিঃ দেখো আমি এতো কিছু বুঝি না, আমি জাস্ট মুক্তি চাই। তোমার সাথে আমার যায়না।

আমিঃ যায়না মানে?

অবন্তীঃ মানে তোমার এই টানাটানির সংসারে আমি থাকতে পারবো না। যে টাকা বেতন পাও তা দিয়ে কিছুই হবে না।

আমিঃ টাকাই কি সব?

অবন্তীঃ হুম টাকাই সব, কয়টা ইচ্ছা পূরণ করেছো আমার? কয় টাকা হাত খরচ দাও আমাকে, কয়বার শপিংয়ে নিয়ে গেছো আমাকে? বিয়ের পর থেকেই তো এইভাবে রাখছো লজ্জা করেনা আবার নিজেকে স্বামী বলে দাবি করতে।

আমিঃ আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর কি করবো?

অবন্তীঃ আমি এতো কিছু বুঝি না।

আমিঃ তারমানে আপনি যাবেন না এইতো?

অবন্তীঃ হুম,,,,

আমি আর কোনো কথাই বললাম না, অবন্তীদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। কাওকে কিছু বললাম না। এতো রাতে বাসায় যাওয়াও ঠিক হবে না। আব্বু আম্মুকে যদি জানাই তাহকে উনারা অনেক কষ্ট পাবে। আর কিছুদিন দেখি পরে না হয় সময় করে সব উনাদের জানিয়ে দিবো।

আয়মানকে কল দিলাম, আজ রাত তার সাথেই থাকতে হবে। তারপরেই……

#চলবে……
To be Continue……

( ইচ্ছা ছিলো এই পর্বে শেষ করে দিবো কিন্তু আপনাদের অনুরোধ না রেখে পারলাম না, তাই অন্যভাবে ঘুরিয়ে আরো বড় করলাম। ধন্যবাদ সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here