#ঘূর্ণ্যমান_তিক্ততা
৫ম পর্ব
ওহী ব্যাল্কুনিতে বসে বসে বাবা আর অগ্নির কথা ভাবছে। আর কান্না করছে।
ওহীর বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা ও যেন ওহীকে চোখে হারায়। এই কারণে ওহী অগ্নির সাথে বিয়ের সময় শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন বিয়ের পর ওহীকে নিয়ে উনার বাসাতেই থাকতে হবে। অগ্নি ও রাজি হয়ে গিয়েছিলো কারণ অগ্নির পরিবারের সবাই ই ঢাকায় থাকে আর বিজনেস এর সুবাদে অগ্নি থাকে চিটাগাং এ। ওহীর মা মারা গিয়েছিলো ওহীর ছেলেবেলায়। তারপরে ওহীর বাবাই ওহীর সব কিছু। আর বর্তমানে বাবা আর অগ্নি।
মোহর স্যুপ নিয়ে ব্যাল্কুনি তে ঢুকতেই ওহী তাড়াহুড়ো করে চোখ মুছে নিলো। তাও তার চেহেরাই কান্নার স্পষ্ট ছাপ বোঝা যাচ্ছে। মোহর সব কিছুই বুঝতে পারলো। স্যুপটা টেবিলে রেখে সে ওহীর পাশে বসলো।
ওহীর এক হাত তার হাতে নিয়ে বললো,
>>কাঁদছিলে কেনো?
>>কই না তো কান্না করিনি। (ইতস্ততভাবে)
>> পরিবার এর কথা খুব মনে পড়ছে?
>>হুম খুব। জানেন বাবা আমাকে ছাড়া চলতেই পারেনা। আমাকেই বাবার খেয়াল রাখতে হয়। তার উপর বাবা হার্টের পেশেন্ট। আল্লাহই ভালো জানেন বাবা এখন কেমন আছেন।
এইটুকু বলে ওহী আবারো কেঁদে দিলো। মোহর নিজের পরিবার এর শূন্যতা অনুভব করছে। এতিম আশ্রয়ে বড় হওয়ার দরুন সে জানেও না তার মা-বাবা কি আদৌ আছে নাকি নেই। ওহীর তার বাবার প্রতি ভালোবাসা আর তার প্রতি ওহীর বাবার ভালোবাসা দেখে মোহরের মনে হচ্ছে তার ও বাবা থাকলে খুব বেশি মন্দ হতোনা। বাবার নাকি কলিজার টুকরা হয় মেয়েরা। মোহরের বাবা থাকলে হয়তো সেও তার বাবার কলিজার টুকরা হতো ওহীর মত। তাকে এভাবে তূর্যের সাথে থেকে ধুকে ধুকে মরতে হতোনা। মোহরের চোখের কৌণেও পানি চলে এলো। মোহর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে ওহীর কান্না মুছে দিয়ে বললো,
>>হয়েছে আর কেঁদো না। নাও খেয়ে নাও ঔষধ টাও খেতে হবে তো।
>>আচ্ছা।
মোহর নিজ হাতে ওহীকে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে তারা আর কিছুক্ষণ কথা বার্তা বললো। তারপর মোহর ওহীকে নিয়ে শুইয়ে দিলো। ওহী কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে গেলো। মোহর ওহীর রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখলো তূর্য ঘরে ঢুকছে। তূর্য মোহরের দিকে রাগে ভরা একটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। মোহর আবারো লাইব্রেরিতে নিজেকে আবদ্ধ করে নিলো। লাইব্রেরির এক পাশের দেওয়ালে কোলাজ করানো অনেক গুলো ছবি টাঙানো। কোলাজের মাঝখানে বড় ফ্রেমের একটি ছবি। মোহর ছবিটির সামনে দাঁড়িয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
>>আমাকে মাফ করে দিস। তোর খুনিদের যত্ন নিচ্ছি আমি। খুব খারাপ আমি তাই না? কিন্তু আমার মন বলছে ওহী দোষী নয়। আমি জানিনা সত্যি টা কি। আচ্ছা তাদের কি ক্ষমা করা যায়না? তুই ই বল আমি কি করবো আল্লাহ কি এসব সহ্য করবেন? তোর সাথে যা হয়েছে তার শাস্তি নাহয় তারা পরকালে পাবেই কিন্তু এভাবে শাস্তি টা কি না দিলে হয়না? আমার মনে হচ্ছে এর চেয়ে ভালো হতো যদি আমিই মরে যেতাম। প্রতিশোধ এর আগুনে আমি নিজেকে আর পোড়াতে চাইনা।
মোহর কান্না করতে করতে সেখানেই বসে পড়ে। একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
অগ্নি হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে। ভেতরে আই সি ইউ তে আনাস সাহেব রয়েছেন। হার্ট এটাক করেছেন উনি। এর আগেও একবার করেছিলেন। তাই এবারে তার ঝুঁকি বেশি। হঠাৎ অগ্নির ফোনে একটা কল আসে। সে ফোন টি হাতে নিয়ে দেখে তার বাবা ইমতিয়াজ নেওয়াজ কল করেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে ফোনটা ধরলো।
>>হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
>>হ্যালো অগ্নি বাবা কেমন আছিস?
>>ভালো নেই আমি তুমি আমায় ভালো থাকতে দিচ্ছোনা।
>>এভাবে কথা বলছিস কেন? আমি কি করলাম?
>>তুমি কি করেছো মানে? এসব শুরু টা তুমিই করেছিলে। তোমার কারণেই এত সমস্যা আমাদের লাইফে। ওহীকে খুঁজে পাচ্ছিনা এদিকে আব্বু হার্ট এটাক করেছেন।
>>তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু তুই আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেনো?
>>তোমাকে দোষ না দিয়ে কাকে দোষ দেবো বলো। ভুলে যেওনা বাবা তিন বছর আগের কথা। সেই তিন বছর আগেও তুমি অনেক লাইফ নষ্ট করেছো। তোমার কারণেই আজ আবারো এত গুলো লাইফ হুমকির মুখে। তোমাকে বাবা বলে পরিচয় দিতেও ঘৃণা হয় আমার।
অগ্নি কল টা কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তার ইচ্ছে করছে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদতে। একদিকে আনাস সাহেব অপর দিকে ওহী। অগ্নি জানেনা সে কি করবে। সে অনেক একা হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে তার ওহীকে খুবই দরকার। সে আর আনাস সাহেব মিলে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে কিন্তু ওহীর খোঁজ পাইনি। যে নাম্বার থেকে আনাস সাহেবের কাছে হুমকির মেসেজ গুলো আসতো সেই নাম্বারটাও ফেইক। সেটা ট্রেস করেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। এখন অগ্নি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করছে।
এদিকে তূর্য মোহর কে একটা কাজের জন্য পুরো ঘরময় খুঁজছে কিন্তু পাইনি। পড়ে তার মনে পড়লো লাইব্রেরী রুমের কথা। তূর্য লাইব্রেরী রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখে মোহর জ্ঞানহীন ভাবে মেঝেতে পড়ে আছে।
চলবে…..
#Razia_Binte_SuLtan