বিষ_করেছি_পান(৯)

0
621

#বিষ_করেছি_পান(৯)

(কপি করা নিষেধ)
নতুন বউকে ক্ষেপিয়ে চলছে লেবুর বন্ধুরা। চমচম ভাবী চমচম ভাবী বলে মুখে ফেন তুলে ফেলছে। নতুন বউ লজ্জায় মাথা নীচু করে আছে। মাঝে মাঝে চোখ ও বন্ধ করে নিচ্ছে। বাঁধনের নানুর ধমকে বাঁদর বন্ধু গুলো নতুন বউয়ের ধার ছাড়ে। ডালা ভর্তি ফুল হাতে দিয়ে বাসর সাজাতে পাঠাতে হয়। আগে থেকেই বাসর সাজাচ্ছে বাঁধন আর লেবু। নিজের বাসর নিজের হাতে সাজাচ্ছে। মনে তার হাজার হাজার লাড্ডু ফুটছে। ঠোঁটের কোনে মিটি মিটি হাসি। বাদর বন্ধু গুলো এসেই লেবুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একের পর এক অসভ্য কথায় মজা নিতে থাকে। বাঁধন সেদিকে কান দিচ্ছে না। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। লেবুর বন্ধুরা গালি খেয়ে ঘর সাজানো কমপ্লিট করার কাজে লেগে পড়ে। বাঁধন কে দেখে একটু আটকে যায়। বাঁধন যে এতোক্ষণ এখানে ছিলো তারা কেউ খেয়াল ই করেনি। একজন বাঁধনের দিকে তাকিয়ে হৈ হৈ করে উঠে।
— বাঁধন নাকি এটা?
— জি মামা। ভালো আছেন?
— আলহামদুলিল্লাহ।আমাদের বাঁধন তো লেবু শালার জন্য ই আটকে ছিলো। এবার তাহলে নেক্সট বাঁধনের বিয়ে খাচ্ছি আমরা।
বাঁধন হালকা লজ্জা পায়। মুচকি হেসে কাজ চালিয়ে যায়।
— তা আর বলতে! এবার আমাদের বাঁধনের পালা। তা মামা পছন্দ টছন্দ আছে নাকি? ওয়েট ওয়েট আবার এটা বলোনাযে তুমিও তোমার মামার মতো কাজ করে বসে আছো। ইয়াং ম্যান তোমার মতো হ্যান্ডসাম বয় আবশ্যই গার্লফ্রেন্ড আছে।
— না মামা। তেমন কিছু না।
— আরে লজ্জা পেও না। মামা হলেও আমরা তো বন্ধুর মতোই। বলে ফেলো হেল্প টেল্প যা লাগে সব করবো।
— না মামা।বাড়ি থেকে যা বলবে তাই। আমি আপনাদের উপর ভরসা করেই আছি।
— তাই নাকি?বেশ বেশ। আজকাল তো তোমার মতো ছেলেই পাওয়া যায়না। তোমাকে দেখে কেউই বিশ্বাস করবে না।
লেবু মামা পাঞ্জাবীর কলার উঁচিয়ে ভাব নিয়ে বলে,
— কার ভাগিনা দেখতে হবেনা? লেবুর ভাগিনার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র।
— বিয়া করিয়া তুমার মুখের বুলি ফুটছে তাইনারে শালা?
লেবু মামা চুপ। ঘর জুড়ে এক হাসির বন্যা বয়ে গেলো। বাঁধন কাজ সেরে লজ্জায় মুখ ঢেকেই বেরিয়ে এলো।

বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য লেবুকে ঠেলছে তার বন্ধুরা। লেবু উঠছেনা। কেনো উঠছেনা তাও তিনি বলছেন না। একসময় বীনার ধমকে উঠে দাঁড়ালো। আমতা আমতা করে বললো,
— আপা। ঐ ঘরে মেয়ের দল আছে।
— তো কি হয়েছে?টাকা দিবি ঘরে ঢুকবি? তোর বউ কতক্ষন অপেক্ষা করবো?
— আপা ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি কবরে এটা আমি নিশ্চিত।
বীনা একচোখ কুঁচকে তাকালো। সীনা উঁচু করে বললো,
— ছুটি ঝিমারে নিয়া আমি বেরিয়ে যাবো। তুই যা এবার ঘরে যা।
বন্ধুরা লেবুকে ধরে বেঁধে নিয়ে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো। মেয়েরা হাত পাতলো। পাঁচ হাজার টাকা না দিলে ঘরে ঢুকা নিষেধ। লেবু ধমকে উঠলো,
— চুপ কর। কি এমন সাজিয়েছিস যে পাঁচ হাজার টাকা দিবো? যা বের হ।
— তিন হাজার টাকার ফুল কিনে আনছে বাঁধন ভাই। পাঁচ হাজার থেকে তিন হাজার তো তাকেই দিতে হবে।বাকি দুই হাজার আমরা এতো গুলো ছেলে মেয়ে কয়টাকা করে পরবে ভাগে একবার চিন্তা করো। তাও তো কম হয়ূ গেছে। দশ হাজার টাকা দাবী করা উচিত ছিলো।
— মামা বাড়ি আবদার নাকি?
— মামার কাছেই তো আবদার।
লেবু এতো টাকা দিবে না। মেয়েরাও ছাড়বে না। দশমিনিট ধরে এই তর্ক চলছে। হটাৎ নতুন বউয়ের গলা পাওয়া গেলো। রিনরিনি গলায় ধ্বনিত হলো,
‘ দিয়ে দেন না টাকাটা। ওরা এতো কষ্ট করে সাজালো।’
তর্ক থেমে গেলো। লেবু মামা পকেট থেকে চারটা হাজার টাকার নোট বের করে ঝিমার হাতে গুঁজে দিলো। আর একটা নোট দাবী জানালো কিন্তু পাওয়া গেলোনা। মেয়েরা মুখ ফুলিয়েই লেবুকে ঘরে ঢুকতে দিলো। বীনা এসে সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আসার সময় ছুটি ঝিমাকে নিজের সাথে নিয়ে এলো। আজ আরো বেশি ভিড়। ছেলেরা মাদুর কাথা নিয়ে ছাদে চলে গেলো। আজ ছাদেই রাত কাটাবে তারা। রুম্পা ছুটি কে নিয়ে একরুমে একটু থাকার জায়গা করে নিলো। তখনি ঝিমা এসে বায়না ধরলো আজকেও তারা একসাথে ঘুমোবে। রুম্পা বললো,
— সেখানেতো জায়গা নেই।
— জায়গা করে নিবো। আমরা সব ভাই বোনেরা একসাথে ঘুমোবো।
ছুটিকে নিয়ে ঝিমা দৌড় দিলো। নিজেদের বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে দরজা দিলো। কাজিনরা মিলে মুখ চেপে এক মিনিট চাপা হাসলো। তখনি তাদের ফোনের স্কিন অন হয়ে গেলো। গুনে গুনে বারোটা মাথা এক হয়ে গেলো।
এ ঘরের আলমারিতে এক্সটা বালিশ আছে। ড্রয়িংরুমে চারটা বালিশ লাগবে। বীনা এসেছে বালিশ নিতে।দরজা বন্ধ দেখে ধাক্কা দেয়।রুম্পা ও ঘর থেকে বলে,
–ওখানে তো ছেলে মেয়েরা ঘুমাতে গেলো।
— তাহলে দরজা দিবে কেনো?
— কিজানি কেনো দিবে দরজা। এই ছুটি…দরজা খুল… ঘুমিয়ে গেলি? ছুটি?ঝিমা?
কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। বীনার এবার ব্যপারটা কেমন জানি লাগে। উত্তর পাশের জানালা দিয়ে উকি দিতেই দেখে সবগুলো মিলে মাথা এক করে ফোনে কি যেনো দেখছে। কিত কিত করে হাসির আওয়াজ ও আসছে। বীনা এবার জোরে ঝিমা বলে চিল্লিয়ে উঠে ‌। মাথাগুলো মুহুর্তেই ছন্ন বিছিন্ন হয়ে যায়। দরজা খুল বলার সাথে সাথেই ঝিমা হুড়মুড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দেয়। রুম্পা বীনা ঝড়ের বেগে রুমে ঢুকে খপ করে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ফোনে এখনো ভিডিও চলছে। ভিডিও বললে ভুল হবে। ভিডিও কল চলছে। লেবু মামা আর চমচম মামী হাত ধরাধরি করে বসে গল্প করছে। কয়েক সেকেন্ড পর পর লেবুমামা চমচম মামীর গাল টেনে দিচ্ছে। আবার মুখ থেকে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। রুম্পার চোখ কপালে উঠে গেছে। ভয়ানক একটা ধমক দেয়। সবগুলো একসাথে কাপাকাপি অবস্থা। বীনা হুংকার দিয়ে বলে,
–কে আছে লেবুর রুমে। পাজির হাড্ডি দুটো তো এখানেই আছে।
রুম্পা বলে,
— এই তোরা সবাই একসাথে রিতী কৈ রে?রিতী ? লেবুর রুমে তাইনা?
ছুটি মিন মিনিয়ে বলে,
— আমরা কিছু জানিনা।
— জানস নাতো কে তোদের ভিডিও কলে দেখাচ্ছে?
বীনা কথা না বাড়িয়ে লেবুমামার রুমের দিকে ছুটে। উঁচু গলায় কথা বলায় বাড়ির সবাই আড়মোড়া ঘুম ছেড়ে উঠে এসেছে। বীনা লেবুর রুমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে,
— এই লেবু দরজা খুল। তাড়াতাড়ি দরজা খুল।
লেবু মাত্রই নতুন বউকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েছিলো বীনার ডাকে থতমত খেয়ে গেলো। বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপা ডাকতেছো কে?
— দরজা খুল তাড়াতাড়ি।
— কি হয়ছে বলবাতো।
— সাংঘাতিক ঘটনা ঘটছে। দরজা খুল।
— আমার বাসর রাতেই তোমাদের সাংঘাতিক ঘটনা ঘটতে হলো। তোমরা এতোজন আছো সামাল দাও।আমার এতো বছর পরে বিয়ে করা বউটার সাথে শান্তিতে সময় কাটাবো তারো উপায় নাই।
— তুই যদি এখন দরজা না খুলস তোর বাসর লাইফ টেলিকাস্ট দেখাবো সবাইকে এই আমি বলে দিলাম।
লেবু দরজা খুললো। বাড়ি সুদ্ধ মানুষ কে তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে উঠলো। আতঙ্ক নিয়ে বললো,
— আপা!
— রিতী কই?
— নাই?
— তোর রুমেই আছে। সর‌ সামনে থেকে।
লেবু সরে দাড়াতেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে। এরকম পরিস্থিতিতে নতুন বউ ভড়কে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে ঘরের এককোণে গিয়ে দাঁড়ায়। রুমে চিরুনি অভিযান চালিয়ে রিতীকে পাওয়া যায় পর্দার আড়ালে সেন্টার টেবিলের নিচে । ধরা পড়ে রিতী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাহস নিয়ে আর চোখে তাকাতেই দেখে সব গুলো চোখ তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লেবুর মেজাজ ফরটি ফর খেয়ে যায়। তর্জনী তুলে শাসিয়ে বলে,
— তুই এরকমটা করবি আমি ভাবতে পারিনি। বড় হয়ে ছোটদের সাদ ধরস? মনটা চায়তেছে থাপ্রিয়ে দাত ফেলে দেই।
আসাদুজ্জামান শালার কথায় খেক করে উঠে।
— থাপ্রানো তো তোমাকে উচিত। শালা হাবলার নানা। ঘরে কেউ আছে কিনা তা খোঁজ না করেই তুমি বাসর শুরু করে দিয়েছো। আজ রিতী ছিলো বলেই তো রক্ষা যদি তোমার কোন বন্ধুরা থাকতো তখন? বেটা আহম্মক!
— ঐ তুমি আমার ভাইকে গালি দিচ্ছো কেনো? সে কি করে জানবে এরকম কিছু হবে?
— ঘরে কেউ থাকলে নিঃশ্বাসের শব্দেই বুঝা যায়। আর এতো রিতীমতো ফোন তুলে ভিডিও করছে। সেটাও কি চোখে পড়লো না?
লেবু রিতীর দিক ছুটে যায়,
— ব্যাক্কেলে মেয়ে? কে বলেছে তোকে এমন করতে? ছোটদের সাধ ধরেছিস তাইনা?
আসাদুজ্জামান বলে,
— আহ! ছোট মানুষ ভুল করেছে। যা তো মা। এখান থেকে যা।
রিতী এক দৌড়ে ঘর ত্যাগ করে। শোবার রুমে যাবার সময় ছুটির গালে থাপ্পড় মারতে কোন কার্পন্য করেনা। সবাই বুঝে যায় এসব কার কাজ। রিতী কাথা মোড়া দিয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে পড়ে। লজ্জায় চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জীবনে বেঁচে থাকতে আর শয়তান গুলোর কথা কানে তুলবেনা। ঢের শিক্ষা হয়েছে।

পরদিন সকালের নাস্তা করতে গিয়ে রিতী মাথা নিচু করে থাকে। কেউ কেউ তার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। তো কেউ কেউ এমন ভাবে তাকাচ্ছে যে এইটা আবার কে?এখনো এখানে কি করে? লজ্জা শরম খাওয়া মেয়ে। রিতী ধীরে ধীরে গিয়ে বাঁধনের পাশে গিয়ে বসে। ব্রেকফাস্টে রুটি আর গরুর নিহারি করা হয়েছে। রিতীর থেকে নিহারীর বাটিটা একটু দূরে। হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে বাঁধন থামিয়ে দেয়।বাটিটা নিজেই রিতীর দিকে এগিয়ে দেয়। বাঁধন খেতে খেতেই লো ভয়েজে বলে,
— মাথা নিচু করে আছিস কেনো?
— লজ্জা লাগছে বাঁধন ভাই।
— বাসর দেখার খুব শখ বুঝি তোর?
— বাঁধন ভাই তুমিও?
— বুঝদার হলে জিন্দাগিতে আর এরকম কাজ করবিনা। আর যদি বেশি শখ থাকে তো বলিস। পোলাপান ভাই ভাবীর বাসরে ঢুকবে। তা না মামার বাসরে ঢুকছে! এই শিক্ষা দিলাম এদের? কি লজ্জা কি লজ্জা! আমার তো নাক কাটা যাওয়া উচিত।
রিতীর লজ্জায় মরে যাবার অবস্থা। বাঁধন ভাইও এভাবে লজ্জা দিচ্ছে? বাঁধন ভাই! প্লেট খানা নিয়ে রিতী সুর সুর করে সেখান থেকে উঠে চলে যায়।

চলবে,
লাবিবা_তানহা_এলিজা~

ছবিয়াল: তরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here