#রূপসীর_আঁচল
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮
আকাশ,রাতে খাটে শুয়ে আছে,হিয়ার সৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে আসছে ওর,চোখ জোড়া যেন আর বাঁধা মানছে না,ইচ্ছে মত পানি ঝরছে চোখ জোড়া থেকে,এমন সময় হটাৎ হিয়ার বাবা ফোন করে বলে হিয়াকে রানার লোকেরা জোর করে তুলে নিয়ে গেছে,প্লিজ বাবা তুমি কিছু একটা করো..!
আকাশের এখন কি করা উচিৎ কিছুই মাথায় কাজ করছে না,
আকাশ,দেখুন আমি এখন কি ভাবে কি করবো এত রাতে,সকালে আবার অফিস আছে,ঠিক ঠাক মত না গেলে চাকরিটা আমাকে হারাতে হবে,আর সে তো আমায় ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে,আমি কেন ওর জন্য কিছু করতে যাবো…!
হিয়ার বাবা,প্লিজ বাবা এভাবে বলো না,আমার মেয়েটা না হয় ছোট না বুঝে শুনে এমনটা করেছে,কিন্তু তুমি তো ওর স্বামী তোমার তো যথেষ্ট বুঝ হয়েছে তুমি যদি এভাবে মুখ ফিরিয়ে নাও,তাহলে আমরা কোথায় যাবো বলো…?
আকাশ,দেখুন বাবা আমার চাকরিটা আমি হারাতে পারবো না,আর সব সময় কি আমিই ত্যাগ শিকার করে যাবো..?
ওর কি আমার উপরে কোন দায়িত্ব কর্তব্য নেই…?
হিয়ার বাবা,প্লিজ বাবা তোমার চাকরি একটা চলে গেলে আমি তোমায় পায়ের সামনে দশটা চাকরি এনে হাজির করবো,দরকার হয় আমার সমস্ত ব্যবসা বাণিজ্য তোমার নামে করে দিবো তাও তুমি এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না…?
আকাশ,বাবা দুঃখিত আমায় ক্ষমা করবেন আমি পারবো না,যার কাছে আমার কোন মূল্য নেই,তার মূল্য আমার কাছেও নেই বলে ফোনটা রেখে দেয়..!
অন্যদিকে
হিয়ার তো খুব ভয় করছে,ওকে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে আটকে রেখেছে,একটু পর রানা আসে..!
রানা,অনেকদিন লুকিয়ে ছিলে আমার কাছে থেকে,এবার কোথায় যাবে,এবার তোমায় বিয়ে করেই ছাড়বো..!
হিয়া,প্লিজ এমনটা করবেন না,আমার স্বামী বলতে গিয়েও আটকে গেলো,কারন আকাশকে তো সে ঠুকরে চলে এসেছে,বড় কথা তাকে তো সে স্বামী হিসেবেই মানে না,যদি স্বামী হিসেবে মানতো তাহলে আজ হয়তো এই দূর্দিন দেখতে হতো না,কত বড় ভুল করেছে সে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে..!
রানা,নিজেকে তৈরি করো,দুইদিন পর তোমার আর আমার বিয়ে,
হিয়াকে,চুপ করে মাটির দিকে চেয়ে অঝোরে চোখের পানি ঝরাচ্ছে,
আকাশের যেন মনে হচ্ছে সে বহুমূল্য কোন একটা জিনিস হারাতে যাচ্ছে..!
নাহ আমার কি সে যদি আমায় রেখে চলে যেতে পারে,তাহলে আমার কেন এত দায়িত্ব কর্তব্য দেখাতে হবে..!
আকাশ,এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে,সকাল বেলা উঠে যথাসময়ে অফিসে চলে যায়,কিন্তু কেন জানি অফিসের কাজে মন বসছে না,তাও কাজে মন দেয়…!
হিয়া,গত কাল থেকে এখন পর্যন্ত এক ফোটা দানা পানিও মুখে নেয় নাই,সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে এসেছে,রানার মানুষ এসে খাবার দিয়ে গেছে কিন্তু সে এক ফোটা খাবার ও মুখে নেয় নাই,যেভাবে দিয়ে গেছে ঠিক সেভাবেই পড়ে আছে,ইশ মানুষটা আমাকে কত সুন্দর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো,মানুষটার কথা খুব মনে পড়ছে,ইচ্ছে করছে খাবার গুলো মানুষটার কাছে নিয়ে গিয়ে বলি এই আমাকে একটু খাইয়ে দিন না,আমার না খুব খিদে পেয়েছে,নিজের উপরেই ঘেন্না হচ্ছে এমন একটা মানুষকে কি ভাবে ঠুকরে চলো এলাম..!
নিজের দোষে নিজের কপাল পুড়েছি, এবার এমন একটা মাস্তানকেই বিয়ে করতে হবে,আচ্ছা মানুষটার কানে কি খবর পৌছায় নাই,আমাকে যে রানার লোকেরা তুলে নিয়ে এসেছে,মানুষটা কি আমায় বাঁচাতে আসবে না,
নাহ কেন আসবে মানুষটার কি ঠেকা পড়েছে নাকি…😔
অফিসের পিয়ন এসে বলে স্যার আপনার সাথে একটা লোক দেখা করতে এসেছে…?
আকাশ,এমন অসময়ে আবার কে আসলো,🤔
আচ্ছা আপনি কেবিনে পাঠিয়ে দিন…?
পিয়ন,আচ্ছা স্যার তারপর পিয়ন চলে গেলো,একটু পর কেবিনের দরজা খুলে হিয়ার বাবা আসলো,উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম,বাবা আপনি এখন এ অসময়ে..?
হিয়ার বাবা,বাবা তোমার পায়ে পড়ি তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও,আমার মেয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি,আমার মেয়েটাকে বাঁচানোর মত যে তুমি ছাড়া আর কেউ নাই..
আকাশ,উনি কথা বলতে বলতে একদম কান্না করে দিছে,প্লিজ বাবা আপনি কান্না করবেন না,আমি দেখছি কি করা যায়…!
আপনি টেনশন করবেন না,আপনার মেয়ে আমি আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবো..!
আপনি এখন বাসায় জান আমি রাতের মধ্যে আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবো…!
হিয়ার বাবা চলে গেলো…!
আকাশ,নাহ যা হয়েছে হয়েছে যতই হোক এখনো আমরা আলাদা হইনি,আর ও এখনো আমার স্ত্রী ওর সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব এখনো আমার,ওকে যে করেই হোক রানার হাত থেকে বাঁচিয়ে আনতে হবে,কিন্তু কি ভাবে ওকে আমি ঐ সব মাস্তানদের হাত থেকে ছুটিয়ে আনবো🤔
সাজ্জাদ ফোন দিলাম,আর সমস্তটা খুলে বললাম,
সাজ্জাদ, তো এখন কি করবি…?
আকাশ,শোন তাহলে দুজনে মিলে একটা প্লান করলাম,আর বললাম যাতে জাবেদ কেউ সাথে নিয়ে নেয়..!
সাজ্জাদ, আচ্ছা ঠিক আছে,কিন্তু আকাশ এতে তো তোর জীবন চলে যাওয়ার ভয় আছে,কারন রানা মাস্তান মানুষ না আস্ত একটা জানোয়ার..
আকাশ,আরে সমস্যা নেই,আমার যা হওয়ার হোক কিন্তু হিয়া যেন সহি সালামতে ওর বাবা-মার কাছে ফিরে যায়..?
সাজ্জাদ,মন খারাপ করে ফেললো😔আচ্ছা ভাবিকে সহি সালামতে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসবো..!
আকাশ,অফিস থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসায় চলে যায়,আর লোক সমাজে ওদের যে বিয়ে হয়েছে তার কিছু ডকুমেন্ট রেয়েছে সেগুলা নিয়ে নেয় সাথে করে,আর সময় মত সেখানে চলে যায়..!
রানার বাড়িতে ঢুকার সময় ওর বাড়ির দারোয়ান ওকে আটকায়!
এই বেটা কোথায় যাওয়া হচ্ছে..?
আকাশ,রানার সাথে দেখা করতে..!
দারোয়ান, এই বেটা কি বললি রানার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস তোর সাহস তো কম না রানা ভাইয়ের নাম মুখে নিস বলে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়,
আকাশের মাথায় তো পুরো আগুন ধরে গেছে,উঠে গিয়ে দারোয়ানকে সজোড়ে একটা লাথি মারে তলপেটে বরাবার,দারোয়ান সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়,আর ব্যথার চোটে ষাঁড়ের মত চেঁচাতে থাকে,ওর চেঁচানি শুনে রানার লোকেরা গেইটের দিকে আসতে থাকে,
গেইটের দিকে এসে দেখে দারোয়ান মাটিতে পড়ে আছে,আর অচেনা কেউ একজন দাড়িয়ে আছে.!
রানার লোকেরা দৌড়ে যায় আকাশকে মারার জন্য,আকাশ একে একে সব গুলাকে মারে,আকাশ যেন হিংস্র জানোয়ার হয়ে গেছে,যাকে সামনে পাবে তার শরীর চিড়ে ফেলবে..!
সব কয়টাকে মেরে মাটিতে ফেলে রেখে ঘরের দিকে এগিয়ে যায়,ঘরে ঢুকবে এমন সময় আরো বেশ কয়েকজন রানার চেলাপেলা আকাশের সামনে আসে,আকাশ একে একে সেগুলাকেও মেরে মাটিতে ফেলে রাখে,আর সামনে এগিয়ে যায়,রানার কানে এত সময়ে খবর পৌঁছে গেছে নিচের ফ্লোরে হাঙ্গামা হচ্ছে,আকাশ যখন উপরের ফ্লোরে রানার কাছে গিয়ে পোঁছায় তখন দেখতে পায় রানা একটা চেয়ারে বসে আছে,পাশেই টেবিলের উপরে পিস্তল রাখা,আর ওর আশেপাশে চেলাপেলা দিয়ে ভর্তি,
রানার চেলাপেলা যেগুলা রানার আসল বডিগার্ড সেগুলা আকাশকে মারার জন্য এগিয়ে আসলে রানা তাঁদেরকে বারন করে..!
রানা,এই কে তুমি আর তোমার সমস্যা কোথায়..?
কানে আসছে তুমি নাকি আমার ঘরে এসে হাঙ্গামা করেছো…?
তার কারন টা কি…?
আকাশ,কারন হচ্ছে আমার বউকে আপনারা তুলে নিয়ে এসেছেন, তাই আমার বউকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি,..!
রানা,এই ছেলে তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি,যে তোমার বউকে তুলে আনতে যাবো..?
আকাশ,মাথা আমার না আপনার খারাপ হয়েছপ,আমার বউকে ভালোয় ভালোয় ফিরিয়ে দিন,তাহলে আমি চলে যাবো..!
রানার লোকেরা তো আকাশের কথায় পুরো ক্ষেপে গেছে,রানা অনুমতি দিলেই খালি আকাশকে মেরে কুচিকুচি করতে দুই মিনিট সময় লাগবে না..!
রানা,কার কথা বলছো,এই যা মেয়েটাকে নিয়ে আয় তো..?
রানার বডিগার্ড একজন হিয়াকে রুম থেকে নিয়ে আসে,
রানা,কে এই মেয়েটা তোমার বউ…?
আকাশ,হা..!
রানা তার প্রমাণ কি..?
আকাশ,কাগজ গুলা বের করে রানার কাছে দেখিয়ে বলে এই যে আমাদের বিয়ের কাগজ..!
রানা, আকাশের হাত থেকে কাগজ গুলা নিয়ে যখন খুলে দেখে,রানার মাথায় তো আগুন ধরে গেছে,তোর এত্ত বড় সাহস বলে আকাশের বুক বরাবর একটা লাথি মারে,আকাশ টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে গিয়ে পড়ে,বুকে খুব ব্যথা পেয়েছে সে উঠতেও পারছে না,মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,রানা এত সময় কিচ্ছু বলি নাই কারন তুই কেন আমার বাসায় এসে হাঙ্গামা করেছিস সেটা জানার দরকার ছিলো,কিন্তু এখন দেখি তুই আমার ভালোবাসার উপরে অধিকার জমিয়েছিস,তোকে তো আর জীবিত রাখবো না,
হিয়া,প্লিজ আপনারা উনাকে কিচ্ছু করিয়েন না,আমি আপনার সাথে বিয়ে বসবো,প্লিজ আপনারা উনাকে ছেড়ে দিন কান্না করতে করতে..!
কে শুনে কার কথা,
রানা পিস্তলটা হাতে নিয়ে পিস্তলের ডাটটা হাতের উল্টো করে ঘুরিয়ে নেয় আকাশকে মারবে বলে,আকাশকে গিয়ে মাটি থেকে তুলে ওকে মারতে যাবে ঠিক তখনি আকাশ রানার মুখ বরাবর একটা ঘুষি মারে,রানা কয়েকহাত পিছনে গিয়ে পড়ে,রানার লোকেরা সব গুলা এক সাথে এসে আকাশকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে,আকাশকে মারতে মারতে ওরা আধমরা করে ফেলেছে..!
রানা,এই তোরা থাম,কুত্তার বাচ্চার কত বড় সাহস গালি দিয়ে,কুত্তার বাচ্চা আমার গায়ে হাত দেয়,পিস্তলের রিগারটা টেনে ফায়ার করে আকাশের শরীরে ঠাস ঠাস করে তিনটা বুলেট ঢুকিয়ে দেয়,
এমন সময় কোথা থেকে জানি পুলিশ এসে পড়ে,আর সমস্ত দলবলকে ঘিরে ফেলে,পুলিশ গুলা সাজ্জাদ নিয়ে আসছে,পুলিশ রানাকে সহ সব কয়টাকে গ্রেফতার করে,এক আকাশকে মারার দায়ে দুই নারী নির্যাতন মামলায় সব কয়টাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়,
আর অন্যদিকে আকাশ মাটিতে পড়ে আছে,অনবরত রক্ত পরতেছে আশাশের মুখ আর পেট থেকে,হিয়া দৌড়ে আসে আকাশের কাছে আর পাগলের মত কান্না শুরু করে দেয়,এই কি হয়েছে আপনার আকাশকে ডাক দেয় কিন্তু আকাশের কোন সারা সব্দ নাই,এই কথা বলেন না কেন..?
প্লিজ কথা বলেন না আমার সাথে..?
এই তো দেখেন আপনি না বলেছেন আপনি আমায় খুব ভালেবাসেন তাও কেন আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না,আমার উপরে এত অভিমান কেন করে আছেন,কথা বলেন না একটু…?
সাজ্জাদ আর জাবেদ দৌড়ে আসে আকাশকে দেখতে পেয়ে,সাজ্জাদ এই আকাশ কি হয়েছে তোর কথা বলছিস না কেন বলে যখন শরীরে হাত দেয়,সারা হাত রক্তে লাল হয়ে যায়,লক্ষ করে দেখে আকাশের গায়ে গুলি লেগেছে তাও একটা না তিনটা,সাজ্জাদ চেক করে দেখে আকাশের শ্বাস চলছে কিনা,নাহ শ্বাস চলছে না,
সাজ্জাদ,আকাশ বলে চিৎকার দিয়ে চুপ হয়ে যায়..!😪
আর কান্না করতে আরম্ভ করে…!
জাবেদ,সাজ্জাদ কি হয়েছে বলবি তো…? কান্না কেন করছিস…?
সাজ্জাদ,আকাশ আর নাই ওর শ্বাস চলছে না..!
হিয়া,এটা শুনে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়,না উনার কিচ্ছু হতে পারে না,উনার কিচ্ছু হলে যে আমিও বাঁচবো না…
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন….!
আগামী পর্বে শেষ করে দিবো গল্পটা,নতুন গল্প আসছে….!