ঘূর্ণ্যমান_তিক্ততা ১

0
709

একটি চেয়ারের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা অবস্থায় বসে আছে ওহী। কপাল বেয়ে টুপ টুপ রক্ত পড়ছে। পুরো রুমটাই নিস্তব্ধতা। মেঝেতে রক্ত পড়ার সেই আওয়াজ টা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। সামনের দিকে ঝুকে মাথা নেতিয়ে রেখেছে সে। খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হঠাৎ দমকা বাতাসে চুল গুলো উড়ে তার চেহেরা দেখা যাচ্ছে। সারা মুখে রক্ত মাখামাখি। হাত পায়ে শরীরে রক্তে লাল হয়ে আছে। পড়নের হাল্কা গোলাপি জামাটাও। চেয়ারের চারপাশ রক্তে ভরা।
ঠিক তার সামনে চেয়ারে তূর্য বসে আছে। পাশের একটি টেবিলে পা তুলে রেখে।একহাতে বেল্ট আর আরেক হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছে সিগারেটে সে আর ধোঁয়া ছাড়ছে।
সিগারেট টি শেষ করে দাঁড়িয়ে পড়লো তূর্য। পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটি হাতে নিলো। গ্লাসটিতে থাকা পানি গুলো সজোরে ওহীর মুখে ছুড়ে মারলো সে।
কিন্তু ওহীর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। বেঁচে আছে কিনা চেক করার জন্য নাকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস চেক করলো সে। হালকা হালকা থেমে থেমে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে তার। ওহীর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিলো সে।ওহী এখনো অজ্ঞান। বার বার নেতিয়ে পড়ছে। পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো তাকে তূর্য। নিয়ে এলো একটি বেড রুমে। ওহীকে বেডে শুইয়ে দিলো। তারপর কাকে যেন কল দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি আসতে। ফোন পকেটে রাখতেই তুর্যের আয়নার দিকে চোখ গেলো। তার সাদা রঙের শার্টটি রক্তে লাল হয়ে আছে। তূর্য নিজের বেডরুমে চলে এলো। শার্টটি খুলে মাটিতে ফেলে আগুন ধরিয়ে দিলো যে।

মোহর নিজের রুমে ব্যাল্কুনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ নাকে পোড়া গন্ধ আসতেই রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো সে। তূর্যের রুম হতে ধোঁয়া বেরুচ্ছে দেখে হন্তদন্ত হয়ে তূর্যের রুমের দিকে দৌড় দিলো সে। গিয়ে দেখে তূর্য খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে তুর্যের শার্ট জ্বলছে তূর্য এক দৃষ্টে সেটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাগ আর ঘৃণা ভরা দৃষ্টি।
মোহর চলে যেতে নিলেই তূর্য বলে উঠলো,

>> আজ খুব শান্তি লাগছে। প্রথম ধাপ দিয়ে ফেলেছি। আজ থেকে শুরু।

মোহর কথা টি শুনে পেছনে ফিরে তাকালো। তূর্য এখনো আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে। মোহর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসলো। ওহী কে যে রুমে আছে সেই রুমে গেলো। ওহীর এলোমেলো চুলের রক্তাক্ত মুখটা দেখে কেন জানি তার মায়া হচ্ছে। ওহীর মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো সে। মেয়েটা সত্যিই খুব অমায়িক। ওহীর জন্য একরাশ আফসোস হচ্ছে তার। কিন্তু কিছুই নেই তার হাতে।

এদিকে সারা শহর চষে বেড়াচ্ছে অগ্নি। কিন্তু ওহীকে পাচ্ছে না কোথাও। ওহীর কথা মনে পড়তেই দু’চোখ বেয়ে দু’ফোটা জ্বল গড়িয়ে পড়লো তার। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। গাড়ি থামালো একটি মাঠের সামনে এসে। গাড়ি থেকে নেমে একটি বেঞ্চে এসে বসে পড়ে সে।
তার ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে করে কাঁদতে। নিজেই নিজেকে বলছে “সরি ওহী আমি তোমাকে প্রোটেক্ট ও করতে পারলাম না। আমার তোমাকে একা যেতে দেওয়াই ঠিক হয়নি। প্লিজ ওহী কোথায় তুমি”।

চলবে…

#ঘূর্ণ্যমান_তিক্ততা

#Razia_Binte_SuLtan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here