রূপসীর_আঁচল #লেখক_আকাশ_মাহমুদ #পর্ব_৯_এবং_শেষ

0
366

#রূপসীর_আঁচল
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৯_এবং_শেষ

সাজ্জাদ, আকাশ আর নাই ওর শ্বাস চলছে না..!

হিয়া,এটা শুনে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়,না উনার কিচ্ছু হতে পারে না,উনার কিচ্ছু হলে যে আমিও বাঁচবো না..!

আকাশকে অনেক ডাকাডাকি করে কিন্তু আকাশের কোন সারা শব্দ নাই,ইতি মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গেছে,হটাৎ আকাশ জোরে করে শ্বাস নিয়ে উঠে,সবার মধ্যে যেন জান ফিরে এসেছে,সাজ্জাদ আর জাবেদ মিলে তাড়াতাড়ি করে আকাশকে হসপিটালে নিয়ে যায়,

আকাশকে ওটি রুমে নিয়ে যাওয়া হইছে,সবাই তো হাতাশ আল্লাহ আকাশ ঠিক হয়ে যাবে তো..!

হিয়া,তো কান্না করেই যাচ্ছে,
জাবেদ,ভাবি আপনি কান্না করবেন না দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে,

ইতিমধ্যে আকাশের বাসায় ও খবর পৌঁছে গেছে,উনারা রওনা হয়েছেন,হিয়ার বাবা-মা রাও এসেছে,হিয়ার বাবা তো নিজেকে একের পর এক ধিক্কার দিচ্ছে,আজ আমার জন্য ছেলেটা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে..!

একটু ওর ওটি থেকে ডাক্তার বের হয় চোখ মুখ কালো করে,হিয়া দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যায়,ডাক্তার সাহেব আমার উনি ঠিক আছেন তো…?
আমার উনার কিচ্ছু হয় নি তো…?

ডাক্তার,দেখুন রুগীর অবস্থা বেশি একটা ভালো না,যে কোন সময় হয়তো উনি এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করবে,

হিয়া,না বলে চিৎকার করে উঠে,

হিয়ার আম্মু,মারে তুই শান্ত হ দেখবি আকাশের কিচ্ছু হবে না!

হিয়ার বাবা,ডাক্তার সাহেব যত টাকা লাগে আমি দিবো,তবুও আপনি আমার মেয়ের জামাইকে সুস্থ করে দিন…হাত জোর করে🙏

ডাক্তার, দেখুন এখানে টাকা পয়সার কোন ব্যাপার না,আর আমরা ও চাই রুগীকে সুস্থ করে তুলতে,কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গুলি গুলো রুগীর পাকস্থলীতে গিয়ে লেগেছে,আর অতিমাত্রায় রক্ত ক্ষরণ হয়েছে,তাই রুগীর সুস্থতা এখন আমাদের হাতের নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছে,উপর ওয়ালা কে ডাকুন উনিই এখন চাইলে সুস্থ করে দিতে পারে,আর আপনরা সবাই গিয়ে রুগীকে দেখে আসুন এরপর হয়তো আর সম্ভব হবে না বলে ডাক্তার চলে যায়..!

হিয়া,তো ডাক্তারের কথা শুনে আরো ভেঙ্গে পড়ছে,কান্নার মাত্র আরো বেড়ে গিয়েছে,এমন সময় আকাশের মা-বাবা সকলেই এসে হসপিটালে পৌঁছায়,আকাশের মা তো কান্না করতে করতে শেষ,..!

আকাশের আম্মু,হসপিটালে পৌঁছেই পাগলের মত আচরণ শুরু করে দিয়েছে,এই সাজ্জাদ আমার ছেলের কি হয়েছে, ও এখন কোথায়…?
সাজ্জাদকে আগের থেকেই চিনে আকাশের আম্মু..!

সাজ্জাদ,খালাম্মা আকাশ গুরুতর এক্সিডেন্ট করেছে,এখন ওকে আইসিও তে রাখা হয়েছে,মিথ্যা বলেছে কারন না হয় টেনশন বেশি করবে..!

আকাশের বাবা,ডাক্তাররা কি বলেছে..?

সাজ্জাদ, খালু উনারা জওয়াব দিয়ে দিয়েছে😔

আকাশের আম্মু তো ঠাসসস করে মাটিতে পড়ে যায় আল্লাহ আমার ছেলে বলে কান্না করতে থাকে..!

থমথমে একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে সেখানো,কারোর মুখে কোন হাসি নাই,কোন কথা নাই..!

তারপর সবাই আকাশের কেবিনে যায়,গিয়ে দেখে আকাশের মুখে মাক্স লাগানো,কোন সারা শব্দ নাই,আকাশের মা তো আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা আরম্ভ করছে,
এই আকাশ কি হয়েছে তোর..?
দেখ আম্মু এসে গেছি,তুই কি তোর আম্মুর সাথে কথা বলবি না..?
এই আকাশ বল না তুই তোর মা টার সাথে কথা বলবি না,

এমন সময় নার্স একজন ভিতরে আসে,এই এই আপনারা কি করতেছেন, এভাবে কান্না কাটি করলে তো রুগীর আরো ক্ষতি হবে,প্লিজ এভাবে কান্না কাটি করবেন না,এখন আমাদের সার্জারি স্পেশালিষ্ট আসবে আপনারা প্লিজ একটু বাহিরে জান,

আকাশকে দেখে হিয়ার তো বুক ফেটে কান্না আসতেছে,হায় আল্লাহ কি করলাম আমি এটা,আজ আমার জন্য উনার এই অবস্থা, উনি তো কত ভালোবাসতো আমায় তাও উনাকে ঠুকরে চলে এসেছি,কিন্তু সেই উনিই আমাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে,

অনেকটা রাত হয়ে গেছে,সবাই কেবিনের সামনে বসে অপেক্ষা করতেছে,আর অন্যদিকে আকাশের কোন রেসপন্স নাই,কোন ভালো সংবাদ নাই..!

হিয়া এখনো কান্না করতেছে খিঁচে খিঁচে,নাহ আর কান্না করবো না,দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে অজু করে আসে,আর হসপিটালের এবাদত খানায় চলে যায়,আমার উনাকে একমাত্র সুস্থ করতে পারে তিনি হচ্ছেন উপর ওয়ালা, উনার কাছেই আজ আমার স্বামীকে আমি ভিক্ষা চাইবো,দরকার হয় আমার উনার বদলে আমাকে নিয়ে যাক তাও উনাকে সুস্থ করে দিক..!

নামাজে দাড়িয়ে যায় হিয়া,নামাজ শেষ করে দুইহাত উত্তলন করে স্বামীর জন্য দোয়া করে,আজ যেন সে বহুমূল্য কিছু একটা হারাবার ভয় পাচ্ছে,দোয়া শেষ করে জায়নামাজে বসে থাকে,চোখের পানি এখনো টপ টপ করে ঝড়ে পড়ছে,কান্না করতে করতে খুব ক্লান্ত লাগছে হিয়ার,জায়নামাজে বসে সিজদাহ এর মত করে পড়ে থাকে,

হটাৎ কেউ একজন এসে খবর দেয়,আকাশ আর নাই,সে একটু আগে এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে,
হিয়ার মনে হচ্ছে ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে,আল্লাহ উনাকে ছাড়া কি ভাবে বাঁচবো আমি,উনিই যে আমার বেঁচে থাকার উৎস,উনি ছাড়া যে এই দেহটার কোন দাম নাই,কান্না করতে করতে আকাশের কেবিনের দিকে যায়,কেবিনের সামনে গিয়ে দেখে সবাই কান্না করতেছে,হিয়ার চোখ জোড়া যেন এখন খুলে পড়ে যাবে,কান্না করতে করতে চোখের পানি শুখিয়ে মরুভূমির মত হয়ে গেছে,চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে আর খুব ব্যথা করছে,হিয়া তো ধাপাসসসসস করে মাটিতে বসে পড়ে..!

হসপিটাল,
ওয়ালারা আকাশের মৃত দেহ নিয়ে যেতে বলে,
আকাশের দেহ টা আকাশদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়,আকাশকে সেখানেই দাফন করা হবে,হিয়া তো প্রান ছাড়া মানুষের মত হয়ে পড়ে আছে,হিয়ার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছেনা তার জীবনসঙ্গিনী টা আর এই দুনিয়ায় নাই.

এলাকার লোক তারপর মসজিদের ইমাম সাহেব এসে আকাশের মৃত দেহ টাকে ধুইয়ে দিয়ে সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে দেয়..!

আকাশের এলাকাবাসীদের মধ্যেও কান্না কাটির একটা রোল পড়ে যায়,অকালে ছেলেটা প্রান হারালো ছেলেটা,আকাশকে আতর,সুরমা মেখে দিয়ে সবাই ধরাধরি করে আকাশকে নিয়ে খাটিয়ায় শুইয়ে দেয়,ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য,

সবাই ধরাধরি করে আকাশকে কাঁধে তুলে নেয়,এলাকার কবরস্থানে ওকে কবর দেওয়া হবে,

হিয়া তো,পাগলের মত আচরণ করতে শুরু করে দিয়েছে,এই তোমরা আমার স্বামীকে কোথায় নিয়ে যাও,রাখো বলছি আমার স্বামীকে, আমার স্বামী আমার কাছেই থাকবে,উনাকে কোথাও নিয়ে যেতে দিবো না আমি,সবাই মিলে হিয়াকে আটকে রাখতে পারতেছে না,হিয়া হাত পা ছুটাছুটি করতেছে..!

এলাকাবাসীরা আকাশকে কাঁধে করে নিয়ে কবরস্থানের দিকে রওনা দেয়,হিয়া নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে যে এলাকাবাসীরা ওর প্রিয় মানুষটাকে কাঁধে করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে,
যতদূর পর্যন্ত আকাশের খাটিয়াটাকে দেখা গেছে ততটা সময় হিয়া শান্ত ছিলো,যখন আকাশের খাটিয়াটাকে আর দেখা যাচ্ছে না তখন আবার পাগলের মত আচরন করতে শুরু করে,মাটিতে বসে হাত পা ছুটাছুটি করতে আরম্ভ করে আর মাটির দিকে তাকিয়ে মাটিতে হাত দিয়ে নিজে নিজেই প্রলাপ করতে শুরু করে,

-ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান ঘুমাও আমার কোলে
ভালোনাসার নাউ ভাসাবো ভালোবাসি বলে,
-তোমার চুলে হাত বুলাবো পূর্ণ চাঁদের তোলে
কৃষ্ণচূড়া মুখে তোমার জোছনা পড়ুক তোলে..!

-এত ভালোবাসি গো জান রেখে চলে গেলে
দোলাও তুমি দুলি আমি জগৎ বাড়ি দোলে..!

সব ভালোবাসায় পূর্ণতা পায়না, সেই অপূর্ণ ভালোবাসার মাঝেও এটা একটা,

এমন সময় হটাৎ কেউ একজন এসে হিয়াকে ডাক দেয়,হিয়া চোখ মেলে দেখে ওর বাবা,

হিয়ার আব্বু,মারে আকাশের জ্ঞান ফিরেছে,

হিয়া,ভালো করে চারপাশে দেখতে থাকে,সে বুঝতে পারে যে সে এত সময় স্বপ্ন দেখছিলো,কান্না করতে করতে রাতের বেলায় সে জায়নামাজের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে,সে খপ করে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কান্না করে দেয়..!

পাঠক ভাইরা কেমন আছেন🙄
এত সময় কোথায় ছিলেন..?🙄
কত কি পড়ে ফেলছেন যে আকাশকে কবর দিয়ে ফেলছেন এই সেই😂
ভাই সত্যি কারে আকাশ মরে নাই,হিয়া কান্না করতে করতে রাতের বেলায় জায়নামাজেই বসে ঘুমিয়ে গেছে,আর এই দূঃস্বপ্ন দেখছে..!

পাঠক দের এখন অনুভূতিটা কেমন জানাবেন কমেন্ট করে..?
Nice বলে কমেন্ট করলে রিপ্লে করবো না..!এত বড় গল্প শেষ করলাম আর মাত্র nice এটা মানবো না😒

তারপর আকাশের কেবিনে যায়,আর কেবিনে গিয়ে দেখে আকাশ ওর আম্মুর সাথে কথা বলছে,আকাশের রাতেই জ্ঞান ফিরে এসেছে,হিয়া ঘুমিয়ে ছিলো তাই হিয়াকে কেউ ডাকেনি,হিয়া গিয়ে আকাশকে ঝাপটে ধরে এই আপনি কেমন আছেন হু😥

আকাশ,এই পাগল কান্না করতেছো কেন,এই তো দেখো আমি ঠিক হয়ে গেছি,আর কি হাল করেছো নিজের হা..?কান্না করতে করতে একদম চোখ মুখ ফুলে গেছে..?

হিয়া,🤐🤐

আকাশ,একদম আর কান্না করবা না,..!

তারপর
আরো দুইদিন আকাশকে হসপিটালে রেখে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়,হিয়া এখন সর্বদা আকাশকে দেখভাল করে,আকাশ বলতেই সে পাগল,একদিন রাতের বেলায় আকাশের পাশে হিয়া শুয়ে আছে,

আকাশ,এই একটা কথা বলি..?
হিয়া,হা বলো..?
আকাশ,এই আমার না একটা খুব ইচ্ছে করতেছে তোমাকে আদর করে একটা তোতাপাখির আম্মু বানাই দিতে..😉

হিয়া,এই না না এখন একদম এই সব না,আগে পুরোপুরি সুস্থ হও তারপর তোতাপাখির আম্মু বানিয়ে দিও🙈

আকাশ,সত্যি তো..?

হিয়া,হু🙈

আকাশ,আচ্ছা সেটা না হয় সুস্থ হলে দেখা যাবে কিন্তু এখন তো জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দাও..?

হিয়া,আচ্ছা ধরো🙈

আকাশ,হিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়,এভাবেই শেষ হয় আরেকটি ভালোবাসার গল্প…!

সমাপ্তি….!

গল্পের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন..!
আর গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা সাথে ছিলেন সকলকে ধন্যবাদ,

এ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন খোদা হাফেজ!
দেখা হবে আবার কোন নতুন গল্প নিয়ে…..!😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here