#শেষ বিকেলের তুমি❤
#পর্ব______১❤
#নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
❤
❤
❤
প্রচন্ড শীতের এই বিকেলবেলায় হঠাৎ এভাবে বৃষ্টি শুরু হবে ভাবে নি শুভ্র।।অফিসে যাওয়ার তাড়ার মুখে আধ ঘন্টা যাবৎ জ্যামে আটকে আছে সে…ব্যাপারটা যথেষ্ট বিরক্তিকর,,আর তাতে শুভ্রও যথেষ্টই বিরক্ত।স্টিয়ারিং এ হাত রেখে চোখ-মুখ কুঁচকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে ।হঠাৎই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ঠেলেঠুলে গাড়িতে ওঠে তার পাশের সিটে বসে পড়লো।।ঘটনার আকস্মিকতায় শুভ্র স্তব্ধ,, এই মুহুর্তে তার রিয়েকশন কেমন হওয়া উচিত সে নিজেও বুঝতে পারছে না। মেয়েটির মধ্যে জড়তার ছিটেফোঁটাও নেই যা শুভ্রকে অবাকের চরম সীমায় যেতে বাধ্য করলো।অপরিচিত একটা মানুষের গাড়িতে ওঠেও কোনো মেয়ে যে এভাবে ভাবলেশহীনভাবে চুল ঝাড়তে পারে শুভ্রর জানা ছিলো না।।মেয়েটা তার চুলের পানি ঝারছে যার পানি এসে পড়ছে শুভ্রর মুখে,,শুভ্রর এবার প্রচন্ড রাগ লাগছে,,একেতো বিনা অনুমতিতে গাড়িতে ওঠে বসেছে তারউপর পানি ছিটাছিটি করছে অসভ্য মেয়ে।।শুভ্র সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে,,এই মেয়েটাকে সে এবার ইচ্ছে মতো বকে দিবে কিন্তু সে কিছু বলে উঠার আগেই মেয়েটি বলতে শুরু করলো,,,
।
পাগল হয়ে গেছো তুমি??একটাবার আমার কথা মনে হলো না??ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে এলে,,দেখছো বৃষ্টিতে ভিজে কি অবস্থা হয়েছে আমার।।(রাগী গলায়)
।
এক্সকিউজ মি?(অবাক হয়ে)
।
হোয়াট এক্সকিউজ মি??আজ আমি মামনিকে গিয়ে সব বলবো,,তুমি যে আমায় একটুও ভালোবাসো না তা বেশ বুঝতে পারছি।।বিয়ের আগে কতো কেয়ার আর এখন??কেয়ার এর “কে” টা পর্যন্ত তোমার মধ্যে নেই।।
।
শুভ্রর মাথা টোটালি হ্যাং,,কি বলছে এই মেয়ে??এমনভাবে কথা বলছে যেনো মেয়েটা তার কতো পরিচিত।।শুভ্রর মনে এই মুহূর্তে একটা কথায় আসছে আর তা হলো,, “মেয়েটা বদ্দপাগল”
।
ওহ হ্যালো মিস??আপনি কি আমাকে চিনেন??আর এভাবে আমার গাড়িতে উঠে এলেন কেন??ন্যূনতম মেনার্স নেই আপনার মধ্যে?? আর কিসের ভালোবাসা?কিসের বিয়ে?আপনি কি পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন নাকি??(ভ্রু কুচঁকে রাগী গলায়)
।
তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন শুভ্র??প্রথমত দোষটা তোমার আর এখন আমাকেই কথা শুনাচ্ছো??আবার না চেনার ভাব মারছো সমস্যাটা কি তোমার আমি বুঝতে পারছি না,,,বলবা প্লিজ??(রাগী গলায়)
।
শুভ্র যেনে এবার আকাশ থেকে পড়লো।।এটা কি করে সম্ভব??শুভ্রর যতটুকু মনে আছে সে মোটেও মেয়েটাকে তার নাম বলে নি,,তাহলে মেয়েটা তার নাম জানলো কি করে??কি হচ্ছে এসব??
।
আপনি নামবেন প্লিজ??প্লিজ নামুন আমার গাড়ি থেকে,,যত্তোসব আজাইড়া ঝামেলা
।
তোমার কাছে এখন আমি ঝামেলা হয়ে গেলাম??টানা তিনবছর আমার পিছে যখন ঘুরছো তখন মনে ছিলো না যে আমি আজাইরা ঝামেলা??তখন তো মধু লাগতো,,মধু খাওয়া শেষ তো এখন আমি তিতা করলা,, তাই তো??(নাক ফুলিয়ে)
।
শুভ্রর এবার ধর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম,,কোথাকার কোন মেয়ে এসে তাকে যাতা বলছে আর সে বসে বসে শুনছে,, বাহ অসাধারণ। কিন্তু এখন আর বসে থাকা যায় না,,,এই মেয়ের বকবক শুনে মাথা নষ্ট করার মতো সময় শুভ্রর নেই।।তাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়েটিকে টেনে বের করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিলো,,মেয়েটি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে যেনো সে এতোটুকু আশা করে নি,,না করলে নাই তাতে শুভ্রর কি??ও কি কারো আশা পূরণের ঠিকাদারি রেখেছে নাকি?? অবশ্যই না,,তাহলে এই মেয়ের জন্য সমবেদনা দেখানোর প্রশ্নই উঠে না।।এসব ভাবতে ভাবতেই শুভ্র গাড়ি চালাতে মন দিলো,,
।
সারাটা সন্ধ্যা অসম্ভব ব্যস্ততায় কেটেছে শুভ্রর,,এতো ব্যস্ততার মাঝেও মনের ক্যানভাসে অপরিচিতা মেয়েটির মুখটি ভেসে ওঠছিলো বারবার,,,বিস্ময়মাখা টলমলে চোখ,,ঠান্ডায় কেপে ওঠা তার পাতলা ঠোঁট,, বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে যাওয়া তার লম্বা চুল, যেন খুব করে টানছে শুভ্রকে।।কিন্তু আবরার শুভ্রর এসব ডাকে সারা দেওয়ার সময় থাকলে তো??সে তো কাজের দুনিয়ায় অন্ধ পথিক।।মেয়েটির চিন্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে একবুক ক্লান্তি নিয়ে শুভ্র রাত ১১ টায় বাড়ি ফিরলো…বাড়িতে নিজের রুমে এসেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো শুভ্র।।গাড়ির সেই মেয়েটা তার রুমেও,,,ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুলে চিরুনির আচড় কাটছে,,পরনে লাল শাড়ি,,হাতে লাল চুরি,,মুখে একটু বউ বউ ভাব।।কিন্তু কথা হলো মেয়েটি এখানে কি করছে??তাও আবার এমন সাঁজে?হচ্ছেটা কি?যে শুভ্রর রুমে কেউ পা রাখার সাহস পায় না সেখানে একটা পুচকি মেয়ে গিন্নি সেজে বসে আছে,,,এসব কি মানা যায়??
।
#চলবে