অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-১২ ফাবিহা নওশীন

0
388

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-১২
ফাবিহা নওশীন

কলেজে আরাফ যে সিনক্রিয়েট করেছে সেটা কি যথেষ্ট ছিলো না।এতোটা ঘৃণা একটা মানুষ কিভাবে করতে পারে।আরাফ তুমি এটা কি করে করতে পারলে?আমার ভালোবাসার এই মূল্য দিলে তুমি।ভেবেছিলাম তোমার রাগ কেটে গেছে কিন্তু না,,,,তিয়াশা আর কিছু ভাবতে পারছেনা।বাবা জানতে পারলে কেয়ামত হয়ে যাবে।ভিডিওটা যেভাবে ভাইরাল হয়েছে কানে পৌছাতে সময় লাগবেনা।লোকে জানলে কি বলবে,,আমি কিভাবে মুখ দেখাবো।
তিয়াশা আর কিছু ভাবতে পারছেনা।ওর এই মুহুর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।কাদতেও পারছেনা।কেমন যেন শক্ত হয়ে আছে।ভালোবাসার মানুষের আঘাত বুঝি এমনই হয়।

কলেজে আরাফ তিয়াশাকে যে অপমান করেছে তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।ভিডিও এর হেডলাইন “প্রিন্সিপালের দেমাগি মেয়েকে ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিলো কলেজের সবচেয়ে মেধাবী,স্মার্ট বয়।”

তিয়াশা চুপচাপ বসে আছে।কি করবে বুঝতে পারছেনা।শেলিও বার বার ফোন করেই যাচ্ছে।ওর চিন্তা হচ্ছে।মেয়েটা উল্টো পাল্টা কিছু করে না বসে।
শেলি ভোর হতেই তিয়াশার বাসায় চলে এলো।এতো সকালে শেলিকে দেখে তিয়াশার মা কিছুটা অবাক হয়ে যায়।
-শেলি,এতো সকালে তুমি?সব কিছু ঠিক আছে তো?
-জ্বি আন্টি।আসলে তিয়াশার সাথে আমার একটা জরুরী কাজ ছিলো।
-তিয়াশা এতো সকালে উঠে নি,সম্ভবত।আচ্ছা আমি ডেকে দিচ্ছি।
-আমিই যাচ্ছি।
-আচ্ছা যাও।
শেলি রুমের দরজা নক করতেই তিয়াশার বুক কেপে উঠলো।কে হতে পারে??বাবা নয়তো? এতো সকালে সব জেনে গেলো।
শেলি দরজা ঠেলে ঢুকে পরল।তিয়াশা শেলিকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিল।
-তিয়াশা,তুই ঠিক আছিস?
তিয়াশা শেলিকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর কান্না শুরু করে দিলো।
-আমি ঠিক নেই।আরাফ এটা কি করে করতে পারলো।আমার উপর ওর এতো রাগ।তবে আমাকেই মেরে ফেলতো।এভাবে আমার জন্য আমার পরিবারের মান সম্মান নিয়ে খেলার কি দরকার ছিলো।আমি বাবাকে,মামনিকে কি বলবো? আমি এখন কি করবো?
-কাদিস না।কান্না বন্ধ কর।আরাফ একটা বেইমান।ওর জন্য কি না করেছিস।আর ও তোর সাথে কি করলো।আমি সবাইকে ব্যাপারটা জানাই দেখি কেউ কোনো সল্যুশন দিতে পারে কিনা।তুই চিন্তা করিস না।বাড়িতে এই মুহুর্তে কিছু বলিস না।
তিয়াশাকে শান্তনা দিয়ে শেলি বের হয়ে গেলো।বন্ধুদের বিষয়টা জানাতে হবে।ওরা যদি কোনো হেল্প করতে পারে।

দুপুর বেলা তিয়াশা টেবিলে লাঞ্চ করছে।ওর মা ওকে জোর করে খাওয়াচ্ছে।তিয়াশার খাবার গলা দিয়ে নামছেনা।
এরি মধ্যে তিয়াশার বাবা এসে পরেছে।রাবেয়া গিয়ে দরজা খোলে দিলো।বাবাকে দেখে তিয়াশার গলা শুখিয়ে গেছে।চেহারায় রাগের রেখা স্পষ্ট।তিনি এসে ওর মায়ের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলেন।তিয়াশার বুঝতে বাকি নেই কি হতে চলেছে।বাবা সবটা জেনে ফেলেছে।তিয়াশার মা কিছুই বুঝতে পারলেন না তিয়াশার বাবার এমন ব্যবহারের কি কারণ।
তিয়াশার মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
কি হয়েছে প্লেটটা এভাবে ফেলে দিলে কেনো?
-তোমার আদরের মেয়েকে জিজ্ঞেস করো?কাকে এতো আদর করে ভাত খাওয়াচ্ছো?যে কিনা আমাদের নাক কেটেছে?
তারপর তিয়াশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, এই দিন দেখার জন্য তোকে বড় করেছি?এইভাবে বাবা মায়ের মুখে চুলকানি দিতে বিবেকে বাধলো না?কেন কেন??কি কমতি ছিলো আমাদের ভালোবাসার যার প্রতিদান এইভাবে দিলি।
-বাবা,,,আমি,,
-চুপ একদম চুপ।নাক কাটিয়ে এখানে নিশ্চিন্তে বসে আছিস?বেয়াদব, বেহায়া মেয়ে।
তিয়াশার মা বললো, কি করেছে ও?এভাবে কেনো বকছো?
-তো কি করবে তোমার এই গুনধর মেয়েকে?
-কি করেছে বলবে তো?
-দেখো ভিডিওটা ভালো করে দেখো।তোমার মেয়ে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে গেছে।
তিয়াশার মা পুরো ভিডিওটা দেখে তিয়াশাকে বললো, কি এসব?
তিয়াশা মাথা নিচু করে আছে।
তিয়াশার বাবা হুংকার দিয়ে বললো, মাথা নিচু করে রাখলে হবেনা।তোমার মায়ের কথার জবাব দাও।কি এসব?কালকে তো রেজাল্ট খারাপ করে আমাকে বড় বড় লেকচার দিয়েছিলে?আজ কি বলবে,এইগুলা কোনো ব্যাপার না।এইসব এখনকার দিনের ফ্যাশন।এটাই বলবে তো,,
স্পিক আপ!!!বলেছিলাম ও ছেলে ভালো নয়।তোমার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে কথা শুনো নি।দেখলে কি করলো তোমার সাথে?মান-সম্মান আর কিছুই রইলো না।
ইমতিয়াজ সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে উপরে চলে গেলো।
তিয়াশার মা অত্যন্ত ঠান্ডা মানুষ।যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।তিয়াশার বাবা যেতেই তিনি তিয়াশাকে জিজ্ঞেস করলেন,এটাই তবে মন খারাপের কারণ?আর এসব কি হচ্ছে?কেন হচ্ছে?তুই আমার কাছে থেকে কি কি লুকিয়েছিস?সব কিছু আমাকে খোলে বল।
তিয়াশা ওর মাকে সব কিছু খুলে বললো।আরাফের প্রপোজ,তিয়াশার রিজেক্ট,চ্যালেঞ্জ, আরাফের বদলে যাওয়া,তিয়াশা আরাফের সম্পর্কের অবনতি,পরিক্ষা,বিয়ে বাড়ি,রেজাল্ট,রেজাল্টের পর ক্যানটিনে যা যা হয়েছিলো সব কিছু খোলে বললো।

-এতো কিছু ঘটে গেছে আর আমি কিছুই জানিনা।তুই যা করেছিস আরাফের ভালোর জন্য করেছিস,,তবে এতে ভুল ছিলো, মিথ্যে ছিলো।তুই ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস।তবে আরাফ যা করেছে অন্যায় করেছে।এটা ঠিক করেনি।আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না আরাফ এমন ছেলে,এমন কিছু করতে পারে।
– কিন্তু এটাই সত্য।এমন টাই হয়েছে।ঘৃণা ওকে অন্ধ করে দিয়েছে।

তিয়াশার বাবার ফোন বেজেই চলেছে।একের পর এক ফোন করছে মেয়ের ভিডিও নিয়ে কথা বলছে।পরিচিত পরিজন,বন্ধু-বান্ধব,কলেজ স্টাফ,কলেজ ব্যবস্থাপনা,কলেজ প্রশাসন সবাই।ওদের জন্য কলেজের বদনাম হয়ে গেছে।তিয়াশার মাকেও কয়েকজন পরিচিত ফোন করেছে,বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে।কয়েকজন প্রতিবেশীও এসেছিলো,,,, তিয়াশার ফোনেও কিছুক্ষন আগে ফোনের পর ফোন এসেই চলেছিল।তাই বন্ধ করে রেখেছে।
তিয়াশার মা ওর বাবাকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন,এই অবস্থায় আমার গলা দিয়ে ভাত নামবে।তোমার মেয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার মুখ রেখেছে?লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।সবাই ফোন করে ফালত,আজেবাজে প্রশ্ন করছে আর আমাকে তার উত্তর দিতে হচ্ছে।এসব তোমার জন্য। তুমি লাই দিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে মাথায় তুলে রেখেছো।বলেছিলাম এতো লাই দিও না।
-এখন সব দোষ আমার?
-হ্যা তোমার।।
ইমতিয়াজ সাহেব আর কিছু না বলে চলে গেলো।তিয়াশার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ইমতিয়াজ সাহেব সারারাত ঘুমাতে পারেন নি।ছটফট করেছেন।চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারেন নি।তিয়াশাও এপাশ ওপাশ করছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমার জন্য সব হয়েছে,,আমার জন্য বাবার সম্মানের হানি হয়েছে।আজ পর্যন্ত কেউ বাবাকে কথা শুনাতে পারেনি।আজ আমার জন্য কথা শুনতে হচ্চে।

আরাফের মাথা ভার হয়ে আছে।সারারাত ঘুমাতে পারে নি।গত ২দিন ধরে যা হচ্ছে তাতে ঘুমানো তো দূরে থাক রিলেক্সে বসা যায়না।বাগানে পাইচারি করতে করতে সিগারেট ধরালো,,, সিগারেটে এক টান দিতেই তিয়াশাকে দেখল।তিয়াশার মুখ লাল হয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে।তিয়াশা আরাফের সামনে এসে কিছু না বলেই ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিলো গালে।আরাফ গাল ধরে অবাক হয়ে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর কলার ধরে বলল,,আমার লাইফ জ্বালিয়ে পুরিয়ে মনের সুখে সিগারেট টানছো?এতো রাগ।এতো ঘৃণা। একটা মানুষ একটা মানুষকে এতোটা ঘৃণা কি করে করতে পারে।এতোটাই যখন অপছন্দ তাহলে এক কাজ করো,,
ব্যাগ থেকে ছুড়ি বের করে আরাফের হাতে দিয়ে জোর করে নিজের গলায় ধরলো।তারপর বললো,টান দেও।তোমার এক টানে আমার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে।আর তোমার জ্বালা মিটে যাবে।কি হলো নেও।
-তিয়াশা কি করছো?লেগে যাবে তো।তুমি ভুল বুঝছ আমায়,,
-ঘৃনা করি তোমায়,,,,
-তিয়াশা আমার কথা তো শুনো,,
তিয়াশা কিছু বলতে না দিয়ে চলে গেলো।

আরাফ তিয়াশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here