#ঘূর্ণ্যমান_তিক্ততা
২য় পর্ব
ওহীর জামাকাপড় পালটে দেয় মোহর। ক্ষতগুলো ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ বেধে দেয়। এরপর ডাক্তার আসে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ওহীর শরীরে খিচুনি উঠে। তাই তাকে রক্ত দেওয়া হয়। তূর্য একটাবার এর জন্য ও ওহীর রুমে আসেনি। মোহর ই দেখাশোনা করছে ওহীর। ডক্টর মেডিসিন লিখে দিয়ে চলে যায়।
তূর্য নিজের রুমের ব্যাল্কুনি তে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টেনেই যাচ্ছে। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছন ফিরে তাকাই সে। দেখে মোহর। আবারো সিগারেট টানায় মনযোগ দেয় সে।
>>অতিরিক্ত করে ফেলেছো কিন্তু। ওর অবস্থা খুব একটা ভালো না।
মোহরের কথা শুনে তূর্য সিগারেট টি নিভিয়ে ফেলে। মোহরের খুব অস্বস্তি লাগছে। তূর্যের শরীর থেকে সিগারেট এর গন্ধ আসছে। তূর্য মোহরের উদ্দেশ্যে বললো,
>>খুব মায়া হচ্ছে তার প্রতি তাই না?
>>হবারই কথা। অমানুষের মত আচরণ করেছো তার সাথে। একটা মেয়ের শরীরে এতটা আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা নেই।
>>সব আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কি ছেলেদেরই থাকে?
মোহর আর কিছু বলতে চেয়েও বললো না। চলে আসতে আসতে মোহর তূর্য কে বললো,
>>আমার মন বলছে তুমি ভূল কাউকে শাস্তি দিচ্ছো।
>>মনের কথা শুনতে নেই। মন সবসময় বোকা বোকা কথায় বলে।
মোহর চলে গেলো। সে জানে তূর্যকে আর কিছুই বলে লাভ নেই। মোহর নিজেও ভালোবাসার জালে আবদ্ধ। সে কিছু করতে চেয়েও করতে পারবেনা। কারণ তার আগে পিছে একমাত্র তূর্যই আছে। সে দেখতে যাই ওহীকে। ওহীর এখনো জ্ঞান ফেরেনি। “আচ্ছা ফেরার পর ওহীর কতটা যন্তণা হবে?” ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে মোহরের। ব্লাড ব্যাগ শেষ হয়ে যাওয়ায় মোহর সেটি খুলে রাখে। তারপর ডক্টর কে কল দেয়। ডক্টর এর সাথে কথা বলে ফোন টা রেখে কেটে নিজের রুমে চলে যায় মোহর। সার্ভেন্ট কে বলে দেয় ওহীর উপর নজর রাখার জন্য আর সে উঠলেই যেন তাকে জানাই।
অগ্নি এই মুহূর্তে ওহীর বাবা হায়দার আনাস এর সামনে বসে আছে মাথা নিচু করে। হায়দার আনাস একজন রিটায়ার্ড পুলিশ অফিসার। তিনি একের পর এক কল করেই যাচ্ছেন। বিভিন্ন কন্ট্যাক্ট এর সাথে যোগাযোগ করছেন। উদ্দেশ্য একটাই ওহীকে খুঁজে বের করা। অগ্নির চোখের সামনে শুধু ওহীর চেহারা টাই ভাসছে। আর তার বলা কথা গুলো। ফোন রেখে দিয়ে হায়দার আনা চেয়ারে বসে পড়লেন। অগ্নি যেই না তার উদ্দেশ্যে বললো,
>>বাবা..
তিনি অগ্নির কলার চেপে ধরে উঠে দাঁড়ালেন। প্রচন্ড রাগান্বিত স্বরে বললেন,
>>একদম বাবা ডাকবেনা আমায়। কি কথা দিয়েছিলে আমাকে? মনে আছে তোমার? আমার মেয়েকে তুমি আগলে রাখবে বলেছিলে না? তোমাদের পাপের শাস্তি আমার মাসুম মেয়েটা কেন পাচ্ছে?
অগ্নির মুখ দিয়ে কোনো কথা বেড় হচ্ছেনা। সে মাথা নিচু করে আছে। আনাস সাহেব তার কলার ছেড়ে দিলেন। হঠাৎ ঢুকরে কেঁদে উঠে বললেন,
>>আমার মেয়েটাকে খুঁজে আনো বাবা। আমি আর কিছু চাই না।
অগ্নি আনাস সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো পানির ফোঁটা তার চোখ দিয়েও গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তা নিঃশব্দে।
ওহীর সেন্স ফিরলে সে দেখতে পাই সে একটি বিশাল বড় বেডরুমে। একটু করে মাথা তোলার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। তূর্যের দেওয়া সেই আঘাত গুলোর কথা মনে পড়ে যায় হুট করে। চোখ দিয়ে জ্বল গড়িয়ে পড়তে থাকে তার। মোহর তখন একটি পেপার হাতে নিয়ে বসে ছিলো। পেপার টা অনেক পুরোনো দিনের। তারিখ ২৪নভেম্বর ২০১৬। তখনি সার্ভেন্ট এসে তাকে বলে,
>>ম্যাম উনার জ্ঞান ফিরেছে।
মোহর কথা টি শুনে পেপার টি আলমারি তে রাখতে রাখতে বলে।
>>হুম যাও উনার খেয়াল রাখো আমি আসছি।
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan