গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০২) লেখক – Riaz Raj

0
553

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০২)

লেখক – Riaz Raj
——————-
আমি বইটার প্রথম পাতা উল্টাতেই, বইয়ের ভিতর থেকে একটা রক্তমাখ ভয়ংকর হাত বের হয়ে আসে। আর সঙ্গে সঙ্গে আমার মুখ চেপে ধরে। অনেক জোরাজুরি করেও,হাতটা ছাড়াতে পারছিনা আমি। এবার খেয়াল করলাম,বইটি আমাকে টেনে,তার ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। এক্ষুনি হয়তো আমি বইটার ভিতরে চলে যাবো।

আমি দুই হাত দিয়ে, সে ভয়ংকর হাতটাকে ছাড়াতে চাচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। হাতটার সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করার পর বুঝতে পারলাম, আমার হাতটাই সেই হাতের মাংসের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। ভয়ংকর হাতটা একেবারে নরম তুলতুলে হয়ে গেছে।পচা মাংসের মত নরম হয়ে যায়। অন্যদিকে হাতটি আমার মুখ চেপে ধরে আছে। নিশ্বাসবন্ধ আমার হবার জোগাড়। এভাবে প্রায় চার মিনিটের মত যুদ্ধ করার পর,হটাৎ হাতটা আবার বইয়ের ভিতর ঢুকে যায়। আমি যেনো লম্বা করে একটা নিশ্বাস নিতে পারলাম। বইটার ভিতর থেকে যে হাত বের হয়েছিলো, তা আবার ঢুকে যায়। সঙে সঙে বইটাও আবার বন্ধ হয়ে যায়। আর এক মুহূর্ত এখানে থাকা ঠিক হবেনা। এক দৌড় দিলাম। কোনদিকে যাচ্ছি, তাও জানিনা। তবে আমার লক্ষ একটাই, বইটার থেকে দূরে চলে যাওয়া। অবশেষে আরো দশ মিনিট ছুটে যাওয়ার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি । এরপর কি হয়েছিলো,তা মনে নেই আমার। চোখ খুলতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম, সেই নিরিবিলি হাউজের সামনে । আমি পড়ে আছি সেই হাউজের উঠোনে। শুয়া থেকে উঠতে না উঠতেই দেখি, কিছু একটার শব্দ কানে আসছে। যেনো কোনো ইঞ্জিনের শব্দ। ভালো ভাবে বুঝার চেষ্টা করে বুঝলাম, কোনো গাড়ি আসছে। এত রাতে গাড়ি আসবে কোথা থেকে। নিশ্চয় ওরা হবে হয়তো। আর যাইহোক, এদের এবার আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে। আমি এক দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম, একটা গাছের আড়ালে। তার কিছুক্ষণ পরেই,একটা গাড়ি দ্রুত বেগে,উঠোনে এসে থামে। আমি ভালো করে লক্ষ করে যাচ্ছি, কি হতে পারে। কোমরে হাত দিয়ে দেখি, পিস্তলটা নেই। মনে হয়, জঙ্গলে দৌড়াদৌড়ি করার সময় পড়ে গেছে। এদিকে ছুরিটাও হারিয়ে ফেলছি। একটা অশ্রও আমার সাথে নেই। তবে কিভাবে মারবো আমি তাদের?

সে যাইহোক, ওরা কি কি করে,তা দেখে নেই আগে। পরে কিছু একটা করা যাবে। কিছুক্ষণ পর,গাড়ি থেকে কয়েকজন লোক নামলো। প্রায় ১০-১২ জন। অন্ধকারে তেমন স্পষ্ট মুখ দেখছিনা। তবে যতটুকু বুঝতে পারছি, কয়েকজন ছেলে হবে। এরপরই গাড়ি থেকে আরো দুজন লোক নেমেছে। তাদের হাতে একটি মেয়ে। মেয়েটির পা ধরেছে একজন,আর মাথা ধরেছে অন্যজন। তারমানে ওরা আরো একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চায়? কিন্তু আমি তো সেটা হতে দিবোনা। নিজের চাচাতো বোনকে বাচাতে পারিনি ঠিকই, এই মেয়েটাকে তো বাচাতে পারবো।
ওরা মেয়েটিকে কোলে তুলে হাউজের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। আমিও ধীরে ধীরে,গাছের আড়াল থেকে বের হলাম। লোকগুলা হাউজের ভিতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। মহা ঝামেলা তো? এখন আমি ঢুকবো কিভাবে। সে যাইহোক, পরে ঢুকা যাবে। কোনোভাবে আগে তাদের মারার প্লেন করতে হবে। ওরা হাউজের ভিতরে গেছে, তবে আমি জানালার দিক দিয়েও যেতে পারি। সে ভেবে,জানালার দিকে যেতে চাইলাম। তখনি ফোনে একটা কল আসে। চমকে উঠি আমি। ভাগ্যিস vibration করা ছিলো। তাই আওয়াজ হয়নি। আমি এখন হাউজের বাহিরে। ভিতরে চলে গেছে ওরা। আগে দেখি,এত রাতে কে ফোন দিল। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি, চাচি ফোন দিয়েছে। এত রাতে চাচি ফোন দিতে যাবে কেনো। কয়টা বাজে তা দেখার জন্য, ফোনের উপরে,অর্থাৎ টাইমের দিকে তাকিয়ে দেখি ০৭:০৪ মিনিট। চোখ আমার কপালে উঠে যায়। কিছুক্ষণ আগে দেখেছি রাত ২ টার কাছাকাছি। তবে সন্ধ্যা টাইম হলো কিভাবে? ফোনের সময় চেঞ্জ হয়েছে,নাকি আমি ভুল দেখছি। সব কেমন গোলমাল লাগছে। ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে চাচি বলল, ” রিয়াজ,তোর চাচাতো বোন তানিয়া এখনো বাসায় ফিরেনি। খুব টেনশন হচ্ছে। তাড়াতাড়ি কিছু কর”। চাচির কথা শুনে হাবা হয়ে গেলাম। এ কেমন কথা বলল চাচি। নিজের হাতে তানিয়াকে দাপন করে আসছিলাম। আর এখন চাচি বলছে সে বাসায় ফিরেনি? তাও টেনশন হচ্ছে? মরা মানুষ কিভাবে ফিরবে আবার। কি হচ্ছে এসব। এবার মনে পড়লো সব কিছু। আমার কাছে পিস্তল নেই,ছুরিও নেই, চাচির টেনশন আগের মত, তানিয়া নিখোঁজ, এরা হাউজে একটা মেয়েকে নিয়ে গেছে, টাইম পিছনে চলে এসেছে, আরো শিওর হওয়ার জন্য তারিখ দেখলাম।এবার পুরোপুরিভাবে অবাক হয়ে গেছি, তারিখটাও সেদিনের,যেদিন তানিয়া মারা গেছে। তবে কি আমি?
না, এমন কি কখনো হতে পারে নাকি। একটা মানুষ কিভাবে অতীতস্মৃতিতে এসে,অতীতকালেই অবস্থান করে।আমি কি কোনো ভাবে অতীতে চলে এসেছি? সব কিছু সেই বইয়ের জন্য নাতো?

যদি তেমন কিছু হয়েও থাকে,তবে তো আমি তানিয়াকে বাচাতে পারি।দৌড়ে আমি জানালার পাশে গিয়ে দাড়াই। দাঁড়িয়ে দেখি, হাউজের ভিতরে তানিয়াকে শুইয়ে রেখে,বেধে রেখেছে। ওখানে শুধু সেই ১২ জন লোকই না, সাথে ইন্সপেক্টর মামুন সাহেবও আছে। ও এম জি, তবে কি মামুন সাহেব ও সেদিন তানিয়াকে..?
বিশ্বাস ঘাতক,নিজেই অপরাধী ছিলো,আর নিজেই ভালোর মুখোশ পড়েছিলো? প্রতারক সব। আজকে সব কয়টাকে শেষ করবো। অতীতে এসে,আমি ভবিষৎবাণী পাল্টিয়ে দিবো। জানালা ভেঙেই আমি ভিতরে চলে গেছি। গ্লাসের জানালা ছিলো, তাই ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। আমি ভিতরেই ঢুকতেই ওরা সবাই আমার দিকে তাকায়। ভাঙা গ্লাসের একটি টুকরো নিয়ে,সোজা ইন্সপেক্টর মামুন সাহেবের মুখে মেরে দিয়েছি। মামুন সাহেব আমাকে আঘাত করার জন্য,পিস্তল বের করেছিলো। কিন্তু গ্লাসের আঘাতে,পিস্তল ছেড়ে দিয়ে উনি,নিজের মুখে হাত দিয়ে ফেলে।সুযোগ বুঝে আমি দৌড়ে গিয়ে,পিস্তলটা কুড়িয়ে নিই। আমার হাতে পিস্তল দেখে,বাকিরা হাত উপরে তুলে ফেলে। কিন্তু এরা আগের সময়ে,আমার চাচাতো বোনের ধর্ষিতা ছিলো। এদের তো ছাড়া যাবেই না। পিস্তলের বুলেট এক এক করে,ছয় জনের কপাল ভেদ করে ফেলছে। ছয়টির বেশি বুলেট নেই। তখনি চোখে পড়ে, আমার থেকে ৫ হাত দুরুত্বে কোনো বালু জাতীয় কিছু। এগুলো ওদের চোখে মারলেই, খুন করতে অসুবিধা হবেনা। দেরি না করে বালু নিতে যাচ্ছিলাম,তখনি তাদের মধ্যে একজন বলল,” ভাই,এসিড মারিস না, আর কোনোদিন এসব কাজ করবোনা। ছেড়ে দে ভাই ছেড়ে দে”। লোকটির চিৎকার কানে আসতেই, দেখি বালুর পাশে একটা বালতি। বালতির ভিতরে সবুজ রঙের কিছু পানি। ওও আচ্ছা,তারমানে এই পানির কথা বলেছে সে । যাইহোক, সুবিধে হলো আমার। দেরি না করে,বালু রেখে বালতিটা নিলাম। নিশ্চয় ওরা এসব এসিড দিয়ে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করে। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে,ওদের চেহারা নষ্ট করে দেয়। এদের তো বেচে থাকার কোনো অধিকারই নেই। আমার হাতে বালতি দেখে,ওরা সবাই দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতে লাগলো। আমি সেই সুযোগ্য সময় আর হাত ছাড়া করিনি। দরজার ৫ টা তালা খুলতে খুলতে ওদের সময় লাগবে। একদিকে সবাই একত্রিত আছে। আর কিছু না ভেবে,সবার গায়ে এসিড মেরে দিলাম। যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো সবাই। তবে আমার রাগ এখনো কমেনি। পাশেই দেখি একটা লোহার দন্ড। বেশ শক্ত আছে। সোজা গিয়ে, সবার মাথায় আঘাত করতে লাগলাম। কারো মাথা ফেটে মগজ বের হতে লাগলো। কারো খুলি ঠাসস করেই খুলে গেছে । রক্তাক্ত হয়ে গেছে দরজার সামনে। এক এক করে,সবাইকে মেরে ফেলেছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি,তানিয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। হয়তো খুনখারাব দেখে হুশ রাখতে পারেনি। কিন্তু এখানে আর এক মুহূর্ত থাকাটা ঠিক না। তাড়াতাড়ি গিয়ে,তানিয়াকে ডাকতে লাগলাম। কয়েকবার ডাক দিতেই,উঠে যায় তানিয়া। কিছু আর বলার সময় দেইনি। সোজা হাত ধরে নিয়ে এলাম জানালার কাছে। জানালা দিয়ে বের হয়ে দেখি,বাইকটা নেই। অবাক হলাম আবার, বাইক কোথায় গেল? মনে পড়েছে,আমি তো অতীতে এসেছি। নিশ্চয় বাইক বাসায়।

তানিয়ার হাত ধরে দৌড়ে দৌড়ে রাস্তায় চলে আসি। এরপর একটা সি এন জি দাড় করিয়ে, সেখানে উঠে পড়লাম। সি এন জি তে উঠতেই,তানিয়া জড়িয়ে ধরে আমাকে। মেয়েটা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। তাই হয়তো এমন করছে। আমিও তাকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছি। ২০ মিনিট পর বাসায় এসে পৌছাই। সি এন জি ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে,বাড়ির ভিতর চলে আসি। দরজায় কলিং বেল বাজাতেই আম্মু দরজা খোলে। আমাকে রক্তমাখা দেখে ভয় পেয়ে যায় আম্মু। আমি দ্রুত বাসায় ঢুকে দরজটা বন্ধ করে ফেলি। আমার সাথে তানিয়াকে দেখে সবাই খুশি হলেও, আমাকে দেখে সবাই টেনশনে পড়ে যায়। আম্মু আমাকে জিজ্ঞাস করে।

– কিরে,তোর এই অবস্থা কেন?
– দেখলাম রাস্তার পাশ থেকে তানিয়াকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের পিছু নিতে নিতে চলে যাই আমি তাদের বাসায়। ওখানে ওরা তানিয়াকে রেপ করতে যাচ্ছিলো । এরপর আমি তানিয়াকে বাচাতে গিয়ে, ওদের খুন করে ফেলেছি।
– হায় খোদা। কি বলিস। কেও দেখেনি?
– না। এখন বেশি কথা বলো না। তানিয়ার আম্মুকে কল দিয়ে বলো, তাকে নিয়ে যেতে।আমি ফ্রেশ হতে গেলাম।

কোনোভাবে কথা কাটিয়ে চলে এসেছি রুমে। বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে,বের হয়ে এসেছি। রুমে বসে বসে চিন্তা করছি। এইটা কিভাবে সম্ভব হলো। আমি অতীতে এসে ভবিষ্যৎ পাল্টে দিয়েছি? ভাবতেই কেমন জেনো গাঁ শিরশির করে উঠে। বিছানা থেকে উঠতে যাবো,তখনি শুনতে পেলাম শিশের শব্দ। একদম সেম শব্দ। যে আওয়াজ আমি জঙ্গলে শুনেছি,ঠিক তেমনি। সুরটা আসছে ব্যলকনির দিক থেকে। তবে কি ব্যলকনিতে কেও আছে?। আমি ধীরে ধীরে ব্যকনির দিকে এগুতে লাগলাম। ব্যলকনির দরজায় হাত দিতেই,শিশ বন্ধ হয়ে যায়। আমিও থেমে গেলাম। ভাবছি দরজা কি খুলবো?খোলেই দেখি কি হয়। দরজা খোলে ব্যলকনিতে এসে দেখি, নিছে সে বইটা পড়ে আছে। চোখ কপালে উঠে যায় আমার। বইটা আমার পিছু নিতে নিতে বাসায় চলে এসেছে? এখন কি হবে…? কি করবো আমি এই বইটার।

তবে বইটার অনেক শক্তি আছে। এই বই দিয়ে আমি অনেক কিছু করতে পারবো। কোনো ক্ষতি তো হচ্ছেনা। তাই আর না ভেবে,সোজা গিয়ে বইটা নিয়ে নিলাম। আবার ফিরে এলাম রুমে। টেবিলে বসে বইটা সামনে রেখেছি। কিন্তু এই ব্যবহার করবো কিভাবে? তখন তো কি থেকে কি হয়ে গেছিলো বুঝতে পারিনি। এখন কি আবার সে ভয়ংকর হাত বের হবে? যদি বের হয়,তবে কি আমি আবার অতীতে চলে যাবো? না,সাবধানে করতে হবে। বইটা খোলার সাথে সাথে পিছনে চলে যাবো। যাতে কোনো হাত আমাকে ধরতে না পারে। যে ভাবা সেই কাজ। বইটা খোলেই ৩-৪ হাত পিছু চলে এসেছি। কিন্তু এবার আর কোনো হাত বের হয়নি। বইয়ের উপরে বাংলা ভাষায় কি যেনো লেখা আছে। তারমানে বইটা সব সময় কাজ করেনা। এই লেখাগুলো পড়ে হয়তো আমি জানতে পারবো,এই বইয়ের ব্যবহারবিধি। সোজা গিয়ে আবার চেয়ারে বসলাম। লেখাগুলো পড়া শুরু করতে যাবো,ঠিক তখনি দুইটা হাত বের হয়ে আসে। আগের বার ছিলো একটা হাত।এবার দুইটা। বের হয়েই আমার মুখ চেপে ধরে ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । একটু পরই আমাকে বইটি নিয়ে যাবে।কিন্তু কোথায়…?

চলবে…?

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব-০২)

লেখক- Riaz Raj

[ বইটি কি চায়। এমন অলৌকিক শক্তি কিভাবে এলো এই বইয়ে। জানতে হলে অপেক্ষা করুন নেক্সট পার্টের জন্য। এখন আপনার কি মনে হয়,রিয়াজ সে বই নিয়ে যাবে মৃত্যুর দেশে? নাকি আবার নিরিবিলি হাউজে? নাকি অন্য কোথাও। গিয়েও বা রিয়াজ কি করবে? যদি সে মারা যায়?

কি মনে হয়…? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here