#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-২
তিয়াশা ২মিনিট বাকি থাকতেই লাইব্রেরী ঢুকে গেলো। ১৫মিনিট যাওয়ার পরও আরাফের দেখা নেই।তিয়াশা ভাবলো চলে যাবে,কিন্তু কিছু একটা ভেবে বসে রইলো।আর তখনই আরাফ এলোমেলো চুল,ফোলা চোখে শার্টের হাতা গোছাতে গোছাতে তাড়াহুড়ো করে লাইব্রেরি রুমে ঢুকলো।আর বসতে বসতে তিয়াশাকে কয়েকবার সরি বলে ফেললো।
তিয়াশা উঠে দাড়ালো তারপর বলল,যারা সময়ের মূল্য দিতে যানে না তাদের জন্য আমি আমার মূল্যবান এক মিনিট সময় ও ব্যয় করতে চাইনা।তারপর হাটা ধরলো। আরাফ তিয়াশার পিছু পিছু গিয়ে অনেক বার সরি বললো,আর এ রকম হবে না, নানান কিছু বলে মানানোর চেস্টা করছে।
-তিয়াশা বললো ওকে,সেকেন্ড চান্স সবাই ডিজার্ভ করে,দিলাম সেকেন্ড চান্স এন্ড লাস্ট অলসো।
-ওকে ডান।
ওরা যে যার মতো চলে গেলো।
পরের দিন তিয়াশা লাইব্রেরী রুমে এসে দেখে আরাফ টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বাচ্চাদের মতো লাগছে এলোমেলো চুলগুলো চোক নাক ঢেকে রেখেছে।
-আরাফ,আরা-আরাফ,আরাফ।
২বার ডাক দিতেই আরাফ মাথা তুলে তাকালো তিয়াশাকে দেখতে পেয়ে ঠিকঠাক ভাবে বসলো, এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে হালকা হাসি দিয়ে বুলল,শুভ সকাল।
-রাতে ঘুমাও নি?
-আসলে রাতে বাসায় যাইনি।
-মানে?
-মানে বন্ধুদের সাথে পার্টি ছিলো।২টা বেজে গিয়েছিলো,বাসায় গিয়ে ঘুমালে আর টাইম মতো এখানে আসতে পারবো না তাই আর বাসায় না গিয়ে রাতে লাইব্রেরীতে ঢুকে বসে ছিলাম,কখন ঘুমিয়েছি বুঝতে পারিনি।অবশ্য লাইব্রেরীতে ঢুকার জন্য অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
-আস্ত একটা পাগল। সারারাত বাসায় ফিরেননি কিছু বলবে না?
-বলার মতো কেউ থাকলে তো বলবে, বাবা বাহিরে আছেন, আমি কোথায় থাকি,কি করি তা নিয়ে তাকে কখনো মাথা ব্যথা হতে দেখিনি আর দাদি আছে ভাবার মতো কিন্তু সে ফুপুর বাসায়।এ ছাড়া আমার আর কেউ নেই।
-ওওহ।আচ্ছা চলুন পড়া শুরু করা যাক।
-হ্যা,,
যদিও আরাফের পড়তে একদম ই ইচ্ছে করছে না।ও তো শুধু তিয়াশার কাছাকাছি থাকতে চায়। কিন্তু তার কিছুই করার নেই ।
তিয়াশা প্রথম চাপ্টার খুলে বসলো,,পড়াও শুরু করে দিয়েছে কিন্তু আরাফের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।তিয়াশা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে একটু হেসে বললো কোন ব্যাপার না,আজকে প্রথম দিন তাই এমন লাগছে।কয়েকদিন পড়লে সব বুঝতে পারবেন।
এইভাবেই ৪-৫ দিন চলে গেলো। ৪-৫ দিনে আরাফ একদিন ও লেট করে নি তবে তিয়াশা ওকে বেশির ভাগ দিন ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছে।ওদের মধ্যে সম্পর্ক টা সহজ হয়ে গেছে।প্রতিদিন পড়া শেষ করে এক সাথে ক্যান্টিনে যায়,নাস্তা করে,ক্লাসে যায়।আরাফের ওর বন্ধুদের সাথে দুরত্ব বেড়ে চলছে কেননা সারাদিন ও তিয়াশার সাথে সাথেই থাকে।ওদের মধ্যে ভালো একটা বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
৮৳০৯ বাজে আরাফ লাইব্রেরীতে বসে আছে কিন্তু তিয়াশার দেখা নেই।মেয়েটা কখনো ১মিনিট লেট করে না।আরাফ ভাবলো হয়তো কোন কারনে দেরি হচ্ছে চলে আসবে,,বসে থাকতে থাকতে ৮৳২৭ বাজতে চলছে আরাফের এখন টেনশন হচ্ছে।তিয়াশার কিছু হলো না তো।ফোন নাম্বার ও নেই যে ফোন করে খোজ নিবে। নাহ এই ভাবে আর বসে থাকা যায়না।অন্যভাবে খোঁজ নিতে হবে হবে। উঠে দাড়াতেই তিয়াশা হাপাতে হাপাতে এসে দাড়ালো।
-আই এম সরি আরাফ।মাঝ রাস্তায় এসে গাড়ির চাকা পাঞ্চার হয়ে গেছে।অন্য গাড়ি পেতে অনেক সময় লেগেছে তাই দেরি হয়ে গেলো। তোমার নাম্বারও ছিলো না যে ফোন করে জানাবো।এতক্ষণ বসে ছিলে,বসিয়ে রাখার জন্য সরি।
-সবার আগে নাম্বার দেও,তারপর কথা বলো। তুমি জানো কত টেনশন হচ্ছিল?আমি ভাবিলাম পথে কিছু আবার হলো নাকি। টেনশনে আমার হাত পা জমে যাচ্ছিল। যে মেয়ে ১মিনিট লেট করে না সে ২৭মিনিট লেট চিন্তা তো হবেই।
তিয়াশা কথা না বাড়িয়ে নাম্বার দিয়ে দিলো।
এরপর ফোনে কথা বলা,যেসব চ্যাটিং শুরু হয়ে গেলো।ছুটির দিনে তিয়াশার বাসায় যাওয়া আসাও হয় আরাফের। তিয়াশার আম্মুর সাথে বেশ ভাবও হয়েছে।মা মরা ছেলের প্রতি তিনি কেমন একটা টান অনুভব করেন।আসলেই খাতির যত্ন করেন, এটা সেটা রান্না করে খাওয়ান।দুজনে মিলে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন,আড্ডা দেন।
একদিন তিয়াশা নিচে নামতে নামতে কোনো ছেলের কন্ঠ শুনে ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখে যে আরাফ সোফায় আরাম করে বসে মামনির সাথে বসে গল্প করছে।আশ্চর্যের সপ্তকাশে উঠে গেছে।
-তুমি?এখানে?কখন এলে?কিভাবে এলে?
তিয়াশার মা বললো, আরে থাম থাম।এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে উত্তর দিবে কিভাবে?
তোরা কথা বল আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।
আরাফ কফিতে আরেক চুমুক দিয়ে বললো, তোমাদের বাড়িটা বেশ সুন্দর।
-ঠিকানা পেলে কোথায়?
-সে পেয়েছি। তোমার মা চমৎকার মানুষ। তোমার মতো কাঠ বিস্কুট নয়।
-সাট আপ।কেনো এসেছ সেটা বলো?
-প্রেম করতে,,করবে?
-কিহ?
-পরতে এসেছি টেস্ট পরিক্ষার বেশী দেরি নেই তাই ছুটির দিন ও বসে থাকতে চাইনা।
-তুমি কি ছুটির দিন ও আমাকে একটু শান্তি দিবে না?
-নাহ।
এরপর থেকে ছুটির দিনও আরাফকে তিয়াশার পড়ার ঘরে কিংবা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করতে দেখা যায়।তবে সব কিছুই তিয়াশার বাবার আড়ালে, অজান্তে।
তিয়াশা আর আরাফের বন্ধুত্ব এখন শুধু কলেজেই আবদ্ধ নয়,তিয়াশার বাসা,বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট,বিভ
িন্ন স্থান, মোবাইল, ফেসবুক। একে অপরের সাথে অনেকাংশে জড়িয়ে পরেছে।
আজ কলেজে কোন বিশেষ কারণে ক্লাস অফ যাচ্ছে।এরি মধ্যে আরাফ তিয়াশাকে বললো ক্লাস নেই চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।কিন্তু তিয়াশা রাজি হলো না কেননা পরের ক্লাসে লেইট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আরাফ নাসরবান্দা সে যাবেই তিয়াশাকে নিয়ে।
-তিয়াশা প্লিজ চলো সামনে কোথাও যাই ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই চলে আসবো।
-ওকে চলো।
-সামনেই একটা কফিশপ আছে ছোট কিন্তু ছিমছাম, পরিবেশটা সুন্দর। তোমার পছন্দ হবে।
-ঠিক আছে চলো।
ওরা রেড রোজ নামে একটা কফি শপে গেলো।কফি শপে গিয়েই আরাফ ২কাপ কফি অর্ডার দিলো।কিছুক্ষণ পর ওয়েটার তিয়াশা ও আরাফকে কফি দিয়ে তিয়াশাকে জিজ্ঞেস করলো
-আপু আপনাকে আপনার ভেনিলা আইসক্রিম দিবো।
-আমাকেও দেও আর আমার এই নিউ ফ্রেন্ডকেও দেও।
– ওকে
আরাফের কিছুটা খটকা লাগলো তাই তিয়াশাকে প্রশ্ন করেই ফেললো।
-তিয়াশা তোমার আর ওর কথার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ও তোমাকে ভালো ভাবেই চিনে।আর তুমি এখানে এর আগেও অনেক বার এসেছো।
-হ্যা।
-কার সাথে? বয়ফ্রেন্ড?
তিয়াশা আরাফের কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।আরাফ বুজতে পারছে না সে এতো হাসার মতো কি বলেছে।তিয়াশার ‘না’ উত্তর শুনার জন্য ওর মন অস্থির হয়ে উঠেছে। বুক ধরপর করছে, প্রাণ আসছে আর যাচ্ছে আর মেয়েটা হেসেই চলেছে।
-না,এইটা আমার বাবার কফিশপ তাই আমাকে চিনে,আমিও চিনি।
আরাফের প্রান ফিরে এসেছে।
-ও আচ্ছা এই ঘটনা। তাহলে আজ তুমি আমায় ট্রিট দিবা।
-সে আর বলতে।
এরিমধ্যে ছেলেটা আইসক্রিম নিয়ে এসেছে
-আমাকে চিনে রেখো।আমি তোমার আপুর ফ্রেন্ড। যখনি আসবো ফ্রি-তে খাওয়াবা।বন্ধুদে
র নিয়ে আসলেও ফ্রি-তে দিবা সব বুঝেছ।
-হুম ওকে ভালো করে চিনে রেখো। যখনি আসবে ডাবল বিল রাখবা কেননা এ প্রচুর বড়লোক।
আরাফ আর তিয়াশা এই কয়দিনে একে অপরকে খুব ভালো ভাবেই চিনে ফেলেছে। কার কি পছন্দ, অপছন্দ কিসে রাগ হয়,রাগ হলে কি করে,কি করতে,কি খেতে ভালোবাসে মুটামুটি সব কিছুই জেনে গিয়েছে।
চলবে…..