রোদেলা,পর্ব: ৫৪

0
829

#রোদেলা,পর্ব: ৫৪
লেখা: #মাহাবুবা_মিতু

আজ বড় মামার কুলখানি ছিলো। আত্নীয় স্বজন সকলেই এসেছেন। পুরো বাড়িটা গমগম করছে মানুষে। খুব সম্ভবতঃ এটাই এই বাড়ির সর্বশেষ সমাজিক অনুষ্ঠান এবং সকল আত্নীয়দের একত্র হওয়া। কারন আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই বাড়িটা খালি করে দিতে হবে।

ছোট মামা বাড়িটা এইখানকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তি যিনি তার শ্যালকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন । তিনি ছোট মামার বাল্য বন্ধু। এটাও তার একটা ট্রিক্স। এমন লোকের কাছে বিক্রি করেছেন যাতে সহজেই তারা বাড়িটাকে দখল করতে পারে প্রভাব খাটিয়ে । পুকুর সুদ্ধ এ বাড়িটা বিক্রি করেছেন মোটা দরে। সেই বিক্রির টাকার একটা অংশ ভাইয়ের কুলখানিতে দিতে বলেছেন তাদেরকে। তারা ছোট মামার পক্ষে টাকাটা দিয়েছেন বড় মামীর হাতে।

বড় মামী কেমন যেন হয়ে গেছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কোন ঘোরের মধ্যে আছেন যেন। কি হচ্ছে কি হতে যাচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারছেন না হয়তো…..

লোকটা টাকাটা দিলো, আর উনি সেটা নিয়ে নিলেন। এ কাজটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। তিনি এ টাকা কখনোই নিতেন না যদি তিনি স্বাভাবিক থাকতেন। ভাই বেঁচে থাকতে তার চিকিৎসার জন্য একটা কানা কঁড়িও দেয়নি যে ভাই, সে কি না কুলখানীতে ৫০,০০০ টাকা পাঠালো……
আর তিনি তা নিয়েও নিলেন….

নাতাশা যখন জানলো কথাটা, খুব রাগ করলো মা’র সাথে, কেন ঐ মানুষটার দেয়া টাকা তিনি গ্রহণ করলেন। তিনি কিছুই বলেন নি, শুধু আহত চোখে চেয়ে ছিলেন মেয়ের দিকে। যেন নাতাশা কোন প্রাচীন ভাষায় কথাগুলো বলছে, আর সেগুলো তার বোধগম্য হচ্ছে না……
ঠিক এ ঘটনায়ই তার অস্বাভাবিকতা প্রথম সবার দৃষ্টিতে এলো….

নাসিমা নাতাশাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেলে নাতাশা কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পরে। এ টাকা আমি ফেরত দিবো, আমার মা রাখবে না এ টাকা। এ পরিবারের উপর কোন মানুষের অভিশাপ আছে ফুফু, তা না হলে কেন এমন হবে…, বলেই ফুপুর বুকে প্রথমবারের মতো আছরে পরে নাতাশা। ফুফুও কাঁদতে কাঁদতে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেন ওর মাথায়। তার ও কি শোক কম…..

বড় ভাইয়ের সাথে বয়সের ফারাক প্রায় দশ বছর হলেও পিঠা-পিঠি ভাইবোন হওয়ায় সম্পর্ক ছিলো সবার চেয়ে গাঢ়। বাবা মারা যাবার পর এই ভাই তাদের সকলের দায়িত্ব নিয়েছেন, বড় করেছেন, বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার কি করুন পরিনতি হলো শেষে। সবার এমন একটা ভাব যেন সবার প্রতি তার যেটা ছিলো সেটা তার দায়িত্ব, আর ছোট হিসেবে তা পাওয়ার অধিকার ছিলো তাদের সবার। কিন্তু তার প্রতি কর্তব্য…….
সেটার কথা যেন কারোরই মনে নেই।

ভোগবাদী জীবনের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে এ চিত্রটি। একই বাবার ঘরে জন্মানো ভাইবোন কে কেমন আছে কোন খবর কারোরই নেই… কোন ভাইয়ের পাঁচ তলা বাড়ি তো আরেক ভাই দারওয়ান….. এ চিত্রটি যেন বর্তমান সময়েই প্রতিচ্ছবি। কারো কষ্টে ব্যাথিত হওয়াটা আমরা ভুলে যাচ্ছি ক্রমশ। আমরা যান্ত্রিক দুনিয়ায় প্রবেশ করছি, কিন্তু বুঝতেও পারছি না কত গোপনে আমরা নিজেরাও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি সময়ের আবর্তনে….

নাসিমা যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে সব দিয়েছে ভাইকে কোন বোনই কিন্তু এমনি ভাবে এগিয়ে আসে নি। তারাও করেছে কিন্তু তা…..

তারা তাদের বুঝ বুঝে নিয়েছেন অনেক আগেই। তারাই হয়তো ঠিক ছিলো। নাসিমা ভুল, তাই তো কুলখানির শোকের চেয়ে নাসিমা এখন কোথায় দাঁড়াবে মেয়েটাকে নিয়ে তাই ভেবে বেশী চিন্তিত। সেই চিন্তা ভাইয়ের মৃত্যুর শোক ছাপিয়ে যাচ্ছে।

রোদেলা বলেছিলো এই বড় মামাই গলার কাঁটা হবে নাসিমার…. আজ কি তাই হলো তার সাথে….
আচ্ছা নাসিমা যা করেছে তা কি ভুল ছিলো…..

হয়তোবা ছিলো সেটা ভুল, নিজের ভাগের দোকান বিক্রি করে বাড়ি তৈরীতে টাকা দিয়ে দেয়া, নিজের অংশের জায়গা বিক্রি করেও একই কাজ করেছে নাসিমা। মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই হবে তার এই ভেবে। কিন্তু সেই বাড়ি বিক্রির টাকাটাও খরচ হলো তার ভাইয়ের চিকিৎসায়…..
একটা কথা আছে না- এক পাত্রে সব ডিম রাখতে নেই… নাসিমার ভুল সেখনেই, তিনি তার সবকিছু বড় ভাইয়ের হাতে সমর্পণ করেছেন।
রাতে যখন ঘুমোতে যায় নাসিমার কানে বড় মেয়ের সেই কথাগুলো কানে বাজতে থাকে। যেন কোন রেকর্ডারে কথাগুলো বাজছে….

কুলখানির পরদিন সকালেই নাতাশা কাকার টাকাটা ফেরত দিয়ে আসে। ওর মায়ের শরীর অনেক অসুস্থ, ডাক্তার দেখাতে হবে। ছেলে নিয়ে নাতাশার এখানে থাকা সম্ভব না, তার উপর এত দূর থেকে ঘন ঘন আসাও সম্ভব না এত ছোট বাচ্চা নিয়ে। তাই মাকে সাথে করে নিয়ে যায়। কয়েকদিন থাকুক মেয়ের কাছে….,

নাসিমা আর প্রিসিলাকেও সাথে যেতে অনুরোধ করে নাতাশা, কিন্তু তারা যায় না শেষ পর্যন্ত। ভাতিজির শ্বশুর বাড়ি। বলেই তো যাওয়া যায় না…

এই পুরো বাড়িটাতে তিনি তার প্রিসিলা ছাড়া তৃতীয় কেও নেই। সবাই যেন তাদেরকে ফেলে চলে গেলো এক এক করে। গতরাতে বোনেরা সবাই ফিরে গেছে নিজ নিজ সংসারে। সকালে আসবে বলে গিয়েছিলো। ফোন করে জানিয়েছে তারা আসতে পারছে না, হঠাৎ দু’জনেরই ভীষণ জরুরি কাজ পরে গিয়েছে। নাসিমা তাদেরকে বললো সমস্যা নেই, তোরা কাজ শেষ কর আগে ।

সন্ধ্যায় নাসিমার হঠাৎ বোনদের করা পেছনের একই রকম কিছু ঘটনা মনে পরে যায়। ওরা সবসময় নিজেদেরকে নিয়ে ব্যাস্ত। নাসিমার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। এত দাওয়াত, পিঠাপুলি তৈরী হতো এ বাড়িতে ওরা কখনোই সকাল সকাল এতো না। সব কাজ নাসিমাকে একাই করতে হতো, তারা সেজেগুজে দুপুরের দিকে এসে দুঃখ প্রকাশ করতো আর বলতো অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিভাবে দেড়ি হয়ে গেলো। কাজে সাহায্য করতে পারলো না, বোনের একা একা সব করতে হলো। কপট অনুশোচনা…..
এতেই খুশি নাসিমা…
বোনেরা কষ্ট বুঝেছে এতেই হবে…
সব সময় নিজেরটা রেখে পরের সুবিধা অসুবিধা, পরের সুখ দুঃখ এসব নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন তিনি। আর আজ…..
তিনি বড্ড একা, বড় নিঃসঙ্গ…..

এমন একলা নাসিমা কখোনোই ছিলো না, এতটা একাকিত্ব তাকে কখনোই গ্রাস করে নি। জীবণে অনেক ঝড় এসেছিলো, কিন্তু কখনো একাকিত্ব আসে নি, এবারকার মতো করে। নাতাশা ওর মাকে নিয়ে গেলো, বোনেরা ফিরে গেলো যে যার সংসারে…

—————

দিনগুলো দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। নাসিমার মনে হতে লাগলো কয়েকদিন ধরে যে যন্ত্রণা তিনি পাচ্ছেন তার চেয়ে মৃ*ত্যু হয়তো কম কষ্টের। তিনি যে মেয়েটাকে নিয়ে কোথাও ঘর নিবেন তার জন্য আর্থিক কিংবা মানসিক সাহস তার নেই। তার বোনের অবশ্য একটা ব্যাবস্থা ঠিক করে দিবে কিন্তু পেছনের সব ভেবে আর তাদের মনের কথা বুঝতে পেরে তার আর করো কাছ থেকে কিছু নিতে মন চাইছে না। ঋণের বোঝা কত ভারী হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, আর কারো কাছে তার প্রত্যাশা নেই, আবদার ও নেই। সেদিন বোনেরা পরদিন সকালো আসবে বলে গেলেও দুই বোনের একজনও আসেন নি….

তাদের একেক কাজ, নাসিমা যেন ধাক্কা খেয়েছিল, এত বড় বাড়িতে একা মেয়ে নিয়ে আছে। ওরা চাইলে এখানেই থাকতে পারতো কয়েকটা দিন। কিন্তু তারা সবার আগে প্রায়োরিটি দিয়েছেন নিজেদের সংসারের, নিজেদের সন্তানদের। রাতের বেলা খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে থাকে নাসিমা। সে কি করেছে……

নিজের সন্তান, সংসার, স্বামী কখনোই প্রায়োরিটিতে প্রথমে ছিলো না। যারা ছিলো তারা এক এক করে চলে গেছে ছেড়ে। নাসিমা আপনের থেকে পরকে নিয়ে মেতে ছিলো সারাটা জীবণ । ভেবেছে নিজের সন্তানেরা আর যাবে কই তাকে ছেড়ে….
বোনদের কাছে স্বামীর, মেয়েদের বদনাম, কটাক্ষ, করতো। দোষ গুলো তুলে তুলে ধরতো সমাজের কাছে। এমন ভাব যেন মেয়েকেও ছাড় দেন না তিনি। আর সারা জীবণ ভাইবোন ভাইবোন করে গেছেন। সবার বিপদে দৌড়ে গিয়েছেন, টাকাপয়সা দিয়ে হয়তো কিছু করতে পারেন নি তিনি, কিন্তু জান দিয়ে করেছেন সবাইকে….সারাটা জীবণ ভাইবোনের নামে তজবি জপে গেছেন। উঠতে বসতে খোঁটা দিয়েছেন স্বামী আর মেয়েদের কে তাদের বোনদের করা দয়ার ফিরিস্তি তুলে। যেন তারা কিছুই করে নি কারো জন্য, নিয়েই গেছেন সারাটা জীবণ। অথচ বোনদের জন্য নাসিমা, নাসিমার মেয়েরা যা করেছে তার মূল্য টাকার মানে হিসেব হবে না। বোনদের বিপদে আপদে, আসুখে বিসুখে, সুখে দুঃখে সব সময় পাশে ছিলেন ছায়ার মতো৷ তাদের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করেছেন সবসময়। কষ্ট ভাগ করে নিয়েছেন বিপদে, আর আজ….

নাসিমা তার ভুল বুঝেছিলো অনেক আগেই, কিন্তু না বোঝার ভান করতেন সবসময়। কারন তিনি যে ভুল তা স্বীকার করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। এটা যে কত ভয়ংকর একটা দিক মানুষের চরিত্রের..
ভুল করছেন জেনেও তা না বোঝার ভান করা। এবং ভুলকেই ঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু ভুল যে ভুলই তা সময় নাসিমাকে ঠিক হিসেব মিলিয়ে দেখিয়ে দিলো…

নাসিমার বুকটা পুড়ে। এমন ভুল যেন কেও না করে।
দুনিয়াকে খুশি করতে গিয়ে নিজের সংসারকে, মেয়েদেরকে, দাবার চাল বানিয়েছিলেন তিনি। খোলা বারান্দার মেঝেতে বসে কাঁদছেন তিনি। জীবণের কথা ভেবে, ভুলের কথা ভেবে…..

————-

আগামীকাল এই বাড়িটা ছেড়ে দিতে হবে, সবাই সেটা জানে, তবুও যেন কেও জানে না………

নাসিমা ঘুরে ঘুরে দেখে বাড়িটা, এই বাড়িটায় কেও এলে দেখতো কত যত্নে গড়া এর প্রতিটি কোণ। কত ভালোবাসায় গড়া এ বাড়িটা।

কৃষ্ণচূড়া…..
বাইরের মূল ফটক থেকে তাকালেই চোখে পরবে
শিউলী গাছ, আর নুড়িপাথরের সুন্দর সেই পথ, সেটা পৃথক করেছে ঘন সবুজ ঘাসের এই বিশাল জায়গাটাকে। এই যে নুড়িপাথরের পথ, যেটা মেইন গেট থেকে এসেছে, সেটা ধরে একটু এগিয়ে গেলে মূল বাড়ি।
সাদা রঙের দুতলা বাড়ি…। পুরোনো দিনের বাড়ি গুলো যেমন হতো আর কি। বিশাল ঘর, সিলিং সেই উঁচুতে…, সাদা শ্বেতপাথরের মেঝে। টানা খোলা বারান্দা, যাতে উপুড় হয়ে তার মা তাদের ভাইবোনদেরকে ডাকতেন খাওয়ার সময়…..
হাঁক দিতেন সবজি কিবা মাছ বিক্রি করতে আসা হকারদের। তখনো এই কাঁঠাল গাছটা এত বিশাল রূপ নেয় নি। ছোট্ট এ বাড়িটা তৈরী করতে তখনকার সময়ে অনেক খরচ হয়েছিল।

বাড়ির সামনে বিশাল কাঁঠাল গাছ। সময়ের বিবর্তনে যেটা বিশাল রূপ নিয়ে বাড়িটাকে যেন আগলে রেখেছে, যেন আড়াল করতে চাচ্ছে বাইরের লোকেদের দৃষ্টি থেকে। দুপাশে আগে জোড়া কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিলো, এখন একটা আছে, আরেকটা ম*রে গিয়েছে কোন এক কারনে। এ বাড়ি ভর্তি গাছ গাছালিতে, তবে তা বাড়ির সীমানা বরাবর।

নুড়িপাথরের পথটার দুই পাশেই খোলা জায়গা। মাঠের মতো, আগে যেখানে লোডশেডিং হলে সবাই একসাথে বসতো গল্প করতে। শীতের দিনে বনোভোজন, বিকেল হলে ব্যাডমিনন্টন খেলতো একপাশে একপাশে হয়তো মেয়েরা বউচি কিংবা কানামাছি খেলতো।

নুড়ি পাথরের এই পথটা ধরে একটু সামনে এগুলোই সেটা বেঁকে গিয়েছে বাড়িকে প্রদক্ষিণ করে। সে পথটা ধরে কেউ হাঁটলে চলে যাবে বাড়ির পেছনের পুকুরটায়,
ছোট্ট পুকুর…
বাড়ির মেয়েদের গোসল করার জন্য তৈরী করা হয়েছিলো এটা। অযত্নে সেটা দখল নিয়েছে কচুরিপানারা। সামনের কিছুটা অংশ উন্মুক্ত, সেটুকু দেখেই মনে পরে নাসিমার এটা তাদের বাড়ির পুকুর। কতদিন পর এদিকটায় এলেন তিনি….
অযত্নে এখানটায় আগাছায় ভরে গেছে।

ঘাট বাঁধানো সাদামাটা পুকুর হলেও এর সৌন্দর্য দেখবার মতো। কারন এর চারপাশে রয়েছে অনেক গাছ। অনেক আগে এখানে বাঁশ বন ছিলো, যখন এ বাড়িটা উন্মুক্ত ছিলো তখনকার কথা। মেয়েদের গোসল আড়াল করতেই বাঁশবন করোছিলেন নানা।

এ বাড়িটা বিশাল ছিলো একসময়। বিক্রি করতে করতে শেষে আজকের কৃষ্ণচূড়া বাউন্ডারির মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।

নাসিমা বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে পরলো, নুড়িপাথরের সেই পথে এগিয়ে গেলো আরো সামনে। হাতদিয়ে বাড়িটা ছুঁতে ছুঁতে। ও যেন বিদায় নিচ্ছে প্রতিটি ইট, পাথর আর বালুকণার কাছ থেকে। এ বাড়ি নিয়ে নাতাশা কিংবা ওর মায়ের তেমন কোন অনুভূতি আছে কি না তা জানে না নাসিমা। কখনো কথা হয় নি এ নিয়ে। তবে তিনি নিশ্চিত, তাদের অনুভূতি নাসিমার অনুভবকে ছাপিয়ে যাবে না….
কক্ষোনো, কোনদিনও…..

আজ সারাদিনে কেও তাদের খোঁজ নেয় নি। আগামীকাল চলে যাবেন তারা এ বাড়ি ছেড়ে।
রাতটা কোনমতে কাটুক…এসব আর ভাবতে চান না তিনি, যা হবে দেখা যাবে। সারাজীবন যে এত ভেবেছেন কি হয়েছে তার ফল। সেই তো জীবণ তাকে পথেই দাঁড় করিয়ে দিবে আগামীকাল…..
এসব ভেবেই কখন যেন ঘুমিয়ে পরেন নাসিমা….

ফজরের আজান শুনে ঘুম ভাঙে তার। নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান তিনি। আজ তওনি ঠিক বুঝেছেন তিনি ছাড়া যে আর কেউ নেই তাদের উদ্ধার করার। নামাজ শেষ হতেই বাইরের গেইটের কলিংবেলটা বেজে উঠে। ঘড়িতে চেয়ে দেখে সাড়ে ছয়টা বাজে… এত সকাল সকাল এসে পরলো লোকগুলো। মেয়েটার তো এখনো ঘুম ভাঙে নি।
দৌড়ে তিনি বারান্দায় গেলেন। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে দেখবার চেষ্টা করলেন কে এসেছে। না তারা না…. পরিচিত এক মুখ সেখানে দাঁড়িয়ে। যে তাদের পাশে আছে ছায়ার মতো… তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন এই ছায়ার কথা…
একটু যেন নিশ্চিন্ত হলেন তিনি। ধীর পায়ে এগুলেন সিঁড়ি ভেঙে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here