অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-১১

0
400

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-১১
ফাবিহা নওশীন

(ভালোবাসার জন্য যদি এটুকু বেহায়া না হতে পারি,একটু অপমান সহ্য করতে না পারি তবে কেমন ভালোবাসা।কতটুকু ভালোবাসতে পেরেছি।)
তিয়াশার ঠোঁট কাপছে,,কাপা কাপা কন্ঠে আরাফের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আরাফ আমি তোমাকে ভালোবাসি।

আরাফও তিয়াশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।তিয়াশার চোখ ছলছল করছিলো।আরাফের এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো তিয়াশার বলা ভালোবাসি কথাটার মধ্যে কোনো মিথ্যে নেই।তিয়াশার চোখের টলটলে জলের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে।হটাৎ ঘোর ভাংলো।
তিয়াশা চোখ বন্ধ করতেই চোখের পানি গাল বেয়ে নেমে গেলো।
আরাফ হটাৎ উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো।তিয়াশার মনে হচ্ছে ওর হাসিতে পুরো পৃথিবী কাপছে।আরাফ হটাৎ হাসি থামিয়ে বললো, কি ভালোবাসো??হাহা।
সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হটাৎ আরাফ বলে উঠে,
-তুমি আমাকে ভালোবাস?আমাকে? নিজেকে কখনো দেখেছো?তোমার লেবেল দেখেছো?আমি আরাফ রায়হান।আমার আগে পিছে হাজার মেয়ে ঘুরে।আর তারা সবাই আমার স্ট্যাটাসের।তুমি একটা মিডিল ক্লাস মেয়ে।আমার ক্লাসের ছেলেরা তোমায় মিডিল রাস্তায় ছেড়ে দিবে কিন্তু আমি তোমাকে আমার আশেপাশেও ঘেষতে দিবোনা।তোমার মতো মেয়েরা চেহেরায় একটা ইনোসেন্ট ভাব করে রাখো সব সময় যাতে করে আমার মতো ছেলেরা তোমাদের ট্রাপে পড়ে যায়।একদম ফেসে যায়।আর যখন ফেসে যাবে তখন চেহেরার ইনোসেন্ট ভাব সরিয়ে আসল চেহেরা সামনে এনে দাড় করাবে।কঠোরতর ব্যবহার করবে তারপর বন্ধুদের গিয়ে বলবে,আজকে এক গাধাকে ডাম্প করলাম।বাট আমি মোটেও সেই টাইপ না।আগে কি ছিলাম জানি না বাট এখন আমি গাধা নই আর আমাকে গাধা বানানোও যাবে না।তোমার সাথে বন্ধুত্ব করা আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল।ইনফ্যাক্ট তোমার সাথে দেখা হওয়াটা আমার জীবনের একটা এক্সিডেন্ট।

তিয়াশা চুপ করে দাড়িয়ে আছে।হাতের মুঠো শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।কেননা আজকে ওকে সব শুনতে হবে।কিছুতেই রিয়েক্ট করা যাবেনা।শক্ত হতে হবে।এটাই তিয়াশার ভালোবাসার পরিক্ষা।একমাত্র এটাই আরাফকে মুক্তি দিতে পারে।
আরাফ আবার বলতে শুরু করলো,
-দেখো,এখনো মুখটা ইনোসেন্ট করে রেখেছ।কোনো উত্তর দিচ্ছো না।কিন্তু আমি তো তোমায় রগে রগে চিনি।তোমাকে চিনার সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছে।নিশ্চয় ভাবছ কি বলবে।কারণ এখন তো আর আমাকে গুন্ডা,বেয়াদব বখাটে বলতে পারবেনা।তুমি ভালো করেই জানো এগুলোর সাথে আমার নাম যায়না।আর পড়াশোনা নিয়ে বলবে যে যোগ্যতাও এখন তোমার নেই।অনেক অহংকার ছিলো না তো পড়াশোনা নিয়ে,,কোথায় গেলো সেগুলো? থার্ডক্লাশ চিপ গার্ল।আমাকে প্রপোজ করতে এসেছে।আমি বললাম আর তুমি মেনে নিলে?যাকে পাবে তাকেই ভালোবাসার কথা বলবে??তোমার কাছে এই ওয়ার্ডের কোনো দাম নেই,,তারমানে এই নয় যে এই ওয়ার্ড তোমার মতো চিপ।
-আর কিছু বলবে?তিয়াশা শক্তভাবে বললো।
-তোমার মতো মেয়েকে আমি আর কি বলতে পারি?তোমার সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট করা।আমার এতো ফালতু সময় নেই।
তিয়াশা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে আশেপাশের মানুষেরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা নিচ্ছে।তিয়াশা কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো।

শেলি তিয়াশাকে ডাকতে ডাকতে পিছে পিছে গিয়ে আবার ফিরে এলো।
-আরাফ আজ তুমি যা করলে খুব খারাপ করলে।এর জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে।
আরাফ কেনো পস্তাবে?ও পস্তাবে না।ফারাবি বললো।
-তোমার বন্ধুকে পস্তাতে হবে কারণ ও একটা স্বার্থপর, বেইমান।তিয়াশা কি না করেছে ওর জন্য।আর আজ তিয়াশার চেয়ে ৭নাম্বার বেশি পেয়ে সাপের পিছ পা দেখেছে।বেইমান।
-কি করেছে তিয়াশা ওর জন্য? কিচ্ছু না।
-সেটা বুঝতে হলে মাথায় কিছু থাকতে হবে,,সেটা তোমাদের আছে?গর্দভ, ষ্টুপিড কোথাকার।
শেলি তিয়াশাকে খুজতে চলে গেলো।

তিয়াশা দরজা নক করতেই ওর মা দরজা খোলে দিলেন।তিয়াশা কিছু না বলে দ্রুত পায়ে উপরে চলে গেলো।তারপর বাথরুমে গিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ল।
তিয়াশার বাবা ওর মাকে ফোন করে আগেই রেজাল্টের কথা জানিয়ে দিয়েছে।তিনি ভাবলেন রেজাল্ট খারাপ করেছে তাই মন খারাপ।তাই তিনি আর তিয়াশার কাছে গেলেন না।একা ছেড়ে দিলেন।
আরাফ তিয়াশাকে সবার সামনে অপমান করে কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু এমনটাই হওয়ার ছিলো।সেদিন নিজেকে নিজেই প্রমিস করেছে।তিয়াশা যেভাবে ওকে অপমান করেছে ঠিক এক ভাবে ও তিয়াশার অহংকার চূর্ণ করে দিবে।তাই করেছে আজ।আজ ও জিতে গেছে।
রাতে তিয়াশার মা খাবার নিয়ে তিয়াশার ঘরে এসে দেখে তিয়াশা বারান্দায় গালে হাত রেখে বসে আছে।তিনি তিয়াশার কাধে হাত রেখে বললেন, তুই এতো বোকা কেনো,হ্যা?একবার পরিক্ষায় কম পেয়েছিস বলে না খেয়ে এভাবে বসে থাকবি?দিন দিন বাবার মতো তৈরি হচ্ছিস।এইবার খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে সামনে আবার ভালো হবে।পরের বার তুই ফার্স্ট হবি।আমি বলছি।নে,এইবার খেয়ে নে।
তিয়াশা আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো।

আরাফের দাদি আরাফকে নিজে হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন।তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না তার এমন উড়নচণ্ডী নাতি এতো ভালো রেজাল্ট করবেন।অবশ্য অনেক পড়াশোনা করেছে ছেলেটা,তিনি দেখেছেন।হটাৎ ফোন বেজে উঠলো।আরাফের বাবা ফোন করেছে।
-হ্যালো বাবা।কেমন আছো?
-আমার কথা রাখো শুনলাম তুমি নাকি সেকেন্ড হয়েছো?
-জ্বি,বাবা।
-আরো শুনলাম, এখন নাকি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছো?
-কে বলেছে?
-তুমি খুব ভালো করেই জানো,আমি দুরে থাকলেও তোমার টুকটাক খোঁজ রাখি।এখন নাকি রাতে বাইরে থাকো না।বন্ধুদের আড্ডায় কম যাও।কলেজে কাউকে বিরক্ত করোনা,স্যারদের সাথে বেয়াদবি করোনা।রেগুলার ক্লাস করো,,পড়াশোনা করো।যাক শুনে ভালো লাগলো।আমার ছেলেটা মানুষ হচ্ছে।এখন বলো,,ভালো রেজাল্ট করেছো কি চাও?
-সব কিছুই তো আছে,কি চাইবো?
-যা নেই তা চাইবে।আচ্ছা পরে ভেবে বলো।নিজের খেয়াল রেখো।আমি কয়েকদিন পর আসছি।
-আচ্ছা।রাখি।ভালো থেকো।

রাত ২:৩৮।হটাৎ তিয়াশার ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো।আবার বাজতেই তিয়াশা ফোন রিসিভ করলো।
-হ্যালো শেলি বল,এতো রাতে কি মনে করে?
– দোস্ত সর্বনাশ হয়ে গেছে।
-কি হয়েছে?
-তোকে৷একটা লিংক পাঠিয়েছি।চেক কর।
তিয়াশা ফোন রেখে তাড়াতাড়ি শেলির পাঠানো লিংক টা চেক করলো।
শেলি আবার ফোন করেছে কিন্তু সে দিকে তিয়াশার খেয়াল নেই।ফোন বেজেই চলেছে আর তিয়াশার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরে।
ও শুধু ভাবছে আরাফ ওর সাথে এটা কি করে করতে পারলো,,, কি করে?

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here