#বিষ_করেছি_পান(৭)
(কপি করা নিষেধ)
সবাই বাসে উঠলো। এত্তো মানুষ!ছুটিদের সিট ছাড়া কোন সিট ই খালি নেই। অথচ বাস এসে থেমেছে দু মিনিট হলো। বাঁধন সবাইকে আরামছে বসিয়ে দিলো। ইয়াং বড় ছেলে থাকলে দায়িত্ব সব তাকেই নিতে হয়। ছুটির পাশের জানালার সাইডে একটা মেয়ে বসেছে। কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিব্যি গান শুনছে। ছুটির দমবন্ধ লাগছে। বাসটা ছাড়েও না। জানালার ধারের সিট ছাড়া ছুটি একদমি বসতে পারেনা। বাধ্য হয়ে ছুটি মেয়েটাকে ডাকলো। কিন্তু আশানুরূপ কোন সাড়া পেলো না। একচোখ খুলে কটকটে গলায় বলল,
— কি প্রব্লেম? যত্তসব!
ছুটি হতভম্ব। দুবার নয় ডাক ই দিয়েছে তাতেই যত্তসব হয়ে গেলো? এটা মেয়ে নাকি দাজ্জাল দাদীমা! বাস যেন আজ ছাড়বেই না। ভিতরের পরিবেশ দেখতেই ছুটির মাথা ব্যথা শুরু হলো। কয়েকজন হাঁসমুরগির খাঁচা নিয়ে বসেছে মাঝখানের হাঁটা চলার রাস্তায়। নিচে বসলে মনে হয় ভাড়াটা একটু কম দিতে হয়। রিতীর চোখে চোখ পড়লো। রিতী ভ্রু নাড়াতেই ছুটি মাথা নাড়িয়ে কিছুনা বুঝালো। রিতী তবুও বুঝে গেলো। হাত তুলে বললো,
— একটু ম্যানেজ করে নে।
ছুটি চোখ রাঙালো।
— পারলে তুমি উঠে আসো।
রিতী উঠলোনা। সে উঠবে না ছুটি ভালো করেই জানে। এইযে বাস ছাড়বে .. জানালা দিয়ে হাওয়া আসবে তারপর বাবার কাঁধে মাথা রেখে রিতী আরামছে ঘুমিয়ে পড়বে। যদি তাকে এই সুবিধা টুকু না দেওয়া হয় তাহলে সারা রাস্তা বমি করতে করতে পুরো বাস নোংরা করবে। বাস জার্নি এর জন্য রিতীর বড্ড খারাপ লাগে। ছুটি হাঁসফাঁস করতে লাগলো।ড্রাইভারের পাশে দুটো সিট ফাঁকা দেখা গেলো। ওখানে বসলেও তো জানালাটা খুলা যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ছুটি উঠে গিয়ে ড্রাইভারের পাশে জানালার ধারে বসলো। জানালাটা খুলে দিতেই শরীর জুড়ে ঠান্ডা হাওয়া বইয়ে দিলো। বিষয়টা প্রত্যেকেই খেয়াল করলো। ছানোয়ার বলে উঠলো,
— ছুটি ওখানে গিয়েছো কেনো? সিটে এসে বসো।
— এখানে বাতাস বাবা।
— এইতো কিছুক্ষন। বাস ছেড়ে দিবে। নিজের সিটে এসে বসো।
ছুটি এলোনা। চুপ করে সেখানেই বসে রইলো। বীনা ঘাড় ঘুরিয়ে কানে হেডফোন গুঁজা মেয়েটিকে বললো,
— আপনি একটু জানালার পাশে বসতে দিননা ছুটিকে। মেয়েটা জানালার পাশে ছাড়া বসতে পারেনা।
মেয়েটা মুচকি হাসলো। বাহ! কি সুন্দর হাসি! এক হাসিতেই বীনার মন ভালো হয়ে গেলো। মেয়েটা মিস্টি কন্ঠে বললো,
— একচুয়েলি আন্টি আমিও জানালার পাশ ছাড়া বসতে পারিনা।
— ওহ আচ্ছা।
বাঁধন ছুটিকে একবার দেখলো। জানালার বাইরে মুখ দিয়ে বাইরের মানুষ দেখতে ব্যস্ত। বাঁধন জোরে নাক টানলো। ফোনটা পকেটে ডুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
— মা। তুমি এপাশটায় এসে বসো। ছুটিকে ওপাশটায় বসতে দাও। আমি ছুটির সিটে গিয়ে বসছি।
বীনা সাথে সাথে আপত্তি করে বসলো।
— না না তোর যেতে হবেনা। তুই এক কাজ কর বুঝলি?
— কি করবো?
বীনা এদিক সেদিক তাকালো। কী একটা ভাবলো। তারপর বললো,
— আমিই পেছনে যাচ্ছি। তুই বোস।
— তুমি কেনো উঠবে? আমিই যাচ্ছি। তুমি বসো।
— আমি গেলে কি সমস্যা?
— আরে আমি গেলেই কি সমস্যা? এই ছুটি এদিকে আয়।
বাঁধন বলতে বলতেই উঁকি দিলো । ছুটির সীটের পাশে ফর্সা সুন্দর গড়নের একটা মিস্টি মেয়ে বসে আছে। লম্বা চুল গুলো ব্রাউন কালার করাতে বডির সাথে গর্জিয়াস লাগছে। মুখে সুন্দর করে মেকাব দেওয়া। বাঁধনের মনে হলো ছোট খাটো এক হার্টবিট মিস করলো। এর জন্যই যে মা সেখানে যেতে দিচ্ছেনা সেটা বেশ বুঝতে পারছে। ইতোমধ্যে বীনাও সিট ছেড়ে নেমে গেছে। দেখতে দেখতেই মেয়েটার পাশে গিয়ে বসেও পড়েছে। মাকে মেয়েটার পাশে দেখে বাঁধনের যেনো হুস ফিরলো।
— এই ছুটি এদিকে আয়।
বলেই ডেকে উঠলো। ছুটি বসেই জানালাটা বড় করে খুলে দিলো। চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। বাস ছেড়ে দিলো। এখানে হাঁসের প্যাক প্যাক শব্দটা অতোটা আসছে না। যা আসছে সব বাঁধনের শার্টে লাগানো পারফিউমের স্মেল আর বাস চলার শব্দ। ছুটির ভালো লাগছে। ভীষণ ভালো লাগছে। বাঁধন ছুটিকে এভাবে শ্বাস নিতে আর ছাড়তে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— বেশী খারাপ লাগছে?
ছুটি মুচকি হাসলো। চোখ দুটো বন্ধ করে বললো,
— ভীষণ খারাপ লাগছে।
বাঁধন নড়ে চড়ে বসলো। ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
— এরপর আর তোদের নিয়ে বাসে জার্নি করা যাবেনা বুঝছিস? ট্রেইনে যাতায়াত করতে হবে।
— শেরপুরে রেইল স্ট্রেশন পাবে কই?
— এখনো হয়নি না? তাহলে প্রাইভেট কারে করে যেতে হবে।
— প্রাইভেট কারে ফেমেলির সাথে যাওয়া আরো প্যারা বাঁধন ভাই। সবাই গাদা গাদা! একজনের উপর আরেকজন।
— ঐ একটু হয়েই থাকে। আরাম করে বসলেই হলো। ফেমেলি মেম্বারস ছাড়া কি আর ভালোলাগে?
— আমরা কি প্রাইভেট কার করে বউ আনতে যাবো বাঁধন ভাই?
— না । হাইস করে যাবো। তোর যদি বেশি খারাপ লাগে কাঁধে মাথা রাখ। একটা ঘুম দে দেখবি পৌঁছে গেছিস।
— ঠিক আছি।
ছুটি বাইরের দিকে মুখ রাখে। সে যদি ঘুমোয় তাহলে শুনশান মায়াময় রাস্তাগুলো দেখবে কে? একটু পর পর বাঁধন উঁকি দিচ্ছে। মাকে জিজ্ঞেস করছে — ঠিক আছো? বীনার মুখে স্পষ্ট হাসি। সুন্দরী মেয়েটার সাথে বেশ ভাব জমে গেছে তার। ছুটি ডেকে উঠে,
— বাঁধন ভাই?
— বল? মাথা ব্যথা করছে?
— হুম। কাকীমনির পাশে দেখো মেয়েটা বসেছে।
— হুম। কি হয়েছে?
— আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
— কেনো?
— আমি একটু দুবার আপু আপু বলে ডেকেছিলাম যাতে তার সিটটা আমাকে দেয়। কিছু না বলতেই এমন ধমক দিয়েছে যে আমার কান্না চলে আসছিলো। বড্ড কর্কশ গলায় কথা বলে। আমাকে বলে,কি প্রব্লেম?যত্তসব!
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে ফেলে। মাথা নিচু করে এনে বলে,
— এর জন্যই উঠে গিয়েছিলি ঐখানে?
— হুম।
— আগে বলবিনা? কার কি প্রব্লেম দেখে নিতাম। ছোট বাচ্চাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ডিঙ্গি মেয়ে হয়েও জানেনা।
ছুটি মুচকি হাসে। বাঁধনের কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে মনে মনে স্বগোক্তি করে,
— ছুটি আর ছোট নেই বাঁধন ভাই। আপনার কোলে হাসতে খেলতেই বড় হয়ে গেলাম। আপনার চোখেই পড়লোনা। কোন দিনই কি পড়বেনা?
প্রশ্নটা থেকেই যায়। বাঁধন আদরে ছুটির মাথাটা ভালোভাবে কাঁধে বসিয়ে নেয়। একহাতে ছুটির কাধ চেপে বলে,
— এবার ঘুমা।
একতলা বিশালাকার বাড়ি। এ বাড়িতে বড় মানুষ কম বাচ্চাই বেশি। পুচকে গুলো সব বাঁধনের কোলে উঠে বসেছে। কেউ কেউ হাত ঝুলছে। কেউ কেউ আবার গলা ধরে ঝুলছে।আর একটু বড়রা বাঁধনকে ঘিরে ধরেছে। ঝিমাকে দেখেই মেয়েগুলো বাঁধন কে ছেড়ে দিলো। ঝিমার সাথে ছুটিকে দেখে আরো হৈ হৈ করে উঠলো। ঝিমা রিতী ছুটি বসার রুমে বসেই ঝিমার কাজিন গুলোর সাথে এ গল্প ও গল্প করতে লাগলো। সকাল হয়ে গেলো সেখানে বসেই। ফজরের আযানের সাথে সাথে নামাজ পড়তে গেলো সবাই। এ বাড়িতে ছোট বড় সবাই নামাজ পড়ে। নামাজের আলাদা ঘর ও রয়েছে। মনে হয় এক টুকরো মসজিদ। নামাজ শেষে ঘন্টা দুই তিনেক সবাই ঘুমোলো। লেবু মামার দেখা নেই। তাকে খুজতে খুঁজতেই বাঁধন মেয়েদের রুমে এসে ঢুকলো । ঝিমা বসে বসে ঝিমুচ্ছে। বাঁধন ঝিমাকে বললো,
— শুয়ে শুয়ে ঘুমা। বসে বসে ঝিমুনোর কি মানে? যে গাদাগাদি! একটার উপর আরেকটা টাস করে পড়বি আর মাথা ফাটাবি।
ঝিমা ছুটিকে ধাক্কাতে লাগলো।
— ঐ ছুটি সর। সর শুইতে দে।
ছুটির কোন হেল দোল নেই। টিপ শুনতে পেয়ে একটু জায়গা করে দিলো। ঝিমা সেখানেই শরীরটা ছেড়ে দিলো। মাথাটা গিয়ে লাগলো ছুটির মাথায়। সাথে সাথেই ছুটি চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। ও বাবা গো!ও মাগো! বলতে বলতেই কপাল সহ মাথা ঘসতে লাগলো। সবটাই বাঁধনের চোখের সামনে ঘটলো। তমাল হুট করে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ড্রয়িং রুমে যেতে যেতে চিৎকার করতে লাগলো — ও বাবা গো! ও মাগো! ছোটাপু দুইসিডেন্ট করলো ।ও বাবা গো! ও মাগো! ছোটাপু দুইসিডেন্ট করলো ।
চলবে,
লাবিবা_তানহা_এলিজা~
ছবিয়াল: তরু