দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০৪)

0
311

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০৪)

লেখক- Riaz Raj
——————-
বুঝে ফেলেছি, আজকে এরা আমাকে খাবার হিসেবে চালিয়ে দিবে। এ আমি কোথায় এসে পড়লাম। ১৫৮৮ সালে এসে আদিবাসীর খাবার হবো? আমি কি ফিরে যেতে পারবোনা..?

চোখ দিয়ে আমার পানি ঝরে পড়ছে। জীবনের শেষ মুহূর্তকে উপভোগ করার শ্বাদ নিশ্চয় ভালো হবেনা। তখনই ওদের থেকে একজন হাউ মাউ কি যেনো বলে উঠে। উনার শব্দের সঙে সবাই ব্রেক মারে। যে যেখানে ছিলো,সেখানেই আছে। সবার ভীড় থেকে বের হয়ে আসে সেই বৃদ্ধ লোক। উনার হাতে ইয়া বড় এক তলোয়ার । আমার ঘাড়ে কোপ দেওয়া লাগবেনা, টাচ করলেই আমার মাথা পড়ে যাবে। এতোটাই ধারালো যে, পাথরকে দুইভাগ করতে এই ছুরিই সক্ষম। আমি মুক্তি পাওয়ার জন্য নড়াচড়া করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই ছাড়া পাচ্ছিনা। ওরা তৎক্ষণাৎ স্লোগান দিতে লাগলো।
আন্দ্রা বীর কাইয়ারি
আন্দ্রা বীর কাইয়ারি
আন্দ্রা বীর কাইয়ারি
আন্দ্রা বীর কাইয়ারি।

এই স্লোগানের অর্থ হয়তো এইটাই যে,” মার শালারে মার”।
সে যাইহোক, আমি আজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে যাচ্ছি,তা শিওর। বৃদ্ধ লোক ছুরি এনে আমার গলা বরাবর করে । আর ১০ সেকেন্ডের মাঝেই হয়তো জবাই করবে । মনে মনে দোয়া কালাম পড়া ধরলাম।
তখনি ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। সবাই যে যার জায়গা থেকে হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছে। এদিকে আমার নিছে আগুন জ্বলতেছে । এই ভূমিকম্পের চাপে খুটি ভেঙে গেলে তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। এক বিপদ না কাটতেই আরেক বিপদ। ভূমিকম্প চলাকালীন দেখলাম, একটি মেয়ে সবার ভীড় থেকে দৌড়ে আসছে। তাও আমার দিকে। অদ্ভুত ব্যাপার, মেয়েটি আমাদের মতই। আদিবাসীর মতো লাগছেনা। কিন্তু মুখটা দেখতে পারছিনা। ছেড়াপাটা একটা কাপড় দিয়ে মুখ বেধে রেখেছে। আমি উনার দিকেই তাকিয়ে আছি। মেয়েটি দৌড়ে এসে আমার হাতের দড়িগুলা কেটে দেয়। তখনি আমি আগুনের উপর পড়তে যাচ্ছিলাম। মেয়েটি আবার এক লাফ দিয়ে আমাকে ধরে ফেলে। শূন্যে ভেসে আবার নামিয়ে দেয় আগুনের পাশে। মুহূর্তকে দাম দিয়ে আমার হাতটি ধরে ফেলে মেয়েটি। এরপর সোজা দৌড়ে নিয়ে যাচ্ছে । আমিও ওর সাথে দৌড়ে যাচ্ছি। কিন্তু কার সাথে যাচ্ছি,কে উনি, আর আমাকে কেনো বাঁচালো। তাও ১৫৮৮ সালে। কয়েক মুহূর্তে সব পাল্টে গেলেও, আরো গভীরতর বিপদের ইঙিত পাচ্ছি আমি।

মেয়েটি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এখন খেয়াল করলাম, আমি দৌড়াচ্ছি ঠিকই,কিন্তু মাটিতে আমার পা নেই। মেয়েটি এতোই গতিবেগে ছুটে যাচ্ছে যে,আমিই হাওয়ায় ভাসছি। বুঝতে বাকি কই,উনি তো সাধারণ কেও না । নিশ্চয় কিছু হতে যাচ্ছে।
অবশেষে মেয়েটি আমাকে একটা পাহাড়ের উপরে তুলতে শুরু করে । যে পাহাড়ে কোনো গাছপালা নেই, শুধু পাথর আর পাথর। অন্ধকার নেমে এসেছে। চারদিক কালো ছায়ায় পরিণত হচ্ছে। আর আকাশের কথা কি বলবো,
আকাশ ভরা তারা,
হোগা মারা সারা।

এক সময় মেয়েটি আমাকে ছুড়ে ফেলে দেয় একটি গুহার সামনে। অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে । ভুল করে রুপকথার দেশে চলে এসেছি কিনা ভাবছি। মেয়েটি আমাকে ফেলে দিয়ে সোজা হতে দাঁড়িয়ে আছে। জোরে ছুড়ে মারায়, পিঠে খানিকটা ব্যাথা পেয়েছি। হামাগুড়ি দিয়ে আবার দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে দেখি মেয়েটি যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো,ঠিক সেইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রশ্ন করলাম ” কে আপনি? আমাকে উদ্ধার করেছেন কেনো? আর এখানে বা কেনো এনেছেন? “। সাড়া শব্দ আসছেনা । চুপ মেরে দাঁড়িয়ে আছে উনি। উনি কি কানে শুনতে পায়না নাকি। আমিও খানিকক্ষণ চুপ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। তাও উনি কথা না বলেই দাঁড়িয়ে আছে। এবার সাহস করে আরেকটু কাছে গিয়ে বললাম ” আপনি আমাকে শুনছেন? “। নাহহ, তাও চুপ। উনি কি আজ কথা না বলার প্রতিযোগিতা দিচ্ছেন নাকি। মনে মনে ভাবছি,কাছে গিয়ে ডাক দেই। আরেকটু সাহস এনে এবার উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সামনে দাড়াতেই ধূপ করে অজ্ঞান হয়ে যাই আমি। এরপর আর কিছু মনে নেই। কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম তাও জানিনা। তবে আন্দাজ হচ্ছে ২-৩ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম। চোখ মেলেই আমি দৌড়াতে লাগলাম সামনের গুহার দিকে। ভয়ে হাত পা এখনো কাঁপছে আমার। এইজন্যই ভয় পাচ্ছি,কারণ আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়াতেই দেখি,ওটা কোনো মানুষ না। জাস্ট একটা পাথরের পুতুল। রাজা বাদসারা যেভাবে তাদের মহলের সামনে নারীদের মূর্তি দাড় করিয়ে রাখে। ঠিক তেমনি একটি মূর্তিমতী আমার সামনে ছিলো। এইটা যদি কোনো মূর্তি হয়, তবে আমার হাত ধরে এনেছিলো কিভাবে। আমাকে উদ্ধার করলো কিভাবে। কেনো করলো?
প্রশ্ন প্রশ্ন প্রশ্ন। মাথাটা পেঁচিয়ে যাচ্ছে। আবার মনকে শান্তনা দিচ্ছি, এই ভেবে। যে এমন হতেই পারে। এখানে আসার আগ থেকেই অলৌকিকতা আমাকে ঘিরে আছে। আরো কি কি দেখতে হবে আল্লাহ জানে।

আমি দৌড়ে সেই গুহার ভিতরে প্রবেশ করি। অদ্ভুত ব্যাপার,গুহার ভিতর আলোয় ভরা। দেয়ালের মধ্যে আগুনের কাটি জ্বালানো। নিশ্চয় ভিতরে কেও থাকে। তবে আমাকে সাবধানে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেকোনো সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে। গুহার ভিতর এবার ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে লাগলাম। কিন্তু কারো দেখা মিলেনি এখনো। অবশেষে হাটতে হাটতে আমি গুহার শেষ মাথায় চলে যাই। সেখানে বিশাল বড় এক সিংহাসন। একটা পাথরের তৈরিকৃত চেয়ার। অনেক সুন্দর করে সাজানো। সে চেয়ারের উপরে,অর্থাৎ বসার জায়গায় একটা কিছু দেখা যাচ্ছে। জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সেটা। বস্তুটি কি হতে পারে। তবে আবালের মত এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে, সেখানে গিয়ে দেখা যাক। এরপর আমি সিংহাসনের উপরে চলে যাই। গিয়ে দেখি জ্বলজ্বলন্ত বস্তুটি অন্য কিছুনা। এইটা সেই ব্লাক বুক বই,যে বইটি আমাকে এই কালো জগতে নিয়ে এসেছে । বইটি দেখে কিছুটা শক্তি ফেলাম। নিশ্চয় এবার কোনো একটা পথ আমি পেয়েই যাবো। সময় অপচয় না করে,বইটিতে হাত দিতেই, একটা সাদা আলো বের হয়ে আসে। আলোর উজ্জ্বলতা এতটাই বেশি যে,চোখে আমি শুধু সাদা আলো দেখতে পাচ্ছি। আবার সাদা আলোয় চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায় আমার। কিছুক্ষণ এভাবে যাওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে যাই আমি। এরপর চোখ মেলার পর আবার নিজেকে আবিষ্কার করলাম নিজের রুমে। নিজেকে নিজের রুমে আবিস্কার করে ইয়াহু বলে এক চিৎকার দিলাম। খুশিতে যেনো ধরেনা আমার। দরজা খুলে রুম থেকে বের হতে যাবো, তখনি দেখি, দরজার সামনে সেই মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে মেয়েটিকে আমি পাথরের পাহাড়ে, মূর্তরূপে দেখেছিলাম।

চলবে….?

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০৪)

লেখক- Riaz Raj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here