অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-১৫(শেষ পর্ব)

0
664

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-১৫(শেষ পর্ব)
ফাবিহা নওশীন

তিয়াশা কালো লেহেঙ্গা পরে হাটছে।দুহাত দিয়ে ধরে ধরে হাটছে।যদিও আরাফের বাসার ফ্লোর যথেষ্ট পরিস্কার তবুও কেন জানি ওর ছেড়ে হাটতে ইচ্ছে করছে না।তিয়াশা আসবেনা আসবেনা বলেও চলে এসেছে।শেলি ওকে অনেক কষ্ট করে রাজি করিয়েছে।বলেছে তুই কেন যাবিনা,আরাফ কি করতে চাইছে সেটা দেখা উচিৎ।আর ও যদি তোর যাওয়ার খুশী সেলিব্রেট করতে পারে,,তবে তুই কেন পারবিনা খুশি থাকতে।তোকে দেখাতে হবে তুইও ওকে ছাড়া ভালো আছিস।আর ভালোই থাকবি।শেলির কথায় এসেছে।তবে এখন ওর মনে হচ্ছে আসাটাই উচিৎ হয়নি।
আরাফ তিয়াশাকে খোজছে।এখনো আসছেনা কেন এইসব ভাবতেই শেলিকে দেখল।শেলি এগিয়ে এসে বলল,তিয়াশা এসে পরেছে।

তিয়াশা শেলিকে খুজছে।মেয়েটা ওকে একা রেখে কোথায় গেলো।তিয়াশার বিরক্ত লাগছে।মনে হচ্ছে আজ ওর বিয়ে।সেজেগুজে বিয়ে করতে এসেছে।শেলিটাও না জোর করে গর্জিয়াছ মেকাপ করিয়ে দিলো সাথে এই লেহেঙ্গা।উফফ,,,

-কি হলো মিস,,,এতো বিরক্তি ফিল করছ কেন?

তিয়াশা পিছে ঘুরেই আরাফকে দেখতে পেল।আরাফ তিয়াশার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে রইলো।
তারপর বললো,, তুমি কি ফেয়ার ওয়েল পার্টিতে এসেছো না বিয়ের রিসিপশনে??

তিয়াশা লজ্জা পেয়ে গেল,,,আর মনে মনে শেলির ১৪গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলো।ওর জন্য এভাবে সেজে আসতে হয়েছে।তিয়াশা হাটা ধরলো আর শেলিকে খুজতে লাগলো।আজ ওর ১২টা বাজাবে।
আরাফ পিছন থেকে তিয়াশা বলে ডাকতেই তিয়াশা ঘুরে তাকালো,,
-তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।
বলেই আরাফ হাসতে হাসতে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।তিয়াশা ওইভাবেই দাড়িয়ে রইলো।ওর প্রসংশা আরাফ করছে ভাবতেই পারছেনা।

তিয়াশা আর শেলি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোল্ড পান করছে।আর চারদিকটা চোখ বুলাচ্ছে।খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সবকিছু।অনেক অচেনা মানুষকে দেখতে পাচ্ছে।একজন আরেকজনকে ভ্যালেন্টাইন্স ডের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।তিয়াশা চমকে উঠলো।তারপর শেলিকে বললো, এই আজকে না ভ্যালেন্টাইন্স ডে?আমি তো ভুলেই গেছি।
-তুই ভ্যালেন্টাইন্স ডে পার্টিতে এসে ভ্যালেন্টাইন্স ডে ই ভুলে গেছিস?অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য এতো উতলা হয়ে গেছিস যে ভ্যালেন্টাইন্স পার্টিতে এসে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর কথা মনে পরছে?

-মানে এটা ভ্যালেন্টাইন্স পার্টি?
-তা নয়তো কি?
– কিন্তু,,,,,তিয়াশা কথাটা শেষ করতে পারলো না।এরি মধ্যে আরাফের কথা শুনতে পেল।

-ডিয়ার,,লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যানস, প্লিজ এটেনশন।ভ্যালেন্টাইন্স পার্টিতে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।আজকে আমি আমার ভ্যালেন্টাইন্সকে পেতে যাচ্ছি।তার উপলক্ষেই এই আয়োজন।
তিয়াশা হা হয়ে আছে।তারমানে আরাফ ওর ফেয়ার ওয়েল পার্টি না ভ্যালেন্টাইন্স পার্টি দিয়েছে।আর আজকে ওর,,,,কি বলছে আরাফ।তারমানে ও আমাকে এখানে ওর জিএফ দেখানোর জন্য এনেছে।

আরাফ একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে তিয়াশার দিকে আসছে।কিন্তু তিয়াশার সেদিকে খেয়াল নেই।ও একমনে ভেবে চলেছে ওর সাথেই কেন এমন হয়।এখন যাবার বেলায় আরাফের জিএফকে দেখে যেতে হবে।

-তিয়াশা,,,
আরাফের কথায় তিয়াশা ভাবনা জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো।আরাফ ওর সামনে ফুল নিয়ে হাটু গেরে বসে আছে।চোখগুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আরাফ ওকে,,,

-মিস তিয়াশা ওইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন??

তিয়াশা হা করে দাড়িয়ে আছে।

শেলি এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,ওই চুপ করে আছিস কেন?ওকে আর কতক্ষণ এভাবে হাটু গেরে বসিয়ে রাখবি?
তিয়াশাও শেলিকে ফিসফিস করে বললো, ও আমায় প্রপোজ করছে কেন?ওর তো আমাকে প্রপোজ করার কথা না?
-ওই,,পাগল হয়েছিস?তুই তো এটাই চেয়েছিলি।তাহলে?
-কিন্তু,,
শেলি এবার খেপে গেলো আর জোরে বললো, এইবার যদি তুই আরাফকে হ্যাঁ না বলিস তাহলে তোকে আমি গুম করে দেব।কারণ আমি তোর এই ফেসফেস কান্না আর সহ্য করবোনা,আর আরাফ আরাফ বলে আমাকে আর পাগল বানাতে দিবো না।তোর ওই মুখে আরাফকে নিয়ে দেবদাসিপনা কথা শুনতে শুনতে আমার কানের পোকারা সুসাইট করেছে।আর নাহ,,
তিয়াশা চোখ বড় বড় করে শেলির দিকে তাকিয়ে আছে।
-সরি তিয়াশা আমি A-Z সব আরাফকে বলে দিয়েছি।ও সব টা জানে।
তিয়াশা লজ্জা পেয়ে আরাফের দিকে তাকাচ্ছে।
-তিয়াশা আমার পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।তুমি যদি এইবারও আমায় রিজেক্ট করো তবে আমি আবার তোমাকে প্রপোজ করবো।তুমি যদি একসেপ্ট না করো ইটস ওকে।।বলেই আরাফ উঠে দাড়ালো।পিছনে ঘুরতে যাবে তখনই তিয়াশা আর কিছু না ভেবে ওর হাত ধরে ফেললো।আরাফ ঘুরে খুশিতে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরলো।তিয়াশাও দুহাতে আরাফকে জড়িয়ে নিলো।

-দোস্ত আমরা এখানে আছি ভুলে গেছিস,,সাজ্জাদ বললো।
-তোরা চোখ বন্ধ করে রাখ।
তিয়াশা লজ্জা পেয়ে আরাফকে ছেড়ে দিলো তারপর ওইখান থেকে চলে গেলো।
তিয়াশা আরাফের রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ পিছনে থেকে এসে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর বললো,তুমি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছ,,
-আর তুমি??
-আমিও।তবে প্রমিজ আর কখনো কস্ট দিবনা।
তিয়াশা নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরে দাড়ালো তারপর বললো, কিন্তু বাবা??
-ও ভালো কথা মনে করেছো চলো।
তিয়াশার হাত ধরে ওর বাবার রুমে গেলো।দরজা নক করতেই ভিতর থেকে যাওয়ার জন্য আওয়াজ দিলো।
আরাফ আর তিয়াশা হাত ধরে আরাফের বাবার সামনে দাড়ালো,
-বাবা,এই যে তিয়াশা।
বাবা কথাটা শুনে তিয়াশার বুঝতে পারলো ইনি আরাফের বাবা।তাই তিয়াশা আরাফের থেকে হাত ছাড়িয়ে মাথায় ঘুমটা টেনে সালাম দিল।আরাফের বাবা তিয়াশাকে বসতে বললো।
-তোমার কথা আমি শুনেছি।আর আরাফের কাছ থেকে সব কিছু জেনেছি।আমি কলেজ কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলেছি তোমরা ক্ষমা চেয়ে একটা এপ্লিকেশন সাবমিট করলেই সব ওকে হয়ে যাবে।
-আমি ওই কলেজেই পড়তে চাই, কিন্তু বাবা,,,
-আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলব,,তুমি চিন্তা করোনা।তুমি শুধু আমার এই বাদর ছেলেটার খেয়াল রেখো।
তিয়াশা লজ্জা পেয়ে বলল,জ্বি আংকেল।

আরাফ তিয়াশার যাওয়ার সময় তিয়াশার গালে আলতো করে ছুয়ে বলল,তুমি ভেবোনা বাবা সব ঠিক করে দিবে।আর যদি না হয় আমিও তোমার সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
-আমিও।

পরেরদিন তিয়াশাদের বাড়িতে আরাফের বাবা গেলো।তিয়াশা মাকে আগেই বলে রেখেছিল।তাই তিনি আগে থেকেই আপ্যায়ন করার সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
তিয়াশার বাবা আর আরাফের বাবা মুখোমুখি সোফায় বসে আছে।
আরাফের বাবা বললেন, আমাকে দেখে আপনি যেমন অবাক হয়েছেন তেমনি অসন্তুষ্ট ও হয়েছেন।
-না কি বলছেন,, আমি আরাফকে অপছন্দ করি তার মানে এই নয় যে আমি ওর বাবাকে অপছন্দ করব।সন্তান যদি ভুল করে সে ভুলের দায় বাবার উপর কেন পড়বে,,
-পড়বে,,কারণ আমি ওকে মানুষ করতে পারি নি।ওর মা থাকতে ও সোনার টুকরো ছেলে ছিলো, পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো ওর মায়ের মৃত্যুর পর আমি অনেক ভেঙে পরি,,ওর দিকে নজর দিতে পারিনি।মা বুড়ো মানুষ যতটা পেরেছে,,,তাই ছেলেটা এমন হয়ে গেছে কিন্তু আপনার মেয়ে ওকে আবার গুছিয়ে দিয়েছে।বিশ্বাস করুন ও অনেক বদলে গেছে।আর এতোদিন যা ঘটেছে সব ভুল বুঝাবুঝি ছিলো।
-হ্যা তিয়াশার মা আমায় সব বলেছে।
-ওরা দুজন দুজনকে অনেক পছন্দ করে।প্লিজ আপনি ওদের মেনে নিন।
তিয়াশার বাবা তিয়াশার দিকে তাকালো তারপর ডেকে জিজ্ঞেস করলো তুই কি চাস।
তিয়াশা বললো, বাবা তুমি যা বলবে।
-ঠিক আছে।আমি ওদের দুজনকে মেনে নিলাম।তবে পড়াশোনাটা দুজনকেই ভালোভাবে করতে হবে।আমার নেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের দিকে কেউ যেন আংগুল তুলতে না পারে।
সবাই হাসছে।আরাফের বাবা তিয়াশাকে একটা আংটি পড়িয়ে বলল,তুমি আজ থেকে তোমার বাবার ই নয় আমার বাড়ির ও সম্মান।

আরাফ ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে।টেনশনে ওর ঘাম ঝরছে।ওখানে কি হচ্ছে কে জানে,,ওর দাদি ওকে বারবার শান্তনা দিচ্ছে।
হটাৎ তিয়াশার নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো।ওপেন করতেই দেখলো একটা হাতের ছবি আংটি পড়া।আরাফ বুঝতে পারছে হাতটা তিয়াশার কিন্তু এই পিক দেওয়ার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-কি হলো এমন করছিস কেন?
-দাদি দেখোনা,,
পিক দেখে দাদির চোখ চকচক করে উঠে।
-কি হলো দাদি?
আরে গাধা তোর কপাল খুলে গেছে।তিয়াশা আমার সতিন হয়ে গেছে।ওর বাবা তোদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে।আর তোর বাবা আমার দেওয়া আংটি দিয়ে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলেছে।
-হুররে,,দাদি।
আরাফ দাদিকে নিয়ে নাচতে শুরু করে দিলো।

—————–
কয়েকদিন পরের কথা,,,

আরাফ তিয়াশার বাসার সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিয়াশা গাড়িতে উঠলো।আরাফ আংটি পরা হাতটা ধরে হাতে কিস করলো।তিয়াশার সারা শরীর কেপে উঠলো।

আরাফ বললো,,তুমি শুধুই আমার।অনলি মাইন।

তারপর গাড়ি স্টার্ড দিলো।কলেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।সাথে সুন্দর আর নতুন জীবনের দিকে,অন্যরকম ভালোবাসার দিকে।

[যারা এতোদিন ভালোবেসে পাশে ছিলেন তাদেরকে অনেক অনেক ভালোবাসা।আমার লিখা প্রথম পর্বভিত্তিক গল্প ছিলো।জানিনা কেমন হয়েছে,তবে চেষ্টা করেছি যাতে আপনাদের ভালো লাগে।ধন্যবাদ।।আপনারা যদি চান তাহলে আমি খুব শ্রীঘই নতুন গল্প নিয়ে আসব।আবারো ধন্যবাদ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here